মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৮

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৮
সাদিয়া

এত এত আওয়াজ কলরবের মাঝেও মায়রার মনে হচ্ছে তার চারপাশ সব কিছু নিঃশব্দ নিস্তব্ধ। কোথাও কোনো শব্দ কোলাহল কিছুই নেই। তার সব কিছু যেন এক জায়গাতেই থমকে আছে। কানের পাশ দিয়ে বিরহের কাতর সুর কেবল করাঘাত করছে। চোখে মুখে আতঙ্ক প্রবল উৎকণ্ঠা আর অস্থির ভাব। ব্যাকুল হৃদয়ের বেদনার সুর তার গলায় আটকে আছে ফলার মতো। উদ্রেকে ঠোঁট গুলি তিড়তিড় করে কাঁপছে। চঞ্চল ঝাপসা চোখ গুলি বারবার ঘুরে ফিরে ওই র’ক্তা’ক্ত আ’হত ব্যক্তিকে অবলোকন করে যাচ্ছে। তীব্র সুচের ব্যথা বুকটাতে কামড়ে ধরেছে।

লোকটার র’ক্তা’ক্ত হাত তাকে কেবল নির্বাক পাথর করে দিয়েছে। তবুও গহীন থেকে করুণ ঢিপঢিপ শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে নিদারুণ ভাবে।
নিজের কাটা র’ক্তা’ক্ত হাতের যন্ত্রণা কিংবা ব্যথা কিছুই যেন স্পর্শ করতে পারছে না ইহাম কে। তার নেশাতুর গাঢ় দৃষ্টি কেবলমাত্র মায়রার উপর নিবদ্ধ। এই মেয়েটা কি অবুঝ নাকি নির্বোধ? শাড়ি পরতে হয় কেন? এই মেয়ে কেন শাড়ি পরেছে। সে বারণ করেছিল না শাড়ি না পরতে? তবুও শুনল কেন মেয়েটা? শাড়ি পরলে মেয়েটাকে জ্বলন্ত একটা অগ্নিকূপ মনে হয় তা কি সে জানে না? অবগত করা হয়নি তাকে? তাহলে কেন এই কাজটাই করতে গেল? এইযে ভেতরের ছন্দহীন বাক্যগুলি বারবার নিগূঢ় ভাবে কানে কানে কিছু কথা বলে যাচ্ছে তাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মনের বাসনা জাগছে স্বেচ্ছায় ওই উত্তপ্ত অগ্নিকূপে ঝাপ দিয়ে নিজেকে ঝল’সে দিতে। যেন নিজেকে বিদগ্ধ করতে এক তিলও ভাববে না সে। দৃষ্টির গভীরতা গাঢ় থেকে প্রগাঢ় হচ্ছে। বুকের গহীন থেকে আসা আলোড়িত ধ্বনি তার ব্যাকুল চিত্তকে করে তুলছে উদগ্রীবের মেঘস্তূপ। এলোমেলো পা ফেলে ধীর মন্থরগতিতে এগিয়ে এলো মায়রার কাছে। তীব্র আফিম মেশানো চোখ জোড়ার শান্ত শীতল দৃষ্টির বারিধারায় মায়রা কে অবগাহন করাচ্ছে। ইহামের নির্লিপ্ত হীম নেত্রের প্রগাঢ় কুটিল নজর যেন মায়রা কে গ্রাস করে নিচ্ছে। লতানো ভাঁজ খাওয়া নারী অঙ্গে শাড়িটা যেন একদম নিবিড় আলিঙ্গনে লেপ্টে আছে। ১২ হাতের লম্বা কাপড়টা মায়রা কে অত্যধিক পরিমাণ আবেদনময়ী করে তুলে সর্বদা। তার লাস্যময় রূপ দ্বিগুণ তেজে যেন মোহিত আকার ধারণ করে।

ইহাম পায়ের দূরত্বটুক ঘুচিয়ে একদম মায়রার সন্নিকটে এসে উপস্থিত হয়েছে। ব্যাকুল বাসনাময় দৃষ্টিতে মায়রাকে পরখ করেই র’ক্তা’ক্ত বা হাতের উল্টোপিঠ কোনো রকম ঠেকালো মায়রার কোমরের দিক। মৃদু টান প্রয়োগ করে বাকি দূরত্ব টুক নাশ করল স্বেচ্ছায়। অথচ গভীর ক্ষত দিয়ে তখনো বিন্দুবিন্দু ঝড়ছে তাজা লোহিত কণা। সেদিকে না আছে কোনো ভ্রুক্ষেপ আর না কোনো যন্ত্রণার অনুভূতি। চোখে মুখে কেবল অন্তরের গভীরে উদিত হওয়া প্রশান্তিময় এক নারীর প্রতি মাদকতা আর বিমুগ্ধতা। অতঃপর স্থিরচিত্তে ধীরগতিতে ডান হাতটা বাড়িয়ে দিল মায়রার মুখের দিকে। হাল্কা প্রসাধনীর প্রলেপ লাগা মায়া মায়া মুখটা তাকে যেন ক্ষ্যাপা বানিয়ে দিচ্ছে। নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা বুঝি যুদ্ধ প্রায়। যত্ন করে কোমল ছোঁয়ায় সামনের চুল গুলি পিছনে ঠেকিয়ে দিল। আধো স্পর্শ পেতেই শঙ্কা, আতঙ্কে পাথরের মতো জমে থাকা মায়রা এবার ফুঁপিয়ে উঠল। ঠোঁট কাঁপিয়ে চোখ বন্ধ করতেই টপটপ করে কপোল বেয়ে গড়ালো কয়েক ফোটা নোনাপানির দানা।

