রেড রোজ ২ পর্ব ৩৪

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৪
ফারহানা নিঝুম

এক্সাম শুরু হয়েছে উৎসার, সেও জোর কদমে পড়াশোনা করছে। এদিকে অনেক দিন পর বাড়ি থেকে বের হয়েছে মিহি, প্রায় সই সবার সঙ্গে ঘুরতে বের হয় সে। জার্মানির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং অনেক গুলো সুন্দর জায়গা ঘুরে এসেছে এই পর্যন্ত।
সকাল বেলা সাড়ে নয়টা ছুঁই ছুঁই।মিহি আর নিকি মিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। ঐশ্বর্য কে দিয়ে নিকি বলেছে মিস মুনা কে আসতে মানা করে দিতে।উনার কিছু দিন ছুটির প্রয়োজন।ওরা যখন আছে তাহলে কিছুদিন ওরাই সবটা করে নিতে পারবে। ঐশ্বর্য চায় না তার বোনেরা এসব করুক,সে না করেছিল। কিন্তু নিকি জোর করেছে, ফলস্বরূপ ঐশ্বর্য মিস মুনা কে দশ পনেরো দিন আসতে না করেছেন।
ব্রেকফাস্ট রেডি করে টেবিলে দিয়ে দিয়েছে নিকি,মিহি কিচেনে আছে।নিকি সব কিছু রেখে উৎসার রুমে গেল।

“উৎসা?”
একবার ডাক দিতেই উৎসা এসে দরজা খুলে দিল।
“হ্যা আপু বলো।”
নিকি উৎসার এলোমেলো অবস্থা দেখে হতাশ হলো, মেয়েটা যে হারে পরিশ্রম করছে তাতে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিছু দিনেই।
“কী এসব?এত পড়তে হবে না,চল নিচে।”
উৎসা ধীর পায়ে নিচে গেল, সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে চোখ পড়ল সামনের দিকে। অফিস গেট আপে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য। উৎসা চোখ সরিয়ে নিল, ইদানিং তার কেমন জানি লাগে ঐশ্বর্যের দিকে তাকালে? উৎসা নিচে যেতেই কলিং বেল বেজে উঠল,নিকি যেতে চাইল। তৎক্ষণাৎ উৎসা বলে উঠে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আমি যাচ্ছি।”
উৎসা গিয়ে মেইন ডোর খুলে দিতেই জিসান আর কেয়া নজরে এলো।
“হাই কিউট গার্ল।”
“হাই আপু। ভাইয়া এসো।”
দুজনে ভেতরে যেতেই ঐশ্বর্য আর জিসান ম্যানলি হাগ করলো।সেই মূহূর্তে রুদ্র নিচে আসে।কেয়া কে দেখে চোখ দুটো ছোট ছোট করে নিল।কেয়া রিতিমত মুখ বাঁকিয়ে নিকির দিকে এগিয়ে গেল।
নিকি জিসান কে রাগানোর জন্য বলে উঠে।
“সকাল সকাল চলে এসেছে ইংরেজের বাচ্চা!”
জিসান হা হয়ে গেল।

“ও হ্যালো এটা আমাদের বেস্ট ফ্রেন্ড এর বাড়ি।যখন তখন আসতে পারি।”
নিকি ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“এটা আমার ভাইয়ের বাড়ি।”
উৎসা বেশ মজা পাচ্ছে ওদের ঝগড়া দেখে, মাঝে মধ্যে খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। এদিকে আরো একজন যে তার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা সে লক্ষ্য করেনি। আকস্মিক ঐশ্বর্য কমফোর্ট জোন থেকে একটা চাদর এনে ওর গায়ে দিয়ে দিল। উৎসা মুখ তুলে তাকালো। ঐশ্বর্য কেমন গম্ভীর মুখ করে আছে, ঐশ্বর্য এই ভালো তো এই খারাপ!কখন কী হয় কিছুই বোঝা যায় না।
মিহি কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো।
“সবাই খেতে বসো।”

একে একে সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসে, জিসানের এখানে আসার মূল কারণ হলো অফিসের কাজ।আজকে রাজেশ চৌধুরী বলেছে একটা জরুরী মিটিং আছে ওদের।সেই জন্য ঐশ্বর্য আর জিসান এক সঙ্গেই যাবে।কেয়া একা একা হোমে বোর হচ্ছিল,তাই চলে এসেছে।
উৎসা একটু পরে কলেজের জন্য বেরিয়ে যাবে।কাল তার লাস্ট এক্সাম, এরপর এক মাস ছুটি। উফ্ শান্তি।
খাবার টেবিলে হাসি ম’স্ক’রা চলছে, জিসান আর ঐশ্বর্যের খাওয়া প্রায় শেষ। দুজনেই উঠে গেল।
“নিকি সব কিছু দেখে রাখিস।”

