রেড রোজ ২ পর্ব ৬

রেড রোজ ২ পর্ব ৬
ফারহানা নিঝুম

“স্টে ওয়ে ফ্রম মি ডার্লিং।”
উৎসার নিঃশ্বাস আটকে আসছে , ঐশ্বর্য অদ্ভুত মানুষ!
এই তো কিছুক্ষণ আগেই স্টাডি রুমে বসে পড়ছিল সে , জিসান চলে গিয়েছে সেই কখন! উৎসা এক ধ্যানে পড়ছে , কারো উপস্থিতি অনুভব করে দরজার দিকে তাকালো সে। ঐশ্বর্য দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ,উৎসা আশ্চর্য হলো।

“কী?”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে ,উৎসা কিছুই বুঝলো না। ঐশ্বর্য এগিয়ে এলো ,উৎসা ভয়ে খানিকটা পিছুতে গিয়ে ঘটলো বিপ’ত্তি।চেয়ারে হোঁচট খেয়ে পড়তে নিলে ঐশ্বর্য হাত টেনে ধরে তার। উৎসা বুক বরাবর পড়ল ঐশ্বর্যের , শুকনো ঢোক গিললো। ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার ঘাড়ে মুখ গুজে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে ফিসফিসিয়ে কথাটা বলে। শিউরে ওঠে উৎসা , এ কেমন কথা? নিজেই আমার কাছে এসেছে এখন আবার বলছে দূরে থাকতে!
“যদি চোখ দুটো ভালো থাকে তাহলে বলব চোখ মেলে ভালো করে দেখুন আপনি আমার কাছে এসেছেন।”
ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয় ,উৎসা কে ছেড়ে ভেতরে চলে গেল। উৎসা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে হবে। ঐশ্বর্য সেই আগের ঐশ্বর্য নেই যাকে উৎসা চিনতো!
কী অদ্ভুত এদেশে এসে এভাবে বদলে গেল?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজ কলেজের প্রথম দিন উৎসার , ভীষণ এক্সাইটেড সে। কিন্তু সাথে কিছুটা ভয়ও কাজ করছে! এখানে কাউকেই চিনে না ,কী হবে জানা নেই।
হালকা মিষ্টি কালারের মধ্যে ফ্রক তার উপর জ্যাকেট জড়ানো ,সাথে লেডিস জিন্স। লম্বা চুল গুলো উঁচু করে বাধা। গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে উৎসা , আকস্মিক ভাবে একজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গেল তার।
“অ্যাম স্যরি আমি দেখিনি। অ্যাম স্যরি।”
“আরে আমি ঠিক আছি।”
বাংলা ভাষা শুনে ঘাড় উঁচিয়ে তাকালো উৎসা। অপূর্ব সুন্দর একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে ,অধর বাঁকিয়ে হাসছে।

“আপনি বাংলা জানেন?”
সিরাত স্বভাব সুলভ ফের হাসলো।
“হ্যা আমি বাংলাদেশী , এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি।”
নিজের দেশের মানুষ পেয়ে স্বস্তি বোধ করে উৎসা।
“হাই আমি উৎসা পাটোয়ারী ,আমিও পড়াশোনা করতে এসেছি।”
সিরাত হাত বাড়িয়ে দিল।
“আমি সিরাত রহমান।”
সিরাত মনে মনে অনেকটাই খুশি নিজের মানুষ পেয়ে , মূহুর্তেথ মধ্যে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়।সিরাত একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ,আর উৎসাও তাই। একাউন্টিং নিয়ে পড়ছে।

অফিসে নিজের কেবিনে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ঐশ্বর্য। কাজ কী করবে?সে তো অন্য কিছু ভাবতে ভাবতে অবাক হচ্ছে।
“উৎসা উৎসা উৎসা , সুইটহার্ট।”
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল , ল্যাপটপের শাটার অফ করে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। স্বভাব সুলভ ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে।
“বেইবি আমি কিন্তু তোমার লাইফে যাইনি , তুমি এসেছ।দ্যান এক্সট্রা সাফার করার জন্য প্রস্তুত হও। সামথিং সামথিং।”
“ব্রো কাম ফার্স্ট।”
জিসান বেশ চিন্তিত মুখে কেবিনে প্রবেশ করে , ঐশ্বর্য কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে নেয়।
“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”
“ও ফিরেই শুরু করে দিয়েছে!”
ঐশ্বর্য সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ফেলল। ডেভিল কুইন ফিরে এসেছে!ও গড!

