রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৫
আশু
রাত এগারোটা চৌধুরী ভিলায় সবাই খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে যার যার রুমে চলে গিয়েছে। এদিকে নিজের রুম থেকে থেকে বের না হওয়ার পণ করে বসে আছে ইশা। কারণ বাইরে একবার ইয়াসিরের সামনে পড়লে তাকে যে জ্যান্ত কবর দিবে তা বুঝতে বাকি নেই।
এদিকে ইয়াসির গুণগুণ করে গান গাইতে গাইতে বাড়ির ভিতর আসছে৷ ইয়াসিরের হাতে আইসক্রিম আর কন্ঠে ছিল,,,,,,
~যে দেশে চেনা জানা মানুষ কোনো নাই
ইচ্ছে করে তোরে নিয়া যাই
যে দেশে শাসন বারণ সোনার খাঁচা নায়
ইচ্ছে করে তোরে নিয়া যাই
প্রিয়া রে জিয়া রে কথা শোনে না
হিয়া টারে কি করে বোঝাইইইইই~
ইয়াসির সোজা ইশার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে নক করে বলে,,,,”ইশাাাা আছিস?”
ইশা মাত্রই মাথাটা বালিশে রাখবে কি এক ফালে বসে পড়ে। তারপর একনাগাড়ে আয়াতুল কুরসি পড়া শুরু করে দাঁত মুখ চেপে৷ আর যত দোয়া দরুদ সব পড়তে থাকে।এদিকে ইয়াসির আবারও বলে,,”ইশা বইন তোর জন্য ভেনিলা আইসক্রিম আনছি বাহিরে আয় তোহ্”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ব্যাস ইশা সব ভুলে একলাফে দরজা খুলে বলে,,”ভাইয়া কই কই আইসক্রিম কই?”
ইয়াসির হালকা কুটিল হেসে বলে,,”এই তোহ্ দেখ”।
ইশা একঝটকায় আইসক্রিম নিয়ে খাওয়া শুরু করে বলে,,”কি টেস্ট ভাই বাসায় কাউকে বলো না প্লিজ”।
ইয়াসির মাথা চুলকে বলে,,”আরে না না কাকে বলব,খা তুই”।
হুট করে খাওয়া থামিয়ে ইশা ভ্রুকুচকে ইয়াসিরের দিকে তাকালে ইয়াসিরও ভ্রু নাচিয়ে বলে কি?
ইশা বলে,,”তোমার জামা কাপড় গুলো কি হাল করলাম কিন্তু তুমি না রেগে এত ভালো ট্রিট করছো কেন??”
ইয়াসির হেসে ইশার মাথায় হাত রেখে বলে,,”একটামাত্র বোন তার সাথে রাগ করা যায় নাকি বল?”
ইশাও আর না ভেবে মুচকি হেসে খেতে থাকে। এদিকে ইয়াসিরে পাশ থেকে ফটাফট ইশার কয়েকটা ছবি তুলে বলে,,”রুমে যা, বাইরে কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
ইশাও খুশি মনে রুমে চলে খেতে খেতে একপর্যায়ে দেখতে পায় তেলাপোকার মাথার মতো কিছু একটা, একটুপর ইশা যখন নিচু হয়ে খেয়াল করে দেখে সত্যিই তেলাপোকা। ইশা বিকট চিৎকার দিয়ে উঠে,,,
ইয়াসির ইশার চিৎকার শুনে হেসে উঠে বলে,,”বাহ্ এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। কি রাক্ষসীরে দুমিনিটেই একদম ফিনিস দিয়ে ফেলেছে।।”
সবাই ইশার রুমের সামনে নক করলে। ইশা ঘাবড়ে গিয়ে দরজা খুলে সামনে ইযানকে দেখে ইযানের হাত ধরে বলে,,”ভাইয়া তেলাপোকা আইসক্রিমে তেলাপোকা বড় তেলাপোকা ”
ইযান বলে,,”কিইইই??কোথায়?কিছু হয়নি তোহ্ তোর?”
