মোহশৃঙ্খল পর্ব ১০

মোহশৃঙ্খল পর্ব ১০
মাহা আয়মাত

বাংলাদেশে তখন গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই, রাত সাড়ে তিনটা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঠিক তখনই ল্যান্ড করে দুবাই টু ঢাকা ফ্লাইটটি। দীর্ঘ যাত্রার হলেও আদ্রিকের চোখে মুখে নেই কোনো ক্লান্তি। আদ্রিক বেরিয়ে এল টার্মিনাল থেকে।
আদ্রিক কেপ নিয়ে সোজা চলে আসে কারদার ম্যানরে। পকেট থেকে বাড়ির মেইন ডোরের চাবি বের করে দরজাটি খোলে, নিঃশব্দে সিঁড়ি বেয়ে উপরের তলায় উঠে যায়।

একবার তাকাল অর্তিহার রুমের দরজায়, তারপর নিজ রুমে গিয়ে কাভার্ডের এক কোণ থেকে অর্তিহার দরজার চাবিটা নিয়ে বেড়িয়ে এল রুম থেকে। নিঃশব্দে দাঁড়াল অর্তিহার দরজার সামনে। একটুও দেরি না করে খুলে ফেলে দরজা। ভেতরে ঢুকেই মৃদু আলোয় দেখতে পায়, অর্তিহা বিছানার পাশেই মেঝেতে বসে আছে। চুল এলোমেলো, চোখে-মুখে পরিপূর্ণ অবসাদ। দরজার হালকা শব্দে চমকে তাকায় তার দিকেই। আর দেখেই ভয়ে আতঙ্কে হয়ে গেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আদ্রিক এসেছে? কিন্তু… সে তো এখন দুবাইয়ে থাকার কথা! তাহলে হঠাৎ এখানে? তাহলে কি জানে গেছে সব? জানে সাইহান এসেছিল… তার জন্য প্রস্তাব নিয়ে? ভয়ে দাঁড়িয়ে গেল অর্তিহা। আদ্রিক কোনো শব্দ না করে দরজাটা লক করে দিল। ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে লাগল অর্তিহার দিকে। অর্তিহা ঘাবড়ে গিয়ে পিছু হটতে লাগল, যতক্ষণ না দেয়ালে এসে ঠেকে যায়। আর তখনই আদ্রিক দুই হাত বাড়িয়ে দেয়ালের দুপাশে আটকে ফেলে অর্তিহাকে। মুখোমুখি দূরত্ব এতটাই কম, দুজনের নিঃশ্বাসই যেন মিশে একাকার।
ভয়ে চোখ বন্ধ করল অর্তিহা। আদ্রিকের কণ্ঠ ছিল শান্ত, কিন্তু তাতে জমে থাকা বরফের মতো শীতলতা।

— তাকা আমার দিকে।
অর্তিহা তাকায় না, চোখ বন্ধ রেখেই থাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আদ্রিক আবার বলে,
— তাকাতে বলেছি।
তবুও নড়ল না অর্তিহা। হঠাৎই, এক মুহূর্তে আদ্রিক তার ডান হাত দিয়ে দেয়ালে জোরে ঘুষি মারে। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে রুম। অর্তিহা ভয়ে চমকে উঠে চোখ মেলে তাকায়। রক্ত ঝরছে আদ্রিকের হাত থেকে—টুপটাপ করে গড়িয়ে পড়ছে মেঝেতে। দেয়ালের উপর ছিটকে পড়েছে সেই রক্ত। অর্তিহা আতঙ্কে কেঁদে ফেলে। তবুও আদ্রিকের মুখে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন নেই। তার মুখশ্রী আগের মতোই— হিমশীতল, শান্ত, কঠোর। যেন ব্যথা বলে কিছু তার শরীরে নেই।
সে ঠান্ডা গলায় বলে,

— কেন তুই এত অবাধ্য হস? আমার কথা শুনিস না কেন? অবাধ্য হয়ে বারবার শাস্তি পাস!
তারপর ধীরে ধীরে চোখ বুলিয়ে নেয় অর্তিহার সারা শরীরজুড়ে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— এইভাবেই গিয়েছিলি সাইহানের সামনে? আমার বুকের ভেতর আগুন ধরিয়ে দিতে?
অর্তিহার কাঁদতে কাঁদতে বলে,
— আমি… নিজে ইচ্ছা করে যাইনি… ড্যাড বলেছিলো!
আদ্রিক ভ্রু কুঁচকে, চাপা রাগে বলে,
— ড্যাড বললেই ভুলে যাবি তুই কার? ভুলে গেলি আমি কী করতে পারি? তোকে আর কতোভাবে বোঝাবো তুই শুধু আমার, শুধুই আমার!
একটু থেমে নিচু কণ্ঠে বলে,

