রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৪ (২)

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৪ (২)
সিমরান মিমি

টানা ঘন্টাখানেক বাথরুমে থাকার পর বের হলো স্পর্শী।হাটু ছোঁয়া লম্বা চুল গুলোকে তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে নিলো।মা টেবিলের কাছেই আনমনে খাবার বাড়ছে।ত্রস্ত পায়ে সেখানে গিয়ে বসলো।নিজের প্লেটে ভাত বেড়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
‘তরকারী দাও।’
পিপাসা নিরব। আনমনে ভাতের চামচ নাড়িয়ে যাচ্ছে গামলায়।স্পর্শী তাকালো।কপালের মাঝখানটায় সূক্ষ্ম দু তিনটা চিন্তার ভাঁজ পড়লো।কন্ঠে জোর এনে আবারো বললো,

“মা?”
আচমকাই চমকে উঠলো পিপাসা।ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো,’হ্যাঁ বল। স্পর্শী পুনরায় জোড়ালো কন্ঠে বললো,”তরকারীর বাটিটা দাও।”
এগিয়ে দিলো পিপাসা। এরপর নিজের পাতেও নিয়ে নিলো।দু-লোকমা মুখে দিয়ে মায়ের দিকে তাকালো স্পর্শী।হুট করে কেমন চুপ হয়ে গেছে সে।বললো, “কিছু কি ভাবছো তুমি?”
পিপাসা মাথা নাড়িয়ে না সূচক উত্তর দিলো।বললো,”নাহ,তেমন কিছু না।আর্শি কি পিরোজপুরে আছে?আচ্ছা,তুই গিয়ে নিয়ে আয় না।এতটা দূরে;আমি এমনিতেই জার্নি করতে পারি না।আমি তোদের জন্য রান্না করে রাখবো।ঠিক আছে।?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মাথা নাড়িয়ে হু সুচক উত্তর দিলো স্পর্শী।পরক্ষণেই বললো,
‘এইতো কিছুক্ষণ আগেই যাওয়ার জন্য চেঁচাচ্ছিলে।এখন হঠাৎ কি হলো?’
পিপাশা নিরুত্তর খেতে লাগলো।পরক্ষণেই বললো,
‘আর্শির সাথে কি একবারেও ওরা ফোনে কথা বলতেও দেয় নি?’
স্পর্শী পুনরায় দেবে গেল বিষন্নতার জোয়ারে।অস্ফুট স্বরে বললো,
“নাহ।আর কাল সকালে তো পাচ্ছিই ওকে।

আর খেল না।দ্রুত চলে গেল রুমে।ত্রস্ত পায়ে পাতলা চাদর টার নিচে শুয়ে পড়লো।ফ্যান চলছে একাধারে।সেই চলন্ত ফ্যানের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো স্পর্শী।আচ্ছা,তার কাছে তো কোনো কল রেকর্ড নেই।ওটা তো শুধু ভয় দেখানোর জন্য বলেছিলো।কিন্তু যদি ওরা কাল আর্শিকে না দেয়?তাহলে।তাহলে কি করবে সে?
মুহুর্তে ই মস্তিষ্ক বললো,’না না,ওই সেক্রেটারি ছেলেটার মুখে সে ভয় দেখেছে।নিশ্চয়ই দেবে বোনকে।’

ভেড়ানো দরজা আলতো হাতে ঠেলে খুললো পাভেল।রুমের ভেতর ঢুকতেই পুনরায় ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলো তা।এরপর ধীরপায়ে হেটে বিছানায় বসলো।পরশ আধশোয়া হয়ে কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে।পাভেল এসেছে সে টের পেয়েছে সে।কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না মোটেই।
পাভেল দীর্ঘশ্বাস ফেললো।নিচু কন্ঠে বললো,

