রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৮২
সিমরান মিমি
“খেয়ে নিন।”
হাতের খাবারের প্লেট টা টি-টেবিলের উপর সশব্দে রেখে জোরপায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।বারান্দায় দাঁড়িয়ে শীতের ঠান্ডা হাওয়ায় জমে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো স্পর্শী।বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ছিলো পরশ।শব্দ পেতেই কপালের উপর থেকে হাত টা সরিয়ে উঠে বসলো।একবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বারান্দার দিকে চাইলো।দুপুরে খাওয়া হয় নি,ইচ্ছে করেই খায় নি সে।রাতে মাথা ঠান্ডা করে বাড়িতে ঢুকলেও পরক্ষণেই প্রেমাকে বিয়ে করতে সোভাম রাজী হয়েছে একথা শোনার পর আর শান্ত থাকতে পারে নি।তার উপর স্পর্শীর খামখেয়ালি পূর্ণ কথাতে মেজাজ হয়েছে পূর্বের থেকেও দ্বিগুন।বাবা-মায়ের সামনে সদ্য বিবাহিত জীবনে কোনো ঝামেলা করতে চায় নি বলেই চুপচাপ চলে এসেছে রুমে।কিন্তু স্পর্শীকে দেখে বোঝা যাচ্ছে সে বেজায় রেগে আছে যার কারন হাজার খুঁজেও মেলাতে পারছে না।কিছু মুহুর্ত চুপচাপ থাকার পর ত্রস্ত পায়ে উঠে বিছানা থেকে নামলো।খাবারের দিকে এগোতেই পুণরায় পিছু ফিরলো।এরপর গলার স্বর কে ঝাঁঝালো করে বললো,
-যদি খাবার দিতে অসুবিধা হয় তাহলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।এভাবে প্লেট ছুঁড়ে মেরে, পানি না দিয়ে কি বুঝাতে চাইছো তুমি?
টনক নড়লো স্পর্শীর।দ্রুতপায়ে রুমে এসে জগের দিকে দৃষ্টি দিলো।একটুও পানি নেই সেখানে।পরশ ইতোমধ্যে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।ব্যস্ত পায়ে জগ নিয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটলো।পানি ভরে আবারো দ্রুতবেগে চলে আসলো রুমে।এ পর্যায়ে আর জোরে রাখলো না জগ।বরং বিনয়ের সাথে আস্তে করে সামনে জগ রেখে নোয়ানো কন্ঠে বললো,
-পানি।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
এরপর এগিয়ে এলো বিছানার দিকে।বিছানা গুছিয়ে আলগোছে শুয়ে পড়লো ওদিকে ফিরে।পরশ খাওয়ার মাঝে দু-তিন বার সেদিকে চাইলো।কিন্তু কিছু বুঝে উঠতে পারলো না।মনে প্রগাঢ় সন্দেহ, অসস্তি, কৌতূহল নিয়ে খেয়ে উঠলো ভাত।প্রেমার ঘটনা,মায়ের কঠিন কথাবার্তা, স্পর্শীয়ার খামখেয়ালি পূর্ণ যুক্তি, হুট করেই এমন গুমোট অবহেলা সব মিলিয়ে অনেকটা অভিমান জমলো মনে।কোনো প্রকার টু শব্দ না করেই লাইট নেভালো। আলগোছে এসে শুয়ে পড়লো স্পর্শীয়ার পিঠপেছনে বিপরীত পার্শ্বে ঘুরে।সর্বসময় আত্ম-আনন্দে উৎফুল্লতা ছড়ানো শান্তির রুমটা যেন হুট করেই বোবা হয়ে গেলো।নিস্তব্ধ, নিঝ্ঝুম শব্দে কাটলো কিছুক্ষণ।হঠাৎ’ই যেন বিছানা টা সামান্য কেঁপে উঠলো।সাথে সাথে পাওয়া গেলো ঢেকুর গেলার শব্দ।চোখ দুটো সতর্ক হলো পরশের।অন্ধকার, বিভীষিকাময় রুমটার দিকে তাকিয়ে রইলো কালো চোখ জোড়া মেলে।দৃষ্টি সীমানায় সব অস্পষ্ট দেখলেও যেন এটাই শ্রেয় মনে হচ্ছে তার।আলগোছে মাথাটা ঘুরিয়ে স্পর্শীর দিকে চাইলো।অস্পষ্ট শরীর টা যেন আবারো কেঁপে উঠলো।টনক নড়লো পরশের।অবিশ্বাস্য কিছু মস্তিষ্কে দানা বাঁধলেও যেন সেটা মন মানতে চাইলো না।আলগোছে হাতটা বাড়িয়ে দিলো স্পর্শীর দিকে।অন্ধকার রুমটাকে হাতড়ে ছুঁয়ে দিলো মুখ-চোখ-কপাল।মুহুর্তে’ই ছিঁটকে কিছুটা দূরে সরে গেলো স্পর্শী।দুহাত দিয়ে ঢেকে ফেললো মুখ।
