রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ২

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ২
আশু

বিয়ে শেষ হওয়ায় কালকে রাতেই চৌধুরীর ভিলায় সবাই ফিরে এসেছে। এদিকে ভোর পাঁচটায় ইশার ঘুম ভেঙে যায়, কালকে বেচারী কান্নাও করতে পারেনি তাই বাসায় ফিরে দুপুরে নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে গেছে হুশ নেই। এরপর ইশা আস্তেধীরে উঠে সামনের বেলকনিতে দাঁড়ায় ভোরের খোলামেলা শুদ্ধ বাতাস কিছুক্ষণ অনুভব করে। খানিকবাদে ইশা ফ্রেস হয়ে নামাজ পড়ে নেয়। সময় না ফুরানোর দরুন নিচে যেতে থাকে বাগানের উদ্দেশ্য তখনই দেখতে পায় সোহানা বেগম ইশাদের দাদী নিচে পায়চারি করছে।
ইশা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর দাদীর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,”কখন এলে গো দাদীজান? আপনাকে বড্ড মিসিং কিসিং করেছি!!”

সোহানা বেগম বলে,,”কাল রাতে আসছি তরে এতো ডাকলাম তুই তো ঘুমের চাঙ্গা মাইরা আছিলি আর এখন তোর কিসিং মিসিং বাদ দিয়া আমারে এক কাপ আদা চা দে তোহ্।”
ইশা নাক সিটিয়ে বলে,,”দিচ্ছি দিচ্ছি বারুদের দাদীজান, অজগরের দাদু, পন্ডিতের দাদুন।
ইশার কথা শুনে সোহানা বেগম দম ছেড়ে বলে,,”মেয়েটা দামড়ী হলে কি হবে কথা বার্তা লেডাখুকি রয়ে গেছে।”
ইশা আর সোহানা বেগম চা খাচ্ছিল তখনই ইয়াসির রেডি হয়ে নেমে আসে কোথাও যাবে হয়তো।
সোহান বেগম নিজের প্রিয় নাতীকে দেখে বলে,,,,”কোথায় যাচ্ছিসরে এত সকাল সকাল? ”
ইশা ইয়াসিকে দেখে বিরবির করে বলে,,”বারুদে দিয়াশলাই কাঠির প্রয়োগ করতে যাচ্ছে।”
তখনই সোহানা বেগম দাঁত দাঁত চেপে ইশাকে বলে,,”কি বিরবির লাগাইয়া দিছত চুপ থাক।”
ইয়াসির নিজের চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,,”ক্লাব মিটিংয়ে যাচ্ছি দাদীজান সামনে বছর নির্বাচনে দাঁড়াবো দোয়া করো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সোহানা বেগম বলে,,”যেইখানে যা, না খেয়ে যাবি না। এখানে বস তুই। ঐ ইশু যা যা নাস্তা নিয়ে আয়।”
ইশা বম্বলের মতো তাকিয়ে আছে, সকাল সকাল তাকে কাজের মাসি বানাচ্ছে দাদী নাতী মিলে।
ইয়াসির তখন বলে,,”সময় নেই দাদীজান আজকে যাই।”
“উহু তুই বস আর ইশু দাঁড়িয়ে আছোত কেন?”
ইশা চলেই যায় রান্নাঘরে, দাদী নাতী মিলে কখন কি ঝারি মারবে তার থেকে তাদের কথা শুনাই ভালো।
ইশা রান্নাঘরে গিয়ে সকাল সকাল নিচে আসার জন্য নিজেকেই মনে মনে গালি দিচ্ছে। খানিকবাদে হালকা পাতলা কিছু নাস্তা নিয়ে আসে ইশা। ইয়াসির খেতে থাকে তখন সোহান বেগম বলে,,”সাহেব বয়স তোহ্ বেড়ে যাচ্ছে বিয়ে কি করবি না?”

