রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৬

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৬
সিমরান মিমি

পূবালী হাওয়া জানালার পর্দা উড়িয়ে প্রবল বেগে রুমের ভেতর ঢুকছে।নিমিষেই প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে।চুল গুলো বাঁধ মানছে না।বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেরাও উড়ে চলছে ক্রমশ।খেতে অসুবিধা হচ্ছে স্পর্শীর।টেবিলের উপর থেকে হেয়ার ক্লিপ টা নিয়ে আটঁকে দিলো চুল।এবারে আর কোনো ঝামেলা নেই।আরামসে বিরিয়ানি শেষ করে হাত ধুয়ে নিলো।ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে চারটা।অনেক রেস্ট নেওয়া হয়েছে।এবার আসল উদ্দেশ্যে বের হতে হবে।গায়ের পোশাকের দিকে একবার তাকালো স্পর্শী।খারাপ না।বর্তমান গরমের আবহাওয়ার সাথে মানানসই।চুলগুলো আঁচড়ে মাথার উপরিভাগে পুনরায় হেয়ার ক্লিপ দিয়ে আঁটকে নিলো।সাদা ওড়না টা বুকে মাথায় দিয়ে ফোন টা হাতে নিলো।ফোনের ব্যাক কভারের নিচেই হাজার দুয়েক টাকা রয়েছে।যদি কিছু খেতে মন চায় তো খেয়ে নেবে।সর্বশেষ চোখে সানগ্লাস দিয়ে রুমের চাবিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

বার কয়েক ডাক দেওয়ার পরেও সাড়া পেল না স্পর্শী।পরপক্ষণে একা একাই হেটে এলো নিচে।একবার ভাবলো পরশকে কল করবে।পরক্ষণেই দ্বিমত করলো।নিশ্চয়ই লোক টা তাকে রেখে ঘুরতে গেছে।আর যদি এমনটাই হয় তাহলে এই লোককে ফোন দেওয়ার মিনিমাম ইচ্ছেও নেই।গটগট পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দাঁড়িয়ে পড়লো।রিসিভশনের মেয়েটার সাথে কথা বলছে পরশ।এগিয়ে গেল স্পর্শী।
‘পাভেল শিকদার নামে কোনো রুম বুক করা হয়েছে আপনাদের হোটেলে?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেয়েটি অসস্তি নিয়ে তাকালো।বললো,’দুঃখিত স্যার!অনেকেই এখানে আসছে -যাচ্ছে।সেভাবে নাম মনে রাখা অসম্ভব।আপনার কি জানাটা খুবই প্রয়োজন? তাহলে আমি চেক করে নিতাম।’
পরশ মাথা নাড়ালো।মেয়েটা মনযোগ নিয়ে দেখতে লাগলো পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।মিনিট পাচেক পর বললো,
‘সরি স্যার!এই নামে কেউ রুম বুক করেনি।’
হতাশ হলো পরশ।পরক্ষণেই ফোন থেকে পাভেলের একটা ছবি বের করে বললো,’এই ছেলেটা কি এসেছিলো এখানে?দেখেছেন?’
মেয়েটি আগের মতোই নিজের কথায় অনড় রইলো।মাথা নাড়িয়ে না স্বরুপ বললো,’না স্যার।এমন কেউ এই রিসোর্টে আসে নি।’

চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালো স্পর্শী।ফোন থেকে আর্শির ছবি বের করে মেয়েটির সামনে ধরলো।সন্দেহী কন্ঠে বললো,’এই মেয়েটাকে দেখেছেন?এসেছিলো কি এখানে?’
মেয়েটি এবারে ঘাঁবড়ে গেল।বারবার পরশ আর স্পর্শীর দিকে তাকালো।আমতা-আমতা করে বললো,
‘না ম্যাম!এরকম কোনো ছেলে-মেয়ে এই হোটেলে আসেনি।
দুপা এগিয়ে সামনে গেল স্পর্শী।ঝাঁঝালো কন্ঠে হুমকি দিয়ে বললো,’দেখুন,ভালোয় ভালোয় জিজ্ঞেস করছি।সত্যি কথা বলুন।নইলে কিন্তু পুরো রিসোর্ট চেইক করবো।’

মেয়েটি এবারে আরো ঘাবড়ালো।আশেপাশে ম্যানেজার নেই।নরম কন্ঠে বললো,
‘দেখুন,আপনারা এভাবে রিসোর্ট চেক করতে পারেন না।এতে অন্য কাস্টমার দের প্রাইভেসি নষ্ট হবে।তারা বিরক্ত হবে।আমাদের রিসোর্টের নাম ও খারাপ হবে।’
থেমে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে বললো,’আপনারা কি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার লোক নাকি পুলিশের অফিসার?

