রাজবধূ পর্ব ১৯
রেহানা পুতুল
বাদশা গোপনে হিং*স্র হয়ে উঠে। তার শরীরের রক্ত অবৈধ থাকতে পারবে না। বৈধ করতে হবে। তালুকদার পরিবারে নতুন ইতিহাসের সূচনা করতে চায় সে। মধুপুর যেতে হবে। নূরী কেন তাকে ডেকেছে? শুনতে হবে। নূরীর সঙ্গে হাত মিলাতে হবে।
এদিকে শিখার জীবনে আসা বন্ধু নামক সেই অদৃশ্য মানব শিখাকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। তালুকদার পরিবারে শিখার ভবিষ্যৎ মজবুত করার জন্য সে যত যা কিছুর প্রয়োজন সবকিছু করতে সদা প্রস্তুত।
কারণ শিখা নিচু পরিবারের মেয়ে। তাই বহুবছর ধরে তালুকদার পরিবারের সবার থেকে মানসিক, শারীরিক নির্যাতন, অনাদর,উপেক্ষা,উপহাসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে শিখাকে।
জুলফা মৃত বিড়াল ও সন্দেশের প্যাকেটটি ঘরের বাইরে নিয়ে গেলো। কিছু পথ হেঁটে গেলো পিছনের দিকে। সরু খালের মধ্যে ফেলে দিলো আস্তে করে। খালের পানিতে পাশাপাশি হয়ে সমান তালে ভেসে যেতে লাগলো বিড়াল ও প্যাকেটটি। জুলফা খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে পাথর চোখে সেদিকে চেয়ে রইলো।
তার ছেলের কথা ভুলেও মিথ্যা হতে পারে না। এই ছানা তালুকদার তারে মারার জন্যই নিয়ে এসেছে। সেতো তালুকদারের ভালোবাসার নারী ছিল না। ছিলো ভোগের বস্তু। ভোগ করেছে। ছুঁড়ে মেরেছে। তাকে মারতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। বাদশা এখন নিজেই শক্তিশালী। যদি সত্য জেনে যায়। ভয়টা সেই অ-মানুষের সেখানেই। জুলফা চালাকি করে। তার এক চাচাতো বোনের বাড়ি চলে যায় ঘরে তালা দিয়ে। সে যে মরেনি। তাই হয়তো তাকে আবার মারতে আসবে তালুকদার।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাদশা ফুলবানুর সংগে জংলার ধারে দেখা করে। সে গা ঘেঁষে বসে ফুলবানুর। এমন ঘনিষ্ঠ হয়ে আর কখনো বসেনি বাদশা। ফুলবানু বাদশার দিকে বিষম খাওয়া চোখে তাকায়। পরখ করে দেখে নেয়।
পরক্ষনেই বলে উঠলো,
“আপনার মন খারাপ ক্যান বাদশা ভাই?”
ফুলবানু চোখের পলক না ফেলতেই বাদশা তাকে ঝাপটে ধরে বুকের মাঝে। তার নেত্রযুগল টলমল করতে থাকে অশ্রুতে। ফুলবানু আহাম্মক বনে যায়। বিগলিত স্বরে জানতে চায়,
“কি হইছে বাদশা ভাই? কি হইছে? খালাম্মা বিছনায় পইড়া আছে?”
