রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৪৫

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৪৫
রিক্তা ইসলাম মায়া

‘ আরিফ ভাই আসল না কেন তোদের সাথে জুই?
হাতে ট্রে বিছানার কোণায় রেখে তার পাশে বসতে বসতে আক্ষেপ গলায় প্রশ্নটা করলো জুইকে মুক্তা। মায়া ওয়াশরুমে। জুই ব্যাগ থেকে তোয়ালে বের করে রাখছিল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। মুক্তা কথায় জুই দ্বিধাহীন গলায় বলল…
‘ ভাইয়ার নাকি কি জরুরি কাজ আছে সেজন্য আসেনি। আমাদের দুজনকে একা পাঠাল।
জুইয়ের কথায় খানিকটা অসন্তুষ্ট হলো মুক্তা। মন খারাপ করে বলল…
‘ ভাইয়ার কি এমন জরুরি কাজ পড়লো যার জন্য বোনের শশুর বাড়িতে আসতে পারছে না।
‘ আরিফ ভাইয়া নতুন ব্যবসা শুরু করেছে আপু। এজন্য আজকাল ভাইয়া অনেক ব্যস্ত থাকে। এমনকি কাজের চাপে ভাইয়া ঠিকঠাক সময়ে বাসায়ও ফিরত না। অনেকদিন তো আরিফ ভাই ভোর রাত্রেও বাসায় ফিরে।

যদিও জুইয়ের কথা গুলো সত্য তারপরও আরিফের খান বাড়ির অনুষ্ঠানে না আসার যথাযথ কারণটা ছিল মায়ার প্রতি মন কষাকষি নিয়ে। যেটা আরিফের ব্যস্ততা অযুহাতে গোপন করে গেল জুই। মন খারাপে মুক্তা থেমে নেই। আজ তিনমাস পর বোনদের কাছে পেয়েছে সে। যদিও এই তিনমাসে মুক্তা দুই-একবার গিয়েছিল ফাহাদকে নিয়ে নিজের বাপের বাড়িতে বেড়াতে তবে সেখানে ভাই-বোনদের কারও দেখা পাইনি ওহ। হুট করেই আবার মায়ার ফিক্সড হয়ে যাওয়া বিয়েটাও আরিফ ক্যান্সেল করে দিল। এই নিয়ে বাসায় কতো ঝামেলা হলো। চেয়ারম্যান পরিবার ওদের বাবাকে কতো কথা শুনাল। মানহানির মামলা দিতে চেয়ে হুমকি ধামকি দিয়েছিল কিন্তু নাদিম ছেলেটা সেদিন শফিকুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। নিজের পরিবারকে বুঝিয়ে শান্ত রাখল। আবার শফিকুল ইসলামের সঙ্গেও কথা বলেছি আরিফের সঙ্গে কথা বলবে বলে। হুট করে কেন আরিফ বিয়েটা ক্যান্সেল করতে চাইছে? এতে দুই পরিবারের সম্মান জড়িয়ে আছে। অলরেডি পুরো এলাকায় জানাজানি হয়ে গেছে চেয়ারম্যানের ছেলের সঙ্গে শফিকুল ইসলামের ছোট মেয়ের বিয়ে ফিক্সড হয়ে আছে এই ব্যাপারটা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এখন এই মূহুর্তে যদি কোনো কারণ ছাড়া আরিফ বিয়েটা না করে দেয় তাহলে স্বাভাবিক নেয় সবার সম্মানে আঘাত লাগবে। এলাকার মানুষ সমালোচনা করবে। নিন্দা জানাবে। সেজন্য শফিকুল ইসলাম চেয়েছিল মায়া, জুইকে নিয়ে আরিফ আশুগঞ্জ ফিরতে। উনাদের ধারণা ছিল আরিফ একবার মায়াকে নিয়ে আশুগঞ্জ ফিরলে যেভাবে হোক মায়াকে নাদিমের সঙ্গে রাতারাতি বিয়েটা দিয়ে দিবে আরিফকে বুঝিয়ে শুনিয়ে। যদি আরিফ এতে রাজি না হতো তারপরও বিয়েটা সম্পূর্ণ করতো মায়ার পরিবার। অন্তত নিজেদের দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করার জন্য হলেও মায়াকে চেয়ারম্যান পরিবারের বিয়ে দিতো। তাছাড়া এখানে বিয়ের জন্য মায়াতো আর অমত করেনি সেহেতু বিয়েটা সবাই সম্পূর্ণ করতে চাই যেভাবেই হোক। কিন্তু আরিফ এসবের কিছুই তোয়াক্কা করলো না। হুট করে মায়ার বিয়েটা ক্যান্সেল করে মায়াকে নিয়ে আর ফিরলো না আশুগঞ্জ। ফোনে নাদিমের সঙ্গে আরিফের কি কথা হয়েছিল মুক্তা জানে না কিন্তু এরপর থেকে চেয়ারম্যান পরিবারের সবার বেশ স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে মুক্তাদের পরিবারের সঙ্গে। তবে মায়ার বিয়েটা একেবারে ভেঙ্গে যায়নি।