পরশ স্পর্শীকে টেনে পেছনে নিলো।এরপর আলতো হেসে বললো,’না আমরা কোনো পুলিশের অফিসার নই।এমনিই এই দুজনকে খুঁজছিলাম।থ্যাংক ইউ।’
বলে স্পর্শীর হাত ধরে টেনে জোরকদমে বাইরে চলে এলো।ধমক মেরে বলল, “তোমার কি মাথা খারাপ?এভাবে ভয় দেখাচ্ছিলে কেনো মেয়েটাকে?
‘আরে আপনি বুঝবেন না।ওরা টাকা খেয়ে অনেক সময় অনেক কিছু গোপন রাখে।ধমক-টমক না দিলে সহজে বলে না।জানেন?এইসব রিসোর্টে প্রায় সময়ই অবিবাহিত ছেলে মেয়েরা এসে রাত কাঁটায় আর ওরা তাদেরকে সেফটি দিয়ে রাখে। শুধুমাত্র টাকার জন্য।’
পরশ ঠোঁট কামড়ে স্পর্শীর দিকে তাকালো।বললো,
‘শুধু রাত’ই কাঁটায়?দিনে থাকে না?’

অবাক হয়ে পরশের দিকে তাকালো স্পর্শী।লোকটা এখনো তার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসছে।দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’অসভ্য!’এরপর হেটে গেলো সামনের দিকে।পরশ ও পিছু পিছু এগিয়ে আসছে।হাঁটতে হাঁটতে ইতোমধ্যে তারা বীচের কাছে এসে গেছে।হাই হিলের জুতো পড়ে এসেছে স্পর্শী।ইশশ!বীচের কথা মনে থাকলে কখনোই আসতো না।জুতো জোড়া খুলে হাতে নিয়ে প্রথম বারের মতো পা রাখলো নরম বালিতে।ইশশশ!মুহুর্তেই শরীরের মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ জেগে উঠলো।পরশ খুললো না।হাঁটতে লাগলো স্পর্শীর পিছু পিছু।অকারণেই হাঁটছে সে।চেয়ে চেয়ে দেখছে স্পর্শীকে।তার পায়ের ফেলা প্রতিটা কদম মাপছে।ওই পা দুটোকে দেখছে ।হাঁটার সাথে সাথে ঢেউ খেলানো ওই শরীর টা অবলোকন করছে।অদ্ভুত এক ইচ্ছে।এই ইচ্ছের নেই কোনো উদ্দেশ্য ;আর নেই তো কারন।কিন্তু তাও হাঁটছে সে।ইতোমধ্যে পানির কাছে এসে গেছে স্পর্শী।পরশ তার থেকে দুহাত দুরেই দাঁড়িয়ে পড়েছে।পেছনে ফিরে উৎফুল্ল কন্ঠে স্পর্শী বললো,

‘আসুন না,পানির মধ্যে হাঁটি।জুতো খুলুন।’
মাথা ঝাঁকিয়ে পরশ বললো,’উহুম!না।তুমি হাঁটো।
শুনলো স্পর্শী।তার এক হাতে জুতো অন্যহাতে মোবাইল।কিন্তু এই মুহুর্তে পানিতে হাঁটতে গেলে প্লাজু তুলতে হবে।পেছনে তাকিয়ে দেখলো পরশ এখনো তাকিয়ে রয়েছে।দ্রুত পায়ে তার কাছে গিয়ে ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিলো।এরপর জুতো জোড়া পাশেই বালিতে রেখে পুনরায় হেঁটে গেলো পানির দিকে।পায়ের গোঁড়ালি অবধি পানি।স্পর্শী দুহাত দিয়ে প্লাজু তুলে আরো গভীরে গেল।এবারে পায়ের নলা অবধি পানি।আর গভীরে গেল না।হাঁটতে লাগলো ওভাবেই।

