রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৯

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৯
সিমরান মিমি

বাকহারা হয়ে গেলো স্পর্শী।কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় এমনিতেই মেজাজ তুঙ্গে।তার উপর এই লোক তাকে আধপাগল মহিলা বলেছে।আর সে ফোন দেয় নি মানে কি?স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলো ” আউটগোয়িং” লেখা।মাথা ফাঁকা হয়ে গেল। তার ফোন থেকে কল গিয়েছে তাও এই সন্ত্রাস এমপির কাছে।ভাবতেই লজ্জায় ফোন ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে।সে তো ফোন দেয় নি।তাহলে?হয়তো কোনোভাবে টাচ লেগে ফোন চলে গেছে।
পরক্ষণেই মনকে বোঝালো যেতেই পারে।ভুল মানুষের’ই হয়।কিন্তু তাই বলে এই লোক তাকে মহিলা বলবে।দাঁতে দাঁত চেপে পরশের উদ্দেশ্যে বললো,

“ছিহঃ!ব্যাবহারের কি ছিরি।এই আপনার মতো একটা গুন্ডা, সন্ত্রাস,ঝগড়াটে,ক্রিমিনাল লোককে এমপি বানালো কে?আমার তো মনে হয় না জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জিতেছেন।নিশ্চয়’ই জাল ভোট দিয়েছেন নিজের সাঙ্গু পাঙ্গু দিয়ে।এই আপনার কি মনে হয়?আমি ইচ্ছে করে এই রাত দেড়টার সময় আপনাকে ফোন দিয়েছি। আপনাদের ক-ভাই এর মতো কি আমার চরিত্র ও লুজ মনে হয়?হাতে টাচ লেগে ভুল করে কল চলে গেছে।যেতেই পারে।এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।তাই বলে আপনি আমাকে মহিলা বলবেন।সিরিয়াসলি?নিজেকে কি কচি মনে হয় ঢ্যাঁমড়া বুড়ো।দেখতে তো আমার দাদুর থেকেও বড় মনে হয়।লম্বা লম্বা চুল দাঁড়িতে তো আদিমকালের সন্ন্যাসী মনে হয়। ভাগ্যিস আমার কথায় দাঁড়িটা ছোট করছিলেন না হলে তো কেউ চিনতেই পারতো না।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কান গরম হয়ে গেছে পরশের।আজ এমপি না হলে সে বুঝিয়ে দিতো এই পরশ শিকদার কি?নিজেকে খুব কড়াভাবে সামলালো।মুখ দিয়ে অজস্র অশ্রাব্য গালি বের হতে চাইছে। বললেই এই মেয়ে যে-কোনো সময় সেটা রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়ে তার ইমেজ নষ্ট করতে পারে ভেবেই নিজেকে খুব কষ্ট করে সামলালো।বললো,
” তুমি কি জানো,তোমার মতো টক্সিক ক্যারেক্টারের মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধে।”
ক্ষেপে উঠলো স্পর্শী।চেঁচিয়ে বললো,

“ওহ হো,সে আর বলতে।ফোন ঢোকার সাথে সাথেই তো রিসিভড করে কথা বলতে শুরু করেছেন।আমি না হয় ভুল করে ফোন টা দিয়েছি।আপনি কেন রিসিভড করলেন পবিত্র চরিত্রের মহামানব(ব্যাঙ্গ করে)।
রাগে পুরো শরীর কাঁপছে পরশের।কাঁপা হাতে ফোন টা কেটে দিয়েই পাশের টি টেবিল টা ধরে ছুঁড়ে মারলো দরজার উপর।এই মেয়েকে যত’ই ভুলে থাকতে চাইছে ঠিক ততটাই জড়িয়ে যাচ্ছে।কত বড় সাহস এর।একি জানে পরশ শিকদার কি?কতটা ভয়ানক হতে পারে সে।নাহ, একে তো পায়ের তলায় পিষে মারবে পরশ।খুব কাছ থেকে এনে ছুঁড়ে ফেলবে ওই পায়ের কাছেই।কিন্তু তাড়াহুড়ো নয়।এইটুকু একটা মেয়ের কারনে তার সদ্য প্রজ্জ্বলিত ক্যারিয়ার’টা নিভিয়ে ফেলবে না কখনোই।কিন্তু কি করে গায়ে মাখবে এই অপমান গুলো।রাগ তড়তড় করে বাড়ছে তার।পাশের রুমেই পাভেল।চিৎকার করে ডাকলো তাকে।সদ্য ঘুমাতে যাওয়া পাভেল হতবাক।ছুটে এলো ভাইয়ের দরজায়।উকিঁ মারতেই তার চক্ষু চড়কগাছ। ভেতরে এতক্ষণ তান্ডব চলছিলো।কিন্তু কারন কি হতে পারে?
পাভেল দেখতেই দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো পরশের।বললো,

