রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫১

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫১
সিমরান মিমি

“আব্বু কোন ফ্লোরের কত নং কেবিনে আছে,ভাইয়া?”
ঘাড় কাত করে পেছনে তাকালো পরশ।ভেজা চোখ দুটোর মধ্যে আকুলতা নিয়ে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে আর্শি।এটাই প্রথম আর্শি তার সাথে কথা বলেছে।কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর পরশ কি দেবে?এর জবাব তো তার জানা নেই।কন্ঠে গাম্ভীর্যতা এনে বললো,
“সেটা জানি না।”
অবাক হলো পাভেল।ড্রাইভিং করতে করতে বললো,
“জানিস না মানে?তাহলে হুট করে কোথায় উঠবো?

” স্পর্শীয়া সরদার কি সোজাসাপ্টা এড্রেস দেওয়ার মতো মেয়ে?একটু না একটু তো ঝামেলা পাকিয়েই রাখবে।কমপক্ষে দশবার কাল রাতে কল দিয়েছি “এড্রেস টা দাও, এড্রেস টা দাও।’আর সে ছোট্ট একটা মেসেজ জাস্ট হস্পিটালের নাম টা লিখে দিলো।বললাম কত নাম্বার কেবিন,সেখানে যাওয়ার শর্টকাট রাস্তা বলো।নাহ!ম্যাডাম বললেন না।বরং খামখেয়ালি করে বললো খুঁজে আসতে পারলে আসেন নইলে প্রয়োজন নেই।”
ঠোঁট টিপে হেসে দিলো পাভেল।বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এখনো সময় আছে।ভেবে দেখ।একটা দূর্ঘটনা কিন্তু সারা জীবনের কান্না।দেখা গেল বাসর রাতে সদর দরজা আটকে দিয়ে বললো, ” বাড়ির পেছনের সুপারি গাছ অথবা পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সেখান থেকে রুমে আসতে পারলে বাসর হবে;নইলে প্রয়োজন নাই।”
আর্শি লজ্জা পেল।প্রেমা কিছু না শোনার ভান ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।কোনোরকম রিয়াক্ট করলো না পরশ।উদাসীন হয়ে সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“হতেই পারে।অস্বাভাবিক কিছু না।”

শামসুল সরদারের হাত ধরে অনবরত কাঁদছে পিপাসা।লোকটা আজ এতো গুলো দিন পরেও কোনো রাগ দেখাচ্ছে না।বরং তার সাথে সেধে কথা বলতেই তিনি সান্নিধ্যে জড়িয়ে ধরেছেন হাত দুটো।যেন এটার অপেক্ষাতেই ছিলেন।শামসুল নির্বাক হয়ে স্ত্রীয়ের কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।অত্যন্ত কষ্ট করে মুখে আওয়াজ এনে বললেন,
“আমি ধমক দিতে পারবো না বলেই কি তুমি কাঁদছো?”
শুনেই কোনো রিয়াক্ট করলেন না পিপাসা।বরংচ স্বামীর ডান হাত টাকে টেনে গালে ছোঁয়ালেন।বললেন,
“আপনি কেন সারাক্ষণ এমন উত্তেজিত হয়ে থাকেন।যদি খারাপ কিছু হয়ে যেত।”
হাসলেন শামসুল।বললেন,

“আমি ভিঁজে যাচ্ছি তৃষ্ণা।এমনভাবে চলতে থাকলে আর কিছুক্ষণ পর পুরো হস্পিটাল ডুবে যাবে।”
না চাইতেও কান্নার মধ্যে হেসে দিলো পিপাসা।নিজেকে সংযত করে শান্ত কন্ঠে বললেন,
“আপনি কিছু খাবেন?আমি কি রান্না করে নিয়ে আসবো?”
শামসুল উত্তর দিতে উদ্যত হতেই দরজার দিকে তাকালো।সোভাম সহ বাকিরা দরজার সামনে।হাত ছেড়ে দিলো পিপাসা।উঠে দাঁড়িয়ে একটু দুরত্বে দাঁড়ালো।সোভাম ছুটে গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়ালো।কন্ঠে উদ্বেগ নিয়ে বললো,
“অক্সিজেন খুলেছো কেন?শ্বাস কি নিতে পারছো?বুকে কি ব্যথা করছে এখনো?”
মাথা নাঁড়ালো শামসুল।ছোট্ট স্বরে বললো,
“ঠিক আছি আমি।বুকটা ভার হয়ে আছে।আর জোরে কথা বলতে গেলে বুক চিরে ওঠে।”
“ওহ!সাড়ে আটটা বাজলেই ডক্টর চলে আসবে।তারপর চেক আপ করাবো তোমায়।কিছু খাবে?নিয়ে আসবো?কি খেতে পারবে?
থেমে,