” না জেনে শুনেই ওই বাচ্চা মেয়েটাকে তুলে আনা মোটেই উচিত হয়নি তোর।একবার ভাব গত তিন দিনে ওর পরিবার,ওর বড় বোনকে কতটা দৌড়ের উপর রেখেছিস তুই।ও তো আমাদের প্রেমার থেকেও ছোট।একবার ও কি দেখেছিস তুই ওকে?কি নিষ্পাপ চেহারা।
এবারে চোখ খুললো পরশ।সন্দেহী দৃষ্টিতে পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আমি এতো প্রশংসা শুনতে চাই নি তোর থেকে।তোর তো যে মেয়েই সামনে পড়ে;সেটাকেই নিষ্পাপ মনে হয়।এতো প্যাঁচাল বাদ দিয়ে কি বলবি সেটা বল।’
পাভেল নড়েচড়ে বসলো।এরপর দ্রুত কন্ঠে বললো,

‘ওর বড়বোনের সাথে যেসব কথা বলেছিস, সব রেকর্ড করে রেখেছে।কালকের মধ্যে বোনকে না পেলে সে ডিবি অফিসে যাবে প্রেস সাথে নিয়ে।আমি কাল সকালের মধ্যেই ওকে ছেড়ে দেবো।’
পরশ অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।পাভেল পুনরায় পাশে বসলো।উঁকি মেরে তাকাতেই দেখলো পরশের ফোনে থাকা পিয়াশের হাস্যোজ্জ্বল এক ছবি।পাভেল পাশ থেকে ফোন টা নিয়ে আলগোছে ডিলিট দিয়ে দিলো। পরশ এবারেও নিরুত্তর।হুট করে বললো,

‘হয়তো ওই ছোট্ট মেয়েটার কোনো দোষ নেই।কিন্তু ওর বোনের ছিলো।অগণিত ভুল ছিলো ওর।ও নিজেকে কি ভাবে?ওর তো সাত রাজার ভাগ্য যে আমার ভাই ওকে পছন্দ করতো।কিন্তু ও কি করলো? দিনের পর দিন পিয়াশকে মেন্টালি সিক দিলো।অপমান,অসম্মানে জর্জরিত করে দিলো।আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট শিউর, ওর কারনেই পিয়াশ নেশা ধরেছে।নইলে এই বাজে বন্ধুদের সাথে পরিচয় হতো না।ওই সাদা চামড়ার এত্তো দাম।ইচ্ছে করছে এসিড দিয়ে পুরো শরীর জ্বালিয়ে দেই।
পাভেল কটমট করে উঠলো।বললো,

“যত্ত দোষ,সব স্পর্শী ঘোষ।আরে নেশা করেছে তোর ভাই।সেখানে ওই মেয়েটার কি দোষ।ও বোনকে পুরো তিন দিন আটকে রাখলি।পুরো সমাজ কতটা কলঙ্ক লেপে দিবে ওই ছোট্ট শরীর টাকে তুই জানিস।ওর বড় বোনকে খুনী বানিয়ে দিলি দুদিন জেলে ঢুকিয়ে।ওই মেয়েটার ও সম্মান আছে?তুই বল।আচ্ছা আমি বুঝলাম না, তুই ওই মেয়েটাকে নিয়ে এতটা ভাবছিস কেন?খাওয়া নেই, নাওয়া নেই, ঘুম নেই তুই তো ভুলতেই পারছিস না মেয়েটাকে। সামনে তোর বিয়ে, অন্তত পুরবী কে নিয়ে ভাব।তা না করে তুই তো অন্য মেয়েদের সাথে সারাক্ষণ জড়িয়ে আছিস।কটমট করে উঠলো পরশ।পাশ থেকে চার্জার টা ছুড়ে মারলো পাভেলের গায়ে।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

” বের হ এখান থেকে।”
সারারাত নানা জল্পনা কল্পনার পর ভোরবেলায় দু-চোখ বন্ধ করেছে স্পর্শী।ফলস্বরূপ সকাল সাড়ে সাতটায় ঘুম থেকে উঠতে পেরেছে।দ্রুতচিত্তে বাথরুমে ছুটলো।ফ্রেশ হয়ে পোশাক চেঞ্জ করে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো।পার্সে কিছু টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো পিরোজপুরের উদ্দেশ্যে। এখন অবধি কোন ফোন আসেনি।তার মানে আর্শিকে ওরা দিবে না। এবারে আর বসে থাকবে না স্পর্শী।পুলিশ নিয়ে সোজা হাজির হবে এমপির বাড়ি।একজন জনপ্রতিনিধি সবার অগোচরে ঠিক কতটা জঘন্য হতে পারে সেটা বুঝিয়ে দিবে পুরো পিরোজপুর বাসি কে।ঘড়ির কাঁটায় মাত্র আট টা বাইশ।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস এসে পড়বে।

