রং পর্ব ৬২

রং পর্ব ৬২
তন্নী তনু

আজকাল রিমার দূর্বল শরীরটা বিছানা চায়, বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে রিমা। ইতিমধ্যেই মায়ের ক‍্যাচ ক‍্যাচ,
— নবাবজাদী!! পড়ে পড়ে ঘুমাস। কেনো যে তোকে পেটে ধরছিলাম। যদি বুঝতাম তাহলে জন্মের আগেই তোকে মেরে ফেলতাম। তোর জন‍্য আমি ছাদে অবধি যেতে পারি না। ওঠ ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে আয়। তোর জন‍্য সবার চোখ মোচড়া মুচড়ি আর দেখতে পারবো না।
চোখ দুটোটে রাজ‍্যের ঘুম। সময় মতো ঘুম হয় না, খেতেও পারে না।ধুমধাম সময় অসময়ে ঘুমিয়ে যায় রিমা। আঠার মতো লেগে থাকা চোখটা খোলে মায়ের কথায়। উঠে বসে,
–তুমি আমার সত‍্যিই মা তো? তোমার কি মায়া হয় না আমার জন‍্য?
— তুই কি আমার মেয়ে? আমার মেয়ে হলে আমার মুখ পোড়াতিস?
–আমি অ!বৈধ কিছু করিনি মা। এটা একটা ভুল। মানুষ চিনতে না পারার ভুল।
–সেই ভুলে কয়জনকে পোড়াবি। তোকে এতো কিছু বললাম- ভুল শোধরানোর সুযোগ দিলাম তবুও একটা কথা কানে নিয়েছিস?

— একটা নিষ্পাপ বাচ্চাকে মেরে ফেলবো আমি মা? মা হয়ে তুমি পারবে আমাকে মেরে ফেলতে?
— তোর এই সন্তান কে বয়ে বেড়াবে? তোরে কি সারাজীবন ঘরের পিলার বানায়া রাখমু?
— আর একটু খানি পথ মা, আমি আমাকে ক‍্যারি করতে পারবো । আমাকে তোমাদের টানতে হবে না। প্রয়োজনে আমি হবো সিঙ্গেল মাদার। এই পৃথিবীকে আমি দেখিয়ে যাবো ভুলের পরিণতি। আর কেউ ভুল না করুক।
— হয়েছে তোর বড় বড় কথা। মাথা জ্বলে যায়।
রিমা মলিন মুখটা নিয়ে হাসে। এরপর ল‍্যাপটপটা তুলে নেয় কোলের মধ‍্যে। রাতের গ্রাফিক্স এর যে যে অংশটুকু ক্লাসে শিখেছে ঐটা আবারো প্র‍্যাকটিস করতে বসে। তাকে সাবলম্বি হতে হবে, তাকে পারতেই হবে, একমাত্র এতেই তার মুক্তি। এটাই হবে এক নারীর ঘুরে দাড়ানোর গল্প। হৃদয় নিংড়ে যে কষ্ট, যন্ত্রণা চোখ দিয়ে ফোটায় ফোটায় পড়ে তা রূপ নিবে একদিন সফলতার গল্পে। এই চোখের জলের গল্প একদিন সকলকে প্রেরণা দিবে, শক্তি দিবে, সাহস দিবে। এই গল্প হবে ভুল থেকে এক নারীর ঘুড়ে দাড়ানোর গল্প, এই গল্প হবে নারী থেকে একজন মা’ হয়ে ওঠার গল্প।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিছানার পাশে চেয়ারে বসানো হয় টুম্পাকে। টুম্পা জোরে শব্দ করে না, বাবাকে বিরক্ত করে না,শুধু ফিসফিসিয়ে ডাকে,
— পাপা ও পাপা ; পাপা।
নিরব রাফসান আজ আর কোনো কথা বলে না, শুধু নিরবে ঘুমায়। টুম্পা ফিসফিসিয়ে বলে,
— আমার জল হয়েচে, তুমি কোতায় ব‍্যতা পেয়েচো পাপা। আদোল, আদোল, আদোল।
মেয়ের ছোট্ট কোমল হৃদয়ে বাবার জন‍্য আকুলতা, ব‍্যথা ইভার হৃদয়ে গিয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো উড়তে থাকে। নিরব, নিস্তব্ধ ইভা শূন‍‍্যেতে তাকিয়ে থাকে।”ভুল টা কি এতোই বেশি ছিলো! এক ভুলে সৃষ্ট দাবানল আজন্ম পোড়াচ্ছে।”
সাদা রঙের বেড,বেডের পাশের মনিটরে দেখাচ্ছে অক্সিজেন স‍্যাচুরেশন, রক্তচাপ, শ্বাসপ্রশ্বাস আর হৃদস্পন্দন। ঐ গতিবিধির দিকে তাকিয়ে থাকে ইভা। বিট বন্ধ হয়ে গেলে হারিয়ে যাওয়া মানুষটা সম্পূর্ণ হারিয়ে যাবে; সব শূন‍্য করে চলে যাবে।
–মামনি, পাপা’ কখন ঘুম থেকে উথবে?
ছোট্ট বাচ্চার প্রশ্নের উত্তর তো ভিষণ জটিল, এই উত্তর তো নেই। নরম আলোর কক্ষে মেয়েকে কোলে নেয় ইভা, তারপর ভেজা গলায় বলে,

