রেড রোজ ২ পর্ব ৪৭
ফারহানা নিঝুম
ভোরের আলো ফুটতেই তন্দ্রা কে টে যায় উৎসার।
উঁকি দিয়ে থাই গ্লাসের বাইরে দৃষ্টি ফেলে বোঝার চেষ্টা করলো বাইরের আবহাওয়া।তবে এভাবে ভেতর থেকে বোঝার উপায় নেই বাইরের পরিবেশ আপাতত কেমন!
বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো উৎসা,এমন মনে হচ্ছে কতই না কাজ করেছে সে! গায়ে স্কাফ টেনে রুম থেকে বের হলো, পায়ে তার ছক্স পড়া। বাইরে এসে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সব কিছু একই রকম আছে। উৎসা ভেবেছিল হয়তো ঐশ্বর্য হয়তো ভাঙচুর করবে! কিন্তু না লোকটা তো দেখা যাচ্ছে চুপচাপ হয়ে গেছে। উৎসা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়াতে যবে তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি গেল কাউচের উপর হাত পা ছড়িয়ে শোয়ে থাকা ঐশ্বর্যের পানে!
উৎসা চকিতে সেদিকে এগিয়ে গেল।
“ঐশ্বর্য!”
উৎসার ভীষণ ইচ্ছে করলো লোকটার সিল্কি চুল গুলো টেনে দিতে। কিন্তু সে যে ঘুমাচ্ছে! উৎসা দু পা পিছিয়ে গেল,লোকটা প্রচুর হার্ট হয়েছে। এটা সে বেশ বুঝতে পারছে! উৎসার ভীষণ খারাপ লাগছে,এই সময়ের মধ্যে নড়েচড়ে উঠলো ঐশ্বর্য। দৃষ্টি ফেলল সামনের উৎসার দিকে ,ছট করে উঠে দাড়ালো।
“আই লাভ ইউ।”
আকস্মিক ঐশ্বর্য উৎসা কে জড়িয়ে ধরে, মৃদু কেঁপে উঠলো উৎসা।
“কী করছেন কী?আরে…
ঐশ্বর্য শুনলো না, উৎসা কে জড়িয়ে ধরে আছে। সে মিস করেছে এই মেয়ে টা কে সেই রাত থেকে!অথচ তার খবর ছিল না!
“ইডিয়ট তুই দরজা খুললি না কেন?যদি ভেঙ্গে ফেলতাম! এমনটাও হতে পারতো তোর সাথে জোর করতাম তখন কী করতি?”
উৎসা তম্বা খেয়ে গেল। ঐশ্বর্যের মাথার তার আসলেই ছি ড়ে গিয়েছে!
“আপনি কিছু করলে আমি ছেড়ে দিতাম?কিক দিয়ে প্যালেস থেকে বের করে দিতাম।”
ঐশ্বর্য হেসে ফেললো তবে উৎসা কে ছাড়লো না। উৎসা কিছুক্ষণ জোরাজুরি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
ব্যথিত মন নিয়ে গায়ে সোয়েটার এবং তার উপর জ্যাকেট জড়িয়ে রাস্তায় এক পাশে হেঁটে যাচ্ছে কেয়া।আজ কত গুলো দিন হয়ে গেল রুদ্রর সঙ্গে তার ভালো ভাবে কথা হয় না! হয়তো রুদ্র ব্যস্ত থাকে আর নয় কেয়া।হোমেও তার মন টিকছে না!
মিস এলিনা এই তো সকালে কেয়ার মন খারাপ দেখে জিজ্ঞেস করেছে কী হয়েছে? কিন্তু কেয়া খুব সূ’ক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেছে!
“সিনিয়র ডিড ইউ মিস মি?”
আকস্মিক পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে পিলে চমকে উঠে কেয়ার।
“রুদ্র?”
কেয়া তৎক্ষণাৎ পিছন ফিরে দেখে, কিন্তু কী আশ্চর্য কেউ তো নেই! কেয়া আশেপাশে দৃষ্টি বোলায় কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না। এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল হয়তো রুদ্র! কিন্তু এটা কেয়ার ভুল ধারণা,কেয়া হতাশ হলো।পিছন ফিরে হাঁটতে যাবে ঠিক তখনই কারো বুকে ধাক্কা খেলো সে।চোখ উঠিয়ে দেখে ভড়কে গেল, না সে ভুল দেখছে না এটা তো সত্যি রুদ্র।
“রুদ্র আপনি?”
“আমাকে চিনতে পারছো না সিনিয়র?”
“আপনি কী সত্যি আমার ভ্রম নাকি বাস্তবতা!”
রুদ্র আলতো হাসলো, স্পর্শ করলো কেয়ার হাত খানা।
“আমি তোমার ভ্রম, আমিই তোমার বাস্তবতা।”
কেয়া যেনো নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলছে, উ’ত্তেজ’নার ব’শে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে রুদ্র কে।
“আই মিস ইউ মিস্টার হ্যান্ডসাম,আই লাভ ইউ সো মাচ।”
“আই লাভ ইউ টু ফ্লার্টিং বা’জ।”
“ব্যাড বয় ছাড়ুন আমায়।”
কেয়া মেকি রাগ দেখিয়ে সরতে চাইলো, কিন্তু রুদ্র ছাড়লো না।
“ছাড়ার জন্য ধরিনি।”
কেয়া আর জোর করলো না।
“কখন এসেছেন?”