এই রিহান,নার্স কে ডেকে নিয়ে আয় তো।কি খেতে পারবে তা তো জানি না।”
একে একে সবার সাথে কথা বললো শামসুল।কিন্তু কয়েক বার দরজার দিকে তাকালেও স্পর্শীকে দেখতে পেল না।আচ্ছা,ও কি আদৌ বাবাকে দেখতে এসেছিলো?
স্বামীর এই উদ্বেগ চোখ এড়ালো না পিপাসার।সোভামের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো,
“স্পর্শী কোথায়?তোমাদের সাথেই তো গেল।”
চমকে পেছনে তাকালো সোভাম।স্পর্শীকে না দেখতে পেয়ে বললো,
“মনে হয় ভেতরে আসে নি।”
কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল পিপাসা।তার পিছু পিছু সোভাম ও চলে এলো।স্পর্শী এতোক্ষণ উঁকি দিয়ে বাবাকে দেখলেও যখন তার কথা উঠেছে তখন ছুটে অদুরের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলো।পিপাসা এগিয়ে গেল।কন্ঠে কাঠিন্যতা এনে বললো,

“বাবাকে দেখতে যাবি না?”
মুখ তুলে তাকালো স্পর্শী।বললো,
“তোমাদের দেখা হয়েছে?”
মাথা নাড়লো পিপাসা।বললো,
“তোকে খুঁজছে।যা দেখে আয়।”
থমথমে মুখে দাঁড়ালো স্পর্শী।দৃষ্টি তার ফ্লোরে নিমজ্জিত। গুটি গুটি পায়ে কেবিনে ঢুকে সোজা বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।এই মুহুর্তে কেবিন শূন্য।একমাত্র শামসুল সরদার ছাড়া বাকিরা কেবিনের বাইরে আছেন।শামসুল শোয়া থেকে মাথাটা তুলে বেডের পাইপের সাথে এলিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলো।দৃষ্টি তার স্পর্শীর দিকে হলে কন্ঠ তার নিশ্চুপ।কোনো রকম শব্দ উচ্চারণ করছেন না তিনি।স্পর্শীয়া শান্ত হয়ে চোরের মতো বাবার বেডে বসলো।এরপর আলগোছে মাথা নুইয়ে বাবার বুকের উপর দিয়ে চুপটি করে বসে রইলো।নিঃশব্দে হাসলেন শামসুল। টিটকারি মেরে বললেন,

“তা,বাবাকে প্রয়োজন আছে নাকি?আমি তো ভেবেছিলাম দরকার ‘ই নেই।”
স্পর্শী জবাব দিলো না।ওভাবেই পড়ে রইলো বুকের উপর।চোখ দিয়ে অশ্রুরা নিরবে বিসর্জন হচ্ছে।শামসুল ভেঁজা অনুভব করলেন।পরক্ষণেই বললেন,
“মরে গেলে কার বুকে মাথা রাখতেন, আম্মাজান?”
জমে গেল স্পর্শী।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো বাবাকে।শামসুল বুকে প্রচন্ড চাপ অনুভব করলেন।ব্যাথাও হচ্ছে।কিন্তু তাও মেয়েকে সরালেন না।বরং দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।