— জানিনা সোনা। আমি সত‍্যিই জানিনা।
— পাপা’ল কাছে যাই, তুমি আমাকে পাপা’ল কোলে দাও।
— এখন না, এখন না মা। পাপা ব‍্যথা পাবে, বাবা ঠিক হয়ে যাক তোমাকে কোলে নিবে।
–কখন ঠিক হবে? তখন কি আমাদেল সাথে থাকবে বাবা?
— বাবার কঠিন অসুখ, বাবা কখনো বাসায় যাবে না।
— সবার পাপা তো বাসায়-ই থাকে। আমার পাপা কেনো থাকবে না।
এই ছোট্ট মেয়েকে কি করে বোঝায়? কি করে বোঝাবে– একটা ভুলে তাদের সব শেষ হয়ে গেছে। আর তো সম্ভব না!
–পাপা’ল কি হয়েছে? ব‍্যতা পেলে মানুষ ঘুমায় মামনি?
— হুম, আত্মা তে ব‍্যথা পেলে মানুষ ঘুমায়, শুধুই ঘুমায়।
— মামনি, কি করলে পাপা’র ব‍্যতা কমবে?
কোলের মধ‍্যে টুম্পার কোমল ছোট্ট হাতদুটিকে ইভা নিজের হাতের মধ‍্যে সৃষ্টি কর্তার দিকে তুলে দেয়। তারপর ভেজা ভাঙা গলায় বলে,

— বলো:’আল্লাহ্ তুমি তো সারা জাহানের মালিক।’
টুম্পা আধো আধো গলায় ধীরে ধীরে বলে,–” ও আল্লাহ্ তুমি সাআরা জাহানেল মালিক।”
— তুমি চাইলে সব পারো।
–তুমি তো তাইলেই সব পালো
টুম্পা তাল মেলায়,
— তুমি তো তাইলেই সব পালো।
–তুমি আমার পাপা’কে সুস্থ করে দাও।
–তুমি আমাল পাপা’কে সুস্থ কলে আমাকে দিয়ে দাও।
— পাপা’র সমস্ত ব‍্যথা নিয়ে নাও।
–পাপা’কে ব‍্যতা দিও না আল। আমি ব‍্যতা পাইতো পাপা ব‍্যতা পেলে।
মেয়ের হৃদয় থেকে বেড়িয়ে আসা কথায় ইভার হৃদস্পন্দন থামিয়ে দেয়, বুকের ভেতরের জগতটা ছুঁয়ে যায় মেয়ের আকুতি। টুম্পা চোখ বন্ধ করে,

— তুমি শুনতে পাচ্চো আল্লাহ্! আমি তোমাকেও ভালোবাসি,আমি পাপা’কেও ভালোবাসি। মামনি বলেছিলো, তুমিও আমাকে ভালোবাসো, তোমাল কাছে চাইলে তুমি সব দাও। তাহলে আমি কাঁদছি, তোমার ব‍্যতা লাগছে না? তুমি আমাল পাপাকে আমাকে দিবে না? দাও না। তোমাল তো কতো কি ই আছে। মামনি বলে- এই পৃথিবী, এই আকাশ, সমুদ্র, এমনকি আমরা সবাই তোমাল। আমালতো এতো কিছু নেই।আমি এতো কিছু চাইও না। তুমি শুধু পাপা’ল ব‍্যতা কমিয়ে দাও!তুমি পাপা’কে আমাকে দিয়ে দাও। দিবে? বলো দিবে?
ইভার র!ক্তা!ক্ত হৃদয়ের ধেয়ে আসা ব‍্যথার জলোচ্ছাসে সে লন্ডভন্ড, মেয়ের শক্ত শক্ত কথা যে তার হৃদয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে আছড়ে পড়ছে। হৃদয়ের তিক্ত ব‍্যথায় চোখ ফেটে আসা জল আর বাঁধ মানে না। হাতের মধ‍্যে টুপ টুপ করে পড়ে।
নৈঃশব্দে চোখ থেকে খসে পড়া জল, আর অতীতের একটু খানি দৃশ‍্যপট চোখে ভেসে উঠতেই ব‍্যথারা আরো তীব্র হয়, থুতনির ভাজে ভাজে ফুটে ওঠে সেই করুণ ব‍্যথার ছাপ।
অতীতের ভেলায় ভেসে রাফসানের একসময়ে ফিরিয়ে নেয়া হাটতা আজ নিথর, নিরবে পড়ে থাকা হাতটা কম্পমান বেদনায় ব‍্যথিত হওয়া হাত দিয়ে স্পর্শ করে ইভা। তপ্ত নোনাজলের সাথে বেড়িয়ে আসে ভাঙা জীবনের এক আস্ত স্ক্রিপ্ট,