“বারণ করেছিলাম না শাড়ি পরতে? তবুও অবাধ্য হলে যে? আমার কথা না শুনে বুঝি খুব মজা পাও? নিষেধ অমান্য করে শাড়ি পরার অপরাধের শাস্তিটা না হয় রাতে দিলাম।”
চাঞ্চল্যকর ব্যাকুল দৃষ্টি তখন অস্থির ভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে মায়রার মোহনিয়ার মুখের দিকে। ঈপ্সিত দৃষ্টি প্রগাঢ় ভাবে ছোঁয়ে যাচ্ছে মায়রা কে।
“এই মেয়ে চোখে পানি কেন? কাঁদছো নাকি?”
লাল পানি ভর্তি চোখ গুলি দিয়ে আলতো করে দেখে নেয় ইহাম কে। কম্পিত ঠোঁট নাড়িয়ে জবাব দেয়,
“আপনি একদম আমায় ছুঁবেন না। ছাড়ুন। সরুন আমার থেকে।”
“শাড়ি পরে আমাকে দূরে সরানোর অধিকার তোমায় কে দিয়েছে মায়রা? তবে শাড়ি পরতে গেলেই বা কেন?”
“একদম ভাউতাবাজি কথা বলবেন না আপনি। নিজের কি হাল করেছেন দেখেছেন একবারও? হাত সরান আমার থেকে।”

“এসব কোনো ব্যাপার না। এগুলি আমাদের নিত্যদিনের কাজ।”
“নিকুচি করেছে আপনার নিত্যদিনের কাজ। এটা কেমন ধরনের কাজ যেকাজে জীবনের ভয় থাকে। আঘাত পেয়ে র’ক্তা’ক্ত হতে হয়?”
“শিহহহ। তোমায় কে বলল আমাদের জীবনের ভয় থাকে? জীবনের ভয় নিয়ে কেউ ডিফেন্সে আসে? তাও আবার স্পেশাল ফোর্স ইউনিটে? যেখানে মৃত্যু জীবনসঙ্গী।”
“যেখানে মৃত্যু কে জীবনসঙ্গী করবেন তাহলে একটা মেয়েকে কেন টেনে নিলেন নিজের আধভাঙ্গা জীবনে?”
মায়রার কন্ঠে কাতরতা। চোখ উপছে পড়ছে পানি। চোখে মুখে সরলতা, করুণ ভাব। অবুঝ আবেগির ছোঁয়া পেয়ে ইহাম ম্লান হাসল। কোমল দৃষ্টি নিগূঢ় ভাবে বুলিয়ে নিল মায়রার মুখশ্রী তে। ডান হাত দিয়ে কপালের চুল গুলিকে আরেকটু স্লাইড করল সে। গাঢ় কন্ঠে বলল,

“এমন অবুঝের মতো কথা বলছো কেন মায়রা? তুমি একজন সৈনিকের বউ। তোমাকে সবসময় আমার যেকোনো খবর শুনার জন্য তৈরি থাকতে হবে। নিজের মনটাকেও ইস্পাতের মতো দৃঢ় করতে হবে।”
অষ্টাদশীর বুক কামড়ে উঠল তীব্র যন্ত্রণায়। এই লোকটার মুখে কি কিছু আটকায় না? সবসময় যা বলবে একদম সরাসরি। তাতে কারো বুক ছুরিকাঘাত হোক বা বিষাক্ত ফলার মতো বিঁধুক তাতে তার কিছু যায় আসে না। ইহামের মুখ থেকে শুনা কথার ইঙ্গিত টা বুঝে ভেতরটা দাবানলের মতো জ্বলে উঠল। হাহাকারে বুকটা ধূসর মরুভূমিতে পরিণত হলো। তপ্ত অনুভূতিতে দাঁত কিড়িমিড়ি করে ইহামের বুকে মৃদু ধাক্কা দিল। “চাই না আমি এমন হতে।” বেখেয়ালির ছলে খানিক দূরে সরল ইহাম। মুখে ব্যথাতুর ভাব ফুটিয়ে তুলে “উফফ” শব্দ করে উঠল সে। আর কিছু বলতে চেয়েও মায়রা চুপ করে গেল। ইহামের শব্দে ভড়কালো খানিক। আশংকিত দৃষ্টিতে কপাল কুঁচকে নিল। ব্যথার মাঝে ব্যথা দিল কি সে?

