রেড রোজ ২ পর্ব ১
ফারহানা নিঝুম
“রোজ ক্যান আই কিস ইউ?”
ঐশ্বর্যের কথা শুনে সামনে দাঁড়ানো কিশোরী মেয়ে থমকে গেল । ঐশ্বর্য আবারও একই সুরে বলে উঠে।
সুইটহার্ট এত্ত সহজে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী তোমাকে ছাড়বে। আফটার অল তুমি আমার ওয়াইফ!”
ঐশ্বর্যের কথা শুনে ছিটকে দূরে সরে গেল উৎসা।
“ভাইয়া আপনি আমার কাছাকাছি আসলে কিন্তু….
“ডোন্ট কল মি ভাইয়া রোজ! আরেকবার ভাইয়া ডাকলে কিন্তু।”
উৎসার কান্না পাচ্ছে এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ছাড়তেই চাচ্ছে।দুতলা থেকে নিচ তলা আবার দুতলা কখন থেকে এটাই করছে সে! কিন্তু ঐশ্বর্যের নাম গন্ধ নেই তাকে ছাড়ার।
জার্মানি থেকে আসার পর থেকেই তাকে বিরক্ত করছে।কই ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে ছিলনা? উঁহু উৎসা বড় হয়ে গেছে, এখন সব বুঝে।
“জান একটু কাছে আসো একটু!”
ঐশ্বর্য হাত উঁচিয়ে দেখালো , উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“ফাজিল লোক, অস’ভ্য রিক চৌধুরী কখনো আপনার কাছে আসবো না।”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো,হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দেয়।
“ওকে সুইটহার্ট তোমাকে আসতে হবে না, কিন্তু হ্যা আমি আসলে আজকে তুমি শেষ উম্মাহ্।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট গোল করে চুমু ছু’ড়ে দেয়। উৎসার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে।
“ক্যারেক্টারলেস মানুষ একটা,নিকি আপু কোথায় তুমি?”
ঐশ্বর্য বেশ আরাম করে সোফায় গিয়ে বসলো,তাতে উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল।
“কেউ নেই রোজ, সবাই বাইরে গেছে। এখানে শুধু তুমি আর আমি।”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো।
“আমি কিন্তু সত্যি সত্যি কেঁদে দেব!”
“কাঁদো যত ইচ্ছে কাঁদো।আর হ্যাঁ কিছু কান্না বাঁচিয়ে রেখো একটু পর যখন আমি ধরবো তখন আবার কাঁদতে হবে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বারো বছরের ছোট্ট উৎসা কে বিয়ে করে উনিশ বছরের ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী পাড়ি জমিয়েছেন জার্মানি।
লাল শাড়ি পরে জড়সড় হয়ে বসে আছে উৎসা পাটোয়ারী। ছোট্ট এই বাচ্চার মনে হাজারো প্রশ্ন,তার ঐশ্বর্য ভাইয়া কোথায় গেল?
কিছুক্ষণ আগের কথা, সবে মাত্র সাবিনা পাটোয়ারীর ছোট মেয়ে উৎসা পাটোয়ারীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে শহীদের ছেলে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর। বিয়েতে প্রথম থেকেই রাজী ছিল না সে, জোরপূর্বক শহীদ তাকে বিয়ের আসরে বসিয়েছেন।কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর সাথে সাথে উঠে গেল ঐশ্বর্য, অগ্নি চক্ষুদয় জ্ব’ল’জ্ব’ল করছে তার।আড় চোখে এক পলক দেখে নেয় উৎসার নিষ্পাপ মুখশ্রী।
“কী হয়েছে ঐশ্বর্য এভাবে উঠে গেলে?”
ওহ্ গড প্লিজ বাবা আমাকে এখন অন্তত আপনি ছেড়ে দিন?”
ঐশ্বর্য দ্রুত পায়ে দুতলায় চলে গেল। উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।ঐশ্বর্যের সৎ মা আফসানা পাটোয়ারী
“দেখলি উৎসা তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছে ঐশ্বর্য।তোর ঐশ্বর্য ভাইয়া গেলো,কারণটা কী জানিস?তোকে পছন্দ করে না।”
“চুপ করো আফসানা!কী হচ্ছে এসব?”
শহীদ ধমকের সুরে বললো, আফসানা তাচ্ছিল্য করে।
সাবিনা হাঁসফাঁস করছে।
“এসব কী হচ্ছে শহীদ ভাই? তোমার কথাতে আমার ছোট্ট মেয়েটার বিয়ে দিতে রাজি হলাম, অথচ ঐশ্বর্য কী করছে এটা?”