” ৩০ সেকেন্ডে’র মধ্যে আইস নিয়ে আয়।”
পাভেল ছুটলো রেসের গতিতে।নিচ তলায় রান্নাঘরে গিয়ে এপাশের ফ্রিজ থেকে আইস নিয়ে মুখ চেপে হাসতে হাসতে পুণরায় চললো ভাইয়ের রুমে।এই আইস ক্যাপ বাবা আসলাম শিকদার মাঝেমধ্যে ব্যাবহার করে।যেটা নিয়ে পরশ ভীষন ভাবে টিটকারি কাটে তাকে।আজ সে নিজেই এই আইস ক্যাপের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য অস্থির।
রুমে ঢুকে পরশের হাতে দিতেই সে মাথায় দিলো ক্যাপ।চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে পড়লো খাটে।যেন সে ভীষণ ক্লান্ত।ধীরে ধীরে একটু ঠান্ডা হতেই কারন জিজ্ঞেস করতেই শর্টকাট এ বললো পরশ।পাভেল সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকালো ভাইয়ের দিকে।শান্ত কন্ঠে বললো,

“ওই মেয়ের নাম্বার ব্লক কর এক্ষুণি।একটুও সুবিধার না ও।দেখে যতটা ছোট, ইনোসেন্ট মনে হয় ততটাই খারাপ সে।বিয়েও হয়েছিলো একবার।টেকেনি।মেয়ে এমন হলে টিকবেও বা কিভাবে।বেচারা স্বামীর মাথা ফাঁটিয়ে ডিভোর্স দিয়ে চলে এসেছে।”
চোখ বড় বড় করে তাকালো পরশ।মুহুর্তেই পাভেলকে বললো,
“তুই কি শিউর?”
মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে পাভেল বললো,
“ওর ছোটবোন বলছে।”

তীর্যক হাসি ফুটলো পরশের মুখে।পাভেল দেখতেই ভ্রুঁ যুগল উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে?অপমান করার পয়েন্টস পেয়ে গেলি নাকি?
পরশ হাসলো। বললো,
” ওই ফালতু মেয়ের পেছনে সেকেন্ড ব্যয় করার সময় ও পরশ শিকদারের হবে না।বাতিলের খাতায়।তুই রুম থেকে বের হ।ঘুমাবো আমি।”

অবাক হয়ে গেল পাভেল।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো,
“তুই লোকাল বাস রে ভাই,তুই লোকাল বাস।
দরকার পড়লে রুমে তুলিস ঘাড় ধইরা নামাস।”
পাভেল কে বের করে দিয়ে দরজা আটকালো পরশ।বিছানায় শুয়ে মনকে বোঝালো,
“ভুলে যা পরশ।এসব ফালতু মেয়ে বাজারের মাছির মতো সারাক্ষণ ভ্যানভ্যান করতেই থাকবে।তাই বলে তুই সেসব মন দিয়ে শুনতে যাবি কেন?এরা তোর লেভেলে নাই।ব্যাস মনোযোগ আকর্ষণের যত ধান্দা।ভুলে যা।নিজের দিকে কনসেন্ট্রেশন কর।”

দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো স্পর্শী।ওই লোক তার মুখের উপর কল কেটে দিয়েছে।এটা ভীষন অপমানের।ইচ্ছে করছে এখন আরেকবার কল দিতে।এরপর তার মুখের উপর কল কেটে দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতে।কিন্তু এটা করবে না স্পর্শী।নিজেকে মোটেও ছ্যাঁচড়া বানাতে প্রস্তুত নয় সে।মনে মনে বললো,
“কান্ট্রোল স্পর্শী কন্ট্রোল।ওইসব ছ্যাবলা লোকজন তোর এটেনশন নিতে চাইছে।তুই কখনো পাত্তা দিবি না।এসব বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ তোর বোনকে পুরো মহল্লার সামনে চরিত্রহীন প্রকাশ করেছে।তোকে কলংকিত করেছে।আর কেউ না জানলেও তুই জানিস ” শুধুমাত্র প্রতিবেশীর কথা থেকে বাঁচানোর জন্য আর্শিকে তোর সাথে পিরোজপুর আসতে দিয়েছে।যাতে ক-দিন পর সবাই ভুলে যায়।এমনকি তোর মা বাসাও ছাড়ছে সামনে মাসে।ওইসব কীট দের আশেপাশেও ঘেঁষবি না।জাস্ট ভুলে যা।চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড় এখন।”

ভোর চারটা।আর্শি তুমুল গতিতে ঘুমাচ্ছে।বারকয়েক ডেকেও লাভ হলো না স্পর্শির।বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে।সামনে যেতেই দেখলো অনেক যাত্রীরা তাদের ব্যাগ পত্র গোছাচ্ছে।জিজ্ঞেস করতেই জানালো,
“সামনেই চরখালী ফেরিগাট।লঞ্চ ভেড়াবে এখানেই।মিনিট পাঁচের মতো থামবে।তাই আগে থেকেই রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা।দ্রুতবেগে কেবিনের দিকে ছুটলো স্পর্শী।আর্শিকে ডাকতে ডাকতে সব কিছু ব্যাগে ঢোকালো।কিন্তু আর্শি এখনো ঘুম।বোনের পাশে গিয়ে হুট করেই দুহাত ধরে ঝাকিয়ে বললো,
” এই আর্শি,ওঠ।আমরা পিরোজপুর এসে গেছি।দেখ,আব্বু আমাদের নিতে আসছে।ওঠ।”
দ্রুতবেগে উঠে বসলো আর্শি।চোখ ডলতে ঢলতে আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
“কই আব্বু?”

হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেল স্পর্শী।বোনের কাধে কলেজ ব্যাগ দিয়ে জামাকাপড়ের ব্যাগ কাধে নিলো এবং সাইড ব্যাগ টা বাম হাতে।এরপর ডান হাত দিয়ে আর্শিকে ধরে নেমে এলো কেবিন তালা দিয়ে।লঞ্চের প্রবেশের দরজার সামনে এসে চাবি বুঝিয়ে দিলো লোকটিকে।হাতের টিকিট দেখিয়ে বেরিয়ে এলো ডিকিতে।মিনিট খানেকের মধ্যেই লঞ্চ থামলো।অতি সাবধানে বোনকে ধরে ভীড়ের মধ্য থেকে বাইরে বের হলো।মাটিতে পা রাখতেই প্রাণ ভরে শ্বাস নিলো কিছুক্ষণ।আহা!জন্মভূমি।স্বীয় স্থানের মাটির গন্ধ,অক্সিজেন প্রাণ ভরে নিয়ে সামনে এগোতে লাগলো।
মুহুর্তে’ই আর্শি ভয়কাতুরে কন্ঠে বললো,

“আপু,সকাল তো হয় নি। এখনো তো অন্ধকার।কোথায় যাবে এই রাতে?”
স্পর্শী চারপাশে তাকালো।এতক্ষণ ঘাটের লাইটিং এ বোঝা যাচ্ছিলো না।ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো সাড়ে চারটা।মনে সাহস এলো।বোনের হাত ধরে সামনে এগোতে এগোতে বললো,
“আর কিছুক্ষণ পরেই আজান দিবে।ভয় পাস না।”

