রং পর্ব ৪৫
তন্নী তনু
বিন্দু বিন্দু তারায় সাজানো সুবিশাল আকাশটা ক্রমেই রূপ বদলে ফেলছে, বিন্দু বিন্দু জোনাকির মতো জ্বলতে থাকা তারাগুলো আকাশের ধূসর মেঘের আড়ালে হারিয়ে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। রুপালি চাঁদটা কালো মেঘ মেঘের চাদরে ঘুম দিচ্ছে। আকাশ পানে তাকিয়ে সুভা বেলকনিতে বসে গুনগুনিয়ে গান গাইছে। সে সময়ে দরজায় টোকা পড়ে। মেঝেতে পা মেলে বসা সুভা উঁকি দেয় দরজার পানে। তার পর গলা উচিয়ে বলে,
–ভেতরে আসো
সুভার মা ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করছে। আবছা আলোর ঘরখানায় আলো জ্বেলে দেন তিনি। সুভা বিরক্তিতে মুখ কুচকে ফেলে। রাতের বেলা রুমে প্রয়োজনেও আলো জ্বালানো তার পছন্দ না। অন্ধকারে ডুবে থাকতে ভিষণ ভালো লাগে। বিরক্তিটুকু লুকিয়ে রেখে বলে,
— কিছু বলবে?
–তোর বাবার ঔষধ শেষ….তুই কি ভুলে গেছিস। জানিস তো একদিন ঔষধ না খেলে…
কটাটুকু শেষ না হতেই কুচকে আসে সুভার ছোট্ট কপালখানা। ঔষধ শেষ? শেষ হওয়ার আগেই তো ঔষধের টাকা সুমনের কাছে দিয়েছে সুভা। শেষ মানে কি!!! সেই কৈশোর থেকে যুদ্ধ করে আসছে সে বাবার জন্য। প্রথমত অসুস্থতা এর পরে তার বাবা প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলো বহু আগেই। সে সংগ্রামের দীর্ঘ পথ আর ভাবনায় আনতে চায় না। তবে সে সময় থেকে আজ অবধি একবেলা পেটে খাবার না পড়লেও বাবার ঔষধ ঠিকই যোগার করেছে। সে কষ্টের দিনগুলোতে ঔষধ বন্ধ থাকেনি, এক মূহুর্ত্তের জন্য এসব ভোলেনি। তাহলে আজ কেনো ভুলবে!!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সে সময়ে চিন্তায় মুখটা শুকিয়ে থাকতো, ভাঙা গলা শুনেই একজন সবটা বুঝে নিতো। সে সময়ে কতবার ইরফাদ তার একাউন্টে টাকা পাঠিয়েছে হিসেব ছাড়া। গুটিকয়েক বার দেয়ালে পিঠ ঠেকে ইরফাদের থেকে হাত পেতে টাকা নিয়েছে সে। তবুও বাবার ঔষধ আনার হেরফের করেনি। এখন তো যা পায় তাতে ডাল ভাত খেয়ে চলে যায় জীবন। তাহলে সে কেনো ঔষধ আনবে না। গত সপ্তাহে সুমনের হাতে বাবার সকল ঔষধপত্র,বাজারসহ টুকিটাকি জিনিস কিনতে দেয়া হয়েছিলো। তাহলে বাবার ঔষধ কেনো এখনো আসেনি। হুরমুরিয়ে উঠে দাঁড়ায় সুভা। চোখ মুখ এখনো কুচকে আছে। বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় সুভা। তার মা ও যায় পিছু পিছু। সুমনের রুমের দরজা একধাক্কায় খুলে ভেতরে যায়। রুম ফাঁকা। পেছন থেকে ছুটে আসা সুভার মা বলে,,
–সুমন তো বাইরে……
— ওর কাছে ঔষধের টাকা দেয়া ছিলো…. ঔষধপত্র,বাজার…
–কিন্তু এই মাসে নতুন করে বাজার করাই তো হয়নি। আগের মাসের যা ছিলো তাই দিয়ে চলছি..