বরং এখনো আগের নেয় আছে। শফিকুল ইসলাম কিছু সময় চেয়েছেন চেয়ারম্যানের থেকে। নিজের ছেলেমেয়ে বাড়িতে ফিরলেই এই নিয়ে কথা বলবেন সবার সাথে ততদিন যেন অন্তত সময় দেন শফিকুল ইসলামকে চেয়ারম্যান সাহেব। সেদিন শফিকুল ইসলামের কথা রেখেছিল চেয়ারম্যান সাহেব। তারপর থেকে মায়ার বিয়ের বিষয়টা আপাতত স্থগিত আছে। পুনরায় আলোচনায় বসবে যখন মায়াকে নিয়ে আরিফ আশুগঞ্জ যাবে তখন কিন্তু এতোকিছু মাঝে আরিফের মতামত শূন্য। না নিজে বাড়িতে যাচ্ছে আর না মায়াকে যেতে দিচ্ছে। বিগত তিনমাস ধরে চট্টগ্রামেই আছে মায়ারা। মুক্তা অনেকটা দিনপর বোনদের নানাশশুর বাড়িতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। মায়ারা এখানে এসেছে পর থেকেই বোনদের সাথে আছে সে। সন্ধ্যায় মায়াদের জন্য ট্রে-তে করে রাস্তা নিয়ে এসেই উক্ত কথা বলেছিল মুক্তা। মন খারাপে একই ভাবে বলল মুক্তা…

‘ নতুন ব্যবসা দিয়েছে বলে বোনদের এক নজর দেখা যাবেনা ভাইয়ের? আরিফ ভাই বাড়িতে যায়না, আমার শশুর বাড়িতেও যায়না, আবার এখানে আসলো না। আমি নোটিশ করেছি জুই, আরিফ ভাই সপ্তাহে সপ্তাহে ঢাকা গেলেও আমার শশুর বাড়িতে যায় না আমাকে দেখতে। বাপ-চাচা মিলিয়ে একটা মাত্র ভাই আমাদের, সেও আমার খোঁজ করে না। আমার তো মনে হয় ভাইয়া কোনো কারণে রেগে আছে আমার শশুর বাড়ির মানুষের উপর
এজন্য যেতে চাই না।
জুই ব্যাগ থেকে কাপড় নামাচ্ছিল। মুক্তার মন খারাপের কথা গুলো শুনে মনে ভয় সংশয় সৃষ্টি হলো। ওরা তিন বোনদের মাঝে মুক্তা বেশ চতুর। অল্প সময়ে সবকিছু চট করে ধরে ফেলতে পারে সে। হয়তো আরিফকে নিয়ে মনে যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে সেটার খোঁজ করতেই জুইকে এখন খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে প্রশ্ন করছে। জুই হাতে তোয়ালেটা বিছানায় রেখে এগিয়ে মুক্তার মুখোমুখি বসে বলল…
‘ তেমন কিছু না আপু, তুমি ভুল বুঝছো। ভাইয়া আসলে প্যারার মধ্যে আছে। তাছাড়া আরিফ ভাই তো রোজ তোমার সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখছে।

‘ ভাইয়ের সাথে কি আমার শুধু ফোনে যোগাযোগ রাখার সম্পর্ক জুই? একটা বার আমার শশুর বাড়িতে গিয়ে আমাকে দেখে আসলে কি হয়? এখনতো ভাইয়া চট্টগ্রামে আছে আমিও এখানে আছি। কতক্ষণ লাগবে আমার শশুর বাড়িতে আসতে? এখানেও আসলো না। আমার কি মনে হয় জুই জানিস? আরিফ ভাইয়া হয়তো কোনো কারণে আমার শশুর বাড়িতে আসতে চাইছে না। আচ্ছা জুই তুই কিছু জানিস এই ব্যাপারে?
জুই খানিকটা থতমত খেয়ে বলল…
‘ না আপু।
‘ আচ্ছা তোরা কেন বাড়িতে যাচ্ছিস না?
‘ আমাদের পড়ার চাপ বেশি পড়েছে আপু।
নিজের প্রশ্নের ধারা জারি রেখে ফের বলল মুক্তা…
‘ আচ্ছা মায়া কি কারও সাথে রিলেশন আছে? আপুকে সত্যি করে বলবি জুই।
একই ভাবে জুই উত্তর দিয়ে বলল…
‘ না আপু নেই।
জুইকে সন্দেহ করে মুক্তা বলল…

