রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৩

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৩
সিমরান মিমি

“আপনাকে না বলেছিলাম আমার নম্বরে ফোন বা মেসেজ কিছুই করবেন না।তাহলে আবার কেন এই রাত এগারোটার সময় কল করেছেন?”
ফোন রিসিভড করার সাথে সাথেই অপর প্রান্ত থেকে এমন ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।অবাক হলো না পরশ।কারন সে যে মানবীকে কল করেছে তিনি অত্যন্ত ভদ্র সম্প্রদায়ের বান্দা।যিনি তার মধুর কন্ঠস্বর কাউকে শোনাতে দ্বিধা বোধ করেন না।আর রীতিমতো এই ধমক শুনতেই এখন এই বেহায়া এমপির ভালো লাগে।তিনি সারাদিনের কাজ শেষে ক্লান্ত বিছানায় শুয়ে এই ধমক শোনার প্রত্যাশা করেছিলেন।এবং এতে তার মন-প্রাণ দুটোই সন্তুষ্ট হচ্ছে।
“আচ্ছা তুমি কি একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারো না?কিছু হলেই ঘ্যাঁচ করে ওঠো।তোমার এই খামখেয়ালীপনার জন্য আজ আমার এই অবস্থা। নইলে আজকে বিয়ে শেষে এখন আমরা বাসর ঘরে থাকতাম।”

চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো স্পর্শীর।কানের মধ্যে কেমন ঝনঝন করে উঠলো।ফোনটাকে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে বিছানার উপর রাখলো।ধীর কন্ঠে বললো,
“আপনি এই অসভ্য মার্কা কথা বলার জন্য আমাকে মাঝরাতে কল করেছেন?”
“উঁহু!না তো।আমি তো ভদ্র ভাবেই বলছিলাম।তুমিই তো অভদ্র করে তুলছো।যাই হোক,দুটো মিনিট একটু কথা বলবো।কাইন্ডলি চুপ করে শুনবে?নাকি তেলের মতো ছিটকে উঠবে।”
“বলুন কি বলবেন।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

শোয়া থেকে উঠে বসলো পরশ।বালিশ কোলের উপর রেখে শান্ত কন্ঠে বললো,
“দেখো,ওরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বলেই সবার অগোচরে বিয়ে করেছে।এতে আমার কোনো প্রবলেম নেই।কিন্তু ওরা এখনো ভয় পাচ্ছে।সেজন্যই পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।তবে আমার মনে হচ্ছে ওরা যদি দেখে আমরা দুজন স্বাভাবিক আছি,একসাথে আছি তাহলে ভয়টা কাঁটবে।তখন না হয় বাড়ি আসার জন্য বললেই চলে আসবে।স্পর্শীয়া,শুনছো?”
“হু,বলুন।”

ঢোক গিললো পরশ।নিজেকে সাঁজিয়ে নিয়ে কন্ঠকে খাঁদে নামালো।
“আমার মনে হচ্ছে আমি দিনদিন তোমার উপর দূর্বল
হয়ে পড়ছি।জানি,এটা মোটেও সঠিক নয়।এই অনুভূতিতা আমার মনে আসাও উচিত নয়।কিন্তু আমি নিরুপায়।আমার সাধ্যে থাকলে নিজেকে অবশ্যই কন্ট্রোল করতাম।
থেমে,
একটা সত্যি কথা বলবে?”
“কি?”
“তুমি কি আমায় খুব অপছন্দ করো?”
ঠোঁট টিপে হাসলো স্পর্শী।ধীর গলায় বললো,
“সেরকম কোনো ব্যাপার না।আর আমার উপর দুর্বল হবেন কেন?আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে।যার সাথে সেই পিরোজপুর থেকে ঢাকায় আসলেন।”
জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালো পরশ।আমতা-আমতা করে বললো,

“মজা করেছি। আমি আমার পারসোনাল কিছু কাজে গেছিলাম।তোমাকে রাগানোর জন্যই ওসব বলেছিলাম।”
আয়েষ করে বিছানায় বসলো স্পর্শী।সে জানতো পরশ শিকদার তাকে মিথ্যে বলছে।রাগানোর জন্য এমন সব উদ্ভট মেয়েঘটিত ঘটনা বলেছে যাতে সে উত্তেজিত হয়ে যায়।নিজেকে অনর্গল সামলানোর প্রয়াস করেও সামলাতে পারে নি সে।সেই হিংসায় চলে পুড়ে পরাজিত হয়ে ঠিকই ফিরে এসেছে।এইই এক মিনিট!পরশ শিকদার তাকে রাগানোর জন্য মেয়েঘটিত কথাবার্তা কেন বলবে তার সামনে?সেকি আদৌ টের পেয়ে গেছে স্পর্শীয়া সরদার ও তার প্রতি দুর্বল।না না না না।এমনটা তো মোটেই হতে দেওয়া যাবে না।এটা বিশাল বড় অপরাধ।নিজেকে সাঁজিয়ে ফোনটাকে পুনরায় কানে নিলো।কন্ঠকে গম্ভীর সজ্জায় সাঁজিয়ে নিয়ে কঠিন শব্দগুলো প্রয়োগ করলো।

