রং পর্ব ৫৯
তন্নী তনু
গাইস একটুখানি এলার্ট (একটু লুমান্তিক লিখছি মনে হচ্ছে)
রাতের খাবার টেবিলে দিচ্ছে সিনথিয়া। ইভা টুম্পার জন্য দুধ গোলাচ্ছে রান্না ঘরে। বাকি জিনিসগুলো আনতে রান্না ঘরে যায় সিনথিয়া। ইভা আড় চোখে সিনথিয়াকে একবার দেখে। তারপর নিজের কাছে ডাকে,
— এদিকে আসবে একটু।
সিনথিয়া ইভার কাছে দাঁড়ায়। অকস্মাৎ যেনো শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে ইভা বলে,
— রাফসান তোমার ভাইয়া?
অপ্রত্যাশিত, অসময়ে এমন একটা প্রশ্নে পায়ের তলায় যেনো শূন্য হয়ে যায় সবকিছু। বাকশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সিনথিয়া।
পরিস্থিতি ঠান্ডা, গরম, রুক্ষ, অশান্ত, নড়বড়ে যাই হোক না কেনো, প্রশ্নের উত্তর টা হবে “হ্যাঁ”। মানুষটা পাপী, পাষাণ, নিকৃষ্ট, প্রতারক, অপরাধী, আসামী যাই হোক না কেনো মানুষটা তার ভাই। তাই পৃথিবীর একপ্রান্ত বাঁচাতে অন্য প্রান্ত সে ধ্বংস করতে পারবে না সে। একপ্রান্তের ভালোবাসা পেতে অন্য প্রান্তের ভালোবাসা সে অস্বীকার করবে না। সিনথিয়া শীতল অসাঢ় হাতের তালু অপর তালুতে চেপে রাখে কিছুক্ষণ। চোখজোড়ার দৃষ্টি অনিচ্ছাকৃত ভাবে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। এরপরেই শূন্য তাকিয়ে সিনথিয়া থমথমে গলায় শুধু বলে,
— হুম।
অতঃপর প্রগাঢ় নিরবতায় ডুবে যায় উপস্থিত দুটো প্রাণের অশান্ত বুকের কাঁপন।
পরের সন্ধ্যাবেলা,
আধুনিকতার ছোঁয়ায় সাজানো বাড়িটি সবসময়য় ই দক্ষ হাতের সুনিপুন ছোঁয়ায় মাখামাখি, আর আলোর রোশনাই। সবসময়ই সমস্ত বাড়িঘর নিজ হাতে ছিমছাম করে সাজিয়ে রাখে ইভা।তবে আজকের নিচতলার বসার রুমটা নিজ হাতে অন্যরূপে সাজিয়েছে ইভা। পিতলের ফুলের টবগুলো তে নতুন ফুল , সোফার কুশন গুলোর কভার পাল্টে নতুন কভার, সমস্ত কিছুতেই নতুনত্ব। হাতের কাজগুলো শেষ হয়, দরজায় বেজে ওঠে মৃদু শব্দের সুর। ইভা গলা উচিয়ে ডাকে,
— বাবা! ভাইয়া চলে এসেছে। তুমি দরজাটা খুলে দাও। আমি বউ কে নিচে নিয়ে আসছি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নতুন অতিথিরা উপস্থিত,সকলকে সাক্ষী রেখে নতুন সম্পর্কের কাগজ কলমের স্বীকৃতি দিতে দুটো পরিবার উপস্থিত ড্রয়িংরুমে। অফিসের কাজ শেষে সিনথিয়ার বাবা, মা,ভাই সকলকে নিজ দায়িত্বে নিয়ে এসেছে ইরফাদ। এইবার সব সত্যির মুখোমুখি হওয়ার সময়। সে সময়েই ইরফাদ রিদুয়ানুর রহমানের সাথে আলাদা কথা বলতে চায়। অতঃপর,
রিদুয়ানুর রহমানের ছিমছাম,নিরবতায় ডুবানো কক্ষ। একমাত্র ছেলের নতুন সম্পর্কের স্বীকৃতি, তিনি মনে মনে ভিষণ খুশি। ইরফাদের নরম, ঢলঢলে চলন। রিদুয়ানুর রহমান একচিলতে হাসির রেখা ঝুলিয়ে বলে,– এই সময়ে কিসের ইমপর্ট্যান্ট কথা। শুভ কাজে দেরি করতে আছে নাকি?
