রেড রোজ ২ পর্ব ২৪
ফারহানা নিঝুম
“প্লিজ প্লিজ প্লিজ ছাড়ুন আপনি এমন করবেন না!”
উৎসা ছটপট করছে , কিন্তু সেদিক পানে ভ্রুক্ষেপ নেই ঐশ্বর্যের।সে ব্যস্ত নিজের কাজে ,উৎসাতে বিলীন হতে উদ্যত হয়েছে।
“ওয়ান টাইম প্লিজ রোজ!”
ঐশ্বর্য উৎসা কে রিতিমত দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরেছে, না পারছে নড়তে আর না পারছে কিছু করতে! ঐশ্বর্যের পাগলামি দেখে উৎসা হতাশ,লোকটা কী করছে? আচ্ছা যদি ভালোবাসে তাহলে তো সবাই কে জানানো উচিত ওদের বিয়ে হয়েছে!তা না করে সে লুকিয়ে লুকিয়ে সব করতে চায়? প্রথমে বিয়ে এখন আবার…
না উৎসা কখনো এমন করতে দেবে না,এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী কে সেই শায়ে’স্তা করবে।
“আহহহহহহহহ!”
উৎসা আকস্মিক ভাবে চিৎকার করে উঠল। তাতে খুব একটা ভাবান্তর হলো না। তবে ঐশ্বর্য ঘাড় থেকে মুখ তুলে তাকায়, বোঝার চেষ্টা করে উৎসার চেঁচানোর কারণটা কী?
“হোয়াট?”
“আমি… আমি ওয়াশ রুমে যাব প্লিজ প্লিজ!”
ঐশ্বর্য ভারী শ্বাস ছাড়লো, সুইটহার্ট তার বড্ড চালাক! কিন্তু আফসোস এই চালাকি এই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর সামনে নিছক তু’চ্ছ।
“ওকে।”
“কী ওকে?সরুন! না সরলে যাব কী করে?”
ঐশ্বর্য গা দুলিয়ে হেসে বলল।
“জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ!”
ঐশ্বর্য সরে গিয়ে উৎসা কে কোলে তুলে নিল,উৎসা হকচকিয়ে গেল।
“এটা কী করছেন? নামান আমাকে!”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ঐশ্বর্য আদতেও কখনও কারো কথা শুনেছে? উঁহু শুনেছি, তাহলে আজকে কেন শুনবে?
ঐশ্বর্য ধীর গতিতে ওয়াশ রুমের দিকে এগিয়ে গেল,বাহুর সাহায্যে দরজা ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে দিল। উৎসা এবারে আরো ঘাবড়ে যাচ্ছে, ইস্ তার উচিত ছিল ঐশ্বর্য কে একটু বোঝানো।এই ঘাড় ত্যা’রার সঙ্গে ত্যা’রামি করতে গান এখন তারই উল্টো ক্ষতি হচ্ছে!
“আমি তো পারতাম হাঁটতে, আপনি নামিয়ে দিন!”
ঐশ্বর্য আলগোছে এসে উৎসা কে বাথটাবে শুয়ে দিল। উৎসা চমকালো, হৃদয় স্পন্দন বাড়লো। শুকনো ঢোক গিললো, ঐশ্বর্য কেমন করে তাকিয়ে আছে। উৎসা অনুভব করলো তার শরীর কেমন হিম হয়ে যাচ্ছে! হবেই তো এমনিতেই বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিছুটা ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ।এর মধ্যে এই ঠান্ডা পানিতে ঐশ্বর্য তাকে রেখে দিল! কী আশ্চর্য!