“দেখুন মিঃ শিকদার।আপনার সাথে আমার কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। সেখানে প্রেমঘটিত তো দুরের কথা।অতএব, আপনি যদি আমাকে রাগানোর উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো মেয়েঘটিত ঘটনা বলে থাকেন তাহলে শুনুন।স্পর্শীয়া সরদার মোটেই জেলাস নয়।আর নাতো রাগ করেছে।আপনি আমাকে পছন্দ করতেই পারেন।এটা স্বাভাবিক।আমার কাছে এই ভালোলাগার কথা প্রকাশ করা আরো স্বাভাবিক।কিন্তু এর বিনিময়ে আমার থেকে কোনো পজেটিভ উত্তর পাওয়ার কথা অস্বাভাবিক।আমি আপনাকে অপছন্দ করি না।এর মানে এটা নয় যে আমি আপনাকে পছন্দ করি,ভালোবাসি,আপনার প্রতি দুর্বল।এটা ভাবা বোকামি।শুনুন,যেহেতু ঘটনাটা এতো দূর গড়িয়েছে তাই আমি আপনাকে সত্যিটা বলতেই পারি।
অবাক হয়ে ফোন কানে নিয়ে অপেক্ষায় রইলো পরশ।তার বুকের ভেতরটা কেমন টিপটিপ করছে।গলা বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে।

” কি সত্যি?”
“সত্যি মানে এটাই যে আমি অলরেডি রিলেশনে আছি।আর আমাদের সম্পর্কের বয়স ও আজ প্রায় পাঁচ বছর।ওর নাম রাহুল।আমার কলেজ ফ্রেন্ড ছিলো।সাভার ন্যাশনাল কলেজেই আমরা একসাথে পড়েছিলাম।ওই সময় থেকেই সম্পর্ক।ইনফ্যাক্ট এখনো আছে।তবে ও চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।আমার’ই ব্যাচমেট।ইনশাআল্লাহ আমরা সামনে মাসেই বিয়ে করতে যাচ্ছি।এর আগেই করতাম কিন্তু সমস্যা ছিলো ওর কোনো চাকরি ছিলো না।তাই জন্য ফ্যামিলিকে জানাই নি।এখনো যে খুব ভালো চাকরি করে তা না।তবে যা করে তা তে বিয়ের পর আমাদের সংসার খুব ভালো চলবে।ও খুব বিশ্বাসী,আপনার সাথে ছবিগুলো ভাইরাল হবার পরেও ও আমাকে বিশ্বাস করেছে।এমন একজন মানুষকে আমি ঠকাই কিভাবে বলুন?”

ফোনটা আস্তে করে কেঁটে গেল।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে।পরক্ষণেই কলেজ লাইফের একটা দলভিত্তিক ছবিকে কাট করে রাহুল ও তার ছবি এডিট করে নিলো।যেখানে স্পর্শীর কিশোরী বয়সের শাড়িপড়া হাস্যজ্জ্বল ছবি।আর পাশেই রাহুলের হাসিমাখা মুখ।ঠোঁট টিপে আস্তে ধীরে হোয়াটসঅ্যাপে ঢুকলো।টুক করে ছবিটা সেন্ড করে নিচে লিখলো,
“এটা আমাদের কলেজ শেষের ছবি।”
দু মিনিটের মধ্যেই ওপাশ থেকে কল এলো পুনরায়।স্পর্শী কানে নিয়ে চুপ করে তাকিয়ে রইলো পরশের রিয়াকশনের আশায়।কিন্তু তাকে হতাশ করে দিয়ে চুপটি করে রইলো পরশ।মিনিট খানেক যেতেই স্পর্শী ‘হ্যালো,হ্যালো’করতে রইলো।কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ নেই।নিরবতা ভেঙে এবার শান্ত, ভাঙা কন্ঠের স্বর ভেসে আসলো।চমকে গেলো স্পর্শী।