‘ তুই মিথ্যা বলছিস জুই। আমার মনে হয় মায়া কারো সাথে রিলেশনে আছে নয়তো আরিফ ভাইয়া হুট করে কেন নাদিমের সঙ্গে বিয়েটা ভেঙ্গে দিল ওর? ওহ নিশ্চয়ই আরিফ ভাইকে বলেছে বিয়েটা ভাঙতে? যেখানে এই বিয়ের জন্য আরিফ ভাই নিজেই প্রথমে রাজি ছিল? সত্যি করে বলতো জুই কি হয়েছে আসলে?
মুক্তা একের পর এক ধারালো প্রশ্নের বানে এবার যথাযথ ভাবে জুই ঘাবড়ে যাচ্ছে। যদি কোনো কারণে ভুলেও মায়ার সম্পর্কে মুক্তা কানে কিছু যায় তাহলে সেটা ওদের পরিবারের সবার কানে পৌঁছে যাবে মূহুর্তে। জুই নিজেকে ধাতস্থ করে আবারও মিথ্যা বলে বলল…
‘না আপু তুমি বেশি চিন্তা করছো এমন কিছুই হয়নি। মায়া কারও সাথে রিলেশন করলে সেটা তোমাদের চোখে পড়তো না? ওহ যে গবেট সবার আগে তোমার কাছেই ধরা পড়তো এটা।

জুইয়ের কথাটা মুক্তার যুক্তিসঙ্গত মনে হলো। ওরা তিন বোনের মধ্যে মায়া একটু বোকা টাইপের। কোনো কাজ করলে সেটা সহজে হজম করে রাখতে পারে না। কারও না কারও কাছে ধরা পরবেই। যদিও মায়ার কোনো রিলেশন থাকতো তাহলে অন্তত জুইয়ের কাছে হলেও সেটা এতদিনে ধরা পড়ে যেতো। জুইতো আর মুক্তাকে মিথ্যা বলবে না। কিন্তু এতো ভালো বিয়েটা আরিফ কেন হঠাৎ করে না করছে সেটাই বুঝতে পারছে না মুক্তা। মুক্তা ভেবে রেখেছে আজ রাতেই একবার ফাহাদকে নিয়ে যাবে আরিফের সঙ্গে দেখা করতে। আরিফ আসেনি তো কি হয়েছে? ছোট বোন হিসাবে ওহ যাবে আরিফের কাছে। আবার আরিফকে সঙ্গে করে নিয়েও আসবে। এসবের ফাঁকে সুযোগ করে জেনে নিবে কেন মায়ার বিয়েটা না করছে আরিফ। মুক্তা জুইকে বলল..

‘ আচ্ছা তুই নাস্তা কর। আরিফ ভাইয়ের সঙ্গে আমি নিজেই কথা বলে নিব এই বিষয়ে।
কথাটা বলতে বলতে জুইয়ের দিকে শরবতের গ্লাসটা এগিয়ে দিল মুক্তা। সেটা হাতে নিতে নিতে ছোট করে সম্মতি দিয়ে জুই বলল….
‘ আচ্ছা আপু।
রুমের মধ্যে মায়ার সন্ধান করে মুক্তা বলল…
‘ মায়া কইরে জুই?
জুই শরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বলতে চাইল…
‘ মায়া ওয়াশরু….
‘ এইতো আমি আপু।
জুইয়ের কথা শেষ করার আগেই মায়া ওয়াশরুম থেকে বের হলো ফ্রেশ হয়ে এরমাঝেই মুক্তার কথাটা শুনে উত্তর করলো সে। মায়াকে ডেকে মুক্তা বলল…
‘ এদিকে আয়। নাস্তা করে যাহ।

মায়া এগিয়ে এসে জুইয়ের বিছানার উপর রাখা তোয়ালেটা তুলল, হাত মুখ মুছতে মুছতে বসলো জুইয়ের পাশাপাশি। মুক্তার এগিয়ে দেওয়া শরবতে গ্লাসে চুমুক শেষ করতে করতে তিনবোনের মধ্যে গল্পের আসর জমাল। সেই আড্ডার মাঝেই উপস্থিত হলো সেঁজুতি, শশী। শশীকে দেখে জুই তাকাল মায়ার দিকে। মায়াও খানিকটা অস্বস্তিতে তাকাল জুইয়ের দিকে। দুজনের চোখাচোখি হতেই জুই চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করলো মায়াকে। মায়া খানিকটা স্বাভাবিক নেয় তাকাল শশীর দিকে। শশী হাস্যোজ্জ্বল মুখে মায়ার পাশ ঘেঁষেই বসল। মায়াকে শশীর ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ। ছোটখাটো কিউট মেয়ে মায়া।

দেখতেও নাদুস নুদুস। মায়াদের সঙ্গে শশীর কৌশলাদি বিনিময়ে মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলো ফাহাদ আর রাদিফ। মূলত ফাহাদ এসেছে নিজের বউয়ের খোঁজে। রাদিফ আর ফাহাদকে একটু বের হতে হবে কাজে। মুক্তা বলেছিল সে আরিফের সঙ্গে দেখা করতে মুরাদপুর যাবে। যেহেতু ওরা দুজন সেই দিকেই যাবে এজন্য ভাবলো মুক্তাকেও সঙ্গে নিয়ে নিবে। কিন্তু মুক্তার খোঁজে ফাহাদ গেস্ট রুমে পৌছাতে সেখানে মায়াদের সঙ্গে সেঁজুতি ও শশীকে দেখে পেল। হাতের স্পিড ক্যানে তখন চুমুক দিচ্ছিল ফাহাদ, বউয়ের পাশে বসতে বসতে অর্ধ খাওয়া ক্যানটি মুক্তার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে মায়াদের উদ্দেশ্য বলল…
‘ কি ব্যাপার সবাই আমার শালীদের কক্ষে শালিশ বসিয়েছে কেন? কার গসিপ চলছে এখানে?
ফাহাদের কথায় জুই মজা ছলেই উত্তর করলো…

