রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫৮

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫৮
রিক্তা ইসলাম মায়া

তিন কবুলে মায়ার বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে যেতেই শফিকুল ইসলাম নাদিমের হাতে মায়া কম্পিত ঠান্ডা হাতটা শপে দিলো। দুই পরিবারের উপস্থিততে ঘরোয়া বিয়ে সম্পূর্ণ হয়েছে মায়া আর নাদিমের। বিয়েটা মায়ার ছোট ফুপির গ্রামের বাড়ি থেকেই হলো। চেয়ারম্যান পরিবারের সদস্যরা বরযাত্রী সমেত মাত্র দুই গাড়িতে করে পনেরো জন সদস্য আসলো। মায়ার গায়ে লাল টুকটুকে বেনারসি। মাথায় লাল দোপাট্টা। সিঁথিতে গোল্ডের টিকলি ঝুলছে কানে ঝুমকো। গলায় স্বর্ণের হার। দু’হাতে দুটো স্বর্ণের চুড়িতে মায়ার সাদামাটা সাজ কমপ্লিট।

অসুস্থ মায়ার তীব্র জ্বরে তাপে মেকাপ করাল না কেউ। শুকনো ঠোঁটে ঐ একটু লাল লিপস্টিক দিয়েছিল নাদিমের বড় বোন রুপা। অল্প সাজেও যেন মায়ার রুপ চকচক করলো। ভেজা চোখ, লাল মুখে দূর্বলতায় নুইয়ে জড়িয়ে ধরে আছে রাফাকে। শফিকুল ইসলাম যখন মায়াকে নাদিনের হাতে শপে দেয় তখনো রাফাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে। নাদিমের বড়ো বোন রুপা এগিয়ে গিয়েছিল মায়াকে ধরতে কিন্তু মায়া বা রাফা কেউ কাউকে ছাড়ল না এতো মানুষের ভিড়েও। মায়ার দু’হাত ভরতি লেপ্টানো মেহেদী। গায়ের তীব্র জ্বরে রাফাকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে। অন্য হাতটা নাদিমের হাতের উপর। উপস্থিত সকলে মায়াকে নাদিমের হাতে শপে দিয়ে বউ বিদায় করার তাড়া দিলো। মায়া হু হা কিছুই বললো না। কেমন পাথর মূর্তি নেয় সকলে সঙ্গে হাটলো বাড়ির গেইট পেরিয়ে গাড়ি অবধি। মায়া বা রাফা তখনো দুজন দুজন চেপে দাঁড়িয়ে। কেউ কাউকে ছাড়তে নারাজ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এটা নিয়ে অবশ্যই বড়োদের মাঝে দৃষ্টিকটু করেছিল দুজন আলাদাও করতে চেয়েছিল। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়েও মায়া বা রাফা কেউ কাউকে ছাড়ল না। বড়োদের শাসানোতেও না। অবশেষে মায়ার সঙ্গে রাফাকেও দেওয়া হলো। মায়ার অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনা করেই সবার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া।
বিদায় বেলাও মায়া নিজের পরিবার কারও সঙ্গে কথা বললো না আর না চোখ আওড়িয়ে কাউকে দেখার চেষ্টা করলো। সকলের চোখেই পানি বিশেষ করে মায়ার মা রেহেনা বেগমের নিশ্চুপ কাঁদছে দূরে দাঁড়িয়ে। উনার অসুস্থ মেয়েটাকে এক প্রকাশ গলায় পা দেওয়ার মতোন করে বিয়েটা দিয়েছেন সবাই। আল্লাহ জানে সবটা কিভাবে সামলিয়ে উঠে উনার ছোট মেয়েটা।