“তুমি কি আমার সাথে মজা করছো, স্পর্শীয়া?তোমার কি মনে হচ্ছে আমি আমার দুর্বলতা টাকে তোমার কাছে প্রকাশ করেছি বলে আমি অসহায়?আমাকে নিয়ে মজা ওড়াবে,অপমান করবে,যা মন চাইবে তাই করবে?তোমার কি মনে হচ্ছে না আমি একজন এমপি হয়ে নিজের অনুভূতিটাকে,দুর্বলতাটাকে ব্যক্তিত্বের বাইরে গিয়ে তোমার সামনে প্রকাশ করছি বলে তুমি রীতিমতোই তোমার ব্যক্তিত্বের বাইরে গিয়ে আমাকে অপমান করছো?”
এবারে খানিকটা চুপসে গেল স্পর্শী।মিনমিনে কন্ঠে বললো,
“সেরকম কিছু নয়।আমি মজা করছি না।”

“ওকে ফাইন।তুমি হয়তো বিরক্ত হচ্ছো।কথাগুলো আগে বললেই দ্রুত সমাধান হয়ে যেত।রাখছি,বেস্ট অফ লাক।আর হ্যাঁ,তোমার পছন্দ আছে।বেশ স্মার্ট ছেলেটা।বায়।”
শ্বাস নিতে ক্রমশ কষ্ট হচ্ছে।নিঃশ্বাস গুলো যেন একে অপরের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে।ফোনটাকে সুইচ অফ করে বারান্দার দিকে গেল।সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলো সয়ংক্রিয় ভাবে।ধোঁয়াগুলো যেন মেঘের সাথে আলিঙ্গন করছে।আকাশটা আজ বড্ড মেঘলা।সেদিকে তাকিয়ে ব্যর্থতার হাসি দিলো।সাথে সাথেই মেঘের বিশাল গর্জন। যেন পরশকে উপহাস করছে তারা।সে তাকে বোঝাতে পারেনি নিজের অনুভূতি।

হয়তো তার হৃদয় অবধি অন্য কোনো পুরুষের জন্য পৌছাতে পারেনি।তৃতীয় পক্ষ!হাসলো আবার ও।ওদের মধ্যে তৃতীয় পক্ষ পরশ নিজেই।যন্ত্রণায় চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।মুহুর্তেই ভেসে এলো স্পর্শীর মুখ।সেই প্রথম দেখা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রতিটা ক্ষেত্রে,প্রতিটা ঘটনাতেই স্পর্শী তাকে অবজ্ঞা,অবহেলা,অপমান করে গেছে।আর সে বোকার মতো সেসবে ভালোবাসা খুঁজে গেছে।হঠাৎ ঝুম করে বৃষ্টি চলে এলো।পরশ সরলো না।শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।একটু সস্তির প্রয়োজন।ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার জন্য কিছু স্নিগ্ধ স্পর্শের প্রয়োজন।আর সেই স্পর্শগুলো বৃষ্টির ফোঁটা হলে মন্দ হয় না।

সারারাত একটানা বৃষ্টির পর সকালের পরিবেশ টা ভীষণ চঞ্চল।ফুল,পাতার রঙগুলো স্পষ্ট হয়ে প্রকৃতি মেতে উঠেছে রঙলীলায়।সাড়ে আটটা বেজে গেছে।পার্টি অফিসে যাওয়া প্রয়োজনে।গত কয়েকদিনে অনেক অবহেলা করা হয়েছে।সদ্য নির্বাচিত হওয়া একজন এমপির থেকে এরকম দায়িত্বে অবহেলা জনগণ বরদাস্ত করবে না।জীবনটাকে একটু সাজানো প্রয়োজন।প্রায় ত্রিশ বছরে পা রাখবে আর কিছু মাস পড়ে।এখনো জীবন টা কেমন রুক্ষ।কোনো শান্তি নেই।কেমন যন্ত্রের মতো বাইরে যাচ্ছে আর দায়িত্ব পালন করছে।এবারে কিছু পরিবর্তন করা দরকার।যাতে নীড়ে ফিরে আসার টান থাকে।

