রেড রোজ ২ পর্ব ৩৯
ফারহানা নিঝুম
❝”আমার হৃদয়ের হৃদয় স্পন্দন তুই, এভাবে জ্বা’লিয়ে শেষ করছিস!আমার হৃদয় জুড়ে যেই ধ্বং’সলী’লা শুরু করেছিস তা শেষ করব আমি।”❞
ঐশ্বর্য সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে আছে,হাত দুটো ছড়িয়ে বিছানার দু পাশে। কাল থেকে উৎসা বাড়িতে নেই,ঠিক তখন থেকেই ঐশ্বর্য রুমে বন্দি করে রেখেছে নিজেকে।
ফোনে টুং শব্দ হতেই উঠে বসলো, নোটিফিকেশন অন করে কিছু একটা দেখতে পেলো। অবশেষে নজরে এলো ঐশ্বর্যের বাঁকা হাসি,চোখ দুটো তার ঝলঝল করে উঠেছে।ফোন রেখে দ্রুত ওয়ার্ডরোব থেকে টাওয়েল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।বেশ সময় নিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো, নিজের স্টাইলে তৈরি হয়ে নেয় সে।পরণে কালো রঙের জ্যাকেট, ভেতরে হোয়াইট শার্ট।পায়ে লুফার ।ব্যাক ব্রাশ করে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিল ঐশ্বর্য।
“বেইবি মিস ইউ সো মাচ। অ্যাম কাম ইন।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”
ঐশ্বর্য গাড়ির চাবি নিয়ে বের হলো। জিসান ঐশ্বর্য কে দেখে দৌড়ে এগিয়ে গেল।
“ব্রো মিস বাংলাদেশী কে পাওয়া যাচ্ছে না আর তুই নিজেকে ব’ন্দি করে রেখেছিলি?”
ঐশ্বর্য প্রত্যুত্তর করলো না, গাড়িতে গিয়ে বসলো। জিসান ফের শুধোয়।
“এক মিনিট এই সময় কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
ঐশ্বর্য একপেশে হাসলো।
“সুইটহার্ট কে আনতে।”
ঐশ্বর্য গাড়ি স্টার্ট দেয়।
জিসানের ঐশ্বর্যের কথা বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগল। অতঃপর যখন বুঝতে পারলো তখন এক ছুটে দৌড়ে নিকির কাছে গেল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“অ্যাংরি বার্ড লিসেন।”
জিসান রিতিমত হাঁপাচ্ছে! হঠাৎ জিসান কে এত হাঁপাতে নিকি ব্যস্ত কন্ঠে শুধোয়।
“কী হয়েছে আপনার? এভাবে হাঁপাচ্ছেন কেন?”
“রিক মিস বাংলাদেশী কে আনতে গিয়েছে।”
“কী?”
নিকি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।
“ওকে আনতে গিয়েছে মানে নিশ্চয়ই রিক জানে মিস বাংলাদেশী কোথায় আছে?”
নিকির চোখ দুটো চকচক করে উঠলো যেনো।
“সত্যি?তার মানে উৎসা ফিরবে আবার!”
নিকি ঝাপটে ধরে জিসান কে।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে,একে একে মানুষ জন নিজেদের নীড়ে ফিরছে।উৎসাও তেমন ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাসায় এলো। বাসায় পা রাখতেই কেমন অদ্ভুত ঠেকলো তার কাছে! দরজায় তালা দেওয়া, ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো উৎসা। আশ্চর্যের ব্যাপার দরজা বন্ধ করে পিছন ঘুরতেই আবেশে চোখ দুটো বুঁজে এলো।কড়া পারফিউমের সেই পরিচিত ঘ্রাণ, উৎসা চট করে চোখ খুলে তাকালো।এক প্রকার আ’তংক ছড়িয়ে পড়লো তার ভেতরে , ঐশ্বর্য কী এখানে আছে? উৎসা হাতের ব্যাগ রেখে পুরো কক্ষে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে নিল।নেই কোথাও নেই ঐশ্বর্য! উৎসা খানিকটা স্বস্তি পেলো। টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে পুরোটা শেষ করলো। ভীষণ গরম লাগছে তার,কী অদ্ভুত তার হলেই ঠান্ডায় জর্জরিত হয়ে যায় আর সকালেই ভ্যাপসা গরম!
