রেড রোজ ২ পর্ব ২৫
ফারহানা নিঝুম
“হ্যা ফিরতে হবে তো আপু।”
উৎসা কে আবারও জার্মানি ফিরতে হবে, ব্যাপার টা মোটেও ভালো লাগছে না মিহির কাছে।
“আচ্ছা উৎসা তুই তো এখানে থেকেও পড়তে পারিস! আমার ভালো লাগছে না। তুই ওখানে একা একা থাকবি, সত্যি ভালো লাগছে না।”
উৎসা বেশ বুঝতে পারছে তার বোনের ব্যাপার টা। ঝাপটে জড়িয়ে ধরে তাকে।
“আপু প্লিজ তুমি মন খারাপ করো না! আমাকে তো পড়তে হবে! পড়াশোনা শেষে কিছু করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে তুমি আমি এক সাথে ভালো থাকতে পারি!”
মিহি বুঝতে পারছে, কিন্তু তবুও তার মন মানছে না।সে সব হারিয়ে নিঃস্ব, স্বামী সংসার এখন মা!আর কিছুই নেই হারানোর। শুধু তার বোন টা ছাড়া।
“ঠিক আছে কিন্তু তুই নিজের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখবি বল আমাকে!”
উৎসা মুচকি হাসে।
“এটা তো রাখতেই হবে।আর হ্যাঁ তোমাকেও কিন্তু নিজের খেয়াল রাখতে হবে। আমি জানি তুমি এখনও ওই অস’ভ্য পরাগ কে নিয়ে ভাবো।”
দীর্ঘ শ্বাস ফেললো মিহি।
“প্লিজ আপু এবার এগিয়ে যাও! তোমার জন্য যে চিন্তা করে না,ভাবে না তাকে নিয়ে তুমি কেন ভাববে?”
“ঠিক বলেছিস,আর ভাববো না।যাই হোক তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকব।”
মিহি আলতোভাবে উৎসার মাথায় হাত রাখলো। উৎসা তার বোন কে হারাতে চায় না,মা হারিয়েছে। এখন তার বোনই সব কিছু।
বাইরে দাঁড়িয়ে সবটা শুনলো ঐশ্বর্য, নৈঃশব্দ্যে হাসলো সে।তার রোজ চাকরি করবে? উঁহু সে কুইন,”অ্যা রেড রোজ” তাকে কখনো চাকরি করতে হবে না।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বাগানের বেঞ্চে বসে আছে রুদ্র, বিরক্ত লাগছে তার। কিন্তু বিরক্তের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে!কী অদ্ভুত! উৎসা কাল চলে যাবে জার্মানিতে, ঐশ্বর্য তো এসেছিল উৎসার জন্য। নিশ্চয়ই সেও উৎসা কে একা ছাড়বে না?সেও হয়তো চলে যাবে।ওরা যাবে মানে কেয়া আর জিসান ওরাও যাবে। রুদ্র কেমন হাঁসফাঁস করছে!কেয়া চলে যাবে ব্যাপার টা মানতে পারছে না, বুকের বা দিকটা কেমন চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে!এক মনে ভেবে চলেছে সে। মেয়েটা এই কয়েক দিনে তার বড্ড আপন হয়ে উঠেছে,যখন তখন দুষ্টুমি ঝ গড়া করে। সাথে বাচ্চামো তো আছে!
“হেই হ্যান্ডসাম বয়।”
চিরচেনা কন্ঠস্বর, রুদ্র চোখে বুঁজে একপেশে হাসলো,কেয়া এসে তার পাশের জায়গা টুকু দখল করে নিল।
“কী ব্যাপার মিস্টার হ্যান্ডসাম মুড অফ নাকি?”
রুদ্র তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ, প্রাণচঞ্চল মেয়েটা কাল চলেই যাবে!ভাবতেই গায়ে কাঁ’টা দিচ্ছে।
“ওই!”
