রাজবধূ পর্ব ৬৫
রেহানা পুতুল
শিখা আহাম্মকের ন্যায় সবার মাঝে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার।
“চইলা গ্যাছে মানে? কই চইলা গ্যাছে? কান্দন থামা।”
স্তম্ভিত গলায় জিজ্ঞেস করলো সুফিয়া।
একইসঙ্গে বাকিরাও ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইলো জুবায়ের কোথায়? কি হয়েছে তার?
আমেনা কেঁদেই যাচ্ছে আকুল স্বরে।
বরকত,ডলি নিজ থেকেই জুবায়েরকে খুঁজতে লাগলো এদিক ওদিক। তার রুমে গেলো। শূন্য রুম। ছাদে গেল। ফাঁকা ছাদ। তাদের কলিজা ধক করে উঠলো। ফিরে এলো আমেনার রুমে। আমেনা এখনো ক্রন্দনরত।
“চাচী জুবায়ের ভাইরে কোনখানেও পাইলাম না খুঁইজা।”
বলল বরকত ও ডলি।
“পাইবানা গো। সে মারে ছাইড়া, সব ছাইড়া,দেশ ছাইড়া বিদ্যাশে চইলা গ্যাছে।”
“কোন দ্যাশে?”
অবাক চোখে জানতে চাইলো সবাই।
“কইল তো দুবাই গ্যাছে।”
সবার মাঝের ঘাবড়ানো ভাব উধাও হয়ে গেলো নিমিষেই। কিন্তু জুবায়েরের এমন আকস্মিক দেশ ত্যাগের কোন হেতু খুঁজে পেল না ঘরের কেউই। তারা একে অন্যকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,কেউ কিছু জানে কিনা আগে থেকেই। না কেউই জানে না। বুকে হাত দিয়ে জোরে স্বাস ছাড়লো তারা।
সুমনা বলল,
” আল্লাহগো আল্লাহ! চাচী যে কি ডরটা লাগায়া দিলেন সবাইরে। এইভাবে কেউ কান্দে? দম বন্ধ হইয়া যাইতেছিলো আমার। মনে করছি গলায় ফাঁ*স দিছে। নয়তো মইরা গ্যাছে।”
“কি অলুক্ষণে কথা কও বউ? সরো।”
শাসনের সুরে সুমনাকে বলল সুফিয়া।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি ছোট জায়ের পাশে বসলেন। পিঠে হাত দিয়ে মমতার সুরে বললেন,
“অয়তো ব্যবসার কামে দ্যাশের বাইরে আরো দুই একবার গ্যাছে। এইটা তো নতুন না। আমার লগে কিছুক্ষণ কথা কইলো আইজ দুপুরে। এমন কিছুই ত কইল না হারামজাদা পোলায়।”
“ওই আর আইবো না দ্যাশে। আগে যাইতো মালেশিয়া। এখন ত গ্যালো নয়া দ্যাশেগো ভাবি। ম্যানেজাররে নাকি দোকান বুঝায়া দিলো। ওইখানে কিসের নতুন ব্যবসা শুরু করছে। মায়ের থেকে বিদায় নিয়া গেলো। মাফ চাইয়া গ্যালো। কত কান্দন কাঁদলোগো ভাবি, মায়েরে জড়াইয়া ধইরা ছোড়ুকালের মতন।
কইলো টাকা পয়সা পাঠাইবো আমার লাইগা। সকলের খোঁজ খবর রাইখবো। কি হইলো আমার জুবার। কিছুই কইতে পারুম না আমি নাদান মা। আইজ আমি যদি মইরা যাই,পোলায় ত মায়ের খাটিয়াও ধরতে পারব না। মরনকালে মায়ের মুখে এট্টু পানিও দিতে পাইরবো না। এইসবের লাইগাই তো আমার কইলজা ছিঁড়া যাইতাছে। ও ভাবিগো..আমার পোলার মনে কি দুঃখগো। কোন দুঃখে পোলা এমন বিবাগী হইলো গো।”
“আরেহ দূর! থাম। আজাইরা কথা। আইবো না ক্যান? একশোবার আইবো। রাজেরে দিয়া তারে আনানোর ব্যবস্থা করমু আমি।”
“আমার সাথেও কথা কইলো দেওরা। মাফ চাইলো। আমি ত বুঝতেই পারিনাই।”
বরফ গলায় বলল রানী।
সবাই বেশ কিছুক্ষণ আমেনার পাশে রইলো। তাকে শান্তনা দিলো। মতির মা বলল,