আকাশ থেকে একটুকরো ভারী বরফ যেনো পাথরের মতো মাথায় পরে সুভার। কয় টাকা বেতন পায় সে ? বাবার এত ঔষধ, সংসারের খরচ, ভাইয়ের পড়াশুনা সব দিয়ে শূন্য হাতে টেনে টুনে ধার দেনা করে মাস চালাতে হয় তাকে। নিজের জুতা জোরা ছিড়ে আছে টাকার ওভাবে সেলাই করে চালিয়ে নিয়েছে পুরো একটা সপ্তাহ। সবাইকে সব বিলিয়ে দিয়ে নিজের জন্য একটা ভালো পোশাক কেনা হয়না, কিনবো কিনবো করে পছন্দের ঘড়িটা আর আনা হচ্ছেনা। একাউন্টের সর্বশেষ সম্বলটাও সেদিন সুমনের ভার্সিটির জন্য দিতে হলো। দোড়গোড়ায় এসে তরী ডোবার চিন্তায়, মাথা যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে তার। সুভা সুমনের নম্বরে কল দেয়,
— কোথায় তুই??
— বন্ধুদের সাথে বাইরে…
— রাত কত হয়েছে? বাসায় আয়…
–কেনো আপু!! আমার একটা কাজ আছে… ফিরতে লেট হবে।
— বাবার ঔষধের টাকা দিয়েছিলাম!! বাবার ঔষধ আনিস নি কেনো?
বিষয়টা মনে পড়তেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সুমন। তারপর তড়িঘড়ি করে বলে,
–আপু বিশ্বাস করো আমার মনেই ছিলো না। আমি যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো। আধঘন্টা সময় দাও…..
সিলিং ফ্যান ভো ভো করে অনবরত ঘুরছে। আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তনে শীত শীত লাগছে তিথির। সে সময়ের ঘটনা মাথা থেকে যাচ্ছে না তিথির। এমন দৃশ্যে দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। সালমান সারাফি শিশির “ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স(NSI)” এর একজন কর্মকর্তা। এতোটুকু চোখে পড়তেই তিথি আসমান ভেঙ্গে পাতালে ধপাস করে পড়েছে।অথচ শিশির প্রকাশ্যে বলে বেড়াতো তার পড়াশুনা ভালো লাগে না,চাকরী ভালো লাগে না। এতো বছর পর এসে মাস্টার্স এ ভর্তি হয়েছে। অথচ ভেতরে ভেতরে আস্ত একটা জগৎ চেপে রেখেছে।
মার্জিয়া বেগম পড়াশুনা তেমন করার সুযোগ পাননি।অল্প বয়সেই বিয়ে, এরপর সংসারের ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।এরপরে আর বই খাতা ছুঁয়ে দেখা হয়নি। তবে এতোটুকু তার মন বুঝে নিয়েছে–শিশিরের এতো দিনের লুকোচুরির বিষয়টি। মার্জিয়া বেগম এই মূহুর্তে শিশিরের বাবার পাশে বসে আছেন নিরব নিস্তব্ধ হয়ে। মনে মনে ভাবছেন!সত্যিটুকু ছেলে তাকে বললো না? সে থমথমে গলায় বলে,
— শিশিরের আব্বা!
–বলো
— এন এস আই এর পূর্ণরূপ কি?
— সে জেনে তুমি কি করবে?
–কও না?
— ওসব জেনে তোমার কাজ নেই।
— আমি একটা খাম পেয়েছি!
ফোন স্ক্রল করা হাতটা থমকে যায় সাফিন আহমেদের । তিনি চোখ গোল গোল করে উঠে বসেন।
— তুমি শিশিরের লকার খুলেছো?
পুরো ঘটনা বলার আগেই অপরপৃষ্ঠের মানুষ যখন গল্পের থিম বলে দেয়,তাহলে কি বোঝার বাকি থাকে?পুরো গল্পটা তার আগেই জানা। মার্জিয়া বেগম ধীর গলায় বলেন,
— ওহহ তুমি সবটা জানতে?? আমি মা বলে কিছু জানার অধিকার রাখি না? এখন বুঝলাম ছেলে দেশের বাইরে ট্যুর দেয় কেনো? বছরের এমাথায় ওমাথায় ছেলে ট্যুরে যায়। আর বাবা সাপোর্ট দেয়। কেনো মা কি এতোই খারাপ আমি জানলে খুব ক্ষতি হয়ে যেতো?
শিশিরের বাবা পুরো কথাটাকে উপেক্ষা করে বলে,
— তুমি জানো না কারো প্রাইভেট জিনিসপত্র তার এবসেন্সে দেখা অপরাধ!
— শিশির আমার ছেলে!
— ছেলে তো কি??প্রত্যেক মানুষের প্রাইভেসি আছে। এটা তুমি ঠিক করোনি!