“নারে ফুল। মার শরীর ভালো আছে। আমি মনে হয় একটা খু*ন করুম। ”
ভেজা গলায় বলল বাদশা।
ফুলবানু নির্বাক হয়ে যায়। ভীরু চোখে বাদশার বিপন্ন মুখে চায়। বলে,
“সেদিন না একটা খু*ন করলেন? এখন আবার কারে মারবেন? নাকি আগেও কাউরে মারছেন? মানুষ হত্যার ইজারা নিছেন নাকি? আপনার হইছেটা কি বাদশা ভাই? আ..আমার ডর করতাছে। আমি আপনেরে হারাইলে গলায় দড়ি দিমু কইলাম।”
ফুলবানু বাদশাকে অগাধ বিশ্বাস করে। তাইতো কয়দিন আগে যখন রাশেদ তার কাছে সাহায্য চাইলো। সে তারপরেই বাদশাকে পুরো বিষয়টা জানালো। বাদশা প্রত্যুত্তরে তাকে বলল,
“রাশেদ ভাই ভালো মানুষ। হঠাৎ কি এমন ঠ্যাকায় পড়লো সে,যে নিরালায় কাজটা করতে হইবো। তাও মেয়ে মানুষ নিয়া। মানা করার জো নাই। তুই যাইস। ডরাইস না। আমি আড়াল থেইকা লুকায়া তোরে পাহারা দিমু। সম্ভবত মাটির নিচে তাবিজ জাতীয় কিছু গাড়াইবো। আর সেইটা মনে হয় কোন কুমারী মেয়ের হাত দিয়া করতে হইবো। এদের ঘরে তাবিজ কবজের কারবার আছে। আমি জানি।”
তারপর সেদিন ফুলবানু রান্নাঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত গিয়ে কাচারি ঘরের বেড়ায় টোকা মেরে চলে আসে। বাদশা বুঝে যায়। কারণ সে ফুলবানুকে আগেই এটা বলে রেখেছে।
বাদশা অন্যপথ ঘুরে বাগানে প্রবেশ করে। চোখে আঁধার সয়ে এলে সব আবছায়া দেখতে পায়। খুঁজে বের করে রাশেদ ও ফুলবানুকে। সে উৎসুক চোখে আমগাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকে।
কিন্তু তার বিশ্বাসকে জলাঞ্জলী দিয়ে যখন দেখলো ও বুঝলো, রাশেদ অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে চাচ্ছে তার মনের মানুষটার সঙ্গে। তখনই বাদশার মাথায় খু*ন চাপে। সে বাগানে ভারি কিছু খুঁজতে থাকে। একটু দূরে গিয়ে একটা ইট পেলো। সেটা হাতে তুলে নিলো। এতটুকু সময়ে রাশেদ তার নোংরামিতে একটু অগ্রসর হয়ে যায়।
কিন্তু তা শুরু করার পূর্বেই পিছন হতে রাশেদের মাথায় ইটের আঘাত করে বসে বাদশা। এভাবেই সে রাশেদকে
হ *ত্যা করে। ফুলবানু উঠে সেলোয়ার পরে নেয়। তারা দুজন মিলে মৃত বাদশাকে তার লুঙ্গি পরিয়ে দেয়। গেঞ্জি দিয়ে র* ক্ত বের হওয়া মাথা পেঁচিয়ে নেয়। কলাপাতাগুলো দুমড়ে মুচড়ে দূরে নিয়ে গেলে আসে। এভাবে রাত হয়ে যায়। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। সেই সুযোগে বাদশা ও ফুলবানু মিলে রাশেদকে টেনে টেনে নিয়ে যায় বাড়ির সামনের পথে। ফুলবানু বাদশাকে সব বলে। কেন তাকে ধর্ষণ করতে চেয়েছিলো রাশেদ।
ফুলবানি গিয়ে ভয়ে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়ে। ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়াতে মতির মা বুঝতে পারেনি এতসময় তার পাশে ফুলবানু ছিল না। বাদশা বেঁচে গেলো। তাকে কেউই সন্দেহ করল না। কেননা তাকে সন্দেহ করার কোন হেতু ছিল না।
ফুলবানুর জন্য সে সারা পৃথিবী এক করে ফেলতে পারে। যে ফুলবানুকে সে কখনো বাজেভাবে স্পর্শ করেনি। তার সেই প্রিয় ফুলবানুকে কেউ অপবিত্র করে দিতে চায় এটা সে নিতে পারেনি।
বাদশা ফুলবানুকে ছেড়ে দেয়। আলগা হয়ে বসে। দুর্বোধ্য হাসি ছড়িয়ে বলল,
“সেদিন খু*ন করছি তোমার জন্য ফুল। এখন খু*ন করুম আমার জন্য।”
“বাদশা ভাই বাড়িতে গিয়া আসার পর হইতে আপনের কি হইছে? জ্বীনে ধরছে নি?”