‘ দুলাভাই আপনার।
ফাহাদ জুইয়ের কথার তাল মিলিয়ে একই ভাবে বলল…
‘ বাপরে তাহলে আজকের ভিলেন মনে হয় আমি।
জুই হেঁসে বলল…
‘ বলতে পারেন।
হাতের একটা ক্যানে চুমুক রাদিফও বসাচ্ছিল। কিন্তু অপর হাতের ইনটেক ক্যান্টি সবার সামনে মায়ার দিকে বাড়িয়ে দিতেই মায়াও কোনো রকম দ্বিধা ছাড়া সেটি রাদিফের হাত থেকে নিল। ট্রে-তে নাস্তা রেখে রাদিফের দেওয়া ক্যানটি খোলে মায়া তাতে চুমুক বসালে রাদিফ পাশ থেকে ঢোল এনে মায়ার মুখোমুখি বসল। মুক্তা তখনো কপাল কুঁচকে তাকিয়ে মায়ার দিকে। সেঁজুতি রাদিফকে বলল…

‘ আমার ক্যান কই রাদিফ ভাই?
রাদিফ ঠান্ডার ক্যানে চুমুক দিতে দিতে বলল…
‘ তোরটা ফ্রিজে আছে গিয়ে নিয়ে আয় যাহ!
রাদিফের সঙ্গে মায়ার সাচ্ছন্দ্য আচারণ করার বিষয়টি ফাহাদের চোখেও লাগল। এখানে আসার সময় গরমের জন্য ওরা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডার ক্যান গুলো নেওয়ার সময় রাদিফ নিজের জন্য দুটো ক্যানের বোতল উঠালে তখন ফাহাদের মনে হয়েছিল রাদিফ হয়তো নিজের জন্য দু’টো নিয়েছে। কিন্তু এখানে এসে একটা মায়াকে ধরিয়ে দিতেই বুঝতে পারলো তখন রাফিদ দুটো নিজের জন্য নয় বরং একটা মায়ার জন্য নিয়েছিল। সেঁজুতি কথার রেশ টেনে ফাহাদ রাদিফের সঙ্গে মজা করতে চাইল মায়াকে নিয়ে। মসকার ছলে বলতে চাইল….
‘ আমার মায়া রাদিফের বিয়াইন বলে কথা। বিয়াইনের জন্য শুধু ক্যান কেন? আরও স্পেশাল…
ফাহাদের কথা শেষ করার আগেই ইতি টানল রাদিফ। মায়াকে নিজের বোন দ্বাবি করে সম্মান দিয়ে বলল…
‘ মায়া বিয়াইন নয় ছোট বোন হয় আমার। এরপর এসব মজা করবে না ফাহাদ ভাই।

মায়া- রাদিফের সঙ্গে সাচ্ছন্দ্যবোধ দেখে প্রথমে সন্দেহ মুক্তাও করেছিল। হয়তো রাদিফের সঙ্গে মায়ার কিছু চলবে ভেবে ধারণা করে নিয়েছিল মনে মনে কিন্তু রাদিফ যেন মূহুর্তে ফাহাদকে নয় বরং মুক্তার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে মায়াকে নিজে ছোট বোন বলে দাবি করলো। রাদিফকে নিয়ে মুক্তার মনের সন্দেহ কেটে যেতেই ফাহাদ জুইকে জড়িয়ে আর কিছু বলতে চাইল না। পরে দেখা গেল রাদিফ মায়ার মতো জুইকেও নিজের বোন বলে দাবি করল তখন বিষয়টা ফাহাদের জন্য লজ্জাজনক হতে পারে ভেবে সে শশীকে নিয়ে রাদিফকে বলল…
‘ আচ্ছা মানলাম মায়া নাহয় তোর ছোট বোন হয় কিন্তু তোর সুন্দরী ভাবি জন্য অন্তত একটা ক্যানের বোতল আনা প্রয়োজন ছিল তোর।

