রেড রোজ ২ পর্ব ১৪

রেড রোজ ২ পর্ব ১৪
ফারহানা নিঝুম

“ওয়াও অ্যাম সো হ্যাপি, ফাইনালি সবাই আসবে।”
কেয়া বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো ।
ঠিক মাস দুয়েক পর আবারও ফ্রেন্ডদের সাথে তাদের দেখা হবে। আড্ডা জমবে ,সেই আগের মতো।
ঐশ্বর্যের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে থেকে হ্যারি কিছুক্ষণ আগেই ফোন করেছে। সবাই আবারো সেই ওদের পুরো জায়গায় একত্রিত হতে চাচ্ছে। ঐশ্বর্যের কটেজ ,বাড়ির বাইরেই ডান দিকে বড় সড় কটেজ আছে। ওখানেই সবাই দেখা সাক্ষাৎ এবং কী আড্ডা পার্টি সবই হয়।হ্যাভেন বরাবরই একটু পার্টি করতে পছন্দ করে,নিজ দায়িত্বে সব কিছু করবে সে। এবারেও তাই হলো।

কিচেন থেকে বেশ চিন্তিত মুখ নিয়ে বেরিয়ে এলো। তৎক্ষণাৎ কেয়া শুধোয়।
“কিউট গার্ল তুমি যাবে তো আমাদের সাথে?”
উৎসার কোনো দিকেই খেয়াল নেই ,সে নিজ ভাবনায় মগ্ন। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“রোজ আর ইউ হিয়ার মি?”রোজ,,,
ঐশ্বর্যের চিৎকারে চমকে উঠে উৎসা।
“কী হয়েছে? আমি কী করলাম?”
ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, এতক্ষণ ডাকাডাকির পর বলছে কী করলাম?
“মিস বাংলাদেশী আর ইউ ওকে? তোমাকে বড্ড আনমনে লাগছে।”
উৎসা জোরপূর্বক হেসে বলে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“না তেমন কিছু না।”
উৎসা আর কিছু বললো না ,ধীর গতিতে উপরে রুমে চলে গেল। জিসান বলল।
“কী রে ওর কী হলো?”
ঐশ্বর্য এক নজর তাকালো কেয়ার দিকে ,কেয়া উঠে কমফোর্ট জোনে চলে গেল।
ঐশ্বর্য এবার বলে।
“ইয়ে ইয়ে পাচ্ছে।”
জিসান নাক মুখ কুঁচকে ছিটকে সরে গেল।
“শেইম লেস ম্যান,,,,।”
ঐশ্বর্য হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।

বড়সড় একটি কটেজ , কটেজের ভেতরটা অসম্ভব সুন্দর। চারিদিকে ছোট ছোট ড্রিম লাইট লাগানো , ভেতরে প্রবেশ করতেই ড্যান্সিং ফ্লোর। পাশেই ছোটখাটো মিনি বার ,আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক ।লোক সংখ্যা বেড়ে চলেছে,কেউ বা নিজের গার্লফ্রেন্ড কেউ বা ওয়াইফ কে নিয়ে এসেছে। অনেক গুলো কাপল ডান্স করছে , মিনিবারের এক পাশে বসে ড্রিঙ্ক করছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। জিসান অস্ফুট স্বরে বলল।
“ব্রো তোর ওয়াইফ কই?”
ঐশ্বর্য কিছু বললো না ,সে নিজ কাজে ব্যস্ত । জিসান এগিয়ে গেল , কেয়া এসে ওকে বলে।
“চল বাডি ডান্স করি।”
জিসান গলা টেনে বলে।

“এএহহ। শখ কত! তুই কী আমার গার্লফ্রেন্ড?”
কেয়া ভ্রু উঁচিয়ে শুধোয়।
“গার্লফ্রেন্ড নই,বাট বেস্ট ফ্রেন্ড তো!চল না ইয়ার।”
জিসান বেশ ভাব নিয়ে বলে।
“দেখ আমি হলাম নিতান্তই শুদ্ধ পুরুষ ,তাই আমি অবশ্যই নিজের ওয়াইফের সাথেই শুধু ডান্স করব।তুই অন্য কাউকে খুঁজে নে ডেবিল কুইন।”
কেয়ার মনটা যেন ঠাস করে ভে ঙে গেল।সে ঠোঁট উল্টে বলে।
“তুই এটা বলতে পারলি জিসান?”
“হ্যা অবশ্যই। মুখ আছে বলে দিয়েছি।”
“তুই ঠাস করে আমার হার্ট টা ব্রেক করে দিলি?এ্যাহ “ইডিয়ট।”