“রাতে!”
“তাহলে চলুন বাড়িতে!”
“কেউ জানে না আমি এখানে এসেছি।”
কেয়া অবাক নয়নে তাকালো।
“হোয়াট? কিন্তু আপনি কাউকে জানান নি কেন?
“কুল ডাউন,কাল ভাইয়ের বার্থ ডে। তাই তো এসেছি।”
কেয়া ভুবন ভোলানো হাসি টেনে বলে উঠে ।
“ওয়াও দারুণ একটা সারপ্রাইজ। চলুন যাই তাহলে।”
“উঁহু রাতে, শুধু উৎসা জানে ব্যাপার টা। একে বারে রাতেই দেখা হবে।”
কেয়া ভীষণ এক্সাইটেড ওদের নিয়ে।
ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী এমন একটা নাম যে সবাই চিনে, সবাই জানে। হ্যা আজকে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর জন্মদিন,তার এই পৃথিবীতে আসার দিন।
তার জন্মদিন বলে কথা আর বড়সড় পার্টি হবে না? উঁহু হতেই হবে।
সকাল সকাল অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে ঐশ্বর্য।
“ভাইয়া আমার হেল্প লাগবে ।”
জিসান বেশ আগ্রহ নিয়ে শুধোয়।
“বলো মিস বাংলাদেশী হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?”
উৎসা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলে উঠে।
“সারপ্রাইজ প্ল্যান করছি।তবে এখানে নয় বড়সড় একটা পার্টি চাই।”
জিসান বুঝে গেল উৎসা কী বলতে চাইছে,সে বেশ দুষ্টুমি করে বলে উঠে।
“ডোন্ট ওয়ারি মিস বাংলাদেশী ,সব হয়ে যাবে জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”
উৎসা ভীষণ এক্সাইটেড আজকের জন্য।
ফটাফট ভেতরের রুমে চলে গেল, একটা দারুণ কেক অর্ডার করে।সে নিজেই বানিয়ে নিতো কিন্তু পারে না বলেই বানাতে পারলো না।
উৎসা ঝটপট একটা রেড ফ্যাব্রিক শাড়ি পড়েছে।এই লাল রঙ তাকে বেশ মানায়।শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং সিল্কের ব্লাউজ , হালকা সাজ।গলায় ডায়মন্ডের একটি নেকলেস, কানে ছোট ছোট ইয়ার রিং। নিজেকে আয়নায় দেখে হেসে ফেলল সে, ঐশ্বর্য তো রিতিমত অবাক হবে।
উৎসা অপেক্ষা করছে ঐশ্বর্যের,কখন আসবে লোকটা?
তৎক্ষণাৎ বাড়ির বেল বেজে উঠল, কিন্তু উৎসা দরজা খুললো না। ঐশ্বর্য বরাবরের মতো মেইন ডোর নিজেই খুলে ভেতরে চলে গেল।
পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা ঐশ্বর্য আশেপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে উৎসা কে খোঁজার প্রয়াস চালায়। আকস্মিক পিছন থেকে তাকে কেউ জড়িয়ে ধরে,হাত দুটো এসে তার বুকের মধ্যভাগে ঠেকেছে।
ঐশ্বর্য কিঞ্চিৎ চমকে উঠে, নিজের দু হাতের দ্বারা সেই অনাকাঙ্ক্ষিত হাত দুটো চেপে ধরে।নরম তুলতুলে হাত দুটো, ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো। হ্যা এটা তার রেড রোজের হাত, ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণের জন্য থমকে গেল। উৎসা কী না তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছে!
“মিসড ইউ!”
ঐশ্বর্য কে মিস করছে উৎসা, আরেক দফা অবাক হলো ঐশ্বর্য।
“রোজ হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
উৎসা উত্তর করলো না, জড়িয়ে ধরে রইল। ঐশ্বর্য হাত টেনে সামনে নিয়ে আসতেই হৃদয় স্পন্দন থমকালো।এ কী তার সদ্য ফোঁটা লাল গোলাপ? হ্যা সত্যি তার রেড রোজ যে!লাল শাড়িতে সেজেছে,এই মূহুর্তে ঐশ্বর্যের কাছে মা’রা’ত্মক লাগছে উৎসা কে।
ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে গাল ছুঁয়ে দিল উৎসার, আলগোছে স্লাইড করে বলে উঠে।
“ইউ আর লুকিং সো প্রীটি রোজ।”
উৎসা ঐশ্বর্যের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, ঐশ্বর্য আরেকটু কাছে গেল ঝু কে ঠোঁট ছোঁয়ায় উৎসার গালে।আবেশে চোখ বুজে নিল উৎসা, ঐশ্বর্য উ’ন্মা’দ হয়ে উঠেছে। গায়ের স্যুট টেনে খুলে ফেলল দূরে কোথাও! উৎসা ঐশ্বর্যের কান্ড দেখে হা হয়ে গেল!
