রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২৬
সিমরান মিমি
নিস্তব্ধ পরিবেশ।মুহুর্তের ব্যাবধানে দাপটের সাথে আসা হিমেল সতেজ হাওয়াগুলো দেয়ালের সাথে সজোরে ধাক্কা খেয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে রুমে ঢুকছে।ঘুমন্ত স্পর্শীর শরীর কে করে দিচ্ছে আরো শীতল। সোজা থাকা পা দুটোকে আরেকটু ভাঁজ করে গুটিশুটি দিয়ে শুলো।মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।বড় বড় ফোঁটাগুলোর মাঝখানে পাথরাকৃতির শিলা পড়ছে।ফলস্বরূপ হিম হয়ে এলো স্পর্শীর শরীর।কিন্তু অদ্ভুত, তাকে কেউ গায়ে একটা চাঁদর জড়িয়ে দিচ্ছে না।এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যে চিংড়ি মাছের ন্যায় বাঁকা হয়ে শুয়ে রইলো।মুহুর্তেই বৃষ্টির ছাঁট মাথায় নিয়ে রুমে ঢুকলো শামসুল।সবাই ড্রয়িংরুমে আছে,অথচ স্পর্শী নেই।মেয়ের বিছানার কাছে যেতেই চমকে উঠলো।গায়ে হাত দিতেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।দরজার কাছে গিয়ে কন্ঠস্বর উচ্চে উঠিয়ে বললো,
“মেয়েটা এই ঠান্ডার মধ্যে কাঁপছে, এরমধ্যে কেউ একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে দাও নি।নাকি গায়ে লাগছে না কারো। আমি হারে হারে টের পাচ্ছি গত উনিশ টা বছর আমার মেয়ে দুটো ঠিক কতটা কষ্টে ছিলো।এভাবে না খেয়ে,না নেয়ে ঠান্ডার মধ্যে পড়ে থাকলেও কেউ খেয়াল করেনি।”
বলেই আবারো ভেতরে চলে এলো।সোনালী পিপাসার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো।কথাগুলো যে পিপাসাকেই বলেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত তারা।পিপাসা নড়েচড়ে উঠলো।গলায় জোর এনে বললো,
“আমিতো এই উনিশ টা বছর পেলেপুষে বড় করছি।এখন তো যার মেয়ে তার কাছে এনে দিছি।সেই পালুক।সেই খেয়াল করুক মেয়ের দিকে।আমি একটু বিশ্রাম নেই একদিন।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কানে গেল না শামসুলের। মেয়ের কাছে বসে আদুরে গলায় ডেকে বললো,
“মামুনি,ওঠো।খাবে না তুমি।দেখি ওঠো তো।”
নড়ে নড়ে চড়ে বসলো স্পর্শী।বাবার চিৎকারেই ঘুম ভেঙে গেছিলো।কিন্তু চোখ বন্ধ করে ছিলো এতোক্ষণ।অলসতা কাঁটিয়ে বাবার দিকে চেয়ে বললো,
“আব্বু, আমি এখন ঘুমাবো।তুমি যাও।খেয়ে নাও।”
মানতে প্রস্তুত নন শামসুল।ইনিয়ে বিনিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ডাইনিং এ।আর্শি খেয়ে দেয়ে জিহান এর রুমে গিয়েছে।কিছুক্ষণ আগেই লুডু খেলতে দেখে এসেছে পিপাসা।জিহান আর্শির এক ইয়ার সিনিয়র।যার দরুন দুজনের ঠিক ভালোভাবেই বন্ডিং হয়েছে।