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল ফুলবানু।
বাদশা সম্বিৎ ফিরে পায়। বুঝতে পারলো আবেগের কাছে ধরাশায়ী হয়ে ফুলবানুকে এমন কিছু বলা একদম ঠিক হয়নি। জীবনের কিছু নির্মম সত্যি , কিছু দূর্বলতা কাউকে বলতে নেই। গোপন রাখতে হয়। বাদশা ফুলবানুকে ভুলিয়ে দেয়। চিবুক ধরে বলে,
“তোমার ভালোবাসা পরিক্ষা করলাম উলটাপালটা কথা বইলা। বাদ দাও। ওহ হো! শীত আইসা গ্যালো। মেলা কবে খবর নিতে হইবো। রাশেদ ভাইয়ের কথা মনে পড়লে মন পোড়েরে। উনি এমনিতেই লোক ভালো ছিলো। তবে ভাবির সঙ্গে তেমন সুসম্পর্ক ছিল না। মানুষের কোন একটা বড় ভুলেই জীবনের মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যায়। ”
ফুলবানুর মুখের উদ্বিগ্নভাব মিলিয়ে যায় কর্পূরের মতো। সারামুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। যেন ভোরের নরম আলো।
“হুম। কি জ্ঞানী মাইনষের মতন কথা জানেন আপনে। শুনতে ভালোই লাগে। এবার ফুলরে ফাঁকি দেওনের সুযোগ নাই। আপনার কান্ধে ছইড়া হইলেও মেলায় যামু।”
আহ্লাদী সুরে অধিকার নিয়ে বলল ফুলবানু। বাদশা ফুলবানুর গালে হাত বুলায়। জবাব দেয়।
“তোমারে মেলায় না নিয়া গ্যালে আমিই ভালো থাকব না এবার।”
আদ্র কন্ঠে বাক্যটি বলেই বাদশা উঠে দাঁড়ায়।
খায়রুল তালুকদার চিন্তার সমুদ্রে ডুবে গেলো। কি ব্যাপার দুইদিন হয়ে গেলো জুলফা মরে নি? মরলে খবর নিয়ে লোক আসতো। বাদশা যেতো। কিন্তু বাদশাকে দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক। হাসি খুশী। সে ছানা সন্দেশ খায়নি? কি করলো সেগুলো তাহলে?
কিছুদিন আগে বাদশা তাকে আবিষ্কার করে তাদের জীর্ণ কুটিরে। তারপর হতেই খায়রুল তালুকদার দারুণ অস্বস্তিতে ভুগছে। বাদশা তাদের বাড়িতে আছে বহুবছর। তাদের পারিবারিক নানাকাজে বাদশার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা নজর কাড়ার মতো। একবার বাদশার টার্গেটে পড়ে গেলে বাঁচা মুশকিল। র* ক্ত যে তারই। তালুকদার চুপিচুপি চলে গেলো বাদশাদের গ্রামে। দেখে ঘরের দরজায় মরছে পড়া ছোট্ট একটি তালা ঝুলছে। সে মনে মনে আহত হয়। পাশের ঘরের অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করে জুলফার কথা। তারা কেউই জুলফার সন্ধান দিতে পারল না। সেই বাড়ির সবাই জানে তালুকদারদের বাড়িতে বাদশা কাজ করে। সেই সুবাদে তালুকদার বাদশার মায়ের খোঁজ খবর নিতে আসে। তালুকদার হতাশ মনে ফিরে আসে বাড়িতে।
রানীকে নিয়ে বৈঠক বসেছে। সবাই আছে উপস্থিত। আজ চূড়ান্ত হবে সে কি থাকবে। না চিরদিনের জন্য তালুকদার বাড়ি ত্যাগ করবে। রানী বাবার পরিবারের পক্ষ থেকে আছে তার বৃদ্ধ মা ও ভাই ভাবি। তারা বলল,
“আমাগো মাইয়া আমরা কি ফেইলে দিতে পারবো? আপনারা যদি না রাখেন তাইলে ত চইলে যাইতে হবে। আর আপনারা রাখতে চাইলেও সে যদি থাকতে না চায়। তাইলে ত আর কিছুই করার নেই।”
জয়নুল তালুকদার বলল,
“আমার ঘরে প্রথম বউ হইয়া আইলো রানী। এই সংসারে তার বহুত অবদান আছে৷ আমরা কেউই তারে চইলা যাইতে কমু না।”
পাশ হতে সুফিয়া বিবিও বলে উঠলো,
“উনার কথাই আমার কথা। আমার চার বউয়ের মইধ্যে সব চাইতে বড় বউ ভালা বেশী। পোলাপান আল্লায় দেয়নাই। হয়নাই। এই বয়সে বউ আর দ্বিতীয় বিয়া কইরা কার কাছে বইবো। তবুও সে না থাকতে চাইলে ত আর আমরা জোর কইরা রাখতে পারি না।”