— তোর কাছে আসা প্রতিটি মানুষ আমার আত্মাকে কাটার মতো বিদ্ধ করে, অর্তি।
অর্তিহা কাঁপতে কাঁপতে চোখ মুছতে মুছতে বলে,
— আপনি কেন আমাকে এতো কষ্ট দেন? আমি আর পারছি না। একটু মুক্তি দিন… আপনার এই মোহশৃঙ্খল থেকে মুক্তি চাই। আপনার দেওয়া কষ্টগুলো বিষ হয়ে ঢুকছে আমার শরীরে। আমি মরছিও না, বাঁচতেও পারছি না!
আদ্রিক হিমশীতল গলায় বলে,

— তুই দাহ করবি আমার বুক, আর তোর মুক্তি হবে? না অর্তি, এই জন্মে তা সম্ভব নয়। এই জীবন তুই আমার বন্দিনী হয়েই থাকবি। তাই বলছি, আমাকে মেনে নে, আমাকে নিজের করে নে। না মানলেও আমার কিছু এসে যায় না! কষ্ট তুইই পাবি, কিন্তু মুক্তি? সে তো তোর কপালে নেই।
নিঃশব্দে কাঁদতে থাকে অর্তিহা। আদ্রিক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর নিজের রক্তমাখা হাত দিয়ে অর্তিহার গালের চুল সরিয়ে দেয়, কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীরে বলে,
— আমি আদ্রিক কারদার। আমার শত্রু এখনো বেঁচে আছে, শুধু এই কারণে যে আমি এখনও তাকে মারার কথা ভাবিনি।

তারপর ধীরে সরে আসে, চোখে এক নিস্তব্ধ হুমকির ছায়া রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অর্তিহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। গলায় এক অদৃশ্য পাথর যেন চেপে বসেছে। সে বুঝে উঠতে পারে না—আদ্রিক কি হুমকি দিয়ে গেল সাইহানের জন্য? তবে কি… সাইহানের পরিণতিও হবে…? ততক্ষণে তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এসেছে। মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা। কোনোমতে বিছানায় গিয়ে বসে—আর বসতেই সব অন্ধকার হয়ে আসে। ধপ করে লুটিয়ে পড়ে বিছানায়। জ্ঞান হারায় অর্তিহা।

সকালের আলো ঝলমলে। মেহজা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে। লিভিং রুমে দেখে আরভিদ বসে আছে, পাশে তাহিয়া কারদার, আভীর কারদার আর নাজনীন কারদার। ওরা অর্তিহার বিয়ের আয়োজন নিয়ে আলোচনা করছে। শুধু আরভিদ কথা বলছে না, সে নিজের ফোনে মনোযোগী। মাঝে মাঝে তাহিয়া কিছু জিজ্ঞেস করলে, আরভিদ শুধু হ্যাঁ-না উত্তর দিচ্ছে।
মেহজা কাছে গিয়ে বলে,

— মামনি, আপনারা কি ব্রেকফাস্ট করে ফেলেছেন?
আরভিদ একবার মেহজার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে মনোযোগ দেয়।
তাহিয়া হেসে বলে,
— না, তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। চল, ব্রেকফাস্ট করি, তারপর আলোচনা হবে।
সবাই উঠে দাঁড়াতেই দরজার বেল বাজে।
তাহিয়া অবাক হয়ে বলে,
— এই সকালবেলা আবার কে?
মেহজা মজা করে,

— হতে পারে আবার কোনো আনএক্সপেক্টেড অতিথি! ইদানীং তো বাসায় হুটহাট কেউ না কেউ এসে হাজির হচ্ছে!
তাহিয়া হেসে ফেলে, তারপর মেইডকে ডাকে,
— রুবিনা? দরজাটা খুলো!
রুবিনা কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে বলে,
— জ্বি ম্যাম, খুলছি!
রুবিনা দরজা খোলে দেখে বাড়ির আরেক মেইড শাকিলা বাজার করে ফিরে এসেছে।
রুবিনা বলে,
— আয় ভেতরে।