রাত দেড়টা।এপাশ-ওপাশ ফিরে ভাবনায় মশগুল শামসুল।নিজের ভাগ্যকে নিয়ে খুবই হতাশ সে।আজ এতোদিন পর নিজের সন্তানকে কাছে পেলেও স্ত্রীকে কাছ আনতে কিছুতেই পারছে না।একটা অভিমানের দেয়াল মাঝখান বরাবর প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কেন করলো তার তৃষ্ণা এমন?সে কি পারে না জোর করে নিজের অধিকার ফলাতে?সেকি নিজে থেকে তার রুমে এলে শামসুল বাধা দিতো?নাহ,মোটেই না,বরং সামনাসামনি কিছুক্ষণ গম্ভীর থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রাণ প্রেয়সীকে বরণ করে উঠাতো ভালোভাসার দ্বারা।নাহ,ঘুম পাচ্ছে না মোটেও।উঠে বসলো বিছানায়।পানি খেয়ে দরজা হালকা খুলে বাইরে উঁকি দিলো।সবাই এখন ঘুমাচ্ছে।নিত্যদিনের মতো এগিয়ে যেতে লাগলো মেয়েদের ঘরের দিকে।পিপাসা ওদের সাথেই ঘুমায়। এখানে আসার পর থেকেই প্রায় লুকিয়ে লুকিয়ে তৃষ্ণাকে দেখতো শামসুল।সামনা-সামনি ওই মুখের দিকে না তাকালেও প্রায় রাতেই দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে থাকতো।
কোনো শব্দ না করে আলতো পায়ে হেঁটে রুমের সামনে দাঁড়ালো।ত্রস্ত হাতে রুমের দরজা আলতো খুলতেই ওপাশ থেকে পুরো টা খুলে ফেললো পিপাসা।মুহুর্তে’ই সামনে পুরুষালী ছায়া দেখে পিলে চমকে উঠলো।গলা শুকিয়ে গেল শামসুলের। এভাবে ধরা পড়ে যাবে সেটা কস্মিনকালেও ভাবে নি।নিত্যদিন তো এই সময় তৃষ্ণা নাক ডেকে ঘুমিয়ে থাকে।তাহলে আজ কেন এমন হলো?
বাড়ির মধ্যের সমস্ত দরজা জানালা বন্ধ। ফলস্বরূপ বাইরের চাঁদের আবছা আলোটুকুও পৌছায় নি।পুরুষালী দেহের ছায়া টা দেখেই চিৎকার করে উঠলো।স্তব্ধ হয়ে গেল শামসুল।দ্রুত কন্ঠে বললো,
“আমি, আমি আমি।চিৎকার করো না।মেয়েদের কে দেখতে আসছিলাম কাঁথা আছে কিনা গায়ে দেখতে।আ আমি যাচ্ছি।”
বলেই ছুটলো রুমের দিকে।ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে বুক চেপে ধরে বিছানায় বসলো।ভয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে তার। আজ নিজের বাড়িতেই নিজেকে কেমন চোর চোর অনুভব হচ্ছে।বারবার দোয়া পড়ে বলছে “কেউ না উঠুক।”
দ্রুতপায়ে উঠে লাইট জ্বালালো স্পর্শী।পাশে তাকাতেই দেখলো দরজা খোলা।মা তার সামনেই পিলারের মতো দাঁড়িয়ে আছে।কাছে গিয়ে ডাকতেই চমকে উঠলো।চিৎকার করার কারন জিজ্ঞেস করতেই বললো,
“কিছুনা, পানি খেতে উঠছিলাম।হয়তো কোনো বিড়াল ছিলো।”
বিরক্ত হলো স্পর্শী।টি টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখলো পানি শেষ। জগ হাতে ত্রস্ত পায়ে নিচে নেমে গেল।পানি ভরে উপরে আসতেই দেখলো মা বিছানায় বসা।তাকে পানি খাইয়ে শুইয়ে নিজেও শুইয়ে পড়লো।
সকাল বেলা।সারারাতের বৃষ্টির পর বেশ বেলা করে ঘুমিয়েছে স্পর্শী।ঘড়ির কাঁটায় মাত্র সাড়ে আট’টা।বেশ ফুরফুরে মনে বারান্দায় এলো।বাইরের রোদ টা ভীষণ সুন্দর।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে গায়ে ওড়না পেঁচিয়ে দ্রুতপায়ে বাগানে এলো।বাড়ির পেছন দিকটায় সূর্যমুখী গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে সোভাম ভাই।ছুটে সেদিকটায় গেলো।বললো,
“আমাকে দিন,আমি পানি দেই।”
সোভাম পিছু ফিরলো।স্পর্শীকে দেখে আবারো পানি দেওয়ায় মনযোগ দিলো।মুখ তার গম্ভীর।কোনোরুপ উত্তর না পেয়ে অবাক হয়ে গেল স্পর্শী।মনে মনে বললো,”এই লোকের আবার হলো টা কি?রাতেই তো সুন্দর করে কথা বলছিলো।এখন আবার অমাবস্যা নামলো কোত্থেকে? ”
