মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪৪
সাদিয়া
একই টিম মেম্বার হলেও সৌম্যের সাথে ইবরাহিমের খুব একটা সখ্যতা নেই। এর কারণ সূক্ষ্ম হলেও গভীর মনস্তাত্ত্বিক। যদিও সবটা ঘিরে রয়েছে ইহাম নিজেই। তবে সৌম্য বিষয়টা একান্ত নিজের কাছে রেখেছে। কখনো কাউকে প্রকাশ করেনি। তবুও নিজের উদ্দীপনা দমিয়ে রাখতে না পেরে এসেছে ইবরাহিমের কাছে। খানিক ইতস্তত বোধ করেই সৌম্য বলল,
“তোমার সাথে একটু কথা ছিল।”
ফোনের স্কিন থেকে দৃষ্টি এবার তার দিকে ফিরায় ইবরাহিম। এরপর পকেটে ফোন রেখে স্থির গলায় জানতে চায়।
“বলো সৌম্য। বিশেষ কোনো দরকার?”
“হুম” গম্ভীর স্বরে জবাব দিল সৌম্য। কোনো ভণিতা ছাড়াই প্রশ্ন করল, “আযহার পাটোয়ারি কোথায় ইবরাহিম? ক্যাপ্টেন আমাদের এই বিষয়ে জানায়নি এখনো।”
কপাল কুঁচকে ইবরাহিম ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ক্যাপ্টেন কে প্রশ্নবিদ্ধ করছো সৌম্য?”
খানিক চমকায় সৌম্য। ক্যাপ্টেন কে সে নিজেও যথেষ্ট মান্য করে এবং কি বেশ পছন্দও করে। তবে তার এমন কৌতূহলের অন্য কারণ আছে। মনের চাঁপা না বলা কিছু কথাও আছে।
“এমনটা তুমি কি করে জানতে চাও সৌম্য? তুমি কি জানো না ক্যাপ্টেন কি রকম ধরনের মানুষ। উনার টিমমেম্বার হয়েও উনার প্রতি কি তোমার বিশ্বাস নেই? কোন আক্কেলে এমনটা জিজ্ঞেস করো তুমি?”
ইবরাহিমের মেজাজ খারাপ হয়েছে। সৌম্যর প্রতি বিরক্তও হয়েছে ইহামের বিরুদ্ধে এমন প্রশ্ন করায়।
“ক্যাপ্টেন যেহেতু বলেছে মিশন কমপ্লিট। তো নিশ্চিত থাকো। খামোখা টেনশন করে নিজের শরীর খারাপ করার কোনো প্রয়োজনই নেই। আজ যাওয়ার সময় নিশ্চয় ক্যাপ্টেন আমাদের যা জানানোর জানাবেন।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মেয়েটা এখনো অভিমানে মুখ ফিরিয়ে রেখে। ভেতরে ভেতরে যে ফুঁপাচ্ছে তা বেশ টের পায় ইহাম। তবুও সে শান্তস্থির। কম্পিত কন্ঠে আবার বলে মন আকাশে কালো মেঘ সাজিয়ে অভিমানি স্বরে।
“আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না বললাম তো আপনি যান।”
কোমল মিগধ কন্ঠে বলে ইহাম “দেখি এদিকে তাকাও তো।”
“পারব না আপনি যান পাষাণ লোক।”
কথা শেষ করে মায়রা নড়ে চড়ে উঠে। কাল সারাদিন গুলিবিদ্ধ দগ্ধ হাতটা প্রায় অবশ ছিল তাই ব্যথা তেমন টের না পেলেও আজ হাত নাড়াতে বেশ কষরত করতে হচ্ছে। হাতে ভর দিয়ে নিজের বল শক্তি দিয়ে উঠতে চাইলে আবারও বিছানায় পড়ে যায়। তা দেখে ইহাম এগিয়ে আসে দুই পা। হাত বাড়িয়ে ধরতে চাইলে মায়রা মানা করে দেয়। তা দেখেই চোখ পাকায় গাম্ভীর্য আভিজাত্য মুড়া কঠোর হৃদয়ের লোক। জোড়ালো কন্ঠে বলে,
“মারব এক আছাড় বেয়াদব।”
ইহাম কে সিরিয়াস দেখে মায়রা কিছু বলে না। থমথমে মুখ আর রাগী চোখ বলে দেয় ভেতরের কথা। লোকটা নিজের কাঠপেটা শক্ত হাতটা বাড়িয়ে দিতেই পুনরায় কড়া কথা শুনার আগে থমথমে মুখে মায়রা সেই হাতটা ধরল। ইহামের সাহায্যে উঠে বসতে বসতে ক্ষীণ আওয়াজে মলিন মুখে জবাব দিল,
“পারবেন তো শুধু এটাই। এছাড়া পারেন কি? কঠোরতা আপনার আবরণ না?”