বরের গাড়িতেও মায়া রাফা দুজন পাশাপাশি বসে। মায়া ঢলে রাফার কোমর জড়িয়ে কাঁধে মাথা ফেলে বসে। নাদিম শশুর বাড়ির সকল থেকে বিদায় নিয়ে মায়ার অপর পাশে উঠে বসতে বসতে কোমল চোখে নুইয়ে পরা মায়ার দিকে তাকাল। ততক্ষণে সামনে থেকে ড্রাইভারের সঙ্গে রুপার জামাই উঠে বসলো। গাড়ি লাইট কমিয়ে স্টাট দিতেই নাদিম নরম হাতে মায়ার হাত টানতে চাইল মায়াকে নিজের কাঁধে শুয়াতে। কিন্তু নাদিমের হাত মায়ার বাহু ছুঁতেই ঝটকা মেরে ছিটকে ফেললো রাফা। কেমন শক্ত গলায় তৎক্ষনাৎ নাদিমকে শুধালো….
‘ মায়া অসুস্থ ভাইয়া। ওহ আমার কাছেই থাকুক।
রাফার শক্ত গলার কথায় কেমন কপাল কুঁচকে আসে নাদিমের। মায়া অসুস্থ সেটা সে কয়েকদিন আগেই শুনেছিল। শফিকুল ইসলাম বলেছিল ব্যাপারটা। সব জেনেও সে মায়াকে বিয়ে করেছে কারণ তার শখের নারী হচ্ছে মায়া। ভালোবাসার মানুষের অসুস্থতায় হাত ছেড়ে দেওয়ার মতোন ছেলে সে নয়। বরং যত্নে আগলে রাখার মানুষ। ভালোবাসার মানুষের অসুস্থতার তার হৃদয়টাও পুড়াচ্ছে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই সে মায়াকে সুস্থ করে তুলবে। যত্নসহকারে তার বুকেই ঠায় দিবে।

গ্রামের ইট পাথরের রাস্তা। বরযাত্রীর দুটো গাড়িই পরপর রাস্তায় উঠলো। বরের গাড়িটা পিছনে। সামনে নাদিমদের পরিবারিক গাড়িটা এগিয়ে। ফুলে ফুলে সাজানো বরের গাড়িটা অনেকটা পিছনে। অন্ধকার রাস্তায় চাঁদের দেখা নেই, আর না আছে রাস্তার মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলো। অন্ধকার রাস্তায় গাড়ি হেডলাইটের আলোয় আলোকিত রাস্তা। পরিবেশ শীতল। ঠান্ডা হওয়া বইছে বাহিরে। রাস্তা কুকুর গুলো ঘেউঘেউ শব্দ করছে থেকে থেকে। সময় ৭ঃ৪৫ ঘরে। জনমানবহীন রাস্তাটা কেমন মধ্যে রাতের নিশি লেগে আছে। এমন রাস্তা সাই-সাই করে ধুলো উড়িয়ে হঠাৎই বরের গাড়ির মুখোমুখি হলো পরপর তিনটে গাড়ি। তিনটের দুটো গাড়িই জীপ। একটি কালো মার্সিডিজ। আকস্মিক ঘটনায় গাড়ির তাল সামলাতে না পেরে এক্সিডেন্টে ভয়ে দু’হাতে স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়ি থামাল ডাইভার। গাড়ির ভিতরের থাকা মায়া-রাফা দু’জনই সামনে ঝুঁকে পরলে দ্রুততায় দুজনকে দু’হাতে ধরে বাঁচাল নাদিম। তারপরও গাড়ির ভিতরে থাকা সবাই অল্প-সল্প ব্যথা পেল। নাদিম হাতে ব্যথা পেয়েও মায়া রাফাকে দু’হাতে ধরে ডাইভার থেকে জানতে চাইবে কি হয়েছে তার আগেই গাড়ির সচ্ছ গ্লাসে ভিতর দিয়ে চোখে পরলো পরপর তিনটে গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামা দলবলদের।