রানী কেঁদে ফেলল শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে।
“আম্মা আমি আপনাগোরে ছাইড়া কোথাও যামু না। এই বাড়ির গাছের পাতায়ও আমার মায়া জড়ায়া আছে। কোন জিনিসে আমার হাতের ছোঁয়া নাই? শরিরের খাটুনি নাই? কন? এই বয়সে দ্বিতীয় বিয়ার আর কি দরকার। এইখানে ঘর ভরা মানুষ। সবাইর মুখের দিকে চাইয়া জিন্দেগী কাটাইয়া দিতে চাই। সুমনার দুই বাচ্চারে আমার কাছে কাছে রাখুম। দেওরের পোলাপান আর নিজের পোলাপানে তফাৎ নাই। আমি যামুনা আপনেগোরে ছাইড়া।”
শুকুর আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো সবাই। রানীর থাকার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হয়ে গেলো। রানীর পরিবারের লোকজন চলে গেলো।
ছোট তালুকদারের চালচলন আজ কয়েকদিন ধরে ভালো ঠেকছে না। এটা আঁচ করতে পারলো দুজন মানুষ। একজন বাদশা অপরজন বড় তালুকদার।
বাদশা কারণ জানে। তাই তার মাঝে এ নিয়ে কোন হেলদোল নেই। সে খেলবে বড় খেলা। সেটা হবে মারাত্মক লেভেলের। ভয়ংকর! বিধ্বংসী! কারো জীবন নিয়ে খেলার পুতুলের মতো নাচিয়ে নিজে আনন্দ করবে। তাকে আনন্দ দিবে না। তা হবে না। খেলা হবে সমানে সমান। কেউ আগে জিতবে। কেউ পরে জিতবে। কারো উল্লাস হবে আগে। কারো উল্লাস হবে পরে। এই পৃথিবী বাকি বুঝেনা। বোঝে বিনিময়! বোঝে শোধবোধ!
জয়নুল তালুকদার বৈঠকখানায় ছোটভাই খায়রুল তালুকদারকে ডাকলো। প্রশ্ন করলো,
“কিরে তোর শরীর খারাপ? কয়দিন কেমন জানি দেখতাছি তোরে। জমির কাজগুলাও পইড়া আছে। ”
“তেমন না মিয়াভাই। শরীরটা একটু খারাপ যাইতাছে।”
“ঔষধপাতি খাইতাছস না?”
“খাই। জুবায়ের আইনা দিলো।”
মরা কন্ঠে জবাব দিলো ছোট তালুকদার।
“সামনের সপ্তাহে পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা শীতবস্ত্র দিতে যামু। শুরুতে না দিতে পারলে গরিবের কি উপকার হইবো। তুই যাওয়া লাগবো না। শরীর যেহেতু খারাপ। ”
বলল বড় তালুকদার। খায়রুল ব্যতিব্যস্ত স্বরে বলল,
“নাহ। আমি যামু মিয়াভাই। পরের বছর বাঁচি না মরি ঠিক আছে। সওয়াব কামানোর সুযোগ হাতছাড়া করা বোকামি।”
“আইচ্ছা যাইস।”
সন্ধ্যার পর সুফিয়া বিবি জা আমেনার রুমে প্রবেশ করে। হারিছা নামাজের পাটিতে বসে তসবিহ গুনছে। আমেনা পান চিবোচ্ছে। তারা মা মেয়ে বেশিরভাগ সময় একসঙ্গেই থাকে। দুজন দুজনের সঙ্গী। পুত্রশোকে সুফিয়া মুহ্যমান। শোক কাটিয়ে উঠার জন্য মনকে নানামুখী কাজে ব্যস্ত রাখতে চেষ্টার কমতি নাই তার মাঝে। আমেনা দরদমাখা কন্ঠে বলল,
“ভাবি বয়েন। পান দিমুনি? এমন আইসা পড়বেন আমগো এদিগে। নিজের রুমে একলা একলা বইসা থাকলে আপনে আরো ভাইঙ্গা যাইবেন ভাবি। আপনার ত আরো চাইর সন্তান আছে। আমার ত একটাই সাত রাজার ধন। আরতো নাই।”
সুফিয়া মোড়া টেনে বসলো। বেদনার্ত স্বরে বলল,
” দে পান দে। জর্দা দিস না। গলায় ঝাঁঝ লাগে। খয়ের দিস। বড় মুন্সীরে দিয়া পুরা বাড়ি বন্ধ করামু। বাড়িতে বদনজর পড়ছে। অঘটন ঘটতাছে বেহুদাই।”
আমেনা পান দিলো। সুফিয়া পান মুখে পুরে দিলো। চিবোতে চিবোতে বলল,
“জুবায়ের মার্কেট থেইকা আসছে?”
“না। জুবায়ের ত আসে এশার পর। ক্যান ভাবি? দরকার? দেখা করতে কমু?”
” হ কইস। শুন,একটা কথা কইতে চাই তোরে।”
“কন না ভাবি? কি কথা?”