“তোমার চোখ খালি আমার কঠোরতাই খুঁজে তাই না মাথামোটা গবেট একটা?”
মুখ মুচড়ে মায়রা অন্য পাশে ফিরল। কোনো উত্তর দিলো না। মায়রার এলোমেলো চুল দুই হাত দিয়ে ঠিক করে আলতো স্পর্শে চিবুক ছোঁয়। মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে মোটা আওয়াজে ডাকে,
“এদিক তাকাও।”
মায়রা তখনো দৃষ্টি নত করে রেখেছিল। ইহাম ফের কন্ঠ গরম করে বলে “এদিকে তাকাতে বলেছি বেয়াদব।” কন্ঠের ঝাঁঝালো তেজে অভিমানি মুখে চোখ তুলে তাকায় মায়রা। কোমল স্নিগ্ধ সতেজ মুখখানার দিকে তাকিয়ে সকল রুক্ষতা কঠোরতা অদৃশ্য হয়। মনের কুঠরিতে হীম মৃদু হাওয়া বয় প্রশান্তির ছোঁয়া দিতে। বুকের অশান্ত কোলাহল নিমিষে দূর হয়। মায়ামায়া টালমাটাল চোখে তাকিয়ে মোহাগ্রস্থের মতো ইহাম প্রশ্ন করে,
“আর কবে আমার কঠোর আবরণ বেদ করে অনুগ্র মনের খুঁজটা এক নিমিষে নিতে পারবে বোকা মেয়ে?”
ইহামের চাউনি আর কন্ঠের ঝাপটা মায়রা কে স্থবির করে দেয়। নিস্তব্ধের মতো বসে থাকে মায়রা। উষ্কখুষ্ক করে। নিভু গলায় প্রশ্ন করে,
“আমি এতটাই অবুঝ?”
ইহাম ডান হাতের মৃদু চাঁপে মায়রার গাল দুটি জড়িয়ে নেয়। এতে মেয়েটার তুলতুলে গাল চেপ্টা হয়ে ঠোঁট দুটি গোল হয়ে যায়। সাফ্রানের আভা যুক্ত লাল কোমল ঠোঁট গুলির দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বেখেয়ালি হয়ে জবাব দেয়, “একটু বেশিই অবুঝ। যাকে বলে মাথামোটা গবেট।” মায়রা নাক ফুলিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় আবারও। গলায় চাঁপা অভিমানের স্পর্শ ঠেলে মেয়েটা বলে,
“আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না। একটু একা থাকতে দিন।”
তৎক্ষণাৎ ক্ষিপ্র বেগে ইহাম আবারও মায়রার গালে চাঁপ দিয়ে ধরে নিজের দিকে ফিরায়। লঘু স্বর তুলে জানায় তাকে হৃদয় বিদায়ক এক বাক্য। যা তড়িৎ বেগে আঘাত করে বুকের খুব গহীন কোণে।
“চলেই তো যাবো বিকেলে। তারপর একাএকা থেকো। আবার দেখা হতে বহু দূর। এমনকি রোজা ঈদেও ছুটি না পেতে পারি।”
নিমিষে চোখ ভর্তি পানি নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মায়রা। হৃদয়টা সহস্র আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। রোজা ঈদ হতেও আরো তিন থেকে সাড়ে তিন মাস দেরি। অথচ এই লোক কি বলছে? এত দিনেও দেখা হবে না মানে? সে তো মরেই যাবে বোধহয়। আর এই পাষাণ লোক কিভাবে নির্দ্বিধায় বলছে দেখো। হৃদয়টা ব্যথায় খামছে ধরছে তার। দাঁতে দাঁত পিষে নিজেকে শক্ত দেখাতে মায়রা কোনো রকম বলল,
