রং পর্ব ২৯
তন্নী তনু
ফ্ল্যাসব্যাক—
করিডোরে লম্বা লম্বা পা ফেলে কাঠের ভারী দরজা ঠেলে কেবিনে প্রবেশ করে ইরফাদ। মিটিং এর জন্যে ডাকা হয়েছে পুলিশ সদশ্যদের। লম্বা আকৃতির টেবিল। দু”সাইডে সারি সারি চেয়ার। বসে আছেন থানার কিছু এসআই, এসিপি।টেবিলের মাথায় রাখা চেয়ারটা এখনো ফাঁকা। ইরফাদ নিজের জায়গায় বসে। প্রভাতরঞ্জন সরকার আসেন ত্রিশ সেকেন্ড পরেই। সকল ফর্মালিটি শেষে শুরু হয় আলোচনা। ইরফাদ দেয়ালে টানানো ডিজিটাল বোর্ডে আনসলভড ক্রাইম গুলো লেখে। তার মধ্যে সাম্প্রতিক দুটো মা*র্ডা*র হয়েছে। যার কোনো ক্লু নেই। লাস্ট মা*র্ডা*র হয়েছিলো বিষক্রিয়ার মাধ্যেমে। তবে বিষ প্রয়োগের প্রসেস টাও এখনো কেউ ধরতে পারেনি।সুক্ষ ও দক্ষ হাতে করা মা*র্ডা*রের পেছনে সব টাই ধোঁয়াশা। উপরের মা*র্ডা*র ও রাতের আধারে জিসানের উপর এট্যাকের বিষয় স্কিপ করে যায় ইরফাদ। পুরোনো একমাত্র বড় কেস হলো রায়হান রাফি। তিনি এখোনো নিরুদ্দেশ। বাকি তরুণগুলো এখনো নি*খোঁ*জ। কেসটির বিষয়ে নিজস্ব বক্তব্যে রাখে ইরফাদ।
— রায়হান রাফির গু*ম আর তরুণগুলো মিসিং। এই দু*টো কোনো না কোনো ভাবে রিলেটেড। আর রায়হান রাফির কি*ড*ন্যাপিং হওয়া আর মিস সিনথিয়া ইবনা”র ফেঁসে যাওয়া হয়তো প্রি-প্ল্যানড।হয়তো সবকিছুর আড়ালের লুকিয়ে থাকা ডেভিল এটাই চেয়েছে। রাফি কি*ডন্যাপ হোক। মেয়েটি ফেঁসে যাক। আর কেসটা ক্রিটিক্যাল হয়ে আমার কাছে আসুক। আমার আর ভিক্টিমের একটা সহজ কমিউনিকেশন থাকুক। যাতে তার মাধ্যমে আমাকে ট্র্যাপে ফেলা যায়।
মাথা নিচু করে পুরো বিষয়টা একবার গেঁথে নেয় জাবির। তারপর সব সাজিয়ে নিয়ে বলে,
— স্যার,কোয়েশ্চেন!
যদি আপনাকে ধরাই তাদের মূল উদ্যেশ্য হয় তারা অন্য পথ বেঁছে নিতো!
বাকিরা মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দেয়। ইরফাদ দু’পা এগিয়ে আসে। প্রভাতরঞ্জন সরকার কিছুক্ষণ ভাবেন। তারপর বলেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— ইরফাদের উপর একাধিক বার এট্যাক হয়েছে। এটা আমরা জানি। তবে কোনোবার ই প্ল্যান সাকসেসফুল হয়নি। হতে পারে এই সুক্ষ, সস্তা প্ল্যান দিয়েই তারা উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। যাতে আমরা আঁচও না করতে পারি। অথবা ভেবেও না দেখি।
— একজেক্টলি স্যার!
তবে এটাও হতে পারে। এক ঢিলে দুই পাখি। রাফিকেও প্রয়োজন আমাকেও প্রয়োজন। মাঝখানে মেয়েটা কারো চালা গুটি।
প্রভাতরঞ্জন সরকার বলেন,
–তাহলে এক কাজ করা যেতে পারে। ওদের দেয়া গুটিকেই ওদের ধরার চাল বানানো যায় না??
— যায় স্যার। তবে এক্ষেত্রে মেয়েটির লাইফ রিস্ক থাকতে পারে। যেহেতু আমরা কেউ জানি না। এর পেছনে কে বা কারা রয়েছে। এবং আসল উদ্দেশ্য কি?
— কি করতে চাচ্ছো!