শাকিলা ভেতরে ঢুকতেই রুবিনা দরজা লাগাতে যায়। ঠিক তখনই হঠাৎ কিছু একটা দেখে ভয়ে চিৎকার করে দৌড়ে চলে যায়, দরজাটা খোলা রেখেই! সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে না থাকতেই দরজা দিয়ে এক কুকুর দৌড়ে ঢুকে পড়ে লিভিং রুমে। ঘরে থাকা সবাই ভয় পেয়ে ছুটোছুটি শুরু করে, শুধু আরভিদ ছাড়া!
তাহিয়া গিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে, নাজনীন সোফার পেছনে লুকিয়ে পড়ে আর মেহজা ভয় পেয়ে দৌড়ে গিয়ে আরভিদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ঠিক তখনই একজন দৌড়ে এসে কুকুরের বেল্ট ধরে চিৎকার করে,
— কোকো, স্টপ! ডোন্ট মোভ!
সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে। কারণ সেই মেয়েটি শায়রা!
তাহিয়া কিছুটা অবাক হয়ে বলে,

— শায়রা? তুমি?
মেহজা নিজেকে সামলে নেয় এবং এমন ভান করে যেন কিছুই হয়নি। সে মোটেও ভয় পায়নি! সে আরভিদকে ধরে চিন্তিত কন্ঠে বলে,
— আপনি ঠিক আছেন তো? ভয় পাননি তো? আমি তো আছি, ভয় পাওয়ার কিছু নেই!
আরভিদ হেসে তাকায়, মেহজাও মুচকি হেসে তার থেকে সরে গিয়ে শায়রার দিকে তাকায়।
শায়রা হালকা হাসিতে বলে,
— হ্যাঁ ফুপি, আমি। আসলে আমি তোমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে মনিং ওয়াক করছিলাম। তখন আমার কুকুরটা ভুল করে তোমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে! সরি, সবাইকে বিরক্ত করার জন্য।
ঠিক তখনই একটা কণ্ঠ ভেসে আসে,

— বাড়িতে কুকুর ঢুকেছে তবে একটা না, দুইটা!
হঠাৎ সবাই সিঁড়ির দিকে তাকায়। আদ্রিক নামছে। আর কথাটাও সেই বলেছে সবাই অবাক, কারণ কেউই ওকে আশা করেনি। মেহজা অবাক হলেও মুখ ঢেকে হেসে ফেলে। আরভিদের দৃষ্টি থেমে থাকে আদ্রিকের ডান হাতে বাধা ব্যান্ডেজের দিকে। শায়রার মুখ থমথমে হয়ে যায়, অপমান আর অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে তার চোখে-মুখে।
তাহিয়া কারদার অবাক হয়ে বলেন,

— মানে?
আদ্রিক হেসে বলে,
— মিমি, আই’ম কিডিং!
আভীর কারদার কিছুটা অবাক গলায় জিজ্ঞেস করেন,
— তুমি কখন এলে?
আদ্রিক নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে,
— মাঝরাতে!
— এই সপ্তাহে তো আসার কথা ছিল না!
— মুড চেঞ্জ হয়েছে, তাই চলে এলাম।
আভীর আর কিছু বলেন না। এদিকে নাজনীন কারদারের চোখ পড়ে আদ্রিকের হাতের দিকে। চিন্তিত গলায় বলেন,
— আদ্রিক, তোমার হাতে কী হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেন?
সবার চোখ এবার আদ্রিকের হাতে গিয়ে পড়ে।
শায়রার মুখেও উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট।
আদ্রিক শান্ত গলায় বলে,

— রাতে ফল কাটতে গিয়ে ছুরিতে কেটে গেছে।
তাহিয়া উদ্বিগ্ন স্বরে বলেন,
— সাবধানে করবে বাবা, না জানি কতখানি কেটে গেছে!
আদ্রিক কিছু বলে না। চোখ ফেরায় আরভিদের দিকে।
আরভিদের ভ্রু এখনো কুঁচকে আছে, চেহারায় স্পষ্ট অবিশ্বাস। আদ্রিক বুঝে যায়, আরভিদ কথাটা বিশ্বাস করেনি।
শায়রা আরভিদের দিকে এগিয়ে এসে হেসে বলে,
— আরভিদ ভাইয়া, কেমন আছো?
আরভিদ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উত্তর দেয়,

— ভালো।
শায়রা একটু হাসি ঝুলিয়ে বলে,
— কাল তো দেখা হল, কিন্তু তুমি একটা কথাও বলোনি! আমি তো তোমার বোনই!
আরভিদ কোনো উত্তর দেয় না।
শায়রা এবার মেহজার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
— হাই মেহজা! কাল তোমার সাথেও ভালো করে কথা হয়নি।
এই সময় আরভিদ নিজের ডান হাত বাড়িয়ে মেহজাকে কোমর দিয়ে টেনে নিজের পাশে নিয়ে আসে। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