“আপনি চলে যান এখনি। আমাকে কষ্ট দিতে আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না।”
মায়রার অবুঝ লুকানো কান্না বুঝে মায়রা মুখ ফেরানোর আগেই ইহাম ঝুঁকে ওই লাল কমলা আভাযুক্ত ঠোঁটে চট করে চুমু খায়। এই মুহূর্তে ওই মানুষটার গভীর উষ্ণ স্পর্শ পেতেই আবেগের প্লাবন বইলো। ইহামের ওষ্ঠের বন্ধনে থেকেই মেয়েটা ভেতরের উত্তপ্ত দাবানলে জর্জরিত হয়ে ফুঁপিয়ে উঠল। তার বেসামান কান্নার দাপটে দ্রুত করে ইহাম ঠোঁট ছাড়ে। বুকে চেঁপে মায়রার মাথায় বারংবার চুমু খায় সে। ভেতরটা আহত হচ্ছে মেয়েটার কান্নার কাতর স্বরে। কম্পিত কন্ঠে কোনো রকম বলল,
“জান আমার প্লিজ শেষ মুহূর্তে আমায় উন্মাদ করার পরিকল্পনা করো না। পাগল হয়ে যাবো আমি। সব কিছু ম্যানেজ করে নিবো তুমি কেবল আমার কথা শুনে বাধ্য থেকো। একটুও ঘাড়ত্যাড়ামি করো না। লক্ষ্মী মেয়ের মতো জামাই এর কথা শুনবে। এবার কান্না থামাও। খুব বিশ্রী লাগে তোমার কান্না।”
মায়রা আদরে আরো বেশি গদগদ হয়ে ফুঁপাতেই থাকে। ইহাম নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কিছুপল নীরব থাকে চুপ করে যাওয়ার আশায়। আর কত বার করে বলবে এই মেয়েকে যে কান্না তার বিরক্ত লাগে। কিন্তু মাথামোটা মেয়েটা কান্না শুরু করলে সমুদ্রে ভাসে। এই পর্যায়ে ইহাম বিরক্ত হয়ে শক্ত গলায় বলে উঠে,
“হেই স্টুপিড গার্ল, আই সেড স্টপ ইউর ফাকিং ক্রাই।”
ইহামের মেজাজ গরম তা গলার স্বরে টের পেয়ে মায়রা ফুঁপানো কমায়। তবে চোখের পানিতে বান ভাসে। মায়রা মানুষটার কোমর জড়িয়ে বলে,
“আপনি প্লিজ যাবেন না ক্যাপ্টেন সাহেব।”
“বোকার মতো কথা বলে না।”
“প্লিজ থেকে যান না। ওখানে আর যেতে হবে না।”
ইহামের কন্ঠে বিরক্ত শুনা যায়, “মায়রা অবুঝের মতো আবদার করো না।”
নাক টেনে মায়রা জবাব দেয়, “তবে আমাকেও নিয়ে যান।”
“এই অবস্থায়? অসম্ভব।”
মায়রা নীরবে চোখের পানি ফেলে ঘাড় উঁচু করে মানুষটার মুখ দেখে। ভেজা কন্ঠে বিরবির করে জানায়, “আপনি বড্ড পাষাণ লোক ক্যাপ্টেন সাহেব। আপনার ভেতরে কি একটুও মায়া নেই?” মায়রার প্রশ্নে খানিক অপ্রস্তুত হয় ইহাম। তবুও নিজেকে সামলে গমগম কন্ঠে জবাব দেয়, “না” বলে। মায়রা একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। অভিমানে বুক ভারি হয়। ঠোঁট চেঁপে নিজেকে শান্ত করে।
“উঠো। ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছি।”
“….
“উঠো। কাম।”
“…..
“কি? আবার রাগ করে চুপ করে বসে থাকবে তাই তো?”
