যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ২২
মম সাহা
ড্রয়িং রুম জুড়ে আনন্দের বাজার বসেছে। অহির বিয়ে ঘিরেই সওদাগর বাড়িতে যেন প্রাণ ফিরে এলো। কাকে আমন্ত্রণ করা হবে, কে কে আসবে, কখন কী হবে সব নিয়ে আলোচনা চলছে ড্রয়িং রুমে।
আলোচনায় সবাই-ই উপস্থিত। আড্ডায় মশগুল বড়ো থেকে ছোটো সকলে। আফজাল সওদাগর এবং নুরুল সওদাগর কোথায় কত টাকা লেনদেন হবে সে নিয়েও কথা বলছেন। ঠিক সেই সময় আমজাদ সওদাগর ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। হাসাহাসি, কলরবে আমজাদ সওদাগরের আগমন হলো একটি অসহ্য গ্রীষ্মের দুপুরের মতন। সবাই হুট করেই চুপ করে গেলো। আফজাল সওদাগর পরিস্থিতি হাতের নাগালে আনতে বললেন,
”আরে তুই ঘরে থেকেও এখানে আসিসনি কেন এতক্ষণ? আয়, আয় এখানটাতে এসে বস। তোর মেয়ের বিয়ের আলোচনা চলছে আর তুই কি-না ঘরে বসে আছিস?”
আমজাদ সওদাগর ভদ্রতার খাতিরে কৃত্রিম হাসলেনও না। কেমন চোখ-মুখ কাঠ কাঠ করে বললেন,
“বড়ো ভাই, অহির বিয়ের আলোচনা হচ্ছে, বিয়ে ঠিকও হয়ে গিয়েছে অথচ ওর মা’কে একটাবার জানানো হয়নি। এটা খুব বাজে হচ্ছে।”
“আমার মা? আমার মা জানে। তার থেকে অনুমতি তো নওশাদদের সামনেই নেওয়া হলো।”
অহির তীক্ষ্ণ গলার স্বর, সরু চোখের দৃষ্টি। আমজাদ সওদাগর মেয়ের কথায় অসন্তুষ্ট নিয়ে বললেন, “তোমার জন্মদাত্রী মায়ের কথা বলছি। যার কাছে এতদিন থেকে এলে।”
“উনার কোনো ভূমিকা নেই আমার এই জীবনে তাই উনার জানা, না জানা দিয়ে কিছু আসে যায় না।”
“অহি, বেইমানের মতন কথা বলো না। এই আড়াইটা বছর তুমি তার কাছে ছিলে।”
ড্রয়িং রুমে আমজাদ সওদাগরের ভারিক্কি কণ্ঠটা প্রতিধ্বনিত হলো। চমকে গেলো সকলেই। এত জোরে ধমকে উঠে বড়ো বড়ো শ্বাস ফেললেন আমজাদ সওদাগর।
অহি ভয় পেলো না। তবে তার বিস্ময় কমছে না। নিজের বাবার প্রতি দিনে দিনে এত অভিযোগ জমেছে যে মাঝে মাঝে বাবাকে তার দুঃস্বপ্নের মতন উন্মাদ মনে হয়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“চিৎকার করবেন না। আর বেইমান আমি নই, আপনি। এতই যখন ঐ আপনাকে ছেড়ে দেওয়া মহিলার প্রতি আপনার দরদ তাহলে অবনী মাকে বিয়ে না করলেই পারতেন। যে ছেড়ে গেলো তার প্রতি আপনার প্রেমে এক আনাও কমতি নেই। অথচ যে বছরের পর বছর আপনার সব অন্যায়, অবিচার সহ্য করে থেকে গেলো তার দিকে আপনার ফিরে তাকানোর সময়ও নেই! এতটা অকৃতজ্ঞ আপনি কীভাবে? আসলে আপনার সাথে থাকা যায় না। অবনী মা যে কেন রয়ে গিয়েছে!”
আমজাদ সওদাগর উদ্ভ্রান্তের মতন মেয়ের দিকে তেড়ে আসতে নিলেই তাকে আটকালের অবনী বেগম। হাত টেনে ধরলেন,
“কী করছেন! তেড়ে যাচ্ছেন কেন ওর দিকে?”