“বুকেও ব্যথা পেয়েছেন? দেখি।”
ইহাম জবাব দিল না। চুপচাপ নিশ্চল হয়ে দাঁড়াল। মায়রা এগিয়ে এসে ইহামের উপরের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
“এই আপনার কাজ? এই কাজ করতে এসেছেন আপনি? আপনার কাজের খেতায় আগুন।”
এই মুহূর্তে ইহামের রাগ করার কথা। তবে তার একটুও রাগ আসছে না বরং মায়রার ফুঁপিয়ে কান্নার দৃশ্যটা বেশ রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। নাকের ডগাটা টকটকে তরমুজের মতো লাল হয়ে আছে। কোমল লালাভ ঠোঁট গুলি তিড়তিড় করে কাঁপছে। সে এক ধ্যানে দেখছে মেয়েটা নাক টেনে টেনে কি ভাবে তার শার্টের বোতাম খুলছে। ইহাম মোহাচ্ছন্ন চোখে তাকিয়ে থেকেই খপ করে ধরল মায়রার হাতটা। বোতাম খুলতে থাকা হাত গুলি ওখানেই থামল। আধো গলায় ইহাম বলে,

“এভাবে জন সম্মুখে শার্ট খুলছো কেন মায়রা? একটুআধটু আদর কি এখানেই পেতে চাচ্ছো নাকি মিসেস পিচ্চি চৌধুরী?”
“একদম ফাউল কথা বলবেন না ভাউতাবাজি লোক। আপনি যে ধূর্ত চালাক তা কি জানি না? আমাকে কথার ঝালে ফাঁসাতে চাইছেন এই তো?”
“বাহহ, আমার মাথামোটা বউটার ঘিলুতে খাদ্য এলো কিভাবে?”

“দেখুন” কটমট করে তাকাল মায়রা। চোখ সরিয়ে নিয়ে শার্টটা খানিক উদাম করতেই বুকে একটু আঁচড় দেখতে পেল। না জানি আর কোথায় কোথায় আঘাত লেগেছে। এই ছোট কাজে এমন হলে বড় কাজে কি হয় এই লোকের? কোন নিশ্চয়তা আছে এই জীবনের? কিছু একটা ভেবে মায়রা আবারও ঠোঁট ভেঙ্গে ফুঁপিয়ে উঠল। ইহাম তা দেখে গূঢ় হাসল। আবারও কাটা হাতটা ঠেকিয়ে মায়রাকে নিজের কাছে নিয়ে এলো। ফিসফিস করে বলল,
“এভাবে কাঁদছো কেন মাথামোটা? কেউ দেখে ফেললে তো ভাববে এই উন্মুক্ত জায়গায় তোমায় আমি মারছি।”
“আপনি একটা আজেবাজে কথাও আর বলবেন না। দেখি হাতটা দেখতে দিন আমায়।”
“এত ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই মায়রা। খুব বেশি কাটেনি। আগে চোখের পানিটা মুছো তো। খুব বাজে দেখাচ্ছে। দেখো তোমার সাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

“কি করব আমি সাজ দিয়ে? দরকার নেই আমার সাজের। ইশশ দেখেছেন কতটা কেটেছে?”
ইহাম গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে মায়রার দিকে। ঘাড় টা কিঞ্চিৎ মেয়েটার দিকে ঝুঁকিয়ে হিসহিস গলায় বলে,
“কষ্ট হচ্ছে বুঝি?”
“হবে না বলছেন?” মায়রা সরল নির্মল দৃষ্টিতে তাকায়। আইলাইনার দিয়ে টেনে ধরা চোখ গুলি আজ আরো মোহনিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কি স্নিগ্ধ আঁখিপল্লব গড়িয়ে টলটল পানি ঝরল। ঠোঁটের এক পাশ প্রসারিত হয় ইহামের। গভীর চাউনিতে বেষ্টিত করেই প্রশ্ন করল একটা।

“কেন হচ্ছে কষ্ট?”
মায়রার ঠোঁট গুলি আরেক ধাপ কেঁপে উঠল। লোকটার প্রশ্ন ভেতরে পীড়া প্লাবিত হলো। লোকটা কি কিছু বুঝে না নাকি তাকে যন্ত্রণা দিতে পছন্দ করেন? স্পষ্ট ভাবে উত্তর দিতে কোথাও একটা জড়তা কাজ করে মায়রার। ফলশ্রুতে ফাঁপা কষ্ট নিয়ে জবাব দেয়,
“সবাই তো আর আপনার মতো পাষাণ না। মানুষের মন আছে। আপনার মতো কঠিন হৃদয় না সবার। তাই কষ্ট লাগছে।”

টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল ইহামের আঘাতপ্রাপ্ত মেলে ধরা হাতের তলায়। হাতটা এখনো মায়রার হাতের পৃষ্টে খোলা বইয়ের মতো পড়ে আছে। সেই হাতের তালুতে এক ফোটা নোনা পানির দিকে ধ্যান ধরে দেখল ইহাম। এক বিন্দু পানির ছোঁয়ায় হুট করে তার শান্ত কোমল মেজাজ টা বিগড়ে গেল। রগচটা ভাবটা আবারও যেন ঠেলেঠুলে এগিয়ে এলো। হঠাৎ মুখ কুঁচকে তিরিক্ষ গলায় বলে উঠল,
“হাতের আঘাত যতটা যন্ত্রণা দিচ্ছে তারচেয়ে বেশি তোমার চোখের পানি দিচ্ছে কিন্তু। ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে মেজাজ খারাপ করো না। বিরক্ত লাগছে এবার মায়রা। কানের নিচে দুইটা খাওয়ার আগে প্লিজ স্টপ ইউর ক্রায়িং।”
আকস্মিক কথার ধরন বদলে গিয়েছে দেখে চমকালো মায়রা। সন্দিহান চোখে কুঁচকে তাকাল সে। লোকটার শক্ত চোয়াল আর মুখের কাঠিন্যতা দেখে বুঝায় যায় এই মুহূর্তে বিরক্ত সে। রগচটা রাগি লোকটা কি আবার রেগে গেল?

“আকামকুকাম করে এসে আবার আমার উপরই রাগ দেখাচ্ছেন?”
“প্লিজ মায়রা। বেয়াদবের মতো কথা বলো না। যেটা জানো না বুঝো না সেটা নিয়ে অযথা কথা বাড়িও না। বিষয়টা মোটেও ভালো লাগে না আমার।”

মায়রা অবাক। নির্বাক হয়ে দেখছে মানুষটাকে। লোকটা যেন তার আগের ফর্মে ফিরে গিয়েছে। সে’ই বোকা। বোকার মতো কি থেকে কি ভেবে নিয়েছে। একটা মানুষ কি আর হুট করে নিজের সব স্বভাব বিসর্জন দিয়ে তার উপর গলে যাবে নাকি? সে’ই ভুলভুল আশা করছিল বোধহয়। ওষ্ঠে এক চিলতে যন্ত্রণা ময় তুচ্ছ হাসি ফুটে উঠল। নিশ্চল মুখে মনস্তাপ বিষয়টা ফুটে উঠল। ইহাম ভালো ভাবে পরখ করল মায়রাকে। মেয়েটাকে কি একটু বেশি ধারালো ভাবে কথা বলে ফেলেছে নাকি? আবারও কষ্ট পেল সে? কি জানি তার মেজাজ টা এখন সত্যি খারাপ লাগছে। সারাদিনের বিরামহীন ক্লান্তি ভাব, অগাধ পরিশ্রম তারউপর মেয়েটার অনবরত চোখের পানি খিটখিট করে তুলছে তাকে। হাতের নাগালে সেই মুক্তকণার স্পর্শ বুঝি তাকে আরো বিগড়ে দিয়েছে। বাজে পরিস্থিতি টা আর দীর্ঘায়ত করতে চাইছে না বলে চুপচাপ বিরক্ত অভিমুখে সে উল্টোপথ ধরল। দ্রুত পিছু ডাকল মায়রা।

“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
“ভালো লাগছে না। ওদিকটায় আছি। তুমি অনুষ্ঠানে যাও।”
“কোথাও যাবেন না। ঘরে চলুন।”
মায়রার শক্ত গলা শুনে পা থামাল ইহাম। পিছু ঘুরে দেখল এক পল মেয়েটাকে। চোখ মুখ শক্ত। দৃঢ় গলায় আবার বলল,
“কি হলো? আপনায় বললাম ঘরে আসতে। আসুন।”

তখনের কচকচে রাগটা এখন আর নেই ইহামের। তবে কিঞ্চিৎ মেজাজ খিটখিটে ভাবটা আছে। হয়তো পরিস্থিতি কিংবা মেজাজটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তবুও শান্ত গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে ওই সুস্নিগ্ধর আদলে।
এদিকটায় লোকসমাগম কম বলেই ছবির জন্যে বেছে নিয়েছিল মায়রা। তাই এখন পর্যন্ত কারো আসা হয়নি এখানে। ইহাম কে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমথমে মুখ নিয়ে নিজেই এগিয়ে এলো কয়েক পা। ইহামের হাত টা টেনে ধরল ধীর ভঙ্গিতে। ইহাম অপলক দেখে গেল মায়রার কাজ। বিমূঢ় কঠিন মুখ দেখে আর নিজেও কোনো বাক্যব্যয় করল না সে। মায়রার টান অনুসরণ করে কেবল পা বাড়াল।

কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ইহাম কোনো ভাবেই চাইছিল না এই অবস্থায় মায়ের মুখোমুখি হোক। অন্তত হাতে ব্যান্ডেজ করে ফেলার পর ভুজুংভাজুং বুঝানো যাবে। কিন্তু এই ভাবে সরাসরি দেখলে মায়ের হাজারটা প্রশ্ন আর আহাজারি তাকে বিরক্ত করবে। যে জীবন উচ্ছন্নে দিয়ে নিজের দায়িত্বে মনোনিবেশ করে তাকে সামান্য ব্যথায় হাহাকার শুনা বিরক্তই ঠেকাবে। মাকে সবসময় বলে তাকে নিয়ে যেকোনো সময় যে কোনো সংবাদ শুনার জন্যে প্রস্তুত থাকতে সবাই কে। নিজের কাজে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হলে এটা তার জন্যে গৌরবের আর সম্মানের হবে। তখন স্বজনদের হাহাকার তার জন্যে বৃথা।
ভেতরে ঢুকার পথে ইহাম মনে মনে যেই ভয়টাই পেয়েছিল ঠিক সেটাই হলো। শিরিন বেগম কে দেখে মায়রা ইহাম দুজনেই থমকালো। মায়রা সন্তপর্ণে নিজের হাতটা আলগা করে নিল ইহামের কব্জি থেকে। শান্ত ভাবে তাকালো শাশুড়ির দিকে।

শিরিন বেগম প্রথমে সন্দিহানি চোখে দেখলেন ইহাম কে। শার্টে শুকিয়ে থাকা র’ক্তের দিকে তিনি গভীর মনোযোগী। আশেপাশের সব ভুলে তিনি কেবল ছেলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন এক দৃষ্টিতে। পরপর মনে হলো ইহামের সকালের কথা গুলি। ছেলেটা না বলেছিল কাজে এসেছে? তবে ছেলের এই অবস্থা কেন? পরিপাটি ছেলেটা কেমন এলোমেলো, ছন্দছাড়া লাগছে। শার্টে কি লেগে আছে এসব? শিরিন বেগম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে এলেন ছেলের নিকটে। কুঁচকানো চোখ নিয়ে হাত দিয়ে স্পর্শ করলেন ভিজে শার্টের অংশ। মায়রা হাত এক সামনে দাঁড়িয়ে। প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইহামের দিকে। যেন চোখের অব্যক্ত ভাষা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে “এখন কি হবে?” ইহামের চিত্ত ধীর হলেও বিষণ্ণ। নির্ঘাত মা এবার কান্নাকাটি করে সব এক করবে।
“কিরে বাবা তোর শার্টে কি এসব? এগুলা কি?”

প্রশ্ন করলেও শিরিন বেগম ইহামের জবাবের আশায় থাকলেন না। বরং ব্যতিব্যস্ত হয়ে চঞ্চল সন্দিগ্ধ চোখে দেখতে লাগলেন ইহামের শরীর। হাত দিয়ে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন ছেলে শরীরে কোথায় কোথায় ব্যথা পেয়েছে। দৃষ্টি আচানক হাতের দিকে পড়তেই চমকে উঠলেন শিরিন বেগম। ছেলের র’ক্তা’ক্ত হাত দেখে কাটা দিয়ে উঠল উনার গা। কি সর্বনাশ! ছেলের বা হাতে তো ভয়াবহ ক্ষত। কাজে গিয়ে কোন বিপদ হলো ছেলের? ফুঁপিয়ে উঠলেন শিরিন বেগম। মুখে চেঁপে ধরলেন হাত। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইহাম দ্রুত ডান হাত দিয়ে মা কে আগলে নিয়ে গেল রুমের ভেতর।

“প্লিজ মা কান্না থামাও। তেমন কিছু হয়নি?”
“তুই বলবি তবে আমার বিশ্বাস করতে হবে? আমার কি চোখ নেই? দেখতে পাই না আমি?”
“তাহলে এভাবে কাঁদছো কেন? আর আস্তে কথা বলো। দেখো বিয়ে বাড়িতে অযথা এমন করো না। সবার আনন্দ নষ্ট হবে খামোখা।”
“তুই কি আমাদের নিয়ে ভাবিস যে এসব বলছিস? কে লি ভাববে কার আনন্দ নষ্ট হবে তাতে তোর কি? কতবার বলেছি জীবন বাজি রেখে তোকে এসব কাজ করতে হবে না। আমার একটামাত্র ছেলে তুই। তোর কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাঁচব?”
“মা প্লিজ অবুঝের মতো কথা বলো না। তুমি জানো এসব কথা ভিত্তিহীন। বুঝমান হয়েও বাচ্চামানুষের মতো কথা বলো না প্লিজ।”