মায়রা সাথে সাথে কোনো উত্তর দেয় না। বরঞ্চ ইহামের দিকে গভীর মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুকের ভেতরটা উথালা হয় ইহামের। ফোঁস করে তপ্ত নিশ্বাস ঝেড়ে বলে,
“প্লিজ লক্ষ্মী টা। অবুঝের মতো কিছু চেয়ে বসো না যেটা অসম্ভব। আমার মনের বিরুদ্ধ এমন কোনো আবদার করো না যেটা না পূরণ করার জন্যে তুমি কষ্ট পাও। আই কান্ট এক্সপেক ইট।”
মায়রা চোখের পানিটা হাতের তালু দিয়ে মুছে নেয়। কন্ঠে এক রাশ মায়া ঢেলে দিয়ে চেয়ে বসে,
“আজকের দিনটা আমার সাথে থেকে যান ক্যাপ্টেন সাহেব?”
এমন এক অসম্ভব আবদার করে বসেছে মেয়েটা ওমন কাতর স্বরে যা কয়েক মুহূর্তের জন্যে ইহাম কে স্থবির করে দিয়েছে। ঘোর লাগা চোখে কিছুক্ষণ ইহাম তাকিয়ে রইল মেয়েটার মুখ পানে। কাঁদোকাঁদো লাল লাল চোখ আর নাক নিয়ে গাল ফুলিয়ে মেয়েটা উত্তরের আশায় তার দিকেই তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো। ইহাম ঝট করে মায়রা কে পাজোকোলে তুলে নেয়। বুকের তার তাণ্ডব জলোচ্ছ্বাস বয়।
“চলো ফ্রেশ করে দিচ্ছি।”
“আমার উত্তরটা দিলেন না কিন্তু আপনি।”
ইহামের গলা দুই হাতে জড়িয়ে ধরে মায়রা আলতো দৃষ্টি ফেলে প্রশ্ন করে। ইহাম জবাব দেয় না। বরং মায়রা কে আলতো করে উপরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আবারও ঠিক করে জড়িয়ে নিল মেয়েটার ছোট্ট দেহখানা দুই হাতে। ইহামের কাজে সে আরেক ধাপ ইহামের বলিষ্ঠ দেহের সাথে মিশে গেল। দুই হাতে শক্ত করে চেঁপে ধরল উঁচু শক্ত লোকের গলাটা। মায়রা তবুও তাকিয়ে থাকে উত্তরের জন্যে। ইহাম এক পা বাড়াতেই সে বলে,
“আবার তো আসবেন সেই কয়েক মাস পর। আজকের দিনটা থেকে গেলে কি হয় ক্যাপ্টেন সাহেব?”
মায়রার স্নেহসিক্ত কন্ঠে ছিল মায়া আর নরমতা। যা এক ঝলকে কাঁপিয়ে দেয় ইহামের বুক জমিনের ভীত। কঠোর মুখে পা বাড়াতে বাড়াতে কেবল ছোট্ট করে জবাব দেয় “দেখা যাক।”
নিজের টিমের ৫ মেম্বারের সামনে বসে আছে ইহাম। হাসপাতালের পাশেই এক রেস্টুরেন্টে বসেছে ৬ জন মিলে। সবাই নীরবে তাকিয়ে রয়েছে ইহামের মূল্যবান বক্তব্য শুনার আশায়। কারণ তাদের ক্যাপ্টেন নিজেই তাদের আজ এখানে ডেকেছে। বেলা হয়ে যাচ্ছে। মধ্যাহ্নের সময় এগিয়ে আসছে। ১২ টার কাছাকাছি বোধহয়। রোদের তাপও বাড়ছে প্রখর হয়ে। নীরবতা গলিয়ে ইহাম নিজেই শুরু করল,
“সবাই কে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে আর প্রশ্নের উত্তর জানাতে এখানে ডেকেছি। এটা নিশ্চয় বুঝে গিয়ছো সবাই?”
সবাই সম্মতি জানায়। তখনি সৌম্যের চোখের দিকে ইহাম তাকাতেই সে জড়সড় হয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ভেতরে খুব অস্বস্তি হয় ওই বাজপাখির নজর দেখে। বারবার মনে হয় ক্যাপ্টেন কথাটা যেন তাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে।
“অল অফ ইউ নো আমাদের মিশন কমপ্লিট।”
সবাই মৃদু আওয়াজেই জবাব দেয় “জ্বি” বলে।
“এটাও সবার জানা আছে আমাদের এই মিশনটা কতটা ইম্পরট্যান্ট আর ডেঞ্জারাস ছিল। ইভেন আমার ওয়াইফ মিসেস চৌধুরী এখনো বাজে ভাবে আহত।”
“ইয়েস স্যার।”
“আমাদের চট্টগ্রাম ফেরার সময় হয়েছে এবার।”
“জ্বি।”
“এখন তোমাদের মনে একটাই প্রশ্ন তবে আযহার পাটোয়ারির কি হয়েছে? রাইট?”
