মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৩২

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৩২
সাদিয়া

গ্রামের নিভূত নিরিবিলি রাত গা ছমছমের মতো। রাস্তার ধারের ঝোপঝাড় থেকে ঝিঁঝিঁপোকা আর বুনো জীবের উদ্ভট শব্দ ভুতুড়ে অনুভূতির জোগান দেয়। মাটির রাস্তার দুই পাশে বড় বড় গাছ। তারপরে ধানক্ষেত। নিরিবিলি এই নির্জন রাস্তা দিয়ে একা একা হেটে যাচ্ছে ইহাম। মেজাজের সেলসিয়াস খুব বেশি কমেনি। তবুও আগের মতো ফায়ার ভাব টা নেই।

একা সড়কে সিগারেটের ধোয়া ফুঁকতে ফুঁকতে পথ এগুচ্ছে সে। মনের অবস্থা তখন অগোছালো এলোমেলো। সূক্ষ্ম এক বিতৃষ্ণা ভাবও কোথাও ঠায় নিয়েছে তার মনে। কপালে সরু রেখা টেনেই পা বাড়াচ্ছে। মায়রা মেয়েটা আসলেই অবুঝ। বাস্তব অভিজ্ঞতা কম। মেয়েটা হয়তো জেদের কারণে তাকে নিয়ে খারাপ ধারনা পুষে রাখছে। তবে সে তো জানে তার দিক থেকে সে ৯৯% ঠিক আছে। মেয়েটার মাঝে বাস্তবিক ধারনা একে বারেই নেই। এটা যেন তার বিরক্তের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কবে মেয়েটা তার মতো করে একটু ম্যাচিয়োড হবে? তার মনের মতো হবে? কবে চোখ বন্ধ করে ওই মেয়েটার উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে? তার চিন্তার পথ অনুসরণ করতে পারবে কখন ওই মাথামোটা মেয়েটা?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ইহাম বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে। রাত তখন ২ টা ২৪ মিনিট। বাড়িটা একটু নীরব হয়েছে। মানুষ জনের আনাগোনা একদম নেই। সবাই বোধহয় বিছানায় কাত হয়ে গিয়েছে। প্যান্ডেলে কয়েকজন বসে আড্ডা দিচ্ছিল কেবল। ইহাম এত সব না দেখে আগে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। ঘেমে তার পাঞ্জাবী ভিজে উঠেছে। ঘরের দরজা খুলেই ঢিলে মেজাজটা একদম গরম হয়ে গেল তার। সেই সাথে দুই ভ্রুয়ের মাঝে আরো সরু রেখাও ফুটল। কুঁচকানো ধারালো দৃষ্টিতে আগাগোড়া পরখ করল। সেই যে যেভাবে দেখে গিয়েছিল এখনো মেয়েটা একই ভাবে বসে আছে। চোখ গুলিও ফুলে গিয়েছে। নিশ্চয় ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদেছে। যেটা একদমই বিরক্তিকর বিষয় একটা ওর কাছে। সুচালো নজরে পরখ করল এলোমেলো চুল, অগোছালো শাড়ির ভাজ আর বিধ্বস্ত মুখশ্রী।

ক্রোধে নীরবে ফুসল দ্রিমদ্রিম করে। দাঁত কিড়িমিড়ি করে দরজার সামনেই কয়েক পল দাঁড়িয়ে রইল আওয়াজ হীন। তার উপস্থিতি মেয়েটার চোখ মুখ যে আরো কঠিন করে তুলেছে তা বেশ অনুধাবন করতে পারছে সে। তবুও নিরুত্তর থেকে চুপচাপ হজম করে নিল। অতঃপর ধীর বেগে এগিয়ে গেল ঘরের ভেতর। চেহারায় গাম্ভীর্যের ভাব। তবুও একটু তলিয়ে দেখতে হাটতে হাটতে বিছানায় বসা মায়রার কাছে এগিয়ে যেতেই মায়রা কেমন থমথমে মুখে ধপ করে উঠে দাঁড়াল। তার দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখেই আরেক দাপ তেড়ে উঠল ইহামের মেজাজ। দেখেছো অভদ্র মেয়ের তেজ? এখনো তাকে তেজ দেখানোর চেষ্টা চালাচ্ছে মাথামোটা মেয়েটা। কিছু বুঝে না শুনে না তবুও ফালতু তেজ দেখাতে কৃপণতা করছে না। তবে তার কিসের ঠেকা? দোষ না করেও কেন এত তেল মাখতে যাবে কাউকে? যেখানে তেল মাখানোটাই তার কাছে বিরক্তের একটা বিষয়। এক পলক মায়রার দিকে তাকিয়ে আবারও নিজেকে দৃঢ় করে নিল। কোনো বলদ কে অন্তত সে অকারণে অযথা তোষামোদ করতে পারবে না। একটু দেখুক না হয় এই বলদ মেয়েটা অকারণে কতটুক জেদ দেখাতে পারে।