“এখন তো এসবই মনে হবে। মায়ের কথা তো ভিত্তিহীনই লাগে তোর কাছে।”
“মা দয়া করে এসব কথা বলো না তো। বিরক্ত লাগছে সত্যি। যে জিনিসটা জানো বুঝো বারবার বলেছি সেটা নিয়েও আবার কেন এসব কথা হয় বলো তো?”
“বিরক্ত তো লাগবেই। আমার কষ্ট তুই আর কি বুঝবি? এখনো সন্তান হয়নি তো। হলে বুঝবি সন্তানের কি জ্বালা।”

শিরিন বেগম কাঁদতে কাঁদতেই রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। তিনি ছেলের সব সিদ্ধান্ত অকপটে মেনে নেন। তেমনি চাকরির সিদ্ধান্তটাও মেনে নিয়েছেন। তিনি জানেন ইহামের মনোভাব। তবুও মাঝেমাঝে ছেলের জীবনের দিক চিন্তা করে স্বার্থপর হয়ে যান। আর চোখের সামনে কোন মা সন্তানের এমন র’ক্তাক্ত হাত দেখে ঠিক থাকবেন?
ইহাম ফোঁস করে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। মেজাজের মাত্রাটা কি আরো বেশি করে খারাপ হচ্ছে নাকি? বিরক্ত মুখে সে বিছানায় গিয়ে বসে। সব কিছুতে কেমন খিটখিট অনুভব করছে। হাটুতে দুই হাত ভার দিয়ে সামনের দিকে খানিক ঝুঁকে বসল।

মায়রা মা ছেলের কথার মাঝে সে নির্বাকই ছিল। ছেলের কাতরে শিরিন বেগমের কথা অযৌক্তিক লাগল না মায়রার কাছে। তার নিজেরও তো ইহামের জীবন নিয়ে বিরাট এক গোলকধাঁধা খেলা করছে অন্তঃকরণে। চাক্ষুষ দর্শনে সব কিছুতে কেমন বুক কা’মড়ে ধরা অনুভূতি হচ্ছে। বক্ষপিঞ্জরাটা কেমন সংকুচিত হয়ে আসছে তীব্র এক শঙ্কায়। সরু চোখে দেখল বিবশ ইহাম কে। ঝুঁকে থাকার কারণে মুখ না দেখা গেলেও তাকিয়ে বলল,
“আপনি ঘরেই থাকুন। আমি এখনি আসছি।”
ইহাম কোনো প্রতিউত্তর করল না দেখে মায়রা তখনি বের হয় ঘর থেকে।

শিফু তখন হলুদের অনুষ্ঠানে বসে আছে। মা ভাবি কাউকে এদিকটায় না দেখে চিন্তিত হয়ে ইতিউতি করল সে। তখনি হাতে থাকা ভাইব্রেট হওয়া ফোনটা দ্রিমদ্রিম করে বেজে উঠল। স্কিনে তুহিনের ভিডিও কল পেয়ে চকিতে চোখ বড় হলো তার। বিস্ময় নিয়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলেও বিষয়টা স্মরণে রেখে তাড়াতাড়ি কল কাটল সে। একেরপর এক ভিডিও কল আসতেই থাকল হোয়াটসএপে। এই পর্যায়ে শিফু বিরক্ত হয়ে ম্যাসেজ করল,
“কি হলো তুহিন ভাই? এতবার কল দিচ্ছেন কেন?”
তুহিনের রিপ্লে এলো।
“প্লিজ শিফুয়া চৌধুরী একটা বার কল ধরো।”

সঙ্গেসঙ্গে আবার কল এলো। অবাক হলো শিফু। আবারও কলটা কেটে দিয়ে টাইপ করল সে “আশ্চর্য আমি বারবার কেটে দিচ্ছি তারপরেও আপনি কল দিচ্ছেন কেন? বুঝতেই পারছেন রিসিভ করছি না। তবুও কল দেওয়ার মানে কি?” সেন্ট করে দেওয়ার সাথে সাথে সীন হলো। যেন তার কিছু বলার আশায় অধীর আগ্রহে বসে ছিল ওপাশের মানুষটা। ওপর পাশ থেকে টাইপিং হচ্ছে দেখে বুকের উঠানামা বাড়ল শিফুর। কি বলবে আবার? কেন বারবার কল দিয়ে তার মনটাকে ব্যাকুল করছে এই মানুষটা? চোখের পলকে রিপ্লে এলো।