–আমি
বাইরের ডোর বেলে পাখির আওয়াজ কূ কূ করে ডেকে উঠছে। কেউ এসেছে। সন্তানকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী”র কথোপকথনের সমাপ্তি ঘটে। মার্জিয়া বেগম উঠে যান দরজার দিকে। দরজা খুলে দেন। বাইরে টান টান হয়ে দাড়ানো ছেলেটি শিশির। কথা ছিলো এবারের ট্যুর দীর্ঘ হতে পারে। তবে খুব দ্রুত ফিরে এসেছে। তবে ছেলের কাজ সম্পর্কে মার্জিয়া বেগম এখন অবগত। তাই প্রশ্ন করে না। মনের এক কোণে জমে থাকা অল্প একটু ক্ষোভে তিনি কঠিন রূপের খোলস ছেড়ে বলেন,
— আয়!
শিশির তো প্রস্তুত ছিলো তার মা ঘন্টাখানিক প্রশ্ন করে যাবে। উত্তরগুলো পছন্দ না হলে আরও অসংখ্য প্রশ্ন জুড়ে দিবে। কিন্তু এর কোনোটির সম্মুখীন হতে হলো না তাকে। অতঃপর নিরবে বাসায় প্রবেশ করলো শিশির। চোখ দুটো একপলক তিথির দরজায় পড়লো। দরজা ভেজিয়ে রাখা। তাই নিঃশব্দে নিজের বাবার কাছে যায় সে। কুশল বিনিময়ের পর শিশির বসলো বাবার পাশে। যেনো নতুন করে কিছুই বলার নেই। বাবার সাথে প্রতি ঘন্টায় কথা হয় তাদের কথোপকথন-ই বলে দিচ্ছে। মার্জিয়া বেগমের মনটা ছোট হয়ে আসে। তাহলে শাসনের কড়াঘাতে সে কি মা” এর জায়গা কখনো নিতেই পারেনি। শিশিরে মা হয়ে উঠতে পারেনি। সব বাবা জানলেও ছেলের কিচ্ছুটি সে জানতে পারেনি। কখনো ছেলে বলার প্রয়োজন মনেও করেনি। হঠাৎ নিজের ভেতরটা শূন্যতায় ভরে উঠে মার্জিয়া বেগমের। অজানা এক চাপা ব্যথা বুকটা ভারী করে তোলে। খাবার গরম করার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেড়িয়ে যান তিনি।শিশির নিজের ব্যাগটা বিছানার উপর রাখে। বাবার কাছে ব্যাগপত্র দিয়ে বলে,
— বাবা! কালকের মধ্যেই সব এক্সপোজ হবে। তিথির বাবার সব সত্যি আমি মাকে প্রমাণসহ দিবো। তুমি মা”কে ম্যানেজ করো “কাল মাকে জানিয়ে তিথিকে বিয়ে করবো।”। মেয়েটা অনেকটা কষ্ট করেছে। আর একটা মূহুর্ত নয়। রিকুয়েস্ট…..
ঝিরিঝিরি ঝুরঝুড়ে গুড়েবালির বৃষ্টি। শিশির ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয়। আজকে মার্জিয়া বেগমের আচরণে চিন্তিত শিশির। কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও কারণ জানা যায়নি। তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন। নিজের ফোনের চ্যাটবক্সে তিথিকে একটা মেসেজ করে,,
–টুকি!!
তিথির ভাবনার ছেদ ঘটে ফোনের মৃদু কাঁপুনিতে।তিথি ফোন চেক করে। তারপর,
— বলো
— কি করিস?
— ঘুমাবো..
— ঘুম হয়?
— হবে না কেনো……
–মন খারাপ?
— নাহ..
— বুঝলাম না! সবার আজ হলো টা কি? মা কথা বলেনা! তুই কথা বলতে চাচ্ছিস না! আমার অপরাধ কি?
সহসাই তীব্র গতিতে লাফিয়ে উঠে বসে তিথি। বুকের মধ্যে দূনির্বার অনুভূতি গুলো লাফিয়ে ওঠে।
–তুমি কোথায়?
— বাসায় এসেছি একটু আগে!