বেশ খানিক’টা সামনে যেতেই দেখলো একটা স্কুল।সেদিকে এগিয়ে যেতেই নিরাশ হলো।মেইন গেট তালাবদ্ধ।হতাশ হয়ে অন্যদিকে তাকাতেই দেখলো পাশেই এক জামে মসজিদ।তার পাশে বিশালাকৃতির এক দিঘি।সেখানেই বৈঠক খানা সহ সিড়ি দেওয়া রয়েছে।স্পর্শীরা সেখানে বসলো।আর্শির ঘুম কাটেনি এখনো।বসার জায়গা পেতেই ব্যাগ বোনের ওপাশে রেখে শুয়ে পড়লো কোলে।স্পর্শী বাধা দিলো না।ফোন বের করে মায়ের নাম্বারে কল দিতেই ওপাশ থেকে রিসিভড হলো।স্পর্শী শান্ত কন্ঠে বললো,
“হ্যালো,মা-মিনিট পাঁচেক আগে নেমেছি ঘাটে।এখন কিছুটা দূরে আছি ফেরিঘাট থ্রক্র
ওপাশ থেকে চিন্তিত কন্ঠে পিপাসা বললো,

“এখনো তো অন্ধকার কাটেনি।তুই ঘাট থেকে কেন বাইরে আসলি।।ওখানেই বসে থাকতি আলো ফোটা না পর্যন্ত? ”
–আরে তুমি চিন্তা করো না।একটা মসজিদের এড়িয়ার ভেতরে আছি।আর আর্শি আমার কোলে ঘুমাচ্ছে।একটু পরেই আজান দিবে।এখন রাখছি।
সকাল আট’টা।জীবনের প্রথম আজ স্পর্শী প্রকৃতির ধারাবাহিকতা দেখেছে তাও নিজের চোখে,বাস্তবে।সেই নিকষ কালো অন্ধকারকে দূরে সরাতে ওই বিশালাকার আকাশে ধীরে ধীরে আলোর রশ্নিগুলোর বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে সূর্য উঠার দৃশ্য এবং পৃথিবী ঝাপসা থেকে উজ্জলতা পাওয়ার সেই মোহনীয়তা তাকে মুগ্ধ করেছে।অনেক আগেই সিঁড়ি থেকে উঠতে চেয়েছিলো।কিন্তু ঘুমন্ত বোনের মুখের দিকে তাকিয়ে তাকে আর জাগায় নি।বসে রয়েছে সেভাবেই।এমনিতেও এতো তাড়াতাড়ি উঠে কি ই বা করবে?তার তো নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই।আজ এতো বছর পর হুট করে তো আর অধিকার নিয়ে ঢোকা যায় না।
নড়েচড়ে উঠে বসলো আর্শি।আর শুয়ে থাকা যাচ্ছে না।সূর্যের কড়া রশ্নি ভীষণ ভাবে চোখে লাগছে।বোনকে নড়তে দেখে ধমক মেরে বললো,

“এই ওঠতো।বাবাহ,আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেল।কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাতে পারিস তুই।ওঠ এখন ফ্রেশ হবো।”
আর্শি উঠলো।বোনের সাথে সাথে ব্রাশ করে পুকুর থেকেই মুখ হাত ধুলো।এরপর পুণরায় শুরু হলো যাত্রা।ব্যাগ কাঁধে নিয়ে দুজনেই চললো সামনের দিকে।যেতে যেতে স্পর্শী আর্শিকে বললো,
“কি খাবি?”
চারপাশে তাকালো আর্শি।দুরেই একটা টঙ দোকানো কিছু লোক চা খাইছে।সেদিকে তাকিয়ে বললো,
“চা খাবো বনরুটি ভিজিয়ে।”
চোখ ছোট ছোট করে চাইলো স্পর্শী।বললো,
“এতো খাবার রেখে চা খেতে ইচ্ছে করছে তোর?”
মুখ গোমড়া করে ফেললো।মলিন কন্ঠে বললো,