এই রাতে ডাকাতের ভয়ে নাদিম দু’হাতে আগলে নিল রাফা আর মায়াকে যদিও রাফা নাদিমের হাতটা ছিটকে ফেলতে গিয়েও বাহিরের ডাকাত দলের হৈচৈয়ে মায়াকে নিয়ে ভয়ে সিটিয়ে গেল গাড়িতে। গাড়ি থামলো কি থামলো না তার আগেই চলন্ত জীপ থেকে লাফিয়ে নামলো রিদ। হিংস্রত্ব চেহারায় চোয়াল শক্ত করে তেড়ে বরের গাড়ির দিকে যেতে যেতে পাশে থাকা ছেলেটির হাত থেকে হকিস্টিকটি ছিনিয়ে নিলো। দু’হাতে গায়ের জোরে প্রথমেই ভারি মারলো ডাইভারের মুখোমুখি গ্লাসটিতে। ঝরঝর করা শিশার মতো গ্লাসটি ভেঙে যেতেই আঘাত প্রাপ্ত হলো ডাইভারসহ নাদিমের দুলাভাই। ভয়ে পিছন থেকে চেঁচিয়ে উঠলো রাফা। কারও কিছু করার আগেই রিদ পরপর আক্রমণ চালাই নাদিমের বসে থাকা পাশের গ্লাসটিতে। অসংখ্য কাঁচে টুকরো গাড়ির ভিতরের আঁচড়ে পরতেই গাড়ির ভিতরের সকলেই চেঁচিয়ে উঠলো। মায়া তখনো বেঘোরে রাফার কাঁধে ঢলে। হুশে আছে। তবে উপস্থিত পরিস্থিতি দেখার মতোন সচ্ছলতা নেই।

শরীর নুইয়ে তরতর করে কাঁপছে তীব্রতর। কানে এসেছে ডাকাতদলের হামলা করার খবরটি। তারপরও মাথা উঠিয়ে দেখতে চাইল না ভয়ে। বরং রাফাকে জড়িয়ে আরও সিঁটিয়ে গেল সে। মায়া রাফা দুজন কাঁদছে। বয়স্ক ডাইভার আকুতি মিনতি করছে এতো মানুষ দেখে। নাদিম বা তার দুলাভাই গাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছু করার সুযোগ পাচ্ছে না। চারপাশ থেকে ছেলেরা দা, হকি’স্টিক ছু’রি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। তাই ভয়ে ভয়ে রুপার স্বামী কল লাগাল চেয়ারম্যান শশুরের কাছে। রিসিভ হতে ওপাশ থেকে কথা বলবে তার আগেই বিরতিহীন রিদের আক্রমণে মুঠোফোনটি ছিটকে পরলো গাড়িতে। রিদের হুংকার ছাড়া চিৎকারের গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মতোন। হকিস্টিক তুলে একের পর এক গাড়ির কাঁচ ভাঙছে হিংস্রতায়। হুংকারের চিৎকারে আওড়াচ্ছে রিদ….
‘ আমি বলেছিলাম আমার সাথে বেঈমানী করবি না। তারপরও কেন করলি বেঈমানী? কেন আমার অসুস্থতা সুযোগ নিয়ে অন্যের বউ হয়ে গেলি? কেন?
পুনরায় একই ভঙ্গিতে রিদ প্রাণপূর্ণ শক্তিতে অপর দরজার কাঁচে ভারি দিতে দিতে চিৎকার করলো মায়ার নাম নিয়ে…..

‘ মায়াআআআআআ! কেন করলি বেঈমানী? কেনঅঅঅ? আআআআআ!
রিদের হুংকারের চিৎকারের সঙ্গে পরপর গ্লাস ভাঙ্গার শব্দটা যেন ঝংকার তুলল চারপাশে।
রাগে, হিংস্রতার কথা গুলো বলতে বলতে রিদ দু’হাতে আবারও ভারি বসাল দরজায়। ঝরঝরে গ্লাস ভেঙে যেতেই রিদের চোখে পরলো গাড়িতে বসা রাফার দিকে। একহাতে হকিস্টিক চেপে অপর হাতে তৎক্ষনাৎ গাড়ির দরজার টানল খোলতে। লক করা দরজা খুলতে না পেরে পরপর দু’হাতে আঘাত করলো দরজাতে। টেনে হিঁচড়ে রিদ গাড়ির দরজা ভেঙ্গে রাফাকে টেনে ছিটকে ফেলল মায়ার থেকে। রাফা রিদের পায়ে কাছে মুখ থুবড়ে পরতেই রিদ আতংকিত মায়ার হাতে থাবা বসাল বের করতে। কিন্তু অপর পাশ থেকে নাদিম মায়ার হাত টানল বাঁচাতে চেয়ে। মুহূর্তে রিদের মস্তিষ্কে আগুন লাগার মতোন তেলবিলিয়ে উঠলো তিরতির করে। রিদের চোখে পরলো মায়ার পাশাপাশি নাদিমকে বর সেজে বসে থাকতে। তার হিংস্রতা দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো যখন দেখল নাদিম মায়ার বাহু টেনে গা ঘেঁষে বসে আছে। হাতের হকিস্টিকটা ফেলে দিয়ে মূহুর্তে থাবা বসাল নাদিমের কলারে। একহাতে মায়ার বাহু অপর হাতে নাদিমের কলার চেপে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করলো দুজনকে। নাদিম গাড়ি থেকে বের হলো কি হলো না। তার আগেই রিদ নাদিমকে গাড়ির সঙ্গে চেপে হাতের শক্ত পিঠে কুইন চাপলো নাদিমের গলায়। হিংস্রতায় হুংকার ছেড়ে রক্তিম চোখে রি রি করে বলল…