পরশ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তার ভালো লাগছে দেখতে।একপর্যায়ে দেখলো স্পর্শী এগিয়ে যাচ্ছে পানির মধ্যে দিয়ে সামনের দিকে।এবারে পরশ তার পায়ে পা মিলিয়ে বীচের উপর হাঁটছে। মুহুর্তেই পিছু চাইলো।জুতোজোড়া পরে আছে।দু পা পিছনে গিয়ে হাতে তুলে নিলো।এরপর পুনরায় হাঁটতে লাগলো।
‘স্পর্শীয়া?আর গভীরে যেও না।কূলে এসো।’
শুনলো না স্পর্শী।বললো,’আর একটু থাকি।ভালো লাগছে তো এখানে।’
‘একদম না।একটু পর’ই ভাটা লাগবে।দরকার নেই এই বিকেল বেলা ভেঁজার।চলে এসো।কাল দুপুরে ভিঁজবো।এখন আসো।’
এ পর্যায়ে পেছনে তাকালো স্পর্শী।বললো,
‘কালকে আপনি নামবেন?শিউর তো?’

মাথা নাড়ালো পরশ।এরপর বললো,’তুমি কি ঘোরার জন্য কক্সবাজার এসেছো?নাকি বোনকে খুঁজতে?’
পিলে চমকে উঠলো স্পর্শীর।দ্রুত পায়ে ছুঁটে এলো কূলে।বীচের মধ্যে জুতো খুঁজতেই দেখলো সেটা পরশের হাতে।লজ্জা পেল স্পর্শী।দ্রুত জুতো ছিনিয়ে নিয়ে বললো,
‘আপনি নিয়েছেন কেন জুতা?নিচে থাকলেই তো হতো।’

কথা বললো না পরশ।তার নিজের কাছেই কেমন লাগছে।একটা অপরিচিত মেয়ের জুতো নিয়ে এতোক্ষণ হেঁটেছে সে।আশেপাশের সবাই কি না কি ভেবেছে। কিন্তু এই অসস্তিকে পাত্তা দিলো না।স্পর্শীর পায়ে এখনো বালি।তাই আর জুতো পড়লো না।এক হাতে জুতো নিয়ে পরশের সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো পুরোটা বীচ।আর খুঁজতে লাগলো পাভেল-আর্শিকে।কক্সবাজার যখন এসেছে নিশ্চয়ই বীচে ঘুরবে।
কিন্তু হতাশ হলো দুজনেই। সারাটা বিকেল খুঁজেও পাভেল-আর্শির টিকিটাও খুঁজে পেল না তারা।শেষে বাধ্য হয়ে আবারো চললো রিসোর্টের দিকে।

সন্ধ্যা সাতটা।ফোন হাতে বিছানায় উপুড় হয়ে বসে আছে স্পর্শী।এতোক্ষণ ধরে বাড়িতে কথা বলেছে সে।ফোন স্ক্রল করতে ভালো লাগছে না একটুও।একা একা তো মোটেই মন টিকছে না।যদি ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে আসতো,তাও একটু আড্ডা দেওয়া যেত।কিন্তু এখানে?একদম একা।নিচে যে একটু গিয়ে ঘুরবে তার ও উপায় নেই।এই অচেনা জায়গায় কোথায় যাবে একা একা?চাইলে এখান থেকে নিচে গিয়ে এই হোটেলের রেস্টুরেন্টে যাওয়া যায়।কিন্তু সেখানে গিয়ে একা একা খেতেও ইচ্ছে করছে না।ফোনটাকে বিছানার উপর ফেলে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল স্পর্শী।মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে এপাশের বেলকুনিতে তাকালো।পরশ নেই এখানে।রুম থেকে কথা বলার আওয়াজ এলো।