উৎসার মন চাচ্ছে ছুট্টে পালিয়ে যেতে, কিন্তু তাতেও সক্ষম হলো না সে।উঠতে গেল ঐশ্বর্য আটকে দেয়, দক্ষ হাতে গায়ের শার্টটা টেনে খুলে ফেলে। কিঞ্চিৎ ঠোঁট ফাঁক করে হা করে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের দিকে! ঐশ্বর্য অপূর্ব সুন্দর সত্যি বলতে সে সুদর্শন। লোমশ বিহীন ফর্সা বুক,ঠিক তার মধ্যে খানে একটা কালো তিল আছে। উৎসা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে,তিল তো তারও আছে! ঐশ্বর্য আর উৎসার অনেকটাই মিল!
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী আমার ঠান্ডা লাগ…..
উৎসা কী আর কিছু বলতে পারলো? উঁহু পারেনি,তাকে বলতে দেওয়া হয়নি। ঐশ্বর্য বাথটাবে উঠে এলো, উৎসার ডান হাতে টান দিয়ে নিজের মুখের কাছাকাছি নিয়ে আসে। উৎসা ভড়কে গেল, ঐশ্বর্য আলগোছে চুলের ভাঁজে হাত গুঁজে মুঠি করে ধরে।
“ইউ নো না আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ সুইটহার্ট।”
উৎসা ঐশ্বর্যের নেশা ভরা চোখের দিকে তাকিয়েও ভয়ে
শেষ হয়ে যাচ্ছে!
“আপনি পাগলামি করছেন!”
“করতে দাও না।”
“এটা ভুল।”
“জায়েজ আছে।”
“উঁহু লুকিয়ে।”
“লিগ্যাল ওয়াইফ আমার,চাইলে সবার সামনে সব করব। কারো সাধ্যি নেই আমাকে আটকানোর।”
ঐশ্বর্যের শেষ কথায় চুপসে গেল উৎসা। ঐশ্বর্য কন্ট্রোললেস হলো,মুখ এগিয়ে নিয়ে গুঁজে দিল উৎসার ঘাড়ে।উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো। ঐশ্বর্যের স্পর্শ গুলো তার নারী সত্তা নাড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু এটা ভুল!এই মূহুর্তে সেটা সত্যি ভুল।
“প্লিজ!”
“প্লিজ ওয়ান টাইম। কন্ট্রোললেস হচ্ছি তো।”
উৎসা ঘাবড়ে গেল আবারো, ভাবতে পারছে না কি করবে? ঠান্ডা পানিতে জমে যাচ্ছে।তার উপর ঐশ্বর্যের বেসামাল স্পর্শে মুচড়ে যায়।তনু জ্ব’লে তার,গলা শুকিয়ে আসে। ঐশ্বর্য কপাল থেকে নাক,নাক থেকে গাল প্রতিটি জায়গায় নিজের শীতল অধর ছুঁয়ে দিচ্ছে। অতঃপর এগিয়ে চললো বুকের দিকে, গলার ঠিক নিচে মাঝ বরাবর ঠোঁট ছুঁয়ে রাখে দীর্ঘক্ষণ। উৎসা খিঁচিয়ে চোখ বুঁজে নিল।, আচমকা ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে উঠতে চাইলো। কিন্তু ওর জামা টেনে ধরে ঐশ্বর্য।
“ডোন্ট!”
“ক্যারেক্টারলেস মানুষ একটা।”
ঐশ্বর্য জামা টানে, হুমড়ি খেয়ে ঠিক বুকের উপর এসে পড়ে উৎসা।হাত দুটো তার গলা জড়িয়েছে।
“আহ্ সামথিং সামথিং বেইবি।এতটা হেল্পলেস করো না । আমি যদি আরেকটু কন্ট্রোললেস হই তাহলে তুমি শেষ।ইউ আর ফিনিশ,বি কেয়ার ফুল।”
উৎসা বাথটাব থেকে নেমে দাঁড়ালো, কপালে পড়েছে ভাঁজ। বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে আছে সে, ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“আজকের টুকু ট্রেইলার ছিল, পিকচার এখনো শেষ হয়নি।জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ।”
উৎসা কিছুই বললো না, জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিনিট দশেক পর রুম থেকে ফোনের টুং টুং শব্দ শুনতে পেলো। উৎসা ভেজা কাপড়েই দ্রুত পায়ে ভেতরে গেল, ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো।ওয়াশ রুমের দরজার কাছে দাঁড়ালো, উৎসা ফোন কানে তুলতেই পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
“হ্যালো উৎসা!”