— যেহেতু সিনথিয়া ইবনা”র ভাষ্যমতে মতে,” ডেভিল তাকে বোন হিসেবে দাবী করে। এটা কতোটুকু সত্যি আমরা জানিনা। কিন্তু অজানা লোকটি মেয়েটির সাথে সাথে ফোনে কমিউনিকেট করে। ঐজন্য আমি পিবিআই সেক্টরের সাথে কথা বলেছি।তবে আমাদের পিবিআই সেক্টর ট্র্যাক করতেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। বিকজ সে এক মিনিট হওয়ার আগেই প্রতিবার কল কেটে দেয়।
–মেয়েটিকে ইনফর্ম করেছিলে-“একমিনিট কথা বলতে হবে?”
— হুম! তবে সে প্রতিবার ই একমিনিট হওয়ার আগেই কল কেটে দেয়। প্রয়োজনে আবার কল করে।
— তাহলে মেয়েটিকে ইনফর্ম করো যেভাবেই হোক একমিনিট কনভারসেশন যেনো কন্টিনিউ করে।
আলোচনার মধ্যে পারসোনাল ফোনটি কেঁপে ওঠে ইরফাদের। পকেট থেকে ফোন করে স্ক্রিনে চোখ রাখতেই দেখে,
— “কলিং সিনথিয়া ইবনা”।
অন্যসময়ে হলে ইরফাদ কোনো ভাবেই ধরতো না। তবে এই মূহুর্তে তার ফোন কেসের জন্যে সবচেয়ে বেশী ইমপর্ট্যান্ট। ইরফাদ সকলের উদ্দেশ্যে বলে,” সরি।” তারপর ফোন রিসিভ করে লাউড রাখে।তারপর বলে,
–বলো
সিনথিয়া বলে,
— স্যার! ভাইয়া আরেকটা মেসেজ দিয়েছে। রাতে একটা নাগাদ কল দিবে। আমি যেনো সজাগ থাকি।
— স্ট্রেঞ্জ!রাত একটা তেই কেনো??
জাবির তড়িঘড়ি করে গলা উঁচিয়ে বলে,
— স্যার! আমার মনে হচ্ছে- মুখোশধারী লোকটি কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছে না। হতে পারে ডেভিল এটা চাচ্ছে তাদের প্ল্যান সম্পর্কে পুলিশ আঁচ না করতে পারে। কোনো কারণে সিনথিয়া ইবনা”কে যদি সন্দেহের তালিকায় পুলিশ আনে। এবং ট্র্যাক করতে চায়। তাই ওতো রাতের কথা বলেছে।এবং রাত ভারী হলে অবশ্যেই কেউ মিস সিনথিয়া ইবনার কল ট্র্যাক করার জন্যে বসে থাকবে না। আ”ম নট সিউর। জাস্ট গেস করলাম।
–রাইট।
ইরফাদ ফোন ধরে বলে,
–ওকে…
–স্যার আরেকটা কথা। প্ল্যান মনে হয় চেঞ্জ হবে।
–যেমন?
— মানে! দুদিন পরের কথা হলেও। যা করার তারা কালকেই করবে।
ইরফাদের ভ্রুকুটি সংকুচিত হয়। ভাবুক দৃষ্টিতে শূন্যে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে,
— আই”ল কল ইউ সুন।
তারপর আবার আলোচনায় মন দেয়।
— স্যার! সিনথিয়া ইবনাকে দু”টো দিন রিল্যাক্সে থাকার কথা বলেও এখন বলা হচ্ছে প্ল্যান চেঞ্জ হবে। এবং তা কালকেই এপ্লাই করবে।
জাবির বলে,
— তাহলে আমাদের সকল তথ্য আজ রাতের মধ্যেই নিতে হবে। তাদের প্ল্যান ওয়াইজ যেতে হলে অনেকের লাইফ রিস্ক থাকবে। বিশেষ করে আপনার। সো যা করার আজ রাতের মধ্যেই।
ইরফাদ সম্মতি দেয়। তারপর বলে,
— তাহলে আজ রাত একটার অপেক্ষা!