“প্লিজ শিফু কল টা আর কেটো না। অনেক ইচ্ছা ছিল মালেয়সিয়া যাওয়ার আগে তোমাকে বউ করে রেখো যাবো। নিশ্চয় অনুষ্ঠানে অনেক সেজেছো। একটু ভিডিও কল দাও। প্লিজ একটু কথা বলেই কেটে দিব।”
ম্যাসেজ টায় চোখ বুলিয়ে ঝাপসা হয়ে এলো তা। এই ছেলেটা নিশ্চয় তাকে ভেঙ্গে একেবারে গুঁড়িয়ে দিবে। কিছুতেই নিজেকে শক্ত করতে পারে না তুহিনের এমন ধরনের কথা শুনে। যেন নিজের কথার মাঝে আক্ষেপ যাতনা মিশিয়ে দেয়। বুকটা কেঁপে উঠে শিফুর। তার অবুঝ অবাধ্য মন তার শিকল মানতে চায় না। তারা যেন বয়ঃসন্ধিকালের লাগামছাড়া ঘুড়ির মতো উড়তে চায়। মনের সাথে যুদ্ধ করে শেষমেশ পরাজয় বরণ করেই উঠে দাঁড়ায় শিফু। এদিকওদিক তাকিয়ে পা টিপে এগোয় নীরব কোনো জায়গায়।

“কি বলবে তুহিন ভাই? আপনাকে বারণ করার পরও আপনি কল কেন দেন?”
ওপাশ থেকে তুহিন কোনো জবাব দিল না। কেবল মুগ্ধ হয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল স্কিনের দিকে। তিক্ত আর কিছু কথা বলতে গিয়েও তুহিন কে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শিফু বাকহারা হয়। চুপটি করে থাকে অল্প সময়। মুখের সামনে ফোন ধরে রাখে সেকেন্ডের পর সেকেন্ড। দুজনের একজনও কেউ কথা বলে না। চুপচাপ নিঃশব্দে অবলোকনের সরোবরে ডুব দেয়। কিছুটা সময় অতিবাহিত হবার পর এবার শিফুর অস্বস্তি হয়। হাসপাস করে ক্ষীণ আওয়াজে বলে,

“আ আপনি কিছু বলবেন তুহিন ভাই?”
“সুহহ” ফোনের ওপাশ থেকে তুহিন নিজের ঠোঁটে তর্জনী ঠেকায়। সাবধানে ফিসফিস করে বলে, “আরেকটু দেখতে দাও শিফু। তোমাকে একদম পুতুল পুতুল লাগছে। একদম কালনাগিনীর মতো দেখাচ্ছে না একটুও।”
শিফু জবাব দিতে পারে না। বুকের ভেতর ডানা ঝাপটায় পাখিরা। আকুল হয় হৃদয়। চোখের সামনে ভেসে উঠে তুহিনের সাথে প্রথম সাক্ষাতের দৃশ্যপট। ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি তুলে বলা “কালনাগিনী” শব্দটা। পরক্ষণে দম বন্ধ হয়ে আসে শিফুর। জলদি করে জানায়,

“আপনার কিছু বলার না থাকলে আমি রাখছি। সময় নেই হাতে।”
“আমি এতই অবহেলার শিফু? যে সামান্য কথা বলারও সময় নেই তোমার কাছে?”
বুকটা মুচড়ে উঠে শিফুর। এই লোক নির্ঘাত নীরব আঘাতে তাকে মে’রে ফেলবে। নিজের সাথে যুদ্ধ করে কোনো রকম মনটাকে শিকলে বেঁধে রাখে সে। তবুও এই লোকের কথায় সব শৃঙ্খল ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসতে চায় তারা রাজপথে। বুকের ভেতর তখন আরো যন্ত্রণা হয়। মন চায় চিৎকার করে কাঁদতে। কিন্তু পরিস্থিতি কিংবা পরিবারের প্রিয় কয়েকটি মুখ অন্তরায়। ফোঁস করে উত্তপ্ত নিশ্বাস ছুড়ে হাসার চেষ্টা করে শিফু।

“আপনার সাথে তো আমার তেমন কোনো কথা নেই তুহিন ভাই।”
“দোহাই লাগে শিফু এত পাষাণ হইও না।”
যন্ত্রণায় ভেতরটা শিরশির করে উঠে শিফুর। ফাঁপা কষ্টের ঢোক গিলে সে বহু কষ্টে।
“আপনি আর আমাকে কল দিয়েন না তুহিন ভাই।”
“কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো শিফু?”
“আমি আপনায় তো কোনো কষ্ট দিচ্ছি না। কেউ নিজনিজ থেকে কষ্ট পেলে তার দায় তো আমার উপর এসে পড়বে না।”
“আমার সবকিছুর মূল্যেই তো তুমি শিফু।”
“এটাকেই উপড়ে ফেলুন দেখবেন শান্তি পাবেন।”
“বোকা মেয়ে শিকড় ছাড়া গাছ বাঁচে?”
নিশপিশ করে উঠে শিফুর অন্তর। ডানা ঝাপটে অস্থিরতা এসে ভর করে মনের আঙ্গিনায়।

