রং পর্ব ৬৩

রং পর্ব ৬৩
তন্নী তনু

রাত ঘুমিয়ে গেছে, ঘুমিয়ে গেছে পৃথিবী। শুধু দু’চোখের অন্তহীন তৃষ্ণায় জেগে আছে কয়েক জোড়া চোখ। ক্লান্ত হৃদয়, তবুও অমোঘ চেষ্টায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে, আত্মা’র আকুতিকে দূরে ঠেলে শক্ত হাতে মেয়ে’কে কাঁধের উপর ঘুম পারানোর বৃথা চেষ্টায় ইভা। হাসপাতালের ধবধবে উজ্জল, আলোয় উদ্ভাসিত করিডোরে চলছে সময়ের সাথে আধার ঘনিয়ে আসার পূর্বাভাস। বাচ্চা মেয়েটা’র ঠোঁটে এখনো বাজছে— পা…পা…! পা….পা..হ…!
ইভার অশান্ত হৃদয়ে বয়ে চলা তান্ডবে নিজেই বে’সামাল তবে ছোট্ট প্রাণটাকে তো তার ঝড়-তুফান থেকে আগলে রাখতেই হবে। এটাই যে তার দায়িত্ব। তিক্ত ব‍্যথায় জরাজীর্ণ গলা ফেরে আসে মন ভুলানো কথা,

— টুম্পা…! টুম্পা…! মা…! শুনছো?
চোখ মুখে রক্ত জমে যাওয়া বাচ্চা মেয়েটা আস্তে করে বলে,
–হু…
— তুমি কাকে বেশী ভালোবাসো মা?
— তোমাকে, পাপাকে, মামাই, নানু, বউ’কে…..
— আমি যদি কাঁদি তোমার কষ্ট হয় বুড়ি?
— হুউউ…
— তুই কাঁদলে যে আমার পৃথিবী থেমে যায় মা। কেনো এতো দুঃখ দিচ্ছিস আমাকে? আর কাঁদিস না।
— পা….পা…!
ইভা মেয়ের পিঠে হাত বুলায়। গলার স্বরে কান্না ধরে, হৃদয় ছিড়ে যায়।চোখ ফেটে আসা অশ্রুকণাগুলো পড়তে চাইলে অদূরে তাকিয়ে থাকে,
— সব চেয়ে কষ্টসাধ‍্য বিষয় হলো অবুঝ’কে পৃথিবীর নিয়ম বোঝানো। অবুঝ এই তোকে কি করে বোঝাই আমি এই কঠিন নিয়ম।
খানিক’টা দম নেয় ইভা। সাজিদ দশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। একটু একটু করে এগিয়ে আসে সাজিদ,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার কাছে দিতে পারো। অনেক সময় তো রাখলে।
— না থাক।
— তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো ইভা?আমি কোনো দাবি নিয়ে এখানে রয়েছি এমন ভেবোনা। সব পেতেই হবে এমন কিছু না ইভা। বন্ধু তো ভাবতেই পারো।
— এমন কিচ্ছু না সাজিদ ভাই। মেয়ে’কে বোঝানো’র সাধ‍্য আমার নেই। এতো ভারী দায়িত্ব কেনো নিতে হচ্ছে? মেয়েটা’কে কি দিয়ে কি বোঝাবো আমি? পৃথিবীতে এমন কোনো শব্দ নেই যেটা বললে ও বুঝবে? কোন শব্দ বললে শান্ত হবে।
— দাও আমার কাছে দাও।
টুম্পাকে সাজিদের কাছে দেয় ইভা। বাচ্চা মেয়টা’কে যত্ন করে বুকে আগলে নেয় সাজিদ। কড়িডোর জুড়ে টুম্পা’কে নিয়ে ধীরে ধীরে পা ফেলে সাজিদ আর সুরে সুরে ডাকে,