কান খাঁড়া করলো স্পর্শী।কার সাথে কথা বলছে এই লোক?ভেবে পেল না।এখান থেকে মোটেও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না।মিনিট পাঁচেক দাঁড়ালেও কথা শেষ হয়নি পরশের।এ পর্যায়ে অস্থির হয়ে উঠলো স্পর্শী।ভেবেই পেল না এতো কথা কার সাথে বলছে।বউয়ের সাথে?না না,তার জানামতে এই লোক বিয়ে করেনি।তাহলে কি গার্লফ্রেন্ডের সাথে?হতেই পারে।কিন্তু এরকম একটা ঝগড়ুটে লোক গার্লফ্রেন্ড সামলায় কি করে?নিশ্চয়ই তার সাথে কথা বলার সময় একদম বিড়াল হয়ে কথা বলে।হবেই তো,নইলে তো আর গার্লফ্রেন্ড টিকবে না।স্পর্শী দ্রুত বারান্দা থেকে বের হলো।রুমের দরজা চাপিয়ে পরশের দরজার সামনে গেল।দরজার সাথে ঘেঁষে কান খাঁড়া করে শুনতে লাগলো কথা।

‘না না,কোনো দরকার নেই।আমি বললাম তো দরকার নেই।হ্যাঁ আসবো।তিন চার দিন লাগবে এখানে।এরমধ্যে কোনো ঝামেলা করবি না।সামনে উপজেলা চেয়্যারমান নির্বাচন। মাথায় রাখিস।’
পরশ কথা বলতে বলতেই দরজার দিকে তাকালো।তার কেন জানি মনে হলো ওপাশে কেউ আছে।আলগোছে ফোন টা কেঁটে দরজার কাছে গেল।ওপাশ থেকে নিঃশ্বাস নেওয়ার শব্দ আসছে।ভেড়ানো দরজাটা আলগোছে টান মেরে খুলতেই গায়ের উপর পড়লো স্পর্শী।সে একপ্রকার শরীরের ভর ছেড়েই দরজার দিকে হেলে ছিলো।পরশের গায়ের উপর পড়তেই স্পর্শী তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো।অসস্তিতে মাথা ফাঁকা হয়ে আসছে তার।ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো পরশ।গম্ভীর কন্ঠে বলল,

‘কি সমস্যা?’
‘কই?না তো।কিছু না।আমি আসছি।’
খপ করে স্পর্শীর হাত ধরলো পরশ।নিজের দিকে টেনে পুনরায় জিজ্ঞেস করলো,
‘আঁড়ি পাতছিলে কেন?কি শুনেছো?’
এবারে সিরিয়াস হলো স্পর্শী।সোজাসাপটা বললো,
“আশ্চর্য! কি শুনবো?আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আপনি কথা বলছেন।ভেবেছিলাম হয়তো প্রেম করছেন তাই শুনতে এলাম।আর কি শুনবো?’
তীর্যক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো পরশ।বললো,
‘তুমি কি আমাকে বোকা পেয়েছো?কি ভেবেছো?এসব আউল-ফাউল কথা বললেই আমি বিশ্বাস করে ছেড়ে দেব।আমি নির্বাচন নিয়ে আমার দলের সাথে প্লান শেয়ার করছিলাম।আর তুমি সেটাই সেই তখন থেকে আড়ি পেতে শুনছো।লজ্জা করে না?

হা হয়ে গেল স্পর্শী।অনবরত বলতে লাগলো,
‘আরে আমি মাত্রই এসেছি।আর কিচ্ছু শুনি নি।আপনি শুধু শুধুই ফালতু বকছেন।
বলেই হাতে ঝাড়ি দিয়ে চলে গেল স্পর্শী।দরজা লাগিয়ে রুমের ভেতর গিয়ে দুম করে বিছানায় বসলো।রাগ হচ্ছে ভীষন।নিজের উপরেই।কোন কুক্ষনে কান পাততে গেছিলো ওই রুমে।এই লোকের পেটে পেটে বদ হজম ভরা।এই মেঘ, এই বৃষ্টি।এই ভালো,এই খারাপ।অসভ্য লোক।এই বিকালেও কি সুন্দর করে কথা বললো।এমনকি জুতো নিয়ে হাটলো।অথচ এখনই পাল্টে গেল।গিরগিটির মতো রুপ বদলাচ্ছে।অসভ্য।আর কথা বলা যাবে না।পাত্তাও দেবে না।একা এসেছে, একাই খুঁজে বের করবে আর্শিকে।আসুক আর এক বার।একদম প্লেট ছুঁড়ে মারবে।