“আমার তো তাহলে আবার ঘুম চলে আসবে।শেষে দেখা গেল আমাকে কোলে করেই তোমাকে হাটতে হবে।”
হাসলো স্পর্শী।এরপর এগিয়ে গেল টঙের দিকে।বেশ কয়েকজন চা খাচ্ছে।কিন্তু সেটা কাচের কাপে।কিছুটা বিতৃষ্ণা লাগলো।দোকান দারের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো,
“অন-টাইম কাপ নেই।প্লাষ্টিকের গুলো?
দোকানদারের হ্যাঁ সূচক উত্তর শুনে আবারো বললো,
” আমাকে দু কাপ দিন।সাথে দুটো বনরুটি দিবেন। ”

এরপর কাপ নিয়ে কিছুটা দুরের বেঞ্চিতে বসলো।চা খেতে খেতে ভাবনায় নিমজ্জিত হলো স্পর্শী।এভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কতক্ষণ হাটবে।হুট করে ও বাড়িতে কি বলে ঢুকবে?কিছুই তো চেনে না।নাহ দরকার নেই।বাবাকে দেখতে এসেছে সে।দূর থেকে দেখেই আবার চলে যাবে।দরকার নেই পুরনো কাসন্দি ঘাঁটার।এমনিতেও সামনে পনেরোদিন পর এক্সাম সিডিউল।অনেক বলে ছুটি আনিয়েছে।পিয়াশ কে নিয়ে এমন দুর্ঘটনা না ঘটলে কখনোই ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ছুটি দিতো না। এখন এই মুহুর্তে একটা থাকার হোটেল রাখতে হবে।
খাওয়া হয়ে গেছে আর্শির। দোকানদারকে টাকা দিয়ে সামনের বেঞ্চে বসা লোকটির উদ্দেশ্যে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।”

হুট করে অপরিচিত কোনো মেয়ের থেকে সালাম পেয়ে থতমত খেয়ে গেছে।আমতাআমতা করে বললো,
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
মুচকি হেসে স্পর্শী পুনরায় বললো,
“ভাইয়া এখানে কি কোনো থাকার হোটেল পাওয়া যাবে টুরিস্টদের জন্য?
দোকানের পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া তিনজন যুবকের মধ্যের জন এগিয়ে এলো।বললো,
” আপু কি বেড়াতে আসছেন?আমাদের এখানে শিকদার আবাসিক হোটেল আছে।আপনি উঠতে পারেন।অনেক ভালো সূযোগ-সুবিধা পাবেন।ক-দিনের জন্য উঠছেন?আচ্ছা,আপনি আমার সাথে আসুন।ওই তো ঐ দিকেই হোটেল টা।আট তলা ভবন।”

স্পর্শী হাসিমুখে তাদের সাথে এগিয়ে যেতেই বাধ সাধলো প্রথমের লোকটি।তেজ নিয়ে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বললো,
“এইইইইই!উনি আমার কাছে আগে কইছে।থাকলে আমগো সরদার হোটেলে থাকবো।আপা চলেন আমার সাথে।”
ছেলেটির সাথে থাকা বাকি দুজন’ ও এগিয়ে এলো।প্রথম লোকটির কলার টেনে পাশে ধাক্কা মেরে বললো,
“বেশি বাড়া বাড়বি না।ক্ষমতা আমাগো হাতে।যতদিন পাওয়ারে আমরা আছি ততদিন যত টুরিস্ট আসবো সব আমাগো হোটেলে উঠবো।”

স্পর্শী হতবাক হয়ে গেল। জোর গলায় বললো,
“এইইই,আপনারা থামুন।এমন বাচ্চাদের মতো কেন করছেন?
ছেলেটি স্পর্শীকে বললো,
” আপু আপনার জন্য ৪০% ডিসকাউন্ট।আমাগো হোটেলে আসেন।সকল সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে।ওগো হোটেল অনেক পুরনো আমলের।আমগো টা দুই বছর ও হয় নাই তুলছি।আসেন আমার সাথে।”
সাথে সাথেই পরবর্তী হামলা টা পড়লো।প্রথম লোক টি সামনের ছেলেটার কলার টেনে ধরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললো,