— টুম্পা….! টম্পা….!
শুনছো তুমি?
— হুউউ।
— আংকেলের মনটা খুব খারাপ।তোমার সাথে একটু গল্প করি মা ।
— তুমি কি একটু আমাকে পাপাল কাছে নিয়ে যাবে আংকেল?
— নিবো তো। তার আগে যে তোমার সাথে আমার একটু গল্প আছে। বলি?
— হুউউম।
— কখনো তুমি পড়ে গিয়ে ব‍্যথা পেয়েছো? কখনো দৌঁড়াতে তোমার পা ছুঁলে গেছে কি?
–হুমমম, একবার ছুঁলেছিলো তো।
— কষ্ট বোঝো তুমি? ব‍্যথা?
— হুমমম।
— তোমার পাপাও ব‍্যথা পেয়েছে।তুমি তো ছোট তাই ছোট ব‍্যথা পেয়েছিলে। আর পাপা, পাপা তো বড় তাই বড় ব‍্যথা পেয়েছে।
— কোথায় ব‍্যথা পেলো?
— হৃদয়ে, আত্মায়।
— সেখানে ব‍্যথা পেলে কি হয়?

— সেখানে ব‍্যথা পেলে পুরো শরীরে ব‍্যথা লাগে মা। তুমি তো ছোট ব‍্যথা পেয়েছিলে তাইনা? তাই ডক্টর লাগেনি। কিন্তু বাবা তো হৃদয়ে ব‍্যথা পেয়েছে সোনা। তার জন‍্য তো ডক্টর দেখাতে হচ্ছে। ডক্টর ঠিক করে দিবে।
তুমি তো পাপা’কে ভালোবাসো। মামনি কে ভালোবাসো। মা কাঁদলে তোমার তো কষ্ট হয় তাইনা। পাপা কাঁদলেও তো তোমার কষ্ট হয়। তাহলে তুমি এভাবে কাঁদলে পাপাও কষ্ট পাবে তো। তুমি কি চাও পাপা আরোও ব‍্যথা পাক?
— না, না।
— তাহলে কেনো কাঁদছো তুমি? টুম্পা তো পাপা কে ভালোবাসে তাই না। আর কিন্তু কাঁদবে না। তুমি কাঁদলে পাপা কষ্ট পায়।
— তাহলে পা পা কখন ঠিক হবে?
— এইটা তো পুরোটাই উপরওয়ালা জানেন। তিনি চাইলে আজকেই সুস্থ করে দিবেন আর যদি তোমার পাপা বেশী অসুস্থ হয় তাহলে বেশী সময় লাগবে।
হাঁটতে হাঁটতে অকস্মাৎ থেমে যায় ইভা। সাজিদ আড় চোখে তাকায় একবার। ইভা শূন‍্যে তাকিয়ে থাকে, আর বিড়বিড়িরে বলে,
— যদি ও না থাকে তাহলে? কি বোঝাবো মেয়েকে?
— কিচ্ছু হবে না। সব ভালো হবে। তুমি একটা সুন্দর লাইফ ডিজার্ভ করো। আমি চাই তুমি ভালোবাসা’র মানুষকে ফিরে পাও, তুমি খুশি থাকো।