ব্ল্যাক ট্রি শার্ট তার উপর জ্যাকেট এবং লেংগিস পড়ে পায়ে ব্ল্যাক সু , বেশ আরাম করে বসে আছে মেয়েটি। মেজাজ তার তু’ঙ্গে , অপেক্ষা করছে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির জন্য।
মেইন ডোর লক করে বসেছিল মেয়েটি , তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য আরেকটি চাবি দিয়ে ডোর খুলে ভেতরে প্রবেশ করে। ওর পিছু পিছু আসে জিসান।
জিসান মেকি হেসে বলল।
“হাই ডিয়ার।”
মেয়েটি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো দু’জনের দিকে।
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“হেই কেয়া এত অ্যাংরি দেখাচ্ছে কেন?”
হ্যা কেয়া ওদের বেস্ট ফ্রেন্ড ,যে কি না এ কয়দিন ধরে বার্লিন শহরের বাইরে ছিল।কেয়া রাগের মাথায় পাশে থাকা ফ্লাওয়ার বাস তুলে ছুড়ে দিল ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য ক্যাচ করে নেয়।

“হোয়াটস গোয়িং অন কেয়া?”
“শাট আপ।”
“কী হয়েছে বলবি তো!”
“তোরা দুজন আমাকে না জানিয়েই নিজের সো কল্ড ওয়াইফ কে নিয়ে চলে এলি রিক?”
ঐশ্বর্য মহা বিরক্ত হলো ,এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত রাগ?
” তো তাতে তোর কি?”
জিসানের কথায় তেলে বেগুনে জ্ব’লে উঠলো কেয়া।
“শাট আপ জিসান।”
কেয়া রাগের মাথায় আবারও ফ্লাওয়ার বাস তুলে ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে গেল। ঐশ্বর্য কেয়ার দু হাত চেপে ধরলো।
“কুল ডাউন কেয়া প্লিজ ‌।”
তৎক্ষণাৎ দরজা খোলা দেখে ভেতরে প্রবেশ করলো উৎসা। ঐশ্বর্য আর কেয়া কে ওমন ভাবে দেখে তম্বা খেয়ে গেল!
“আস্তাগাফিরুল্লাহ।”
উৎসা কে দেখে কেয়া ভ্রু কুঁচকে নেয় ,পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিল। আচ্ছা তাহলে কী এই মেয়েই ঐশ্বর্যের বউ?
উৎসা চেঁচিয়ে উঠলো।

“ছিহ্ ছিহ্ এখানে কী হচ্ছে এসব ,ইয়া আল্লাহ এসব কী দেখছি?”
উৎসার কথায় ফিক করে হেসে উঠলো কেয়া , ঐশ্বর্য ওর হাত ছেড়ে কাউচের উপর গিয়ে বসলো।কেয়ার কাছে এই মূহুর্তে উৎসা কে বাচ্চা মনে হচ্ছে।কত কিউট! একদম টেডিবিয়ার।
কেয়া এগিয়ে গিয়ে উৎসা কে জড়িয়ে ধরে ,উৎসা তম্বা খেয়ে গেল।এক লাফে দূরে সরে গেল , কিছুক্ষণ আগেই রাস্তায় দু’টো মেয়ে কে দেখলো গাড়িতে উঠতে। উৎসা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিল ব্যাপার টা, কিন্তু কিছুক্ষণ পর গাড়িটা দুলতে শুরু করে উৎসা চমকে উঁকি দিয়ে যা দেখলো তাতে মেয়েদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে!
“দদেখুন আমি মোটেও ওরকম নয়, আমি পিওর মেয়ে মানুষ।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো, সাথে জিসানও । কেয়া এগিয়ে এসে উৎসার গাল টেনে বলে।
“সো কিউট।”
উৎসা কিছুই বুঝলো , এ দেশে এসে পড়েছে মহা বি পদে।যে গুটি গুটি পায়ে নিজের রুমে চলে গেল।কেয়া ধপাস করে কাউচের উপর বসলো।
“সো কিউট বাট রিক ওর নাম কি?”
“উৎসা পাটোয়ারী।”
কেয়া মুচকি হেসে ফেললো, জিসান ক্ষি’প্ত মেজাজে বলে।
“এই মাত্র তুই রেগে কী থেকে কী শুরু করলি? এখন আবার নাটক করছিস!ড্রামা কুইন।”
কেয়া মুখ বাঁকালো। ঐশ্বর্য কিছু একটার ভাবছে , তার মধ্যে অনৎ কিছু দেখা দিয়েছে। সামথিং রং!

“আফসানা খাবার দাও।”
শহীদ হু কু ম করা মাত্র তেতে উঠল আফসানা।
“পারব না , তোমার মেয়ে কে বলো। কোন সাহসে বলছো খাবার দেওয়ার কথা?”
শহীদ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো , আফসানা আর শহীদের সম্পর্ক মোটেও ভালো নয়।এক মাত্র এই মহিলার জন্য তার বড় ছেলে দিনের পর দিন দেশের বাইরে থাকে।
আফসানা গটগট করে ভেতরে চলে গেল ,নিকি মায়ের আচরণে চাপা রাগ অনুভব করছে। মাঝে মাঝে আফসানা এত খারাপ ব্যবহার করবে শহীদের সাথে যা নিকির মনে নিজের মায়ের প্রতি বিতৃ’ষ্ণা তৈরি করে ‌।