নরম গলায় ইরফাদ বলে,
–বাবা একটু কথা ছিলো। প্লিজ বসো।
–আয়োজন করে বাবা ছেলের কথার প্রয়োজন আছে নাকি? বলে ফেল।
— বাবা একটু বসো।
চোখ দুটোর চাহুনি বাবার হৃদয় স্পর্শ করে বোধহয়।ছেলের কথায় তিনি বসেন বিছানায়। কিয়ৎক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকে ইরফাদ।চোখ দুটো মাটিতে নিবদ্ধ করে ধীর গলায় ডাকে,
— বাবা!
ছেলের নিরব ডাকে হৃদয় হুহু করে ওঠে রিদুয়ানুর রহমানের। ছেলেকে তিনি চেনেন, ছেলের কথার ধরণ, গলার স্বর তিনি ভালো ভাবেই জানেন। তাহলে আজ কেনো গলার স্বরে এতো নিরবতা?
অতঃপর চোখ দুটো সম্পূর্ণ বন্ধ করে ইরফাদ নরম গলায় বলে,
— বাবা? ভালোবাসা আসলে কি?
— হঠাৎ এই প্রশ্ন?কি হয়েছে তোর?
— মরিচীকার পেছনে ছুটে যে ছেলেটা একদিন সব হারিয়ে বসেছিলো! দীর্ঘ কয়েক বছর যে ছেলেটা “ভালোবাসা” শব্দকেই সহ্য করতে পারতো না। বিশ্বাস, ভরসা করতে পারতো না।যার নরম হৃদয় রূপান্তরিত ছিলো পাথরে। নতুন করে ইস্পাতকঠিন হৃদয়ে যে মেয়েটা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে আনলো। যার আগমনে আমার ব্যথাতুর জরাজীর্ণ বিষণ্নতা, একাকিত্ব নিঃশেষ হয়ে গেলো তাকে ভালোবেসে কি আমি অন্যায় করেছি বাবা? তোমার এই ম্যাচিউর ছেলেটা কি ভুল করেছে?
— হঠাৎ এই সব কথা? যখন ভুল করেছিলি তখন তুই ইমম্যাচুউর। এখন আমার আব্বা অনেক বড় হয়েছে। আমি জানি আমার আব্বা ভুল ডিসিশন নিবে না।
চোখ দুটো আরেকটু শক্ত করে বন্ধ করে ইরফাদ। গলায় ঠেকে যাওয়া কথা গুলো ঠেলে বের করে,
–If that’s the case,সমস্ত সত্যি জানার পর হাসিমুখে তুমি আমার পাশে থাকবে। তোমার জানা দরকার,সিনথিয়া ইবনা সম্রাট শাহজাহানের মেয়ে। তবে জন্মের পর থেকেই ও ফ্যামিলি থেকে ডিটাচ। আমি জানি এই নির্মম সত্যটুকু জেনে সিনথিয়াকে নরমালি তোমরা কেউ মানতে পারবে না। তবুও সত্যি কেবল সত্যিই। সবটা জেনে শুনে আমি ওকে বিয়ে করেছি। আমি চাই তুমি আমাকে দোয়ায় রাখো বাবা। আমার পাশে থাকো।
এতোটুকু কথা একদমে তড়িঘড়ি করে শেষ করে ইরফাদ। কথা শেষে এক সেকেন্ড দেরিও করে না। সোজা বেড়িয়ে যায়। ড্রয়িং রুমের সোফায় স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকে। তবে বুকের ভেতরে একটা অস্বাভাবিক শীতল হাওয়া রিমরিম করে বইতে থাকে। সোফায় বসে থাকা আরেকটি হৃদয়ের দম আতঙ্কগ্রস্ত। তিনি সিনথিয়ার বাবা।আজকে যখন সবাই জানবে মেয়েটা তার রক্তের নয়। এর চেয়ে বড় সত্যে যখন সবাই জানবে তখন তার হাসিখুশি মেয়েটা চিরতরে হাসতে ভুলে যাবে। ড্রয়িংরুমে ইতিমধ্যে উপস্থিত জাবির, শিশির এবং রেজিস্ট্রি করার জন্য একজন ব্যক্তি। সবাইকে চা পরিবেশন করছে ইভা। আশেপাশে একপলক চোখ বুলায় ইভা। তারপর ইরফাদের দিকে তাকিয়ে বলে,
— বাবা আসছে না কেনো?
ইরফাদ চোখ তুলে একপলক তাকায়। তার বলার মতো কোনো কথা নেই। কথা ঘুরাতে ইরফাদ বলে,
— সিনথি কোথায়?