অবনী বেগমের এই ধরে আটকাতে চাওয়াটাই যেন কাল হলো। আমজাদ সওদাগর মেয়েকে ধরতে না পেরে চড়টা বসালেন অবনী বেগমের গলায়। হুংকার দিয়ে বললেন,
“তোর আস্পর্ধাতেই আজকে ও এতটা বেড়েছে। নিজের বাপকে বলছে কিনা, বাপের সাথে থাকা যায় না! এত বড়ো কথা?”
আনন্দের হাঁটে আমজাদ সওদাগর যেন ভাঁটা এনে দিলেন। অহি ছুটে গিয়ে অবনী বেগমকে টেনে নিলো। সাথে মুনিয়া বেগম ও রোজা সওদাগরও গেলেন। আফজাল সওদাগর ও নুরুল ইসলাম হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। চেরিটা চুপটি করে চিত্রার বুকের বা’পাশে লেপ্টে গেলো।
অহি কাঁপছে রাগে থরথর করে। আফজাল সওদাগর নিজের ভাইকে শাসিয়ে বললেন,
“আশ্চর্য আমজাদ! তুই ঘরভর্তি মানুষগুলোর সামনে ছোটো বউয়ের গায়ে হাত তুললি কেন? আক্কেল জ্ঞান সব শেষ তোর?”
“উনার আক্কেল কখনো ছিলো, বড়ো আব্বু?”
আমজাদ সওদাগর দমে এলেন। হুট করে রাগটা এত মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো কীভাবে বুঝেই উঠতে পারলেন না।
চিত্রা চেরিকে বুকের ভেতর জাপ্টে ধরেই বলল, “ছোটো মুখে একটা বড়ো কথা বলছি কিছু মনে করো না তোমরা। কিন্তু ছোটো আম্মু, আমার মনে হয় তোমার একবার পুলিশ স্টেশন যাওয়া উচিত। ছোটো আব্বুর নামে একটা মামলা দেওয়া উচিত।”
এতক্ষণ যা-ই ঘটেছিলো সবটুকু সহ্য সীমায় থাকলেও চিত্রার কথা যেন বি স্ফোর ণ ঘটালো। ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো সকলে। নুরুল ইসলাম মেয়ের এমন আক্কেলগুড়ুম কথায় ধমকে উঠলেন,
“তুমি চুপ থাকো। এত বড়ো কথা কীভাবে বলছো তুমি? দিন দিন অভদ্র হচ্ছো।”
অহি নুরুল ইসলামকে থামিয়ে বলল, “চিত্রা ভুল কিছু তো বলেনি মেজো আব্বু। মায়ের উচিত এক্ষুনি আমার সাথে পুলিশ স্টেশন যাওয়া এবং মামলা করা উনার নামে।”
কী এক বিশৃঙ্খল অবস্থা! বিয়ের আমেজটা মুহূর্তেই থিতিয়ে গেলো। আফজাল সওদাগর বুদ্ধিমান লোক। সবটা নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি নিজের ভাইকে ধমকালেন। অবনী বেগম তখনও চুপ করেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটি কথাও বললেন না। কী যেন ভেবেই গেলেন আপন মনে।
পরিস্থিতি যখন হাতের নিয়ন্ত্রণে এলো তখন অহি সাত-পাঁচ না ঘুরিয়ে বেশ অকপটে বলল,
“বড়ো আব্বু, আমি চাই আমার পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানটাতে যেন এই লোক উপস্থিত না থাকেন। উনি কোথায় যাবেন চলে যাক। অন্তত এ ক’টা দিন যেন এই বাড়িতে উনাকে না পাওয়া যায়।”
কথা শেষ করেই গটগট পায়ে জায়গাটা থেকে চলে গেলো অহি। তার পেছন পেছন চিত্রা ও চেরিও গেলো। আফজাল সওদাগর নানান ভাবে ছোটো ভাইকে ধিক্কার জানাতে লাগলেন।
তমুর সুন্দর ঠোঁট জোড়ায় হাসি লেপ্টে আছে। বদন জুড়ে খেলা করছে অহেতুক সুখ। যে সুখের কারণ নেই নিশ্চয়। নেই হয়তো ঘরবাড়ি। চিত্রার সাথেই বাহার ভাইদের ছাঁদে বসা। বাহার ভাই গিয়েছেন গোসল করতে। তমুকে পড়িয়ে সবে এসেছেন তার পেছন পেছন মেয়েটা চলে আসছে মিনিট দশ যেতেই। এসেই কেবল ক্ষান্ত হয়নি। সুন্দর করে চিত্রাকে তার বাড়ি থেকে গিয়ে নিয়ে এসেছে। সে কথা বলবে চিত্রার সাথে। কয়েকদিনে মেয়েটা চিত্রার বেশ ভক্ত হয়ে গিয়েছে কি-না!
