রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৭
আশু
সপ্তাহখানেক পেরিয়ে যায়। সবাই নানাভাবে চেষ্টা করেও আয়ানের ভাবগতি ধরতে ব্যর্থ। সবাই এতটুকু বুঝেছে আয়ান রুমিকে পছন্দ করলেও মুখ ফুটে বলবে না।
এদিকে ইয়াসির এ ক’দিনে নিজের বাবার সাথে বিজনেসে বসেছে। ইয়াসির টেবিলে বসে বসে কিছু কাগজপত্র মনযোগ দিয়ে দেখছিল আর সাইন করছিল। তখনি ইশা লাফাতে লাফাতে ইয়াসির গলায় হাত ঝুলিয়ে বলে,,,,”জানেমান কি করো?”
ইয়াসির বলে,,,,”কাজ করছি এখন সর,পরে আসিস। ”
ইশা তোহ্ যাওয়ার পাত্রী না। ইশা বলে,,,”এসব রাখো, বউ আগে তারপর কাজ , জানোই তোহ্ কাজ হারালে কাজ পাবে কিন্তু বউ হারালে,,,,,”
ইশার কথার মাঝেই ইয়াসির বলে,,”আরো বউ পাবো আমি জানি,তবে আমার আর লাগবে না। ”
ইয়াসিরের কথা শুনে ইশার মাথা যায় গরম হয়ে।
ইয়াসিরের গলা চেপে ধরে ইশা বলে,,”খুব শখ না বউয়ের, থাকো বউ ছাড়া এই আমি গেলাম। ”
ইয়াসির কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না এমনিতেই রেগে আছে এখন কি না কি বলবে একদম ছিটকে উঠবে। তবুও একটু সাহস নিয়ে ইয়াসির মিনমিন করে বলে,,,,”এই বয়সে এসে বউয়ের অত্যাচার আর সইতে পারি না মাবুদ। কই বাচ্চা কাচ্চার ঝামেলায় দিন পার করবো তা না কপালে তুমি বাচ্চা বউ জুটিয়ে দিলে হায়!! পোড়া কপাল আমার।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়াসিরের কথায় ইশা মুখ ভেঙিয়ে চলে যায়। ইয়াসির একবার জোরে ঢেকে উঠে,,”ইশাাা বউ আমাররর”
তখনই রুমে আয়ান আসতে আসতে বলে,,”তোর বউ চলে গিয়েছে ভাই। ”
ইয়াসির দম ছেড়ে বলে,,”হঠাৎ শালাবাবুর আগমন যে”
আয়ান বলে,,,,”সিরিয়াস কিছু বলতে এসেছি”
ইয়াসির ঘুরে তাকায় আয়ানের দিকে তারপর বলে,,”জ্বি বলুন শালাবাবু, তবে দয়া করে আপনারা ভাই-বোন মিলে মধুর কথা বলবেন এতো তেঁতো আমি সইতে পারি না”।
আয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,,,”আমার কি বিয়ে করা উচিত?”
ইয়াসির কাশতে কাশতে বলে,,”কিহহহ্!!!”
আয়ান বলে,,, “তেমন কিছু না নিজের কাজ কর আসি”
“আয়ান শোন,,”
আয়ান আর কথা না বলে বেরিয়ে যায়। ইয়াসিরের মাথার উপর দিয়ে সব গেলো। না বউকে না শালাকে কাউকে বোঝার উপায় নেই। সব একজাতের মাঝখানে বেচারা এক সাইনবোর্ড।
রাতেরবেলা ইশা বিছানার একপাশে শুয়ে রয়েছে। ইয়াসিরকে বলে দিয়েছে, টার্চ করলে হাত কেটে নিবে।
ইয়াসির একবার দুবার ট্রাই করলেও তার পেত্নীমার্কা বউ এখন মাঝখানে তার সতীন হিসেবে কোলবালিশ রেখে দিয়েছে।
ইয়াসির ওপাশ ফিরে বলতে লাগে,,,,
“মরুভূমির মতো হয়ে আছে বুকটা ”
“কারো চোখ পড়ে না এ হাহাকার টা?”
ইশাও বিরক্ত হয়ে বলে,,,,
“মরুভূমিতে বৃষ্টি নামে না”,
“একথা কি জানে না বুকটা?”
ইয়াসির দাঁত কেলিয়ে ঘুরে বলে,,,
“পাশে সুন্দরী রমনী বউ, ”
“মনটা কেমন করছে বউ বউ”
ইশা ও বলে উঠে,,,,
“মনের মাঝে লাগাও বেড়া”
“নয়ত মেরে দিবো তারকাটা”
ইশার সাথে না পেরে ইয়াসির হাফ ছেড়ে বলে,,,
“দূর ছাই কপাল মোর,”
” এ জীবন আর রাখিবো না মুই”
ইশা হাসতে হাসতে বলে,,
“সামনেই আছে তুরাগ নদী,”
” গিয়ে ঝাপ মারো দেখি।”
ইয়াসির এবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”মরতে বলছিস”?