স্তব্ধ হয়ে ওভাবেই বসে রইলো পরশ।তার হাতের তর্জনীতে গরম, ভেঁজা,সিক্ত পানির অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে।তাহলে কি স্পর্শীয়া কাঁদছিলো?ভাবনায় এমন একটি ইঙ্গিতের অস্তিত্ব পেতেই দ্রুত গতিতে বিছানা থেকে নামলো।সুইচ টিপে লাইট জ্বালিয়ে সেকেন্ডের গতিতে আবারো বিছানায় গেল।দুহাত দিয়ে স্পর্শীয়ার দু-কাঁধ চেপে ধরলো।টেনে বসালো নিজের সম্মুখে।দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ধরলো স্পর্শী।চোখ মোছার অভিপ্রায় চালাতেই দুহাত চেপে ধরলো পরশ।ব্যথায় নেতিয়ে পড়লো স্পর্শী।সাথে সাথেই হাত ছেড়ে দিয়ে দুগাল আগলে ধরলো।মুখের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো।ক্ষোভ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
“কি হয়েছে?কাঁদছিলে কেন?”
এই ক্ষোভের পরিবর্তে কিছু ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর শুনবে এমনটাই আশা করেছিলো পরশ।তবে তাকে পুরোপুরি আশাহত করে চুপ করে রইলো স্পর্শী।ক্লান্ত,পরিশ্রান্ত গলায় নরম ভাবে শুধালো,
“ছাড়ুন,ঘুমাবো।”
এই শান্ত কন্ঠ যেন কলিজার ভেতরে চৈত্রের খরার সৃষ্টি করলো পরশের।ঢোক গিলে আচমকাই জড়িয়ে ধরলো স্পর্শীকে।কিছু মুহুর্ত ওভাবে জড়িয়ে থাকার পর আদুরে কন্ঠে শুধালো,
“কথা বলছো না কেন?কি করেছি আমি?”
স্পর্শী শুনলো,তবে উত্তর দিলো না।বুক ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে রইলো ওভাবেই।পরশ যেন এ পর্যায়ে ছটফট করে উঠলো গলা কাঁটা প্রাণীর ন্যায়।কোনো কিছু ঘটলে স্পর্শীয়া ঝগড়া করবে, রাগ করে থাকবে কিন্তু এভাবে চুপ করে থাকবে-অগোচরে কাঁদবে এটা যেন কিছুতেই মানা যাচ্ছে না। বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে বললো,
“তুমি কি প্রেমার ব্যাপারে রাগ করেছো?বোঝার চেষ্টা কেন করছো না আমার প্রেমা ছোট।আর সোভাম আমার উপর জেদের বশে ওকে বিয়ে করতে চাইছে।আমি জেনেশুনে ওর জীবনটা নষ্ট করতে পারি না।”
স্পর্শী আলতো হাসলো।কন্ঠে তাচ্ছিল্য এনে বললো,
-বেশ!আমার ভাই যদি প্রেমার জীবন নষ্ট করার চেষ্টা করে,তাহলে আপনিও আমার জীবন নষ্ট করে দেবেন।তাহলেই তো হলো।”
পরশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো স্পর্শীর দিকে।হঠাৎই বারান্দা থেকে শোনা গেলো বাদুরের পাখা ঝাঁপটানি।হয়তো অতিরিক্ত শীতে পাখিটা আশ্রয় নিয়েছে গরমের আশায়।
-তোমার কি মনে হয় আমি কখনো, কোনো পরিস্থিতিতে এমনটা করবো?
স্পর্শী সরাসরি দৃষ্টি দিলো পরশের দিকে।ডান হাতের আঙুল গুলো পরশের চুলে গুজে দিলো। সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-সে তো ভাইয়ার ব্যাপারেও আমার এমনটা মনে হয় না।আমার ভাই কখনোই আপনার উপরে থাকা জেদ নিজের স্ত্রীয়ের উপরে দেখাবে না।কারন ও আমার ভাই,কাপুরুষ নয়।
থেমে স্নিগ্ধ কন্ঠে বলল,
আমাকে বিয়ে করে আপনার ভীষণ আফসোস হচ্ছে তাই না?
