যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ৩৭
মম সাহা
আকাশে তারা জ্বলছে। জোছনায় ছেয়ে গেছে চারপাশটা। তবে উজ্জ্বল, রূপোলি আলোয় সবই দেখা যাচ্ছে। সুন্দর, ঝলমলে পুরোটা আকাশ।
চিত্রা বিকেলে কখন ঘুমিয়ে ছিলো খবর নেই। চোখ মেলতেই জানালার বাহিরের রূপোলী চাঁদের ছায়ায় তার মন ভরে গেলো। কয়েকদিনের বিষণ্ণ মনটা একটু ভালো অনুভব করল। বিছানায় বসে জানালা দিয়ে চাঁদ দেখে তার মন ভরবে না তাই ছুটে গেলো বারান্দায়। শ্যামলা মুখটায় চাঁদের আলো এসে পড়েছে। কী সুন্দর ফুরফুরে হাওয়া দিচ্ছে। গা-টা ঠান্ডা হয়ে গেলো মিনিট দুই দাঁড়াতেই। আর চাঁদের আলোটা এত সুন্দর লাগছে চারপাশে কারেন্ট নেই বলে। মোটামুটি বৈদ্যুতিক আলোর ঘাটতিতে চাঁদের পরিপূর্ণতা দ্বিগুণ হয়েছে যেন!
হুট করেই তার চোখ গেলো রাস্তায়। রাস্তায় হাঁটছে বনফুল আর তুহিন। কী নিয়ে যেন কথাও বলছে দু’জনে। বনফুল মেয়েটা আজও ভীষণ লাজুকলতা। মাথা নামিয়ে তুহিন ভাইজানের কথা শুনছে। ভুল করেও একটিবার তাকাচ্ছে না মুখটায়। যেন সর্বনাশ হয়ে যাবে!
অথচ মুচকি মুচকি হাসছে। কী শুনে এমন মুচকি হাসির উদয় কে জানে? এই দৃশ্য দেখার জন্য চিত্রার কত তোরজোর ছিলো আজ থেকে আড়াই-তিনবছর আগে! নিরু আপুর সাথে সেজন্য কম খারাপ আচরণ করেনি। কিন্তু আজ সেসব কেবলই আফসোস। তার জন্য দু’টো মানুষ ভালোবেসেও দু’জনকে পেলো না। সৃষ্টিকর্তা সব আগেই ঠিক করে রাখেন যদিও তবে সে সবসময় নিজেকে দায়ী করবে। কারণ অজুহাত তো সে-ই ছিলো তাই না?
আজ তুহিন ভাইকে বনফুল পাবে কিন্তু নিরু আপু তো ঠিক হারিয়ে ফেলল! এজন্য হয়তো কেউ খুব ব্যথা চেপে বলেছিলো— তোমাকে আমার পেয়ে যাওয়া মানেই কোনো একজন তোমাকে কী নিষ্ঠুর ভাবেই না হারালো….
আসলেই পৃথিবীর সকল পরিপূর্ণতার গল্পের নিচেই চাপা পড়ে যায় তৃতীয় একজনের হারানোর যন্ত্রণাটা। তারপর? তারপর সেই যন্ত্রণা গুলো বুকে গুটিয়ে রেখে মানুষ তার গোটা একটি জীবন কাটিয়ে দেয়।
হাহ্!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
চিত্রার ভালো মনটা ভরে উঠল দীর্ঘশ্বাসে। খুব বেশি মনে পড়লো নিরু আপুকে। কেমন আছে মেয়েটি? ভালোবাসার মানুষটার সাথে না হওয়া সংসারটা সে ভুলতে পেরেছিলো কি?