“শুনুন…
ঐশ্বর্য উৎসা কে পাগলের স্পর্শ করতে লাগলো, উৎসা মুচড়া যাচ্ছে!
“এভাবে সাজা উচিত হয়নি বেইব! একদম উচিত হয়নি। শাড়ি তো আরো না, এখন আমাকে সামলানো দায় হবে সুইটহার্ট।”
ঐশ্বর্যের আচরণে নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে উৎসার।
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্য থামলো, আজকে তার জন্মদিন?ও গড সে তো ভুলেই গিয়েছিল।
“কেক কা’টবেন না? চলুন।”
উৎসা জোরপূর্বক ঐশ্বর্যের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।
“নো নো আগে তুমি বাকি সব পরে।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত চেপে ধরে।
“প্লিজ।”
ঐশ্বর্য কে নিয়ে বেড রুমে এগিয়ে গেল উৎসা, ছোট্ট ট্রি টেবিলের উপর কেক রাখা আছে।
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ ঐশ্বর্য সাহেব।মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।”
উৎসা একটু উঁচু হয়ে ঐশ্বর্যের গালে চুমু খেল। ঐশ্বর্য হেসে ফেলল, উৎসা তাকে নিয়ে টেবিলের কাছে গেল।
“তাড়াতাড়ি কেক কা’টুন!”
ঐশ্বর্য কেক কা’টলো, উৎসা পিস তুলে দিল তার মুখে। ঐশ্বর্য খেলো তবে অবশিষ্ট কেক টুকু নিজের মুখে পুরে নিল।সে যে অস’ভ্য রিক চৌধুরী, কখনো কী আদেও ভালো হবে? উঁহু হবে না, আকস্মিক উৎসার অধরে অধর চেপে ধরে। উৎসা মিইয়ে যাচ্ছে, কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। ঐশ্বর্যের পাগলামি গুলো বেড়েই চলেছে,তার বেসামাল স্পর্শ গুলো কায়া নাড়িয়ে দিচ্ছে উৎসার। কিন্তু এটা হলে তো চলবে না! ঐশ্বর্যের জন্য যে এত্ত বড় সারপ্রাইজ ভেবে রেখেছে ওরা সেটার কী হবে?
“প্লিজ ছাড়ুন ঐশ্বর্য? এখন কিছুই না আপনি… প্লিজ আমাকে ছাড়ুন না আমি আপনাকে..
“নো নো দিস ইজ নট পসিবল!”
ঐশ্বর্য উৎসা কে ছাড়তে নারাজ!এন মূহুর্তে কলিং বেল বেজে উঠলো। উৎসা ঐশ্বর্য কে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে উঠে গেল। দ্রুত হাতে শাড়ির আঁচল টেনে ঠিক করে নিল।
ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে ডাকলো উৎসা কে।
“বেইব প্লিজ কাম। আমার কাছে এসো সুইটহার্ট।”
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“উফ্ চুপ থাকুন!”
উৎসা এগিয়ে গেল বাইরের দিকে।মেইন ডোরের কাছে গিয়ে খুলে দিল। ভেতরে এলো জিসান, ততক্ষণে ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে ডিভানের উপর বসলো,হাতের ঘড়িটা খুলে টেবিলের উপর রেখে দিল।
জিসান ভেতরে এলো, ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে গিয়ে ম্যানলি হাগ করলো।
“হ্যাপি বার্থডে ব্রো।”
ঐশ্বর্য আলতো হাসলো।
“থ্যাংক ইয়ার,বাট কেয়া কোথায়?”
“সারপ্রাইজ। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে যেতে হবে।”
ঐশ্বর্য ভ্রু উঁচিয়ে শুধোয়।
“কোথায়?”
জিসান দুষ্টু হেসে বলল।
“ওইটাই সারপ্রাইজ।”
ঐশ্বর্য এবার বিরক্ত হলো, অদ্ভুত স্বরে বলে উঠে।
“আমার কোনো সারপ্রাইজ চাই না,লুক কেক কা’টা হয়ে গেছে।”
ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে এক পিস কেক নিয়ে এসে জিসানের মুখে দিল।
“খাওয়ানো ডান। এখন প্লিজ তুই যা, আমার সুইটহার্টের সাথে টাইম স্প্যান্ড করতে দে।”
রেড রোজ ২ পর্ব ৪৬
উৎসা ভেতর থেকে একটা ড্রেস নিয়ে এসে ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে গেল।
“আর একটা কথা বলবেন তাহলে আপনার মাথা ফাটিয়ে দেব আমি।যান রেডি হয়ে আসুন।”
ঐশ্বর্য উঠে দাঁড়ালো, উৎসার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো।
“টু নাইট ভেরী স্পেশাল টু মি।গ্রেট রেডি বেইব।”
উৎসা চোখ গুলো ছোট ছোট করে নিল। অস’ভ্য রিক চৌধুরী!