তুড়ি বাজিয়ে বললো কেয়া, রুদ্র মুচকি হাসলো।
“মুড অফ না। তবে সিনিয়র ম্যাডাম কে মনে হচ্ছে খুব খুশি!”
“হুঁ হুঁ অনেক খুশি।কাল জার্মানি যাচ্ছি,ইউ নো আমার গ্রেমার কাছে ।”
রুদ্র হতাশ হলো, হয়তো সেই এই মেয়েটার মনে জায়গা করতে পারেনি!
“ওহ্, তাহলে তো ভালোই।”
তৎক্ষণাৎ কেয়া বলে উঠে।
“তবে হ্যাঁ আপনাকে নিকি কে খুব মিস করব।”
রুদ্র শব্দ বিহিন হাসলো।
“আমাকে মিস করার কী আছে?”
কেয়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, মিস্টার হ্যান্ডসাম মনে হচ্ছে রেগে আছে।
“পরে বলবো,বাই দ্যা ওয়ে আজকে তো লাস্ট দিন চলুন না কোথাও ঘুরে আসি?*
রুদ্রর মনটা এমনিতেই খারাপ, বেশীক্ষণ কেয়ার কাছাকাছি থাকলে আরো খারাপ হয়ে যাবে।
“না সিনিয়র আজকে না, আমি বরং রুমে যাচ্ছি।”
কেয়া রুদ্রর হাত টেনে ধরে।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড মিস্টার হ্যান্ডসাম?কী হয়েছে আপনার? বলুন না প্লিজ!”
রুদ্র আবারও নিজ স্থানে বসে পড়ল।
“কিছু হয়নি।”
“বলুন বলুন কী হয়েছে?”
কেয়ার এত জোরাজুরিতে বিরক্ত হলো রুদ্র, নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু পারলো না । আকস্মিক ভাবে কেয়ার বাহু চেপে ধরে।
“আমাকে কী তোমার ইডিয়ট মনে হয়?যখন যা ইচ্ছে এসে বলবে?মনে তো জায়গা দাও নি তাহলে এসব করার মানে কি?”
কেয়া ব্যথা পাচ্ছে, ঠোঁট উল্টে ফেলেছে।এই বুঝি কেঁদে দেবে! রুদ্রর বলিষ্ঠ হাতের চাপে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো কেয়া।
“মিস্টার হ্যান্ডসাম আমি ব্যথা পাচ্ছি!”
রুদ্র হু শে ফিরেছে, তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিল ওর হাত।
“স্যরি কেয়া, আমি.. সত্যি আমি স্যরি।”
কেয়া অপেক্ষা করলো না,এক প্রকার দৌড়ে বাগান থেকে বেরিয়ে গেল। রুদ্র চেয়েছিল ওকে ডাকতে, কিন্তু ডাকতে পারলো না। মেয়েটা কে হা’র্ট করে ফেলেছে! রুদ্র ভেতরে গেল তড়িঘড়ি করে,কাল চলে যাবে আর সে আজকে ওকে কষ্ট দিয়েছে। এটা মোটেও ঠিক কাজ করেনি!
ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখলো আফসানা সোফায় বসে টিভি দেখছেন,আর নিকি টেবিলে বসে আছে।আর কেউ নেই আপাতত। রুদ্র বুঝতে পারলো কেয়া উপরে নিজের রুমে গিয়েছে! রুদ্র বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে উপরের রুমে যেতে লাগলো।নিকি রুদ্র কে চিন্তিত দেখে শুধোয়।
“ভাইয়া কি হয়েছে? চিন্তিত দেখাচ্ছে!”
রুদ্র যেতে যেতেই বললো।
“না কিছু হয়নি, একটু কাজ আছে তাই।”
নিকি আর কিছু বললো না। রুদ্র উপরে গিয়ে কেয়ার রুমে গেল। দরজা প্রথম থেকেই খোলা আছে, রুদ্র ন’ক করলো।
“কেয়া?কেয়া!”
ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ পেলো না, রুদ্র কিছু না ভেবেই ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে গিয়ে সে চমকে গেল, পাশে জামা কাপড় ছড়িয়ে আছে।পরণে কালো রঙের একটা টাওয়েল জড়িয়ে আছে কেয়া।সে হয়তো সবে চেঞ্জ করে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছে!কেয়া মোটেও আশা করেনি রুদ্র এই মূহুর্তে তার রুমে আসবে।
রুদ্র হা হয়ে তাকিয়ে আছে, ফর্সা শরীরে কালো রঙ টা বেশ মানিয়েছে।কেয়া পিটপিট চোখ করে তাকালো,কী বলবে বুঝতে পারছে না। কিছুটা আমতা আমতা করে বলল।
“ওই আসলে আমি,..ফ্রেশ হতে, আপনি….
কেয়া কিছুই গুছিয়ে বলতে পারছে না, বারংবার আটকে যাচ্ছে। রুদ্র এক পা দু পা করে এগিয়ে এলো,কেয়া তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। রুদ্র এসে খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো,কেয়া ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। রুদ্র আলতো করে কেয়ার গালে গাল স্পর্শ করে, শীতল গালে উষ্ণ গালের স্পর্শে ক্ষী’ণ কেঁপে উঠলো সে।
“আই অ্যাম স্যরি সিনিয়র!রাগ করতে চাইনি।”
কেয়া চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে শুধোয়।
“হঠাৎ.. রাগের কারণ?”
“তোমাকে পছন্দ সিনিয়র, চলে গেলে পেইন ফিল হবে।তাই।”
কেয়া এবারে হয়তো কিছুটা লজ্জা পেলো, রুদ্র আলতো করে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আবেশে আবারো চোখ বুজে নিল কেয়া, রুদ্র কিছুটা বেসামাল হলো, স্পর্শ করলো কেয়ার শীতল দেহখানি।কিয়ৎক্ষণ পর নিজেই সরে গেল,ভেজা চুল গুলো লেপ্টে আছে কেয়ার কপালে। রুদ্র চেয়ে রইল ক্ষণকাল অতঃপর হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।
ল্যাকেজ গুছিয়ে নিয়েছে উৎসা, আজকেই শেষ দিন এখানে। প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে নিয়েছে,সব কিছু রেখে ড্রয়িং রুমে গেল উৎসা, আপাতত পানি খেতে হবে। টেবিলের জগ খালি! কিচেনে গেল পানি আনতে, আচমকা এসে কেউ ওর হাত চেপে ধরলো।
“মামী!”
“এই শুন যাচ্ছিস যা, কিন্তু হ্যা যদি এটা ভেবে থাকিস ঐশ্বর্যের ঘাড়ে চেপে বসবি আর তার পর আমাদের ঘাড়ে। তাহলে বলব তোর ধারণা ভুল!”
আফসানার কথায় রাগে শরীর জ্ব’লে উঠে উৎসার।
“তুমি সবসময় নিজের মতো করে সবটা ভেবে নিও না মামী! আমি ওরকম কিছু ভাবিনি!”