চিত্রা ভাবলো একটু ফোন করা যাক। বেশ কতমাস হলো তাদের যোগাযোগ নেই। নিরুও যোগাযোগ করেনি, তারাও আর চেষ্টা করেনি। অতীত বর্তমানে যাওয়া মানেই তো বর্তমান নষ্ট হওয়া। তাই তারা নিরুর বর্তমানটা নষ্ট করতে চায়নি। কিন্তু আজ ভীষণ মন পুড়ছে।
চাঁদের আলোয় কিছুটা আন্দাজ করেই নিজের অন্ধকার রুমটাতে ঢুকল চিত্রা। খাট হাতড়ে ফোনটা নিলো। আবার চলে গেলো বারান্দায়। প্রথমে ভাবলো ফেসবুকে নক করবে। কিন্তু ফেসবুকে গিয়ে দেখলো নিরু আপুর আইডিটা অফ। চিত্রার ভ্রু কুঁচকে এলো। নিরু আপু কবে আইডিটা ডিলিট করল? সে তো খেয়াল করেনি! তুহিন ভাইজান করেছে কি খেয়াল?
তেমন মাথা না ঘামিয়ে চিত্রা সিমে কল করল। কিন্তু কল গেলো না। একজন স্পষ্টভাষী নারীকণ্ঠ জানালো নাম্বারটি বন্ধ আছে।
চিত্রার মন ছোটো হয়ে এলো। নিরু আপুকে আজ এতো মনে পড়ছে অথচ আজই সব যোগাযোগের রাস্তা বন্ধ?
কিছু একটা ভাবনা মাথায় খেলে যেতেই চিত্রা নিরু আপুর নাম পুরোটা লিখে ফেসবুকে সার্চ করলো। ভেসে উঠল অনেকগুলো আইডি। এবং চিত্রার সন্দেহ ঠিক প্রমাণ করে দিয়ে অনেকগুলো আইডির ভেতর থেকে নিরু আপুর নতুন আইডিটা ভেসে উঠল। প্রোফাইলে কী সুন্দর দু’টো মানুষের হাস্যোজ্জ্বল মুখ ভাসছে! তার মানে নিরু আপু তার সকল পুরোনো পথ খুব নীরবেই বন্ধ করে দিয়েছে যেন কোনো অতীত সেই পথের বাঁকে তাকে ছুঁতে না পারে।
চিত্রা ফোনটা নামিয়ে রাখলো বারান্দায় চেয়ারটায়। যাক, নিরু আপুর সাথে কথা বলতে না পারুক ছবিটুকু তো দেখতে পেরেছে। কী সুন্দর হাসিতে জড়ানো মুখ। হাসিটি যে অকৃত্রিম তা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তার মানে, তুহিন ভাইজানকে নিষ্ঠুর ভাবে হারানো নিরু আপু সামলে নিয়েছে নিজেকে। আর কী চাই? এতটুকু সুখী হোক সেটাই তো ও চেয়েছিল। মনটা কিছুটা বিষণ্ণ আবার কিছুটা আনন্দের মিশ্র অনুভূতিতে ভরে গেলো। এই পৃথিবীর সকলে এমনকি চিত্রা নিজে ভুলে গেলেও নিরু আপু নামের একটি মেয়ে কখনো ভুলবে না যে, তার প্রেম হারানোর পেছনে একটি মেয়ে দায়ী। মেয়েটি আর কেউ নয়, চিত্রা, চিত্রা ও চিত্রা…..
বয়ঃসন্ধির কাল বেশ কিছু মাস আগে চুকিয়ে ফেলা চিত্রার আজ আবার কান্না পেলো। সে কি আদৌ কারো ব্যথার কারণ হতে চেয়েছিলো? চায়নি তো!
কিন্তু চিত্রার এই শোকের কান্না স্থায়ী হওয়ার আগেই তার ডাক পড়ল। চেরি ছুটে এসেছে। ওর আবার দরজায় নক করার মতন ফর্মালিটি মানার অভ্যেস নেই। যখন-তখন এসে পড়ে। এখনো তা-ই। ঠাস করে ঘরে ঢুকে পড়ল। হাঁক ছেড়ে ডাকল,
“এই ছোটো আপা, আপা, কোথায় তুমি?”