— আমার মিসেস। সেই হিসেবে, তোমার ভাবি।
শায়রার মুখে সামান্য অপমানের ছাপ দেখা গেলেও সেটা সে হাসির আড়ালে ঢেকে নেয়,
— আসলে বয়সে অনেক ছোট তো, তাই…বাট ইট’স ওকে! ভাবি!
তাহিয়া কারদার কথা ঘুরাতে হেসে বলেন,
— চলো, আজকে আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করবে।
শায়রা হেসে বলে,
— অবশ্যই! আমার একমাত্র ফুপির কথা আমি ফেলি কিভাবে?
নাজনীন কারদার ভিতু দৃষ্টিতে কুকুরটার দিকে তাকিয়ে বলেন,
— এটাকেও সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছো?
শায়রা হালকা হেসে উত্তর দেয়,

— না, আমি ওকে এখানেই বেঁধে রেখে যাচ্ছি।
শায়রা কুকুরটাকে বেঁধে রেখে সবার সঙ্গে ব্রেকফাস্ট টেবিলে চলে আসে। সবাই চেয়ারে বসে পড়লে, শায়রা গিয়ে বসে আদ্রিকের পাশের চেয়ারে। আদ্রিক কিছু বলে না। নাজনীন কারদার সবার মাঝে খাবার সার্ভ করতে থাকেন।
তিনি আদ্রিককে খাবার দিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলেন,
— তোমার তো হাতে ব্যান্ডেজ, তুমি খাবে কীভাবে?
শায়রা যেন এই মুহূর্তটারই অপেক্ষায় ছিল। সে মিষ্টি হেসে বলে,
— আমি খাইয়ে দেই?
তার কথা শুনে সবাই চমকে শায়রার দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে যায় অনেকের।
ঠিক তখনই মেহজা হেসে বলে ওঠে,

— এইভাবে তাকাচ্ছে কেন সবাই? শায়রা আপু তো আরভিদ ভাইয়ের বোন! তাহলে আদ্রিক ভাইয়েরও তো বোন হয়! আর বোন তো ভাইকে খাইয়ে দিতেই পারে! এতে নেগেটিভ কিছু ভাবার কী আছে?
আরভিদের মুখ থমথমে হয়ে যায়। নিজের বউয়ের মুখে ভাই কথাটা যেন তার কানে গালি হয়ে বাজে। সে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
শায়রা নিজের রাগ চাপা দিয়ে দাঁত চেপে মেহজার দিকে তাকায়, তারপর ঠোঁটে হাসি টেনে বলে,

— বোন বলাটা একটু হেভি আর খ্যাতও লাগে! কিন্তু ফ্রেন্ড বলতে পারো। আসলে আমি আর আদ্রিক আগেই একে-অপরকে চিনি। লন্ডনে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। তখন আমরা জানতাম না একে-অপরের পারিবার সম্পর্কে। আমরা সেখানে ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গিয়েছিলাম।
শায়রা কথা শেষ করে আদ্রিকের দিকে তাকায় এবং সাথে সাথেই মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়। আদ্রিক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বাম হাতে স্পোনের সাহায্যে খাবার খাচ্ছে। তার ভাবমূর্তি এমন যেন সে কিছুই শোনেনি আর না শুনতে আগ্রহী!
আদ্রিকের এই ভাবভঙ্গি দেখে মেহজা হেসে শায়রাকে বলে,
— আল্লাহ আপু, আদ্রিক ভাইয়া তো জাস্ট ডোন্ট কেয়ার করে দিছে আপনাকে!
শায়রা একবার মেহজার দিকে তাকায়, তারপর আদ্রিকের দিকে। মুখ ঘুরিয়ে চুপচাপ খেতে থাকে। খাওয়া শেষ হলে আদ্রিক কোনো কথা না বলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়।
খাওয়া শেষে শায়রাও উঠে দাঁড়ায়। তাহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