নিকি উপর নিচে মাথা দোলায়, ঐশ্বর্য রুদ্র কে ইশারা করে ওদের টেক কেয়ার করতে। রুদ্র বুঝে গেল।
মিহি সবে খেতে বসলো, অকস্মাৎ ঐশ্বর্য ঝু কে উৎসার গালে ঠোঁট ছোঁয়ায় তাও সবার সামনে।না
মিহি ওখানেই থেমে গেল,বাকিরা মুখ টিপে হাসে। এদিকে উৎসা আ’হাম্ম’ক বনে গেল। ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।
“ইয়াম্মি ইয়াম্মি।”
উৎসা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,কেয়া শব্দ করে হেসে উঠলো। জিসান বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শেইম লেস ম্যান।”

জিসান বের হতেই ঐশ্বর্য বেরিয়ে গেল।মিহি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে উৎসার দিকে। উৎসা এবারে বলবে কী? অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ফাঁ’সিয়ে দিয়ে গেল!
“এসব কি হচ্ছে? উৎসা ঐশ্বর্য এটা….
নিকি ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠে।
“মিহি আমি তোকে সবটা বলছি।তুই প্লিজ উৎসা কে এখন যেতে দে ওর এক্সাম আছে।”
উৎসা তড়িঘড়ি করে উঠে চলে গেল।
“কী হচ্ছে কেউ বলবে আমাকে?”
নিকি রুদ্রর দিকে তাকালো, রুদ্র লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠে।
“দেখ মিহি তুই তো আগে থেকেই জানিস ভাইয়ের সঙ্গে উৎসার বিয়ে হয়েছে।”
“হ্যা তো? সেটা তো বাতিল হয়ে গেছে।”

“এখানে আসার পর আবার বিয়ে করেছে ভাইয়া উৎসা কে।”
“কি?”
মিহি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।
“কী বলছো এসব?”
“হ্যা, ওদের আবার বিয়ে হয়েছে।”
রুদ্র সবটা খুলে বলে মিহি কে,মিহি স্তম্ভ হয়ে গেল।এত বড় কথাটা লুকিয়ে রেখেছে উৎসা!

এক্সাম শেষে বাড়িতে ফিরেছে উৎসা,কেয়া আর নিকি রুদ্রর সাথে বের হয়েছে।মিহি কে কয়েক বার বলেছিল আসতে, কিন্তু সে আসেনি। সকাল থেকে মুখ ভার করে বসে আছে,তার বোন নাকি এত বড় কথা লুকিয়ে রেখেছে!
কলিং বেল চাপতেই দেখলো দরজা খোলা আছে। উৎসা ভেতরে গিয়ে লক করে দিল,পুরো বাড়ি চুপচাপ।
উৎসা ব্যাগ রেখে উপরের রুমে গেল,মিহিথ রুমে উঁকি দিয়ে দেখে সে বসে আছে। উৎসা অপ’রাধীর ন্যায় ভেতরে প্রবেশ করে।
“আপু!”

মিহি এক বারের জন্য মুখ তুলে তাকায়, অতঃপর ফের উদাস হয়ে বসে রইল।
“আপু প্লিজ আমি স্যরি। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি।”
মিহি তার পরেও চুপচাপ! উৎসা এসে পাশে বসলো তার।
“আপু শুনো না!”
“কথা বলিস না আমার সাথে, কিছু শুনব না।”
মিহি রাগান্বিত স্বরে বলে উঠে,উৎসা অস্থির হলো।
“আপু শুনো না আমি নিজেই বুঝতে পারিনি প্রথমে তোমাদের কী বলব?”
“আমাকে বল তো ঐশ্বর্য সত্যি তোকে চায় তো?”
উৎসা কিঞ্চিৎ লজ্জা নিয়ে বলে।
“প্রথমে মনে হতো না কিন্তু এখন বুঝলাম আমাকে চায়।”
মিহি যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।

“তুই ভালো থাকলেই চলবে,তুই তো জানিস আমার সাথে কী হয়েছে? আমি চাই না তোর সাথে এমন কিছু হোক?”
উৎসা মিহির হাত ধরতেই মৃদু কঁ’কিয়ে উঠলো মিহি।
“এটা কী হয়েছে আপু?”
মিহি হাতের ব্যথা লুকাতে চাইলো,কিছু দিন আগেই আফসানা আকস্মিক ওর সাথে খারাপ আচরণ করেছে। তখনই হাত চেপে ধরেছিল, আফসানার নখ রিতিমত গেঁথে গিয়েছে?
“তেমন কিছু না একটু….
“এটা কি? এটা তো স্পষ্ট নখের?কে করেছে এসব?”
“ছাড় না তুই!”
উৎসা গম্ভীর স্বরে বলে উঠে।
“আফসানা মামী তাই না?”
মিহি মৃদু হাসলো।
“এত কিছু ধরলে হয় না উৎসা,ছাড় তো!”