চমকে উঠলো পরশ।স্পর্শীকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলো।কপালের মাঝখান টাতে তিনটা ভাঁজ পড়লো।চোখে-মুখে বিস্ময় ছাপিয়ে বললো,
-“এটা কি ধরণের প্রশ্ন?কি হয়েছে তোমার?”
ঠোঁট দুটোকে প্রশস্ত করে মলিন হাসলো স্পর্শী।আলতো হাতে পরশের ডানহাত টাকে দুহাতে জড়িয়ে নিলো।মাথা নিচু করে পরম যত্নে চুমু খেলো।বললো,
-আফসোস করাই স্বাভাবিক।হয়তো একজন নারী আর বউয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে।ঘরের বউ হবে শান্ত,স্নিগ্ধ,কথা কম বলবে, স্বামী আসার সাথে সাথে তার মনোরঞ্জনে -সেবায় ব্যস্ত হয়ে উঠবে,উঁচু গলায় কথা বলবে না,স্বামী হাজার ভুল করলেও সেগুলো মাথা নিচু করে মেনে নেবে এরকম।কত বাঁধা নিষেধ তার।অথচ একজন নারীর কিন্তু এরকম কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।হয়তো আমাকে নারী হিসেবে আপনার পছন্দ হলেও বউ হিসেবে অযোগ্য মনে হচ্ছে।যার কারনে বিয়ের দু দিন না যেতেই ছোট ভাইয়ের সামনে আফসোস করে বলছেন, -এটা কি বিয়ে করেছি।সমস্যা নেই,আমার একটুও খারাপ লাগেনি।কারন বাস্তবতায় বিশ্বাসী আমি।আপনার যদি আমাকে এখন আর ভালো না লাগে তাহলে নির্দিধায় ডিভোর্স দিয়ে দেবেন।আমি কারো অপূর্ণতার বা আফসোসের কারন হতে চাই না।”
স্তব্ধতায় মিইয়ে গেলো পরশ।বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো স্ত্রীয়ের দিকে। এরপর দুহাতে গাল আঁকড়ে ধরে বললো,
“তুমি তো এতটা অবুঝ নও স্পর্শীয়া।তাহলে কি জন্য এমন দায়ী করছো আমাকে?তুমি নিজেও জানো আমি তোমাকে আজীবনেও ছাড়বো না।তারপরেও?সকালে তো জাস্ট মজা করে বলেছিলাম।”
ক্ষেপে উঠলো স্পর্শী।দুহাতে ঝাড়ি মেরে বললো,
-বলবেন কেন?
পরম যত্নে জড়িয়ে ধরলো পরশ।খোলা পৃষ্ঠে গাঢ় চুম্বন এঁকে দিয়ে বললো,
-আর বলবো না, সরি।
স্পর্শী চুপ করে রইলো।পরশের উদ্দেশ্য বুঝতে পারতেই দুহাতে ঠেলে দূরে সরালো।বললো,
-সরির মালা গাঁথলেও এখন আর হবে না।দূরে থাকুন।
সরলো না পরশ।দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
-উঁহু!তা বললে তো হচ্ছে না। আমি নাকি আপনাকে খুব যন্ত্রণা দেই।তাহলে এখন বাঁধা দিলে তো শুনবো না।
স্পর্শী নিমিষেই চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।ক্রমশ বাঁধনছাড়া হচ্ছে পরশ।তার হাতটাকে দুহাতে জড়িয়ে আলতো কাঁমড় বসালো।কিন্তু কোনোরকম নড়চড় পেল না।এ পর্যায়ে কাঁমড় আরো গাঢ় করলো।কিন্তু তাও কোনো সাড়াশব্দ পেল না।আর না তো ব্যথাতুর কোনো আওয়াজ।এটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে।দাঁতের দাগ ইতোমধ্যে বসে গেছে সেটা টের পেয়েছে স্পর্শী,কিন্তু তাও এই মানব নাছোড়বান্দা ।যেন কোনো যন্ত্রণা’ই ছুঁতে পারছে না তাকে।এ পর্যায়ে দাঁতের ধারালো দিকটা বসিয়ে দিলো স্পর্শী।মুহুর্তেই হাতটাকে এক ঝটকা মেরে দূরে সরিয়ে নিলো পরশ।চোখ দুটো বড় বড় করে হাত ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
-আধপাগলের বা’চ্চা!ফুঁটো হয়ে গেছে।
স্পর্শী শান্তি পেল।আলগোছে সোজা হয়ে শুয়ে গমগমে সুরে বললো,