মায়রাকে পাশ কাটিয়ে সে জলদি জলদি করে ওয়াশরুমে চলে গেল। ইহাম যেতেই মেয়েটার কেমন ফুঁপিয়ে কান্না এলো। তবুও কাঁদল না। এই লোকটা নির্দয় পাষাণ। তার সামনে কাঁদলে কি সে নরম হবে? তবে কেন কাঁদবে? কেঁদে যদি কোনো কিছু পরিবর্তন না করা যায় তবে সেই কান্নার কোনো দরকার নেই। সে এটা বুঝতেই পারছে না এই লোকটা অগ্রিম করে কেন সব কিছু ভেবে নিচ্ছে? তুহিন আর শিফুর বিয়ে টা হয়ে গেলে তো তখন আর কোনো ঝামেলা থাকবে না। তুহিনের সাথে শিফুর প্রতিনিয়ত কথা হবে, একটা সম্পর্ক থাকবে। তখন তো আর তুহিন কে বাহ্যিক কিছু কিংবা চালচলন আকর্ষণ করতে পারবে না। তবুও লোকটার অহেতুক সিদ্ধান্তের মানে কি? মানুষটা এতই পাষাণ কারো দুঃখ কষ্টও গায়ে লাগে না তার? কেউ মরলেও তার কিছু যায় আসে না। কি করে পারল মানুষটা ওই কথাটা বলতে? ফাঁপা কষ্টটায় এক ফোঁটা পানি এগিয়ে এসে পড়ল। সঙ্গেসঙ্গে চোখের পানিটা মুছেও নিল সন্তপর্ণে। দরজা খুলার শব্দ পেতেই নিজেকে আবারও আড়াল করে নিল। যেন ওই লোকটার মুখোমুখি হতেই চায় না সে।

তখন পর্যন্ত মায়রার কে নীরব দেখে মেজাজ কটমট করতে লাগল। কেন যেন মায়রার ওই নীরব আন্দোলন আর গায়ে আগুন লাগাল। মেয়েটা কেন তার সাথে একটু কথা বলছে না? এত কিসের জেদ তার? সে অকারণে জেদ ধরে কি বসে আছে সে রাগ ভাঙ্গাবে বলে?
“বিছানা ঝাড়ু দাও মায়রা।”
অপরদিক থেকে কোনো জবাব আসল না। বরং আরো কঠিন হলো যেন মুখাবয়ব। অঘোষিত এক জেদ চেঁপে ধরায় কেমন দপদপ পা ফেলে চলে গেল ড্রেসিংটেবিলের সামনে। ঝাড়ু দেওয়ার বদলে কেমন জেদ লাগিয়ে টেনে টেনে হাতের চুড়ি খুলতে লাগল। তীক্ষ্ণ মেজাজ নিয়ে শাণিত চোখে দেখতে লাগল মায়রার এহেন উশৃঙ্খল কার্যকলাপ। মেয়েটা ঠিক কোন পর্যায়ে বেয়াদব হলে এমন করে। লাল চোখ নিয়ে হাতের দিকে তাকাতেই মেজাজ তুঙ্গে উঠল। ইচ্ছাকৃত ভাবে জোরপূর্বক চুড়ি টানায় ফর্শা হাতে লালচে আঁচড় দেখা যাচ্ছে। আর নীরব থাকতে না পেরে বিক্ষুব্ধ কন্ঠে বলে,

“কি বললাম তোমাকে মায়রা?”
কোনো প্রতিক্রিয়া এলো না। এবার রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে তেড়ে গেল মায়রার দিকে। আয়নার সামনে স্থির কঠিন চিত্তে দাঁড়িয়ে অদৃশ্য ক্রোধে চুড়ি টেনে ধরা হাতে শক্ত ভাবে চেঁপে ধরল হাত। এক টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফুঁসে উঠল গরম দুধের মতো।
“এই বেয়াদব মেয়ে আমার কথা কানে যাচ্ছে না?”
“তো” নিজেকে কেমন শক্ত ধীরোদ্ধত করে জবাব দিল, “আপনার কথা কানে গেলেই বা কি? কি করতে হবে? সবসময় আপনার কথা মাথা পেতে নিতে হবে?”
“বেশি বেড়ো না মায়রা। ফল ভালো হবে না কিন্তু।”