শহীদ সাবিনা কে শান্ত রাখতে বলে।
“আরে বোন তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সাবিনা তো শান্ত হয়ে গেল কিন্তু ঐশ্বর্য শান্ত হয়নি। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড জিসানের সঙ্গে পাড়ি জমায় জার্মানি।
ছয় বছর পর…
ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে পুরো বাড়ি, সকাল থেকে একা একা পুরো বাড়ি সাজাচ্ছে উৎসা। আজকে তার বোন মিহি আসবে,ওর বর কে নিয়ে। উৎসার সে কী আনন্দ!
বারান্দায় বসে ফুলের মালা তৈরি করতে ব্যস্ত, তৎক্ষণাৎ কেউ গলা খাঁ’কা’রি দিয়ে উঠে।
“উহু উহু আমরা কী আসতে পারি?”
চিরচেনা কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালো উৎসা। নিকি আর রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে, তার মামাতো ভাই বোন।
“ভাইয়া!আপু!এসো।”
নিকি এগিয়ে গিয়ে উৎসা কে জড়িয়ে ধরে।
“আপু তোমরা এত সকাল সকাল?”
রুদ্র আলতো ভাবে উৎসা কে জড়িয়ে ধরে।
“তোর জন্য খবর আছে।”
উৎসা বোঝলো না,খবর? কিসের খবর?
“কিসের খবর ভাইয়া?”
নিকি কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। উৎসার ছোট্ট মাথায় কিছুই ঢুকলো না।
“আরে কী বলছো আপু আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”
নিকি উৎসার কানে ফিসফিসিয়ে বললো।
“জার্মানি থেকে ভাইয়া আসছে।”
ঐশ্বর্য আসছে কথাটা শোনামাত্র শরীর মৃদু কেঁপে উঠলো উৎসার। শ’য়তা’ন তাহলে সত্যি ফিরছে? বাহ্ বাহ্ অস’ভ্য রিক এখন বাংলাদেশের মেয়েদের পা গ ল করতে আসছে হুউ!
“তো আসুক আমার কী?”
নিকি ঠাস করে পিঠে বসিয়ে বলে।
“ওরে শয়’তা’ন মেয়ে।”
বিছানায় শুয়ে আছে উৎসা, বিছানার এক পাশে অবহেলায় পড়ে আছে ওড়না। ফোন টুং টুং শব্দ করে বেজে উঠল, অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে।
“হ্যলো আসসালামুয়ালাইকুম।”
“ওয়া আলাইকুমস সালাম সুইটহার্ট।”
সুইটহার্ট শব্দটি বেশ ভালো করেই চেনে উৎসা ,লোকটি আর কেউ নয় অস’ভ্য রিক চৌধুরী।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া!”
সুইমিং পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে বেশ আয়েশ করে বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।
“উফ্ রোজ ডোন্ট কল মি ভাইয়া।”
উৎসা মুখ বাঁকালো,এহ শখ কত ভাইয়া ডাকবে না!তো কী ছাইয়া ডাকবে?ছাইয়াও হলো কই?
“একশো বার ডাকবো, ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো, আচমকা পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে।
“সুইটহার্ট ট্রাস্ট মি একবার আসলে না তোকে কাঁ’চা চিবিয়ে খাব গড প্রমিজ।”
উৎসা পিলে চমকে উঠে,কী অস’ভ্য রে বাবা।
“ছিহ্ কত অস’ভ্য আপনি! আমাকে একদম ফোন করবেন না।”
“অস’ভ্যতামো কী কত প্রকার সেটা আসলে বোঝাবো।আর হ্যা ফোন করেছি তার কারণ সামথিং নিডস্, পি’চ পি’চ।”
উৎসা চট করে ফোন কে টে দিল।কী অস’ভ্য রে বাবা!
উৎসা একদম ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর সামনে যাবে না।এই লোকটা তাকে বিয়ে করে ফেলে চলে গিয়েছে,উৎসা কিছুই ভুলে নি।
“মা আপু কোথায়?”
সাবিনা পাটোয়ারী রান্না করছিলেন,উৎসা ঘুম থেকে উঠে মিহি কে কোথাও দেখতে পেল না। সেই জন্য রান্না করে এলো, এখানেও নেই সে।
সাবিনা পাটোয়ারী মিহি হাসলেন।
“উৎসা মিহি তো তোর মামার বাড়িতে গিয়েছে।নিকি বলেছিল হেল্প লাগবে আজকে তো….
