রাজবধূ পর্ব ৬১
রেহানা পুতুল
সে শিখার দিকে চেয়ে ভৃত্যের ভঙ্গিতে বলল,
“রাজবধূ!”
শিখার কাছে কণ্ঠটি আধো চেনা আধো অচেনা লাগলো। সে গলায় এক সমুদ্র বিস্ময় ঢেলে জিজ্ঞেস করলো,
“কে? কে আপনি?”
“এত অচেনা হইয়া গেলাম ভাবিসাহেবা? আমি বাদশা নামের এক দূর্ভাগা!”
বাদশার কণ্ঠে,চাহনিতে সেই আগের মতই বিনম্রতা ও শ্রদ্ধা ঝরে পড়ছে।
শিখা বাদশার মুখপানে চেয়ে অতি আশ্চর্য সুরে বলে উঠলো,
“বাদশা ভাই! ও আল্লাহ! তাইতো বলি গলার স্বরটা এমন চেনা চেনা লাগছে কেন। দাঁড়ি,গোঁফ, পাঞ্জাবী, স্বাস্থ্য মিলে আপনার নতুন বেশ। নয়ত ঠিক চিনে নিতাম। কেমন আছেন বাদশা ভাই? আপনার ফুল কেমন আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাবি। ফুল ভালো আছে। রোজ আপনাকে স্মরণ করে।আপনে কেমন আছেন ভাবি?”
“আমিও ভালো আছি বাদশা ভাই। আমি চলে যাই বাড়ির দিকে। আপনি আসুন।”
“ইয়ে ভাবি,মানে আমার কোন ক্ষতি হইবো নাতো? বাড়িতে আইসাই আপনার লেখাটা দেখলাম। তাই আজই আপনার কলেজে আইলাম দেখা করতে। বাড়িতে যাইনাই। ডর লাগে যাইতে। তবে মধুপুর গেছি খালাম্মার লগে দেখা করতে। কইলো আপনে এই কয়দিন আপনাগো বাড়িতেই ছিলেন। গতকাইল স্বশুর বাড়ি চইলা আইছেন।”
শিখা প্রীত চোখে তাকায় বাদশার দিকে। মায়া মায়া সুরে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ভালো হয়েছে আমার আম্মার সাথে দেখা করেছেন। আম্মা কত যে বলতো আপনার কথা। আর রাজবধূ থাকতে আপনার কোন ক্ষতি হতে পারেনা বাদশা ভাই। আপনি বড় কাজের সময়ে আসলেন। আমি অত্যন্ত খুশী হয়েছি। কয়দিন ধরেই আপনাকে মনে করতেছি। পথে আর কোন কথা নয়। বাড়িতে আসেন।”
শিখার নির্দেশ পেয়ে রিকশার প্যাডেলে পায়ের চাপ দিয়ে টান দেয় রিকশাচালক।
শিখার মমতাপূর্ণ কথায় বাদশা ভরসা পেলো। আস্থা পেলো। সেও আরেকটা রিকশা খুঁজতে থাকতে উজানপুর গ্রামের তালুকদার বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
শিখা বাড়িতে গিয়ে কাচারিঘরের উঠানে পা রাখতেই আমেনার করুণ বিলাপ শুনতে পেলো। বুঝতে পারলো হারিছা খাতুন আর নেই। সে দ্রুততার সঙ্গে পা চালিয়ে ঘরে ঢুকলো। নিজের রুমে বইখাতা রেখেই আমেনার রুমে চলে গেলো। ঘরভর্তি আশেপাশের বাড়ির কিছু মুরুব্বী নারীদের ভীড়। বিকেলের অবসরে এরা মাঝেমাঝে তালুকদার বাড়ি আসতো। হারিছা খাতুনের সঙ্গে গালভর্তি পান খেতে খেতে গল্পগুজব করতো।
ঘরের পরিবেশ বেদনাবিধুর। নিকট আত্মীয়স্বজনরা আসতে শুরু করেছে। জাহানারা ও সীমান্ত এসেছে। আদুরী হারিছার মাথার কাছে বসে কান্না করছে। এই ঘরের একমাত্র মেয়ে হিসেবে আদুরীকে হারিছা অনেক ভালোবাসতো। শিখা সবার ভীড় ঠেলে গিয়ে আমেনাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। তাকেও হারিছা নানী অনেক আদর করতো। শিখাকে বুকে জড়িয়ে ধরে আমেনার বিলাপ দিগুন গতি পেলো।
শিখার মুখ ধরে সুরে সুরে বিলাপ করতে করতে বললেন,
“মারে…আমার মায় তোমারে দেখলেই কইতো, আমার জুবার কপালে এমন একখান গুণবতী,রূপবতী মাইয়া জুটল না ক্যান।”
“জুবায়ের ভাইয়া কই? উনারে খবর দেওয়া হয়নাই?”