–কিছু কিছু ভুল আজন্ম ক্ষত হয়ে রয়ে যায় সাজিদ ভাই। সে ক্ষত কখনো শুকায় না। ভালোবাসা আর ঘৃণার মাঝে দদুল‍্যমান অনুভূতি আজন্ম পোড়ায়। এখানে ভালোবাসার প্রশ্নই আসছে না। ফিরে পাওয়া, ফিরে যাওয়ার হিসেব তো অনেক আগেই শেষ। এখন চাওয়া তো একটাই– আমার মেয়ের কাছে তার পাপা বেঁচে থাকুক।সারাজীবন বেঁচে থাকুক। আমার মেয়ের মনে কোনো ক্ষত না থাকুক। আমার মেয়ে খুশি থাকুক।
বাঁচার সম্ভাবনা যেখানে নিতান্তই কম। কিছু হয়ে গেলে এই মেয়েকে আমি কি বুঝাবো?
— কারো জন‍্য কিছুই থেমে থাকে না ইভা। এতো ভেবো না। আশা হারিয়ে ফেলো না। যা হবে সবটাই ভালোর জন‍্য।
–সাজিদ ভাই!
— হুমম।
— আপনার আমার উপর রাগ হয় না? অভিযোগ নেই? অভিশাপ দিতে ইচ্ছে করে না।
— কিসের অভিযোগ? কিসের অভিশাপ?
ওষ্ঠের কোণে নিগূর হাসি,
ভালোবাসা মানে হলো ‘শুধু তোমার খুশি’– তুমি খুশি থাকলেই হলো। সে হোক আমার কাছে, অথবা অন‍্যের কাছে। তুমি ভালো থাকলেই হলো।
— সত‍্যি ই কষ্ট হয়না আপনার?
–নাহ। তোমার শান্তির খোঁজে আমার আবছা, নরম আলোর শহরে নামুক বিদঘুটে অন্ধকার। স্বপ্নের ঘোরে স‍দ‍্য জন্মানো শুভ্র বেলির কলিগুলো অকালে ঝড়ে যাক, আর ফুল না ফুটুক। আআর অশান্ত হৃদয়ে জুড়ে নামুক শব্দহীন প্রগাঢ় নিরবতা। শুধু তুমি খুশি থাকো। শুধু খুশি থাকো।

ইতিমধ‍্যেই আইসিইউ এর কক্ষ থেকে একজন ডক্টর বেরিয়ে আসেন। সাজিদের চোখে পড়তেই এই প্রান্ত থেকে সাজিদ এগিয়ে যায়, পিছু পিছু ছোটে ইভা। সাজিদ ডক্টরকে বলে,
— কি অবস্থা এখন?
–আপনাদের মধ‍্যে একজন একটু আসুন। কথা আছে।
ইভার কোলে টুম্পাকে দেয় সাজিদ। এরপর ডক্টরের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটেন,
— ওনার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। ব‍্যাক করার চাঞ্চ নেই আর। শেষ মূহুর্তে চাইলে দেখা করতে পারেন। এসপি সিনহা বলেছিলেন বলে জানালাম।
–বাচ্চাটা’কে নিয়ে যাওয়া পসিবল?
— এসপি সিনহা বলে গেছেন– এরকম সিচুয়েশন হলে বাচ্চা টাকে দেখা করাতে। সো, নিয়ে আসুন।
সাজিদ ধীরে ধীরে ফিরে যায় ইভার কাছে। চাতক পাখি’র মতো চেয়ে আছে ইভা। সাজিদ চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারে না। স্থির হয়ে দাঁড়াতেও পারে না। সুক্ষ এর চিনচিনে অনুভূতি হৃদয়ে ছড়িয়ে যায়। ধীর গলায় বলে,