বেনজন কথা বলছে, কান থেকে ফোন নামিয়ে নামটা দেখে নিল। হ্যা বেনজন কল করেছে,সিরাত তো কিছুক্ষণ আগেই বলল কল করবে! তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নামটা দেখা হলো না।
“হ্যা বেনজন বলো।”
ছেলের নাম শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো ঐশ্বর্যের।সুঁচালো চোখ করে তাকিয়ে আছে সে! উৎসা এক নজর সেদিক পানে দেখে আবারও কথা বলতে শুরু করে।
“তুমি বলো।”
“আমি হোয়াটসঅ্যাপে অনেক গুলো ছবি দিয়েছি দেখো। ওখান থেকে লাস্ট আর ফার্স্ট এই দু’টো একটু মনোযোগ দাও।”
উৎসা তড়িঘড়ি করে ল্যাপটপ অন করলো,ভেজা হাতেই সবটা করছে।
“হ্যা পেয়েছি। কিন্তু..
“কিন্তু কী?”
“আসলে প্রথম টা পারব, লাস্টের টাই হয়তো একটু সমস্যা হবে!”
“আচ্ছা আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেব ভি’ডিও ক’লে কী বলো?”
“ভি’ডিও ক’ল?”
“হ্যা।”
“ওকে।”
উৎসা ফোন রাখতেই ঐশ্বর্য এসে তার গাল চেপে ধরে।
“হাউ ডেয়ার ইউ? আমি স্পর্শ করলেই প্রবলেম, কিন্তু ভি’ডিও ক’লে কী হবে?তখন কোনো প্রবলেম নেই?”
ঐশ্বর্যের আকস্মিক আ’ক্রম’ণে থমকে গেল উৎসা।
“আপনি সবসময় এত বেশি বুঝেন কেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার নাকে নাক ঠেকালো।
“কারণ সঠিক টা আমাকে বোঝাতে অক্ষম তুমি!”
উৎসা শব্দ বিহিন হাসলো, ঐশ্বর্য আলতো করে নাকে নাক ঘসতে লাগলো।ধীরে ধীরে গালে স্পর্শ করে,উৎসা ঐশ্বর্যের হাত চেপে ধরে।
“আমি শীত করছে প্লিজ।”
ঐশ্বর্য নিজেও সরে গেল, ক্ষণকাল চেয়ে রইল একে অপরের দিকে। অতঃপর ঐশ্বর্য বেরিয়ে গেল নিজের রুমের দিকে। উৎসা নিজেও ফ্রেশ হয়ে নেয়।
সকালের প্রথম প্রহর,আজ সকাল সকাল উঠে গিয়েছে সবাই। জিসান হাঁটতে বের হয়েছে, সচরাচর তার হাঁটার অভ্যাস নেই। কিন্তু আজ অনেক গুলো দিন পর ইচ্ছে করলো একটু হাঁটতে।যেগ ভাবনা সেই কাজ! ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলো জিসান।কিছুটা দূরে যেতেই হুট করেই একটা গাড়ি ওর সামনে চলে এলো। প্রথম দিকে কিছুটা চমকে যায় জিসান, কিন্তু পরিচিত মুখ দেখে চোয়াল শক্ত করে নিল।
নিকি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।গাড়ির দরজা খুলে দিল।
“ওই ভেতরে আসুন, লং ড্রাইভে যাই।”
জিসান বেঁকে গেল, সেদিন সে বলেছিল কিন্তু পাত্তা দেয়নি।অথচ এখন যেতে চাইছে!
