রেড রোজ ২ পর্ব ৫
ফারহানা নিঝুম
ফায়ারফক্সে আ’গু’ন জ্ব’লছে ।
ঐশ্বর্য বেঘো’রে ঘুমাচ্ছে, তৎক্ষণাৎ মিস মুনা ডোর বেল বাজালেন।
“স্যার? স্যার?”
ঐশ্বর্য বিরক্ত হলো , আড়মোড়া ভে’ঙে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
“গুড মর্নিং স্যার।”
“গুড মর্নিং মিস মুনা।”
“স্যার নয়টা বেজে গেছে।”
ঐশ্বর্য বিরক্ত হলো ,তবে তাতে মিস মুনার দোষ নেই। ঐশ্বর্য বলেছিল ওকে নয়টার দিকে ডেকে দিতে।
ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।
“থ্যাংক ইউ মিস মুনা।”
“ওয়েল কাম স্যার।”
মিস মুনা নিজ কাজে চলে গেলেন , ঐশ্বর্য ফ্রেশ হয়ে ফর্মাল গ্রেট আপেই রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো।
মুঠোফোন বেজে উঠতেই বিরক্ত প্রকাশ করলো সে।
“হ্যালো।”
“ভাইয়া তুমি কী করে পারলে এটা করতে? উৎসা কোথায়? জিসান বললো উৎসা কে বের করে দিয়েছো! কোথায় উৎসা? আমি ফুপি কে কী বলব?”
ঐশ্বর্য বিরক্ত হলো ,ইয়া বড়ি দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। এখন কী ওই উৎসা কে খুঁজতে বের হতে হবে?ও গড!
ঐশ্বর্যের আর খাওয়া হলো না ,গাড়ি নিয়ে ফেরা পড়ল উৎসা কে খুঁজতে।তার সিক্স সেন্স বলছে উৎসা আশেপাশেই থাকবে। যেহেতু মেয়েটা এই দেশের কিছুই চিনে না!
আশেপাশে খুঁজে চলেছে উৎসা, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না। ঐশ্বর্য বিরক্ত হয়ে মার্কের দিকে গেল , ওদিকে অনেক খালি জায়গা থাকে। ঐশ্বর্যের এক মূহুর্তের জন্য , মার্কের আশেপাশে অনেক মানুষ। এখন ঐশ্বর্য মন চাচ্ছে সব কিছু ফেলে দিতে। সে বরাবরই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে অক্ষম।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“উফ্ এখন মেয়ে কে কোথায় পাব?”
ঐশ্বর্য হন্যে হয়ে আশপাশটা খুঁজে দেখলো উৎসা কোথায় আছে কি না? আচমকা একটা ছোট্ট বাচ্চার সঙ্গে ধাক্কা খেল ঐশ্বর্য।
“অ্যাম স্যরি কিউটি।”
“ইটস্ ওকে।”
বাচ্চা মেয়েটা হয়তো খুব তাড়াহুড়োয় ছিল , নিজের পানির বোতল ফেলেই দৌড়ে গেল।
“লিটল গার্ল লিসেন?”
বাচ্চাটি চলে যেতে লাগল , ঐশ্বর্য পানির বোতল তুলে সেদিকেই গেল। কিছুটা ভেতরে গিয়ে থমকে গেল , ছোট্ট বাচ্চার পাশে বসে আছে উৎসা। সেই কালকের জ্যাকেট জড়ানো , বেঞ্চের এক পাশে ল্যাকেজ রাখা। ছোট্ট মেয়েটার সঙ্গে বেশ ভাব হয়েছে তার , দু’জনে হেসে কুটিকুটি অবস্থা!
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,রাতটা এখানেই থেকেছে। কিন্তু এরপর? এখন কোথায় যাবে উৎসা?কী করবে? কাউকে চিনে না সে! আশ্চর্যের বিষয় এখানকার মানুষ গুলো কেমন অদ্ভুত? প্রথম দিনের কথা মনে পড়তেই গা গুলিয়ে উঠছে উৎসার।
“হাই সুইটহার্ট।”
পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে ভিমড়ি খেল উৎসা, দৃষ্টি গেল সামনের দিকে। ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে আছে , উৎসা চুপসে গেল। বড্ড অপমান বোধ হচ্ছে ,এই লোকটা এখানে মজা নিতে এসেছে? উৎসার ঐশ্বর্যের প্রতি রাগ হচ্ছে ,তাকে স্বামী ভাবতেও ঘৃ’ণা করছে।
উৎসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো , বাচ্চা টা দৌড়ে নিজের মায়ের কাছে চলে গেল। ঐশ্বর্য এগিয়ে এলো।
“হায় মেরি জান!”
উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়, অস’ভ্য রিক চৌধুরী।
“লেটস্ গো।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরতেই সে ছিটকে দূরে সরে গেল।
“ডোন্ট টাচ।”
“ওকে ওকে।কুল ডাউন।”
উৎসা দু হাত ভাঁজ করে বুকে নিল।
“এখানে কেন এসেছেন কী চাই?”
ঐশ্বর্য বেশ ভাব নিয়ে ডান হাতে সিল্কি চুল গুলো পিছনে ব্রাশ করার মতো ঠেলে দিল।
“লিসেন মিস… তোমাকে নিতে এসেছি নিকি পাঠিয়েছে।”
“যাব না আমি আপনার সাথে, প্লিজ লিভ?”
ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয়, অ্যাটিটিউড তাকে দেখানো হচ্ছে? উফ্ ইটস্ হার্ট!
“হেই সুইটহার্ট ডোন্ট মাইন্ড বাট রিক চৌধুরী অ্যাটিটিউড পছন্দ করে না!”
উৎসা রেগে গেল,তার ইচ্ছে নেই এই অস’ভ্য রিক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে।ল্যাকেজ নিতেই টেনে ধরলো ঐশ্বর্য।
“ডোন্ট!”
“প্লিজ যেতে দিন আমাকে।”
“কাউকে তেল দেওয়ার টাইম নেই,যাবে না তুলে নিয়ে যাব?”
“আপনার উপর কী করে ভরসা করে যাবো?কাল থেকে তো দেখতেই পাচ্ছি আপনার চরিত্রটা ঠিক কেমন?”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“চরিত্র কেমন তা পরেই দেখবে, অ্যাম গ্রেডিং লেইট, প্লিজ কাম।”
উৎসা যেতে চায় না, ঐশ্বর্য এক প্রকার জোর করেই তাকে গাড়িতে তুলে। উৎসা চেঁচিয়ে উঠলো।
“গাড়ি থামান আমি যাবো না আপনার সঙ্গে!”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“উফ্ সুইটহার্ট ডোন্ট সাউন্ড প্লিজ।”
উৎসা সুইটহার্ট শুনে তেতে উঠল।
“একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনি আমাকে জোর করছেন! আমি এমনি এমনি আপনার বাড়িতে থাকতে চাই না।”
ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল ঠোঁটে চেপে কিয়ৎক্ষণ কিছুটা একটা ভাবলো।
“ওকে ফাইন তুমি এমনি থাকতে চাও না?আর আমিও তোমাকে এমনিতেও রাখতে চাই না। সেই জন্য তোমাকে আমি একটা অফার দিচ্ছি।”
উৎসা তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করলো ঐশ্বর্যের দিকে।
“অফার?”
“হুঁ , তুমি আমার কেয়ারটেকার হিসেবে জয়েন করো। এমনকি আমি তোমাকে বসিয়ে রাখব!”
উৎসা অপমান বোধ করলো , কিন্তু কিছু বললো না।আপাতত থাকা প্রয়োজন এর মধ্যে উৎসা নিজের জন্য হোস্টেলে রুম দেখে নেবে।
“ঠিক আছে আমি রাজী।তবে হ্যাঁ আমাকে আমার মতো থাকতে দিতে হবে!”
“ওকে।”
একটা নতুন সকাল। বাইরে ঠাস ঠাস আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল ঐশ্বর্যের। বিরক্ত নিয়ে উঠে বসলো সে ,মাথা ধরেছে তার। রাগে দাঁত কটমট করে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
মিস মুনা আর উৎসা দুষ্টুমি করছে । দু’জনে মিলে সব কাজ করে নিয়েছে ,উৎসা টেবিলে ব্রেকফাস্ট দিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে দুজনেই গল্প করে হেসে কুটি কুটি অবস্থা। উৎসা বাইরে যেতে গিয়ে টেবিলের উপর থাকা গ্লাস হাত লেগে নিচে পড়ে গেল। উৎসা ভয়ে পেয়ে গেল, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য বেরিয়ে চিৎকার করে বলে।
“হোয়াট দ্যা হেল?”
উৎসা শুকনো ঢোক গিলে।
“আসলে ভুল করে….
“মিস মুনা এগুলো পরিষ্কার করে দিন।”
মিস মুনা ঐশ্বর্যের কথা অনুযায়ী কাঁচ গুলো সরিয়ে রাখল। উৎসা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, ঐশ্বর্য ধমক দিয়ে বললো।
“ইউ ষ্টুপিড পড়াশোনা নেই? এখানে তো এসেছো স্টাডির জন্য তাহলে কী করছো শুনি?”