— ফুফি, আমি একটু কৌশলীর সঙ্গে দেখা করে আসি। না গেলে আবার রাগ করে বসে থাকবে।
তাহিয়া হেসে বলেন,
— আচ্ছা, কৌশলীর রুমটা হচ্ছে উপরের ডান দিকে, চার নম্বরটা।
— ঠিক আছে।
শায়রা উপরে গিয়ে একজন মেইডকে ডেকে জিজ্ঞেস করে আদ্রিকের রুম কোনটি। মেইড তাকে রুমটা দেখিয়ে দেয়। শায়রা দরজায় ঠেলা দিলে সেটা সহজেই খুলে যায় কারণ দরজা লক করা ছিল না। সে নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজাটা লক করে নেয়।তারপর সে বেলকনির দিকে এগিয়ে গিয়ে হালকা উঁকি দেয়। দেখে, আদ্রিক ফোনে কথা বলছে। শায়রার চোখ এবার রুমজুড়ে ঘোরে।

রুমটা বেশ বড়, সাজানো গোছানো।বেডশিট থেকে পর্দা পর্যন্ত সবকিছু কালো রঙের। একধরনের এলিগ্যান্স ছড়িয়ে আছে প্রতিটা কোণায়। শায়রা এগিয়ে গিয়ে বিছানার পাশে রাখা সাইড টেবিল থেকে একটি ফটো ফ্রেম তুলে নেয়। ছবিটায় আদ্রিক মেরুন শার্ট পরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, পেছনে পাহাড়ি দৃশ্য। আদ্রিকের ঠোঁটে ওর সেই অভ্যাসগত হাসিটা। শায়রা মুগ্ধ চোখে সেই ছবিতে হাত বোলায়। ওর চোখ জ্বলজ্বল করে খুশিতে।
ঠিক তখনই ফোন রেখে রুমে ফিরে আসে আদ্রিক। তার চোখ পড়ে শায়রার ওপর। তার চেহারায় বিরক্তি, শান্ত মুখের পেছনে একধরনের কঠোরতা খেলে যায়।
সে গলা তীক্ষ্ণ করে বলে,

— আমার রুমে ঢুকে আমার জিনিস স্পর্শ করার সাহস তোকে কে দিয়েছে?
শায়রা ফ্রেমটা আবার আগের জায়গায় রেখে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়। ঠোঁটে রহস্যময় হাসি ফুটে ওঠে।
— রুমের জিনিস কি? দুদিন পর এই রুমের মালিককেও স্পর্শ করবো আমি।
আদ্রিক টাউজারের পকেটে হাত গুঁজে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।
— স্বপ্নেও ভাবিস না এসব! কারণ স্বপ্নেও আমি কেবল একজনেরই!
শায়রা এগিয়ে আসে। আদ্রিকের চোখে চোখ রেখে দৃঢ় স্বরে বলে,
— তোমার স্বপ্নে যেই থাকুক, বাস্তবতা কিন্তু আমিই হবো।
আদ্রিক ঠান্ডা গলায় বলে,
— তুই এমন আত্মহত্যা করার জন্য উঠেপড়ে লাগলি কেন?
শায়রা কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
— আমি আবার কখন আত্মহত্যা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছি?
আদ্রিক ঠাণ্ডা, নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,
— এই যে বারবার আমার সামনে এসে এসব কথা বলে নিজের মৃত্যুর ব্যবস্থা করছিস, এটাকে আত্মহত্যা না বললে কি বলবি?
শায়রা চোখে গভীরতা নিয়ে বলে,

— আমি মরতে আসিনি, আদ্রিক।
— কিন্তু তোর আসাতে মরন!
শায়রা হেসে ফেলে,
— ওকে ফাইন, আমাকে মারতে হলেও তো ছুঁতে হবে, বেবি!
আদ্রিক চোখ সরু করে তাকায়।
— একদম নষ্টামি টোনে কথা বলবি না, লিটল বিচ!
শায়রার মুখ কঠিন হয়ে ওঠে।
— আদ্রিক! তুমি আমাকে এইভাবে গালি দিতে পারো না!
— এর থেকেও খারাপ বলতে পারি! এখন যা, বের হয়ে যা আমার রুম থেকে! ঐদিন তো রুমাল ইউস করে মারছিলাম, আজকে স্লিপার ইউস করবো!