“ষ্টুপিড।”
“ইউ।”
নো,ইউ।”
“ইইই।”
জিসান পাশ কা’টিয়ে চলে এলো, কেয়া ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে গেল।
“রিক শুন না।”
ঐশ্বর্য গ্লাসে চুমুক দিয়ে আওড়াল।
“হুঁ?”
“চল ডান্স করি!”
“ওকে ,বাট পাঁচ মিনিট পর। এখুনি আসছি।”
কেয়া হতাশ হয়ে বলে।
“ওকে।”

রুমে জড়সড় হয়ে বসে আছে উৎসা , মূলত সে টিভি দেখছে। এমনিতেই বাড়িতে কেউ নেই ,এত বড় প্যালেসে ঐশ্বর্য একা থাকে কী করে?ভাবতেই অবাক হচ্ছে।এই কয়দিনে হাঁপিয়ে উঠেছে সে , বিরক্ত লাগছে। তবুও থাকছে , কিন্তু বেশীদিন না। সিরাতের সাথে কথা হয়েছে ,সে রুম ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছে।
কলিং বেল বেজে উঠল ,উৎসাও ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। এগিয়ে গিয়ে মেইন ডোর খুলে দিতেই ঐশ্বর্য ভেতরে প্রবেশ করে।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া আপনি?”
“হুসস,অ্যাম নট ইওর ব্রাদার রোজ।সো প্লিজ ডোন্ট কল মি ভাইয়া।”
উৎসা মিইয়ে যাচ্ছে ,কী হয় এই লোকটার? সবসময় উল্টো পাল্টা বলতেই থাকে।
“আপনি এখন আসলেন কেন?”
“তোমার জন্য।”

ঐশ্বর্যের সহজ স্বীকারোক্তি,উৎসা কিছুটা ঘাবড়ে গেল। শুকনো ঠোঁট দুটো আলতো করে ভিজিয়ে বলে।
“আ,,আমার জন্য?”
“রেডি হয়ে নাও না রোজ? পার্টিতে যেতেই লেইট হচ্ছে।”
উৎসা ভেতরে গেল ,যেতে যেতে বলে।
“আমি কোনো পার্টিতে যেতে চাই না।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে ধরে।
“প্লিজ রাগিও না , কন্ট্রোললেস হলে তোমার কাছেই আসবো কন্ট্রোল হতে।”
উৎসা হাত মোচড়াতে লাগলো।
“উফ্ ছাড়ুন আমাকে। যেতে চাই না আমি।”
ঐশ্বর্য উৎসার খুব কাছাকাছি দাঁড়ালো।
“ইউ আর মাই লিগ্যাল ওয়াইফ তাই না রোজ?”

উৎসা আবারও শুকনো ঢোক গিললো। ঐশ্বর্য উৎসার গালে স্লাইড করে বলে।
“যা করব সব জায়েজ আছে তাই না?রোজ তুমি রেডি না হলে আমি রেডি করাব,আর আমি রেডি করাতে শুরু করলে দু ঘন্টা লাগবে কমপক্ষে।বিকজ আমি খুব স্মুথলি তোমাকে টাচ করব, তুমি উত্তে’জিত হবে। এরপর আমাদের মধ্যে সামথিং রং টাইপ কিছু হবে ,আহ আহ এটা শুধু তোমার কাছে রং মনে হবে।বাট আমার কাছে রাইট , এবার তুমি ভেবে দেখো কী করবে?চয়েজ ইজ ইওরস সুইটহার্ট।”
উৎসার রিতিমত আত্মা শুকিয়ে আসছে ঐশ্বর্যের কথায় , অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ছুঁতে চায়। উঁহু উৎসা কখনোই ছুঁতে দেবে না ,কারণ সে তাকে ভালোবাসে না।যদি ভালোবেসে কাছে চায় তাহলে অবশ্যই ধরা দেবে।