রাদিফ স্বাভাবিক নেয় নিজের ভাবি বলতে মুক্তা ধরে নিল। কারণ মায়ার বিষয়টা যেহেতু এখনো পরিবারের কেউ অবগত নয় সেজন্য রাদিফ মুক্তাকে ভাবি মনে করে বলল…
‘ ভাবির জন্য তো তুমি আছো আমি আনবো কেন? তোমার বউয়ের ভাগ আমাকে দিবা যে আমি খাওয়াব?
ফাহাদ পাশ থেকে বালিশের কুশন উঠিয়ে রাদিফের দিকে ছুড়ে মারতে মারতে বলল…
‘ শালা আমি আমার বউয়ের কথা বলছি তোকে? আমি তোর ভাইয়ের বউয়ের কথা বললাম। শশী তো রিদের হাফ বউ হয়। তাহলে ওকে কেন খাওয়ালি না?
ফাহাদের কথায় চমকে উঠার মতোন চারজোড়া চোখ তৎক্ষনাৎ তাকাল মায়ার দিকে। রাদিফ, জুই মায়াকে লক্ষ করতেই দেখল ফাহাদের কথায় চোখ মুখ অন্ধকার করে মাথা ঝুঁকে বসে আছে মায়া। হয়তো নিজের ইমোশন গুলো আটকাতে চাচ্ছে। অথচ শশী তখন লজ্জা মিশ্রত মুখে বসে। রাদিফ মায়াকে আশ্বস্ত করতে চেয়ে ফাহাদের কথা শুধিয়ে বলল…

‘ রিদ ভাইয়ের পছন্দ আছে।
রাদিফের কথা কেটে ফাহাদ আবারও বলল…
‘ আরে রিদের পছন্দই তো আমাদের শশী। ওদের দুজনের প্রেম তো একদিন দু’দিনের নয়, গুটা পাঁচ বছরের প্রেম কাহিনি ওদের। খোঁজ নিয়ে দেখ দুজনের প্রেমের গল্প আকাশের বাতাসে হাওয়ায় হাওয়ায়ও পাওয়া যাবে তাই না শশী?
খানিকটা লজ্জা মাথা নাড়িয়ে হাসলো শশী। মায়া হাতের বোতলটা দু’হাতে চেপে বসল শক্ত করে। ফাহাদের কথা গুলো যেন হৃদয়ে কাঁটার মতোন বিঁধছে। রিদের প্রেম ছিল কারও সাথে সেটা ভাবতেও যেন মনে অদৃশ্য জখমে খন্ডিত হচ্ছে অসংখ্য। মায়া এই মূহুর্তে সবার সামনে কাঁদতে চাইনা। বরং নিজেকে শক্ত রাখতে দাঁত কামড়িয়ে মাথা ঝুঁকে বসে। জুই মায়ার অবস্থা বুঝতে পেরে একহাতে মায়ার হাতটা চেপে বসল সবার অগোচরে। রাদিফ মায়ার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ফাহাদের উপর বিরক্ত হলো। খানিকটা রাগ হয়ে সরাসরি বলল…

‘ ভুল জানো তুমি ফাহাদ ভাই। রাস্তার মুড় অনেক আগেই ঘুরে গেছে। আমি জানি না আদৌও শশীর সাথে রিদ ভাইয়ের কিছু ছিল কি-না। তবে এতটুকু বলতে পারি রিদ ভাইয়ের পছন্দের মানুষ শশী নয় বরং অন্য কেউ। আর সেই খবর আমি, বাবা-মা আমরা তিনজনই জানি। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে রিদ ভাইকে জিগ্যেসা করে নিও।
কথাটা বলেই রাদিফ উঠে গেল। রাদিফের কথায় ফাহাদ, মুক্তা সেঁজুতি বিভ্রান্ত হয়ে তাকাল শশীর দিকে। রাদিফের কথা গুলো যে শশীর বিশ্বাস হয়নি সেটা শশীর ফেইস দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তবে শশী রাদিফের কথায় কষ্ট পেয়েছে বলে সেও তৎক্ষনাৎ রুম ত্যাগ করলো কাউকে কিছু না বলে। মায়া তখনো মাথা ঝুঁকে বসে। ফাহাদ মুক্তাকে বের হতে বলে সেও চলে গেল। এই মূহুর্তে কেউ কথাটা আর বাড়াতে চাইল না। তবে রাদিফের এই কথা গুলো যে এখানে শেষ হবে না সেটা ফাহাদ, সেঁজুতি মুক্তা তিনজনই জানে। এই কথাটা এখন পরিবারের বড়দের কানে দিবে শশী। হয়তো এখন কেউ কিছু বলবে না কিন্তু কাল ফাংশন শেষ হতে হতে কিছু একটা হবে বলে আশা করা যায়। মুক্তা -মায়া, জুইকে সেঁজুতির সাথে থাকতে বলে সেও বের হয়ে যায়।

মায়া রাদিফের কথায় আশ্বস্ত হলেও রিদের প্রথম ভালোবাসা শশীকে ভেবে একবুক কষ্ট সারারাত পার করলো রিদের অপেক্ষায় অপেক্ষায়। কিন্তু কোথাও রিদের বা অন্য কারও দেখা নেই। মধ্যেরাতে দিকে ফাহাদকে দেখা যায় মুক্তাকে নিয়ে খান বাড়িতে ফিরতে। আরিফের সঙ্গে দেখা করেছিল ওরা। আরিফ কাল খান বাড়ির মেজবানে আসবে বলে আশ্বস্ত করলো মুক্তাকে। কিন্তু রিদ সেই দুপুরে নিহাল খানের সঙ্গে বের হয়েছিল, সারারাত চলে গেল অথচ সে ফিরতে পারেনি কাজের চাপে। রাত পার হয়ে
সকাল হলো। মায়া সকালে মানুষের হৈচৈয়ে ঘুম থেকে উঠে রিদের খোঁজ করলো। শুনা গেল রিদ তখনো বাসায় ফিরেনি।