চিত্রা নিজের চোখের জলটুকু তাড়াতাড়ি মুছে নিলো। বারান্দা থেকে গলা তুলে বলল, “এই তো বারান্দায় আছি। কী হয়েছে? এখানে আয়।”
চেরি আর সেকেন্ড ব্যয় না করেই বারান্দায় গেলো। চিত্রার হাত ধরে বলল, “তাড়াতাড়ি চলোতো একটু বাহার ভাইদের বাড়ি। বড়ো মা বলেছে ঐ টুইংকেল আপুকে ডেকে আনতে। পকোড়া ভেজেছে।”
টুইংকেল বাহার ভাইদের বাড়িতে শুনে চিত্রার কপাল কুঁচকে এলো আপনা-আপনি। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, “ও ঐ বাড়িতে কেন?”
“কেন আবার! বনফুল আপার সাথে কথা বলতে। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে। বড়ো আপা বাহিরে গিয়েছে। কী করবে মানুষটা একা একা? তাই ঐ বাড়িতে গিয়েছিলো।”
চিত্রার এতক্ষণের দুঃখবিলাসীনি মনটা হঠাৎ খ্যাপে উঠল। বনফুল রাস্তায় ভাইজানের সাথে হাঁটছে তার মানে টুইংকেল ঐ বাড়িতে বাহার ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। এছাড়া তো আর ঐ বাড়িতে কেউ নেই।
চিত্রার চাপা রাগটা বুঝতে দিলো না চেরিকে। নরম স্বরে ওকে বলল, “তুই যা, সোনা। আপা তো মাত্র উঠেছি তাই মাথা ধরেছে।”
“আমি গেলে তো যেতামই। আমার একা যেতে ভালো লাগে না। চলো তো তুমি। বনফুল আপাকেও ডেকে আনতে বলেছে। আর বাহার ভাই তো আসবেন না তাই তার পকোড়াগুলো আমাদের সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছে।”
চিত্রা শ্বাস ফেলল। যতই চায় ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে ততই যেন জড়িয়ে যায় আরও। ও আর নতুন করে কাউকে কষ্ট দিতে চায় না, টুইংকেলকেও না। কিন্তু এসব কাহিনি ঘটতে থাকলে কোনদিন কষ্ট দিয়ে ফেলবে ঠিক। নিজেকে মনে মনে বুঝিয়ে রাজি হলো চিত্রা। যাই হোক চুপ করে থাকবো। কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলার চেয়ে চুপ থাকাটা শ্রেয়।
ঢাকার বেশ কিছু জায়গা চাঁদনী ফিরে ফিরে দেখেছে। কখনো কখনো বোনদেরও নিয়ে যাচ্ছে ঘুরতে, কখনো একাই বের হয়ে যাচ্ছে। আবার দেশ ছাড়ার আগে নিজের দেশটা ভালো করে দেখে যাওয়ার ইচ্ছে ওর। কিন্তু দেশটা তো আর ছোটো নয় যে এত সহজেই দেখা যাবে তাই নিজের শহরটাই দেখছে। আজ এসেছিলো হাতিরঝিল। শান্ত একটি জায়গা দেখে বেশ অনেকক্ষণ বসে ছিলো। আগে কলেজে থাকতে এখানেই এসে বসতো। একা আসতো না যদিও। সাথে আসতো শাহাদাত। দু’জনের প্রথম প্রথম প্রেম। বয়সও কম। কী সে আনন্দ, উত্তেজনা ছিলো সেই প্রেমের ভেতর। হাত ধরে হাঁটতো এখানটায়। এই সবই আজ স্মৃতি। সেসব স্মৃতি চাঁদনীকে কাঁদাতে পারে না আর। মনও খারাপ হয় না এখন। সে কেবল অনুভব করে আজকাল যে, যা হয় ভালোর জন্যই হয়। এই যে শাহাদাত কিংবা তার ভাইয়ের ছায়া এখন আর তার জীবনে নেই, সে কি ভালো থাকছে না? বেশ ভালো আছে।
এসবই ভাবতে ভাবতে হাঁটছে সে। বাড়ির দিকেই যাচ্ছে। মানুষ আঘাতে আঘাতে ক্ষয় হওয়ার পর যে তার জীবনে একাকীত্বই শ্রেয় হয়ে উঠে চাঁদনী তা আজ অনুভব করে। ভীষণ রকমে।
“আরেহ্! চাঁদনী না?”