“আইজ ত ভাবি একলা। ঘুমাইতে ডর লাগবো। এতদিন তো লগের রুমে পোলা আছিলো। এহন ত এই সাইড পুরাই খালি। ভাবির লগে কোন বউরা আইসা ঘুমাইয়ো রাইতে। আমার আবার বিছনা বদল হইলে ঘুমে ধরে না।”
“তুই ঠিক কইছোত। কিন্তু ঘুমাইবো টা কে? আমারো নিজেরই পালংক ছাড়া নিদ আহেনা চউক্ষে।”
বলল সুফিয়া।
“আমি পারুম না আম্মা। রাইত হইলে হাতের ব্যথাই পুরা পালংক নিয়া গড়াই।”
বিনীত গলায় অপারগ প্রকাশ করলো রানী।
“আমার ত পোলাপান আছে। ঝামেলা। ডলি নইলে শিখা ঘুমাইতে পারে।”
ডলি দোনোমোনো শুরু করলো। তখন আমেনা বলল,
“রাজের বউ ঘুমাইলেই হইবো আমার বগলে। কি কও বউ?”
শিখা হতবুদ্ধির ন্যায় টেবিলের এক কোণায় হাত রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলো এতক্ষণ।আমেনার কথাগুলো শুনে তার বুকের বাঁ পাশটা খানিকটা চিনচিন করে উঠলো নিজের অজান্তেই। এক লহমায় ভুলে গেলো জুবায়েরের প্রতি আনা তার প্রচন্ড অভিযোগ ও ক্রোধ! যে চলেই গেলো, তার উপর রা*গ পুষে রাখা মানে নিজেকেই কষ্ট দেওয়া। শিখা সম্বিত ফিরে পেলো। চকিতে চাইলো আমেনার মুখপানে।
নিচু স্বরে ছোট্র করে বলল,
“ঠিক আছে চাচী। রাতে সবসময় আমি ঘুমাবো আপনার সঙ্গে। উনি আসলে না হয় ছোট ভাবি ঘুমাবে।”
সবাই চলে গেলো যার যার রুমে। রাতে আমেনাকে ডেকে নিয়ে সবাই একসঙ্গে ভাত খেলো। জয়নুল তালুকদার তখনই শুনতে পেলেন একমাত্র ভাতিজা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। তিনি ব্যথাতুর কণ্ঠে বললেন,
“যত বড় কিছুই হউক। ওর মায়েরে একলা রাইখা চইলা যাওন উচিত হয়নাই। কামডা ভালো করল না জুবায়ের।”
রাতে শিখা পড়া শেষ করে আমেনার রুমে চলে গেলো। আমেনার নির্দেশে রুমের কপাট বন্ধ করে দিলো ভিতর থেকে।
শিখা স্মিত হেসে নিজ থেকে বলল,
“চাচী লাইট অফ করে দিবো?”
“না জ্বলতে থাউক। তুমি এইদিকে আসো।”
শিখা পালংকের সিঁড়িটা বেয়ে বিছানার উপরে উঠে গেলো। বলল,
“চাচী, আপনি এত বেশী মন খারাপ করে থাকবেন না। জুবায়ের ভাই বেঁচে আছে। সুস্থ আছে। এটাইতো বড় শান্তনা হতে পারে আপনার জন্য। উনি দেশে নেই। তো কি হয়েছে? কত মানুষ বিদেশে চাকরি করতে যাচ্ছে। এটা কোন বিষয়? দেখবেন উনি আসবে। আপনার ভাতিজাকে দিয়ে উনাকে দেশে আনাবো। অভিমান ভাঙ্গাবো। বিয়ে করাবো। আমি উনার বিয়েতে অনেক ফূর্তি করবো।”
আমেনা নিথর চোখে শিখার মুখের দিকে তাকালো। বালিশের নিচ থেকে দুটো ভাঁজ করা কাগজ বের করলো। সঙ্গে একটা অডিও ক্যাসেট। শিখার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
” তোমার দেওর, যাওনের আগকালে আমার হাতে এগুলো দিয়া কইলো, সকলের অগোচরে যেন তোমার হাতে দিই। আর রাইতে তোমারে আমার কাছে শোয়ার কথাও বইলা গ্যাছে জুবায়। চাওতো, কি এমন জরুরী জিনিস। যা তোমারেই দিতে কইলো।”
শিখা সংকোচপূর্ণ মনে দুটো কাগজের ভাঁজ খুললো। চোখ বুলিয়ে নিলো এক ঝলক। নিমিষেই শিখার উজ্জ্বল মুখখানি নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে গেলো। সে নিস্তেজ গলায় বলল,
“চাচী দুটোই চিঠি। একটি আপনাকে লিখা।”
“আর ওইটা?”