— স্ট্রং থেকো ইভা। টুম্পাকে নিয়ে যাও।
— কিছু হয়েছে সাজিদ ভাই? কোনো খারাপ কিছু?
— নাহ! তুমি যাও। শুধু স্ট্রং থেকো। যেকোনো কিছুই হতে পারে।
ইভার পায়ের তলায় কাঁপন ধরে, বুকের মধ‍্যে অজানা আশঙ্কায় তোলপাড় শুরু হয়। মেয়েকে নিয়ে এলোমেলো, বিধ্বস্ত, বেখেয়ালে হাঁটে। হৃদয় চিড়ে কি একটা নিদারুণ শূন‍্যতা হাহাকার করে ওঠে। কাচ দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে ইভা। কোলে থেকেই মেয়েটা ফিরে তাকায় রাফসানের দিকে। রাফসান নিরবে ঘুমাচ্ছে যেনো। ইভার এই ঘমন্ত মুখটা দেখে বুকের মাঝখানে কিছু একটা শূন‍্য হয়ে যায়।টুম্পার আবারো সেই ফিসফিস করা শব্দ,
–পাপা, পাপা, পাপা।
নিরব, নিস্তব্ধতা’য় তলিয়ে যাওয়া রাফসানের কানে কি এই মধুর ডাক আর পৌছাবে? আর কখনো কি এই ডাকের সাড়া দিবে রাফসান….! ইভার কোল থেকে পিছলে ছুটে যায় টুম্পা। বেডের সাইডে দাঁড়ায়। ফিসফিসিয়ে বলে,
— চলে এসেছি পা পা।
বন্ধ চোখে রাফসান নিস্তব্ধ, নিরব।ডাকের সাড়া দেয় না। টুম্পা রাফসানের হাতের উপর হাত বুলায়। পায়ের আঙুলে ভর করে বাবা’র মুখটা ছুঁতে চায়। চেয়ার টেনে তার উপর তুলে দেয় ইভা। রাফসানের কানের পাশে মুখ রেখে টুম্পা ফিসফিস করে,
— “ভালোবাসি পাপা।”
অতঃপর বিদঘুটে নিরব পরিবেশে একটুকরো আলো জ্বলে ওঠে অকস্মাৎ। নিরব, নিস্তব্ধ, রক্তাক্ত রাফসানের চোখজোড়া হঠাৎ খুলে যায়। বিষ্ময়ে সকলেই চোখ বড় করে তাকায়। হৃদয়ের আশার আলো টা নিভু নিভু ছিলো তা জ্বলে ওঠে আবার। ইভার আহত আত্মা পরিণত হয় বরফে। বুকের ভেতরে কিছু একটা চিৎকার দিয়ে ওঠে। ডক্টর বলে ওঠেন,
— মিরাকল!!
বরফের মতো জমে যায় ইভা। ডক্টর এগিয়ে আসেন। সব চেক করেন। ঠিক সে মূহুর্ত্তেই চোখ দুটো আবারো বন্ধ হয়ে যায়।

আন্ডার গ্রাউন্ডে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ছক কষতে বসেছে ইরফাদ, জাবির, শিশির। প্রভাত রঞ্জন পিচমোড়া বাঁধা হাত নিয়ে পরে আছে ফ্লোরে। এদের মধ‍্যে রাফি ছিলো তাকে পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসা বাদে জানা গেছে — পরিকল্পনা অনুযায়ী পালানোর পথ মসৃণ, বিপদমুক্ত কি না তা পর্যবেক্ষণ করে নির্দেশনা দেয়ার জন‍্য রাফি আরেক গাড়িতে ছিলো। সে অনুযায়ী প্রথম গাড়ি দিয়েই রাফি পাড় হয়ে গেছে।
ইরফাদ তলিয়ে ভাবছে কি করে রাফিকে ফাঁসানো যায়। ঠিক এ সময়েই ইরফাদের ফোনটা কেঁপে ওঠে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে,” কলিং সাজিদ।”
মূহুর্ত্তেই ফোন রিসিভ করে ইরফাদ,
— সব ঠিক আছে? রাফসান?
সাজিদ একটু দম নেয়। তারপর ছোট্ট করে শ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে,
— হি ইজ নো মোর।
খানিকটা হিম হয় ইরফাদ। টুম্পার ডাক টা আবারো কানে বাজে, ‘ ও পাপা। পাপা। আমার পাপা।’
চোখ দুটো বন্ধ করে ইরফাদ। তারপর ধীর গলায় বলে,
–বাবা স্টেবল না। ইভা আর সিনথি’র পাশে কেউ নেই। একটু খেয়াল রাখিস। আসছি আমি।
ফোন টা রেখেই জাবিরকে বলে,
–যা করার আপনাদের করতে হবে। আমাকে এখন যেতেই হবে।
— কিন্তু স‍্যার!
–সময় কম। এর মধ‍্যে আপনাদের ও ফিরতে হবে।