চাঁদনী নিজের নাম শুনে থেমে গেলো। বিস্ময় নিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে একজন ছেলে। ছেলেটিকে সে চেনে। শৈল ছেলেটির নাম। সেদিন বাড়িতে এসে দেখে গেলো যে!
শৈলের হাসির বিপরীতে হাসি না দেওয়ার মতন অশোভনীয় কাজটি চাঁদনী করল না। বরং বেশ সুন্দর একটি হাসি দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, চাঁদনীই তো মনে হয়।”
ছেলেটি এগিয়ে এলো হাসিমুখে। আন্তরিক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল, “এদিকে যে?”
“একটু ঘুরতে বের হয়েছিলাম।”
“একা একা?”
“ঘুরতে সঙ্গী লাগে কে বলেছে?”
“কেউ বলেনি। কেমন আছেন?”
“বেশ ভালো। আপনি।”
“ভালো ছিলাম। আপনাকে দেখে এখন দারুণ আছি। চলুন হাঁটতে হাঁটতে কথা বলি। আমিও ওদিকটায় যাচ্ছি।”
চাঁদনী এবার অবাক হলো, “ওখানে কেন?”
ছেলেটি হাসি ধরে রেখেই বলল, “কাজ ছিলো একটা। তাই।”
এবার দু’জনেই হাঁটতে শুরু করল। হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকটা কথা বলল। কিন্তু কোনোটিই আহামরি দরকারী নয়। মুখরোচক ছিলো। কোন পাহাড়ে বরফ বেশি। কোন পাহাড় বসন্তে সুন্দর হয়। কোন পাহাড়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলে সেই শব্দ ফিরে আসে বহুবার…. এসকল গল্পই হলো তাদের সুন্দর সন্ধ্যার বিষয়বস্তু।
চাঁদনী এর ভেতর অনেককিছু জানতো, অনেককিছুই আবার তার অজানা। সে কখনো মুগ্ধ হয়ে শুনছে, কখনো লোকটার বলার ভঙ্গিতে হাসছে।
বেশ খানিকটা পথ আসার পরেই তাদের গল্পদের আড্ডায় ভাটা পড়ল। তাদের সামনে যখন একটি রিকশা এসে থামলো তখন। রিকশা থেকে হুড়মুড়িয়ে নামতে দেখা গেলো শাহাদাতকে। ব্যস্ত হাতে ভাড়া পরিশোধ করছে সে।
চাঁদনী আসার এতদিনে শাহাদাতের সাথে দেখা হয়েছিলো ঐ একদিন- অহির বিয়ের দিন। এরপর আর দেখা হয়নি। হয়তো স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই চাননি দেখা হোক তাই কোনো এক দৈব বলে তাদের আর দেখা হয়নি।
ভাড়া মিটিয়েই তড়িঘড়ি করে প্রায় ছুটেই চাঁদনীর কাছে এলো শাহাদাত। চোখে-মুখে ক্লান্তি উপচে পড়ছে লোকটার। কয়েকদিনে যেন ভেঙে পড়েছে শরীরটাও। কেমন যেন বয়স বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে! মানসিক অশান্তির জন্যই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।
“চাঁদ, তোমাকে বেশ কিছুদিন যাবতই আমি খুঁজছিলাম। বারান্দা, ছাদ সব জায়গা দিয়ে তোমাে রুমের দিকে তাকাতাম যদি একটু দেখা পাই। তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।”
চাঁদনী একবার তাকালো শৈল এর দিকে। লোকটার সামনে তার অপ্রস্তুত লাগছে। নিশ্চয় শাহাদাত নিজের স্ত্রীর চলে যাওয়ার বিষয়েই কিছু বলবে! আর সেসব একজন অপরিচিত মানুষটা শুনলে ভালো কি দেখাবে?