তিথির মাথা শূন্য হয়ে যায়। পৃথিবীর সকল নিয়ম, বাঁধা বিপত্তি, ঠিক -ভুল বিচারে মস্তিষ্ক তখন অকেজো। হরিণের মতো হো হো করে উড়ে যায় তিথি। পরণে কুসুম রঙা টি-শার্ট আর স্কার্ট দুহাতে খামছে তুলে ধরে দৌড়ায় তিথি। গলায় বেজে থাকা ওড়নাখানা বাতাসের বারি খেয়ে একটু একটু করে খুলে যায়। পড়ে থাকে মেঝেতে। মেঝের উপরে শক্ত আঘাতে ধাপ ধাপ করে আওয়াজ হয়। সে আওয়াজের আচ পেয়ে শিশিরের মস্তিষ্কে তিথি নামক অবয়ব ধরা দেয়। উঠে দাঁড়ায় শিশির। তিথি ছুটে আসছে। অতঃপর বুলেটের গতিতে তীব্র উচ্ছাসে তিথি লাফিয়ে জড়িয়ে ধরে শিশিরের গলা। মাত্র অল্প দিনের ব্যবধান। তাতেই মনে হয়েছে এতোকাল। দূরে থেকে তীব্র গতিতে ছুটে আসা বণ্য হরিণীকে কোলে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে শিশির। শিশিরের ওষ্ঠজোড়ার কোমল স্পর্শে এক দুই তিন এভাবেই স্পর্শ আকে তিথির মুখে।
মার্জিয়া বেগম মাত্রই চোখ বুঝেছিলেন। একটা ধপাস শব্দে চোখ খুলে যায়। চোখ খোলেন তার পাশের মানুষটিও। মৃদু আলোতে দু”জোড়া চোখ কথা বলে। মার্জিয়া বেগম উঠে বসেন। তারপর বলেন– কিসের শব্দ হলো। শিশিরের বাবা শাফিন আহমেদ বিষয়টি বুঝেও এড়িয়ে যেতে চান। তিনি বলেন,
— কোথায় শব্দ?
— আমি এক্ষুনি শুনলাম।
— কোথায় শব্দ?
–আরে শিশিরের ঘরে মনে হলো….
— বেড়াল এসেছে মনে হয়।
–মাতাল হয়ে আসছো নাকি? এখানে বেড়াল আসবে কোথা থেকে?
–ওহ তাহলে শিশিরের কোল বালিস মনে হয় পড়ে গেছে।
— থাকো তো। আমি দেখে আসছি…
সাফিন আহমেদ কোমল স্পর্শে হাত টেনে ধরেন। ভোলাতে চান সাম্প্রতিক ঘটা ঘটনা। ছেলে তাকে বলেই বিয়ে করেছে। তাই এই মূহুর্তে কাবাবের হাড্ডি তিনি কাউকে হতে দিবেন না। তিনি পুরোনো দিনে স্মৃতিচারণে গল্প শুরু করেন,
–তোমার মনে আছে প্রথম দিনটা….
বুকের উষ্ণ তাপে শক্ত বাঁধনে বেঁধে রাখে তিথিকে। তিথির হাঁসফাঁস করে। আবেগে সব ভুলে যাওয়া তিথির মাথাচাড়া দেয় মামি আছে পাশের রুমে। এই যে ধপাস ধপাস পা ফেলে সে এলো। যদি টের পায়। ছড়িয়ে ফেলা জাল গুটিয়ে নিতে শিশিরের উপর থেকে ওঠে তিথি। বুকের অন্তরালের ভয়ের দানাগুলো ধাওয়া করে তাকে। শিশির বলে,
— কি হলো?
— মামি!
— আরে ধুর… সব সময় মামি মামি।
— মামি সব জানে। কাল বিয়ে….. তুই রেডি থাক…
— হোয়াট!!!
— কালকে দেখিস। …
— নাহ… আমার কিছু প্রশ্ন আছে…
— বল…
— আমি সেদিন এসপি”র নম্বর নিয়ে এসেছিলাম। তুমি বলেছিলে তুমি নম্বর পাল্টে দিয়েছো। অনেস্টলি বলোতো….. তুমি নম্বর চেঞ্জ করে দিয়েছিলে?
–হঠাৎ একথা…
— বলো না! মিথ্যা বলোনা…
— হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো??
— তুমি বলবে না?? আমি কিন্তু সব জেনে গেছি। তুমি গোয়েন্দা সংস্থার সাথে জড়িত।
তিথির মুখে সত্য কথাটা শুনে হুরমুইয়ে উঠে বসে শিশির,
— এসব কি বলছিস!