উৎসা বিরক্ত হলো , বড় বড় পা ফেলে ভেতরের রুমে চলে গেল। ঐশ্বর্য ধীর গতিতে এগিয়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে খেয়ে নিল। ঐশ্বর্যের অস্থির মন আরো অস্থির করে গেল এই মেয়ে।
কলিং বেল বেজে উঠতেই ঐশ্বর্য গিয়ে মেইন ডোর খুলে দিলো।
“হ্যালো ব্রো।”
জিসান কে সকাল সকাল দেখে হামি তুললো ঐশ্বর্য।
“চলে এলি ডিস্টার্ব করতে?”
“অবশ্যই।ইউ নো হোয়াট তোকে ডিস্টার্ব না করে মজা নেই লাইফে।”
ঐশ্বর্য বেশ আরাম করে কাউচের উপর বসলো।
“ব্রো শুনলাম মিস বাংলাদেশী এখানেই আছে, ব্যাপার কী?”
“সামথিং সামথিং।”
জিসান কপাল কুঁচকে নেয়,এআ ছেলে বলে কী? তৎক্ষণাৎ উৎসা বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ঐশ্বর্য আর জিসান আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে। উৎসা কে দেখে ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরলো ঐশ্বর্য,উৎসা নিজের বই গুলো নিয়ে স্টাডি রুমে চলে গেল।
জিসান দেখলো ঐশ্বর্য এক মনে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের দিকে।
“হোয়াট?”
“সামথিং সামথিং।”
জিসান সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
“শেইম লেস ম্যান।”
“ইয়া আই অ্যাম।”
জিসান উঠে স্টাডি রুমে গেল ,উৎসা বই নিয়ে মনোযোগ সহকারে পড়ছে।
“হেই..
“ভাইয়া আপনি?”
“ভাবলাম একটু গল্প করি!”
“হ্যা অবশ্যই,আসুন।”
জিসান গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
“বাই দ্যা ওয়ে অ্যাংরি বার্ড কেমন আছে?*
“অ্যাংরি বার্ড?”
“হুঁ হুঁ নিকি!”
“ওহো।ভালোই আছে,তবে অ্যাংরি বার্ড আপনার কী হয়?”দুষ্টুমি করে বলে উৎসা, জিসান চোখ মা’রলো। উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো, ব্যাপার টা একদম পরিষ্কার তার কাছে।
জিসান আড় চোখে দেখলো ঐশ্বর্য তাদের দেখছে কী না? ঐশ্বর্য টিভির দিকে তাকিয়ে আছে , জিসান আস্তে করে উৎসা কে ডাকলো। উৎসা কান কাছে আনতেই জিসান ফিসফিসিয়ে বললো।
“শেইম লেস ম্যানের থেকে দূরে থেকো।একদম বিশ্বাসের যোগ্য নয়।”
উৎসা খিটখিট করে হেসে উঠলো। তৎক্ষণাৎ শুনতে পেলো।
“ষ্টুপিড মনে থাকে যেন স্টে ওয়ে ফ্রম মি।”
জিসান আর উৎসা ঐশ্বর্যের দিকে তাকাতেই সে আই প্যাড নিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। উৎসা শুকনো ঢোক গিলে নেয়, অভ’দ্র ছেলে, শ’য়তা’ন ছেলে।ছোট বেলায় এই লোকটার পিছু ঘুরতো সে? ভাবতেই শরীর শিরশির করে উঠছে! উৎসা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।।
রাতের দিকে সাবিনা পাটোয়ারী মেয়ে কে ফোন করলো।
“হ্যা মা বলো।”
“যাওয়ার পর তো কল করলি না? সব ঠিক আছে তো?”
উৎসা মৃদু হেসে বলে।
“হ্যা মা সব ঠিক আছে, তুমি কেমন আছো আর আপু এসেছে?”
“এই তো ভালো আছি, কিন্তু তোর আপু আসেনি।কল করেছিলাম আবার। বললো সামনের সপ্তাহে আসবে।”
“ওহ্ আচ্ছা।”
রেড রোজ ২ পর্ব ৪
সাবিনা পাটোয়ারী চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো।
“আচ্ছা ঐশ্বর্য কিছু বলেনি তো? সব ঠিক আছে তো?”
উৎসার মনে পড়ে গেল ঐশ্বর্যের করা অপমান গুলো,তাকে কেয়ারটেকার বানানো।
উৎসা অস্ফুট স্বরে বলল।
“হ্যা মা সব ঠিক আছে। তুমি প্লিজ চিন্তা করো না।”
“নিজের খেয়াল রাখবি কিন্তু!”
“আচ্ছা আচ্ছা, কিন্তু তুমিও নিজের খেয়াল রাখবে।আর আপু আসলে আমার সাথে কথা বলিয়ে দিও।”
“ঠিক আছে।”