রাত প্রায় সাড়ে আটটা।এতক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে ছিলো স্পর্শী।একদম নিরব হয়ে তাকিয়ে ছিলো ফ্লোরের দিকে।অজানা কারনেই কেন যেন ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে খিদেও পেয়েছে ভীষণ।পার্স হাতে বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে।রেস্টুরেন্টে বসে খাবার অর্ডার করতেই মনে পড়ে গেল বিরিয়ানির কথা।ওই লোক নিজের টাকায় বিকালে বিরিয়ানি খাইয়েছে তাকে।মেনু কার্ডে দাম দেখে হাতে নিলো টাকা।খাবার দেবে না সে।টাকা ছুঁড়ে মারবে কপালের উপর ।মুহুর্তেই মনে পড়লো কপাল ফাঁটার কথা।পূর্বের হিসাব অনুযায়ী ওই লোক আরো সাড়ে চারশো টাকা পেত।হুমম!স্পর্শী কারো সাহায্য নেবে না।মোটেও না।

‘ম্যাম,কি করবেন?’
ওয়েটারের কথা শুনেই হুস ফিরলো স্পর্শীর।বললো,
‘কিচ্ছু না।পরে খাবো।’
বলে গটগট পায়ে চলে এলো বাইরে।চতুর্থ ফ্লোরে এসে ৫৩৬ নম্বর রুমের সামনে গেলো।দু’বার টোকা মারতেই দরজা খুললো পরশ।স্পর্শী কোনোরুপ কথা না বলেই এক হাজার টাকার একটা নোট পরশের হাতে গুঁজে দিলো।বললো,
‘বিরিয়ানি আর হস্পিটালের বিল।’
এরপর দ্রুতপায়ে হেটে গেলো সামনের দিকে।হাতের টাকার দিকে চেয়ে অবাক হয়ে গেল পরশ।স্পর্শীর পিছু পিছু আসতে আসতে বললো,
‘স্পর্শীয়া?এসব কি?দাঁড়াও।এইইই।’

শুনলো না স্পর্শী।করিডোর বেয়ে চলে গেল নিচের দিকে।পরশের রুমের দরজা খোলা।কল এ সুজন রয়েছে।আর যেতে পারলো না।টাকা হাতে ফিরে এলো রুমের দিকে।কলের কথা দ্রুত শেষ করে দরজা লক করে চলে এলো নিচে।নিশ্চয়ই রেস্টুরেন্টে এসেছে।ত্রস্ত পায়ে সেখানে এলো পরশ।গ্রাউন্ড ফ্লোরে না পেয়ে ফার্স্ট ফ্লোরে গেল।কিন্তু সেখানেও নেই।দোতলাবিশিষ্ট রেস্টুরেন্ট। সেখানে সারা জায়গায় খুঁজেও স্পর্শীকে পেল না।অবাক হলো পরশ।স্পর্শী যে রাগ করেছে সেটা স্পষ্ট। হয়তো তখন খুব বেশীই রুড বিহেভ করেছে।কিন্তু তাই বলে এই অন্ধকার রাতে গেল কোথায়?ফোন নিয়ে ওপাশে কল করতেই কেটে দিলো স্পর্শী।এরপর সুইচ অফ করে দিলো।

রিসোর্ট থেকে মিনিট পাঁচেক হাটলেই বীচ।সেখানে রাতেও অনেক টুরিস্ট ঘোরাফেরা করে।কেউবা পিকনিক করে।আবার কেউবা আড্ডা দেয়।কিন্তু এই মুহুর্তে সেরকম কোনো সঙ্গী স্পর্শীর নেই।তাই সবার থেকে অনেকটা দুরত্বে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ উপভোগ করছে।এদিকটা আবছা অন্ধকার।সচারাচর মানুষ আসেনা রাতে।সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শী। দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পরশকে।সে ওই লোকজনের মধ্যে তাকে খুঁজছে।কিছুক্ষণ পর পর ‘স্পর্শীয়া’ বলে ডাকছে।রাগে গা গিজগিজ করে উঠলো।ওই মুখে নাম টা শুনতে আরো রাগ হচ্ছে।হঠাৎই এক উটকো, বিচ্ছিরি গন্ধ নাকে ভেসে আসলো।আশেপাশে তাকাতেই দেখলো তার থেকে বিশ হাত দূরে অন্ধকারে তিন-চার টা ছেলে গোল হয়ে বসে আছে।তারা যে ওখানে বসে নেশা করছে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হলো স্পর্শী।কিছুক্ষণ পর পর এক জন তার দিকে তাকাচ্ছে।নাহ,এখানে থাকা সুবিধার নয়।দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করলো রিসোর্টের দিকে।খাবার অর্ডার করে চলে গেল রুমের দিকে।