ধীর পায়ে দেয়ালের দিকে যায় ইভা, সুইচ চাপে। আধুনিক ইন্টেরিয়র সিলিং এ ঝোলানো ঝাড়বাতি জ্বলে ওঠে। আলোয় আলোয় ভাসে সমস্ত ড্রয়িং রুম।উদ্ভাসিত চুইয়ে পড়া আলোর মাঝে উদীয়মান হয় দুটো রাজকণ্যার। সিঁড়ি বেয়ে নামছে জীবন্ত পুতুল। সিনথিয়ার পরণে গাঢ় নীল রঙের ছড়ানো গাউন। চুলগুলো কার্লি করে বাঁধা। তার হাতে ছোট্ট টুম্পার তুলতুলে হাত। তার পরণে ফোলানো নীল রঙের ই গাউন। আলোর রোশনাই, আর চুইয়ে পড়া সোনালী আলোয় ভাসতে ভাসতে উপস্থিত সকলে রূপকথার জগতে চলে যায়। সিঁড়ি ভাসিয়ে টুম্পাকে নিয়ে গুটি গুটি পায়ে নামছে সিনথিয়া। অপলক দৃষ্টিতে তাকানো ইরফাদ আনমনে ঠোঁটের ফাঁকে উচ্চারণ করে,
–সিনড্রেলা!!
পাশে থেকে জাবির মুচকি হাসে, ফিসফিসিয়ে বলে,
— রূপকথা নয় স্যার ইটস রিয়েলিটি, রিয়েলিটি। রূপ কথার সিনড্রেলা আপনাকে খুঁজতে এসেছে মনে হয়।
জাবিরের কথায় চোখ ফেরায় ইরফাদ। জাবির আবারো মুচকি হাসে। তারপর বলে,
— সত্যি বলছি।
গুটি গুটি পায়ে টুম্পা আর সিনথিয়া সোফায় এসে বসে। সমস্ত বাড়ি থেকে আলো চুইয়ে পড়লেও কেনো যেনো সিনথিয়ার মনের কোণে ঠিকই আধার। একবার নিজের বাবার দিকে, আবার ইরফাদের দিকে চোখ বুলাচ্ছে সিনথিয়া। এতোগুলো মানুষের মধ্যে রিদুয়ানুর রহমান অনুপস্থিত। বিষয়টা চোখে পড়তেই সিনথিয়া ধীর গলায় বলে ওঠে,
— বাবা?? বাবা কোথায়?
ইরফাদের মনের কোণে একমুঠো ঝড়। আনন্দের মুহূর্ত যেনো ঝড়ের তান্ডবে ছিন্নভিন্ন না হয়ে যায়। জোর করে সবটা স্বাভাবিক দেখাতে চায় ইরফাদ। ঠিক সে সময় লম্বা পা ফেলে উপস্থিত হয় রিদুয়ানুর রহমান। সকলের মুখে হাসির রেখা। নিজ নিজ জায়গায় বসে যায় সবাই। শুরু হয় নতুন সম্পর্কের কাগজ কলমের চিহ্নের কাজ। সিনথিয়ার হৃদয়ে উত্তাল ঝড়, এলোপাথাড়ি ঢেউ। কি লেখা আছে ঐ কাগজে? আজকে সমস্ত সত্যিটা সামনে আসবে? এতো সাজগোজ, এতো আনন্দ, আলো সব আধারে ডুবে যাবে। শরীর জুড়ে বয়ে চলে শীতল হাওয়া। বুকের কাঁপনে সিনথিয়া কখনো ঘামে, কখনো ঠান্ডায় জমে। সময়ের ফাঁকফোকরে ইরফাদের আস্থার ঐ চোখদুটোতে ভরসা খুঁজে বেড়ায়। তবে নিবদ্ধ ঐ চোখদুটোতে খুঁজে পায়না একটুকরো ভরসার ছায়া। তাহলে কি ঐ মানুষটাও আজ ঝড়ের তান্ডবে নুইয়ে পড়ছে? সকল সত্যি জানার পর শক্ত হাতে তাকে আগলে রাখবে তো? নাকি আজীবনের জন্য সে একা হয়ে যাবে। হাসি ঝুলানো মুখটা আধারে ঢেকে যেতে চায়। ঠিক তখন ই পাশে এসে বসে ইভা। একটু একটু করে গা ছুঁইয়ে বসে ইভা। কোমল হাতখানা তার অপর কাধ ছোঁয়। বুকের মধ্যে চলা তান্ডব হঠাৎ করেই উবে যায় সিনথিয়ার। মেয়েটা তাকে আশ্বাস দিচ্ছে? সব জেনে এও সম্ভব?