“হতে হবে না” হাত ছাড়াতে চেয়ে এবার অন্য হাত ইহামের কব্জির উপর রাখল। বাহু থেকে সরাতে চেষ্টাও করল। “আপনার মতো মানুষের কাছে ফলাফল এর আশা করা অহেতুক। যে মানুষের মন নেই সেই মানুষের সাথে থাকা অনার্থক নয় কি? ছাড়ুন আমার হাত। এবার বাসায় গিয়ে নিশ্চয় আমি আব্বু আম্মু কে সব জানাব। আপনি আপনার সাথে থাকতে পারব না। এভাবে…”

“এটাই তোর চাওয়া?” হঠাৎ অগ্নিগিরির মাঝে লঘু শীতল হাওয়ার মতো শুনাল ইহামের পরবর্তী বাক্য। “কিরে বলছিস না কেন এটাই চাস তুই? থাকতে পারবি না আমার সাথে এই তো?”
মায়রা একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। নিষ্পলক নির্জীব চাউনিতে কেবল তাকিয়ে রইল ইহামের মুখের দিকে। আকস্মিক বিস্ময়টা একদম তাকে বাকহারা নিস্তব্ধ বিমূঢ়ে পরিণত করে তুলেছে। ফাঁকা ভেতরটায় ঠিক কেমন মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে তা সম্বন্ধে সে অজ্ঞ। কেবল হীম শীতল এবং শান্ত চোখ গুলিতে ছলছল করছে ইহামের এক টুকরো অঙ্গার মুখাবয়ব।

“কিরে বল?” আবারও ঝাঁকাল মায়রার বাহু। দাবানলের ক্রোধটা তাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না। কেমন হিংস্র নেকড়ের মতো ছিঁড়েখুঁড়ে বের হতে চাইছে তা। “বলছিস না কেন? আমার সাথে থাকবি না এটাই তো? এটাই বলার জন্যে মরিয়া হয়ে গিয়েছিস। আকদের পর থেকে এই এক খ্যানখ্যানানি শুনে এসেছি তোর। বিরক্তও হয়ে গিয়েছি। যা এবার তুই যা চাস তাই হবে। ডি’ভোর্সই দিবো তোকে। শান্তি?”
শেষের এক শব্দে করা প্রশ্নটুক করলেও উত্তরের আশা মিলি সেকেন্ডও করেনি ইহাম। দাঁত পিষে কেমন হিংস্র ভাবে ঠেলে নিজের থেকে দূরে সরালো। যেন তার খুব অপ্রয়োজনীয় বস্তু মেয়েটা।

শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যেতেই কেমন নিস্তেজ অসাড় হয়ে আসে মায়রা। ফ্যালফ্যাল করে বিমূঢ় রূপে তাকিয়ে থাকে। নিভে আসা চোখ গুলির দৃষ্টি নিষ্প্রভ। যেন ভেতরে কোনো প্রাণ নেই। এক নজরে তাকিয়ে থেকে দেখে যাচ্ছে হায়নার মতো হিংস্র ক্রোধের রশ্মি নির্গত হওয়া মানবটাকে। তার অন্তরে কি এক ফোঁটা মায়াদয়া দেয়নি আল্লাহ তায়ালা? এতই কঠিন পাথর উনার ভেতরটা? কি আবলিল ভাবে গড়গড় করে বলে দিল কথা গুলি। আচ্ছা মানুষটার মনে কি কোথাও সে আছে? থাকলে এভাবে অকপটে তাকে আঘাত দিতে পারত? কই তার ভেতরের অবস্থাটা তো একটা বার লোকটা বুঝার চেষ্টা করল না। ভাইয়ের জন্যে তার ব্যাকুল হৃদয়ের দুশ্চিন্তা একটুও কি ঠাউর করতে পারল না নির্দয় নিষ্ঠুর মানব টা? তবে কিভাবে লোকটা পারল এই মুহূর্তে এভাবে কথাটা বলতে? তার ভেতরটা এত ফেঁপে উঠছে কেন? যেন তীব্র অসহনীয় কষ্টের বুদবুদ সৃষ্টি হয়েছে। নিম্প্রভ শরীরটায় এক বিন্দু শক্তি সঞ্চয় নেই যে দাঁড়িয়ে থাকবে। চোখ ফেটে কান্নারা আন্দোলনে নামতে চাইছে। তবুও ইচ্ছে হচ্ছে না এই লোকটার সামনে সেই কান্নার নীরব আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ ঘটুক। কেন যেন লোকটার সাথে তর্ক কিংবা কোনো রকম দ্বিরুক্তি করার ইচ্ছা হলো না। টলতে থাকা পা গুলি নিয়ে এলোমেলো কদম ফেলল। যেন ভাঙ এ আসক্ত কারো পদচারণ।

