রেড রোজ ২ পর্ব ১৯

রেড রোজ ২ পর্ব ১৯
ফারহানা নিঝুম

ভোরের আলো ফুটে উঠছে , চারদিকে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারিদিক। ব্যস্ত শহর আবারও ব্যস্ত হয়ে উঠছে ,রাতের সাথে সাথে শহরাঞ্চলও যেমন ঘুমিয়ে পড়ে।ঠিক তেমনি সকালে হওয়ার সাথে সাথে ইট পাথরের এই শহর আবারও চঞ্চল হয়ে উঠে।
মৃদু মন্দ হাওয়া বইছে আশেপাশে , কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে উৎসা। নিজের জন্য দু’টো সালোয়ার স্যুট নিতে যাবে। এখানে আসার পর বানাতে দিয়েছিল,আগের জামা গুলো পুরোনো হয়ে গেছে। আবার দু একটা ছিঁড়েও গিয়েছে!

তাই তো যাচ্ছে!কিছু দূর আসতেই মার্কেট দেখতে পেলো। এত দূর হেঁটে আসতে হয়েছে তাকে, আজকে একটাও রিকশা পায়নি। মার্কেটে যেতেই রুমানা বৈশাখী সঙ্গে দেখা ,তার কাছেই বেশিভাগ সালোয়ার স্যুট তৈরি করে উৎসা।এবারেও তাই ,বাকি টাকা দিয়ে কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল উৎসা। উফ্ আবারো হেঁটে যেতে হবে তাকে!
“হাই সুইটহার্ট।”
পরিচিত কন্ঠস্বর।উৎসা চমকে পিছন ফিরে তাকালো ,কালো মার্সিডিজ কার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে কেউ নেই , সচরাচর ঐশ্বর্য জিসান কে নিয়েই বের হয়।অথচ আজ এখানে একা! ঐশ্বর্য কে দেখা মাত্র কালকের সেই দৃশ্য মনে পড়ে গেল উৎসার ,হৃদপিন্ড এখন থেকেই কেমন লাফাচ্ছে।সে যাবে না ওই অস’ভ্য রিক চৌধুরীর কাছে।
উৎসা পাত্তা না দেওয়ার মতো করে এগিয়ে যেতে লাগলো। ঐশ্বর্যও পিছু পিছু দৌড়ানোর মতো করে এলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“রোজ লিসেন না!”
উৎসা কানে হাত দিয়ে বললো।
“আমি আপনার কোনো কথাই শুনতে চাই না অস’ভ্য রিক চৌধুরী।যান এখান থেকে!”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো, ডিরেক্ট উৎসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। উৎসা পা দুটো থামে, কপাল কুঁচকে তাকায় ঐশ্বর্যের পানে।
“লিসেন রোজ তুমি কিন্তু ভুলে যাচ্ছো !”
উৎসা মৃদু কপাল কুঁচকে নিল,সে আবার কী ভুলে গেছে?
“আমি কিছুই ভুলিনি অস’ভ্য রিক চৌধুরী!”

“অস’ভ্য রিক চৌধুরী?নাইস নেইম। কিন্তু তুমি সত্যি কিন্তু ভুলে গেছো ইউ আর মাই লিগ্যাল ওয়াইফ সুইটহার্ট।”
ঐশ্বর্য শেষের কথাটা বলে চোখ টিপলো। উৎসা রাগে ফুসে উঠে ,সে বউ? আচ্ছা যদি সে বউ হয়ে থাকে তাহলে ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে না,সো ফানি! ভালোবাসে না অথচ ওয়াইফ দাবি করে!
“মাথার তাড় কী পড়োটাই গেছে?নাকি ব্রেইন জার্মানি ফেলে এসেছেন!”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো , আচমকা উৎসার গাল টেনে বলে।
“হোয়াই ইউ সো কিউট?”
উৎসা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল , কেমন অস্বস্তি লাগছে তার!
ঐশ্বর্য সূক্ষ্ম চোখে উৎসা কে দেখলো , জিভ দিয়ে আলতো করে ঠোঁট ভিজিয়ে নেওয়ার ভঙিমা। উফ্ তার কাছে সেই লাগছে!রিক চৌধুরী মানেই তো ব্যাড বয়!যা তা করতে পারে।
“দেখুন ভালোয় ভালোয় বলছি আপনি কি আমার রাস্তা থেকে সরবেন?”
ঐশ্বর্য নাটকীয় ভঙ্গিতে আওড়াল।

“উঁহু সরব না। কী করবে?”
উৎসা কিছুই করলো না,সে জানে ঘাড় ত্যা’রা লোকটা এভাবে কথা শুনবে না! উৎসা চুপচাপ সাইড কে টে এগিয়ে যেতে লাগলো। আচমকা অনুভব করলো তার পা দুটো শূন্যে আছে , ঐশ্বর্য তাকে পাঁজাকোলা তুলে নিয়েছে।
“কী করছেন ছাড়ুন আমাকে আমি কিন্তু চিৎকার করব প্লিজ?”
ঐশ্বর্য কিছুই বললো না ,সে বাঁকা হাসলো। আশেপাশে লোকজন তাকিয়ে আছে হা করে। এখন এটাই সমাজ চোখের সামনে অন্যায় হলেও কেউ প্রতিবাদ করতে আসে না!
“ছাড়ুন বলছি প্লিজ?”
“স্যরি বেইবি।”

ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে গাড়িতে তুললো , ভেতর থেকে তা লক করে দেয়। উৎসা থমকালো চমকালোও বটে, হাত পা কাঁপছে তার। ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে ড্রাইভ করছে , কোথায় যাচ্ছে জানা নেই! অনেক টা সময় পর নিস্তব্ধ জায়গায় গাড়ি দাঁড় করালো ঐশ্বর্য। অদ্ভুত চোখ পাশ ফিরে উৎসার পানে তাকায়। উৎসা আশেপাশে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করে জায়গাটা কোথায়? হ্যা এটা শিলামের রাস্তা,এই জায়গাটা বড্ড নিরিবিলি! উৎসা এবার ডান দিক তাকিয়ে থমকে গেল। ঐশ্বর্য কেমন করে তাকিয়ে আছে? উৎসা থমথমে মুখে শুধোয়!
“কী?”
ঐশ্বর্য ঢোক গিললো, ঠোঁট কামড়ে বলে।
“ফিনিশ ইয়াস্টার ডে’স আনফিনিশড ওয়ার্ক টু ডে সুইটহার্ট?”
উৎসা চিন্তিত হলো! ঐশ্বর্য কোন অসমাপ্ত কাজ আজ সমাপ্ত করতে চাচ্ছে?
“ম ,,,, মানে?”
ঐশ্বর্য স্বভাব সুলভ তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে নাকের নিচ ঘষে নিল।আলতো করে ঠোঁট কা’ম’ড়ে,উৎসার দিকে এগিয়ে এলো।

“দদেখুন আমি কিন্তু এটা মেনে নেব না কোনো ভাবেই! আপনি যদি অস’ভ্যতামো করেন তাহলে জানে মে রে ফেলব!”
ঐশ্বর্য পিটপিট চোখ করে তাকালো । আচমকা উৎসার ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দেয় ,উৎসা চিৎকার করে উঠল। কিন্তু আফসোস তার চিৎকার কেউই শুনতে পেলো না! সাউন্ড প্রুফ এই গাড়িতে যতই চিৎকার চেঁচামেচি করো না কেন কেউই শুনতে পাবে না!
উৎসা ঘাবড়ে গিয়ে সামনে থাকা ডেস্ক থেকে বাটারফ্লাইয়ে ছোট্ট মুর্তিটি তুলে ঐশ্বর্যের মাথায় আ’ঘা’ত করলো।
“উফ্ রোজ হোয়াট আর ইউ ডোয়িং?”
“অস’ভ্য কোথাকার ফাজিল আমি আপনাকে….
ঐশ্বর্য আবারও উৎসার হাত মুঠোবন্দী করে নিল ,উৎসা ছটপট করছে!
“লিভ মি!”

“এটুকুতে এই অবস্থা? উফ্!ইউ নো তোমাকে এই ঘেমে যাওয়া অবস্থায় আরো বেশি হট লাগছে!”
উৎসা চোখ বুজে নিল , হৃদয় স্পন্দন বাড়লো।
“আমাকে নামিয়ে দিন বাড়ি যাব।”
“ওকে।”
ঐশ্বর্য সরে গেল ,উৎসা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
মিনমিনে গলায় শুধোয়।
“কেয়া আপু কোথায়?”
“জার্মানি।”
ঐশ্বর্যের নির্নিমেষ জবাব। উৎসা এক পলক দেখে ফের শুধোয়।
“ওনাকে আসতে বললেন নি?”
“না বললেও চলে আসবে!”
উৎসা অবাক চোখে তাকালো ,না বললেও চলে আসবে মানে?কেয়া কী বাংলাদেশে আগে এসেছে?যদি এসে থাকে তাহলে চিনবে , কিন্তু না চিনলে কী করে আসবে?

কাঠ পোড়া রোদ্দুর দুপুর যেন প্রকৃতির নিজস্ব এক বুনো অনুভূতি। আকাশে রোদ এতটাই প্রখর যে চারপাশ যেন আগুনের হলকা ছড়াচ্ছে। বাতাসে এক ধরনের ঝাঁজালো গন্ধ, যেন নতুন পোড়া কাঠের ধোঁয়া মিশে গেছে। শুষ্ক গাছের পাতা মাটিতে পড়ে আছে, পায়ের তলায় মচমচ শব্দ করে। কোথাও ছায়া নেই, সূর্যের তাপ মাটি থেকে ফিরে আসছে, যেন পা পুড়িয়ে দিচ্ছে।
কিছুটা দূরেই ছোট্ট একটি পুকুর, তার পানি ধীর বাষ্প হয়ে আকাশে মিশে যাচ্ছে। চারপাশে কাক আর চিল উড়ে বেড়াচ্ছে, তারা যেন দিনের এই উত্তাপে সামান্য আরাম খুঁজছে। পথের ধারে বৃদ্ধ লোক একটি কুপি জ্বালিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করছে। রোদে ভেজা মাটি ও পোড়া কাঠের গন্ধ যেন দুপুরটাকে আরও বুনো আর রহস্যময় করে তুলেছে।কেয়া অদ্ভুত চোখে সেই বৃদ্ধ লোকটি কে দেখে নিলো। আবার দেখলো সেই কুপি বাতি!এই যুগে মানুষ এসব কী করে? বৃষ্টির জন্য এরকম কু পথা?

