রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৬

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৬
আশু

সন্ধ্যাবেলা ছাদের চত্তরে গল্পের আসরে সবাই বসেছে। শুক্রবার হওয়ার দরুন আজকে সবাই ফ্রি। ইশা ইয়াসির পাশ ঘেষে মুখে পপকন দিচ্ছে আর বকবক করছে। ইয়াসির ফোনের ভেতর ডুকে আছে। এখানে মা,চাচী আর বউয়ের জোরাজুরিতে বসে আছে সে। আয়ান তোহ্ আগেই পালিয়েছে। এসব মহিলামিত্রদের সাথে সে জীবনেও থাকবে না। সোহানা বেগম সবার কথার মাঝে বলে উঠেন,,,”এবার আয়ানের একটা ব্যবস্থা করো।”

ইশা বলে,,,,”রুমি আছে না?ওকে কেমন লাগে তোমাদের?”
সবাই এক এক করে বলে,,”বেশ ভালো মেয়ে,সুন্দরীও বেশ আয়ানের সাথে মানাবে। ”
ইয়াসির ঠেস মেরে বলে,,,”তোমাদের মেঝো ছেলে থুরি বিয়ে করবে সে তোহ্ মেয়ে দেখলেই পালায়”।
সোহানা বেগম পান চিবোতে চিবোতে বলে,,,,”বাড়ির কোনো ছেলে কি আর সেধে বিয়ে করবে নাকি। তোর আর ইশার মতো আয়ানকেও,, ”
ইশা বলে,,”আমি একমত বুড়ি”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইয়াসির ইশার মাথা গাট্টা মেরে বলে,,তুই কথা বলিস না ইশা বউ। কাজের মাঝখানে সুযোগ বুঝে কেটে পড়বি, পরে আমি আর আমার প্রাণে দাদীজান পড়মো ধরা।
ইশা বলে,,”মোটেও আমি এমন না। একটা প্লান করেছিলাম যাও বলবো না।”
এবার ইয়াসির মুচড় মেরে বলে,,”প্লানটা বল ইশা বউ তোর প্লানে আমার বিশ্বাস আছে।”
ইশা বলে,,, “না না তোমাদের দিয়ে হবে না। ”
“আরে বল তো ইশা বউ।”
ইশা এক এক করে সব বলতে লাগে। তারপর ইশার দাদী বলে,,,,”চমৎকার বুদ্ধি দিলি তোহ্। কালকে থেকেই কাজ শুরু।”

“দাদী আমার জামাই আমি দিমু না, তুমি তোমার ছোট নাতীরে আনো তারও পরীক্ষা শেষ কালকে। আমার জামাইরে আমি মরলেও এই নাটকে জয়েন করবার দিমু না।”
ইয়াসির বলে,,,,”আমার শখ ও নাই ইশা বউ”।
ইশা ইয়াসিরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,,,,”শখ থাকলেও মাটি চাপা মেরে দাও জামাই তুমি অনলি ইশারা চৌধুরী ইশার। ”
ইয়াসির মাথ নাড়িয়ে বলে,,”হ হ। ”

দুপুরবেলা খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। হুট করে ইশা বলে,,,,”আমার বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়েই গেলো। আমরা সবাই কিন্তু যাবো। কেউ বাহানা দিও না। ”
বাড়ির সবাই বলে উঠে,,”কেন যাবো না?পুরো পরিবার এসে দাওয়াত দিয়ে গেলো। অবশ্যই যাবো।”
আয়ান ভ্রুকুচকে ইশার পাণে তাকিয়ে বলে,,”কার বিয়ে ইশু??”
ইশা উৎফুল্লে বলে,,,,”কার আবার আমার বান্ধবীকে চিনো না? রুমির বিয়ে রুমির”
আয়ান চেচিয়ে বলে,,”কিহহহ্!!!”
সবাই মিটিমিটি হাসছিলো আয়ানের হাফভাব দেখে। ইয়াসির বলে,,”তোর কি হলো?”
আয়ান বলে,,,,”আমি ভাবছি এই বাচাল মেয়েটা কোন নিষ্পাপের জীবনে যাচ্ছে। যাইহোক ভালো সংসবাদ পেয়ে একটু টাসকি খেলাম এই আরকি।”
বাড়ির সবাই আবার থমথমে হয়ে গেলো,,,”কি ভেবেছে তারা আর কি হলো।”