উৎসা আলমারি থেকে টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে চলে গেল, মটরের সুইচ অন করে হাত মুখ ধুয়ে ফেললো। হাত মুখ ধুতে গিয়ে বার বার ওড়না পড়ে যাচ্ছিল। উৎসা ওড়না খুলে রডে ঝুলিয়ে রাখে, এখানেও বিপ’ত্তি ঘটে।জামার অনেক অংশ পানিতে ভিজে যায়, উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নিল। টাওয়েল নিতে পিছন ঘুরে চমকে উঠে, পিছুতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যেতে নিলে বলিষ্ঠ হাতের লোকটি তাকে কোমড় টেনে ধরে।
“আহ্…
“কুল ডাউন বেইবি,এত প্যানিক করলে চলে?”
“আআ,,, আপনি!”
ঐশ্বর্য এসেছে সেই কখন, ভেতরে ঢোকা তার জন্য কঠিন ব্যাপার নয়।কথা হচ্ছে ঢুকতে গিয়ে হাতে কেমন কালো পদার্থ লেগে গিয়েছে। ঐশ্বর্য আশেপাশে খুঁজ করলো ওয়াশ রুমের, অবশেষে পেলো। ভেতরে গিয়ে হাত ধুতে গিয়ে শুনতে পেলো কারো ভেতরে প্রবেশ করার। ঐশ্বর্য বেশ বুঝতে পারে উৎসা চলেই এসেছে, ঐশ্বর্য বেশ আরাম করেই হাত ধুতে লাগে। ঠিক সেই সময় ভেতরে আসে উৎসা,পিছনে ঐশ্বর্য কে একদম লক্ষ করে নি। ঐশ্বর্য দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সবটা দেখতে থাকে।
“আপনি এখানে কী করে এলেন।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো, দৃষ্টি বুলাচ্ছে উৎসার সম্পূর্ণ দেহে। উৎসার তৎক্ষণাৎ মনে পড়লো ওড়নার কথা,রডে হাত বাড়াতেই ঐশ্বর্য টেনে ধরে ওড়না। উল্টো নিজের গলায় ঝুলিয়ে নিল।
“উফ্ রেড রোজ মা’রা’ত্মক লাগছে। হট হট।”
উৎসা তম্বা খেয়ে গেল রিতিমত, বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো। ভিজে অবস্থা খারাপ তার, তার উপর ওড়না নেই। হাত বাড়িয়ে টাওয়েল নিল, ঐশ্বর্যও বেরিয়ে এলো।
উৎসার প্রথমেই বোঝা উচিত ছিল ঐশ্বর্য এখানে এসেছে,যখন তার পারফিউমের ঘ্রাণ পেয়েছিল।
“আপনি এখানে কেন এসেছেন? বেরিয়ে যান প্লিজ!”
ঐশ্বর্য পুরো কক্ষে দৃষ্টি বুলিয়ে দেখে, কেমন স্যাঁতস্যাঁতে ভেজা ভাব আর অদ্ভুত গন্ধ।
“উফ্ সুইটহার্ট এখানে থাকছো কী করে? চৌধুরী প্যালেসের কুইন এই ভাঙা বাড়িতে? সিরিয়াসলি?”
উৎসা বিরক্ত হলো।
“বাজে কথা বন্ধ করুন, আমি যা জিজ্ঞেস করছি সেটা বলুন। এখানে….
“সিক্রেট।”
উৎসা বেজায় ক্ষে’পে গেছে। তর্জনী আঙ্গুল তুলে শা’সানোর সহিতে বলে উঠে।
“আমি কিন্তু আপনাকে…
ঐশ্বর্য তৎক্ষণাৎ উৎসার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে।
“তুমি কিছু করার আগে আমি কিছু করি?”
ঐশ্বর্যের দুষ্টু কথায় আর বেসামাল হাতের স্পর্শে মুচড়ে যায় উৎসা।
“দেখুন আমি কিন্তু নিষেধ করছি।যান না এখান থেকে!”