— তুমি কিন্তু বাড়াবা…
বাক্যটা শেষ হওয়ার আগেই আদ্রিক পায়ে পড়া থাকা স্লিপার নিয়েই শায়রার হাঁটুতে ঠাস করে লাথি মারে। শায়রা মাটিতে পড়ে যায় সাথে ব্যাথাও পায়। চোখে পানি চলে আসে, তাকিয়ে থাকে আদ্রিকের দিকে। কিন্তু আদ্রিক নির্বিকার। কোনো সহানুভূতি নেই তার চোখে।
— নাটক না করে বের হ আমার রুম থেকে!
শায়রার গলা কাঁপে,
— কেন আমার সাথে এমন করো? কেন আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দাও?
আদ্রিক বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
— আমার জাস্ট অসহ্য লাগে, যখন কোনো মেয়ে আমার কাছে আসে!
শায়রা চোখের জল আর অপমান গিলে, ভেতরে চাপা রাগ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিচে নামতেই তাহিয়ার সঙ্গে দেখা। শায়রার চোখে জল দেখে তিনি জিজ্ঞেস করেন,

— কোথায় ছিলে? আর কাঁদছো কেন?
শায়রা চোখ মুছে হালকা হেসে বলে,
— কাঁদছি না ফুপি, চোখে কিছু পড়ে গিয়েছিল। আসলে অর্তিহারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম বিয়ের ড্রেস নিয়ে কথা বলতে। ও কেমন ড্রেস চায়, সেটা জানার জন্য।
— ওহ।
— আচ্ছা ফুপি, আমি তাহলে যাই?
— এতো তাড়াতাড়ি? আরেকটু বসো না!
— না ফুপি, লেট হয়ে যাচ্ছে। পরে আবার আসব।
— ঠিক আছে, সাবধানে যেও।

শায়রা চলে যায়। মেহজা বেলকনি থেকে ভেতরে এসে রুমে ঢোকে। দরজার ভেতর পা রাখতেই চোখে পড়ে, সোফায় বসে থাকা আরভিদের উপর। তার বাঁ হাতে সিগারেট ধরা, আয়েশে টান দিচ্ছে। মেহজা থমকে দাঁড়ায় দরজার চৌকাঠে, চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। আরভিদ সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দেয় ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে। ধোঁয়ার সেই রেখা যেন সময়ের সুতোর মতো ধীরে ধীরে মিশে যায় হাওয়ায়।
এটাই ছিল মেহজার জীবনের প্রথম ক্রাশ— একজন সিগারেট খাওয়া পুরুষের প্রতি এক অদ্ভুত মোহ, যা ব্যাখ্যার বাইরে। আরভিদের সিগারেট খাওয়ার এই নির্লিপ্ত অথচ ছুঁয়ে যাওয়ার মতো আবেদন। উফ! এই মুহূর্তে যেন মেহজার হৃদয়টা কেঁপে ওঠে। হার্টবিট মিস করে সে। তার মনে হয়, ধোঁয়ার ভেতরই কোথাও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে সে। সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে।

আরভিদ চোখ তুলে তাকায়, তারপর ডান হাতে মেহজাকে টেনে নেয় নিজের ডান পায়ের উরুতে বসিয়ে, আবারও একটা টান দেয় সিগারেটে। মেহজা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। তার ইচ্ছে করে—এই মানুষটাকে চুমু খেয়ে একেবারে খেয়ে ফেলতে! কিন্তু না, এটা সে করতে পারে না। নিজের ইচ্ছেকে ঢোক গিলে দমিয়ে ফেলে।
আরভিদ আবারও সিগারেটের টান দেয়, তারপর ভ্রু নাচিয়ে ইঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে,

— কী?
মেহজা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,
— আপনি দিনে কয়টা সিগারেট খান?
— ৫-৬ প্যাকেট।
— এরপর থেকে আপনি যখনই সিগারেট খাবেন, আমাকে সামনে রেখে খাবেন, আমি দেখব!
আরভিদ হালকা হেসে শেষ টানটা দিয়ে সিগারেটটা ছুড়ে ফেলে ডাস্টবিনে। তারপর মেহজাকে কাছে টেনে নিয়ে আদরে কন্ঠে বলে,
— কী দেখবি?
মেহজা অবলীলায় উত্তর দেয়,
— আপনাকে! আপনার সিগারেট খাওয়ার স্টাইলটা আমার খুব ভালো লেগেছে। তাই এখন থেকে যখনই খাবেন, আমাকে দেখাবেন!
আরভিদ হেসে ফেলে,
— মেহু, তুই বিশাল অদ্ভুত একটা মেয়ে! অন্যসব মেয়েরা তাদের স্বামী বা প্রেমিককে সিগারেট ছাড়ানোর জন্য নিজের কসম করায়। আর তুই একমাত্র বউ, যে নিজের স্বামীকে সিগারেট খেতে বলে, তাও আবার চোখের সামনে বসিয়ে!
মেহজা ভাব নিয়ে বলে,