— ‘ কেনো পেয়েও পেলাম না তোমাকে? তুমি কি জানতে না পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা আমৃত‍্য পোড়ায়। কেনো বুকের মধ‍্যে আস্ত দাবানল সৃষ্টি করে তুমি চেয়ে চেয়ে দেখলে। প্রতিশোধ তোমাকে এতোটাই উম্মাদ করে দিলো,তুমি ভালোবাসা চিনলে না? আমার ভালোবাসা তোমাকে স্পর্শ করলো না? যে মেয়ে তোমার জন‍্য সব টা ছেড়ে দিলো তাকে ছাড়তে তোমার ঐ কঠিন হৃদয় একবারো ধাক্কা খেলো না। তুমি আমাকে ছুড়ে ফেলে দিলে নির্জন রাতের এক দানবীয় সমুদ্রে,একটা আস্ত সমুদ্র আমি যখন একা পাড় হলাম, দাবানলে পুড়ে ছাঁই হয়ে যাওয়া মেয়েটার যখন কিচ্ছু রইলো না তখন তুমি ফিরে এলে আবার পোড়াতে? কেনো এলে তুমি? কেনো পোড়াচ্ছো আবার……..!

এক বাবার রাজকন‍্যা,আর ভাইয়ের চোখের মণি যখন আস্ত রাজ‍্য ফেলে যখন তোমাকে বেছে নিলো, সব ছেড়েছুড়ে তোমার কাছে ছুটে গেলো। আপন জন ফেলে রেখে ঐ মেয়েটা ঘুমাতে পারতো না। তুমি বুকের উষ্ণ ওমে আগলে রেখে একটু একটু করে ঘুমাতে শেখালে, তুমি একটু একটু করে তোমাকে চেনালে। আর আমি যখন বিভোর হয়ে তোমাতে ডুবে গেলাম। ঠিক তখন আবার সেই মেয়েকে তুমি ছুড়ে ফেলে দিলে। তার কাছ থেকে কেড়ে নিলে ঘুম সহ ঘুমের জায়গাটুকুও!! কেনো এতো বড় অভিনয় করলে? তুমি জানো….! ঐ মেয়েটা ঐ হৃদয়ের ওম টুকুর অভাবে এখোনো আস্ত রাত নির্ঘুমে পাড় করে!!যাকে ঘুম না পারালে ঘুমাতো না ঐ মেয়েটাকে দূরে ঠেলে দিয়ে কি করে থাকলে তুমি? তোমার কি একটুও মনে পড়লো না?তোমাকে ছাড়া মেয়েটা ঘুমাতে পারে না।
আমি এই চোখে দেখতে চাইতাম পুরো পৃথিবীর সৌন্দর্য, এরপর দেখলাম তোমার দুটো চোখ। ঐ চোখে খুঁজে পেলাম পুরো পৃথিবী দেখার আনন্দ। আচ্ছা…..! আমার চোখে কি তুমি কিছুই দেখলে না, ব‍্যথায় জর্জরিত রক্তাক্ত হৃদয়ে যন্ত্রণার যে দাবানল আমি বয়ে বেড়ালাম।তুমি ফিরে দেখলে না?একটু ভালোবাসলে কি এমন ক্ষতি হতো? কি এমন ক্ষতি হতো আজীবন তোমার বুকে আগলে রাখলে?