কেউ কথার উত্তর না দিলে তার দিকে ফিরেও তাকায় না স্পর্শী।এই নিয়ম এবারেও বহাল থাকলো।এগিয়ে গেল প্রাচীরের দিকে।ছোট ছোট গাছে আম ধরেছে অস্বাভাবিক মাত্রায়।এগুলোকে ছোট গাছ ও বলা যায় না।কেননা,আম গাছে উঠে তারপর পেরে খেতে হয়।স্পর্শী হতাশ হলো।সে কিভাবে এই গাছে উঠবে?গাছের আরেকটু নিচে যেতেই ঝোঁপের আড়ালে থাকা মই চোখে পড়লো।নিশ্চিত এটা জিহানের কাজ।আলগোছে শক্ত হাতে মইটাকে গাছের সাথে ঠেস দিয়ে তড়তড় করে উঠে গেল।দু দিকে যাওয়া দুটো ডালের মাঝখানে বসে একটা আম পারলো।সেটাকে ওড়না দিয়ে মুছে কামড় বসাতেই নিচ থেকে ধমকের সুরে ভেসে আসলো,
“স্পর্শী,তুমি গাছে উঠেছো কিভাবে?আর এই সকাল বেলা কাঁচা আম খাচ্ছো কেন?খালি পেটে টক খেতে হয় না।দ্রুত নিচে নামো।”
গাছের নিচে সোভাম ভাইকে দেখিতে ই ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো।অবাক হয়ে গেল সোভাম।পরপর তিনবার ধমক মেরেও কাজ হয় নি।স্পর্শী শোনে নি তার কথা আর নাতো উত্তর দিয়েছে।সে নিজ মনে এখনো আম খাচ্ছে।
ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সোভাম।মই টাকে ধরে তুলে গাছ থেকে দশ হাত দূরে ছুঁড়ে মারলো।এরপর স্পর্শীর উদ্দেশ্যে বললো,
“মন ভরে খেতে থাকো।”
হতবাক হয়ে গেল স্পর্শী।চোখ দুটো বড় বড় করে মইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এটা কিন্তু ঠিক না।একদমই ঠিক না।আপনি মই কেন সরালেন?ভাইয়া,,মই দিয়ে যান।আরে আজব তো,আমি নামবো কিভাবে?”
কানে নিলো না সোভাম।ত্রস্ত পায়ে হেঁটে বাড়ি ঢুকে গেল।এখন গোসল সেরে তারপর খেয়ে সোঁজা বাজারে যাবে।প্রায় আধ ঘন্টা বসে থাকার পরেও এদিকে কেউ এলো না। এড়িয়া বড় থাকার কারনে চিৎকার ও শোনে নি কেউ।বাধ হয়ে গাছ ধরে নিচের ডালে নামলো।এরপর কি করবে স্পর্শী।এখন তো প্রায় সাত ফুট সোজা গাছ যার কোনো ডাল পালা নেই।বেশ কিছুক্ষণ বসে আন্দাজ করে ডাল ধরে ঝুলে পড়লো।মাটি থেকে প্রায় এখনো দু ফিট উপরে স্পর্শী।বেশ কিছুক্ষণ ওভাবেই ঝুলে রইলো লাফ দেওয়ার ভয়ে।কিন্তু হাত ব্যাথায় ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম।শেষে বাধ্য হয়ে ডাল ছেড়ে দিলো।মুহুর্তেই ঘাসের উপর ধুম করে পড়লো।ততটা ব্যাথা না পেলেও হাত যন্ত্রণা করছে ঝুলে থাকার কারনে।
দাঁতে দাঁত পিষে উঠে দাঁড়ালো স্পর্শী।গায়ের ওড়না টা ঠিক ভাবে পড়ে হনহন করে হেটে গেল বাড়ির দিকে।ডাইনিং এ খাবার বাড়ছে বাড়ির মহিলারা।বৃষ্টির কারনে আজকে সবাই ই দেরী করে ঊঠেছে।থমথমে মুখ নিয়ে কারো সাথে কথা না বলেই রুমে গেল স্পর্শী।হাত-মুখ ধুতেই ফোনের কথা মনে পড়লো।ফোন কই তার।আর্শির কথা মনে হতেই সমস্ত সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো তার উপর।চিৎকার করে ডাকতেই ভয়কাতুরে মুখ নিয়ে রুমে ঢুকলো স্পর্শী।ফোলা ফোলা গাল দুটো চেপে ধরে স্পর্শী বললো,
“কাল থেকে ফোন টা টিপেছিস অথচ চার্জ দেওয়ার কথা মাথায় নেই তাই না?”