ইশা ভেঙিয়ে বলে,,,”না না স্বামীর চাওয়াকে মর্যাদা সহিত বরণ করে সাহায্য করছি”।
“আহ্হা স্বামী ভক্ত বউয়ের চাঁদমুখখানে দর্শন না করলে মরেই যাবে দেখি দেখি।”
ইশা উঠে বসে বলে,,”চুপচাপ ঘুমাও তোহ্”।
ইয়াসিরও এবার উঠে কোলবালিশটা ফেলে ইশাকে টেনে নিয়ে বলে,,”ঘুমাবো একদম জ্বালাবি না নয়ত জ্যান্ত পুঁতে ফেলবো ইশা বউ।”
ইশা কিছু বলার জন্য নিজের মাথা তুলতেই। ইয়াসির চট করে ইশার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। বেচারী নড়াচড়া করেও লাভ হয় না। মিনিটবাদ ইশাকে ছেড়ে ইয়াসির গুণগুণ করে বলে,,
“তোমাকে ছাড়া এ আকাশ সাজে না
সহজে তো বাঁশি বাজে না,
চলনা আজ এ রূপকথা
তোমাকে শোনাই ”
সকাল সকাল সবাই তড়িঘড়ি করে রেডি হচ্ছে। বাড়ির সবার হালচাল আয়ান এককোণায় বসে দেখছে। আয়ান কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে,,,কি হয়েছে?মেহমান আসবে নাকি কোথাও যাবে?”
আয়ানকে কেউ পাত্তাও দেয়নি। এদিকে বাড়ির সবার গেটআপ একদম বিয়ের বাড়ির জন্য। সবার তোরজোর শেষ হলে,,সবাই দাঁড়ায় আয়ানের সামনে। আয়ান হকচকিয়ে সবার দিকে তাকালে,,ইশা বলে,,”তৈরি হয়ে এসো ভাইয়া তোমার রুমে যে ড্রেসটা আছে আমি চয়েস করে কিনেছি তুমি না পড়লে খারাপ হবে কিন্তু। ”
আয়ান বলে,,”সব ঠিকআছে,কিন্তু যাবো টা কই??”
ইয়াসির বলে,,”আগে রেডি হয়ে আয় তারপর বলবো!!”
আয়ান নিজের মাথা চুলকাতে চুলকাতে উপরে যেতে যেতে দুএকপলক পিছনে ফেরে বাড়ির সবার হাফভাব বুঝার ট্রাই করছে। কিন্ত নাহ্ কিছুতেই তার মাথায় কিছু আসছে না। সবাই বেশ হাসি খুশি।
এদিকে ইয়াসির হাতে হাত রেখে ইশা দাঁড়িয়ে বলছে,,”বাহ্ বাহ্ আমার জামাইকে তোহ্ যা লাগছে না পুরাই মাখন মাখন”
ইয়াসির ভ্রুকুচকে বলে,,”এসব আবার কি,,সারাজীবন হ্যান্ডসামসহ কতকিছু শুনে আসলাম। এখন বউ মাখন মাখন করছে”
“আরে জামাই এটা আমার পেয়ারের ডাক বুঝেছো।”
সবার কথার মাঝেই আয়ান নেমে আসে পড়নে কালো সুট বুট একটু জামাই জামাই ভাব। আয়ান এবার সবার দিকে তাকিয়ে বলে,,”এবার বলো কোথায় যাচ্ছি?”
সবাই বলে উঠে,,”রুমির বিয়েতে যাচ্ছি। ”
এটা শুনে আয়ানের হাত আপনাআপনি নিজের বুকে চলে আসে। আয়ান বলে,,”আমি না গেলে হয় না?”
ইয়াসির আয়ানের কাঁধে হাত বলে,,”আরে শালাবাবু তুমিই তোহ্ মেইনক্যারেক্টার,,আমি হলাম আজকের চিকেন সাইড।”
আয়ান বলে,,”কিসব বলছিস?আমার মুড নেই আমাকে ছাড়!!”
সবাই বলে,,”না না কোনে ছাড়াছাড়ি নেই চলো চলো”
সবার জোরাজুরিতে আয়ান চলে আসে।
এদিকে রুমিকে আয়ানের সাথে ম্যাচিং একটা লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। আর একটা সুন্দর লুক দেওয়া হয়েছে। সবাই একে একে রুমির সাথে দেখা করে যাওয়ার পর আয়ানও আসে। আয়ান থমকে যায় সামনে দাঁড়িয়ে তার অজানা কাছের কেউ। আয়ান আস্তে আস্তে বলে,,”তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। ”
আয়ানের কথায় রুমি লাজুক হাসে। যা আয়ানের নজরেও পড়ে। আয়ান সব ফেলে বলে,,”তা সেই ভাগ্যবান টা কে যে তোমার মতো বাচালরাণীকে বিয়ে করছে?”