“হ আইছেতো। বরকত গিয়া খবর কইছে। বাইরে কাজ করতাছে মনে হয়। নানীর লাইগা কি কাঁদলোগো। আমার মার কত শখ ছিলো নাতবউ দেইখা যাইবো। আহারে আল্লাহ!”
তখন জুবায়ের রুমে আসলো। শিখাকে দেখলো তার মায়ের সঙ্গে জড়াজড়ি অবস্থায়। জুবায়েরের বুকটা হাহাকার করে উঠলো। শিখা উঠে গিয়ে অজু করে আসলো। হারিছার মাথার কাছে বসে মিহি করুণ স্বরে কোরান তেলওয়াত করতে লাগলো। শিখার মুখে পবিত্র কোরান তেলওয়াত শুনে ঘরের নারী পুরুষ সবাই বিমুগ্ধ হয়ে গেলো। শিখার জন্য সবার মনের কালি আরো বিলীন হয়ে গেলো।
হারিছার দাফন সম্পন্ন হয়ে গেলো। ঘরের সবাই স্থানে স্থানে বসে হারিছার নানা স্মৃতিচারণ করছে বিভিন্ন সময়ের।
বাদশা উঠান থেকে ঘরের ভিতর এলো। অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে দেখে ঘরের সবার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। তারা এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে তার দিকে চেয়ে রইলো। বাদশা সবাইকে সালাম দিলো। তালুকদার ও কেউ কেউ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বাদশার সালাম নিলো। তার ও ফুলের কুশলাদি জেনে নিলো।
সুফিয়া চিনেও না চেনার ভান করে বলল,
“কেড়া তুই? বাদশা নাকি?”
“হ বড় চাচী। আমি বাদশা।”
“অসময়ে কোনদিক থেইকা আইলি?”
বাদশা অন্তরে ব্যথা পেলো সুফিয়ার কথায়। জবাবে বলল,
“তালুকদার বাড়িতে আমার আইতে সময় অসময় আছে জানা ছিল না চাচী। আমি বিকেলেই আইছি। ঘরের ভিতর মানুষ দেইখা আসিনাই। বাইরে কাজকর্মে ছিলাম জুবায়ের ভাইয়ের লগে।”
“বাদশা ভাই বসেন।”
বলল আদুরী
বাদশা বসল না। আমেনার কাছে গেলো। আমেনা বাদশাকে দেখে তার মায়ের কথা মনে করে আবার বিলাপ শুরু করে দিলো।
“ও বাদশারে। সেইতো এই বাড়িতে আইলি তুই। আগে ক্যান আইলি নারে? আমার মায় তোরে কত মায়া করতো।কই পাইবি সেই মায়ার নানীরে?”
বাদশা ছলছল চোখে আমেনাকে শান্তনা দিতে লাগলো। বাদশা রাতে শিখার সাথে দেখা করলো। জিজ্ঞেস করলো,
“ভাবি আমি চইলা যাই। বাড়িতে ফুল একলা। কি কন? আমি আপনার কথার জন্যই আসছি। নইলে এই বাড়িতে আমার পা পড়তো না।”
“এটা আমি ভালো করেই জানি বাদশা ভাই। নানী আজ মারা যাবে কে জানে। কোন কিছুই বলা যাবেনা এখন। আচ্ছা আপনি এখন চলে যান। পরে আসবেন অবশ্যই। আপনার সঙ্গে আমার জরুরী আলাপ আছে। জুবায়ের ভাইয়ের সাথে দেখা করে যাবেন।”
বাদশা গিয়ে জুবায়েরের সঙ্গে দেখা করে। জুবায়ের তাকে বলল,
“শোন,নানীর কুলখানি হবে তিনদিনের দিন। তুই তোর স্ত্রীকে নিয়ে ভোরেই চলে আসবি। তুই আমাদের বাড়ির পুরোনো মানুষ। দাওয়াত দিতে হবে কেন তোকে?”