‘ কিরে হরামিরবাচ্ছা? আমি থাকতে আমার বউকে কেমনে বিয়ে করলি? খবর নেস নাই এই নারী আমার ছিল? তাহলে তুই আসলি কোত্থেকে? জানে ভয় নাই? মরার পাখ গজাইছে? তোর বাপের কই ছেলে নিয়ে ঘুরে? তোরে বুঝি বুলি দেওয়ার জন্য পাঠাইছে রিদ খানের বউকে বিয়ে করতে?
হিংস্রতার রিদের চোখে মুখে উপছে পরার মতোন। নাদিমের সর্বাঙ্গ কাঁপলো রিদের হিংস্রতা প্রকাশতা দেখে। গায়ে দুজনের সাদা পাঞ্জাবি জড়িয়ে। রক্তের ছিটা দুজনের গায়েই বহমান। তবে রিদের গায়ের সাদা পাঞ্জাবিটি যেন ঘামে ভিজে শরীরে লেপ্টে। অতিরিক্ত রাগে হাতের রগ ফুলে টনটনে। নাদিম রিদের চেহারা দিকে চোখ বুলাতে ভয় পেল। রিদ খানকে সে চিনে। এর আগে দুবার দেখেছিল মায়ার বড় বোন মুক্তার বিয়েতে। তবে রিদের সঙ্গে মায়ার সম্পর্ক কি ছিল সেটা তার অবগত নয়। জানলে হয়তো সে এই বিয়েটা করতো না। কিন্তু এখন দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। মায়ার তার বউ। সে মরলেও অন্তত বউয়ের সম্মান বাঁচাবে। রিদের ভয়ে নাদিমের শরীরে ঘাম ঝরে গেল। আশেপাশে ত্রিশ চল্লিশটার মতো ছেলেপেলে ঘিরে দাঁড়িয়ে। ডাইভার আর তার দুলাভাই ছেলেগুলো হাতে বন্দী। কিছু করার মতোন তাদের হাতে উপায় নেই। তারপরও নাদিম অসুস্থ মায়াকে দেখল মাথা নুইয়ে কাঁদছে ভয়ে। অথচ রিদ একহাতে মায়ার বাহু ধরে অপর হাতে নাদিমের গলা চেপে দাঁড়িয়ে। নাদিম ব্যথিত গলায় রিদের থেকে নিজের ছাড়ানো চেষ্টা না করে বরং মায়াকে বাঁচাতে চেয়ে সে আকুতি স্বরে বলল….