সোফার মাঝামাঝিতে বসে আছে সিনথিয়া। সামনাসামনি সোফায় ইরফাদ। ইরফাদের একপাশে জাবির আরেকপাশে শিশির, রিদুয়ানুর রহমান বসে আছে সিঙ্গেল সোফায়। তার ঠিক অপর পাশে তার বাবা।বাকিরা বসেছে চেয়ারে। টুম্পা দৌড়ে গিয়ে কোলে ওঠে ইরফাদের। সামনের টেবিলে সিনথিয়ার দিকে এগিয়ে দেওয়া হয় কাঙ্ক্ষিত সেই কাগজ, এগিয়ে দেয়া হয় বিশেষ কলম। তার একটা কপি তুলে দেওয়া হয় রিদুয়ানুর রহমানের হাতে। রেজিস্ট্রি করার জন্য আসা লোকটি বলেন,
— বিয়েটা যেহেতু আগেই হয়েছে। তারপও একবার চেক দিয়ে নিন সব তথ্য ঠিক আছে কিনা।
এতোটুকুতেই সিনথিয়ার হৃদপিণ্ড দাপাতে শুধু করে। সিঙ্গেল সোফাতে বসে সবটা দেখছেন রিদুয়ানুর রহমান। সিনথিয়া এক এক করে সবার চোখ পানে তাকায়। শেষে তার নিজের মানুষটার চোখে। ইরফাদ নিরব। সিনথিয়ার বাবা ঘামছেন অনবরত। তিনি বলেন,
— ফ্যানটা একটু জোরে দেয়া যাবে না?
ইভা বলে,
–আংকেল, ফ্যান ফুল স্পিডে দেয়া আছে। আমি টুম্পার ছোট ফ্যানটা এনে দিবো?
সিনথিয়ার বাবা বলেন,
— না ঠিক আছি।
আতঙ্কে বুকটা দুরুদরু করে কাঁপছে সিনথিয়ার। রিভলভার চালাতেও যে হাত কাঁপেনি সে হাতটা আজ অনবরত থরথর করে কাঁপছে। মেইন কপি এগিয়ে দেয় তার দিকে। টেবিলে পড়ে থাকা কাগজটার দিকে তাকাতেই হাত আরো থরথর করে কাঁপে। বাকিরা বলে সিনথিয়াকে সাইন করতে। ভয়ে ভয়ে দূর্বল চোখে ইরফাদের দিকে তাকায় সিনথিয়া। আস্থার দুটো চোখ তাকে সাহস দেয়। তবে ভেতর থেকে ভেঙে পড়া সিনথিয়া ক্রমশ দূর্বল হয়ে পড়ে। থরথর কাঁপতে থাকা হাতটা বাড়ায় কলমের দিকে। হাতের আঙুলের ভাজে পালকযুক্ত কলমটা কেঁপে কেঁপে ওঠে। দূর্বার হৃদযন্ত্রের অসহনীয় দাপট তাকে দূর্বল করে দেয়। চোখের নোনা জল চোখে এসে ভীর করে। রিদুয়ানুর রহমান উঠে এসে বসেন সিনথিয়ার পাশে। জমে থাকা অশ্রুকণা আতঙ্কে টুপ টুপ করে পড়ে। সবটা বুঝি শেষ হয়ে গেলো। তবে অন্ধকারাচ্ছন্ন চিন্তাগুলোকে আলোর আভাসে ভাসিয়ে রিদুয়ানুর রহমান সিনথিয়ার কাঁপা কাঁপা হাতটা ধরে। মাথার উপর অন্য হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
— সাইন কর মা। আ”ম অলওয়েজ বাই ইউর সাইড।
এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ঘুটঘুটে পরিবেশে আলোয় আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। চুইয়ে পড়া সুখ গুলো আচলে কুড়িয়ে পেপারে সাইন করে সিনথিয়া। এক নতুন সম্পর্কের স্বীকৃতি। ইরফাদ শুধুই তার, আর সে ইরফাদের।