-এতোক্ষণ ব্যথা সহ্য করার নাটক না করলেই ছেড়ে দিতাম মাই সহ্যশীল জামাই।
রাত পেরিয়ে যাচ্ছে সময়ের গতিতে।নেই কোনো আলো, আর নেই তো কোনো শব্দ।শুধুমাত্র ছাঁদের এককোনায় থাকা কবুতর গুলো কিছুক্ষণ পর পর গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করছে।পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা।শুধু শোনা যাচ্ছে দুজন মানব-মানবীর নিঃশ্বাসের শব্দ।একপর্যায়ে স্পর্শীয়া কৌতুহল নিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো,
-কবুতর দুটো মনে হয় ঝগড়া করছে।
সায় জানালো পরশ।বললো,
-হুম,যেটা বেশি শব্দ করছে ওটা বউ।আর নিরীহ জামাই টা চুপ করে সব অত্যাচার সইছে।
হেসে দিলো স্পর্শী।পরশকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে অনুনয়ের সুরে বললো,
-আর বাঁধা দিয়েন না প্লিজ!আব্বু-আম্মু রাজী।প্রেমা পছন্দ করে ভাইয়াকে।ওইটুকু মন, ভেঙে দেওয়া কি উচিত হবে?আজ আব্বু-আম্মু,প্রেমার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনি না হয় বিয়েটা ভেঙেই দিলেন।হয়তো প্রেমা আরো বড় হবে,বিয়ে হবে।তবে কোনোদিন যদি ওর কপালে এর থেকেও দুঃখ থাকে, তখন সবাই আপনাকেই দোষী করবে।বলবে বিয়েটাতে বাঁধা না দিলে প্রেমা সুখী হতো।ছেড়ে দিন না ভাগ্যের উপর।সোভাম ভাইয়া ও প্রেমাকে অনেক পছন্দ করে।বেঁচারা নির্লজ্জ হয়ে আব্বুর কাছে সম্বন্ধের কথা বলেছে।আমি চাই না ও কষ্ট পাক।
পরশ ছেড়ে দিলো স্পর্শীর বাঁধন।ঘাড় ঘুরিয়ে অপরদিকে ফিরে তাকালো।দাম্ভিকতার সুরে গমগমে কন্ঠে বললো,
-আমিও কোনোদিন নির্লজ্জের মতো ছুটে গেছিলাম।
-তো?আপনাকে কি ফিরিয়ে দিয়েছে খালি হাতে?একদম রেজিস্ট্রি করে হাতে তুলে দিয়েছে তারপরেও সাধ মেটে নি?কি চান আপনি?
-জানিনা।
ঠোঁট টিপে হাসলো স্পর্শী। পরশকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে বললো,
-আপনার জানতে হবে না।যা জানার আর বোঝার সব আমি করে নেব।একদিন আপনি নিজেই এসে আমাকে বলবেন,‘স্পর্শীয়া, তোমার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো না।
জমকালো বিয়ে বাড়ি।চারপাশে রঙ বেরঙের সাজ।পুরো বাড়িটাতে যেন ঠেসে আছে লোকজনে।এতো এতো ভিড়, সাজসজ্জায় যেন ছোট্ট শরীর টা হাঁপিয়ে উঠেছে প্রেমার।সে একহাতে লেহেঙ্গা ধরে অন্য হাতে স্পর্শীর হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।দূর থেকে ঐ ছোট্ট বদনখানির ক্লান্তির চিহ্ন টুকু বুঝতে পারলো পাঞ্জাবি পরিহিত যুবক।ভিড়ের মধ্যখানে জোরপায়ে এগিয়ে এলো স্পর্শীর দিকে।চাপা আওয়াজে বললো,
-ওর মনে হচ্ছে খারাপ লাগছে এতো ভিড়ের মধ্যে।রুমে দিয়ে আসো।
ঠোঁট টিপে অগোচরে হাসলো স্পর্শী।ঝাঝালো স্বরে বললো,
-বউয়ের জন্য এতো দরদ উতলে পড়লে নিজে নিয়ে যাও।এখানে সবাই দেখছে ওকে।দেখা শেষ হলে দিয়ে আসবো।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সোভাম।আমতা-আমতা করতে করতে কেটে পড়লো সেখান থেকে।স্পর্শী হাসলো।সবার উদ্দেশ্যে বললো,