‘ মায়াকে প্লিজ ছেড়ে দিন। ওহ অনেক অসুস্থ। আপনি বরং আমার সাথে কথা বলুন।
রিদের রাগে ঘি ডালার মতোন কাজ করলো নাদিমের কথাটা। তার নারীকে বিয়ে করে তাঁকে বলছে তার বউ ছেড়ে দিতে? রিদ হিংস্রতায় দাঁত পিষে রাগে রি রি করে বলল….
‘ দরদ দেখাস? দরদ? তোর দরদের তেজ আজ আমিও মাপবো। জান দিতে পারবি এই নারীর জন্য? পারবি? আমি কিন্তু জান নিতে পারবো এই নারীর জন্য? দেখবি? দাঁড়া?
কথা বলতে বলতে রিদ হুংকার ছাড়ার মতোন সঙ্গে সঙ্গে ডাকলো আসিফকে….
‘ আসিফফ! আসিফফ!
সঙ্গে সঙ্গে আসিফ দৌড়ে আসার মতো একটা হকিস্টিক নিয়ে আসলো। থাবা বসানো মতোন ছিনিয়ে নিয়ে আঘাত বসাল নাদিমের মাথায়। রিদ এলোমেলো হাতে নাদিমকে আঘাত করতে দেখে ডাইভার আর নাদিমের দুলাভাই আঁতকে উঠল ভয়ে। এইভাবে মারতে থাকলে নাদিম মারা যাবে নিশ্চিত। তাই দুজন নিজেদের ছাড়াতে চেয়ে চিৎকার করলো নাদিমকে বাঁচাতে। কিন্তু পাঁচে রিদের ছেলেপেলের হাতে বন্দী পরলো তারাও। অথচ নাদিমের চিৎকারে শান্ত পরিবেশটা অশান্ত হয়ে উঠলো মূহুর্তে। নাক, মুখ, হাত, কপাল সর্বাঙ্গ ফে’টে র’ক্ত ঝরলো চুইয়ে চুইয়ে। মায়ার রিদের উপস্থিত ঠের পেয়েছিল গাড়িতে বসেই। কিন্তু রিদের হিংস্রতায় আর নিজের তীব্র অপরাধ বোধে আগাতে পারেনি এতোদিন পর স্বামীকে সুস্থ পেয়েও। এখনকার গল্পটা ভিন্ন। এখানে মায়া বেঈমান নারী। তাই মায়ার হাতে করার মতোন কিছু ছিল না। এই মূহুর্তে নাদিমকে মার খেতে দেখেও মায়া কিছু বলতে বা করতে পারলো না। আর না জায়গা থেকে নড়াচড়া করলো। নাদিমকে র’ক্তা’ক্ত করেও যখন রিদের মন ভরলো না তখন পুনরায় চিৎকার করে বলল…

‘ আসিফ আমার বন্দুক দে!
বলতে বলতে রিদ নিজেই তেড়ে গেল আসিফের দিকে। থাবা মেনে আসিফের থেকে ব’ন্দু’ক ছিনিয়ে নিয়ে মূহুর্তে দু’হাতে টেনে ট্রিগার অন করলো নাদিমের দিকে এগোতে এগোতে। নাদিমের দুলাভাই আহাজারি চিৎকার করে উঠলো যখন দেখলো রিদকে বন্দুক হাতে নাদিমের দিকে যেতে। তিনি মায়ার কাছে নাদিমের জীবন বাঁচাতে সাহায্য চাইলে মায়া ফুপিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো ভয়ে।
মায়ার কান্না রিদের কানে যেতে রিদে পথ ঘুরে যায়। নাদিমের দিকে তেড়ে যাওয়া পথ মায়ার দিকে ঘুরে যায়। একহাতে মায়ার বাহু টেনে ঠাস করে গাড়িতে ঠেকাল পিঠ। মায়া পিঠের ব্যথায় কুঁকড়িয়ে উঠতে রিদ শক্ত হাতে মায়ার গলা চেপে মুখের ভিতর বন্দীক ঠেকিয়ে হিংস্রত্বের গর্জে উঠে রাগে রি রি করে বলল…

‘ মেরে দেয়? দেয় মেরে? বুক কাঁপে নাই? জানের ভয় নাই। কতো বড়ো কলিজা নিয়ে ঘুরিস তুই? আমার বউ হয়ে অন্যের নামের কবুল বললি কিভাবে? আমার কথা মনে আসে নাই? আমি ফিরব তুই জানতি না? আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে অন্যের বউ হয়ে গেলি? তোর বউ হওয়ার শখ? বউ? বাসর করবি জামাই লগে? বাসর? তোর জামাইকে মে’রে তোকে বিধবা বানিয়ে তারপর যাব আমি। কি ভেবেছিস? আমি ফিরবো না? মরে গেছি? দেখ তোর জম হয়ে ফিরে এসেছি। এবার তোকে কে বাঁচাবে আমার থেকে? তোর জামাই? ওয়েট!