হুটহাট মেজাজ টা বিগড়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে ইহামের। তার কারণ যে অবশ্য নেই তা তো নয়। মেয়েটার এত কাঁদার কি আছে? সেটা কি তার বিরক্তের কারণ নয়? আর ওই সস্তা তেজ সে কাকে দেখায়? এত অভদ্র বেয়াদব মেয়ে বারবার মানা করার পরও শুধু ডিভোর্সের কথাই বলে। মাথামোটা গর্দভ টা অহেতুক কারণে তার সাথে কেন ঝামেলায় জড়াবে? উল্টোপিঠে দাঁড়িয়ে ভেতরের টগবগে আগুনের তাপে পরপর নিশ্বাস ফেলছে ইহাম। নিঃশব্দে এগিয়ে যাওয়া মায়রার পদচারণের আওয়াজ তাই তার কানে লাগেনি। তবে দরজা খুলার শব্দে সে তৎক্ষণাৎ বিদ্যুৎ গতিতে ঘুরে তাকায়। মায়রাকে বাহিরে যেতে দেখে তার আগুনের আরেকটুকরো গরম ঘী পড়ে যেমন। তেজস্বী কন্ঠে বলে,

“বাড়িতে কিন্তু মেহমানে গিজগিজ করছে। ঘর থেকে বের হয়ে যদি কোনো নাটক করিস তবে তোর খবর আছে মায়রা। বিছানায় গিয়ে শু।”
মায়রা সেকেন্ড কয়েক চুপচাপ জড়বস্তুর মতো দাঁড়াল। ভুলক্রমেও ঘাড় বাঁকিয়ে ইহামের মুখের দিকে তাকিয়ে চোখাচোখি করল না। এই মাত্র ভেতর জ’বাই হওয়া দেহটা টেনে নিরিবিলি করে দরজা পেড়িয়ে বের হয়ে এলো কোনো রকম। অথচ ঘরের ভেতরের তীব্র ক্রোধাগ্নিতে দাপাদাপি করা মানবটা তার এই অগ্রাহ্যটুক চোখ বুঝে দাঁত পিষে সয়ে নিল।

দলা পাকানো আর্তনাদ গুলি বুক চিড়ে বের হতে চাইছে মায়রার। ভেতরের ফাঁপা কষ্ট টা গলার কাছটায় খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে। ওই ভাতের ফাঁপর আসার মতো ফাঁকা যাতনা গুলি না সরালে গুমড়ে ম’রে যাবে সে। কোনো একটা নীরব জায়গা দরকার সবটা উগলে দিতে। তার আগে ফ্রিজ থেকে একটু ঠান্ডা পানির খুব প্রয়োজন বোধ করছে সে। তৃষ্ণায় ছাতি শুকিয়ে আসছে। যাতনা বুঝি বেশ তপ্ত।

ঘন্টা সময় লাগিয়ে মায়রা রুমের ভেতর গেল। দরজা খুলতেই চোখ পড়ল বিছানার শেষ মাথায় এখনো পা ঝুলিয়ে গম্ভীর বসে থাকা ইহামের দিকে। মুখের ভাব দেখে না বুঝার উপায় নেই যে সে এখনো রেগে আছে। মুখ ফুলিয়ে এখনো দাঁত চিবাচ্ছে বুঝি। দৃষ্টি সরিয়ে মায়রা নিভৃতে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ইহাম বাঁকা চোখে বাজপাখির নজরে দেখল সাজ বিহীন মায়রার মুখশ্রী। তখনকার মতো শাড়ি বাদে কোনো সাজসজ্জা নেই। এতে যেন আরেকটু ফুঁসলো ইহাম। তার এই অতর্কিত রাগের কারণ ঠাউর হলো না তার নিজের ভেতরেই। কোথায় বলেছিল রাতে শাড়ী পরার শাস্তি দিবে আর এই মেয়েটা… নীরবে আবারও দাঁত পিষল সে। মায়রার থমথমে মুখ আর সাজ বিহীন চেহারার দিকে তাকিয়ে নীরব ক্রোধ এঁটেই সে বিছানার একপাশে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
নিজেকে মায়রার খানিক হাল্কা লাগছে ওয়াশরুমে আর্তনাদ বিহীন কান্না গুলির কারণে ভেতরের ফাঁপা ভাবটাও কমে এসেছে তার। তাই চুপচাপ ইহামের পাশে উল্টোপিঠে শুয়ে পড়ল নিজেও। এদিকে ইহাম ফোঁসফোঁস করছে। মায়রার নীরব এড়িয়ে যাওয়া তার জিদ যেন আরো বাড়াচ্ছে। এই রাগের কোনো হেতু খুঁজে পাচ্ছে না সে।