তোমার আমার ভুল সিদ্ধান্তে মেয়েটা আমার পুড়ছে। কেনো জলন্ত আগুনে ফেলে দিলে?আবার চোখের সামনে আমাকে পুড়িয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছো….! তুমি নিরব হয়ে তো ব‍্যথা থেকে মুক্তি পাচ্ছো, আর আমি? আমি আবারো পুড়ছি রাফসান!!
ভালোবাসলে কি ক্ষতি হতো? আগলে রাখলে কি ই বা কি ক্ষতি হতো? আজ আমার মেয়েটা কাঁদে, আমি কি উত্তর দিবো। আমাকে ভালোবাসলে না,আমাকে ছুড়ে ফেললে সব মেনে নিলাম। এই মেয়েকে আমি কি বলবো? কি বুঝাবো আমি।
নৈঃশব্দে চোখের জলে লেখা কথাগুলোর কোনোই শব্দ হচ্ছে না। তবে ইভার হাতের থরথর কাঁপুনি কাঁচের দেয়ালের ওপারে দাঁড়িয়ে ঠিক বুঝতে পারে ইরফাদ। লৌহ কঠিন হৃদয়ে এক ব‍্যথাতুর তিক্ত অনুভূতি তার হৃদয় নাড়িয়ে যায়। চোখ বন্ধ রাখে ন‍্যনো সেকেন্ড। এরপরে ভারী দরজা ঠেলে ভেতরে যায় ইরফাদ। ইরফাদের পায়ের নিরব শব্দেই অকস্মাৎ চোখজোড়া খুলে যায় ইভার। সহসাই সরিয়ে নেয় নিজের হাত। সমানে মোছে চোখের জল। ইরফাদ ধীর গলায় বলে,

— বাইরে চল।
ছোট্ট টুম্পা একবার মামাই আর একবার তার মামনির দিকে তাকায়। সময় শেষ, এখান থেকে যেতে হবে? টুম্পা তড়িঘড়ি করে মায়ের কোল থেকে নামে। এরপরেই বাবার আঙ্গুলের কোণে টুপটুপ করে চুমু খায়।
এতোটুকুই! তবে এইটুকুই কি কঠিন হৃদয় ছোঁয়ার জন‍্য যতেষ্ঠ না। ইরফাদ আরেকবার চোখ বন্ধ করে, অদৃশ‍্য বাতাসে মিশে যায় তার অনুভূতি। চোখ মেলেই টুম্পাকে কোলে নেয়। বেড়িয়ে আসে বাইরে।
ইরফাদ মেরুদণ্ড টানটান করে দাঁড়ায়। শক্ত গলায় বলে,
–আমার লাইফে তো অনেক ভুল আছেই। তারমধ‍্যে অন‍্যতম সেরা ভুল হয় যখন আমি আবেগ দিয়ে কাজ করি। রাফসানের সাথে তোদের দেখা করানো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল মনে হচ্ছে।
— ভাইয়া এভাবে বলো না।
— ইমার্জেন্সি কাজ আছে,আই হ‍্যাভ টু গো। যাওয়ার পথে তোকে নামিয়ে দিয়ে যাবো। চল…
— আর “ও”?
–ও মানে?
–এই মানুষটা একা থাকবে ভাইয়া?
— এখানে ডক্টর আছেন ইভা।

লৌহকঠিন হৃদয়ের মানুষটার মুখের উপর কিছু বলার সাহস হয়ে ওঠে না। শুধু হাসফাস, ছটফট করে। ক্ষীণ করে ছাড়ে শ্বাস। তারপর ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলে,
— আমি থাকি একটু?
ইরফাদের কপালের মাঝখানে ভাজ হয়ে আসে ইভার কথা শুনে। বিস্ময়ে ইরফাদ ধীর গলায় বলে,
— এখানে কোথায় থাকবি তুই?
— এখানে! চেয়ারে বসে থাকবো।
— বাবু অসুস্থ ভুলে গেছিস?
— এটাও তো হসপিটাল ভাইয়া একটা কেবিন ম‍্যানেজ করে দাও। টুম্পার ট্রিটমেন্ট চলুক।
— পাগল হয়ে গেছিস ইভা? আমি তোকে এখানে একা রেখে যাবো? চল…
— একটু থাকি ভাইয়া প্লিজ।

রং পর্ব ৬১

ইরফাদ কোনো কথাই শোনে না। টুম্পাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসে। ইভা দোটানায় হতবুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পা দুটো অদৃশ‍্য মায়ায় থেমে থেমে যায়। পিছু ফিরে ফিরে দেখে ইভা। একদিকে অদৃশ‍্য মায়া অন‍্যদিকে বাস্তবতা ইভা নিজের শরীরকে ধাক্কায় ধাক্কায় ঠেলে নিয়ে যায়। গাড়ি চলতে শুরু করে। এক অদৃশ‍্য মায়ার শেকল পা থেকে আস্তে আস্তে খুলে যায়। হৃদয়ের ঘন দীর্ঘশ্বাস মিলিয়ে যায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে। সেই সাথে কতো যন্ত্রণা অন্ধকারে মিলিয়ে যায় তা কেউ জানে না কেউ দেখে না।

রং পর্ব ৬২ (২)