সকাল সাড়ে আটটা।কফি বর্ণের এক বিলাসবহুল গাড়ি এসে থামলো রেডিও কলোনীর পেসিফিক গার্মেন্টস কোম্পানির সামনে।ড্রাইভারকে গাড়িতে রেখে বের হয়ে গেল পাভেল।দরজা খুলে আলতো হাতে ধরে বের করলো আর্শিকে।আলতো হেসে বললো,
এখানে?
উৎফুল্ল আর্শির চোকমুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো।অস্থির হয়ে বললো,

‘হ্যাঁ,হ্যাঁ। এটাই রেডিও কলোনী।এরপর ওই গলিতে রিকশা ধরে সোসাইটি গেট যেতে হবে।তারপর ওখানেই আমাদের বাসা।আপনি আমার সাথে চলুন না,পাভেল ভাই।বিকালে না হয় ফিরলেন।
হেসে দিলো পাভেল।বললো
হ্যাঁ, হ্যাঁ। তোমাদের বাড়িতে যাই।তারপর তোমার বড় বোন আমায় কচু বাটা দিয়ে আপ্যায়ন করুক।মারা পড়বো নাকি আমি।শেষে ভাইয়ের উপর সমস্ত রাগ আমার উপর ঢেলে দিক।কোনোমতে কারো হাতে তুলে দিয়ে কেটে পড়তে পারলেই আমি বাঁচি।
হেসে দিলো আর্শি।বললো,

“আমার আপু ভীষণ ভালো।কিন্তু একটু বেশীই রাগী।আর মুখের আগে হাত চলে।এই জন্য অনেকেই ওকে ভয় পায়।আমাদের কলোনীর বেশিরভাগ উঠতি বয়সের ছেলে পেলেরা ওকে ‘লেডি গুন্ডা’বলে।কিন্তু আপু এসব জানে না।ও বেশীই ব্যস্ত থাকে সবসময়।তবে আমার আপু ভীষণ সুন্দরী।ওর চুল গুলো একদম মেঘের মতো।অনেক লম্বায়ায়া।কিন্তু ও একটুও যত্ন নেয় না।সবসময় মাথার উপর একটা পাগলা বয়াতির মতো খোপা করে রাখে।”
পাভেল ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললো-

এই থামো থামো।এতো প্রশংসা করো না তোমার আপুর নামে।শেষে দেখা গেল প্রেমে পড়ে গেলাম।
মুহুর্তে’ই আকাশের ঘন কালো মেঘ হানা দিলো আর্শির মুখজুড়ে।কথা বলাটা যেন থেমে গেল আপনা আপনিই।গাল ফুলিয়ে অস্ফুটস্বরে বললো,
“আপনি কেন আপুর প্রেমে পড়বেন, পাভেল ভাই?”
পাভেল হাসলো।এই মুহুর্তে তারা ওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছে।জিজ্ঞেস স্বরুপ বললো,
‘কেন প্রেমে পড়তে পারি না?”
আর্শির রাগ হলো।ভীষণ রাগ হলো।কেন আপুর প্রেমে পড়বে পাভেল ভাই।কেন তার প্রেমে পড়বে না।নাকের পাটাতন ফুলিয়ে রেগে বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৪

“আপু প্রেম করবে না।আর ওর বিয়ে হয়ে গেছে অলরেডি।এইচএসসি’র পরেই বিয়ে দিয়েছিলো মা।কিন্তু বেশিদিন টেকে নি।তিন মাসের মাথায়’ই ডিভোর্স হয়ে গেছে ওর।সেই থেকে ও কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারে না।জানেন,ও দুলাভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলো ফুলদানি ছুঁড়ে।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৫