বলেই হাত থেকে ফোন হাতে নিলো। মুহুর্তেই ছুটে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আর্শি।ড্রয়িংরুমে খবরের কাগজ পড়ছে শামসুল। আর্শি শান্ত পায়ে তার পাশে গিয়ে বসলো।বাবার কোনো রুপ সাড়াশব্দ না পেয়ে গা ঘেঁষে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো। ‘কি হয়েছে?’জিজ্ঞেস করতেই ফোঁপাতে ফোপাঁতে বললো,
“আপুর ফোন টা একটু ধরছিলাম, তার জন্য আমাকে মারছে।আম্মুর ফোন ধরলেও আমাকে মারে।সবাই মারে।আমার ফোন নাই দেখেই তো একটু ধরি।তার জন্য মারবে কেন?আমার ফ্রেন্ড দের সবার ফোন আছে।শুধু আমার’ই নাই। আমাকে একটা ফোন কিইনা দিবা আব্বু।”
বলেই চোরাচোখে বাবার দিকে তাকালো। শামসুল সরদার আলতো হেসে মেয়ের দিকে তাকালেন।এরপর জোরালো কন্ঠে বললো,
“আমার মেয়েকে মারে।তাও আবার ফোনের জন্য।কত্ত বড় সাহস।আম্মু,তুমি কারো ফোন ধরবে না।আমরা ব্রেকফাস্ট করেই ফোন কিনতে বের হবো।ওকে?”
চমকে উঠলো আর্শি।বাবাকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে চিৎকার করে উঠলো।বললো,
“আমিও যাবো,আমিও যাবো।আমি পছন্দ করে আনবো।”
ফোন চার্জে লাগিয়ে হাতে নিলো স্পর্শী।কাল থেকে কেউ ফোন দিয়েছে কি না চেক করতেই চোখ আটকে গেল আননৌন নাম্বার টিতে।এটা আর্শির ক্লায়া টিচারের নাম্বার।কালকেই ফোন করেছিলো।কিন্তু তার নাম্বার জানলো কিভাবে?এর আগে কি এই নাম্বার থেকে কল এসেছিলো?ভাবতেই কল ডিটেইলসে ঢুকলো।মুহুর্তেই চমকে উঠলো।পুরো ১৩ মিনিট’স ৪৯ সেকেন্ড কথা হয়েছে কাল।অদ্ভুত! একজন ক্লাস টিচার তার স্টুডেন্টের সাথে এতক্ষণ কি কথা বলবে?অনেক আজেবাজে চিন্তা স্পর্শীর মাথায় আসছে।সাথে সাথেই নিজের পার্সোনাল সিম দিয়ে সেই নাম্বারে কল দিলো।
পার্টি অফিসে বসে আছে পরশ।বাজারে মারামারি লেগেছে কিছুক্ষণ আগেই।তবে আজকের কোন্দল রাজনৈতিক নয়।ভাইয়ে ভাইয়ে মিলে জমি নিয়ে বেঁধেছে।পাভেল সেখানেই ছুটে গেছে মাত্র।পাশেই সূজন এসে শুয়ে আছে সোফায়।সেই একভাবে ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখছে।টানা কতক্ষণ এভাবে নিরব দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো পরশ।উদ্দেশ্যে সুজনের কাছে যাওয়া।এরইমধ্যে ফোন বেজে উঠলো।টেবিলের উপর পড়ে আছে ফোনটা।হাতে তুলে আননোন নাম্বার দেখে চমকালো না পরশ।এরকম রোজ’ই ডজন খানেক অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে।রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠে সালাম ভেসে আসলো। পরশ বিনয়ের সাথে উত্তর দিলো,’ওয়ালাইকুম আস সালাম।’
স্পর্শী সন্দেহী দৃষ্টিতে ফোনের নাম্বারের দিকে চাইলো।এই কন্ঠ তার খুব’ই পরিচিত।অজস্র বার কথা হয়েছে এই কন্ঠের অধিকারীর সাথে।কিন্তু তাও নিশ্চিত হতে পারলো না।সন্দেহী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“কে আপনি?”