“তুই মন থেকে বল তোহ্ আয়ান ভইয়াকে তুই পছন্দ করিস না?”
“ইশু কিন্তু,,,,, ”
“কি কিন্তু তুই বল???”
“করি বাট বিয়ের জন্য,,,, ”
“করিস যখন বিয়েতে কি সমস্যা??”
“আরেহ তোর ভাই না মানুষ না আস্ত একটা জল্লাদ কি ধমক মারে!!!”

“চুপ কর তোহ্, বিয়ে হলে দেখবি বউপাগল হয়ে যাবে। আমারও মনে হয় আয়ান ভাই তোকে পছন্দ করে।”
“থাম ইশু সে করবে পছন্দ তাও আমাকে অন্যকিছু বল”
“যা বললাম তাই প্লিজ রাজি হয়ে যা বইন তোরে অনেক সুখে রাখবো আমার ভাই। আমারে বিশ্বাস করোস না তুই?”
রুমি মিনমিন করে বলে,,”ঠিকআছে যাহ্”
ইশা লাফাতে লাফাতে রুমিকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,”উম্মাহ বান্ধবী আই লাভ ইউ ভাবীজান।”
রুমি বলে,,,,,”কিহহ বললি??”
ইশা রুমির গাল টেনে বলে,,”ভাবীজান ভাবীজান”
রুমি লজ্জায় বলে,,”যাহ্ চুপ কর'”
ইশা রুমিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,,”থাক থাক লজ্জা পেতে হবে না ভাবীজান”

“নাহ্ ভাইয়া এটা একটু কেমন জানি আমি পারবো না”
“আরে দূর শুধু প্রশংসা করবি একটু । ”
“নিজের হবু ভাবীর সাথে তোমরা আমাকেই পেলে?”
“আরে দূর আয়ান বেটাকে জব্দ না করলে ভাবী পাবি কি করে?”
“কিন্তু,, ”
“আরে ভাইয়া তুমি কিসের ডক্টর বলে তো এতটুকু সাহস নেই!!”
“ইশু তুই চুপ কর”।

“আহ্ আমার ইশা বউকে ধমকাবি না।”
“বাহ্ বাহ্ বউ দেখি কলিজা হয়ে গিয়েছে!!”
ইয়াসির ইশাকে নিজরে বাহুতে টেনে বলে,, “তা আর বলতে কত সুন্দরী বউ আমার ইশা বউ।”
ইযান বলে,,,,”প্লিজ তোমাদের রোমান্স তোমাদের রুমেই করো ছিহ্”
ইশা আর ইয়াসির হা করে ইযানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। ছোট ভাইয়ের থেকে লজ্জা পেয়ে বেচারা ইয়াসির ইশাকে রেখে বেরিয়ে যায়। ইশা ভ্যাবলাকান্তের মতো বলে,,,,,”এটা রোমান্স!!”
সকাল সকাল রুমি এসেছে। রুমিকে দেখেই ইযান বলে,,”কেমন আছো মিস.”
রুমি বলে,,”এই তোহ্ ভাইয়া,আপনি”?

ইযান ফ্যাসাদে পরে বলে,,,,”তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেলাম,তুমি বেশ মিষ্টি মেয়ে।”
বাড়ির বড়’রা না থাকায় এতটুকু অনেক কষ্টে ইযান বলে। ইযানের কথা শুনের আয়ানের কাশি উঠে যায়।
যা দেখে ইয়াসির ইশাকে চোখ টিপ মেরে দুজন মুচকি হাসে।
ইশা বলে,,,,”ভাইয়া সামনে আমার এই বান্ধবীরই বিয়ে”
ইযান বলে,,”তোহ্ কি,,একটা বিষয় জানিস তোহ্ ইশু কপালের লিখন খন্ডানো যায় না। সামনে ঝড়বৃষ্টির মোকাবেলা করতে পারলে তবে না রৌদ দেখবো। ”

