রেড রোজ ২ পর্ব ৩৫
ফারহানা নিঝুম
“হোয়াট হ্যাপেন্ড? হয়েছে টা কী বলো আমায়?”
ঐশ্বর্য অফিস থেকে ফিরেছে আধ ঘন্টা হলো, ফিরেই দেখলো পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে আছে। অবশ্য হওয়ার কথাই, এখন রাত দেড়টা বাজে, ঐশ্বর্য ভীষণ টায়ার্ড। কিন্তু তার পরেও উৎসার রুমে যেতে সে ভুলেনি।
“রেড রোজ?”
ঐশ্বর্য দরজা ধাক্কিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো, উৎসা হাটুর ভাঁজে মুখ গুজে বসে আছে। ঐশ্বর্য ভেতরে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালো,উৎসা মুখ তুলে তাকায় ফর্সা পা দুটোর দিকে।এবারে মুখ তুলে দেখে ঐশ্বর্যের ক্লান্ত মুখশ্রীর পানে। ঐশ্বর্য চমকায়, উৎসার কান্নারত মুখ দেখে ভ্রু কুঁচকে নিল।
“সুইটহার্ট হোয়াট হ্যাপেন্ড? কাঁদছো কেন রোজ?”
উৎসা নিশ্চুপ,সে ঐশ্বর্যের কাছাকাছি থাকতে চায় না!সে ওর আশেপাশে তাকে তার জন্য মিহির লাইফটা শেষ হয়ে যাবে।
“আপনি প্লিজ চলে যান, আমার ভালো লাগছে না।”
ঐশ্বর্য অবাক হলো,সেও উৎসার সামনাসামনি বসে।নরম তুলতুলে হাতখানি নিজের হাতে চেপে ধরে।
“হেই কী হয়েছে? কান্না কেন?”
উৎসা মুখ ঘুরিয়ে নিল, ঐশ্বর্য চুলের ভাঁজে হাত গলিয়ে নিজের কাছাকাছি টেনে নেয় উৎসার মুখ।নাকে নাক ঘষে ফের বলে।
“বেইবি টেল মি না হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
উৎসা অহেতুক রাগ দেখিয়ে বলে উঠে।
“ডোন্ট টাচ মি।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
উৎসা তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ায়। ঐশ্বর্যের সঙ্গে এমন আচরণ করতে তার ভেতর টা ভে ঙে যাচ্ছে।বুকের ভেতর টা মোচড় দিচ্ছে, কিন্তু তার পরেও উৎসা চোখ মুখ শক্ত করে বলে উঠে।
“আপনি আমাকে কখনো ছুঁবেন না। ক্যারেক্টারলেস মানুষ একটা!”
ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত পিষে,রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।আপাতত সে উৎসার গায়ে হাত তুলতে চাইছে না।
“লিসেন হয়েছে টা কী? না বললে বোঝব কী করে?”
“কিছু হয়নি, আমি আপনাকে স’হ্য করতে পারছি না। আমি যেতে চাই!”
ঐশ্বর্য কন্ট্রোললেস হলো এবারে, উৎসার বাহু চেপে ধরে।
“প্রবলেম কী?যেতে চাই যেতে চাই,জাস্ট স্টপ ইউর ফা’কিং ড্রামা।”
উৎসা ব্য’থায় কঁ’কি’য়ে উঠলো।
“ব্যথা পাচ্ছি আমি।ছাড়ুন আমাকে!”
ঐশ্বর্য বাহু ছেড়ে দিল, উৎসা ক্ষীণ চিৎকার করে উঠল।
“আমি আপনার স্ল্যা’ট হতে চাই না বুঝেছেন। আমাকে ইউজ করার প্রচেষ্টা করবেন……
ঐশ্বর্য সজোরে থা’প্প’ড় বসালো উৎসার গালে।
“ষ্টুপিড আমি তোকে স্ল্যা’ট বানিয়েছি?নো নো বানাতে চাই তাই তো? সিরিয়াসলি এত কিছুর পর এটা মনে হচ্ছে?”