“ওইটা আমার কাছে লিখা।”
হুঁ হ্যাঁ করে উত্তর দিলো শিখা।
“একটা তোমার কাছে লিখলো?”
বলে আমেনা বাকরুদ্ধ চাহনি নিক্ষেপ করলো শিখার দিকে।
বলল,
“আমি লেখাপড়া জানি না মা। আমার চিঠিটা ভালো করে পইড়া শোনাও আমারে।”
শিখা নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে আমেনার চিঠিখানা পড়ে শোনালো।
“মা, আপনার মনে পড়ে? কয়েক বছর আগে একদিন বলেছিলাম,একটা ছোট্ট মেয়েকে খুব ভালোলাগে আমার। তাকে তালুকদার ঘরের বউ করতে চাই। কিন্তু সমস্যা হইলো মেয়েটা খুব দরিদ্র পরিবারের। বাবা নেই। মানুষের সাহায্য নিয়ে জীবন যাপন করে তারা।
শুনে আপনি বলেছিলেন,
খবরদার বলছি। এসব আকথা মুখে আনবিনা। তোর যেই আজরাইল বাপ। মেরেই ফেলবে সেই মেয়েকে।
চিন্তা করে দেখলাম, এটা একদম সত্যি। তাকে না পেয়ে আমার যতটা কষ্ট হবে। তার চেয়ে কোটিগুন কষ্ট হবে আমার জন্য তার প্রাণ চলে গেলে।
কবর দিয়ে দিলাম আমার এক তরফা ভালোবাসা ও চাওয়াকে। তাকেও আর বলা হলো না কোনদিন। তারপর যন্ত্রণার পাহাড় বুকে নিয়ে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম। অন্য মেয়েকে বিয়ে করার কথাও ভাবছিলাম। কিন্তু কে জানতো মা,
কাল বৈশাখী ঝড় ধেয়ে আসবে আমার পুরো জীবনটাকে লণ্ডভণ্ড করে দেওয়ার জন্য । ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই মেয়ে বউ হয়ে এলো তালুকদার পরিবারে। কিন্তু আমার নয়। রাজের। মা, এই বয়স তো আপনিও পার করে এসেছেন। এই বয়সের অনুভূতি তো আপনি বুঝবেন। যেই মেয়েটাকে আমি চেয়েও পাইনি। আর না চেয়েও পেয়ে গেলো রাজ। আবার রাতদিন সেই মেয়ে আমারই চোখের সামনে,ঘুরছে,ফিরছে,হাসছে। এই নরক যন্ত্রণা আমি আর সহ্য করতে পারছি না মা। আবার তাকেও বলতে পারছি না। কারণ সে এখন অন্যের ঘরনী।
তাকে যেন আর না দেখতে হয়, সেজন্যই এতদূরে পাড়ি জমালাম আমি। মা, মাগো..আপনি এই বিষয়টা ঘরের কাউকে বলবেন না। লাভ নেই। বরং তার অনেক ক্ষতি হবে। সেটা আমার জীবনের জন্য আরো হুমকিস্বরূপ।
আমার খুব কান্না পাচ্ছে মা আপনার জন্য। আমি দোকানে টেলিফোন করে আপনার খোঁজ খবর নিবো। আর যদি বেঁচে থাকি কোন একদিন আসবো। আমাকে মাফ করে দিবেন মা। আপনি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবেন। শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন। বাদশা আছে এখন বাড়িতে। এটাই বড় ভরসা আমার। এই বিষয়টা সামনাসামনি বললে, আপনি আমাকে আসতে দিতেন না। তাই ব্যবসার কথা বলেছি। দেশ ছেড়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ এই একটাই মা। শিখা।”
‘শিখা’ শব্দটি শিখার কানে মতো ঝনঝন করে বেজে উঠলো কাঁসার থালার মতো। সে থরথর করে কাঁপছে এবং কাঁদছে। আমেনাও বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেলো শিখা নামটি শুনেই। ফের ডুকরে কেঁদে উঠলেন শিখাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে। বললেন,