সাবিনা পাটোয়ারী পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না তার পূর্বেই উৎসা ছুট্টে উপরে যেতে যেতে আওড়ালো।
“আমিও তাহলে যাচ্ছি।”
সাবিনা ফিক করে হেসে উঠলো,সে যদি জানে ঐশ্বর্য আসছে তাহলে তো শেষ!
নিজের সিটে বেশ আরাম করে বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।তার প্রাইভেট জেট, কিয়ৎক্ষণ আগেই টেক অফ করেছে।
“ব্রো নে চা খা!”
ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে তাকালো প্রাণ প্রিয় বন্ধু জিসানের দিকে। তৎক্ষণাৎ কেয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
“রিক লুক জিসান বাংলাদেশ যাওয়ার আগেই কী শুরু করেছে?”
জিসান ঠাস করে চা’টি মে’রে দেয় কেয়ার মাথায়।
“ডোন্ট ফর্গেট আমি কিন্তু বাংলাদেশী কেয়া!”
কেয়া মুখ বাঁকিয়ে নেয়, ঐশ্বর্য বিরক্তের রেশ টেনে বলে।
“পারলে কফি দিতে বল।”
জিসান একজন কে ডেকে কফি দিতে বললো।
“আচ্ছা মিস বাংলাদেশীর কী খবর?”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো, একবার হাতের কাছে পাক এরপর দেখাবে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী ঠিক কতটা অস’ভ্য?
বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেছে বহু বছর পর। কলিং বেল বেজে উঠতেই নিকি গিয়ে দরজা খুলে দিল।চোখ দুটো তার আটকে আছে সামনের দিকে,তার ভাই।
“ভাইয়া!”
ঐশ্বর্য কে দেখে হামলে পড়ে নিকি, ঝাপটে জড়িয়ে ধরে তাকে।
“ভাইয়া তুমি সত্যি সত্যি চলে এসেছো!
ঐশ্বর্য আলতো করে নিকির চুলে হাত রাখলো,পিছন থেকে জিসান ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“অ্যাংরি বার্ড।”
রুদ্র তৎক্ষণাৎ নিচে নেমে আসে।
“হেই ভাই এসে গেছো।”
রুদ্র ঐশ্বর্য একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, জিসানের সঙ্গেও ভাব বিনিময় হয়।
রুদ্র পিছনে তাকাতেই নতুন মুখ দেখতে পেলো।কেয়া নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে,সে তো কাউকে চিনেই না!
ঐশ্বর্য ভেতরে প্রবেশ করলো, আফসানা পাটোয়ারীর সঙ্গে দেখা হয়।
“কেমন আছো?”
“অ্যাম ফাইন। আপনি?”
“হ্যা ভালোই আছি, বসো।”
ঐশ্বর্য ভেতরে চলে গেল, এদিকে আফসানাও রান্না করে যায়। শহীদ অফিসে গিয়েছে ফিরতে ফিরতে বিকেল।
“তুমি বসো আমি এখুনি পানি নিয়ে আসছি।”
নিকি ভেতরের দিকে যেতেই জিসানের মুখোমুখি হয়।
“বাঁদর।”
“তুমি।”
ছোট থেকে নিকি জিসান কে স’হ্য করতে পারে না। সবসময় বিরক্ত করে,ওর সুন্দর নাম থাকতেও বাজে একটা অ্যাংরি বার্ড বলে ডাকে। ফাজিল লোক কোথাকার!
কেয়া আর জিসান বেশ আরাম করে বসলো। কেয়া ফিসফিসিয়ে জিসানের কানে বললো।
“ব্রো ওকে দেখ কত্ত হ্যান্ডসাম তাই না?”
জিসান চোখ গুলো ছোট ছোট করে বলে।
“শেইম লেস গার্ল।”
কেয়া ভেংচি কা’টলো। সামনে দাঁড়ানো রুদ্র কে তার ভালো লেগেছে,ব্যস এনাফ।
তাড়াহুড়ো করে আসছে উৎসা, কিন্তু আসতে গিয়েই ঘটিয়ে বসলো বড়সড় কা’ন্ড।বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে কাঁদায় ধপাস করে পড়ে গেল।
“ইয়াক,ছে।”
উৎসা কাঁদায় মাখো মাখো অবস্থা।
“ইস্ এবার কী হবে?”