দিনের মধ্যভাগ।সূর্য তখন মাথার উপরিভাগ দখল করে চরম আয়েশে বসে আছে।স্থান দখলের সে কি গরিমা তার।নিজেকে সর্বোচ্চ দেখাতে প্র‍য়োগ করছে জনমানবের উপরে।দেখাচ্ছে তার অসহ্যকর তেজ।শুকনো রাস্তাঘাট শুষ্কতার আবরণে ডুবে রুপান্তরিত হয়েছে মরুভূমিতে। পায়ের নিচে এক ধুলোর সাগর, মাথার উপরে বিশাল অগ্নিতপ্ত চুল্লীতে ধরনীর সবাই যায় যায় অবস্থা।এমনই এক শুষ্ক রগচটা পরিবেশে স্কয়ার হস্পিটালে প্রবেশ করলো শিকদার রা।ত্রস্ত পায়ে হেটে গেল ভেতরে।রিসিপশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে জেনে নিলো সম্পুর্ন ডিটেইলস।গটগট পায়ে হেঁটে গেলে লিফটের দিকে।থার্ড ফ্লোরের চারশত তিন নাম্বার কেবিনে আছেন তারা।লিফটের কোনায় থাকা চার নম্বর বাটনে প্রেস করে দিলো পাভেল।তাদের কে চারতলায় যেতে হবে।মিনিট খানেকের মধ্যে উপস্থিত হলো তারা।

পাভেলের হাতে চার টা ব্যাগ।যাতে ফল সহ মিষ্টি আছে।ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেল কেবিনের দিকে।করিডোরে রাখা বেঞ্চিতে বসে আছেন রিহান ও তার বাবা।মাত্রই খেয়ে এসেছেন তারা।সামান্য জিরিয়ে নিতে যত তাড়া।ডান দিকে তাকিয়ে পরশ শিকদার কে দেখতেই উঠে দাঁড়ালেন।একে একে আর্শি আর পাভেল কেও চোখ এড়ালো না।বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।এগিয়ে গেলেন কেবিনের দিকে।গলার আওয়াজ কমিয়ে বললেন,
“ভাইজান,পরশ শিকদার আসছে।সাথে ওর ভাই আর আর্শিও আছে।”
চমকে তাকালো স্পর্শী।শান্ত কন্ঠে কাকার উদ্দেশ্যে বললো,
“ওরা মনে আব্বুকে দেখতে এসেছে।শুনলাম আর্শি আসার জন্য নাকি কান্নাকাটি করছিলো।তাই হয়তো নিয়ে এসেছে।”
গম্ভীর হয়ে গেলেন শামসুল। চোয়াল শক্ত করে বললেন,

“আমার কেবিনে যেন কেউ না ঢোকে।আমার মাত্র একটা মেয়ে।আর কোনো মেয়ে নেই।”
থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো আর্শি।বুকের ভেতর টা মুচড়ে উঠলো।অসহনীয় যন্ত্রণায় চোখ দুটো টইটম্বুর হয়ে গেল মুহুর্তেই।পরশ নিজেও অপমানিত বোধ করলো।কিন্তু পিছু হটলো না।এই মুহুর্তে পাভেল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কি করবে, কি বলবে যেন সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।সোভাম হনহন করে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে।রাগে, ক্ষোভে ক্রমশ বিষিয়ে আসছে শরীর।এর থেকে কেবিন ত্যাগ করাই শ্রেয় মনে হলো।পরশ এগিয়ে এলো ভেতরে।শান্ত কন্ঠে শামসুলের উদ্দেশ্যে সালাম দিলো।

কিন্তু ফিরেও তাকালো না সে।বরংচ অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো গাম্ভীর্য নিয়ে।পরশ হাসলো।পাভেলের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিতেই সে ব্যাগ গুলো পিপাসার হাতে দিয়ে সালাম করলো।
অসস্তিতে পড়লো পিপাসা।একদিকে এতোদিন পর মেয়েকে দেখেছে।ছোট্ট মেয়েটা বড় দের মতো শাড়ি পরে এসেছে।দেখতে একদম পরিপূর্ণ নারীর মতো দেখাচ্ছে।এটা তার মেয়ে।বিয়ে হয়ে গেছে। অথচ সে মা হয়েও অনুভূতি গুলো অনুভব করতে পারে নি।ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু পুরো কেবিন জুড়ে আলাদা আলাদা মানুষের ভিন্ন রিয়াকশনে যেন সবটা গুলিয়ে গেছে।মূর্তির মতো হাতে ব্যাগ গুলো নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।আর্শি হীনমন্যতায় ভূগছে।কি করবে না করবে কিছু ভেবেই পাচ্ছে না।কেউ তার দিকে কথা বলা তো দূর তাকাচ্ছেই না।দুপা এগিয়ে বোনের দিকে গেল। অস্ফুটস্বরে বললো,