“এইটা কি করলো আমার পোলায়। সে তোমার লাইগা এত বেদিশা। এমন জাইনতে পারলে তোমারেই জুবায়েরের বউ বানাইতাম। দরকার হইলে মায়,পোলা জুদা হই যাইতাম তোমারে নিয়া। মা তোমার পত্রখানা পড়ো। শুনি এট্টূ। আমি তোমার মায়ের মতন। শরম পাইয়ো না। রুমে কেউ নাই। খালি তুমি আর আমি। কইলজাটা ফাইটা যাইতাছে। জানি, যতই তুমি আরেকজনের বউ হও,এখন জুবায়েরের লাইগা তোমারও দিল পুড়তাছে। আমরাতো মানুষ। মন বলে কিছু একটাতো আছে।”
শিখা ম্যাড়ম্যাড়ে স্বরে বলল,
“চাচী আল্লার কসম, আমি কোনদিনও টের পাইনি এমন কিছু। জুবায়ের ভাই কখনো বুঝতেও দেয়নি আমাকে। তবে কয়েকমাস ধরে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকাতো উনি। তাতে আমি অনেক ভুল বুঝেছি উনাকে। অনেক রা*গও দেখালাম।”
“পড়ো। দেহি তোমারে কি লিখলো।”
শিখা কাঁপা কাঁপা হাতে তাকে লিখা চিঠিটি মেলে ধরলো চোখের সামনে। মৃদুভাষায় টেনে টেনে পড়লো।
“তুমি আমার কাছে শিখা নও। সেই ছোট্ট বালিকা! আমার প্রাণের কিশোরী! হৃদয় কুঠুরিতে পুঞ্জীভূত বেদনার আয়াতগুলো বার বার তোমাকে বলতে চেয়েছি। তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে। কিন্তু পারিনি। এদিকে ভিসাও এসে গেলো। টিকিটও কনফার্ম করে ফেললাম।
তারপর তাড়াহুড়ো করে কিছুদিন আগে ছাদে গিয়েছি সব বলতে। তাও শুননি তুমি। কি নিদারুণ অবহেলায় ঝরাপাতার মতো আমাকে মাড়িয়ে চলে গেলে তুমি। তারপর আর সময় হলো হলো না। নিরুপায় হয়ে কোন মাধ্যমে যেতে হলো আমাকে। কচি ডগার ন্যায় তোমার আঙ্গুলগুলোর ছোঁয়ায় এতটাই বিবশ হয়েছি, আর তোমার বাকি নিবিড় স্পর্শ পেলে কি হবে আমার তা কল্পনা করতেই বেহুঁশ হয়ে যাই আমি। তুমি পায়ের স্যান্ডেল ছুঁড়ে মারলে আমার গায়ে।
হাহাহাঃ তুমি কি জানো বালিকা, তুমি আমার বুকে পাষাণ ছুরি চালালেও আমি হাসবো আর বলবো তোমাকেই ভালোবাসি। তোমাকেই চাই।
যাইহোক,অডিও ক্যাসেটটি আমার রুমে গিয়ে ক্যাসেট প্লেয়ারে অন করে শুনে নিও। সবিস্তারে সব রেকর্ড করে বলেছি শুরু করে এই অবধি। একটাই অনুরোধ, যেই তোমার জন্য আমি যোজন যোজন দূরে। সেই তুমি আমার মায়ের দিকে খেয়াল রেখো নিজের মা মনে করে। অবসর হলেই মায়ের কাছে এসে থেকো। মায়ের সাথে রাতে ঘুমাবে। এতে আমার মাও ভালো থাকবে। আমিও স্বস্তি পাবো। ভালোথেকো আমার এক পৃথিবী ভালোবাসায়।
ইতি,
এক নিঃসঙ্গ প্রেমিক।”
শিখার সারাশরীর টলছে। আর বসে থাকতে পারল না। কাত হয়ে আমেনার পাশে বালিশে পড়ে গেলো। আমেনা শিখার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অনেক কথা বলল। যদি শিখা জুবায়েরের বউ হতো,তাহলে সুফিয়ার মত দজ্জাল শাশুড়ী, আদুরীর মতো দেমাকী ননদ, রানী,সুমনা,ডলির মতো আত্মঅহমিকায় ডুবে থাকা মানুষজনের কাছে তুচ্ছতাচ্ছিল্যতার স্বীকার হতে না।
আমেনার কথায় শিখার মাঝে মিশ্র অনুভূতি দেখা দিলো। এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন সৃষ্টি হলো তারমাঝে। একি শুনলো সে। সে হজম করতে পারছে না জুবায়েরের বিষয়টা। যেন ঠেলেঠুলে ভিতর হতে উগরে আসতে চায় সব। শিখার সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে এলো। সে নির্জীবের মতো বিছানার উপরে পড়ে রইলো।
আমেনা বলল,
“ক্যাসেটের কথা কখন শুনবা?”