“উনি আমার কাছে আগে কইছে।থাকলে আমাগো হোটেলে থাকবো।”
স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপা আপনার জন্য ৬০% ডিসকাউন্ট।আমার সাথে চলেন।
বলে কলার ছাড়তেই ছেলেটি হিংস্র হয়ে পড়লো।সামনের পাটাতনে থাকা ফ্লাক্স’টা হাতে নিয়েই মারলো মাথার উপর বাড়ি।ভয়ে চিৎকার করে স্পর্শীকে জড়িয়ে ধরলো আর্শি।
” এই গেল।”বলেই আর্তনাদ করে উঠলো স্পর্শী।গলগল করে রক্ত পড়ছে লোকটির মাথা থেকে। ইতোমধ্যে তর্কাতর্কি তে লোক জড়ো হয়ে গেছে।দুজন লোককে সাথে নিয়ে আহত লোক টিকে হস্পিটালে পাঠিয়ে দিলো স্পর্শী।ছেলে তিনটা রাগে এখনো ফোঁস ফোঁস করে উঠছে।স্পর্শী সামনে থাকা ছেলেটার উদ্দেশ্যে রেগে বললো,
“অশিক্ষিত, স্টুপিড,অসভ্য লোক।এই তোমার কোনো শিক্ষাদীক্ষা নেই।লোকটাকে মারলা কেন?উঠবনা তোমাদের হোটেলে?ছোটলোক,ইতরের মতো ব্যাবহার।”

ছেলেটি ক্ষোভ নিয়ে এগিয়ে এলো স্পর্শীর দিকে।বললো,
“ওইইইই ছেমরি।তুই এই পিরোজপুরে থাকতে চাইলে আমগো হোটেলেই থাকবি।নইলে সোজা যেখান দিয়া আসছোস ওইখানে ভাগ।সর।”
গায়ের রক্ত টগবগ করে উঠলো স্পর্শীর।এগিয়ে গেল ছেলেটার দিকে।ক্ষোভ নিয়ে বললো,
“ওহ আচ্ছা।কি করবি তুই?”
স্পর্শীর দিকে পুণরায় এগিয়ে আসতেই সতেরো/আঠারো বছরের এক ছেলে ছুটে আসলো দোকানে।ক্রুদ্ধ হয়ে দোকানের শক্ত কাঠের ডাশা খুলেই বাড়ি মারলো মাথার উপর।মুহুর্তে’ই ঢলে পড়ে গেল সেখানে।ছেলেটা খিঁচতে খিঁচতে বললো,

“তোর এত্তো বড় সাহস কুত্তা*র বা*চ্চা তুই আমার বড় ভাইর গায়ে হাত দিছোস।
স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো স্পর্শী।আর্শি ইতোমধ্যে ভয়ে কেঁদে দিয়েছে। স্পর্শী হতবাক হয়ে বললো,
“এসব কি হচ্ছে?”
দোকান দার সবার অগোচরে হাসলো।স্পর্শীর উদ্দ্যেশ্যে বললো,
“আপা কি এইখানে নতুন।তাইলে অবাক হইবেন ই।এহানে এইগুলা পান্তাভাত।অন্যান্য জায়গায় তো কিছু হইলেই সেইগুলো মিডিয়ায় যায়।কিন্তু আমাগো পিরোজপুরে খুনাখুনি হইলেও বাইরের কেউ জানে না।সব দিনের মধ্যেই ধামাচাপা পইড়া যায়।পুলিশ ও জনগণ ডরায়।ওরা আয় সবার শেষে যাতে চাকরি না যায়।শো দেখাইতে আসে।”
বলেই হাতের বাটন ফোন’টা নিয়া কাউকে ফোন দিলো।বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ১৮

“বাকের ভাই,সূজনের লোকেরা রফিকের মাথা ফাডাইয়া দিছে।আমার দোকানের সামনে বইসা।”
স্পর্শী কিচ্ছু বুঝলো না।সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো আরেকটা ছেলে ফোনে বলছে,
“সুজন ভাই,বাকেরের লোকেরা আমাগো সুমনের মাথা ফাটাইয়া দিছে।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২০