অসস্তিতে পড়ে গেল পরশ।এটা তার প্রাইভেট নাম্বার নয়।হাজার হাজার নেতাদের কাছে রয়েছে এমপির এই কন্টাক্ট নাম্বার।ফোন দিয়েই সবাই একবাক্যে বলে’আস্ সালামু আলাইকুম, ভাই, কেউ আবার বলে এমপিসাহেব।’এই বাক্যগুলোর সাথেই পরিচিত পরশ।কিন্তু একজন জনপ্রতিনিধির নাম্বারে ফোন দিয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করাটা ভীষণ অপমানের।মনের মধ্যে দাম্ভিকতার সুরে কেউ বলে উঠলো,’সে কি যেন তেন মানুষ,খুব সাধারণ কেউ যে কোনো মেয়ে ফোন দিয়ে পরিচয় জিজ্ঞেস করবে?”মনে মনে মেয়েটাকে ভীষণ ভাবে অসভ্য মনে হলো।হ্যাঁ পরশের জানামতে পৃথিবীতে দুটো অসভ্য মেয়ে আছে।একজন ফোনের ওপাশে, আর অন্যজন রয়েছে শিকদার বাড়িতে।যাদেরকে সারাদিন পাশের চেয়ারে সাদরে বসিয়ে অনবরত চড় থাপ্পড় মারলেও ক্লান্ত হবে না সে।কিন্তু এই মেজাজ টাকে অতি যত্ন সহকারে চেপে রাখলো। নাম্বার টা প্রফেশনাল। বুঝে শুনে কথা বলতে হবে নিশ্চয়ই।অতি বিনয়ের সাথে ভদ্রতা বজায় রেখে শান্ত কন্ঠে পরশ বললো,
“আমি পিরোজপুর (৩) এর সাংসদ পরশ শিকদার বলছি। বলুন কি বলবেন?”
চোখ দুটো বড় বড় করে ফেললো স্পর্শী।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“ওহ,আপনি। আমি আসছি মহাশয়।অপেক্ষা করুন।”
বলেই ফোন কেটে দিলো।রাগে গা গিজগিজ করছে।এই ক্রিমিনাল লোকটা পুরো ১৩ মিনিট আর্শির সাথে কি বলেছে?তাও ছদ্মবেশে।ও কি আবারো আর্শির কোনো ক্ষতি করতে চাইছে।নাকি কোনোরকম ফাঁদে ফেলতে চাইছে।ভাবনার মাঝেই নিচ থেকে বাবার ডাক এলো।হয়তো ব্রেকফাস্ট এর জন্য ডাকছে।ফোন টাকে সাইলেন্ট মুডে রেখে নিজেকে শান্ত করে নিচে গেল স্পর্শী।সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দেখলো সোভাম তার দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে আর হাসছে।গা জ্বলে গেল স্পর্শীর।অন্যদিকে তাকিয়ে বাবার কাছে গিয়ে বসলো।
পুরো টেবিল আর্শির উত্তেজনায় মেতে আছে।বেশ কিছুক্ষণ কান পেতে যা বুঝলো সেটা হচ্ছে আর্শিকে বাবা ফোন কিনে দিবে।বারন করতে গিয়েও আবার চুপ করে রইলো স্পর্শী।বাবার প্রথম গিফট মেয়ের জন্য।বাধা দেওয়া মোটেও উচিত হবে না।প্লেটের পরোটার একপাশ ছিড়ে মুখে নিয়ে কামড় বসাতেই “আহ” করে শব্দ করলো স্পর্শী।পুরো দাঁতগুলো সিঁড়সিড় করে উঠলো যেন।দাঁতে দাত লাগাতে পারছে না।
শামসুল শিকদার মেয়ের দিকে তাকালেন।বললেন,
“কি হলো মামুনি?’