“নো।”
জিসান সামনের দিক এগুতে লাগলো,নিকি ত্বরিতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এগিয়ে গেল।
“আরে এত ভাব নিচ্ছেন কেন?চলুন না।”
জিসান মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“না আমি যার তার সাথে যাই না।আর লং ড্রাইভে তো একদমই না।”
নিকি ঠোঁট টিপে হাসলো, জিসান এগুতে যাবে কিন্তু হাতে টান পড়লো।
“যাবেন না।”
জিসান থমকে দাঁড়ায়, নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হলো।
“প্লিজ!”
জিসান যেনো গলে গেল, আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে তার।নিকি জিসান কে টেনে নিয়ে গাড়ির কাছে গেল।
“উঠুন।”
জিসান মনে মনে খুশি হলেও মুখে তা প্রকাশ করলো না, গম্ভীর কন্ঠে বলে।
“আমি ড্রাইভ করছি।”
নিকি গিয়ে পাশের সিটে বসলো, জিসান বসলো ড্রাইভিং সিটে। অতঃপর গন্তব্যহীন পথে রওনা দিল দুজনেই।
নিজের মতো করে গাড়ি চালাচ্ছে জিসান,নিকি আড় চোখে তাকাচ্ছে।সে বেশ বুঝতে পারছে লোকটা তার উপর রেগে আছে।
“আপনি কি রেগে আছেন?”
জিসান উত্তর করলো না, চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে।ওরা চলে এসেছে অনেক টা দূরে, নিকি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মানুষজন খুব একটা নেই।নিকি লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বললো।
“গাড়িটা একটু থামাবেন?”
জিসান ভ্রু কুঁচকে তাকালো নিকির দিকে।
“আমার একটু প্রয়োজন ছিল!”
এবারে জিসান গাড়ির ব্রেক কষে।
“কী প্রয়োজন?”
নিকি পিটপিট চোখ করে তাকালো, হঠাৎ মুচকি হাসলো। জিসান সেই হাসির মানে বুঝলো না! ব্যাপার টা কী?আজ তার অ্যাংরি বার্ড এরকম আচরণ করছে কেন?
“হোয়াট?”
নিকি একটু এগিয়ে এলো, আকস্মিক এক কান্ড ঘটালো সে। আলতো করে অধর ছুঁয়ে দিল জিসানের গালে! জিসান বুঝি হার্ট অ্যাটাক করবে! ঠোঁট দুটো কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।
“এটা!”
নিকি তৎক্ষণাৎ সরে গেল, জিসান কী করবে বুঝতে পারছে না! এটা কিস ছিল?নাকি চুমু? চুমু তো গালেই দেয়, কিন্তু কিস তো ঠোঁটে! জিসান রিতিমত হা হয়ে গেল,সে বেচারা শুদ্ধ পুরুষ কিছুটা লজ্জা তো তারও আছে!
জিসান কাঁপা হাতে ড্রাইভ করেএ,নিকি আবেগের বশে কিছুটা পাগলামি করেছে। কিন্তু এখন নিজেই লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
জিসান এক পলক তাকালো নিকির দিকে,নিকি চুপচাপ বসে আছে। আবারো গাড়ি থেমে গেল, কিন্তু এবার জিসানের ইচ্ছেতে।
রেড রোজ ২ পর্ব ২৩
“তুমি আমাকে অনুমতি ছাড়া চুমু খেয়েছো এটার প্রতি’শোধ নেব এখন।”
জিসানের কথা গুলো মাথার উপর দিয়ে গেল নিকির!
“কী?”
কথা বলতে পারলো না, জিসান ঝাপটে ধরে তার থুতনিতে চুমু খেল।নিকি রিতিমত নির্বাক!এটা কী হলো? জিসান আবারও সরে গেল,বেশ ভদ্র ভাবে বলে উঠে।
“আমি নিতান্তই ভালো মানুষ তাই ঠোঁটে চুমু খেলাম না।”
নিকি সজোরে জিসানের বাহুতে ঘু ষি দিল। অস’ভ্য লোক একটা!