অম্বরে দিনের আলো ফুটেছে অনেকসময় হয়। হাল্কা ঘুমটা ভাঙ্গতেই ইহাম পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখতে পায় তার পাশে মায়রার নেই। খানিক স্তব্ধ হয়ে খালি জায়গাটায় তাকিয়ে রইল সে। গড়গড় করে সজাগ মস্তিষ্কে মনে হলো কালকের সব ঘটনা। সেই সাথে অনুভব হলো অনুতাপ। নিজেনিজে কিছু একটা অনুভব করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। কাল বোধহয় একটু বেশি রূঢ় হয়ে গিয়েছিল মায়রার উপর। মেজাজ টা বুঝি একেবারেই খেঁই হারিয়ে গিয়েছিল। সব দিক বিবেচনা করে তার অন্তত একটু নমনীয় হওয়া উচিৎ ছিল। মায়রা খানিক অবুঝ, সব কিছুতে বেশি বুঝা একটা ভাব। তবে নিতান্তই মাথামোটা। তার সাথে অন্তত তাকে একটু বুঝবান হওয়ার উচিৎই ছিল। তা বেশ অনুধাবন করতে পারছে। বিচক্ষণ একটা মানুষ হিসেবে সম্পর্কের রেশ ঠিক রাখতে তার নিজের দিক থেকে বেশির ভাগ দায়িত্ব টা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যকীয়। কাল রাতে রাগের মাথায় না বুঝলেও এখন মায়রার পরিস্থিতি টা অনুমান করে তার যেন খারাপই লাগছে। এখন কোথায় গেল মেয়েটা?

হাটতে হাটতে পা বাড়াতেই বসার ঘরে চোখে পড়ল মায়রা কে। ব্লু কালার একটা থ্রিপিজ আবৃত গতরে। মাথায় ওড়না টানা। মুখটা কেমন মলিন। সেখানে আরো কয়েকজন আছে। বসার ঘরে দাঁড়াতেই শুনতে পেল মায়রার গলা।
“মা আমি আজ কে চ চলে যাই ঢাকায়? ভাইয়ার জন্যে অস্থির লাগছে।”
“এ কি বলো মায়রা আম্মা? এসব কি ধরনের কথা?”
“আসলে” শাশুড়ির কথায় মাথা আরো নুয়ে নিল মায়রা। “আমার আর এখানে মন টিকছে না মা। থাকতেও ভালো লাগছে না। আমি ভাইয়ার কাছে যেতে চাই।”
মায়রার অবুঝ কথার মানে বুঝলেন শিরিন বেগম। তাই শান্ত গলাতে জবাব দিলেন,
“আমি বেয়ান কে একটু আগে কল দিয়েছিলাম মায়রা। উনি বলেছেন তুহিন এখন ভালো আছে। এখনো ঘুমাচ্ছে। জ্ঞান এখনো ফিরেনি। তবে বিপদমুক্ত। আর তাছাড়া তোমাকে আমি একলা কি করে যেতে দিবো মা?এতটা দূরের রাস্তা। তোমার শ্বশুর দুপুরের দিকে চলে আসবে। রাতে যদি উনি চলে যান ঢাকা তবে উনার সাথে তুমি চলে যেও। তবুও একা তোমায় যেতে দিতে পারব না মা।”

মায়রা কিছু বলবে তার আগে ক্ষিপ্রে ইহাম গুরুগম্ভীর কন্ঠে জবাব দিল,
“কে কোথায় যাবে না যাবে সেটা পরে দেখা যাবে। তার আগে আমার একটা কড়া লিগারের চা বানিয়ে দাও মা। আর মায়রা চা নিয়ে জলদি রুমে আসো।”
মায়রা তাকালে দুজনের চোখাচোখি হলো। দেখতে পেল লোকটার অগ্নিভ দৃষ্টি। লাল লাল চোখ দিয়েই যেন তাকে শাসাচ্ছে। এক পলক তাকিয়ে আবারও হনহন করে চলে গেল সে নিজের রুমের দিকে। গায়ে জ্বলন ধরা ভাব হলো মায়রার। রাগে কটমট করল সে নিজেও। কোন দেশের কোন রাজা বাদশা সে? যে আসল, ঘটনার প্রেক্ষিতে একটা সিদ্ধান্ত জানিয়ে আবারও চলে গেল। যেন কথার নড়চড় হলেই শিরশ্ছেদ করবে। মুখ ভেংচালো মায়রা।