তখনই ইয়াসির বলে,,,”ইশা তুই লুকিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিলি ডক্তর না তোকে নিষেধ করেছে???”
ইশা রেগে বলে,,”তুমি তোহ্ আইসক্রিম দিয়েছো ভাইয়া?”
ইয়াসির বলে,,”কিহ? কিসব বলছি একটা থাপ্পড় মারবো বেয়াদব মেয়ে আমার কাজ নেই তোকে আইসক্রিম দিবো?”
তখনই ইশার মা ইশার কান টেনে ধরে বলে,,”অসভ্য মেয়ে আমাকে জ্বালিয়ে মারবি নাকি?তুই আইসক্রিম আনলি কেন?দাঁত সবগুলো পড়ে যাক এই নিয়ত করেছিস নাকি?”
তখনই সোহানা বেগম বলে,,”তোমার মাইয়া খালি আমার নাতী ডারে দোষে। যেই আমার নাতী ভুল ডা ধরাইয়া দিছে ওমনি আমার নাতীর ঘাড়ে দোষ দিয়া দিছে, হতচ্ছাড়ি মাইয়া!!”
ইশা ওর মার থেকে কান ছাড়িয়ে বলে,,”খবরদার বুড়ি নাতী নাতী করবা না তোমার নাতী ধোঁয়া তুলসী পাতা নাকি?”
“হ তুলসী পাতাই। কালকার মধ্যে ওরে বিয়া দিবা মোর ফাইনাল ডিসিশন।”
ইয়াসির বলে,,”একদম আমিও সহমত আর দাদীজান চলো তো এই পেত্নীর সাথে কথা বলে তোমার প্রেসার হাই করার কোনো মানে নেই চলো চলো”
ইশা রেগে তাকিয়ে আছে। ইশার তাকানো দেখে ইয়াসির একটা চোখ টিপ মেরে মুচকি হেসে চলে যায়।
ইশা মনে মনে বলে,,”চান্দু তোমারে একবার পাই সদরঘাটের পানিতে চুবাইয়া মারমো শালা বারুদভাইয়ের বাচ্চা। ”
এরপর সবার ধমক টমক গিলে ইশা ঘুমাতে যায়।
এদিকে টানা তিনটা মাস কেটে গেছে। ইয়াসিরের বাসায় আসার আনাগোনা কমে গেছে। নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাকে পাওয়া মুশকিল।এদিকে ইশা দিনে চার পাঁচ বার ইয়াসিরকে ফোন দিলেও সে লাপাত্তা। বেচারী সারাদিনই মনটা খারাপ থাকে। শুধু ইশা না বাড়ির সবাই আজকাল চুপচাপ একঘেয়ে হয়ে পড়েছে ইয়াসিরকে ছাড়া।
রাতে খাওয়ার টেবিলে সবার খাওয়ার মাঝে আয়ান বলে উঠে,,”কালকে ইয়াসির আসবে হয়ত ভোরে।”
ইশা এটা শুনে খুশির ঠেলায় বলে উঠে,,”সত্যি ভাইয়া আসবে??”
খাওয়া মাঝে হুট করে কথা বলায় গলায় খাবার আটকে বেচারী কাশতে লাগে ইযান আর আয়ান পানি খায়িয়ে ঠিক করে।
সারারাত ছটফট করতে থাকে ইশা। ইশা এবার জানিয়েই দিবে ইয়াসিরকে এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইশা সারারাত কল্পনা করতে থাকে কীভাবে কীভাবে প্রপোজ করবে?ইয়াসির কি আদোও রাজি হবে নাকি থাপ্পড়ে আসমানে পাঠিয়ে দিবে। ভাবনার জল্পনাকল্পনা শেষ করে ভোরের দিকে বেচারী ঘুমায় আর তখনি ইয়াসির আসে। সবাই উঠে এলেও ইশা ঘুমের তোপে জানতেই পারে না ইয়াসির এসেছে। সে ঘুমেই টুইটুম্বুর।
ইয়াসির বাসায় এসে ইশাকে না দেখে বলে,,”পেত্নী টা কি ঘুমাচ্ছে নাকি?”