“আপু,কেমন আছো?”
উত্তর পেল না।ঢুকরে কান্না এলো।কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো।এগিয়ে এলো মায়ের দিকে।ইতোমধ্যে ব্যাগ গুলোকে নিচে রেখেছে পিপাসা।আর্শি মায়ের দিকে এগিয়ে আসতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো পিপাসা।মায়ের হাত দুটো ধরে কান্না করে দিলো আর্শি।হেঁচকি তুলে বললো,
” আম্মু,কথা বলবে না।”
শক্ত হয়ে জমে রইলো পিপাসা।মুখে টু শব্দটাও আনলেন না।আজ এতোগুলো দিন পর মায়ের কথা মনে পড়েছে।অথচ বিগত দিনগুলোতে কি এক টা বারের জন্যেও ফোন দেওয়া যেত না?”

এবারেও আশাহত হলো আর্শি।এগিয়ে এলো বাবার দিকে।হাত বাড়িয়ে বাবার হাত টা ধরতেই চিৎকার করে উঠলেন।
“আমাকে ধরবে না।তুমি আমার মেয়ে নও।আমার একটাই মেয়ে।এখান থেকে চলে যাও।”
চমকে উঠলো স্পর্শী। এগিয়ে এলো দ্রুত।শামসুল সরদার বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন।ব্যাথা উঠেছে আবারো।কেঁদে উঠলো আর্শি।বাবার এতোটা কষ্ট যেন মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।স্পর্শী বাবাকে ধরে শুইয়েছে।বুকে হাত দিয়ে বারংবার মেঝে দিচ্ছে।অথচ সে ছুঁতেও পারছে না।বাবা তাকে মেয়ে হিসেবে মানেই না।মিনিট খানেকের মধ্যেই আবারো শান্ত হলেন শামসুল।স্পর্শীকে বললো,
“ওদের যেতে বলো এক্ষুণি।”
জিভ দিয়ে গলা ভেঁজালো পরশ।শান্ত কন্ঠে বললো,

“শুনেছিলাম আপনি অসুস্থ।তাই দেখতে এলাম।কিন্তু এখন তো দেখছি পুরোদমে ঠিক।এটাকে তো অসুস্থ বলে না।আমি তো ভেবেছিলাম নিজে এসে জ্ঞান ফেরাবো।তা আর হলো কই?”
চোখ রাঙিয়ে তাকালো শামসুল।খানিকটা আওয়াজ করে বললো,
“তুমি কি আমার মৃত্যু কামনা করেছিলে?”
“যদিও এটা হলে আমার’ই লাভ।তবে,আপাতত এসব কিছু চাই নি।আমার জিনিস আমি এমনিতেও নিয়ে নিবো।আর সেটা খুব শীঘ্রই। ”

চমকালো স্পর্শী।এতোক্ষণে মুখ তুলে চাইলো পরশের দিকে।মুহুর্তে ই নামিয়ে নিলো দৃষ্টি।লোকটা আগের থেকে অনেক টা বদলে গেছে।এই যেমন আগের থেকে একটু ফর্সা লাগছে।গালের ভাঙা অংশগুলো কেমন ভরে উঠেছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে আগের থেকে কিছুটা মোটা হয়েছে।হবেই তো।হয়তো যত্ন-আত্মি বেড়েছে।মুরব্বিরা বলতেন বিয়ের পরে ছেলেরা বেশি সুন্দর হয়।
বিয়ের কথা ভাবতেই চোখ বন্ধ করে দম নিলো স্পর্শী। পরশ রা বেড়িয়ে গেছে ইতোমধ্যে।শামসুল ক্ষেপে গেল।অবাক হয়ে বললো,