একবুক কষ্টে মায়ার তখনই কেঁদে ফেলল। ডাগর ডাগ আঁখিদয় চিকচিক করলো নুনা জ্বলে। মায়াকে বারবার চোখ মুছতে দেখে ক্ষেপে যায় জুই। এই মূহুর্তে মায়াকে কান্না করতে দেখলে মুক্তা সন্দেহ করতে পারে যেটা মোটেও ঠিক হবে না কারও জন্য। হৈচৈয়ের মধ্যে সকলে রেডি হলো। মায়াও সাধারণ থ্রি পিস পড়ে সবার সাথে বসে। শশীকে, দেখা গেল শাড়ি পড়ে ঘুরতে। সকাল দশটার মধ্যে বাবুর্চির রান্না বান্নার বিশাল আয়োজন শেষ শেষ। এগারোটার ভিতরে খাওয়া-দাওয়া কাজ শুরু করবে। খান পরিবারের সকল আত্নীয় স্বজনরাও সকাল থেকে আসতে শুরু করেছে। চারপাশে কলরব আয়োজন। অথচ রিদ বা নিহাল খানসহ বাড়ির ছেলেগুলোর দেখা নেই। আশায় আশায় মায়া মন বিষিয়ে উঠছে তিক্ততায়। দশটার দিকে শুনা গেল রিদের গাড়ি খান বাড়িতে ঢুকেছে। মায়া তখন সবার সাথে দুতলা গেস্ট রুমে বসে। রিদকে বাড়িতে ফিরতে শুনে দৌড়ে দোতলা করিডোরের দাঁড়াল রেলিং ধরে। নিচে তাকিয়ে দেখল সারিবদ্ধ ভাবে অনেক গুলো গাড়ি পাকিং এরিয়াতে আছে অথচ রিদের দেখা কোথাও নেই। ক্ষুন্ন মন আরও ক্ষুন্ন হলো। চোখ মুখ অন্ধকার করে নিচের তাকিয়ে তাকার মধ্যেই পাশ থেকে হঠাৎ কেউ ডেকে উঠলো মায়াকে….

‘ এখানে কি করছেন আম্মু?
মায়া চমকে উঠার মতোন তাড়াহুড়োয় সোজা হয়ে দাঁড়াল। মাথা কাপড় টেনে থতমত খেয়ে বলল…
‘ আসসালামু আলাইকুম আব্বু।
‘ ওয়ালাইকুম সালাম। ভালো আছেন আম্মু?
‘ জ্বি আপনি?
‘ আলহামদুলিল্লাহ আম্মু আছি আল্লাহ রহমতে। তা আপনি রেডি না হয়ে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন? ভিতরে যান রেডি হোন গিয়ে।
মায়া অস্বস্তিতে আছড়ে মাথা কাপড়টা আরও একটু টেনে বলল…
‘ ভালো লাগছিল না সেজন্য এখানে একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।
মায়ার কথায় নিহাল খান ক্লান্তিতে হেঁসে বলল…
‘ আপনার শশুর বাড়ির এটা, আপনি যেখানে খুশি সেখানে দাঁড়াবেন সমস্যা নেই। আগে রেডি হয়ে নিন। এই বাড়ির বড়ো বউ আপনি। সবাই আপনাকে দেখবে। খান বাড়ির বউ হিসাবে চিনবে। আপনি বরং একটা মার্জিত শাড়ি পরে নিন আম্মু।

মায়ার আর সাহস হলো না নিহাল খানের মুখে মুখে আর কিছু বলতে কেমন রোবটের মতোন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল শুধু। নিহাল খান অল্প হেসে স্থান ত্যাগ করলে মায়াও নিজের রুমে গেল। ব্যাগ খোলে গাঢ় নীল মসলিন তাতের জামদানী শাড়ি খোলে সেটা পড়লো জুইয়ের সাহায্যে। এই শাড়ীটা সেদিন রাফা পছন্দ করে কিনে দিয়েছিল মায়াকে আজকের দিনে পরার জন্য। কিন্তু অস্বস্তিতে মায়া ভেবেছিলাম শাড়ি-টাড়ি পড়বে না আজ। যদি কেউ জিজ্ঞেসা করে মায়া কেন আজ শাড়ি পড়েছে তাহলে কি উত্তর দিবে সে? সেই চিন্তায় মায়া প্রথমে শাড়ী পরতে চাইনি কিন্তু এখন নিহাল খানে বলাতে মায়ার শাড়ি পড়াটা বাধ্যতা মূলক হয়ে গেল। নয়তো নিহাল খানের আদেশ করার পরও যদি মায়া শাড়ি না পড়ে তাহলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু আর বেয়াদবি দেখাবে। যেটা মায়া করতে চাইনা বলে দ্বিধামনা করে শাড়িটা পড়ে নিল কিন্তু কেউ জিগ্যেসা করলে কি বলবে সেই চিন্তায় ভয়েও থাকলো। মায়ার শাড়ি পড়া শেষ হতেই রুমে ঢুকলো মুক্তা হাতে নিজের দুটো শাড়ি নিয়ে। মায়াকে গাঢ় টকটকা নীল শাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সেইদিকে কয়েক সেকেন্ড মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে বলল…