“দদেখুন হাত ছাড়ুন আমার , আপনি যখন তখন টাচ করবেন না আমাকে।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে , কন্ট্রোললেস হচ্ছে সে। উৎসার এই ফোলা ফোলা গালে কা’ম’ড় বসাতে মন চাচ্ছে।
“বেইবি একটা বাইট করি গালে?”
উৎসা চমকে উঠে ।
“কী? অস’ভ্য, নির্লজ্জ বের হন। না আপনাকে বের হতে হবে না,আমিই চলে যাচ্ছি।”
উৎসা পা বাড়ায় বের হতে , তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য তাকে ঝাপটে ধরে। দু’হাতে চেপে ধরলো সে , উৎসা ছটপট করছে।
“ছাড়ুন আমাকে প্লিজ! আমি কিন্তু চিৎকার করব ঐশ্বর্য ভাইয়া!”
ঐশ্বর্য শুনলো তবে ছাড়লো না।
“আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি তো ,এত বছর হয়ে গেছে এবার অন্তত আমার কাছাকাছি আসা উচিৎ না রোজ?”
“কী আজেবাজে কথা বলছেন? ছাড়ুন আমায়।”
“রেডি হও,সব বলব আজ।”

ঐশ্বর্য উৎসা কে ছেড়ে দিল, এগিয়ে গিয়ে কাউচের উপর রাখা প্যাকেট এগিয়ে দিল।
“তাড়াতাড়ি রেডি হও,জাস্ট টেন মিনিট হ্যারি আপ।”
উৎসা কেমন ভয় পেয়ে গেছে ঐশ্বর্য কে দেখে। আপাতত মনে হচ্ছে রেডি হয়ে নেওয়াই ঠিক হবে। ঐশ্বর্য কেমন উ’ন্মা’দ হয়ে আছে।
উৎসা এক প্রকার দৌড়ে উপরে চলে গেল।
ঐশ্বর্য ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নিল। অতঃপর সেও উপরে রুমের দিকে যায় ।
অফ হোয়াইট সিল্কি শাড়ি পড়েছে উৎসা ,তার সাথে ম্যাচিং করা ব্লাউজ। সাদা পাথরের বসানো নেকলেস ,হাতে দুটো পাথর বসানো চুড়ি।উৎসার কেমন জানি এগুলো ডায়মন্ডের মনে হচ্ছে ,সবই ঐশ্বর্যের দেওয়া প্যাকেটের ভেতরে পেয়েছে সে।উৎসার নরমাল সাজ , ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ব্যস এনাফ। এবার শুধু শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে সেটআপ করতে হবে। তৎক্ষণাৎ বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছে ঐশ্বর্য ,হিস্কি টুনে ডেকে বলে।

“রোজ ইনারের ফিতে দেখা যাচ্ছে তো!”
উৎসা তৎকালীন পিছন ফিরে তাকালো, হৃদয় স্পন্দনও থমকালো। লজ্জা নুইয়ে পড়ে লাজুক লতার ন্যায়,তবে হঠাৎ এত লজ্জা কেন? আচ্ছা ঐশ্বর্যের মাঝে মাঝে পাগলামী গুলো দেখে মনে হয় লোকটা তাকে ভালোবাসে! তবে পরক্ষণেই অভিমান জন্মায়!
ঐশ্বর্য ধীর গতিতে এগিয়ে আসে ,আসার গতি খুবই কম। উৎসা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এক জায়গায়, ঐশ্বর্য প্রচন্ড অস্থির অনুভব করছে। অন্তঃপুরে তীব্র জ’লো’চ্ছ্বা’স হচ্ছে, অনুভূতির ঝ’ড়।পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিল উৎসা কে ,সে সুন্দর। অসম্ভব রকম সুন্দর , ঐশ্বর্য ছোট বেলার উৎসাতে মজেছে ।সেই উৎসা বড় হয়েছে ,তাকে সামলানোর মতো ক্ষ’মতা হয়েছে।
ঐশ্বর্য আলতো হাতে ব্লাউজ টেনে উৎসার ইনারের ফিতে ঢেকে দিল।
“ইউ নো ইউ আর লুকিং সো প্রীটি ট্রাস্ট মি আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।”
উৎসা পিছোতে গিয়েও পারলো না , ড্রেসিং টেবিলের সাথে আটকে আছে।
“সুইটহার্ট ক্যাই আই কিস?”