মনমরা হয়ে বসে শিফু একলা রুমে। বিছানার পায়ের দিকটায় মাঝারি আকারের একটা জানলা রয়েছে। এক কোণায় বসে নির্জীব হয়ে দূরে কোথাও কি একটা যেন দেখছে মগ্ন হয়ে। তার মুখের দিকে তাকালেই যেন বুঝা যায় কোনো প্রাণ নেই। নীরবে রুমে প্রবেশ করে মায়রা। শিফুর দিকে তাকাতেই খুব খারাপ লাগে তার। কাল রাতে আসলেই মেয়েটাকে বেশি কড়া কথা বলে ফেলেছে। ওভাবে না বললেও চলত। সে তো জানে নীরবে শিফু তার ভাইয়ের জন্যে কষ্ট পায়।
ধীর পায়ে মায়রা এগিয়ে গেল। কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই চমকে উঠল শিফু। আতঙ্ক নয়নে তাকিয়ে মায়রা কে দেখে মলিন হাসার চেষ্টা করল সে।
“ও তুমি ভাবি” আবারও ঘাড় বাঁকিয়ে নিল শিফু। “বসো ভাবি।”
শিফুর ক্ষীণ আওয়াজে তার পাশেই বসল মায়রা। অতঃপর শিফুর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে প্রশ্ন করল,

“আমার উপর রেগে আছো শিফু?”
“না” ম্লান হাসল শিফু। “রাগ করব কেন ভাবি? তোমার কথাতো আর ফেলে দেওয়ার মতো নয়। আমিও তো তুহিন ভাই কে কষ্ট দিয়েছি। একদিক থেকে তোমার কথা ঠিকই আছে। তবে রাগ করব কেন?”
মায়রা শিফুর দুই হাত জড়িয়ে নিল। নরম কন্ঠে জানাল,
“শিফু বোন আমার আমি ওভাবে বলতে চাইনি। তখন মাথা ঠিক ছিল না। কি থেকে কি বলেছি তুমি আমার কথা ধরে বসে থেকো না। আর কেউ না জানুক আমি তো জানি তোমার দিক টা। বোন আমার বড় বোন হিসেবে আমার কথায় মন খারাপ করে থেকো না।”
“আমি কাকে বুঝাবো আমার কষ্টটা ভাবি?”
“প্লিজ শিফু কেঁদো না। দেখি কি করা যায়। ভাইয়া এখন সুস্থ আছে। কেঁদো না প্লিজ।”
শিফুর চোখের পানি মুছে দিয়ে মায়রা বলে “বহিরে চলো।”

“চা নিয়ে আমি তোকে আসতে বলেছিলাম?”
“না আসলে ভাইয়া…”
“তাহলে তুই এলি কেন?”
ভাইয়ের শক্ত ঝাড়িতে কেমন হাঁসপাঁস করে উঠল শিফু। বলতেও পারছে না তার ভাবিই জোর করে চা ধরিয়ে দিয়েছে তাকে।
“মায়রা কোথায়?”
“আসলে ভাবি.. ”
“ও কোথায়? কি করে ও? সামান্য চা টাও কি সে দিয়ে যেতে পারে না? তার জন্যে তোকে প্রয়োজন?”
এই পর্যায়ে শিফু উত্তর দিতে পারে না। মাথা নুয়িয়ে আনে। তাকে এভাবে দেখে তপ্ত মেজাজ টা খানিক শান্ত করে নরম গলাতে বলে,
“তোর সাথে আমার কথা আছে। রাতে বলব। এখন গিয়ে মায়রা কে পাঠা।”
একটু চুপ থেকে আবারও বলে ইহাম,
“ও যদি দুনিয়াও উদ্ধার করে তবুও এই মুহূর্তে ওকে আসতে বলবি আমার সামনে। নয়তো আমি গেলে বিড়ালের বাচ্চার মতো ঘাড় ধরে কিন্তু নিয়ে আসব ওকে। যা মায়রা কে আসতে বল গিয়ে। এখন মানে এখনি।”
দাঁত কটমট করে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মায়রা এগিয়ে যায় ইহামের রুমের দিকে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই কোথা থেকে সিংহের মতো গর্জে এলো ইহাম। হিংস্রের মতো চেঁপে ধরল মায়রার বাহু। সেই সাথে মায়রার দিকে দুই কদম এগিয়েও এলো। চিবিয়ে বলল,