রাত বাড়ছে,অন্ধকারে ডুবানো কক্ষ, দিয়াশলাই এর ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে স্বর্ণালী আলো। সিনথিয়ার হাতে মোমবাতির ঝাড়। এক এক করে সবগুলো মোম জ্বালিয়ে দেয় ইরফাদ। মাটি ছুঁইয়ে ছড়িয়ে আছে সিনথিয়ার জামার নিম্নভাগ। মোমবাতির ঝাড় নিয়ে রূপকথার রাজকন্যার মতো মেঝে ভাসিয়ে ধীর পায়ে হাঁটছে সিনথিয়া, কক্ষের এককোণে ঝুলিয়ে দেয় মোমবাতির ঝাড়। ইরফাদের পরণে নীল রঙের পাঞ্জাবি। মোমবাতির সোনালী আভায় দুটো মানব-মানবীর রূপের রোশনাই চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। মোমবাতির ঝাড় রেখে পূর্বের অবস্থায় ফেরে সিনথিয়া। দুইজোড়া চোখ এক হয়। সেই ইস্পাত কঠিন চোখে এলোপাথাড়ি ঝড়, বুকে তান্ডব চোখে চোখ রাখতে পারে না সিনথিয়া।
চোখ সরিয়ে নেয়।লম্বা গাউনের উপরিভাগে জড়ানো আলগা আচ্ছাদন, উন্মুক্ত স্কন্ধদেশে একজোড়া ওষ্ঠ চেপে ধরার তৃষ্ণায় ব্যকুল হওয়া কঠিন প্রাণ, উপরিভাগের আবৃত আচ্ছাদন মন্থর গতিতে অনাবৃত করে এক নেশাক্ত আঙুল, অনাবৃত গ্রীবা, উন্মুক্ত স্কন্ধদেশ শুষে শুষে বিহ্বল,ব্যাকুলতায় ডুবিয়ে মারে কোমলমতি নারীকে এক কঠিন হৃদয়ের মানব, ছুটে পালায় কোমল হৃদয়ের মানবি। মোমবাতির উত্তপ্ত অগ্নীশিখা নিভু নিভু হয়। দুটি অবয়ব এর মধ্যেবর্তী দশ হাতের দূরত্ব। মন্থর গতিতে মানব পা, ধিকি ধিকি কাঁপে মানবীর হৃদয়,ক্রমেই ভীরু ভীরু আত্মাটা দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ায়, সময়ের সাথে দূরত্ব কমে। বাতাসের দাপটে আলো মিলিয়ে যায়। দুরু দুরু বুকের কাঁপনে আখিজোড়া বন্ধ করে সিনথিয়া।চেনা ভেজা ভেজা ঘ্রাণ হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে বুকের অতল জগতে ছড়িয়ে যায়। পরণের ভারী গাউন দুলে ওঠে সিনথিয়ার পিছু ঘোরাতে। কার্লি চুলের উঁচু খোঁপায় নেশাক্ত অবয়য়ের এলোমেলো স্পর্শে লাল গোলাপের পাপড়ি ছিড়ে ছিড়ে পড়ছে,অনাবৃত পৃষ্ঠ, পাতলা মোহনীয় গ্রীবা, ভেজা ওষ্ঠে ভালোবাসার সিলমোহরে ভাসিয়ে দিচ্ছে মানব অবয়য়, বন্ধ চোখের মানবির হাত ইস্পাতকঠিন হাতের মুঠোতে বন্দি, ক্ষণে ক্ষণে কোমল হাতের উপর কঠিন হাতের দাপটে দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে।
দীর্ঘদেহী, বলিষ্ঠ মানব অবয়ব কোমলমতি নারীর অস্পর্শী তনু ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভেঙ্গে দিচ্ছে তার সমগ্র প্রতিজ্ঞা, কাটায় কাটায় একটু একটু করে আদায় করে নিচ্ছে সমস্ত পাওনা। নৈঃশব্দে তলিয়ে যাওয়া মানবীর বুকের কাঁপন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে, অন্ধকারাচ্ছন্ন, আধারে ডুবানো ফুলের বিছানায় ভেজা ওষ্ঠের দাপটে ভালোবাসার জালে সেচ্ছায় বন্দি হওয়া নারীর কম্পমান হৃদযন্ত্র ক্ষণে ক্ষণে থমকে যায়। ওষ্ঠের কোণে ভেজা ওষ্ঠ ছুঁইয়ে হীমশীতল গলায় নেশায় জড়িয়ে কঠিন হৃদয় বলে,
রং পর্ব ৫৮(৪)
–আ”ম গেটিং এডিকটেড টু ইউ ডে বাই ডে, সিন্ড্রেলা।
কম্পমান গলায় সিনথিয়া বলে,
–বাট আ”ম ভেরি স্কেয়ারড।
— হোয়াই সিনথি?আই লাভ ইউ না!