বাদশার মন ভরে যায় জুবায়েরের কথা শুনে। মনে মনে বলে উঠে,
একেই বলে ‘গোবরে পদ্মফুল’। কোথায় বাপ কোথায় ছেলে।
পরক্ষণেই বলে,
” কি যে কন না ভাই? আমি চইলা আসুম ফুলরে নিয়া।”
পরের দিন সুফিয়ার আদেশে আদুরী বাজারে যায়। টেলিফোন করে আসলাম ও খালেদকে। হারিছার মৃত্যু সংবাদ দেয় তাদের। তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে জানায় বাদশার পূনরায় আগমনের কথা। আসলাম ও খালেদ অসন্তুষ্ট হয় বাদশার কথা শুনে। কারণ তারা জানে ঘটনাক্রমে তালুকদার গৃহের কতৃত্ব ধীরে ধীরে শিখার হাতে ন্যস্ত হচ্ছে। বাদশা থাকলে শিখার হাত আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তাই বাদশার আগমন তাদের জন্য সুখকর নয়। শুভ নয়।
তিনদিনের দিন হারিছার কুলখানি সম্পন্ন হলো। সেদিন সকালেই বাদশা ও ফুল চলে এলো তালুকদার বাড়িতে। ফুলকে দেখে মতির মা ও তার মেয়ে জোছনা জড়িয়ে ধরলো। জোছনা দাওয়াত পেয়েই এসেছে। তারা পরষ্পর অশ্রু ফেলার মাধ্যমে হৃদ্যতা প্রকাশ করলো একে অপরের প্রতি।
সেদিন সন্ধ্যার পর বাদশা ও ফুলকে ঘরের পিছনে নিরবে ডেকে নিলো শিখা। জিজ্ঞেস করলো,
“আপনারা দুজন কোথায় ছিলেন এতটা মাস? কিভাবে ছিলেন? কি কাজ করেছেন? বলেন শুনি।”
বাদশা তপ্ত স্বাস ছেড়ে বলল,
“এতটা বছর এই বাড়িতে শ্রম দিলাম। মাথা খাটাইলাম। অথচ আপনে ছাড়া একজন মানুষও জানতে চাইলো না,কই ছিলাম,কি করলাম,ক্যামনে দিন চালাইলাম।”
“আফসোস করবেন না বাদশা ভাই। মনে রাখবেন,
আপনি যার উপকার করেছেন,সে হয়তো তা মনেও রাখবেন না। কিন্তু আপনার দুঃসময়ে অন্য কাউকে দিয়ে আল্লাহ আপনার উপকার করাবে। অর্থাৎ ভালো কাজের,মহৎ কাজের প্রতিদান আল্লাহ আমাদের রিটার্ন দেন।”
” মাশাল্লাহ। পড়ালেখা কইরা ভাবি কি জ্ঞানের কথা শিখছে।”
মুগ্ধ গলায় বলল ফুল। বাদশা বলল,
“কইরা কি বেকুব? ভাবিতো এখনো পড়াশোনা করে। চলমান।”
“বাদশা ভাই বলেন?”