-বউ পালিয়ে যাচ্ছে না।পরেও দেখা যাবে।ও আগে রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নিক।ক্লান্ত লাগছে।
এরপর সবাইকে পাশ কাঁটিয়ে এগিয়ে গেলো দোতলার দিকে।সোভামের দরজার সামনে আসতেই হৃৎপিন্ড ধমকে গেল প্রেমার।বুকের মধ্যখানে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।এতোদিন যে রুমের দরজার সামনে দাঁড়াতেও এতো ভয়,অসস্তি হানা দিতো;আজ সেই রুমটাই তার।এখানেই তার বাকি জীবন টা কাঁটবে।প্রেমাকে রুমে ঢুকিয়ে বিশ্রাম নিতে বলে বেরিয়ে গেলো স্পর্শী।বিছানার সামনে যেতেই থমকে গেলো প্রেমা।তাঁজা গোলাপের সুগন্ধে যেন এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবে সে।এতো এতো সাজসজ্জার মধ্যে নিমিষেই মনে পড়লো রাতের কথা।মুহুর্তেই জিভ কেটে বিরবির করে বললো,
-ইশশ!এত্তো বড় একটা অচেনা পুরুষের সাথে কিভাবে ঘুমাবে সে?
ভাবতেই বুকটা ভার হয়ে এলো।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে যেন।
স্পর্শী জোরপায়ে হেঁটে সিঁড়ির দিকে গেলো।উদ্দেশ্য আর্শির সন্নিকটে যাওয়া।এত্তো এত্তো ভিড়ের মধ্যে তার চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে আর্শিকে।এই মেয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে বাচ্চাদের মতো দৌড়াচ্ছে,ঝাপটাচ্ছে।বারবার হুশিয়ারি দেওয়ার পরেও তার পা এক জায়গায় আটকে থাকছে না। বরং ঘড়ির কাঁটার মতো ঘুরছে।নিচের ধাপে পা ফেলতেই এগিয়ে আসলো ছোট চাচি।স্পর্শীকে টেনে একপাশে নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-শোন না,তোর ফুপি শাশুড়ী কল দিয়েছিলো।বললো,প্রেমা তো ছোট,এতো নিয়ম -কানুন, রীতি-নীতি ও বোঝে না।তুই তো ওর ভাবী। একটু বুঝিয়ে-সুঝিয়ে দিস।
স্পর্শী নাটকীয়তার সুরে বললো,
-ধুর কাকীমা!আমি যতোই প্রেমার ভাবি হই না কেন?ও তো আমার বড় ভাইয়ের বউ।এতো সেতো আমি বোঝাতে পারবো না।কেন?তোমার ভাইপো জেনেশুনে তার অর্ধেক বয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছে, তার বুঝ-ব্যবস্থা কম থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক।আমি ওতো বোঝাতে পারবো না।যার বউ সে বুঝিয়ে নিক।আমার কাজ আছে।
কথা বলার মাঝখানেই ফোন বেজে উঠলো স্পর্শীর।রিসিভড করে কানে তুলতেই ওপাশ থেকে পিয়াশার কাতর কন্ঠ শোনা গেল।সে বিষন্নতার সাথে বললো,
রাজনীতির রংমহল সিজন ২ পর্ব ৮১
-বউ মা শুনেছো?ওরা দু-ভাই দুপুরে খায় নি পর্যন্ত।রাত এই সাতটা বেজে গেছে।অথচ এখনো রুমের মধ্যে ফুলে বসে আছে।এদিকে যাবতীয় বিয়ের জোগাড় কিন্তু ওরাই করেছে।
কানে নিলো না স্পর্শী।গা ছাড়া ভাব নিয়ে শাশুড়ীর উদ্দেশ্যে বললো,
-আম্মু তুমি চিন্তা করো না। আমার বিয়ের দিনেও সোভাম ভাই না খেয়ে ছিলো দুপুরে।এটা হয়’ই জানো তো।শত হলেও ভাই বলে কথা।বোনেদের বিয়েতে সব ভাই’ই একদিন ব্যাঁকা হয়ে ফুলে বসে থাকে।এটা নিয়ে ওতো ভাবার প্রয়োজন নেই।তুমি তোমার ছোট ছেলেকে বলো,তার বউ সারা বাড়ি নাঁচছে।তাকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।অতিদ্রুত যেন এসে যার বউ সে সামলায়।