বরইয়ের আচারটা মুখে পুরে নিয়ে স্বাদে চোখ মুখ বন্ধ করলো চিত্রা। বেশ প্রশংসা করে তমসাকে বলল,
“আরেহ্ বাহ্! তুমি তো দারুণ আচার বানাতে পারো!”
তমসা তখন বাহার ভাইয়ের ছাঁদের এদিক ওদিকে ঘুরছে চঞ্চল পায়ে। কৌতূহল নিয়ে এটা ওটা দেখছে নেড়েচেড়ে। চিত্রার প্রশংসায় সে চিত্রার দিকে তাকিয়ে বেশ সুন্দর করে হাসলো। গুটি গুটি পায়ে চিত্রার কাছে এগিয়ে এসে উৎফুল্ল স্বরে বলল, “সত্যি!”
“হ্যাঁ, একদম।”
“থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সো মাচ আপু।” বলেই চিত্রার গলা জড়িয়ে ধরলো মেয়েটা।
চিত্রা মুচকি হেসে খানিকটা ধরল আগলে। এবার তমসা আয়েস করে চিত্রার সামনে বসলো। প্রায় কিছুটা ফিসফিসিয়ে বলল, “তুমি কত প্রশংসা করো আমার কিন্তু স্যার একটুও করে না।”
চিত্রার মুখে নাড়ানো থেমে গেলো। বুকের ভেতর জমাট বাঁধতে লাগলো দীর্ঘশ্বাসের স্তূপ। কিন্তু মুখে কৃত্রিম হাসি টুকু ঝুলিয়ে রাখতে ভুললো না।
তমসা আবার বলল, “জানো, একদিন স্যারকে খিচুড়ি ও এই আচারটা খেতে দিয়ে ছিলাম কিন্তু স্যার খেলেনই না।”
চিত্রা মনযোগ সহকারে শুনলো তমসার কথা। তমসা বললো, “স্যার কেমন যেন! মানুষের মন বুঝতে পারেন না।”
চিত্রা কৃত্রিম হাসিটুকু ঝুলিয়ে জবাব দিলো, “এমন হয়ই, তমু। সব মানুষ কি আর এক রকম!”
“তাই বলে একটুও বুঝবেন না যে একটা মেয়ে কেন তার জন্য এমন করছে?”
জবাবে কী বলা উচিত চিত্রা ভেবে পেলো না। মনে মনে তার খুব খারাপ লাগছে। এই মেয়েটার মনে যেই ভালো লাগার বীজ সেটা আর বাড়তে দেওয়াও উচিত নয়। কিন্তু সে করবেটা কী! তার যে করার কিছু নেই।
ঠিক তখনই ছাঁদে এলো বাহার ভাই। চুল গুলো ভেঁজা। টি-শার্টও এবড়োখেবড়ো হয়ে আছে ইস্ত্রির অভাবে। ঘরে একটা মেয়ে মানুষ নেই। লোকটা কি আর একা হাতে সব সামলাতে পারে!
বাহার ভাইকে দেখেই তমসার কানের পিঠে চুল গুঁজে নেওয়া, মিটমিট করে হাসার ভঙ্গিমা যেন বেড়ে গেলো। সবটাই সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে অবলোকন করছিলো চিত্রা।
বাহার ভাইয়ের ভেঁজা চুল গুলো দেখে চিত্রাই সর্বপ্রথম বলল,
“চুল গুলো মুছেননি যে! পানি পড়ছে তো চুল গড়িয়ে।”
লোকটা জবাবে বলল, “পড়ুক। পানির ধর্ম যেখানে সেখানে গড়িয়ে পড়া, সে তো পড়বেই!”