“খুব সাহস বেড়ে গেছে না তোমার? যা খুশি বলছো করছো।”
“ছাড়ুন আমার হাত।”
“ছাড়ব না। আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”
হাত ছাড়াতে চেয়ে কঠিন স্বরে মায়রা জবাব দিল,
“আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। আমি বাধ্য নই।”
“অবকোর্স ইউ।”
“ছাড়ুন। যাকে ডিভোর্স দিবেন তার সাথে এমন আচারণ করার মানে কি? কিসের বাধ্যকতা?”
ব্যস হুট করেই ইহাম হাত ছেড়ে গাল চেঁপে ধরল কঠোর রূপে। কটমট করে জবাব দিল,
“ডিভোর্স দেইনি। দিলে তখন দেখা যাবে। তার আগে তুমি আমার বউ। আর সেই আশা বাদ দাও মাথামোটা বলদ। বেশি বেড়ো না। সেটা তোমার জন্যো সুখকর হবে না। কোথাও যাবে না তুমি।”
“আপনি কোনো প্রেসিডেন্ট কিংবা জমিদার নন। যা বলবেন সবাই কে শুনতে হবে।”
“সবাই শুনুক আর না শুনুক আমি তোমার স্বামী হই। সেই হিসেবে তুমি আমার সব কথা শুনতে বাধ্য। আর শুনবেও।”

“শুনব না। কি করবেন আপনি? ছাড়ুন লাগছে আমার।”
তর্ক বিহীন ইহাম ছেড়ে দিল মায়রার গাল। গলা কেশে বলল,
“কি করব তা তোমায় বলে করব না মায়রা। যা করার সরাসরি করেই দেখাব। চুপচাপ গিয়ে রেডি হও।”
“আমি বিয়েতে যাবো না।”
“যাবে।”
“বললাম তো যাবো না।”
“তুমি যাবে।”
“না।”
“তোমায় যেতে হবে না। যে অবস্থাতেই তুমি থাকো সেভাবেই তোমাকে আমি বিয়ে বাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাবো। তাই রেডি হবে কি হবে না বুঝে দেখো।”

আর যাই হোক এই কয়েক দিনে মায়রা বেশ বুঝেছে ইহাম কেমন ধরনের মানুষ। যা বলবে তা যে করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পুরো এক কথার মানুষ। দেখা যাবে যেনতেন পোশাকে বগলদাবা করে তুলে নিয়ে গেল বিয়ে বাড়িতে। পরে আফসোস করার চেয়ে না চাইতেও রেডি হতে হয়েছে মায়রা কে। টকটকে মেরুন রঙ এর একটা শাড়ি পরেছে মায়রা। চোখে আইলাইনার আর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক বাদে কোনো সাজ নেই মুখে। খোলা চুলে যেন মোহনিয়া অপ্সরী লাগছে। দূর থেকে ইহাম চাইলেও চোখ ফেরাতে পারছে না। সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগছে টকটকে ঠোঁট গুলি। একদম চোখ ধাঁদিয়ে দেওয়া যাকে বলে।

মায়রা ইচ্ছাকৃত ভাবেই ইহামের বিপরীত গাড়িতে উঠেছে শাশুড়ির সাথে। যেন পুরোপুরি এড়িয়ে চলতে চাইছে ওই কঠিন পাষাণ মানবটা কে। একটা নির্দয় পুরুষ। দয়া মায়া বলতে কিছু নেই। গাড়িতে চুপচাপ বসে থাকতেই ফোনটা টুং করে শব্দ হলো। স্কিনে দেখা গেল “পাষান মানব” নাম্বারটা থেকে ম্যাসেজ এসেছে।
“খুব বুঝি এড়িয়ে যেতে চাইছো মেয়ে? যত উড়ো নাটাই টা যে আমার হাতে। ঘুরে ফিরে আমার টানেই আমার হাতের মুঠোয় আসতে হবে বলদ মেয়ে।”