এবং চাঁদনীর এই মনের কথাটি কীভাবে যেন বুঝে গেলো শৈল। বরাবরের হাসিটা বজায় রেখে বলল,
“আরেকদিন কথা হবে তাহলে? আজ যাই। কেমন?”
চাঁদনী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। হাসি মুখে মাথা নাড়িয়ে বিদায় জানালো। শৈলও হাত নাড়িয়ে উল্টো পিঠে হাঁটতে আরম্ভ করলো।
চাঁদনীর হাসি মুখ সাথে সাথে পাল্টে গেলো শাহাদাতের দিকে তাকিয়ে। রুক্ষ স্বরে বলল,
“তোমার সাথে আমার সকল কথার কাল তো ফুরিয়েছে, শাহাদাত। তাহলে আজ পথের মাঝে পথরোধের কারণ কী?”
শাহাদাতে জ্বলজ্বল করা চোখগুলো নামিয়ে নিলো। দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে পরাস্ত সৈনিকের মতন ভঙ্গুর স্বরে বলল,
“কী এমন অভিশাপ দিয়েছিলে, চাঁদ? আজ আমি সব হারিয়ে এমন ভাবে নিঃস্ব হলাম!”
চাঁদনী কপাল কুঁচকালো, “অভিশাপ দেওয়ার ধর্ম আমার নেই, শাহাদাত। অত নিচু আমি কখনো ছিলাম না।”
“অবশ্য ঠিকই আছে। নিঃস্ব না হলে কখনো কি বুঝতাম তোমার যন্ত্রণা? তাই হয়তো আজ আমার সব শেষ। আমাকে ক্ষমা করো, চাঁদ। আমি আজ তোমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাই।” কথাটি বলতে বলতেই শাহাদাত স্থান, কাল, পাত্র ভেদ না করেই হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল চাঁদনীর পায়ের কাছে। দুই হাত জোর করে মাথা নামিয়ে কেঁদে ফেলল বাচ্চাদের মতন।
চাঁদনী ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। ভাগ্যিস প্রায় শূন্য রাস্তা! নয়তো কী হতো!
হুট করে শৈলের কথা মনে পড়তেই চাঁদনী পেছনে তাকালো। ছেলেটা খুব দূরে চলে গিয়েছে। ভুল করে কিংবা কৌতূহলবশত ঘুরেও তাকায়নি। এত ডিসেন্ট আদৌ কেউ হতে পারে?
রাস্তায় গিয়েই চিত্রা বনফুল আর তুহিন ভাইজানের মুখোমুখি হলো। তাকে দেখে হাসলো দু’জনেই। ডাকলো হাঁটাহাঁটি করার জন্য। চিত্রা বিপরীতে তাড়া দিলো। বড়োমা পাকোড়া খাওয়ানোর জন্য ডাকছে বলেই চলে গেলে বাহার ভাইদের উদ্দেশ্যে।
যতনে রাখিলাম যাতনা পর্ব ৩৬
সারা বাড়ি জুড়ে নিশ্চুপ নীরবতা। ছাদ থেকে ভেসে আসছে হাসির ঝঙ্কার। চিত্রার সেই হাসিটা যেন গায়ের চামড়ায় সপাটে চড়ের মতন লাগছে। তবুও সে গিলে নিলো সবটা রাগ। ছাদের দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো। টুইংকেল রীতিমতো বাহার ভাইয়ের পাশটায় বসে মনের সুখে হাসছে। এবং সেই হাসির সঙ্গে দিতেই বাহার ভাইয়ের ঠোঁটের হাসিটা অন্যবারের চেয়েও চওড়া হয়েছে। মানুষটার মুখের এত চওড়া হাসি এই প্রথম দেখলো চিত্রা।