ইয়াসির ঝটপট বলে,,,,”করব না কেন দাদীজান?একটা জীবন বউয়ের কি দরকার না বলো?বউ ছাড়া কি থাকা যায় নাকি?”
এসব শুনে বেচারী ইশার মনটা ভেঙে আকুমবাকুম হয়ে যায় যতই রাগ দেখাক দিন শেষে এই বারুদভাইকেই তার ভালো লাগে। এটা না সে বুঝাতে পারে আর না বলতে। সাহসের খাতায় তার অবস্থান শূন্য তাই তো সব হজম করতে হচ্ছে।
সোহানা বেগম বলেন,,”মেয়ে দেখি তাহলে?”
ইয়াসির বলে,,”দেখে রাখো নির্বাচনের পরে তুলে আনবো এর আগে প্রেম করে পুষিয়ে নেবো।”
ইশা আর দাঁড়ায় না দাদী নাতীর দিকে একটা ভেঙচি কেটে উপরে চলে আসে।

এরপর ইয়াসির বাইরে যাওয়া মাত্র দেখতে পায় ওর চেলাপেলা দাঁড়িয়ে ইয়াসির বলে,,”এত সকালে তরা?”
তখন চেলাপেলা সবগুলো একসাথে বলে,,ভাই ঐ মির্জা। আরেকজন বলে,,”আরে থাম,এটা পরে ঐটা বল, আরে না এটা বলি না না ঐ টা বল”
এসব শুনে ইয়াসির রেগে একটা রামধমক দিয়ে বলে,,”বা*লছা*ল চুপ কর সব। আর সাগর তুই সব বল আর কারো যেনো সাউন্ড না পায় আমি। ”

সাগর বলা শুরু করে,,” ভাই মির্জা লোক যখন জেনেছে আপনি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন তখন থেকে আপনার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে তারা প্লান করেছে আপনার পরিবারের দিকে এবার কিছু করবে। কিন্তু কি করবে জানা যায় নি । মির্জাও এবার নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছে।
ইয়াসির ভার কন্ঠে বলে,,”এইটুকুর জন্য তোরা হাইহুতাশ হচ্ছিস কেন গাধার দল। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার পরিবারের দিকে ওর একটা নখ আসলেও একদম গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা, মেঘনায় চুবিয়ে মারবো রাস্কেলটাকে। মির্জার গোদামে মির্জাপুরীর সিল না মারলে এটা ঠিক হবে না।
সাগর বলে,,ভাই কি করবেন?
ইয়াসির নিজের বাইকে উঠতে উঠতে বলে,,,,”আপাতত মিটিংয়ে যাচ্ছি সব যা এখন,সময় হলে দেখিস কি করি”

লিভিংরুমে ইশা বসে বসে ফোন চাপছে। আর ওর মাথায় তেল দিয়ে বেনী গাঁথছে সোহানা বেগম। আর বলছে,,”মেয়েদের চুলেই সৌন্দর্য কিন্ত তুই কইতে এমন লাল চুল আনলি তার উপর এমন পাতলা আবার লম্বাও না এটা চুল না ঘোড়ার লেজ রে বইন? আমার চুল ও তোর থেইকা বহুত সুন্দর। আমার চুল দেইখাই তর দাদায় পাগল হইয়া আমারে বিয়া করছে। তর চুল দেখলে তোহ্ পলাইবো।”
এসব কথা নতুন না প্রত্যেকবার নিজের দাদীর থেকে এসব শুনতপ শুনতে মুখস্ত ইশা। একটুপর আয়ান এসে বলে,,”ইশু তুই ভার্সিটিতে যাস নি কেন?”
ইশা মিনমিন করে বলে,,”যাবো তোহ্ ভাইয়া একটু পরেই যাবো তুমি যাও অফিসে ভাইয়া, রুমি একটু দেরি হবে তোহ্ তাই আর কি!!”

তখনই রুমি ফোন আসে৷ আয়ান ভ্রুকুচকে বলে,,”কে ফোন দিয়েছে লাউড স্পিকারে দে ফোন,,কুইক!!”
ইশা মনে মন বলে,,”যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।” ইশা তার ঝকঝকে ফকফকে দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে ফোনটা স্পিকারে দিয়ে দে। তখনই পাশ থেকে রুমি বলে,,,”কি রে লেইট লতিফের মা কই তুই? আসবি না নাকি?”
ইশা বলে,,”আসছি আসছি দু মিনিট”
রুমি বলে,,”শাঁকচুন্নির বাচ্চা তুই প্রতিদিন লেইট করোস আবার বলোছ পড়তে ভালো লাগে না এর থেকে তোহ্ ঢের বিয়ে করে সংসার ভালা। ভার্সিটিতে গেলে গরুর ঘাস খাওয়ায় ধ্যান লাগিয়ে রাখোস। তুই করবি টা কি?”
ইশা ফোন কাটবে কি আয়ানের চোখ রাঙানিতে দমে যায় বেচারি। রুমি আরো বলতে থাকে,,” আর তর ঐ দজ্জাল ভাইটা কি জানে না তুই এমন করোস? জানলে নিশ্চিত তোর ঐ দজ্জাল ভাই তকে পিটিয়ে তক্তা বানাতো ইশুর বাচ্চা”