উৎসার শরীর কাঁপছে,চোখে মুখে যেন অন্ধকার দেখছে।
উৎসা তার পরেও ঐশ্বর্যের কলার চেপে ধরে।
“আপনি আমাকে যখন তখন মা’রতে পারেন না। আমি আপনাকে লাস্ট বার ওয়া’র্নিং করছি।”
ঐশ্বর্য দু আঙ্গুলে উৎসার গাল চেপে ধরে।
“একশো বার হাত তুলব,বিকজ ইউ ডিজার্ভ ইট।আই কান্ট টেইক দিস,জাস্ট ইউর ফা’কিং ড্রামা।”
উৎসা পাশে থাকা টেবিলের উপর থেকে গ্লাস তুলে ফ্লোরে ফেলে। তৎক্ষণাৎ ঝং’কার তুলে তা টুকরো টুকরো হয়ে গেল।
“আই হেইট ইউ,আই জাস্ট হেইট ইউ!”
ঐশ্বর্য আর উৎসা দুজনেই হাইপার হয়ে আছে।
ঐশ্বর্য এবারে গলা চেপে ধরে।
“ইউ হেইট মি অর লাভ মি আই ডোন্ট কেয়ার।উই আর লিগ্যালি ম্যারিড, আমি যা বলব তাই হবে। এন্ড এন্ড এন্ড মোস্ট ইম্পোর্টেন্ট তুই না চাইলেও আমার সাথে থাকবি।”
উৎসা কেশে উঠে, নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে। ঐশ্বর্য আরো একটি কান্ড করলো, উৎসার ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট চেপে ধরে। আজকে সে কোমল ভাবে স্পর্শ করছে না, ঐশ্বর্যের আচরণে হিং’স্র’তা প্রকাশ পাচ্ছে ।
উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে ধাক্কা দিচ্ছে,সরাতে পারছে না।
জার্মানির ভোরের প্রকৃতি এক অনন্য রূপ তুলে ধরে। দিনের এই প্রথম প্রহরটি শান্ত, স্নিগ্ধ, এবং এক ধরণের সুষমায় পূর্ণ।গ্রামাঞ্চলে পাখিদের কাকলি জার্মান ভোরের সুরেলা এক ধ্বনি। বিশেষত ব্ল্যাকবার্ড বা নাইটিঙ্গেলের গান শোনা যায়।
নিস্তব্ধ এই শহর আবার জেগে উঠছে ।হিম শীতল আবহাওয়া, অনেকেই এই মনোমুগ্ধকর ভোর উপভোগ করতে গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে বের হয়েছে।
পুরোটা রাত নির্ঘুম ভাবে কে টেছে ঐশ্বর্যের। রুমের এক কোণে ডিভানের উপর বসে আছে,চোখের কার্নিশ লাল হয়ে আছে তার। নাকের নিচ ঘষছে বারংবার,হ্যা সে ড্রা’গ নিয়েছে। কিছুটা শান্তি সেও ডিজার্ভ করে।
ঐশ্বর্যের মাথা এলোমেলো লাগছে এই মূহুর্তে মন চাচ্ছে উৎসা কে গিয়ে চেপে ধরতে। জোরপূর্বক তার সাথে ইন্টিমেট হতে, অভ্যিয়েসলি হক আছে তার।ছে ফিলিংসের কোনো মূল্য নেই!
ঐশ্বর্য সেই আগের ন্যায় টা’ল মা’টাল হয়ে পড়ে আছে ডিভানের উপর।
সকাল সকাল পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে গেছে উৎসা,নিকির সঙ্গে দেখা হয়েছে।নিকি অবাক হলো উৎসার অবস্থা দেখে,সে বেশ বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে। উৎসা বরাবরের মতো এড়িয়ে চলে গেল,নিকিও আটকায় নি। আপাতত পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে আসলে কথা বলবে সে!