“টেল মি দ্যা ট্রুথ এখানে কেন চলে এলে?”
উৎসা নিশ্চুপ,সে কখনো বলবে না কিছু।
“আমার ইচ্ছে,যান আপনি এখান থেকে।”
ঐশ্বর্য শুনলো না বরং আরো ঘনিষ্ঠ হলো,হাত স্পর্শ করছে উৎসার স্পর্শকাতর জায়গায়। উৎসা বেঁকে যাচ্ছে, ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিল। কিন্তু শক্তপোক্ত এই পুরুষ কে এক চুলও সরাতে পারেনি। ঐশ্বর্য জায়গা মত কা’ম’ড়ে দিল,ঠিক উৎসার চিবুকে। উৎসা চেঁচিয়ে উঠলো,হাত চলে গেল চিবুকে।
“আপনি কি মানুষ?”
“না ডেভিল ।”
ঐশ্বর্য ছেড়ে দিল,সরে গিয়ে বিছানার উপর বসে।
“আপনি কি চাইছেন? এখানে এসেও শান্তি নেই!”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“তোমার শান্তি আমার কাছে।”
উৎসা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নেয়,এই লোকটার সাথে কথায় পারবে না সে।
“আপনি বেরিয়ে যান এখান থেকে, আমার মোটেও ভালো লাগছে না।”
ঐশ্বর্য ভান ধরলো, অসহায় চোখে তাকায়।
“সুইটহার্ট তুমি চাও এই রাতের বেলায় আমি ড্রাইভিং করে যাই?ইউ নো না ইদানিং এক্সিডেন্ট হয় খুব বেশি!”
উৎসা আঁ’তকে উঠে, কিঞ্চিৎ ভয় পেলো। কিন্তু এই লোকটা বড্ড চালাক।
“আপনি না খুব চালাক, কিন্তু এবারে শুনবো না। আজকে রাতটা এখানে থাকুন। কিন্তু কাল যেতে হবেই হবে।”
ঐশ্বর্য ডেভিল মা’র্কা হাসলো, ইস্ রোজ তার একটা রাত দিয়ে দিল? উফ্ এরপর কী হবে?
উৎসা ভাবুক হলো।
“এক মিনিট আপনি এখানে এলেন কি করে?বাসে আসতে হয় আর নয়তো নিজের…
উৎসা থামলো তার মানে ঐশ্বর্য গাড়িতে এসেছে। কিন্তু সে তো গাড়ি দেখেনি সামনে!এমনিতেও সামনে এত বড় গাড়ি পার্ক করার মতো জায়গা নেই। উৎসা তড়িঘড়ি করে বাইরে গেল, পিছনের দিকে উঁকি দিয়ে দেখলো ব্ল্যাক মার্সিডিজ কার সাইড করে রাখা। উৎসা হতাশ হলো,চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল অতঃপর ভেতরে এলো।
“সুইটহার্ট এসব ছাড়ো আর আমার কাছে আসো, একটু রোমান্স করি।”
উৎসা আরেকটু সরে গেল।
“একদম না, আমি কিন্তু…
ঐশ্বর্য নিশ্চুপ,সে এই মূহুর্তে উৎসা কে রাগাতে চায় না। একটু রাতটা গভীর হোক এরপর না হয় ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী বেসামাল হবে!
মনে মনে ক্রূর হাসলো ঐশ্বর্য।
বাইরে বেতের সোফায় বসে আছে কেয়া, অনুভব করলো কেউ একজন এসে তার পাশে বসেছে। কেয়া পাশে দেখলো,তার পরিচিত মানুষ। মূহুর্ত অপেক্ষা না করে মানুষটির কাঁধে মাথা রাখলো।
“আচ্ছা মিস্টার হ্যান্ডসাম কিউট গার্ল কেন চলে গেল?”