রুমি ঘুরে বলে,,”আছে একজন। ”
আয়ান স্মিথ দম ছাড়ে তার আর সহ্য হচ্ছে না। আয়ান বেরিয়ে যেতে নিলে রুমি বলে,,”আয়ান ভাইয়া শুনুন”
আয়ান থমকে দাঁড়ায় তবে পেছনে ফিরে না। রুমি বলে উঠে,,”আমি আপনাকে ভালোবাসি আয়ান ভাইয়া ”
আয়ান চমকে উঠে পিছনে ঘুরে। রুমি মুখে হাসি বিদ্যমান তবে নাজুক। আয়ান বলে,,”খানিকবাদে তোমার বিয়ে রুমি”
রুমি আয়ানের দিকে একপা এগিয়ে বলে,,”আপনি কি আমাকে পছন্দ করেন না?”
আয়ান নিরব হয়ে যায় তারপর বলে,,”নাহ্ আমি করি না,,আমি তোমাকে,,,,”
আয়ানের কথার মাঝেই রুমি বলে,,”কিন্তু আমি তোহ্ করি”
আয়ান বলে,,”সময় নেই এসব ভুলে যাও”
“সময় আছে। আমাকে রেখে দিবেন প্লিজ?”
রুমির অনুনয়ও যেন আয়ানের মন গলল না। আয়ান বলে উঠে,,”আমি ভালো মানুষ না তুমি আমাকে যা দেখো আমি তেমন না।”
“আপনি যেমনই হোন শুধু আমার হোন আয়ান ভাইয়া আমি সবটা দিয়ে আগলে রাখতে জানি”
“তুমি মেয়ে বড্ড বোকা, আসল নকল চিনতে বড্ড কাঁচা ”
“আসল নকল দিয়ে কি হবে যদি তাতে মায়াই না থাকে”
“তুমি সত্যি বাচাল মেয়ে। নিজের ভালো কে না বুঝে?”
“আমি সেই ভালো চাই না যেখানে আপনিময় আয়ান না থাকবে”
“তুমি যদি আমাকে সত্যি চাইতে তবে কি এদিন দেখতে হতো??”
রুমি কিঞ্চিৎ হাসে তারপর থেমে জোরেই হেসে বলে,,”আমার হবেন আপনি?”
আয়ান বলে,,”সম্ভব না”
রুমি না থেমে আবারও বলে,,”বিয়ে করবেন আমায়?”
আয়ান ঘুরে বলে,,”সময় নেই”
আয়ান বেরিয়ে যাওয়ার আগেই। ইশাসহ সবাই রুমে এসে বলে,,,,”কাজী আসছে।”
আয়ানকে ইয়াসির চেপে ধরে বলে,,”রুমি সিস্টার সরি,আমার শালাবাবু বড্ড ঘাড়ত্যাড়া আজকে থেকে ওর দায়িত্ব কিন্তু তোমার। একটু ঘাড়টা সোজা করে দিও তোহ্”
আয়ান হতবাক হয়ে বলে,,”কি হচ্ছে এসব??”
ইশা বলে,,”কিছুই হয়নি ভাইয়া তবে এখন হবে”
আয়ান তড়িঘড়ি করে বলে,,”আমার যেতে হবে”
ইযান এসে বলে,,”ভাবী না নিয়ে যাবো কি করে,,বিয়ে করো তোহ্ ভাবীসহ ফিরবো ”
আয়ান এবার আন্দাজ যা করার করে ফেলে তারপর ইশার কান ধরে বলে,,”নিশ্চিত ইশুর পাকনামি সব।”
ইয়াসির আয়ানের হাত সরিয়ে বলে,,”খবরদার আমার ইশা বউকে কিছু বলবি না। একটামাত্র বউ আমার।”
সবাই হেসে ফেলে ইয়াসিরের কথায়।
খানিকবাদে আয়ান আর রুমি বিয়েও সম্পূর্ণ হয়। আয়ান বার বার রুমি দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো। তা দেখে ইয়াসির বলে,,”শালাবাবু দেখি বউকে এখনি চোখে হারাচ্ছে না জানি সামনে আরও কত কি দেখবো!!”
ইয়াসিরের কথায় আয়ান দাঁত চেপে বলে,,,”নিজের বউটাকে দেখে রাখ, অন্যের উকালতি না করে নয়ত তোর বউ হাওয়া হয়ে যাবে।
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ১৬
ইয়াসিরের খেয়াল আসে আশেপাশে ইশা নেই। ইয়াসির একলাফে দাঁড়িয়ে বলে,,,,”তাই তোহ্, আমার ছোট্ট পাখির ছানা বউটা কই গেলো, একটাই বউ আমার, ইশাা বউ, কই তুমি ইশাাা বউ””””
ইয়াসিরের পাগলামো দেখে আয়ান আর রুমি একসাথে হেসে উঠে।