এই পর্যায়ে সবাই চুপ করে গেল। বিশেষ করে সৌম্য একেবারে মুখ বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় যেন।
“কি হলো? স্পিক আপ।”
ইবরাহিম বেশ সাবলীল ভাবে নিম্ন আওয়াজে জানাল, “আমরা আপনায় বিশ্বাস করি ক্যাপ্টেন।”
ইহাম শুনল না তবুও। নিজ থেকেই বলে গেল, “আযহার পাটোয়ারি বর্তমানে মৃত। আমি ঢাকায় ব্যাক করার পর সেই রাতেই ফেনী গিয়েছিলাম ওকে ধরতে। সেটা নিশ্চয় সবাই জানো। ওর সাথে আমার এক প্রকার ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পালাতে গিয়ে ইনকাউন্ডারে জীবন হারায় আমার হাতে।” দম নিল ইহাম। এবার সবার মুখের দিকে তাকায় একএক করে। তার টিমের চার মেম্বারেরই চোখে মুখে বিস্ময়। শুধু এক জন কে কেমন ভাবুক উদাস দেখা গেল। বাঁকা চোখে তাকে পরখ করল ইহাম। যেন তার কথার মাঝেও যে খাদ রয়েছে তা সে বেশ টের পেয়েছে। তবুও তাতে পাত্তা দিলো না। কারণ তার দ্বারা সে নিরাপদই। তাই বাঁকা হেসে সে উঠার আগে আবার জানাল আরেকটা সিদ্ধান্ত।
“কাল খুব ভোরে রওনা দিচ্ছি আমরা।”
দুপুরের খাবার মুখের সামনে নিয়ে বসে আছে ইহাম। শিরিন বেগম সকাল সকাল বাড়ি গিয়ে জাউভাত রান্না করে নিয়ে এসেছেন ছেলের বউ এর জন্যে। বাকিদের জন্যে রান্নাও করে এনেছেন। চামচে নরম গরম ভাতের সাথে মাগুর মাছের পাতলা ঝোল। মুখের সামনে সেই কখন থেকে ধরে রাখলেও মায়রা আর তুলছে না।
“বিশ্বাস করুন আমার একটুও ভালো লাগছে না এসব খেতে।”
“খেতে হবে হা করো।”
“খাওয়ার আগে আপনার উপর উগলে বের হয়ে আসবে।”
“আসুক। আবার খাবে।”
ভ্রুকুটি করে মায়রা তাকিয়ে থাকে বিস্মিত হয়ে। বিড়বিড় করে বলে,
“মানে আপনি বলতে চাইছেন। উগলে আসলে বমি করলেও খেতে হবে?”
“ইয়েস।”
“আশ্চর্য তো।”
“যা মনে করো। হা করো এবার। খাবে বমি করবে আবার খাবে। কোনো সমস্যা আছে?”
“আল্লাহ গো।”
“মায়রা হা করো। কোনো বাহানা শুনব না।”
“দূর।”
মোহমায়ার বাহুডোরে পর্ব ৪৩
মেয়েটা বিছানা থেকে উঠতে চাইলে হাত চেঁপে থামায় ইহাম। বলিষ্ঠ গলায় বলে,
“চুপচাপ বসে খাবার ফিনিশ করো।”
মায়রা দুই হাত জোর করে অনুনয়ের স্বরে জানাল,
“বিশ্বাস করুন আমার এসব একটুও খেতে ইচ্ছা হচ্ছে না। দয়া করুন। আমার মাথা ঘুরাচ্ছে সত্যি গা গুলাচ্ছে। আপনার উপরই বমি করে দিবো। পরে যাচ্ছেতাই একা বিষয় হয়ে যাবে।”
ইহাম চুপচাপ পরখ করল মায়রা কে। লম্বা করে নিশ্বাস ঝেড়ে হঠাৎ ফিসফিস করে জানতে চাইল,
“আমার পিচ্চি মিসেস চৌধুরীর আপনি কি কন্সিভ করেছেন নাকি?”