জাবির বলে,
— আমার কিছু বলার আছে স্যার! দেখুন আমাদের একটাই চান্স। ঐ একটা ফোন কল। ঐ কল একবার ই আসবে। মানে সুযোগ একটাই। মেয়েটা যদি একমিনিট কথা কোনো ভাবেই কন্টিনিউ না করতে পারে। বা সঠিক সময়ে টেকনিক এপ্লাই না করতে পারে।আর এতো দূরে থেকে আমরা কতোটুকু-ই হ্যান্ডেল করতে পারবো। আমার মনে হয় ঐ টাইমে মেয়েটি আমাদের কাছাকাছি বা আমাদের টিম তার কাছাকাছি থাকলে বেটার হতো।
–ওর বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না। বিকজ রিসেন্ট একটা মোবাইল ফোন তাকে দেয়া হয়েছে। তাও আবার তার জানালার কাছে। আমার মনে হয় । ওর বাসার কেউ এসবের সাথে জড়িত। এই মূহুর্তে আমরা তার হেল্প নিচ্ছি অথবা সে আমাদের হেল্প করছে। এই দুটো জিনিস কোনো ভাবেই শত্রুকে বুঝতে দেয়া যাবে না। তাহলেই প্ল্যান চেঞ্জ হবে। আমাদের সকলের জন্যেই বিষয়টি রিস্কি হয়ে যাবে।
–যেহেতু একটা ডিভাইস শত্রুপক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। অবশ্যেই এর কোনো কারণ আছে। হতেও পারে তাকে সব সময় ফলো করা হয়। কোথায় যায়। কার সাথে কথা বলে…
— হতে পারে…
–তাহলে তো বাইরে আনাও রিস্ক হয়ে যায়। ট্র্যাক করলেই জানতে পারবে মেয়েটি কোথায়।
— ওয়েট…. আমি পিবিআই ডিপার্টমেন্টের তনয়”কে কল করে নিচ্ছি।
একটা কক্ষে নির্দিষ্ট জায়গা ফাঁকা রেখে পর পর রাখা লেটেস্ট মডেলের ডেক্সটপ। স্ক্রিনে চলছে নিউজ, স্যাটেলাইট ইমেজ আর কিছু স্ক্রিনে রেকর্ডিং এর তরঙ্গের ঢেউ খেলানো তরঙ্গ। কানে হেডফোন গুজে তরুণ থেকে বয়স্কদের চোখে শুধুই অজানা সত্যিকে বাইরে আনার প্রয়াস। সবাই নিজ কাজে ব্যস্ত। ইরফাদ ডায়েল করে। ফোন রিসিভ করে তনয়। তারপর,
— জ্বী স্যার বলুন!
— সিনথিয়া ইবনা”র সীমে আসা কলগুলো ট্র্যাক করা যায়নি। সো আমরা চাচ্ছি তাকে আমাদের কাছাকাছি রেখে প্ল্যান সাকসেস করতে।
— ইয়াহ সিউর।
— কিন্তু ডিভাইস টা তো অজ্ঞাত কোনো লোকের দেয়া। ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু থাকতে পারে।
— ডোন্ট ওরি। মেয়েটিকে আপনাদের লোকেশনে আনুন। বাকিটা দেখছি..
— ওকে! বিফোর ওয়ান এএম।
–ওকে স্যার!
বর্তমান……..
মুখোশধারী লোকটি একটানে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে বসায়। দরজায় লক দিয়ে নিজেও গাড়িতে বসে। তারপর হিসহিসিয়ে সিনথিয়াকে বলে,
— গাঁধা কোথাকার!
গলার স্বরের গাম্ভীর্য আর ধমকের সুরে সিনথিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খায়। পরিচিত গলার স্বরে নড়েচড়ে বসে। তারপর ধীর গলায় বলে,
— তো বলবেন না এটা আপনি?
— বলার সুযোগ পেলাম কই….
রং পর্ব ২৮
সিনথিয়ার ভেতর থেকে হাসি ফেঁটে পড়তে চায়। তারপর একটা চিন্তা মাথায় ভারী পাথরের মতো ঠাস করে লাগে। “এভাবেই কি জিসানের উপর এট্যাক হয়েছিলো?” প্রশ্নের উত্তর খোলা চোখে খুঁজে বেরায়। যদি তাই হয়! তাহলে এর সাথে আরোও কিছু প্রশ্ন জুড়ে যায়। কেনো জিসানের উপর এট্যাক হলো। এট্যাক হওয়া না হয় স্বাভাবিক। তবে ছয়টা কামড় কেনো দিলো। তাহলে কি তার খারাপ সময়টা ইরফাদের মনে দাগ কেটেছিলো। সে কি প্রতিশোধের নেশায় এই কাজ টা করলো?? আর প্রতিশোধ, রাগ, ক্ষোভ তো ভালোবাসা থেকেই আসে। ভালোবাসার মানুষের প্রতি আঘাত অপর পৃষ্ঠের মানুষ কখনোই সহ্য করতে ?