যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ৩০
মম সাহা
অনুষ্ঠান বাড়িতে এক-দুই কথা উঠবে সেটার পরোয়া কেউ করে না। কিন্তু তাই বলে এমন বেফাঁস কথা? এমন মুখের উপর জবাব? সামাজিকতা বলতেও তো একটি বস্তু আছে। বাহার ভাই নামক লোকটি তা যদি জানতেন আদৌ।
ভদ্রমহিলা বাহার ভাইয়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। ভয়ঙ্কর রাগে তিনি রীতিমতো ভেতর ভেতর কাঁপছেন তা বুঝা যাচ্ছে ঠিক। চাঁদনী আর কথা বাড়াতে না দিয়ে আগ বাড়িয়ে বাহার ভাইকে জিজ্ঞেস করল, “বাহার ভাই, ভালো আছেন?”
চাঁদনীর সবসময়ের চতুরতা একটু বেশিই। বাহার ভাই হাসলেন সেই চতুরতা দেখে। মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন, “ভালো আছি তো, চাঁদ। তুমি ভালো আছো? কতদিন পর তোমায় দেখলাম!”
“অনেকদিন হলো।”
“অনেক বছর হলো বলো। তা দেশে ফিরে ভালো করেছো। তোমার মিষ্টি মুখটি দেখতে পেলাম সকলে।”
“আপনাদের সকলকেই মিস করেছিলাম। তাই এলাম।”
“তবে, সুইজারল্যান্ডে শান্তিতেই ছিলে বলো? অন্তত তোমার বিয়ে হচ্ছে না বলে কেউ চিন্তায় মরছিলো না।”
শেষের বাক্যটিতে শ্লেষাত্মক ভাব সম্পূর্ণই আঁচ করতে পারল সকলে। চিত্রার ইচ্ছে করছে নিজের হাতটা নিজেরই কামড়ে খেতে। এই লোকটা যে কেন সবসময়, সব জায়গায় এমন দাম্ভিক স্বরে কথা বলেন কে জানে? একটু শান্তি বজায় রাখতেই পারেন না যেন।
মৃন্ময়ের মা এবার রেগে গেলেন। এবং সে রাগটি আর চাপিয়ে রাখতে পারলেন না ভেতরে। তার রাগ অগ্নির ফুলকির ন্যায় বেরিয়ে এলো। তিনি বেশ জোরেশোরে চ্যাঁচামেচি শুরু করলেন,
“এই ছেলে, এই, তুমি কী ভেবেছ নিজেকে? কোনো মহাজ্ঞানী? আসছো ধরেই আমার একটি কথাকেই ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে খোঁচা মেরে যাচ্ছো। অভদ্র।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এতক্ষণ যদিও চাঁদনী, চিত্রা, আফজাল সওদাগর, মৃন্ময় ছাড়া তেমন কেউ এই কথোপকথন শুনছিলো না কিন্তু মহিলার হাঁক-ডাকে এখন প্রায় কাছেপিঠের অনেকেই তাকালো।
শাহাদাত তাদের থেকে কিছুটা দূরেই ছিল নিজের স্ত্রীর সাথে। কিন্তু তার মায়ের উচ্চস্বর পেতেই ছুটে এলো। এবং এসেই সে স্তব্ধ হয়ে গেলো প্রথমেই চাঁদনীকে দেখে। কারণ সে জানতোই না চাঁদনী যে এসেছে। জানার সুযোগ ছিলো না কারণ সে মাত্রই এসেছিল।
সকলের ভেতরেই বিচলিত ভঙ্গিমা দেখা দিলো কেবল বাহার ভাই ব্যতীত। লোকটার চোখে-মুখে চাপা হাসিটি স্থায়ী। মহিলাটিকে রাগিয়ে যে তিনি ভীষণ আনন্দিত তা তার হাবভাবে স্পষ্টত।
হেঁয়ালি করে তাই সেই রাগে ঘি ঢালতেই জবাব দিলেন, “আমি আপনাকে কী বললাম? বলেছি তো চাঁদনীকে। কথা হলো সবার মাঝে, যার কথা তার গায়ে বাজে— ব্যাপারটি এমন হলো না?”