আয়ান রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,,”মা স্ট্রিক টা দাও তোহ্ আজকে যদি তোমার মেয়ে পা না ভেঙেছি।”
ইশা তো ফোন কেটে দৌড়। আয়ান দৌড়াচ্ছে ইশা পিছনে আর বলছে,,”দাঁড়া ইশুর বাচ্চা আমি দজ্জাল তাই না আজকে তর একদিন কি আমার একদিন৷ দাঁড়া বলছি তর বিচ্ছুগিরি আজকে বের করব।”
“ভাইয়া মোর জানের প্রাণের ভাই আমি না রুমি বলেছে দয়া করো ভাই।”
ইশা দৌঁড়ে বাইরে যাবে তখনই ইযান বাসায় এসে পৌঁছায়। ইযানের সাথে ধাক্কা লেগে বেচারী ফ্লোরে পরে যায়৷ আয়ানও তখন ইশার কান ধরে টেনে তুলে বলে,,”এবার পালাবি কীভবে বিচ্ছুরানী?”
ইশা তখন কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,,”ইযান ভাইয়াাাাাা”

ইযান বলে,,”ভাইয়া কি হয়েছে কানে ধরেছো কেন?ছাড়ো বলছি আমার বোনকে ছাড়ো?”
“ইযান তুই চুপ কর নয়ত তর কান ধরতেও সময় লাগবে না।” ইযান দমে যায় আয়ানকে সবাই বেশ ভয় পায়। আয়ান বলে,,,”বিচ্ছুরাণী আজকে বল তর কোন পা ভাঙবো?”
“ভাইয়া ছেড়ে দাও আজকের মতো। আমি ইশারা চৌধুরী ইশা আজকে আয়ান চৌধুরীকে কথা দিচ্ছি আমি ভালো হয়ে যাব৷ একদম পাক্কা গড প্রমিসের প্রমিস।”
এটা শুনে ইযান হাসে হাসতে বলে,,”এটা পুরান ডায়লগ বিল্লুরাণী নতুন কিছু দে”।
ইশা কটমট করে তাকায় ইযানের দিকে। ইযান দমে গিয়ে বলে,,”ভাইয়া ছেড়ে দাও বেচারী বাচ্চা ভালো হয়ে যাবে। ”

আয়ান ইশাকে ছেড়ে বলে,,”এটাই শেষ আর তোর বান্ধবীকে বলবি আমি কোনো দজ্জাল না মানুষ আমি”।
ইশা মাথা নাড়িয়ে বলে,,”জ্বি ভাইজান”।
তারপর একদৌঁড় আর পায় কে ইশাকে। এতক্ষণের কান্ডে সবাই হাসছে। ইযানও আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে,,”ভাইয়া কেমন আছো?”
দুভাই মিলে টুকটাক গল্প করা শুরু করে।

রাতে খাবার টেবিলে আজকের সবার উপস্থিত। ইশু ইযানকে ঠেলেঠুলে পাশের চেয়ারে বসিয়ে ইয়াসিরের পাশে বসে পড়ে। ইয়াসির সেই যে ফোন নিয়ে আশেপাশে যে এতগুলো মানুষ কি করছে না করছে বান্দার হুশ নেই। ইশা তখন বলে,,”ইয়াসির ভাইয়া শুনো?”
ইয়াসির ফোনে চোখ রেখেই বলে “বল।”

ইশা একটু ঘুরে বলে,,,,”আমার বান্ধবীর চাচার ছেলের মেয়ের একটা মেয়ে আছে। অনেক সুন্দরী সুশীল তোমার থেকে মিনিমাম গুনে গুনে দশ বারোর মতো ছোট হবে৷ একটু বেশি কথা বলে। ওর চুল হালকা লাল আর মিডিয়াম সাইজ পাতলাও একটু। আর লম্বায় তোমার বুক পর্যন্ত হবে। আর আর,,,,,”
ইশাকে থামিয়ে ইয়াসির বলে,,”হয়েছে থাম ইশা। এত বড় বায়োডাটা মাথায় জায়গা নিচ্ছেন না। আর এরকম বাউন্ডেলে মেয়েও আমার পছন্দ না।”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১

বলাবাহুল্য সবাই ইশাকে ইশু বললেও ইয়াসির সোজা ইশাই বলে। ইশা তখন ইয়াসির কানের কাছে গিয়ে বলে,,”ইয়াসির ভাইয়া তাহলে তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ?”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৩