সিঁড়ি দিয়ে ত্রস্ত পায়ে নিচে নামলো পরশ।গায়ে কেমন জ্বর অনুভূত হচ্ছে।মাথাটাও কেমন ওজন হয়ে গেছে।জ্বর হবে?হতেই পারে।এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।সারারাত না ঘুমিয়ে বৃষ্টির মধ্যে দেবদাসের মতো বিচ্ছেদের যন্ত্রণা নিঃশ্বেষ করলে তো আর ঠান্ডা মায়া দেখাবে না।সে ঠিকই চলে আসবে।
টেবিলে মা,বাবা,চাচা আর প্রেমা বসে খাচ্ছে।চেয়ার টেনে বসে নিজের খাবার নিলো।ধীরে ধীরে টুকটাক আলোচনা শুরু হলো।সামনের রাজনীতি নিয়ে,পাভেলের খোঁজ নিয়ে।পরশ ধীর কন্ঠে উত্তর দিতে লাগলো।খাওয়ার মাঝামাঝি সময়ে আলতো কেঁশে সবার আকর্ষণ নিলো।শান্ত কন্ঠে বললো,
“আব্বু,আমি বিয়ে করতে চাইছি।”

তড়িৎ গতিতে সবাই তাকালো পরশের দিকে।পিয়াশা ছুটে এলো ছেলের দিকে।কপালে গায়ে হাত রাখতেই বললো,”তোর তো জ্বর উঠবে মনে হচ্ছে।এর জন্যই উদ্ভট কথা বলছিস বাপ।”
সিরিয়াস ভঙ্গিতে মায়ের দিকে তাকালো পরশ।”আম্মু,আমি মজা করছি না।কথাগুলোকে সিরিয়াসভাবে নিতে শিখো।”
স্ত্রীকে ইশারা দিয়ে থামতে বললো আমজাদ শিকদার।পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,”বলো।”
“আমার মনে হচ্ছে লাইফ গোছাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে ফেলেছি আমি।এখন বিয়ে করা উচিত।তোমরা কোনো ঘটককে বলে রেখো।তবে হ্যাঁ,পুরবীর কথা মাথায় ও আনবে না।পরপর ফুপিকে দু দুবার কষ্ট দেওয়া হয়েছে।আমি চাই না এইসব প্রভাব পুরবীর উপর পড়ুক।মেয়ে দেখার দায়িত্ব তোমাদের উপরেই ফেললাম।যত দ্রুত সম্ভব আমি বিয়ে করবো।কাল হোক বা দুদিন পর কিন্তু খুব দ্রুত।আর একটা কথা মাথায় রেখো।মেয়ের বয়স যেন ২১ এর নিচে না হয়।আর বিয়ের আগে যেন কোনো সম্পর্ক না থাকে কারো সাথে।ব্যাস!আর কিছুর প্রয়োজন নেই।আমি বাড়ি এসে যেন আপডেট নিউজ পাই।”

খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে টিসু দিয়ে মুছে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল গ্যারেজের দিকে।ধুম করে চেয়ারে বসে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো পিয়াসা।
সারা রাত শেষ।সকাল গিয়ে বিকেল হলো।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো তাও কোনো ফোন এলো না স্পর্শীর নাম্বারে।কি অদ্ভুত!রাত বাজে প্রায় নয়টা।এ নিয়ে প্রতি দশ মিনিট পর পর ফোনটা চেক করা হয়েছে।কিন্তু পরশের নাম্বার তো দূর কোনো অচেনা নাম্বার থেকেও মেসেজ বা কল আসে নি।এপর্যায়ে ধৈর্য্যহারা হওয়ার উপক্রম।উনি কি সত্যিই বিশ্বাস করলো।হতেই পারে।যেহেতু ছবিসহ পাঠিয়েছে,তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেছে।আচ্ছা!সেকি এখন দেবদাস হয়ে বসে আছে?নাকি উলটো খুশি হয়েছে।কিছুই বোঝা যাচ্ছে ন এই মুহুর্তে।

কথা না বলা পর্যন্ত বোঝা সম্ভব নয়।ভাবতেই কল করলো স্পর্শী। কিন্তু তাকে হতাশ করে ওপাশ থেকে নম্বর বন্ধ বলছে। রাগ লাগলো ভীষণ। কিন্তু এই রাগকে বেশিক্ষণ টেকাতে পারলো না।ঘন্টাখানেক পর পর বারংবার ফোন দিতে লাগলো সবগুলো সিমে।এক একটা ব্লক খুলে খুলে কল দিতে লাগলো। কিন্তু প্রতিবার ই একই কথা ভেসে আসছে।কেটে গেল সারা রাত।কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারলো না।হোয়াটসঅ্যাপেও এক্টিভ নেই।পরপর কতগুলো মেসেজ দিয়ে শেষে ঘুমিয়ে পড়লো।