হিংস্রতায় রিদ হিতাহিত অজ্ঞ হয়ে পরলো। সে যেন নিজের মধ্যে নেই। বিয়ে করা বউ তার ভালোবাসার মানুষ। সেই বউকে যখন অন্যকেউ জড়িয়ে বসে থাকে তখন দুনিয়া ধ্বংস করার মতন আগুন জ্বলে উঠে ভিতরে। সবকিছু ভেঙে গুলিয়ে দেওয়ার মতোন তোলপাড় হয় মনে। আজ সে সঠিক সময়ে না আসলে তাহলে কি করতো তার বউ? অন্যের বাসরে ঘোমটা দিয়ে অপেক্ষা করতো দ্বিতীয় স্বামীর জন্য? নিজের মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় খিঁচে পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল রিদের। দপদপ করে শিরা-উপশিরায় জ্বলল হিংস্রতায়। তার বউ তাকে জীবিত রেখে আরেকটা বিয়ে করে ফেলেছে সেটাই যেন মানতে পারছে না সে। রাগে হিংস্রতায় জ্ঞান হারিয়ে হাতের বন্দুকটা মায়ার মুখ থেকে বের করে নাদিমের দিকে তাক করে গুলি করতে চাইলে মূহুর্তে হাত টেনে ধরে মায়া। খোলা আকাশের গুলি ছুড়ে যেতেই রিদের হিংস্রতা দ্বিগুণ প্রকাশ পাই। মূহুর্তে মাঝে মায়ার গালে থাপ্পড় পরলো রাগে। পরপর একই ভাবে দ্বিতীয় থাপ্পড়টা বসাতে বসাতে বলল….

‘ স্বামীর জন্য দরদ দেখাস। এতো ভালোবাসা তোর? তাহলে আমার সাথে নাটক করলি কেন? তোরে বলছিলাম না আমার সাথে বেঈমানী না করতে? তাহলে কেন করলি? আমাকে সস্তা পেয়েছিস এজন্য?
কথা গুলো বলতে রিদ পরপর আরও একটা থাপ্পড় বসায় মায়ার অপর গালে। মায়ার মাথা টিকলি, গলার হার, দোপাট্টা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ফেলতে রিদ একই ভাবে বলল…
‘ এসব কি পরেছিস তুই? খোল! খোল সব! আমি কি ভালোবাসতাম না তোকে? কেন অন্যের বউ হতে গেলি? কেন আমার ভালোবাসাটাকে হারায় করেদিলি। কেন বিয়ে করলি? মরে যেতি তারপরও এই বিয়ে কেন করলি তুই?
মায়ার ঠোঁটের লিপস্টিক লেপ্টে পাঞ্জাবির হাতা দিয়ে রিদ ডলে পরিষ্কার করতে করতে বলল…
‘ এই লিপস্টিক কার জন্য পরেছিস তুই? জামাই জন্য? আমি আদর করতাম না তোকে? তাহলে কেন বউ সাজতে গেলি। তোর সাজ তো আমার জন্য ছিল। তাহলে সেখানে কেন অন্য কাউকে আসতে দিলি? এই শাড়ি ঐ ছেলে দিয়েছে না তোকে? খোল এটা। খোল।
বলতে বলতে রিদ দু’হাতে থাবায় মায়ার গায়ের বেনারসিটা টেনে খোলতে চাইলে মায়া ইজ্জতের ভয়ে তৎক্ষনাৎ দু’হাতে রিদকে ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আকুতি স্বরে বলল….