মহিলা রাগে-দুঃখে তখন তাকালেন আফজাল সওদাগরের দিকে। অভিযোগের স্বরে বললেন, “আপনি অন্তত কিছু বলেন, ভাইজান।”
“ওমা, আপনি নালিশ করছেন, আন্টি? এ কেমন বাচ্চামো?” বলেই গাল ভরে হাসলেন বাহার ভাই।
“খবরদার ছেলে, অভদ্রতা করবে না।”
“সত্যি কথা বললেই আজকাল দোষ লেগে যায়! যাহ্ বাবা!”
মহিলার এবার রাগে চোখে জল জমল। তিনি আদরের ছোটো ছেলের দিকে তাকালেন। মৃন্ময় উঠে এলো এবার। মায়ের অশ্রুসিক্ত নজর তার কাছে সহ্য হয় না যে!
“বাহার ভাই, আম্মুর সাথে ভদ্র ভাবে কথা বলুন। উনি বয়সে বড়ো আপনার।”
“তোমার মা’কে প্রথমে এই কথাটা তোমার স্মরণ করানো উচিত ছিলো, মৃন্ময়। বয়সে বড়ো মানুষ হয়ে এমন বিবেকহীন ভাবে একটি মেয়ের উপর অপ্রোয়জনীয় ছড়ি ঘুরানো তার উচিত ছিলো না।”
মায়ের নামে এমন কটুক্তি সহ্য হলো না মৃন্ময়ের। সে গিয়ে তৎক্ষণাৎ চেপে ধরল বাহার ভাইয়ের শার্টের কলারটি। হুলুস্থুল কাণ্ড বেঁধে গেলো মুহূর্তেই।
আফজাল সওদাগর এবার কথা বললেন। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, “মৃন্ময়, বাহারের জামা ছাড়ো।”
মৃন্ময় তখনও জামাটি ধরেই আছে। এতদিন পর চাঁদনীর সাক্ষাৎ, মায়ের সবটা ঘেঁটে ঘ করে ফেলা, বাহার ভাইয়ের সত্যি কথা, মায়ের চোখের জল…. এসব তাকে যেন দিকভ্রান্ত করে দিয়েছে।
চিত্রা ছুটে এলো। দু’জনের ভেতর ঢুকে গেলো জোর করে। এবং ঢুকেই মৃন্ময়ের বুকে সজোরে ধাক্কা দিলো। বাহার ভাই যে মেয়েটার প্রাণ! তাই তার দিকে আসা একটি শক্ত হাওয়াও মেয়েটি সইতে পারে না। ঢাল হয়ে দাঁড়ায় যেন।
মৃন্ময়ের বুকে ধাক্কা দিয়ে চিত্রা বেশ জোরেশোরে বলে উঠল, “ছাড়ো ভাইয়া। তুমি কী আক্কেল হারিয়ে ফেলেছো? এত আনন্দের অনুষ্ঠানে কী শুরু করলে!”
“আমি শুরু করেছি? শুরু তো করেছেন, বাহার ভাই।”
“বাহার ভাই কী শুরু করেছেন? এই যে তুমিই তো এসে তার জামাটা ধরলে। সেই ধরার বিপরীতে মানুষটা একটা শব্দ বলেছে? একটা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে?”