চিত্রা অপর বাক্য বলার আগেই তমসা উঠে ছাঁদের কোনা থেকে তারের উপর ছড়ানো সবুজ গামছাটা নিয়ে এলো। চপল পায়ে এগিয়ে গেলো বাহার ভাইয়ের দিকে। হাতটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল,
“দেন স্যার, আমি মুছিয়ে দিই।”
বাহার ভাই সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নিলেন নিজের মাথাটা। এক পা পেছনেও গেলেন বোধহয়। শ্যামলাটে পুরুষটির চোখে একটু রাগের আভাস পাওয়া গেলো। চিত্রা জানে এখন একটু বিকৃত পরিস্থিতি হতে পারে তাই সে পরিবেশের মোড় ঘুরাতে বলল,
“আপনার জন্য কাঁকড়ার ঝোল আর ভাত নিয়ে এসেছি। টেবিলে ঢাকা দেওয়া আছে। গিয়ে খেয়ে নিন।”
বাহার ভাই যেন শুনলেন না চিত্রার কথাটা। তিনি তমসার দিকেই গম্ভীর দৃষ্টি রেখে বললেন,
“তোমার চিত্রার সাথে দেখা করার জন্য মন টানছিলো তাই তুমি এসেছো এবং দেখা করেছো। তাহলে এখনও এখানে কী?”
বরাবরের মতনই লোকটার রুক্ষ গলার স্বর, কঠিন আচরণ। চিত্রার তমসার ফ্যাকাসে হয়ে আসা মুখটার দিকে তাকিয়ে মায়া হলো। তাই সে-ই বলল, “আপনি খেয়ে আসুন তো। আমিই তমসাকে রেখেছি। একটু কথা বলবো বলে।”
“শোনো তমসা, পরবর্তীতে চিত্রার সাথে কথা বলতে হলে ওর বাড়িতে গিয়ে বলবে কথা। আমার বাড়ি, স্পেশালি আমার ছাঁদে আমি বাহিরের কাউকে এলাউ করি না। মনে থাকবে?”
লজ্জায়, অপমানে তমসার মুখটি ছোটো হয়ে এলো। তবে দমে গেলো না তখনও। মিনমিন করে বলল,
“চিত্রা আপুও তো এসেছে।”
“চিত্রা আর তুমি এক নও। তুমি আমার স্টুডেন্ট কেবল। আর চিত্রা আমার হবু বউ। তফাতটা বুঝতে পেরেছো?”
তমসার মাথায় যেন বিস্তীর্ণ আকাশটি ভেঙে পড়লো। অস্বাভাবিক কিছু শুনে ফেলেছে ভেবে তাকালো নিজের স্যারের দিকে। ভুল শুনেছে কি-না তা বুঝার জন্য এই তাকানো।
ওদিকে চিত্রার কানে ‘হবু বউ’ শব্দটি বারংবার সুরেলা গানের মতন প্রতিধ্বনিত হতে থাকলো। হুট করেই চারপাশটা কেমন সুন্দর লাগতে আরম্ভ করলো। কত বছর সে অপেক্ষা করেছিলো এমন এক ক্ষনের? যেই সময়টাতে বাহার ভাই নামক মানুষটা স্পষ্ট ভাবে এই পরিচয়ে লোক সমাজে তাকে পরিচিত করাবে! ঠিক কতটা বছর অপেক্ষার পর!
অপরদিকে তমসার শুকিয়ে যাওয়া মুখটির দিকে তাকিয়ে তার খারাপও লাগলো। আহারে ছোটো মেয়েটা! কে জানি কী অনুভব করছে মেয়েটা!
তমসা আর কথা না বাড়িয়ে সালাম দিয়ে ছাঁদ থেকে বেরিয়ে গেলো। এত বড়ো ধাক্কার পর হয়তো বলার ভাষাই খুঁজে পেলো না।
কম্ফোর্টের নিচে সবে গা ঢাকা দিয়েছেে চাঁদনী। উষ্ণতায় লেগে আসছে চোখের পাতা। নিদ্রার তোপে তাকিয়ে থাকা দায় হয়ে যাচ্ছে যেন। ঠিক তখনই ফোনটা বেজে ওঠল তার। নিশ্চয় বাড়ি থেকে ফোন এসেছে! এছাড়া এই জগতে তাকে ফোন দেওয়ার আছেই বা কে?
অলস হাতে ফোনটা তুললে চাঁদনী। ভিডিও কলে মুখ ভেসে উঠলো তার মায়ের। কল রিসিভ হতেই ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন,
“কিরে, এখনই ঘুমায় গেছোছ? খাইছোছ কিছু? মুখটা এমন শুকিয়ে গেছে কেন? ঘুমাস না ঠিক মতন?”