‘ মাশাল্লাহ! তোকে তো বেশ সুন্দর লাগে শাড়িতে মায়া? এই শাড়িটা কোথায় পেয়েছিস তুই?
জুই তখন মায়ার সামনে বসে কুঁচি গুলো গোছাচ্ছিল। মায়া মুক্তা দেখে ভয়ে ভয়ে বলল…
‘ আরিফ ভাই কিনে দিয়েছিল এটা।
‘ বাহ সুন্দর হয়েছে। তোকে অনেক মানিয়েছে।
কথাটা বলেই মুক্তা হাতের শাড়ি গুলো বিছানার উপর রাখতে রাখতে আবারও বলল…
‘ আমি আরও তোদের দুজনের জন্য দুটো শাড়ি এনেছিলাম। রাদিফ বললো নিহাল আঙ্কেল নাকি মেয়েদের সবাইকে আজ শাড়ি পড়তে বলেছে। উনি হঠাৎ এই কথাটা কেন বললো জানি না। তারপরও গুরুজন যেহেতু আদেশ করেছে জুই তুইও একটা শাড়ি পরে নে। কিছু লাগলে আমাকে ডাকিস। রিদ ভাইয়া নিচে এসেছেন উনার সাথে দেখা করে আসি কেমন?

অস্থিরতায় মায়া কোনো রকম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই মুক্তা চলে গেল। মায়া রিদকে দেখা আশায় জুইকে রেখে চলে গেল আবারও করিডোরে। পিলার ঘেঁষে রেলিং এর নিচে তাকাল ঝুঁকে। অস্থিরতায় আশেপাশে তাকিয়ে আবারও রিদকে কোথাও দেখতে না পেয়ে চোখ চিকচিক করলো নুনা জ্বলে। ভঙ্গ হৃদয়ে জেদ করে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। রিদ তখন সবে নিচ থেকে উপরে উঠছিল ক্লান্তিতে। সারারাতের ঠহলে শরীর রু রু করছে ক্লান্তিতে। লম্বা শাওয়ার না নিলেই নয়। এরিই মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে করিডোর পা রাখতে চোখে পরলো নিজের বউকে নীল শাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকতে। থমকে যাওয়ার মতো সেখানেই দাঁড়াল অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মায়ার দ্বিগুণ চুল গুলো এলোমেলো হাত খোপা করে সাজুগুজু বিহীন রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে হয়তো নিচে তাকিয়ে কারও সন্ধান করছে। মায়ার সৌন্দর্য্যতা যেন
মূহুর্তে স্নিগ্ধতা ছড়াল রিদের মনে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে গেল শীতলতা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই দিকে। মায়াকে দেখা গেল বামহাতে চোখ মুছতে। রেলিং ধরে নিচে ঝুঁকে আবারও কোনো কিছুর সন্ধান করতেই রিদ কপাল কুঁচকায়। কিছু একটা ভেবে এগিয়ে এসে হঠাৎই মায়ার বাহু টেনে পিঠ ঠেকাল পিলারে। মূহুর্তে মাঝে কোনো কিছু ঠাহর করতে না পেরে ব্যথায় পিঠ বাকাল মায়া। রিদকে লক্ষ না করে ধাক্কা মেরে নিজেকে ছাড়াতে চাইলে রিদ মায়ার বাহু পেঁচিয়ে বলল…

‘ শরীরে তেজ বেড়ে গেছে? শক্তি দেখান? হাড় ভেঙ্গে হাতে ধরায় দিব।
রিদের কন্ঠে মায়া চমকে উঠার মতোন চুপসে গেল। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রিদকে এই মূহুর্তে আশা করেনি মায়া। রিদের সান্বিধ্য পেতেই মায়া চুপ করে গেল। অভিমানী গলায় মিনমিন করে বলল…
‘ আপনি আমাকে ছুঁবেন না যান!
‘ তাহলে কে ছুঁবে?
‘ আপনি রাতে আসেন নাই কেন? আমি অপেক্ষায় ছিলাম।
‘ আপনি ডেকেছেন যে আসবো?
মায়া গাল ফুলিয়ে অভিমানী গলায় ফের বলল…
‘ আপনিতো আমার কল রিসিভ করেন না।
‘ কল রিসিভ করার মতোন কাজ করেছেন যে রিসিভ করবো?