“আচ্ছা। সংক্ষেপ কইরা বলি। সেদিন ফুলরে নিয়া ঢাকায় যাই। নদীর ওপারে কেরানিগঞ্জের অমৃতপুর গ্রামে এক ভাইয়ের বাসায় উঠি। উনার বাসা আমি আগে থেকেই চিনি। এর আগেও ঢাকায় গেলে উনার বাসায় রইছি। উনি এক কারখানায় চাকরি নিয়া দিলো। তারপর আলাদা একটা টিনশেডের বাসাভাড়া নিয়া দিলো। ভালই গেলো দিন ভাবি। গ্রামে এই প্রথম আইলাম ফুলরে নিয়া, মায়ের কবর দেখতে। এসেই দেখি ঘরের দরজায় একটা ছোট সাইনবোর্ড আপনার লিখা। আর কি দেরি করি আমি। দুদিন পর আবার চইলা যামু ঢাকায় ফুলেরে নিয়া।
আমার মায়ের দোয়ার বরকতে ভালই আছি ওইখানে ভাবি।”
“এই বাড়িতে থেকে যান আগের মতো।যেতে হবে না আর কোথাও।”
“তা কি হয় ভাবিজান? আমাগোরে হ্যারা রাখবো? আমরাও থাকুম না। চইলা যামু।”
খেদ ঝেড়ে বলল ফুল।
“আচ্ছা তা দেখা যাবে। আজ রাতে ত আছো। দেখি আমি।”
তারপর তিনজন তিনদিকে চলে যায়। শিখা জুবায়েরের রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়।
“আসতে পারি জুবায়ের ভাই? একটু কথা ছিলো।”
জুবায়ের গোপনে,নিঃশব্দে আওড়ালো,
” হৃদয় কুঠুরিতে বসে আছো দিবানিশি। দখল করে আছো আমার আস্ত পৃথিবী! তুষের আগুনের মতো জ্বলছো অহনির্শ! আর সামান্য একটা ইটের কক্ষে প্রবেশ করতে অনুমতি চাচ্ছো?
তারপর সশব্দে নিরাশ গলায় বলল,
“তুমি অনুমতি ছাড়াই আমার রুমে এনিটাইম আসতে পারো।”
শিখা ভিতরে গেলো। বলল,
“আপনি বড্ড মন খারাপ করে থাকেন নানুর জন্য। একটু স্বাভাবিক হোন চাচীর কথা ভেবে।”
“তোমার চাচীর কথা ভাবলেই ত সবচেয়ে আঘাতে জর্জরিত হয়ে যাই। নানীর মৃত্যু আমাকে বাড়তি চিন্তায় ও সমস্যায় ফেলে দিলো শিখা। কি যে করি। দিশেহারা আমি।”
“বুঝিনি। বুঝিয়ে বলেন?”
হৃদ্যতাপূর্ণ স্বরে জানতে চাইলো শিখা।
“অবশ্যই তোমাকে বলব। কিন্তু এখন বলার মুড নেই। মন নেই।কেন এলে বল?”
“ওহ! আমি এলাম বাদশা ভাই ও ফুলের বিষয় নিয়ে। আমি চাই তারা দুজন আগের মতো এই বাড়িতে থাকুক। দিনেদিনে আমাদের পরিবারটা জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে। তারা থাকলে সবদিক দিয়ে আমাদের ভাল বৈকি মন্দ হবে না। কি বলেন?”
“তুমি পরিবারের জন্য যেটা ভালো মনে করবে,তাই করবে। তবুও আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেছ। তার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।”
শিখা স্মিত হেসে চলে গেলো তালুকদারের কাছে। বাদশার থাকার কথা বলল প্রয়োজনীয়তা দেখিয়ে।
তালুকদার বলল,
“তুমি আমার শিক্ষিত জ্ঞানীগুণী বউ। যেটা যেইভাবে ভালো হয় করবা। আমি বুড়ো বাপ আর কদ্দিন।”
“আপনার মুখে আজকাল শুধু নৈরাশ্যবাদী কথা। আশার কথা বলতে পারেন না বাবা?”
অভিমানী গলায় বলল শিখা।
আর কাউকে জিজ্ঞেস করার আবশ্যক নেই। তাই পরদিন বাদশাকে ডেকে শিখা বিষয়টা বলল। পাশাপাশি তালুকদার বাড়িতে থাকা, বাদশা ও ফুলের ভবিষ্যতের জন্য কতটা ভালো হবে, সেইসব কিছুও শিখা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাকে বুঝিয়ে বলল।
শুনে বাদশা কৃতজ্ঞতার চোখে শিখার পানে চাইলো। এবং বলল,
“ভাবি তাইলে আমি ঢাকায় গিয়া বাসা ছাড়তে হইবো। সব মালামাল গ্রামে নিয়া আসতে হইবো। তারপর আসি?”