বিয়ে বাড়িতেও মায়রা আর ইহামের খুব একটা দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। মেয়েটা যেন জেদে একেবারে তার থেকে লুকিয়ে যেতে চাইছে। বিষয়টায় বেশ আশাহত হলো ইহাম। না কালকে একটু বেশি কড়া হয়ে গিয়েছিল বোধহয়। বলদ জেদি মেয়েটা এখন জেদ ধরে তার সাথে এমন করছে। লুকোচুরি খেলা চালাচ্ছে। আজকের ঝামেলাটা শেষ করে রাতেই মেয়েটাকে বুঝিয়ে নিতে হবে। এভাবে এড়িয়ে চললে কি আর পারা যায়? মানা যায় বিষয়টা। এই যে এখন আধুত মুখটা দেখে নিজেকে একটু শীতল করতে চাইছে তবুও মেয়েটা জেদ ধরে যেন কোথাও লুকিয়ে আছে। যেন কিছুতে সামনে পড়তে না হয় তার। এই জ্বালা টুক কি হজম করার মতো তার কাছে?
তীক্ষ্ণ নজরে ইহাম আশপাশটা দেখল। তার জহুরি চোখ সকল কিছু পর্যবেক্ষণে মশগুল। হিমেলের শ্বশুর বাড়ির অবস্থা বেশ ভালো। বলতে গেলে হিমেলদের থেকেও ভালো পর্যায়ে। নিহাত সম্পর্কের বিয়ে। নয়তো মেয়েকে আরো উচ্চরস্থরে বিয়ে দিতেন ভদ্র লোকেরা।

তবে তার চিন্তার বিষয় হলো অন্যটা। ইবরাহিম কে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে বিষয়টা। সকলকে সাবধান হতে বলেছে। কাল গোপনে জেনে এসেছে ক্রিমিনাল কনেপক্ষের নিকটাত্মীয়। তাই নিশ্চয় বিয়েতে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা করে নিজেদের অসম্মান করতে চাইবে না। তবে কিছু একটা হবে এটা নিশ্চিত। তবে কি সেটাই ধারনা করতে পারছে না সে। তাই বিষয়টা বেশ জটিল এখানটায়। চোখ কান সর্বদা খুলা রাখতে হবে।
ইবরাহিমের সাথে কিছু একটা বিষয়ে গভীর ভাবে আলোচনা করছে ইহাম। হাতে দুজনেরই সফট ড্রিংক। তাতে চুমুক লাগাতেই ছুটে এলো শিফু। স্বাভাবিক ভাবে নিয়েই প্রশ্ন করল ইহাম,

“কি হয়েছে শিফু? এভাবে এলি যে? কোনো দরকার?”
“না ভাইয়া। আসলে আম্মু ভাবিকে ডাকছে। কিন্তু কোথাও তো ভাবিকে দেখলাম না।”
“দেখ আশেপাশেই আছে কোথাও।”
“মাত্রই দেখে এলাম ভাইয়া।”
“এত বড় বাড়ি কোথা থেকে কোথায় গিয়েছে একটু ভালো করে খুঁজে দেখ।”
“আচ্ছা। তুমি পেলে আমাকে জানিও কল দিয়ে।”
“ওকে।”

শিফু চলে যেতেই ইবরাহিমের সাথে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে থমকালো ইহাম। বিষয়টা ততটা গুরুত্ব না দিলেও হঠাৎ মস্তিষ্ক কিছু একটা ইঙ্গিত দিতেই চমকে উঠল সে। কপালে সরু রেখা দেখা গেল। হুট করে সে পিছন ফিরল শিফুকে কিছু জিজ্ঞেস করতে। ততক্ষণে শিফু চোখের আড়াল হয়ে গিয়েছে। এবার যেন মনের সন্দেহ গাঢ় হলো তার। দুই পা বাড়াতেই ফোনটা টুং করে উঠল। আননোন একটা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে। এড়িয়ে যেতে গিয়েও কিছু ভেবে ওপেন করল তা। চোখের সামনে ভেসে উঠল গোটাগোটা অক্ষরে টাইপ করা লেখাটা।
“তোর বউটা এত ছটফট করে কেন রে ক্যাপ্টেন ফাহাদ ইহাম চৌধুরী?”

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৩১

বিস্ফোরিত নয়নে ম্যাসেজ টায় চোখ বুলাতেই আতঙ্কে আঁতকে উঠল সে। কিছু একটা অনুমান করে ত্রাসে কলিজা কেঁপে উঠল তার। আবারও ভীষণ অস্থির হয়ে ঝাপসা চোখে নজর বুলালো ম্যাসেজ টায়। উদভ্রান্তের মতো ব্যাকুল হয়ে উঠল ম্যাসেজ টার সূক্ষ্ম ইঙ্গিতটায়। সে কিছু একটা অনুমান করল ব্যস্ত ভঙ্গিতে সেই সাথে অনুধাবন করতে পারল অস্থির ভাবে হৃদয়ে তীব্র উঠানামা। হৃদগহ্বর হঠাৎই গাঢ় যন্ত্রণায় হাহাকার করে উঠল। তার মানে মায়রা?

মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৩৩