ঢাকায় আসার পরে এবার আর কোনো টিউশন খুঁজে পায় নি।যারা ছিলো সবাই নতুন টিচার নিয়েছে।পেলেও সেটা সামনে মাস ছাড়া পাবে না। এদিকে মায়ের পার্লারেও লোক লাগবে।শেষে বাধ্য হয়ে পার্লারে সময় দিতে লাগলো।ঘড়ির কাঁটায় দশটা পেরিয়ে গেছে।মা সেই সাতটার দিকেই পার্লারে গেছে।কিন্তু অতিরিক্ত আলসেমির কারনে আর যাওয়া হয় নি।শেষে বাধ্য হয়ে উঠে রেডি হলো।পার্স ব্যাগ টা হাতে নিতেই গেটে কেউ ধাক্কা দিলো।ধীর পায়ে এগিয়ে এলো স্পর্শী।চঞ্চল চিত্তে গেট খুলতেই চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।বাইরে সোভাম ভাই দাঁড়িয়ে আছে।মুহুর্তেই মুখের উপর গেট আটকে দিলো।থমথমে পায়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো।আজ আর যাওয়া হবে না।ব্যাগ টা ছুড়ে বিছানায় উঠে বসলো।

একটানা দেড় ঘন্টা বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো সোভাম।কিছুক্ষণ পর পর দরজা ধাক্কা দিয়ে স্পর্শীকে ডাকছে।আশেপাশের মানুষ জন কেমন অদ্ভুত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।লজ্জা লাগলো সোভামের।হেঁটে গাড়িতে ঢুকলো।ফোন কানে নিয়ে বললো,
“আব্বু,দেখামাত্রই গেট আটকে দিয়েছে।প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে গেছে।এখনো গেট ই খুলেনি।কথা বলবো কিভাবে?”
“চলে আসো।
” ওকে।”

ফোনটাকে স্ক্রল করতে করতে সেভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো স্পর্শী। আচমকাই জেগে উঠলো।মশা কামড়াচ্ছে ভীষণ। সাভারে সব কিছুর অভাব হলেও মশার অভাব হবে না।কর্পোরেশন এগুলোকে লালন-পালন করছে।হয়তো চিড়িয়াখানা বানানোর ইচ্ছা।বালিশের কাছে ফোন দেখতেই দ্রুত হাতে নিলো।কল লিস্ট,মেসেজের লিস্ট চেক করেও কাঙ্ক্ষিত কোনো কল বা মেসেজ পেল না।হতাশ হয়ে ফেসবুকে ঢুকলো।স্ক্রল করতে করতেই মনে পড়লো পরশের কথা।আচ্ছা,উনি তো একজন এমপি।নিশ্চয়ই তার কোনো পেইজ থাকবে।দ্রুত সার্চলিস্টে সার্চ দিলো।কাঙ্ক্ষিত পেইজ পেয়েও গেলো।কিন্তু তারপরেও হতাশ হতে হলো।এখানে লাস্ট পোস্ট উনিশ দিন আগে করা হয়েছে তাও কোন নিচু চর নিয়ে।হয়তো কোনো বাজেটের বিষয়।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই পেইজে মেসেজ দেওয়া যাচ্ছে না।

পেইজ থেকে বের হয়ে স্ক্রল করতেই কিছু পোস্ট পড়লো সামনে।অনেকেই “Porosh Shikder ” আইডিতে ট্যাগ করে কিছু শুভেচ্ছা জানানোর পোস্ট করেছে তাও রিসেন্টলি।মাত্র তিন ঘন্টা আগে।কৌতূহল বশত সেই আইডিতে ঢুকলো।হ্যাঁ, রিচ আর ফলোয়ার্স দেখে এটাকেই মেইন আইডি বলে মনে হচ্ছে।আরেকটু স্ক্রল করে নিচের দিকে যেতেই স্তব্ধ হয়ে গেল।একের পর এক টাইমলাইনে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্ট করছে সবাই।
“বিবাহিত জীবনের জন্য শুভেচ্ছা ভাই।”
“নতুন জীবন সুখের হোক।”
“দাম্পত্য জীবন সুখের হোক।”

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪২

হাত-পা প্রবল গতিতে কাঁপছে।হৃৎপিন্ড উদাম গতিতে চলছে।চোখদুটো যেন বন্ধ হয়ে যাবে মুহুর্তেই।এইতো তিন দিন আগেও কথস হলো।কই?কিছু তো বললো না এ ব্যাপারে।এটা যেন অবিশ্বাস্য।এতো গুলো মানুষ কি ভুল হতে পারে?নাহ!তাহলে কি সত্যিই পরশ শিকদার বিয়ে করে নিয়েছে?

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৪৪