রাত প্রায় দশটা।পরশ হন্নে হয়ে পুরো আশপাশ টা খুঁজছে।কিন্তু এখনো স্পর্শীর দেখা মেলেনি।ফোন টাও বন্ধ।নিজের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে।কি দরজার ছিলো ওমন বিহেভ করার।ক্লান্ত পায়ে হেঁটে এলো রিসোর্টে। রিসিভশনের মেয়েটার কাছে গিয়ে বললো,
‘এক্সকিউজ মি!আমার সাথে বিকেলে যে মেয়েটা ছিলো ও কে দেখেছেন?’
অবাক হলো মেয়েটি।অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে রইলো পরশের দিকে।আশ্চর্য! এনারা কি হারাতেই থাকে।একজনের পর একজনের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখেছে কি না।
‘জ্বি স্যার।ম্যাম তো আধ ঘন্টা আগেই নিজের রুমের দিকে গেলেন।’

সময় ব্যয় করলো না পরশ। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো পাঁচতলায়।স্পর্শীর দরজার সামনে গিয়ে অজস্র বার ডাকলেও সাড়া দিলো না কেউ।এমনকি দরজা ধাক্কালেও খোলে নি।হতাশ হয়ে নিজের রুমে ঢুকলো।বারান্দায় যেতেই দেখলো স্পর্শী তার বারান্দায় বসে নিশ্চিন্তে কফি খাচ্ছে আর চাঁদ দেখছে।তার চোখেমুখে আলাদা এক প্রশান্তির ছাপ।যেন পরশকে দৌড়ের উপর রেখে খুবই তৃপ্ত।দাঁতে দাঁত চেপে পরশ বললো,
‘থাপ্পড় খাওয়ার খুব শখ তোমার?তাইনা।’
স্পর্শী তাকালো না।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকে ধরাস করে দিয়ে দিলো দরজা।

ঘুমের মধ্যে ফোনের রিংটোনের শব্দে বিরক্ত হলো পরশ।চোখ-মুখ কুঁচকে ফোন হাতে নিলো।সুজন ফোন দিয়েছে।টাইমের দিকে নজর দিতেই দেখলো সকাল সাড়ে সাতটা।রিসিভড করে ধমক মেরে বললো, ‘এইই,তোদের না বলেছি, কেউ মরলেও সকাল নয় টার আগে কেউ আমার ফোনে ফোন দিবি না।’
ওপাশ থেকে কোনো সারাশব্দ এলো না।সুজন বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো থমথমে কন্ঠে বললো,
‘ভাই,ছবি পাঠাইছি আপনার হোয়াটসঅ্যাপে। এইসব কি?রানা আমারে ফোন দিয়া বলতেছে।ছবি তো ভাইরাল।পুরো পিরোজপুর জানাজানি হইয়া গেছে।আপনি কাজ টা কি করলেন?ঝামেলা তো এবার দ্বিগুণ বাজবে।তাও নির্বাচনের আগেই।”

পরশ অবাক হলো।ফোন কেঁটে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ।ফেসবুক থেকে নেওয়া কয়েকটা স্ক্রিনশট। ছবিতে স্পর্শী তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।আর সে জুতো হাতে স্পর্শীর দিকে তাকিয়ে আছে।আবার কোনো ছবিতে দুজন কাছাকাছি।যেখানে স্পর্শী তার হাত থেকে লজ্জালু ভঙ্গিতে জুতো নিচ্ছে।প্রতিটা ছবিতে খুবই রসালো করে ক্যাপশন দেওয়া।কোথাও লেখা ” প্রত্যেক পুরুষের’ই স্ত্রী’র জুতা ও ব্যাগ বহন করা উচিত।এতে ভালোবাসা দ্বিগুণ হয়।’

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৫

আবার কোথাও লেখা ‘প্রিয়, এভাবে জুতো নিয়ে হাঁটতে পারলেই বিয়েটা সেরে ফেলবো।’
আবার কোথাও লেখা, “আমি প্রজাপতির মতো উড়বো।যদি তুমি সামলে রাখতে জানো।’
পরশ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির মতো হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৩৭