— আমি তো আমিই! অনলি ওয়ান পিস!
আরভিদ একটু চোখ ছোট করে তাকায়,
— আমার অনলি ওয়ান পিস বউ খাবার টেবিলে আমাকে হার্ট অ্যাটাক করাতে যাচ্ছিলো!
মেহজা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
— কেন? আবার কী করেছি আমি? এই বাড়িতে দেখছি নন্দ ঘোষ না মেহজা তালুকদার!
আরভিদ চোখ ছোট করে ভ্রু নাড়িয়ে প্রশ্ন করে,
— আমি তোর ভাই হই?
মেহজা মাথা নেড়ে বলে,
— হ্যাঁ, আরভিদ ভাই!
আরভিদ চোখমুখ কুচকে বলে,
— ছিঃ! কী বিদঘুটে লাগছে!
— “কেন? ভালোই তো! নির্বাচনের সময় আমি স্লোগান দিবো— ‘আমার ভাই তোমার ভাই, আরভিদ ভাই!
আরভিদ ভাইকে ভোট দেন, কচিকচি মেয়ে বিয়ে করেন!’ ”
আরভিদ কপালে ভাজ ফেলে প্রশ্ন করে,

— এই কচিকচি মেয়ে বিয়ে করেন মানে কী?
— নেতা যে হালে যায়, জনগণও তো সেই হালেই যাবে!
— কিন্তু কচি বউ বরকে ভাই ডাকলে গুনাহ হয়!
— তাহলে তো আমি এতো গুনাহে গুণান্বিত হয়ে যাচ্ছি!
আরভিদ হেসে ওঠে। তারপর মেহজার নাকে নিজের নাক ঘষে দিয়ে বলে,
— আমার তোতাপাখি!
মেহজা হেসে আরভিদের গলা জরিয়ে ধরে বলে,
— আমার গন্ডার!
আরভিদ ভ্রু কুঁচকে বলে,
— গন্ডার? আমাকে গন্ডার বললি?
— হুম, আপনি তো আমায় তোতাপাখি বললেন! দুইটাই তো পশু!
আরভিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
— তোমার চিন্তাভাবনা জাস্ট আনবিলিভেবল!
মেহজা মুখ বাঁকিয়ে বলে,

— আচ্ছা হইছে, বিশ্বাস করতে হবে না। এখন শুনেন!
— শুনান! আপনার কথা শুনার জন্যই তো জীবনে আর কারও কথা শোনা হয় নাই!
মেহজা হালকা লজ্জা পেয়ে আরভিদের বুকে জোরে ঘুষি মারে।
— হায়!
আরভিদ বুকে হাত বুলিয়ে অবাক হয়ে বলে,
— এটা কেমন লজ্জা ছিলো?
— ইটস মেহজা তালুকদারের লজ্জা!
আরভিদ মুচকি হেসে বলে,
— মিস্টেক, রেড লিপ! ইটস মিসেস আরভিদ কারদারের লজ্জা!
মেহজা হাসতে হাসতে বলে,
— অনেক হয়েছে। এখন সিরিয়াস কথায় ফিরি।
আরভিদ সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বলে,
— বল?
মেহজা চিন্তিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
— আপনি অর্তির বিয়েতে রাজি?
আরভিদের মুখটা মুহূর্তেই গম্ভীর হয়ে ওঠে। খানিক চুপ থেকে ধীরে স্বরেই জবাব দেয়,
— অর্তির ইচ্ছেতেই আমার রাজি থাকা না থাকা নির্ভর করে।

— ওর উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেবেন না। বিয়ের মতো বড় সিদ্ধান্ত যেন জোর করে না নিতে হয়।
না হলে পরে দেখবেন, সম্পর্কের ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে! ঠিক যেমনটা হয়েছে আমার আর আম্মুর…
বাকিটা আর বলতে পারে না মেহজা। গলার স্বর কেঁপে আসে, চোখ ভিজে ওঠে। যেই চোখের জল গড়িয়ে পড়বে মাটিতে, তার আগেই আরভিদ হাত বাড়িয়ে নিয়ে নেয় নিজের তালুতে।
— তোর চোখের জল আমার কাছে অনেক দামি।
তাই কাঁদতে হলে বুকে মুখ গুঁজে কাঁদবি, চোখের জল বুকে মিশিয়ে দিবি, কিন্তু মাটিতে পড়তে দিবি না।
বলেই চোখের জলটা নিজের বুকে মিশিয়ে নেয় সে।মেহজা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আরভিদের দিকে।
ঠিক তখনই দরজায় টোকা পড়ে।
মেইড শাকিলা এসে বলে,

— ম্যাম, আপনাকে বড় ম্যাম ডাকছেন।
মেহজা সোজা হয়ে উঠে পড়ে,
— আপনি যান, আমি আসছি।
মেইড চলে যায়।
মেহজা ঘুরে আরভিদকে বলে,
— যাচ্ছি, শাওরি আম্মা ডাকছে আমাকে।
আরভিদ মুচকি হেসে বলে,
— ঠিক আছে, আপনার শাওরি আম্মার প্রয়োজন শেষ হলে, আপনার শাওরির ছেলের দিকে একটু তাকাইয়েন, জালেমা!
মেহজা মুচকি হেসে বলে,
— ভেবে দেখবো জালেম কারদার!