বাড়ি আজকে পুরো ফাঁকা, শুধু নিকি আর মিহি আছে। অবশ্য মিহি ঘুমাচ্ছে, কিছুটা অসুস্থ সে।
ছাদের দিকে গেল নিকি,এই দিকটা অসম্ভব সুন্দর দেখতে। ছোট ছোট গাছ লাগানো,পাশে সোফা সেট। ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিকি,টাইমা’র সেট করে রেখেছে। নিজের কয়েকটা ছবি তুলে নিচ্ছে সে।
এখানে এসে ক’টা দিন শান্তিতে থাকতে পারছে অন্তত! কিন্তু দেশে তো থাকলে তো নিশ্চয়ই আফসানা বিয়ে বিয়ে করে তার মাথা খেয়ে নিত!
দুপুর বারোটা ছুঁই ছুঁই,এক ধ্যানে কাজ করছে ঐশ্বর্য। জিসান কেবিনে প্রবেশ করে। ঐশ্বর্যের গুরুগম্ভীর মুখ দেখে বলে উঠে।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড ব্রো? আজকে তোকে এত অ্যাংরি দেখাচ্ছে কেন?”
ঐশ্বর্য কপাল চুলকে বলে।
“নাথিং।”
“আচ্ছা ব্রো তোর মনে হয় না এখন আমার বিয়ে করা উচিত?”
ঐশ্বর্য ভ্রু উঁচিয়ে বলে।
“আচ্ছা তাই নাকি!”
জিসান লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে বলে উঠে।
“হ্যা এইজ দেখ আমার!তাই এখন মনে হচ্ছে বিয়েটা করেই ফেলি।”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“আচ্ছা তাহলে হঠাৎ করে বিয়ের কথা মনে পড়লো কেন? এখনও তো শেইম লেস গার্ল কেয়া কে বিয়ে দিস নি?”
জিসান অস্বস্তিতে পড়ে গেল।
“তা এটা নিকি কে দেখে নয়তো?”
জিসান লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলে।
“ব্রো ইউ নো না নিকি আমার জন্য কতটা ইম্পোর্টেন্ট!”
“ইয়া অফকোর্স।তা বলেছিস ওকে?”
“এখনো না!”
“সিরিয়াসলি?ও গড।”
জিসান হতাশ হলো, ঐশ্বর্য বলে উঠে।
“তুই এক কাজ কর প্যালেসে ফিরে যা, আপাতত ওখানে নিকি আছে কিছু একটা কর, সামথিং নিউ। এরপর বলে দে তোর লাভভভভভভ!”
ঐশ্বর্য শেষের কথাটা দুষ্টুমির সহিতে বলে উঠে।
জিসানের চোখ দুটো চকচক করে উঠে,ঠাস করে ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরে।
“থ্যাংক ইউ ব্রো।”
“ইয়াক ইয়াক আমি তোর মতো নই!”
জিসান তৎক্ষণাৎ সরে গেল।
“শেইম লেস ম্যান আমার পুরুষত্বের উপর আঙুল দেখাবি না!”
ঐশ্বর্য ব্যাক ব্রাশ করে বলে।
“ওকে দ্যান আমি পিঙ্কি ফিঙ্গার দেখাব।”
জিসান দাঁতে দাঁত চেপে ধরে, ঐশ্বর্য হো হো করে হেসে উঠলো। জিসান বেরিয়ে গেল দারুণ আইডিয়া খেলে গেছে মাথায়, এখন শুধু তা করার পালা।
সুইমিং পুলের পানিতে পা ডুবিয়ে এক পাশে বসে আছে উৎসা।চোখ মুখ জুড়ে ক্লান্তির ছাপ!নিজ ভাবনায় বি’ভোর সে। দৃষ্টি তার সুইমিং পুলের স্বচ্ছ পানিতে।
আকস্মিক অনুভব করে আরো একজনের অস্তিত্ব, ঐশ্বর্য এসে তার পাশেই পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে।
উৎসা এক পলক মুখ তুলে দেখে ঐশ্বর্য কে, ঐশ্বর্য তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নজরে এলো উৎসার ঠোঁটের কোণের দা’গ খানি, ঐশ্বর্যের আ’ঘা’তের চিহ্ন। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে সে, উৎসা ফের পানির দিকে দৃষ্টি ফেলে। ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ওর থুতনি ধরে নিজের দিকে মুখটা এগুলো। ঐশ্বর্য আলতো করে উৎসার গালে ঠোঁট ঘ’ষে,উৎসা চোখ দুটো বুঁজে নিল।
“অ্যাম স্যরি বেইবি। প্লিজ অ্যাম রিয়েলি ভেরি স্যরি।”
উৎসা চোখ বুজে নেয়, ঐশ্বর্যের হাত সরিয়ে দিলে ঐশ্বর্য আবারো চেপে ধরে। উৎসা অ’গ্নি চোখে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে, নিজের হাত মো’চড়াতে লাগলো। দুজনের মধ্যে টানাটানি হওয়ার কারণে আকস্মিক পুলের পানিতে দুজনেই পড়ে গেল।
“আহ্..