“চাচী আমার এত খারাপ লাগছে,বলার মতো নয়। মরে যাবো মনে হচ্ছে। কাল বা পরে শুনবো।”
প্রদীপের মতো নিবু নিবু গলায় উত্তর দিলো শিখা।
তার দু-চোখ বুঁঝে এলো নানান দুর্ভাবনায়। আমেনাও শিখাকে নিয়ে শ’য়ে শ’ য়ে জল্পনা কল্পনা করতে করতে নিদ্রাদেবীর কোলে ঢলে পড়লো।
পরেরদিন প্রভাতকালে কিংবা সকালেও শিখার ঘুম ভাঙ্গল না। অবসাদজনিত শরীরখানা টেনেটুনে বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো। শিখার মনের অবস্থা অতি নাজুক। আমেনা তা বুঝতে পারলো। তাই সে শিখাকে বের হতে দিল না তার রুম হতে। তার পালংকে শুইয়ে থাকতে আদেশ করলো। শিখাও অনুগত হয়ে তাই করলো।
সুফিয়া শিখার কথা জিজ্ঞেস করলে আমেনা বলল,
“ভাবি, বউর শরীর একটু খারাপ। আর ম্যালারাইত জাইগা আমরা হড়ী বউ জুবায়েরের বিয়া সাদি নিয়া নানান গপ্পো সপ্পো করলাম। থাউক না। শুইয়া থাকুক। হের ত অন কলেজ নাই। এইদিকে ফুল বাদশা তো আছেই।”
রাজ অফিসে বসে আছে। মনে মনে বেশ উৎফুল্ল গ্রামে যাওয়ার জন্য। শিখার আলিঙ্গন এবার অনেক বেশী পাবে। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখবে বুকের মাঝে। আগে বাড়িতে গেলে,সকালে শিখার প্রাইভেট,দিনে কলেজ,সন্ধ্যায় ও রাতে পড়া। এসবের জন্য মন ভরে শিখার সান্নিধ্যে পেত না। এবার কোন ফাঁকিঝুঁকি চলবে না। এসব ভেবেই এক অপার্থিব গোপন সুখে মেতে উঠলো রাজের সমস্ত অনুভব, অনুভূতি!
তখন অফিসের একজন স্টাফ রাজের হাতে একটি চিঠির খাম দিয়ে গেলো। খামের উপরে উজানপুর গ্রামের ঠিকানা। তারমানে শিখার প্রণয়পত্র এটা। কিন্তু প্রেরকের নাম নেই। তাড়াহুড়োয় মেয়েটা নিজের নাম লিখতেই ভুলে গেলো। নাকি ইচ্ছে করেই তাকে বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য এমন করলো। রাজ উচ্ছ্বসিত হলো। হৃদয় তরঙ্গায়িত হতে লাগলো অনবরত। অপার কৌতুহল নিয়ে চিঠিটি খুললো।
রাজবধূ পর্ব ৬৪
বিষম খেল রাজ। একি! শিখার চিঠি নয় এটা। এই হাতের লেখা তার অতি পরিচিত। অতি চেনা। জুবায়েরের হ্যান্ডরাইটিং এটা। রাজ তার ভাবান্তর চিত্ত নিয়ে চিঠিটি পড়তে শুরু করলো।