“সমস্যা নাই বাদশা ভাই। তারপরেই আসেন সব গুছায়া।”
সেদিন বাদশা ও ফুল চলে যায় সবার থেকে বলে। শিখা তার জরুরী কথাটা বলল না ইচ্ছে করেই। বাদশা কয়দিন পরে একবারের জন্য চলে আসবে। তখন ধীরস্থির ভাবে বলা যাবে।
এই ভিতরে জুবায়ের কয়েকবার চেষ্টা করেছে শিখার সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলার। কিন্তু পারছে না। কিভাবে বলবে,কোথা হতে শুরু করবে, শেষ থেকে শুরু করবে না মাঝামাঝি থেকে শুরু করবে,এমন মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনে তার দিন কাটছে।
শীতের অলস দুপুর। তালুকদার বাড়িতে তেমন কেউ নেই। সবাই গিয়েছে এক আত্মীয়ের বিয়েতে। শিখা যায়নি তার ক্লাস আছে বলে। জুবায়ের মার্কেট থেকে বাড়িতে চলে এলো। চুপিচুপি খেয়াল করলো,মতির মা রান্নাঘরের দরজা চাপিয়ে ঘুমাচ্ছে লেপমুড়ি দিয়ে। বরকত কাচারি ঘরে নাক ডেকে ডেকে লেপের ওমে অঘোরে ঘুমাচ্ছে। এইতো সুযোগ। কিন্তু শিখা কই?কলেজ থেকে আসেনি?
ভেবেই জুবায়ের পুরো ঘর খুঁজলো শিখাকে। নেই শিখা। সে প্রস্তুত হয়ে নিলো নিজের রুমে গিয়ে। ঘর থেকে সন্তপর্ণে বের হয়ে লুকিয়ে বাগানের দিকে গেলো। সে জানে বাগিচার ফল কুড়ানো ও গাছ থেকে হাবিজাবি ফল পেড়ে নেওয়া শিখার একরকম শখ বলা যায়। জুবায়ের শিখাকে আবিষ্কার করলো ঠিক নির্জন একটি বাগিচার ভিতরে।
“শিখা ফল কুড়াচ্ছো?”
শিখা ঘাড় ফিরিয়েই ওমাগো! বলে ভূত দেখার মতো ঘাবড়ে গেলো।
“আপনি এই অসময়ে? তাও এখানে? আমাকে কোনকিছুর জন্য দরকার জুবায়ের ভাই?”
হতভম্ব গলায় জিজ্ঞেস করলো শিখা।
জুবায়ের নিরব। কোন কথা বলছে না। চোখজোড়া নেশাখোরের মতো লালবর্ণ হয়ে আছে। সে এক হ্যাঁচকা টানেই শিখার বুকের ওড়না নিজের হাতে নিয়ে নিলো। শিখার মুখ বেঁধে ফেলল ওড়না দিয়ে। পিছমোড়া করে দু-হাত বেঁধে ফেলল। শিখা চাইলেও আর চিৎকার করতে পারছে না। জুবায়ের শার্টের নিচ হতে ধারালো একটি ছুরি বের করলো। শিখার চোখের দিকে তাকাল না।
কেবল ভার গলায় বলল,
” দুজন জলজ্যান্ত পুরুষ মানুষকে মেরে ফেলেছি আমি শুধু তোমার জন্য। আর আজ তোমাকে মেরে ফেলবো শুধু আমার জন্য।”
রাজবধূ পর্ব ৬০
বলেই আর এক মুহূর্ত দেরী করল না জুবায়ের। আকাশ,বাতাসকে সাক্ষী রেখে শিখার পেটের মাঝ বরাবর তিন তিনবার ছুরি চালিয়ে দিলো। হাতের বাঁধন খুলে দিলো। মৃত্যুসম যন্ত্রণায় পেট চেপে ধরে শিখা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। জুবায়ের তার মৃত্যু নিশ্চিত করে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।