এতোক্ষণে মুখ খুললো সোভাম।খাবার খেতে খেতে বললো,
” কি আর হবে?ফজর থেকে আম গাছে ঝুলে আছে।আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।হুট করে গাছে লাল ওড়না দেখে ভাবলাম কোন পেত্নি আবার বাড়িতে জুটলো?কাছে গিয়ে দেখলাম তোমার বড় মেয়ে কাঁচা আম খাচ্ছে।ভাবো তো, ফজর থেকে খেলে দাঁতের অবস্থা কেমন?”
নাক-চোখ কুঁচকে তাকালো স্পর্শী।ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
“মিথ্যাবাদী।”
এরপর বাবার উদ্দেশ্যে বললো,
“আব্বু তোমার ছেল মিথ্যে বলছে। আমি ঘুম থেকেই উঠছি সাড়ে আটটায়।আর একটা মাত্র আম খেয়েছি।উনি তো আমার থেকে মই কেঁড়ে নিছে।একবার ভাবো তো তাহলে আমি কিভাবে নেমেছি গাছ থেকে।’
সোভাম খেতে খেতেই বললো,
” কিভাবে আবার?আমি তো বারান্দা দিয়ে দেখলাম ঝুলে ঝুলে নামছো। ‘
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে স্পর্শী।চুল আচঁড়াতে আঁচড়াতে একবার নিচে উঁকি মারলো।একটু আগেই বাবা আর্শিকে নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে গেছে।নতুন ফোন কিনতে।সোভাম ভাই ও বেরিয়ে গেছে। চুলগুলো মাথার উপর
বেধেঁ ওড়না পড়ে নিলো।এরপর পার্স হাতে বেরিয়ে পড়লো বাইরে।বড় রাস্তার মোড়ে আসতেই রিকশা পেল।
দ্রুত পায়ে পার্টি অফিসে ঢুকলো পাভেল।তড়িৎ গতিতে আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো ফোন।এরপর পকেট থেকে ফোন বের করে ভাইয়ের হাতে দিয়ে বললো,
“এই ধর তোর ফোন।তাড়াহুড়োয় আমার টা ভেবে পকেটে ঢুকাইছি।লক খুলতে গিয়ে দেখি ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ হচ্ছে না।আমার ফোন টা কই রাখলাম?”
আহাম্মক হয়ে গেল পরশ।সেম ফোন হওয়ার কারনে সেও চিনতে পারে নি।টেবিল থেকে ফোন বের করে বললো,
“তোর গার্লফ্রেন্ড ফোন করছিলো।আমার গলার স্বর পেয়ে আজেবাজে বকছে।”
ফোন হাতে নিয়ে চমকে গেল পাভেল।অচেনা নাম্বার।মনে মনে শুধালো,”গার্লফ্রেন্ড জন্মালো আবার কোত্থেকে?”মস্তিষ্কে চাপ দিতেই আর্শির কথা স্মরণে এলো।ও আবার নতুন কোনো সিম দিয়ে কল করলো না তো।আলতো পায়ে ফোনের দিকে তাকাতে তাকাতে দরজার সামনে আসতেই থমকে দাঁড়ালো।
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ২৫
সিঁড়ির উপর স্পর্শী দাঁড়িয়ে আছে।মুহুর্তেই মাথায় বাজ পড়লো।ইতোমধ্যে তাকে পাশ কাঁটিয়ে স্পর্শী ভেতরে ঢুকে গেছে।পার্টি অফিস আজ জমজমাট।প্রচুর ছেলেপেলে আছে দোতলায়।নিচ তলাতেও কম নেই।আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাস পেতেই বাকহারা হয়ে গেল পাভেল।আলতো পায়ে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের মুখের দিকে।