সোহানা বেগম বলে,,”মাইয়া মানুষ উঠতে হয় ভোরে এই মাইয়া কোনো জাতেরই না এটা নিয়া যে তোমরা কি করবা যাইহোক ইয়াসির আসছে এবার ভালা পাত্র খুঁজো তারপর বিয়া দাও।”
সবাই সোহানা বেগমের কথায় পাত্তা না দিয়ে যে যার মতো কাজে লেগে পড়ে।কারন বাড়ির একটা মেয়েকে কেউই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে ইচ্ছুক না। ইয়াসির এসেছে একটা ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ডের বিয়েতে এটেন্ড করতে নয়ত তাও তার দেখা মিলতো না৷ এইসব নিয়েই আয়ান আর ইয়াসির কথা বলছিল।
বাহিরে ইয়াসির আসায় একটু শোরগোল হচ্ছিল। ইশাও ঘুমঘুম অবস্থায় উঠে বসে দেখে ৭ টা বাজে। ইশা ঢুলুমুলু পায়ে এগিয়ে যায় আয়ানের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ইয়াসিরকে দেখে চোখমুখ ঢলতে ঢলতে বলে,,”ভাইয়া তুমি এসেছো?”
ইয়াসির আর আয়ান ইশাকে দিকে তাকায়। ইয়াসির খানিকবাদে জোরে চিল্লানি দিয়ে বলে,,”তোর বইন সত্যি পেত্নী প্রমাণ পেলি। আর এই পেত্নী খবরদার কাছে আসবি না সর যা যা শেওড়াগাছে যা।”
ইশা হকচকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে ইয়াসির কিসব বলছে। একটু পর যখন সামনের আয়নায় নিজেকে দেখে বুঝতে পারে ওর চুলের অবস্থা দেখে নিজেই একপলক ঘাবরে উঠে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। যতই হোক ক্রাশের সামনে এমন অবস্থায় থাকলে এ জন্মে আর প্রেম হবে না তার।
সকাল সকাল নাস্তার সময় ইয়াসির বলে,,,”আজকে বিকেলেই যাবো তোমরা কেউ যাবে?”
ইশা উৎসুক হয়ে বলে,,”আমি যাবো আমি যাবো”
ইয়াসির ভ্রুকুচকে বলে,,”কই যাবি?”
ইশা তোহ্ নিজেও জানে না শুধু জানে ইয়াসির সেখানে যাবে তাই সেও যাবে।ইশা মিনমিন করে বলে,,”তুমি না বললে সেখানেই তোহ্ যাবো”
ইয়াসির বলে,,”আমার বন্ধুর বিয়ে তুই যাবি কি করতে?”
ইশা উপায় না দেখে সবাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,”বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছে,, কিছুতেই কোথায় মন বসছে না তাই বললাম না নিলে যাবো না এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে?”
বলে রাগে একটা ভাব নিয়ে না খেয়েই উঠে আসে।
সবাই অবাক হলেটা কি মেয়ের এত ছটফট করা মেয়ে এরকম রাগ দেখাচ্ছে কেন??