উৎসা উঠে দাঁড়ালো, নিজের ঘরে চলে গেল।রাগের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে,সে ওখানে নেই তাই আফসানা এত কিছু করছে তার বোনের সঙ্গে।আজ যদি সে ওখানে থাকতো তাহলে? কখনো তার বোন কে এভাবে আ’হ’ত করার সাহস পেতো না!এসব কিছু কেন করছে আফসানা?
উৎসা রাগের মাথায় ফ্লাওয়ার বাস ফেলে দিল, তৎক্ষণাৎ মস্তিষ্কে হা না দিল আফসানার সাবধান বার্তা।
“আমার জন্যেই তো এসব হচ্ছে! আমি যদি ঐশ্বর্যের কাছাকাছি না আসতাম তাহলে এসব হতো না। আমার জন্য সব হয়েছে! আমি,, আমাকে বলেছিল মামী ওনার থেকে দূরে থাকতে। না হলে আপুর সাথে খারাপ করবে,উনি করেছেও!”
উৎসা অস্থির হয়ে উঠেছে, মাথা কাজ করছে না তার। কেঁদে ফেলেছে সে,সব কিছু কেমন অগোছালো হয়ে উঠেছে তার।

বার্লিনের রাতের প্রথম প্রহর যেন এক অপার্থিব মায়ার জগৎ। শহরটি আলোকিত হয় অসংখ্য ঝলমলে ল্যাম্পপোস্ট।
গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে নিকি।সে একা যাচ্ছে,আসলে একা আসার একটা কারণ আছে। রুদ্র আর কেয়ার সঙ্গে বের হয়েছিল নিকি। কিন্তু রুদ্র আর কেয়া কে যা দেখলো তাতে তাদের খানিকটা স্পেস চাই।তাই ভেবে নিকি জোরপূর্বক গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে।
বার্লিনের রাস্তায় তখন মানুষের চলাচল ধীরে ধীরে কমে আসছে। আধুনিক স্কাইলাইনের সাথে মিশে থাকে ইতিহাসের গন্ধ। ভিক্টরি কলামের মাথায় জ্বলজ্বলে সোনালি মূর্তি যেন তার জাদু ছড়িয়ে দিচ্ছে চারপাশে। ঠান্ডা হাওয়ার পরশে ঝুলন্ত পাতাগুলো খেলা করছে, আর কফি শপগুলোতে উষ্ণতার আমন্ত্রণ।
একটা ক্যাফেতে মুখোমুখি বসে আছে রুদ্র এবং কেয়া।
রুদ্র তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ, এদিকে কেয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে। রুদ্রর বেজায় রাগ হলো, মেয়েটা তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।কী আশ্চর্য একজন মানুষ তার সামনে বসে আছে তা দেখছেই না?
রুদ্র এবারে কেয়ার হাত থেকে ফোন টেনে নিল।

“আরে হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস?”
“আমার কথা আছে!”
কেয়া কপাল কুঁচকে নিল। রুদ্র ফের বলে।
“তুমি বলেছিলে এখানে আসলে স্যরি এক্সেপ্ট করবে।নাও এসে গেছি!”
“ঠিক আছে তো এখন কী চাই? আমি তো স্যরি এক্সেপ্ট করে নিয়েছি।”
রুদ্র বাঁকা হাসলো।
“অন্য কিছু চাই, এতটা জার্নি করে তো অবশ্যই এমনি এমনি আসিনি!”
কেয়া অকপটে শুধোয়।

“দ্যান?”
“কাম উইথ মি।”
রুদ্র উঠে দাঁড়াল, ঠিক সেই সময় কেয়াও উঠে দাঁড়ালো।
“আরে কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“চলো দেখতে পাবে।”
কেয়া রাগে এগিয়ে গেল, ভেতরের দিকে ওয়াশ রুমে যাওয়ার ফ্লোর, তার পাশে আরো একটি রেস্ট রুম।
“আমরা এখানে কেন এলাম?”
রুদ্র ডোর লক করে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে কেয়ার।
“এটা…
রুদ্র আঁকড়ে ধরে কেয়ার নরম তুলতুলে অধর।চুষে নিচ্ছে প্রেম সুধা,কেয়া কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল।তার সাথে কী ঘটছে তা এক মূহুর্তের মধ্যে ভুলে গিয়ে চেপে ধরে রুদ্রর শার্টের কলার। রুদ্র অনেক খানি কাছে চলে আসে কেয়ার, নিঃশ্বাস একে অপরের মুখে আঁচ’ড়ে পড়ছে।
মিনিট দুয়েক পর রুদ্র ছেড়ে দিল কেয়া কে।কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। রুদ্র আলতো হাতে কেয়ার ঠোঁট মুছে দিয়ে বলে উঠে।

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৩

“আজকের মতো এটুকুই ওকে। পরের গুলো পরে শো’ধ তুলে নেব।”
রুদ্র ডোর ওপেন করতেই কেয়া রুদ্রর হাত টেনে ধরে। তার মাথা ঘুরছে, কেয়ার দেহ খানা জড়িয়ে ধরে রুদ্র।
“আর ইউ ওকে?”
“নো।”
কেয়া তাকিয়ে আছে,তার চোখ অন্য রকম। রুদ্র আবারো চুমু খেলো কেয়ার ঠোঁটে।
“আমি আছি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

রেড রোজ ২ পর্ব ৩৫