উৎসা বিস্মিত চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের পানে।
“না…
তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার চিবুকে বা’ইট করে, ব্যথায় মৃদু কঁকিয়ে উঠলো উৎসা।হাত দুটো খা’মচে ধরে ঐশ্বর্যের ঘাড়।
“উই আর গ্রেডিং লেইট ,লেটস্ গো।”
পার্টি শুরু হয়েছে সেই কখন ,উৎসা কেয়া আরো কিছু মেয়ে একে অপরের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে।উৎসা কাউকেই তেমন চিনে না , সবাই উৎসা কে দেখে বেশ অবাক হয়েছিল। তবে তা ক্ষণকালের জন্য , পরক্ষণেই ঐশ্বর্য তার স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। ব্যাপার টা কেউই হজম করতে পারেনি , ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী বিয়ে করেছে? ফ্রেন্ড সার্কেল ঝাঁ’পিয়ে পড়েছে ওর উপর। সবার একটাই কথা বিয়ে করেছে অথচ ওদের একবার জানায়নি পর্যন্ত?

ঐশ্বর্য হেসে ফেললো , জিসান ওদের সব কিছু খুলে বলে। সবাই ঐশ্বর্য কে বাহবা দেয় ,রিক মানেই অন্য কিছু। সে নিজেও ইউনিক কাজ গুলোও করবে ইউনিক।
একের পর এক গ্লাস শেষ করছে ঐশ্বর্য , দৃষ্টি তার সম্পূর্ণ উৎসার দিকে। এদিকে সে পড়েছে মহা জ্বা’লায় , অস্বস্তি হচ্ছে। কেমন করে ঐশ্বর্য তাকিয়ে আছে? উফ্ এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী আদেও কখনও ভালো হবে?
হাতে কোমল স্পর্শ পেয়ে মুখ উঠিয়ে দেখে উৎসা , ঐশ্বর্য তাকে।
“চলো।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে বলার সুযোগ দিল না,তার পূর্বেই ড্যান্স ফ্লোরে নিয়ে যায়।সফট মিউজিক টুন বাজছে, ঐশ্বর্য উৎসার কোমড় জড়িয়ে ধরে।

“ব্যস যখন বারো তখন আমার বয়স সতেরো সুইটহার্ট।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে ঘুরিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে স্ট্যাপ অনুযায়ী ড্যান্স করছে।
“ইউ নো হোয়াট তখন আমি থাকলে সামলাতে পারতে না। আমি আমি তো গুড বয় নই , ভীষণ ব্যাড বয়।এক চুলও ছাড় দিতাম না।”
উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো , ঐশ্বর্যের বলা প্রতিটি কথাই সে বুঝতে পারছে।
এবারে ঐশ্বর্য উৎসার ঘাড়ে স্লাইড করে ফিসফিসিয়ে আওড়াল।
“আমি তখনও পাগল ছিলাম এখনও পাগল আছি। শুধু বয়সের পার্থক্য, কিন্তু এখন আমাকে সামলানোর বয়স হয়ে গেছে!”

রেড রোজ ২ পর্ব ১৩

উৎসার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে যে, ঐশ্বর্যের বেসামাল স্পর্শ সমস্ত কায়া নাড়িয়ে দিচ্ছে তার।
“নিউ ইউ ব্যাডলি। আমাকে বুঝতে পারলে ভালো না বুঝতে পারলে আরো ভালো!সময় মতো সব বুঝিয়ে দেব। তখন হিমসিম খেলেও আমার কিছু যায় আসবে না। আমি কিন্তু খুব খারাপ, তোমার ভাবনার থেকেও বেশি খারাপ।”
শেষের কথাটা বলে ঘাড়ে আলতো করে অধর ছোঁয়ায় ঐশ্বর্য।

রেড রোজ ২ পর্ব ১৫