রিদের কথায় মায়া আবারও চুপ করে গেল। চোখের পানি সমান তালে টলমলিয়ে নামল গাল বেয়ে। রিদ মায়ার চোখের পানি মুছার চেষ্টা করলো না বরং মায়ার থুঁতি চেপে মুখটা এদিক সেদিক ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখে বলল…
‘ দিন দিন এতো গ্লো করছেন কেন? জামাই আশেপাশে না থাকলে সৌন্দর্য বাড়ে কেন?
মায়া রিদকে অল্প ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়াতে চেয়ে বলল…
‘ জানি না।
‘ আপনি সব জানেন ম্যাডাম। জেনে বুঝে আমাকে আমাকে পাগল বানাচ্ছেন। মেসেজে কি লিখেছিলেন আমার সিস্টেমে সমস্যা আছে? চলে না, অচল? আর কি কি যেন ছিল?
রিদের কথাটা মায়ার বোধগম্য হলো না। কিসের সিস্টেম কিসের কি? মায়া অবুঝ গলায় জানতে চেয়ে বলল…
‘ মানে?

মায়ার অবুঝতার প্রশ্নে শক্ত হাতে মায়ার গাল চেপে পুনরায় পিলারে সাথে ঠেসে ধরে রিদ বলল…
‘ মানে আজকে আপনি শেষ ম্যাডাম! শুধু রাতটা হতে দেন। নিজেকে কিভাবে বাঁচান আমি দেখবো।
এবারও রিদের কথার যথাযথ অর্থ বুঝল না মায়া। বরং মায়া মনে করলো সে আবারও কোনো ভুল করেছে যার জন্য রিদ রেগে যাচ্ছে। মায়া উত্তেজিত ভঙ্গিতে বলল…
‘ আপনি ভুল ভাবছেন! আমি কিছু করেনি সত্যি বলছি।
‘ আপনার কিছু করতে হবে না ম্যাডাম আমি আছি! আমি করবো। আপনার রাত আজকে কিভাবে শেষ হয় সেটা আমিও দেখবো।
মায়া অসহায় চোখে রিদের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল….
‘ সত্যিই আমি কিছু করেনি। বিশ্বাস করুন।
রিদ মূহুর্তে মায়ার মুখোমুখি হয়ে ঝুঁকে বলল…
‘ ওকে ডান! কিস মি।
‘ এ্যাঁ?
‘ কিস মি!

রিদের সোজাসাপ্টা কথায় মায়া লজ্জায় থতমত খেয়ে গেল। মূহুর্তে চোখে ভেসে উঠলো রিদকে চুমু খাওয়ার কালকের দৃশ্য গুলো। মায়া লজ্জায় নত মস্তিষ্ক হতে চাইলে রিদের হাত ওর গালে চেপে থাকার কারণে হতে পারলো না। তারপরও মায়া রিদের চোখে চোখ রাখতে না পেরে লজ্জায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে বলল….
‘ আমি পারব না। সরুন! আমি যাব!
রিদ মায়াকে লজ্জা পেতে দেখে হঠাৎ নরম হয়ে আসলো। মায়ার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চেয়ে শাড়ি বেধ করে মায়ার উন্মুকত কোমরে দু’হাত ভিড়াল। মাথা ঝুঁকে কপাল ঠেকাল মায়ার খোলা কাঁধে। আলতো ঠোঁট ছুয়াতেই মায়া কেঁপে উঠে রিদের বাহুতে শরীর ছেড়ে দিল ভয়ে। রিদ শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরলো মায়াকে। নিজের সাথে মিশে মায়ার কাঁধে পরপর ঠোঁট ছুয়ে উঠলো গলায়, তারপর গলা থেকে একই ভাবে কানে স্পর্শ করেই রিদ ফিসফিসিয়ে বলল….
‘ আমার পারমিশন ছাড়া শাড়ি চেঞ্জ করবে না।
মায়া ভয়ে কোনো রকমে কম্পিত গলায় অল্প আওয়াজে বলল…

‘ হুম।
‘ রাতে আমার রুমে আসবে।
‘ হুম।
মায়ার উত্তরের সাথে সাথে রিদ শব্দ করে চুমু খেল মায়ার গালে তার পরপরই এগাল ঐগাল দুগাল একই শব্দ হলো। কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে রিদ মায়াকে ছেড়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল…
‘ আমার রুমে আসো!

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৪৪

বলতে বলতে রিদ সামনে এগোল। মায়া কম্পিত শরীরে বেশ অনেক সময় নিয়ে জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল স্বাভাবিক হতে। যখন নিজেকে ধাতস্থ করলো মায়া কি হয়েছে ওর সাথে? তখনই লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢেকে নিল মূহুর্তে। রিদের পিছন পিছন রুমে না গিয়ে বরং উল্টো দৌড়াল নিজে রুমে। এই মূহুর্তে রিদের সামনে দাঁড়ানোর মতোন সাহস হলো না আর।

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৪৬