আয়ান বিরক্ত বলে,,,,”ইযান এক্সাম দিয়ে তোর মাথা গেলো নাকি?কিসব বলছিস?”
ইযান বলে,,,,”কি সমস্যা ভাইয়া? তোমার অসুবিধা হচ্ছে নাকি?”
আয়ান থতমত খেয়ে বলে,,,,”আমার কি অসুবিধা আবার?”
ইশা বলে,,,,”তাহলে চলো ছাদে যায়। আমারা তিনজন গল্প করি। ”
ইযান বলে,,,,”হ্যা হ্যা চল চল”।
আয়ান সরু দৃষ্টিতে রুমিকে একবার দেখে নিয়েছে। এখন ওদের গল্পের কথা শুনে বেচারা পা শিরশির করছে।ওদের কথা শোনার জন্য।

এদিকে ইয়াসির বলে,,”চল আমরাও ছাদে যায়, এখানে আর কি করবো?”
আয়ান নিজের দাম্ভিকতা বজায় রেখে বলে,,,”না না তুই যা আমি যাবো না”
ইয়াসিরও আর জোর না করে যেতে নেয়। বেচারা আয়ান মনে মনে বলে,,আরেকবার বললেই তোহ্ রাজি হয়ে যেতাম। আয়ান বুঝতে পারে ইয়াসির আর ডাকবে না। তাই আয়ান নিজেই দৌড়ে ইয়াসিরের কাছে এসে বলে,,,,”চল যায়”।
ইয়াসির বাকা হাসে আয়ানের কান্ডে।

ছাদে বসার জন্য খুব সুন্দর একটা স্পেস রয়েছে। রুমি,ইশা আর ইযান বসে বসে মিটমিটি হাসছে,কথা বলছে। আয়ান বার বার রুমিকে দেখেছে আর ইযানকে। বেচারা কি হলো সে নিজেও জানে না। মন চাইছে শুধু ইযানকে একটা আছাড় মারতে।
ইয়াসির বলে,, “ওদিকে যাবি নাকি?তাকিয়ে আছিস কেন?”
আয়ান থতমত খেয়ে বলে,,”কই না তো!!”
ইয়াসির বলে,,,”বাই এনি চান্স তুই রুমিকে লাইক করিস?”

আয়ান তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,,,,”দূর আমি আর ঐ বাচাল মেয়ে কখনোই না,,,,,”বলে আয়ান রুমির দিকে তাকায় কি সুন্দর হাসছে মেয়েটা, এত সুন্দর কই আগে তোহ্ এমন লাগেনি। এখন ইযানের পাশে দেখে বেচারা জোরে জোরে দম ছাড়ছে। এরপর আয়ান রেগেই নিচে নেমে যায়। নিজেও বুঝতে পারছে না কি কি হচ্ছে।
আয়ান যাওয়া মাত্রই ইয়াসির চিল্লিয়ে বলে,,,,”ইশা বউ তোর ভাইয়ে মেজাজ তুঙ্গে,এবার কাজ হয়েছে ফাটাফাটি”
ইশা লাফাতে লাফাতে ইয়াসির কাছে গিয়ে বলে,,,,”তা আর বলতে। ”
এদিকে ইযান বলে,,”ভাবী তুমি আমার বোন,তুমি রাগ কইরো না কিন্তু আমি পড়েছি ফান্দে এখন কান্দি কষ্টে”।
রুমি হেসে বলে,,”আমি জানি ভাইয়া।”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৫

আয়ান রুমে এসে শাওয়ারে জন্য চলে যায়। তার মেজাজ এমনিতেই গরম থাকে। তার উপর দুদিন যাবৎ তার অবস্থা আরও বেগতিক বার বার কানে ভাসছে রুমির বিয়ে রুমির বিয়ে। আয়ান মনে মনে বলে,,,
“মেয়েটার বিয়ে করতে হবে কেন?
বেয়াদব মেয়ে, কেন বিয়ে করবে?”

রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৭