পরিস্থিতি তখন যথেষ্ট বিগড়ে গিয়েছে। অনেকেই আশেপাশে এসে জড়ো হয়ে গিয়েছে। কেউ জানতে চাচ্ছে ঘটনা কী, কেউবা বিশ্লেষণ করে বুঝাচ্ছে। কেউবা নির্ধারণ করছে সবচেয়ে বেশি দোষটি কার।
চাঁদনী নিজের বাবার দিকে তাকাল। আফজাল সওদাগরের মুখটিতেও চিন্তা তখন বসতভিটে নিয়ে স্থায়ী হয়েছে। তাই নিজেই এগিয়ে গেলো। ঘটনা সামলানোর জন্য মৃন্ময়ের মায়ের হাতটি ধরে বলল, “আন্টি, বাহার ভাইয়ের কথা মনে নিবেন না। মানুষটা আমাকে স্নেহ করেন তো, তাই একটু এভাবে বলে ফেলেছেন। আপনারা বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, বিয়ে-শাদির কথা তো একটু চিন্তা করবেনই। কিছু মনে করবেন না। একদিন ঠিক বিয়ে করে আপনাদের চিন্তা মিটিয়ে দিবো।”
শেষের কথাটি বেশ শীতল কণ্ঠেই হেয় করে বলল চাঁদনী। এবং এই একটি কথাই শাহাদাত ও মৃন্ময়ের শরীরে গিয়ে ভালো করে বিঁধলো। শাহাদাত বরাবরেরই নীরব চালাক ছেলে। তাই সে-ও মা’কে একটু বুঝালো, “হয়েছে তো, আম্মু। সামান্য বিষয় এত বড়ো করার কী আছে! তুমিও না। আজ একটু আনন্দ-ফুর্তি করবে তা না! কী শুরু করলে?”
ভদ্রমহিলা এবার মিইয়ে এলেন। তাছাড়া এত লোক সমাগমে আর ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নিতেও চাইলেন না বলেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়ে সরে গেলেন। যাওয়ার আগে ছোটো ছেলেকেও সাথে যেতে বললেন।
মৃন্ময়ের ততক্ষণে মাথা কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে এবং নিজের হটকারিতায় লজ্জিতও অনুভব করল। চোখ উঁচিয়ে যে একটু চাঁদনীর দিকে তাকাবে অতটুকু সাহস তার হচ্ছিলো না।
আফজাল সওদাগর বাহার ভাইয়ের দিকে এগিয়ে এলেন। বড়ো চাচা আসতেই চিত্রা একটু সরে গেলো। বাহার ভাইকে আগলে, বাঁচাতে গিয়ে যে সবার সামনে এতটা রুষ্ট আচরণ করলো তা সবাই খেয়াল করেছে কি-না তা ভেবে খানিকটা ভীত হলো। আর যদি আব্বু দেখে নেয় তাহলে তো কেলেঙ্কারি!
সে আবার সাবধানী চোখে চারপাশে তাকিয়ে খোঁজ করল, আব্বু আছে কি-না। অবশেষে নিজের বাবাকে দেখতে না পেয়ে মনে মনে স্বস্তির শ্বাস নিলো। যাক, বিপদ কেটেছে।
আফজাল সওদাগর বাহার ভাইয়ের জমাটা ঠিক করে দিলেন। কাঁধে চাপড় দিয়ে নিজের ভেতরের ভালো লাগাটা প্রকাশ করলেন। তার মেয়ের হয়ে কেউ এমন বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে তিনি যে প্রচণ্ড খুশি হয়েছেন তা তার আচরণেই বোঝা গেলো।
মৃন্ময় শান্ত চোখে সেটা অবলোকন করে নিজেই মনে মনে নিজেকে কয়টা গালি দিলো। কী যে দরকার ছিলো বোকামি করে বাহার ভাইয়ের কলার টানার! মেয়ের সাথে সাথে এবার মেয়ের বাপের চোখেও শত্রু হয়ে গেলো!
শাহাদাতের স্ত্রী এগিয়ে এলো চাঁদনীর কাছে। চাঁদনীর দু-হাত ধরে বেশ অপরাধী স্বরে বলল, “আপু, কিছু মনে করবেন না। আম্মা একটু এমনই। ভালো আছেন তো আপনি? অনেকদিন পরে দেখলাম।”
চাঁদনী জোরপূর্বক মুখে কৃত্রিম হাসি ঝুলালো। মেয়েটার গালে হাত রেখে আন্তরিকতার সাথে উত্তর দিল,
“বেশ আছি। তুমি ভালো আছো তো?”