“দেখুন তুহিন ভাই…”
“তোমাকে দেখব বলেই তো কল দিয়েছি শিফু।”
ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শিফু। কঠিন গলায় বলল,
“আপনার এসব পাগলামি বন্ধ করে নিজের পড়াশুনায় মন দিন। এটাই ভালো হবে।”
“আমার ভালোর চিন্তা করলে আমার ভালোটাই চাইতে। এত দূর চলে যাওয়ার আগে আমাকে এক আকাশ বিষাদ উপহার দিতে না।”
যন্ত্রণায় ফুলে ফেঁপে উঠছে ভেতরটা। এত কঠিন নীতিকথা কেন বলছে লোকটা? শুধু নিজের দিকটাই দেখছে। তার ভেতরের না বলা যাতনা গুলি কেউ আঁচও করতে পারছে না। কথা গুলি যেন সরাসরি তার বুকে বাণের মতো ক্ষতবিক্ষত করল।

“ক কি যা তা বলছেন?”
“আমি যা তা না ঠিকই বলছি শিফু।”
“রাখছি আমি তুহিন ভাইয়া।”
“তুমি নিজেও জানো তুমি আমায় পছন্দ করো। তবুও পরিবারের কথায় সব মেনে নিয়েছো শিফু তাই না?”
শিফু নির্বাক। গলা দিয়ে আওয়াজ বের করতে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। তুহিন আজ এত সত্যি সত্যি কথা কেন বলছে? সব যেন তার বুক চিঁড়ে দিচ্ছে।
“এসব আজেবাজে কথা কে বলল আপনায়?”
তুহিন হেসে উঠল। হাসিতে যেন স্পষ্ট বেদনার ছায়া। সেভাবেই বলে উঠল,
“সব কথা বলতে হয়না শিফু। বুঝেও নেওয়া যায়।”
“যে বুঝায় সমস্যা সে বুঝা নাই বুঝলেন।”

“আমাকে এভাবে দূরে রেখে খুব তো শান্তিতে নেই শিফু। এতো সেজেছো তবুও দেখো চেহারা কেমন মলিন হয়ে আছে। কষ্ট পেয়ে কি সুখে আছো? নিজেও কাঁদছো আমাকে কাঁদাচ্ছো। তোমার এই এড়িয়ে যাওয়া যন্ত্রণা গুলি আমি কিভাবে সহ্য করব শিফু?”
“রাখছি তুহিন ভাইয়া। ম মা ডাকছে।”
শিফু তাড়াতাড়ি করে কল কাটল। প্রচন্ড ভারে ভারাক্রান্ত বুকটা চেঁপে ধরল বাম হাত দিয়ে। ঠোঁট গুলি কেঁপে কেঁপে হঠাৎ চোখ ঝাঁপিয়ে কান্নারা চলে এলো। শিফু শীর্ঘই দুই হাত মুখে চেঁপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল।

কারো কাছে ফাস্টএইড বক্সের খুঁজ করতে মায়রা এদিক টা দিয়েই যাচ্ছিল। আড়াল থেকে শিফু আর তার ভাইয়ার সব কথায় শুনেছে সে। শিফু মেয়েটা বয়সের তুলনায় একটু বেশিই কঠিন হয়ে যাচ্ছে না? নিজেও কষ্ট পাচ্ছে আরেকজনকেও কষ্ট দিচ্ছে। মায়রা চুপচাপ দেখে গেল নির্জন জায়গাটায় শিফুর একাকী কান্না। পরক্ষণে তার মনে এলো মেয়েটা আর কিই বা করতে পারবে? তার করার কি আছে? সব কিছুর কেন্দ্রে তো ক্যাপ্টেন সাহেব। আচ্ছা মানুষটার সাথে আরেকটা বার কথা বললে কি উনি বুঝবেন? নাকি আবার তার উপর রেগে চওড়া হবে?

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৭

মায়রা যখন মনে মনে নিজের ভাবনা স্থির করল তখন ইহাম বদ্ধ ঘরে নিজের স্বভাব চরিতের বদমেজাজ আর রগচটা ভাবে তলিয়ে গেল। নির্বোধ মেয়ে পরিস্থিতির সাপেক্ষে ধারনাও করতে পারল না ওই মানুষটার মেজাজের ঘনত্ব।

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ২৯