“আমার ভাইঝি আঁখিমনিরে চাইছি রাজের বউ করতে। বাকিটা ত জানস কাহীনি। জুবায়েরের লগে আঁখিমনির বিয়া হইলে ক্যামন হয়? আইজ মাথায় খালি এইটাই ঘুরতাছে। দিলে শান্তি নাই। ভাইঝিরে আশা দিয়া মন ভাঙ্গলাম। রাজ আমার কথা রাখব না,এইটা আমার চিন্তার বাইরে ছিলো। পিতামাতা হারা মাইয়াটার একটা গতি কইরা দিতে পারলে একটু শান্তি পাইতাম।”
আমেনার মুখাকৃতি এমন হলো, যেন আকাশ থেকে পড়লো। হারিছা খাতুন তসবিহ গনা ছেড়ে অভিজ্ঞ দৃষ্টিতে সুফিয়া বিবির দিকে চাইলো। তার দৃষ্টি ক্ষীণ! ঘোলাটে!
“এইটাতো চিন্তার বিষয়। জুবায়েরের সঙ্গে আলাপের বিষয়। জুবায়েরের লাইগা একবছর ধইরা বউ খুঁজি। পোলার পছন্দই হয়না। মনেই ধরেনা কোন মাইয়ারে। কি মুসিবত কন।”
“তুই আমার লগে যত রাইত হউক দেখা করতে কইস তারে। আমারে মান্য করে জুবায়ের। দেখিনা আবদার রাখে কিনা।”
রাতে জুবায়ের এলে দেখা করে সুফিয়ার সঙ্গে। শুনে সে একবাক্যে মানা করে দেয়।
“না বড়মা। মাফ করেন। আত্মীয়ের ভিতরে সম্পর্ক আমি পছন্দ করি না। আর আমি আপাতত বিয়ে করব না। পরে দেখা যাবে।”
সুফিয়ার বেজায় মন খারাপ হলো। জুবায়ের উঠে চলে গেলো। মনে মনে বলল,
“সব মতলববাজ! এক গোয়ালের গরু যে।”
হেমন্ত বিদায় নিয়েছে। প্রকৃতিতে শীতের আগমন শুরু হয়েছে। নিস্তব্ধ মধ্যরাত। শিখা কাঁথামুড়ি দিয়ে তার রুমে ঘুমিয়ে আছে। মায়ের সঙ্গে ঘুমাতে পারে না চাইলেও। টেস্ট পরিক্ষা চলছে। তাই নিজের বিছানায় পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যায়। নূরীও নিজের রুমে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
নূরীর মুখ বেঁধে ফেলেছে খায়রুল তালুকদার। তার নিজের মুখেও মুখোশ পরা। নুরী চিৎকার করতে পারছে না। কম্পিত চোখে অনুনয় করছে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তালুকদার নূরীকে চৌকি হতে মাটিতে নামিয়ে আনে। কারণ চৌকিতে শব্দ হবে। নূরীর ব্লাউজের বোতাম খুলতে খুলতে হিসহিসিয়ে দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
” গতকাইল রিকশা পাঠাইলাম। গেলিনা ক্যান মা* গী ? এখন মজা বুঝ। তোরে এখন পুরা ন্যাং* টা করমু আমি। খায়েশ মিটায়া খামু ভোর পর্যন্ত। রিকশা পাঠাইলে যাইবি। নয়তো এমন আইসা চোরের মতো সিঁধ কাইটা ঢুইকা পড়ুম। ”
রাজবধূ পর্ব ১৮
বলতে বলতে নূরীর শরীরে একটি সূতাও রাখে না তালুকদার। দুই হাত দিয়ে নূরীর বুকের মাংসপিণ্ডগুলো খামছে ধরে। একটানা ধ*র্ষণ করতে থাকে নূরীকে। নূরীর শরীরের প্রতিটি ভাঁজে কামড়ের চিহ্ন বসিয়ে দেয়। তার কাজ শেষ হলে ভারি নিঃস্বাস ফেলতে ফেলতে বেরিয়ে যায়।
আচম্বিতে ঘুমন্ত নূরী নড়ে উঠে বিভ্রান্তি নিয়ে। মনে হলো তার মাথা বরাবর জানালার বাইরে টোকা পড়লো। সে চৌকির কিনারায় পা নামিয়ে বসে। থরথর করে কাঁপতে থাকে। এত বিভৎস স্বপ্ন কেন দেখলো সে? কেন? এর একটা সুরাহা করতে হবে অতি দ্রুত।