আফসানা তেতে উঠলেন।
“ভালো কথা ভাবিস নি, কিন্তু যদি ভাবার ভুল করছিস তাহলে…. ভুলে যাবি না তোর বোন আমাদের এখানে থাকে!যদি উল্টো পাল্টা কিছু হয় তাহলে তোর বোনের সাথে কী হবে তুই ভাবতেও পারবি না।”
আফসানা এক প্রকার হু’ম’কি দিয়ে চলে গেল, আফসানা এতটা খারাপ হতে পারে তা ভাবনার বাইরে ছিল উৎসার। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো এক রাশ দীর্ঘ শ্বাস।
দেখতে দেখতে দিন পেরিয়ে রাত হলো, ধীরে ধীরে ওদের যাবার পালাও ঘনিয়ে আসছে।এই তো কিছুক্ষণ আগেই ঝগড়া করেছে উৎসা।সে আলাদা ভাবে যাবে, কিন্তু ঐশ্বর্য তো ঐশ্বর্য!সে তার প্রাইভেট জেট করে যাবে, ফলস্বরূপ তাকেও ওর সাথে যেতে হবে। উৎসা রিতিমত কান্না কাটি জুড়ে দিয়েছে! কিন্তু না ঐশ্বর্য ঘাড় ত্যা’রা,সে বলেছে তার মানে যেতেই হবে।
রুমে এসে রাগে ফুঁসছে উৎসা, একদিকে ঐশ্বর্য, অন্য দিকে আফসানা। কোন দিকে যাবে সে?
“সুইটহার্ট!”
ঐশ্বর্যের কন্ঠস্বর শুনে মৃদু কেঁপে উঠলো উৎসা, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য এসে তার সামনে বসে গেল।
“উফ্ কিছু ফিল হচ্ছে!”
ঐশ্বর্যের লাগামহীন কথাবার্তা শুনে শিরায় শিরায় র’ক্তে’র প্রবাহ মান যেনো বেড়ে যায়।
“উফ্ চুপ করুন এত খারাপ কেন আপনি?”
“বেইবি লিসেন না একটু পিচ দিতে পারো না?”
উৎসা ঘাবড়ে গেল।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরীর সবসময় অস’ভ্য কথাবার্তা!”
ঐশ্বর্য আচমকা একটু ঝু কে গেল উৎসার দিকে,উৎসা সেই মাপ অনুযায়ী পিঠ বাঁকিয়ে নিল পিছনের দিকে।
“উফ্ রেড রোজ আমি যদি শান্তি না পাই তাহলে….
ঐশ্বর্য উৎসার কপাল থেকে স্লাইড করতে করতে নিচের দিকে এগুতে লাগলো।
“ঠিক কোথায় যে অশান্তি দেব তার ঠিক নেই, আহ্ আই মিন ইট। ট্রাস্ট মি আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ সুইটহার্ট।”
উৎসা গভীর নিঃশ্বাস টেনে আকস্মিক ভাবে ঐশ্বর্যের হাতের আঙ্গুলে কা ড়রে দেয়। ঐশ্বর্যের ভাবান্তর নেই, ঐশ্বর্য আঙুলের উপর স্পর্শ করলো। জায়গাটায় দাগ বসে গিয়েছে উৎসার দাঁতের। ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,উৎসা ভেবেছিল হয়তো ঐশ্বর্য ব্যথা পাবে! কিন্তু না তা হলো না। ঐশ্বর্য আরো একটি কান্ড ঘটিয়ে বসলো, উৎসার বাইট করা জায়গায় ঐশ্বর্য ঠোঁট ছোঁয়ায়, শুধু তাই নয়।জিভা দিয়ে কিছুটা স্পর্শ করে, উৎসা লজ্জায় ম রি,ম রি অবস্থা!লোকটা এতটা লজ্জাহীন কেন?
রেড রোজ ২ পর্ব ২৪
ঐশ্বর্য মা’দক’তা মেশানো স্বরে বলে।
“আজকের জন্য ছাড় ছিলাম,তবে কাল রাতে তুমি শেষ।ইউ আর ফিনিশ!”
উৎসা ভীত নয়নে চেয়ে আছে , ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে।
“কাল যেতে যেতে পুরো দিন চলে যাবে, তুমি টায়ার্ড হয়ে যাবে! কিন্তু আমি তো টায়ার্ড হই না এত সহজে!”
ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে উৎসার নাকে নাক ঘষে ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“গুড নাইট বেইবি।গেট রেডি।”
উৎসা শুকনো ঢোক গিললো, এবার তার কী হবে?