মৃদু শব্দ করে উঠে উৎসা, ঐশ্বর্য সুইমিং করছে। উৎসা এদিকে হাবুডুবু খাচ্ছে,সে সাঁতার জানে না। ইতিমধ্যেই কয়েক বার পানি খেয়ে ফেলেছে, ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।ধীর গতিতে এগিয়ে এসে উৎসা কে ঝাপটে ধরে।
“ছাড়বেন না ছাড়বেন না, ডু’বে যাব,,, আমি সাতার!”
ঐশ্বর্য আলগোছে জড়িয়ে ধরে উৎসা কে।সে জানে উৎসা সাঁতার জানে না।
“ইটস্ ওকে আছি তো আমি। ডোন্ট ওয়ারি!”
উৎসা ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে, এই বুঝি ডু’বে যেতো।হাত পা কাঁপছে, দু’জনে একে অপরের সাথে লেপ্টে আছে। ঐশ্বর্য উৎসার হৃদয় স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে,তার শরীরের কাঁপুনি টের পাচ্ছে! ঐশ্বর্য কন্ট্রোললেস হলো,কোমড় জড়িয়ে ধরে তার। উৎসা গগন কাঁপিয়ে কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্যের আকস্মিক স্পর্শে নুইয়ে যাচ্ছে।
“ছাড়ুন আমাকে অস’ভ্য রিক চৌধুরী লিভ মি।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“উফ্ যদি আমি ছাড়ি তাহলে কিন্তু!”
ঐশ্বর্য ছেড়েও দিলো উৎসা ডু’বে যাওয়ার ভয়ে ঝাপ্টে ধরে।
“বেইবি ইউ নো হোয়াট ইউ আর লুকিং সো প্রীটি ট্রাস্ট মি টু মাচ প্রীটি।”
উৎসা কিঞ্চিৎ চমকে গেল, ঐশ্বর্য ওর গালে স্লাইড করতে করতে বলে।
“হট, সে’ক্সি। আহ্ কন্ট্রোল হারাচ্ছি,আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ সুইটহার্ট।”
উৎসা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে, হৃদপিন্ড ধুকপুক করছে। ঐশ্বর্য উৎসার উদরে চাপ দেয়,উৎসা ঐশ্বর্যের ভেজা শার্ট আঁ’ক’ড়ে ধরে।
“প্লিজ প্লিজ!”
“গিভ মি অ্যা ফ্রেঞ্চ কিস!”
উৎসার চোখ দুটো বড়ো আকৃতির হয়ে গেল, ঠোঁট হলো কিঞ্চিৎ ফাঁক।
“কী?”
“ফ্রেঞ্চ কিস,পারো না?নো প্রবলেম আমিই করছি।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট এগুতেই উৎসা পালাতে চাইলো, ঐশ্বর্য চেপে ধরে আছে।
রেড রোজ ২ পর্ব ৩৪
“স্টপ।জাস্ট ওয়ানস মোর!”
উৎসা ছটপট করে, কিন্তু ঐশ্বর্য কি আদেও এগুলো পাত্তা দিলো? উঁহু সে নিজের কাজে ব্যস্ত, অতঃপর মিলিত হলো দুটি ঠোঁট। উৎসার শক্তি নেই, শরীরের ভার ছেড়ে দিতেই ঐশ্বর্য আঁ’ক’ড়ে ধরে।