বলেই পা বাড়ায় ইরফাদ। শরীরে জুড়ে আগুন জ্বলতে থাকে। পেছন পেছন হাঁটছে জাবির, শিশির। সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় ইরফাদের কানে ভেসে আসে সুরেলা সেই একই ডাক– ” পা পা, পা……পা।”
থেমে যায় ইরফাদ। সমস্ত শরীর আগুন জ্বলে, হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ। একটা মানুষকে পথভ্রষ্ট করা, তার সমস্ত জীবনকে ধ্বংসপ্রাপ্ত করা আবার যখন সে অনুতপ্ত তখন তার জীবন টাও নিয়ে নিলো। সমস্ত শরীর জ্বলতে থাকা ইরফাদ পিছু ফেরে। শিশিরের কাছে চেয়ে নেয় অস্ত্রের ব‍্যাগ। সেখান থেকে একটা ধারালো ছু!রি বের করে। শিশির বলে,
–এটাই বলতে চাচ্ছিলাম স‍্যার! সেফটি’র জন‍্য সাথে কিছু নিয়েছেন কি না।
ইরফাদ ধারালো ছু!রি হাতে পিছিয়ে যায়। কানে ভাসতে থাকে — পাপাহ, ও পাপা।
ইরফাদের শরীরে বহমান অগ্নি, চোখে উদয়মান তেজ, হাতের শিরায় ফুটে ওঠে হিংস্রতা, নিষ্ঠুরতা। ঝড়ের গতিতে ভয়ংকর হয়ে ওঠে ইরফাদ। মেঝেতে বেঁধে রাখা প্রভাতরঞ্জনকে বাঁধন মুক্ত করে। অতঃপর নিষ্ঠুর ইরফাদ তার চোখের মধ‍্যে গেঁথে দেয় ধারালো ছু!রি। আবছা আলোয় মোড়া জায়গায় এক গগন বিদারক চিৎকার। সে র!ক্তা!ক্ত বলিষ্ঠ পা চেপে ধরে ইরফাদ। আরেকবার ছু!ড়ি চালায় অন‍্যচোখে। র!ক্তে বিচ্ছুরিত হয় ইরফাদের চোখ, মুখ জুড়ে। এতেও ক্ষান্ত হয় না ইরফাদ। হৃদয়ে জলন্ত আগুনকে সাময়িক থামাতে একের পর এক ছু!রিকাঘাতে ঝাঝড়া করে ফেলে প্রভাতরঞ্জনের বুক। অবসান ঘটে কালো জগতের অধিপতির। র!ক্তা!ক্ত ছু!রি শিশিরের হাতে তুলে দেয় ইরফাদ। তারপর বলে,– আরেকটারে জবাই দিবেন। তারপরের প্ল‍্যান আমি জানাচ্ছি।
— স‍্যার প্ল‍্যান তো এমন ছিলো না। এভাবে মেরে দিলেন?
ইরফাদ নিরবে নিজের আঙুল ওষ্ঠের মাঝে ঠেকায়। শব্দ করে,” শশশ।”

রং পর্ব ৬২ (২)

করিডোর জুরে পায়চারী করছে সাজিদ। হসপিটালের কেবিনে অসুস্থ সিনথিয়া একটু ঘুমের দিকে চলে গেছে। সাজিদের মন সায় দেয় না। আইসিইউ এর দিকে পা বাড়ায়। দরজা ঠেলে অকস্মাৎ থমকে যায় সাজিদ। বেডের উপর রাফসানের নিরব, নিস্তব্ধ নিথর দেহ, চোখের কোণে জল, যেনো ঘুমিয়ে গেছে চিরকালের জন‍্য। তার বুকের উপর টুম্পা, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে তার পাপাকে। আর ইভা? ইভা কই। ইভা বসে আছে মেঝেতে। চুলগুলো খোলা, এলোমেলো বিধ্বস্ত। বেডের কার্ণিসে মাথা ঠেকিয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আছে। র!ক্ত চক্ষুতে জমে আছে যন্ত্রণা’রা। সাজিদ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ থেমে এরপর ডাকে,
— ইভা!!!!
ইভা ফিরে তাকায়। চোখের দৃষ্টিতে কেবল যন্ত্রণা, হাহাকার। সে আঙুল ছোঁয়ায় ওষ্ঠের মাঝে। ফিসফিসিয়ে বলে,
–শশশশ! বাবু ঘুমাচ্ছে তো।

রং পর্ব ৬৩ (২)