আয়ান বলে,,,”ইয়াসির ওকে নিয়ে যা ভাই সত্যিই তোর সাথে ঝগড়া না করতে করতে একেবারে চুপ হয়ে গেছে। না খায় ঠিকমতো, না নিজের যত্ন নেয়। কি হলো কে জানে একটু বিয়েতে এটেন্ড করলে হয়ত ঠিক হবে।”
ইয়াসির হুম বলে খাওয়ায় মনোযোগ লাগায়।
বিকেল বেলা ইশার খুশি দেখে কে। হলদে রঙা শাড়ী পড়ে একদম ফিটফাট হয়ে নিচে নেমে আসে। সবাই হা করে তাকিয়ে মেয়েটা এমনিই সুন্দরী তারউপর সাজুগুজু করলে চোখ ফেরানো দায়।
ইয়াসির একপলক তাকিয়ে ঝটপট করে বলে,,”আসলেই আজকে পেত্নীর সম্পূর্ণ রুপটা নিয়েছিস যা লাগছে না। না জানি কতজন স্ট্রোক করে”।
ইশা নিজের কপালের সামনে চুল সরিয়ে স্টাইল নিয়ে বলে,,,,
“ইশু বলে কথা যার রুপের আগুনে সবাই হবে ফিদা”
ইয়াসির নাক মুখ কুঁচকে বলে,,,,
“পেত্নী বলে কথা সবাই অক্কা পাবে সোজা”
ইয়াসিরের কথায় পাত্তা না দিয়ে ইশা লক্ষ্য করে দেখে ইয়াসির সেই সাদা পাঞ্জাবিতেই আছে। সবসময়ের মতোই নজরকারা লাগে। ইশা বলে “তুমি কি তোমার গার্ড ফার্ড নিবে ভাইয়া??”
ইয়াসির বলে,,”চল তুই ঐসব তোর দেখতে হবে না। ”
ইশাও সবাইকে বাই দিয়ে ইয়াসিরের সাথে বেরিয়ে বলে,,”ভাইয়া বাইক নাও”
ইয়াসির বলে,,”তোকে নিয়ে বাইকে অসম্ভব পরে আমার বোন কম বউয়ের তর্কমা লাগবে”
ইশা বলে,,”তোহ্!!”
ইয়াসির ভ্রুকুচকে ইশার দিকে তাকাতেই
ইশা বলে,,”মানে চলো দেরি হচ্ছে। ”
বিয়ে বাড়ি যাওয়ার পর কয়েকটা মেয়ের সাথে ইশাকে ইয়াসির পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর ইয়াসিরের আর দেখা নেই ইশাও ঘুরে ঘুরে সব দেখছে। হুট করে ইশার সামনে এক ছেলে দাঁড়িয়ে বলে,,”হাই সুইট গার্ল। ”
ইশা একটু থতমত খেয়ে বলে,,”হ্যালো”
তারপর ইশা পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলে ছেলেটি নাছোড়বান্দার মতো লেগে থাকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে থাকে।
তখনি একটা মহিলা বলে,,”তোমাকে কতক্ষণ যাবৎ খুঁজছি মা এদিকে আসো”
পাশের ছেলেটি বলে,,”ফুফু ও তোমার কে হয়?”
মহিলাটি বলে,,”আর ও তোহ্ বউ তোর ভাইয়ের বউ”
ছেলেটি আর ইশা বিদুৎতের মতো ঝটকা খায় কার বউ কীসের বউ?আর কিছু বলার আগেই মহিলাটি ইশাকে টেনে নিয়ে যায়।
ইশা সামনে যেতেই ইয়াসিরকে দেখতে পায় কতগুলো ছেলের সাথে মজা করছে হাসাহাসি করছে।
ইয়াসিরকে দেখে ইশা বলে,,,,”ইসস্ কি মারাত্মক হাসি এই বেডা আমার বাচ্চার বাপ না হইলে পৃথিবীতে আসাই আমার জন্য লস হবে”
ইশার ভাবনার মাঝেই ইয়াসির ইশার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,”কোনো সমস্যা?”
ইশা দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলে। তখন আবারও সেই মহিলাটি বলে,,”এটাই তোহ্ তোমার বউ তাই না? ভারী মিষ্টি” বলে ইশার থুতনিতে হাত রেখে বলে।
ইয়াসির হালকা হাসে।
রাগে অনুরাগে তুই আমার পর্ব ৪
মহিলাটি যেতেই ইশা বলে,,”কবে বিয়ে করলে আমাকে?”
ইয়াসির ইশার কাছে একটু ক্লোজ দাঁড়িয়ে বলে,,”পাঁচ হাজার দিবো আমার বউ হবি??”