বলেই বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আরভিদ উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বের হয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল অর্তিহার রুমের দিকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল, তারপর আস্তে করে নক করল। তার এখানে আসার উদ্দেশ্য—অর্তিহার কাছে তার বিয়ের ব্যাপারে মতামত জানা। কারণ এই সিদ্ধান্তে অর্তিহার মতটাই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বোনটা তার খুব আদরের, অর্তিহার ইচ্ছার ওপরে কিছুই নয়।
রুমের ভেতরে তখনো এলোমেলো হয়ে বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল অর্তিহা। দরজার ধাক্কায় ঘুমটা খানিকটা হালকা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে চোখ মেলে বসে সে। মাথাটা ভারী লাগছে, শরীরেও ক্লান্তি। হঠাৎই রাতের ঘটনার স্মৃতি ভেসে ওঠে মনে—আদ্রিক এসেছিল। তার চেহারায় আতঙ্কের ছায়া আবার ফিরে আসে। দরজায় আবার নক হওয়ায় তাড়াতাড়ি উঠে নিজেকে ঠিক করে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সামনেই দেখতে পায় আরভিদকে। অর্তিহার দিকে তাকাতেই আরভিদের চোখে পড়ে ক্লান্ত, নিস্তেজ একটা মুখ। চোখের নিচে হালকা কালো ছাপ, মুখে রক্তের কোনো আভাস নেই—কেমন যেন ফ্যাকাসে। চোখ দুটো নিস্তেজ, শূন্য। চুলগুলো এলোমেলো, পোশাকটাও যেন হালকা ভাঁজ পড়ে আছে, বহুক্ষণ পর পরিপাটি না করায়।

মাথাটা হালকা কাত, ভঙ্গিমায় ক্লান্তি আর ভেঙে পড়ার স্পষ্ট আভাস।
আরভিদের বুকটা হঠাৎ ভার হয়ে আসে। আরভিদ নরম স্বরে প্রশ্ন করে,
— তোর কি শরীর খারাপ? তুই তো কখনো এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাস না!
অর্তিহা মাথা নিচু করে ধীর কণ্ঠে জবাব দেয়,
— আসলে বুঝতে পারিনি, কখন যে এত বেলা হয়ে গেছে…
আরভিদ হেসে এগিয়ে এসে বোনের মাথায় স্নেহভরে হাত রেখে বলে,
— সমস্যা নেই, ঘুমাতেই পারিস! বো…
হঠাৎই আরভিদের চোখ আটকে যায় অর্তিহার পেছনের দেয়ালে—সেখানে স্পষ্ট লেগে আছে রক্তের দাগ! ভ্রু কুঁচকে ওঠে ওর। চোখ ঘুরিয়ে আবার তাকায় অর্তিহার দিকে। আরভিদের চোখে অবাক বিস্ময়, আর মনে সন্দেহের গাঢ় ছায়া।
আরভিদকে থেমে যেতে দেখে অর্তিহা জিজ্ঞেস করে,

— কিছু হয়েছে ভাইয়া?
আরভিদ যেন নিজের ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে। মাথা নাড়ে, কৃত্রিম একটা হাসি ঠোঁটে এনে বলে,
— না, কিছু না। ফ্রেশ হয়ে আয়, তারপর ব্রেকফাস্ট করে নিস। দেরি করে খেলে শরীর আরও খারাপ হবে।
— হুম।

মোহশৃঙ্খল পর্ব ৯

আরভিদ আবার একবার চোখ বুলিয়ে নেয় দেয়ালে লেগে থাকা রক্তের দাগের দিকে। তারপর নিঃশব্দে অর্তিহার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। সে আর কিছু বলে না, কারণ এই মুহূর্তে তার মনে আরও বড় এক প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। সে এবার পা বাড়ায় সেদিকে দিকে, যেখানে মিলবে তার প্রশ্নের উত্তর!

মোহশৃঙ্খল পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here