মহিলার শুদ্ধ – অশুদ্ধ ভাষার মিশ্রণে বাক্য গুলো একের পর এক আসতেই লাগলো। মায়ের প্রশ্নের ঝুড়ি শেষ না হওয়া অব্দি চাঁদনী চুপ থাকলো। রোজা সওদাগর চুপ হতেই সে বলল,
“ঘুমাতে আসছি আম্মু। বিকেলে আমার ঘুম প্রিয় তুমি তো জানোই!”
“তারপরেও! মুখটা কেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। তাছাড়া হবেই তো! বয়স তো আর কম হলো না।”
বেফাঁস কথা বলাই যেন মহিলার অভ্যেস। পেছন থেকে একটি পুরুষালী স্বর ধমকালো। আর সেটা আর কেউ নয় আব্বুই।
চাঁদনী বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল, “আম্মু, এটাকে নষ্ট হয়ে যাওয়া বলে না। তুমি যদি তোমার একত্রিশ বছরের মেয়ের মুখখানিতে কুড়ির ভাব দেখতে চাও সেটা একান্তই তোমার সমস্যা। প্রতিটা বয়সের আলাদা ছাপ, আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। তাই বলে সেটাকে রূপ নষ্ট হয়ে যাওয়া বলে না।”
“হইছে হইছে, এদিকে বাপ ধমকায়, ওদিকে মেয়ে জ্ঞান দেয়। আমি আছি মহা জ্বালায়। এখন বল, কবে আসবি? তোর ছোটো বোন বিয়ে করে নিচ্ছে আর তুই বিদেশ-বিভুঁইয়েই পড়ে থাক।”
চাঁদনী জানতো, মায়ের ফোন করা মানেই একবার হলেও বিয়ের কথা বলা। তার উপর এখন আবার অহি বিয়ে করছে মায়ের সেটা বদহজম হচ্ছে।
চাঁদনীকে চুপ থাকতে দেখে রোজা সওদাগর অধৈর্য হলেন, “কিরে, কবে আসবি? বিয়ের ডেট কিন্তু ঠিক হয়ে গেছে। তুই গোছগাছ শুরু করেছিস তো? তোরে না বলছি আগেই?”
“আমি আসতে পারবো না এখন, আম্মু।”
“ক্যান আসতে পারবি না? বিদেশ গিয়া কি তুই ইয়ার্কি পাইয়া গেছোছ? কোনো কথা বললে শুনোস না, মা বাপরে দেখতে আসার নাম একটাবার মুখে নিতে দেখলাম না, কী সমস্যা তোর? মা-বাবাকে কি কবর দিয়ে দিছত? কোনো দায়িত্ব নাই তোর?”
“আহা আম্মু, উল্টাপাল্টা কথা বলো না তো। আব্বুকে দাও। আমার কিছু দরকারি কথা আছে তোমাদের সাথে।”
“তোর আব্বা বাথরুমে গেছে। কী কথা, আমারে ক? কী হইছে তোর?”
চাঁদনীর চোখ থেকে ততক্ষণে ঘুম পালিয়েছে। নিজেকে সে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ধাতস্থ করলো শেষ অব্দি কথাটা বলবে বলে। এবং অবশেষে সে মুখ খুললো। বললো,
যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ২১
“আম্মু, আমি এখন দেশে আসবো না। কবে আসবো জানি না। আমি ঠিক করেছি আমি পৃথিবীর সকল পাহাড় গুলো ঘুরে ঘুরে দেখবো এবং সে অনুযায়ী আমার প্রসেস শুরু হয়ে গিয়েছে। খুব শীগ্রই হয়তো আমার পাহাড় চড়ার স্বপ্ন, শখ পূরণ হবে। অনেক হলো মানুষের সাথে, মায়ার সাথে বসবাস। এবার আমি কঠিন পাহাড়কে ছুঁতে চাই। চড়তে চাই চূড়ায়। দেখতে চাই অতটা উপর থেকে জীবনকে। তাই আমি তোমাদের অনুমতি নিতে চাই। মা-বাবা হিসেবে আমার জানের উপর তোমাদের অধিকার আছে। তাই আমি বলতে চাই যে, তোমরা আমার জানের উপর থেকে দাবি তুলে নাও, আম্মু। পাহাড়ে গিয়ে যদি আমি হারিয়ে যাই কিংবা আর না ফিরি তোমরা দাবি রেখো না। নিজেদের মনকে সামলে নিও।”