চিত্রা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। এই জায়গাটা স্বাভাবিক হতেই অহি আপার কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। এখনই তো বরযাত্রী চলে আসবে, অহি আপা তৈরি হলো কি-না সেটা তদারকি করার দায়িত্ব তারই উপর।
বাড়ির দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে পা রাখতেই চিত্রাকে পেছন থেকে ডেকে উঠলেন তার বাবা,
“ঝামেলাটা কে করেছে?”
চিত্রার মাত্রই খুশি হওয়া মনটা চুপসে গেলো। আব্বু দেখেনি বলে মনে মনে সে যেই শান্তিটা পেয়েছিলো তা হাওয়ায় মিঠাইয়ের মতন নিমিষেই উড়ে গেলো। সে নিজেকে ধাতস্থ করল। কথাকে সাত-পাঁচ ঘুরিয়ে বলল,
“সব ঝামেলা ঠিক হয়ে গিয়েছে তো!”
“করেছিলো কে ঝামেলাটা?”
চিত্রা মৌন রইল। আব্বু যেহেতু সবটাই দেখেছে তাহলে আর নতুন করে বলে লাভ নেই। এরচেয়ে চুপ থাকাটাকেই সে আদর্শ সিদ্ধান্ত মনে করল। মেয়েকে চুপ থাকতে দেখে কতক্ষণ নুরুল সওদাগর চুপ করে রইলেন। এরপর ধীর স্বরে বললেন, “ঐ বখাটে ছেলেটাকে এখানে আসতে বলেছে কে?”
চিত্রার মোটেও ভালো লাগলো না আব্বুর এমন বিশেষণ। তবুও সে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো, “বড়ো চাচ্চু।”
“তোমার বড়ো চাচ্চুর আর আক্কেল হলো না।”
“এভাবে বলছেন কেন, আব্বু। বাহার ভাই তো কিছু করেননি।”
“তোমার কাছে সে কিছুই করে না। অন্ধ হয়ে গিয়েছ না।”
কথা শেষ করেই গটগট করে চলে গেলেন মানুষটা। চিত্রা দাঁড়িয়ে রইল চুপ করে। আব্বুটার যে কী সমস্যা বাহার ভাইকে নিয়ে সে আজও বুঝে উঠতে পারল না।
বরযাত্রী চলে এসেছে। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয় গিয়েছে। হৈচৈ, চারপাশে কোলাহলে পরিপূর্ণ। অহি থম মেরে বসে আছে। কবুল বলার মুহূর্তটি তার জীবনে বড়ো রোমাঞ্চকর অনুভূতি মনে হলো।
নওশাদ অহির দিকে তাকালো। মেয়েটিকে বধূর সাজে আজ অপরূপ লাগছে। এত মিষ্টি মুখটা!
অহিকে কবুল বলতে বলা হলেও সে চুপ করে রইলো। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকাতে লাগলো চারপাশে। আমজাদ সওদাগর মেয়েকে সাহস জোগানোর জন্য কিছু বলতে উদ্যত হতেই খেয়াল করলেন মেয়ে তার হাসছে। মুচকি হাসিটি খুব গোপনেই ফুটে উঠেছে মেয়ের ঠোঁটে।
তিনি মেয়ের দৃষ্টি খেয়াল করে তাকাতেই দেখলেন দূরে অবনী বেগমের মুখটি দেখা যাচ্ছে৷ তিনি হাসাছেন। ঘাড় নাড়িয়ে, হাতে মেয়েকে ইশারায় বুঝাচ্ছেন যে, তিনি আছেন। তার চোখ দু’টো টলমল করছে। হয়তো মেয়ের শৈশব মনে পড়ছে। এমনই বউ সেজে তিনি এসেছিলেন বাড়িটায়। অহি এমন করেই দূরে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে ড্যাবড্যাব করে দেখছিল তাকে। কাছে আসেনি একটুও।
আজ দৃশ্য বদলেছে। আজ বউ সেজেছে ছোটো সেই অহি। আর দূরে দাঁড়িয়ে আছে তার সেই যুগের সদ্য বধূ হওয়া মানুষটি। অথচ আজ অহির পরম ভরসার স্থান এই মানুষটি। শান্তির স্থান।
আমজাদ সওদাগরের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। তিনি জন্মদাতার জায়গা দখল করলেও, সত্যিকার অর্থে বাবা হয়তো কখনো হতে পারেননি।
ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ঝলমলে দেখাচ্ছে রাস্তা। পিচঢালা রাস্তার সাথে ল্যাম্পপোস্টের হলদেটে আলোর যেই মায়াময় একটি প্রেম আছে তা সাধারণ চর্মচক্ষু কিংবা কর্কশ মস্তিষ্ক কখনোই বুঝতে পারবে না। এটা বুঝতে প্রেমের নজর দরকার। প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা হওয়া দরকার। এই যে চিত্রা, ও তো প্রায় রাতেই বারান্দায় দাঁড়িয়ে এই প্রেম দেখে। ওর এগুলো দেখতে ভালো লাগে।
“কথার সিস্টেম কি তোমার অফ হয়ে গিয়েছে?”