–আজ মামি তোমার লকার ভেঙেছে। সব দেখেছি আমি। তুমি এখনো মিথ্যা বলবে।
আসল ঘটনা তলিয়ে ভাবে শিশির। এই কারণে মায়ের এই অবস্থা। প্রাইভেট জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি তার মোটেও পছন্দ না। তার অনুপস্থিতে এমন কাজ মোটেও পছন্দ হয়নি তার। রাগ হচ্ছে তার। তবে মুখের অভিব্যক্তিতে তা অপ্রকাশিত। তিথি আরেকবার বলে,
–বলো…
–কি বলবো… তোর ছ্যাকা খাওয়া ফ্রেন্ডগুলোকে শায়েস্তা করার তুই ছাড়া কেউ নেই। ছেলেদের টাইট দিবি বলে বয়ফ্রেন্ডের শেষ নাই।এতো ঠ্যাকা কিসের তোর। এসপির সাথে ছেলেমানুষী করতে যাস।কোথায় কি করিস বুদ্ধিশুদ্ধি নাই। আবার এসপির নম্বর খুঁজে বেড়াস। তাই ভাবলাম…. নিজের জিনিস নিজের কাছে সময় মতো যত্ন করে রেখে দেই।
— তার মানে?
— তার মানে ঐদিন কনস্টেবল আমার নম্বর দিয়েছেন। কারণ আমি তাকে ইশারা দিয়েছিলাভ।
সিনথিয়া কেস আমরা দেখছিলাম। ঐজন্য প্রথম থেকেই সিনথিয়ার আপডেট এসপিকে দিতে হতো।ঐজন্যে তোর কাছে সিনথিয়ার কথা জানতে চাইতাম। সেদিন তুই গেছিস আমি পাশের কেবিনেই ছিলাম।
— ইরফাদ স্যার জানে আমি তোমার বোন!
— আগ্গে হ্যাঁ! আপনি আমার বোন ঐটাও জানতো। বউ এটাও জানে…সেদিন আমার বোন বলে সেদিন এসপি তোকে কিছু বলেনি… নেক্সট এতো পাকনামি করতে যাস না….
— এতো কিছু হলো আর তুমি!
— আমাদের জবটা এমনই। সব হাইড থাকবে….তবে যতোটুকু দেখেছো অন্যায় করেছো। নেক্সট যেনো এতো কিউরিসিটি না থাকে। ওকে?
তিথি ছোট্ট বাচ্চার মতো মাথা নাড়ায়।
মার্জিয়া বেগমের মন অশান্ত। যতোই বুড়ো বয়সে সাফিন আহমেদ প্রেমালাপ করুক তার মনটা সেই শব্দের দিকেই পড়ে আছে। সাফিন আহমেদকে একধাক্কায় সরিয়ে দেন মার্জিয়া বেগম। তারপর…
তিথির ছোট ছোট চুলের মাথাটা নিজের কোলের মধ্যে তুলে নেয় শিশির। মাথায় আঙ্গুলি চালিয়ে বলে।
–কারো সাথে এতো দুষ্টুমি করবে না আর।
তিথি ধীর গলায় বলে,
— আমি এখন যাই?
— যাই মানে?
সাফিন আহমেদ কে উপেক্ষা করে দরজা নিঃশব্দে খোলেন মার্জিয়া বেগম।সাফিন আহমেদ হুরমুরিয়ে নিচে নামেন। আর গলা উচিয়ে বলেন,
–শিশিরের আম্মা!
শিশির অস্পষ্ট শোনে বাবার গলা। সেদিকে তাল দেয় না। তিথি উঠতে নিলে টেনে ধরে শিশির।
পুরো দৃশ্য নিজের চোখে আয়নার মতো ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার ভাবে দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে মার্জিয়া বেগম। আকাশে মেঘের গর্জনের চেয়েও গর্জে উঠে বলে,
— সব শেষ আমার! এই জন্যেই ঐ মেয়েকে আমি রাখতে চাইনি। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে….
বলেই মাথা চাপড়াতে থাকে মার্জিয়া বেগম। তিথির আত্মা লাফিয়ে যেনো আসমানে চলে যায়। লাফিয়ে উঠে বসে সে। শিশির উঠে দাঁড়ায়। পেছনে শাফিন আহমেদ দাঁড়িয়ে। তিনি টেনে ধরেও ফেরাতে পারছেন না মার্জিয়া বেগমকে। পাগলের মতো ছটফট করছেন মার্জিয়া বেগম। মাথায় হাত চাপরে চিৎকার দিয়ে বলছেন,
রং পর্ব ৪৪
— আল্লাহ্! আমি ঐজন্য এই মেয়েকে সহ্য করতে পারিনি! আমি জানতাম, আমি জানতাম একদিন আমার জান বের করে নিবে এই মেয়ে। ন!ষ্টা মায়ের মেয়ে কখনো ভালো হয় না।
বলেই জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে ঢুলে পড়েন মার্জিয়া বেগম। ভেতরের তিক্ত অনুভূতি তিথির একচোখে গরম জল হয়ে ফোটায় ফোটায় গড়িয়ে পড়ে গাল বেয়ে।