কেয়া ঘাবড়ে গেল কিছুটা ,তবে কী করার সে কী আর এখানে থাকবে? কেয়া অনেক কষ্ট করে ঐশ্বর্যের বাড়ির সামনে এলো।নেইম প্লেটে কি সুন্দর করে লিখা আছে শহীদ ভিলা।কেয়া দু একবার শুনেছিল ঐশ্বর্যের বাবার নাম শহীদ , অতঃপর এই নাম ধরেই এটুকু আশা। একবার ভেতরে যাক এরপর ঐশ্বর্য আর জিসান কে সে মজা দেখাবে!
বাড়ি সামনে আসতেই চোখ গেল পাশের বাগানে , নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করে মিষ্টি ফুলের সুবাস।কেয়া অধর বাঁকিয়ে হাসলো, আহ্ জায়গাটা বেশ সুন্দর!
কলিং বেল চাপতেই বেজে উঠল তা, কিন্তু কেউ এলো না।কেয়া আবারো বেল বাজল।
বাড়ি শুদ্ধ লোক সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। রুদ্র নিজের ল্যাপটপ টা সোফায় রেখে গিয়েছিল , সেটাই নিতে এসেছিল , কিন্তু বেল বাজতে দেখে এগিয়ে গেল।দরজা খুলতেই চমকে উঠে সে,কেয়াও রুদ্র কে দেখে পিলে চমকে উঠলো।

“মিস্টার হ্যান্ডসাম এখানে কী করছে?”
বিড়বিড় করে আওড়াল কেয়া , কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। রুদ্র হয়ত সবে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেছে ।চুল গুলো কেমন ভেজে কপালে লেপ্টে আছে ,পরণের ট্রি শার্টের কিছুটা অংশও ভেজা।
রুদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নিল,তার বিশ্বাস হচ্ছে না এটা কী সেই মেয়েটা?
পরণে সেই স্কার্ট তার সাথে শার্ট ইন করে পড়া।
“সিরিয়াসলি ইজ ইট রিয়েলি ইউ?”
কেয়া কপাল কুঁচকে নিল।
“আপনি এখানে কেন মিস্টার?”
“এটা আমার বাড়ি!”

কেয়া পিটপিট চোখ করে তাকালো,এটা যদি এই লোকটার বাড়ি হয়ে থাকে তাহলে ঐশ্বর্য কোথায়?
কেয়া কিছুই বুঝতে পারছে না, রুদ্র মিহি স্বরে বললো।
“হেই কে তুমি?”
“আমি কেয়া,রিকের বেস্ট ফ্রেন্ড। আচ্ছা বলতে পারবেন রিকের বাড়িটা কোথায়?”
রুদ্র এতক্ষণে বুঝতে পারলো মেয়েটি তার ভাই কে খুঁজছে। কিন্তু কেন? আচ্ছা কোথাও এই মেয়েটি ঐশ্বর্যের গার্লফ্রেন্ড নয় তো? রুদ্র নিজের ভাবনায় চমকে উঠে।
“তুমি কি ঐশ্বর্য কে খুঁজছো?”
কেয়া ভুবন ভোলানো হাসি টেনে বললো।

“হ্যা।”
“কেয়া!”
চিরচেনা কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় উঁচিয়ে বাড়ির ভেতরে উঁকি দিলো কেয়া। জিসান দাঁড়িয়ে আছে , জিসান কে দেখে এতক্ষণে স্বস্তি পেল কেয়া।
“ইয়ার।”
কেয়া ছুটে গিয়ে জিসান কে হাগ করে।
“আরে ডেভিল কুইন সামলে!”
“উফ্ থ্যাংক গড তোকে অ্যাটলিস্ট পেলাম।”
রুদ্র দূরে দাঁড়িয়ে ব্যাপার টা বোঝার চেষ্টা করলো।

রেড রোজ ২ পর্ব ১৮

কেয়া একবার পিছনে তাকিয়ে তার ভাষ্যমতে সেই হ্যান্ডসাম বয় কে দেখে জিসান কে ফিসফিসিয়ে বললো।
“এটা কে?”
“রিকের ভাই।”
কেয়া বিস্মিত নয়নে তাকালো , ঐশ্বর্যের ভাই আছে? কিন্তু কই কেয়া তো কিছুই জানতো না?

রেড রোজ ২ পর্ব ২০