বাহার ভাইয়ের প্রশ্নে ধ্যানমগ্ন চিত্রার ধ্যান ভাঙলো কিছুটা। ঘোরগ্রস্তের মতন বলল, “হু!”
“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছো নাকি ঘোড়ার মতন? ভালো কথা বললাম তাও বুঝোনি!”
লোকটার হেঁয়ালি কথায় মুখ ভেংচালো চিত্রা, “আপনি দুপুরে কেন এমন ঝামেলা পাকিয়ে ফেললেন!”
“ঝামেলা? আমার এতকিছু মনে থাকে না। কী হয়েছিলো দুপুরে?”
“কী হয়েছিলো জানেন না? আব্বু রেগেছেন।”
“সে তো রাগবেই। তোমার বাপের আমার প্রতি এই একটা ফিলিংসই কাজ করে। আমার কী মনে হয় জানো?”
চিত্রা মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। রাস্তা তখন শুনশান। দু’জন হাঁটছে পাশাপাশি। শুধালো, “কী মনে হয়?”
“মনে হয়, তোমার বাপ আর আমি আগের জন্মে সতীন ছিলাম। তাই কেউ কাউকে এ জনমেও দেখতে পারি না। আগের জন্মে চুল ছিঁড়াছিঁড়ি করেছি। এ জন্মেও তাই। কেবল ছেলে বলে বাহ্যিক ভাবে চুল ছিঁড়াছিঁড়ি করছে না তোমার বাপ। মনে মনে ঠিকই করছে। এই দেখো, আমার মাথার মাঝখানে কেমন টাক পড়ে যাচ্ছে না? তোমার বাপ মনে মনে খামচে খামচে আমার চুল তুলছে। তাই তো টাক পড়েছে।”
বাহার ভাইয়ের এমন অদ্ভুত কথায় চিত্রা হত-বিহবল হয়ে গেলো। অস্ফুটস্বরে বলল, “কী!”
“হ্যাঁ। এজন্য প্রতিদিন আমার এত চুল পড়ে যাচ্ছে।” কথাটি বলেই হেসে উঠল মানুষটা৷ চিত্রাও কি আর দমাতে পারে তার হাসি৷ বাহার ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হেসে দিলো সে-ও।
রাস্তার মিহি বাতাস সেই হাসিকে সজীব করে তুলল। বাহার ভাই চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালেন। বিড়বিড় করে বললেন,
যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ২৯
“এভাবে হেসো না, মেয়ে। একদম বুকে গিয়ে লাগে। বাপ চুল টানছে, এদিকে মেয়ে কি-না প্রাণই কেড়ে নিচ্ছে! ভারি অন্যায়। ভারি অন্যায়।”
চিত্রার হাসি আর দেখে কে? সাথে লাজুক লাল আভায় গাল ছেয়ে গেলো। মানুষটা এত শান্তির কেন? সুন্দর কেন?