রুদ্র তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো।
“এটা শুধু উৎসাই বলতে পারবে। ভাইয়া তো গিয়েছে ওকে আনতে, একবার আসুক এরপর এত বড় পা’ক নামির জন্য শাস্তি দেব।”
কেয়া মলিন মুখে শুধোয়।
“কিউট গার্ল কে মিস করছি প্রচুর।”
রুদ্র আলতো হাত ছুঁয়ে দিল কেয়ার গালে।
“আমার ভীষণ ইচ্ছে ছিল আমাদের রিলেশন নিয়ে কিউট গার্ল কে সব বলব।”
রুদ্র আলতো হাসলো।
“উহু আসলে বলবে। এখন চলো অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে।”
কেয়া আর কথা বাড়ালো না ভেতরের দিকে চলে গেল।
❝রাত যত গভীর হচ্ছে প্রভাত তত নিকটে এগিয়ে আসছে❞।ঘড়ির কাঁ’টা আড়াইটা ছুঁই ছুঁই,এ সময়েও ঐশ্বর্য আর উৎসা জেগে আছে। উৎসা গোসল করে জামা কাপড় গুলো মেলে দিল ,দরজা জানালা বন্ধ করে ভেতরে এলো। ঐশ্বর্য উৎসার দিকে আছে সেই এক ভাবেই,উৎসা টেবিলের উপর থেকে একটা হেয়ার ব্যান্ড নিয়ে সব গুলো চুল বেঁধে ফেলল। আকস্মিক ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ অবাক হলো, ঐশ্বর্য তার দিকে তাকিয়েই আছে।
“ওভাবে তাকাচ্ছেন কেন? দৃষ্টি সংযত করুন অস’ভ্য রিক চৌধুরী!”
“দৃষ্টির সাথে সাথে শরীর কেমন বেসামাল হচ্ছে!”
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে কথাটা বললো,উৎসা আহা’ম্মক বনে গেল।
“কী বললেন?”
“কিছু না।”
ঐশ্বর্য পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে, কন্ট্রোললেস হচ্ছে সে।
“কী খাবেন বলুন?”
ঐশ্বর্য আশেপাশে তাকিয়ে বলে।
“আদেও এখানে খাওয়ার মতো কিছু পাওয়া যাবে?”
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, চুপচাপ রান্না ঘরে চলে গেল। এখন তাকে রান্না করতে হবে, ঐশ্বর্য না থাকলে সে এমনি ঘুমিয়ে পড়তো। কিন্তু এই লোক সেই সকালে বের হয়েছে নিশ্চয়ই কিছু খায়নি। উৎসা ফটাফট ঐশ্বর্যের জন্য ব্ল্যাক কফি বানিয়ে ফেলল,আপাতত এটা দিক ততক্ষণে উৎসা রান্না শেষ করবে।
“এই নিন কফি।”
ঐশ্বর্য অবাক করা দৃষ্টি ফেলল।
“ব্ল্যাক কফি? এখানে কী করে?”
“আপনি আম খান, গাছ খুঁজে কী লাভ?”
ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে কফি নিল। উৎসা ঘন্টা খানেক সময় নিয়ে রান্না শেষ করলো। আস্তে ধীরে খাবারের বাটি গুলো বিছানার উপর এনে রাখলো।
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন আমার ঘুম পাচ্ছে।”
ঐশ্বর্য জীবনেও এভাবে খায়নি, খাওয়া দূরের কথা দেখেনি পর্যন্ত।তার অভ্যাস টেবিলে বসে খাওয়া।
“খাবো কী করে?”
রেড রোজ ২ পর্ব ৩৮
ঐশ্বর্যের অসহায় ফেইস দেখে উৎসা বেশ বুঝতে পারছে লোকটার অভ্যাস নেই। উৎসার ভীষণ ইচ্ছে হলো মুখে তুলে খাইয়ে দিতে,সেটাই করলো। ফটাফট ভাত মেখে ঐশ্বর্যের মুখের কাছে ধরলো।
“আমি খাইয়ে দিচ্ছি এটার মানে অন্য কিছু ভাবার দরকার নেই।”
ঐশ্বর্য তাকিয়ে আছে ফ্যাল ফ্যাল করে। এই মূহুর্তে ঐশ্বর্যের ইচ্ছে করছে খাওয়া দাওয়া সব সাইডে রেখে আগে উৎসা কে…..