“ওর জিনিস ও নেবে মানে কি?ওর কোন জিনিস আছে আমার কাছে?”
স্পর্শী বাবাকে ধরলো।পুনরায় শুইয়ে দিয়ে বোঝানোর সুরে বললো,
“চুপ করো,চুপ করো।শান্ত হও।এভাবে উত্তেজিত হয়ো না।অসুস্থ হয়ে যাবে।ও এসেছেই তোমাকে অসুস্থ করতে। যাতে সামনের উপজেলা নির্বাচনে তোমার দল নড়বড়ে হয়ে যায়।শুয়ে পড়ো।”

বাবাকে বুঝ দিয়ে বের হয়ে গেলো স্পর্শী।পিপাসা তার আগেই ছুটেছে।এই মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে সে ভুল করেছে।সবাই মুখ ফিরিয়ে থাকলেও তার এমন করা উচিত হয় নি।মেয়ে,মেয়ে জামাই,বড় ভাসুর,ননদ সবাই সেধে এসেছে।অথচ যাচ্ছে অপমানিত হয়ে।এই অপমান যদি বাড়িতে গিয়ে মেয়েটার উপর মেটায়।না না।তার এমন টা করা মোটেও উচিত হয় নি।পরশ রা ইতোমধ্যে লিফটে উঠে গেছে।পিপাসা বিপরীত সাইটের লিফটে উঠলো।একপ্রকার গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে তাদের নাগাল পেল।মাকে আসতে দেখতেই দাঁড়িয়ে পড়লো আর্শি।মেয়েকে কিছুটা সাইডে নিয়ে ধমকের সুরে বললো,

“তুই কি পাগল নাকি?আসার আগে জানাবি না?আর আসবি তো আসবি বাসায় নিয়ে আসতি।এভাবে হস্পিটালে আসছিস কেন?তাও আবার নতুন জামাই,ভাসুর সহ।তোর বাবা কেমন তা তো জানিস ই। শুধু শুধু ওদের এনে অপমানিত করানোর কোনো দরকার ছিলো?”
এইটুকু ধমকের মধ্যে যেন বিস্তর সুখ খুঁজে পেল আর্শি।আচমকাই মাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।বললো,

“আমি বুঝতে পারি নি আম্মু।আব্বু এতটা অসুস্থ শুনে মাথা আর কাজ করে নি।আপুও আমার সাথে কথা বলে না।তোমরা কেউই বলো না।আমি কি এতটা পর হয়ে গেছি?”
মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন পিপাসা।বললেন,
“তুই যা করেছিস তাতে কি বাহবা দিবে?”
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”

চমকালো পিপাসা।তাকিয়ে পাভেল কে দেখতেই বিনয়ী হাসলো।সালামের উত্তর দিয়ে বললো,
“তোমরা চলো না আমার বাসায়।বেশি দূর না,এই তো ঘন্টা দুয়েক লাগবে জ্যাম না হলে।সাভারেই বাসা।”
“না না।আজ যাই।অন্যকোনো দিন আসবো।”
“ঠিক আছে।”
এরপর আর্শির দিকে তাকিয়ে বললো,
“জানিয়ে আসিস।বোকার মতো কাজ করিস না।”
পরশ দুরেই দাঁড়িয়ে আছে।তার দৃষ্টি আশেপাশে।মন বলছে স্পর্শী লুকিয়ে তাকে দেখছে।কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না।পিপাসা এগিয়ে গিয়ে বললো,

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫০

“বাবা,রাগ করো না।তোমাদের মধ্যে এতো বিরোধীতা এর মধ্যে আবার নতুন সম্পর্ক। মেনে নিতে একটু তো সময় লাগবেই।কিছু মনে করো না ওর বাবার কথায়।”
পরশ চমকালো।ভদ্রতাসূচক হেসে বললো,
“আরে না না আন্টি।আমি কিছু মনে করি নি।আর মনে করার মতো কথা হলেও কিছু মনে করতে পারবো না।নতুন নতুন সম্পর্ক তো।”
বোকার মতো তাকিয়ে রইলো পিপাসা।কথাগুলো যেন মাথার উপর দিয়ে চলে গেল।পরক্ষণেই পাভেল-আর্শির নতুন সম্পর্ক মনে করে বিনয়ী হাসলো।

রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৫২