‘ প্লিজ আমাকে অসম্মান করবেন না এতো গুলো মানুষের সামনে। আমি আপনার থেকে অনেক দূরে সরে যাব। আর আসব না সামনে। তারপরও আমাকে অসম্মান করবেন না প্লিজ। আপনার পায়ে পরছি আমি। দয়া করুন প্লিজ।
মায়ার কথা গুলো শেষ হতে হতে রিদ মায়াকে ছিটকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে ফেলতে ফেলতে বলল…
‘ তুই নোংরা হয়ে গেছিস। তোর শরীর নোংরা হয়ে গেছে। এই শরীরে অন্য পুরুষের ছুঁয়া লেগেছে আছে তাই এই শরীর নিয়ে কখনো আমাকে ছুঁতে আসবি না। আমার জন্য তুই অপবিত্র হয়ে গেছিস তোকে….
রিদের কথা শেষ হওয়ার আগেই পিছন থেকে রিদের উপর আক্রমণ করলো কেউ। রিদ বুঝে উঠার আগেই জুইয়ের বাবা সাজিদুল ইসলাম রিদের কাঁধ টেনে মুখ বরাবর ঘুষি বসাতেই বামে ঝুঁকে গেল রিদ। মায়া আতংকে উঠে সাজিদুল ইসলামকে থামাতে চাইলে তিনি মায়াকে হাতের ধাক্কায় দূরে সরিয়ে ফেলে পুনরায় রিদকে ধরতে যাবে তার আগেই রিদ উনার হাত চেপে মুচড়িয়ে পরপর ঘুষি বসাল জুইয়ের বাবা সাজিদুল ইসলামের মুখে। মায়ার চিৎকার আর থমথমে পরিবেশে সকলে থমকে দাঁড়িয়ে গেল। বরের গাড়ি ডাকাত পরেছে খবরটা শুনে সাজিদুল ইসলামের সঙ্গে মায়ার পরিবারের সকলেই লাঠিসোঁটা নিয়ে এসেছিল টচ হাতে হাতে। মায়ার বাবা-মা ফুপা-ফুপিরা, জুই, জুইয়ের মা সকলেই থমকে আছে উপস্থিত পরিবেশ দেখে।

রিদের হাতে বেদম মার সাজিদুল ইসলামকে খেতে দেখে চিৎকার করে এগিয়ে গেল জুইও ওর মা। মূহুর্তে সাজিদুল ইসলামের উপর মা মেয়ে দুজনই আড়াআড়ি ভাবে পরে গেল বাচাতে চেয়ে। আসিফ বাধ্য হয়ে এগিয়ে এল রিদের দিকে। ছেলেপেলেদের নিয়ে রিদকে দু’হাতে ঝাপটে ধরে আটকাল মায়ার পরিবারকে আঘাত করতে না দিয়ে। কারণ রিদের মায়ার পরিবারকে আঘাত করার দৃষ্টিকটুর দেখাচ্ছে তাই। এই মূহুর্তে মায়ার বাবাও যদি সাজিদুল ইসলামকে বাঁচাতে চেয়ে এগোত তাহলে হয়তো তিনিও রেহাই পেত না হিংস্রত রিদের হাত থেকে। তিনি চোখ মুখ শক্ত করে রিদের দিকে তাকিয়ে। তারপর চোখ ঘুরাল র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় পরে থাকা নাদিম দিকে, পাশেই তার ভাই সাজিদুল ইসলামকে জড়িয়ে কাঁদছে জুই ও সাবিনা বেগম। রিদ নিজেকে টেনে সবার থেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে উপস্থিত সকলের সামনে মায়ার উদ্দেশ্যে বলল…

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫৭

‘ জীবনে একই ভুল আমি দ্বিতীয় বার রিপিট করি না। তোর বিয়ে করার শখ না? থাক তুই তোর স্বামী নিয়ে। আমি সেই নারীর দিকে ঘুরে তাকাব না যে নারী আমি জীবিত অবস্থায় অন্য কারও হাত ধরে। জীবনে একা থাকবো তারপরও তোকে চাইব না। বেঈমান প্রত্যারক নারী তুই। আমার ঘৃণার লিস্টে তুই প্রথম মনে রাখিস।

রিদ মায়ার প্রেমগাঁথা পর্ব ৫৯