রাতের প্রথম প্রহর , এতক্ষণ ধরে পড়ছিল উৎসা।সিরাতের থেকে কিছু হোম ওয়ার্ক কালেক্ট করে নিয়েছে। এক সময় বেশ বিরক্ত লাগে কিছুটা সময় রিল্যাক্স করা প্রয়োজন।রুম থেকে বের হলো কিচেনের উদ্দেশ্যে! উৎসা বের হতেই দৃষ্টি গেল সামনে কাউচের উপর বসে থাকা ঐশ্বর্যের দিকে।আই প্যাড নিয়ে বসে আছে ,উৎসা ভ্রু কুঁচকে নেয়।এই লোকটা এত রাত পর্যন্ত আই প্যাড নিয়ে কী করছে?উৎসা ঘড়ির দিকে তাকালো ,রাত সাড়ে নয়টা। অবশ্য ওর কাছে গভীর রাত মনে হলেও ঐশ্বর্যের কাছে তা না।

উৎসা গুটি পায়ে গিয়ে কিচেনে নিজের কফি নিয়ে বেরিয়ে এলো। আচমকা নিজের সামনে ঐশ্বর্য কে দেখে পা দুটো থেমে গেল তার।এই তো দেখলো কাউচের উপর বসে ছিল, তাহলে এখন আবার এখানে কেন?
উৎসা কিছুটা বিব্রত বোধ করছে ,তবে এলোমেলো ঐশ্বর্য কে দেখে চোখ সরানো সত্যি দায়!কী সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে ,চোখ ভর্তি ঘুম। চোখের কার্নিশ লাল হয়ে আছে ,পরণে কালো রঙের ট্রি শার্ট আর ট্রাউজার। সিল্কি চুল গুলো কপালে ছড়িয়ে আছে , ঐশ্বর্য বেশ ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে উৎসার দিকে।উৎসা হঠাৎ অনুভব করলো তার চিকন দেহ খানি কেঁপে উঠছে।
ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে উৎসার কফি কাপ নিয়ে চুমুক বসালো।
“উঁহু সুগার ফ্রি নয়তো।”
উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের দিকে । ঐশ্বর্য কফি কাপ রেখে উৎসার কাছাকাছি এলো , অতিরিক্ত উ’ত্তেজনায় দু কদম পিছিয়ে গেল উৎসা।
ঐশ্বর্য উৎসার দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে বললো।

“উই আর ম্যারেড সুইটহার্ট অ্যাম আই রাইট?”
উৎসা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে,ঘন নিঃশ্বাস টেনে আওড়াল।
“না , আপনি চলে গেছিলেন ,বিয়ে বাতিল।”
ঐশ্বর্য উৎসার ফ্রকের নিচের অংশ টেনে ধরলো ,উৎসা সরে যেতে চেয়েও টান পড়াতে আটকে গেল।
“ইউ ষ্টুপিড রোজ।”
উৎসা ঐশ্বর্য কে এই মূহুর্তে বড্ড উ’ন্মা’দ লাগলো। উৎসা অস্থির কন্ঠে বলে।
“গুড নাইট।”
ঐশ্বর্য নড়ল না,আর না ছাড়ল।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া প্লিজ।”
“হুস ডোন্ট কল মি ভাইয়া রোজ।”
উৎসা কিছুটা বিব্রত বোধ করলো , উৎসা আরেকটু ঝুঁকে পড়ল উৎসার দিকে।
“সামথিং সামথিং।”
উৎসা খিঁচিয়ে চোখ বুঁজে নেয়।
“সরুন প্লিজ।”

ঐশ্বর্য সরলো না, উল্টো উৎসার দিকে কিছুটা চেপে দাঁড়ালো।
“ইউ নো ইউ আর লুকিং সো প্রীটি ট্রাস্ট মি আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।”
উৎসা ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিলো, কিন্তু এত বলিষ্ঠ পুরুষ কে সরানো দায়! উৎসার কানের লতিতে ওষ্ঠা ছুঁয়ে ঐশ্বর্য ফিচলে হাসে। উৎসা তম্বা খেয়ে গেল,এই লোকটা মা তাল নাকি?

রেড রোজ ২ পর্ব ৫

ঐশ্বর্য সিস বাজাতে বাজাতে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলল উৎসা। হ্যা এটা সত্যি উৎসার মনে ঐশ্বর্যের প্রতি এক নিদারুণ অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ঐশ্বর্য উৎসা কে ফেলে চলে গিয়েছিল আর আফসানার সেই কু টু কথা শুনতে হয়েছে। সেগুলো ভুলেনি উৎসা,আর এই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী তো আর তাকে ভালোবাসে না! উৎসা বাচ্চা ছিল তাই ঐশ্বর্যের পিছু পিছু ঘুরতো।
উৎসা আর ভাবলো না,যত ভাববে ততো নিজের কষ্ট।কফি কাপ নিয়ে আবারো কিচেনে গিয়ে নিজের জন্য নতুন করে কফি করে রুমে চলে এলো।

রেড রোজ ২ পর্ব ৭