রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৫

রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৫
ফারহানা চৌধুরী

-“অরু, আমাদের অফিসে নতুন একটা ছেলে জয়েন করেছে। এতো সুন্দর দেখতে!”
এরিনার কথায় অরু হাসে। কম্পিউটারের চোখ রেখেই টাইপ করতে করতে বলল,
-“তাই নাকি?”
এরিনা নতুন উদ্যমে উৎসাহিত হয়ে বলল,
-“হ্যাঁ। প্রচন্ড সুন্দর। হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং, বডি, মাসলস্—!”
অরু ফিক করে হেসে ফেলল,
-“কন্ট্রোল প্লিজ৷ তুমি এখন এতোটাও লাফালেও এই হ্যান্ডসাম, গুড লুকিং ছেলেটা তোমার হবে না।”
এরিনা ভোঁতা মুখে চাইল। ঠোঁট উল্টে বলল,
-“এমা! কেন?”
অরু পিঠ ঠেকিয়ে বসলো রোলিং চেয়ারে৷ পা মেঝে ঠেস দিয়ে ঘুরে বসল এরিনার দিকে। বলল,
-“দেখো; ছেলেটা সিঙ্গেল কি না, ওটা জানারও তো দরকার তাই না? হোয়াট ইফ, তার গার্লফ্রেন্ড আছে? তখন কি করবে?”

উজ্জ্বল মুখখানা আঁধারে ঢাকলো এরিনার। বিষাদ বদনে চেয়ে বলল,
-“তাও ঠিক। আমি একটু কথা বলেছিলাম অবশ্য। মনে হচ্ছিল—”
কথাটুকু সম্পন্ন করার আগেই থামতে তাকে। পরপর চোখ বড়বড় করে চাইল অরুর পেছনে। অরু ভ্রু কুঁচকে ফেললো। একরাশ কৌতুহল এসে ভীড় জমালো চোখের কিনারায়। সে পলক ঝাপটে তাকালো পিছে৷ তখনই নজরে এলো একটি সুশ্রী সুদর্শন যুবকের মুখ। তাদের দিকেই চেয়ে। অরু একপল চাইলো বান্ধবীর দিকে। হাভাতের মতো এরিনাকে চেয়ে থাকাতে দেখে মনে মনে কপাল চাপড়ালো। তার মানে এ-ই সেই ছেলে। এরিনা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে কেন? লোকে পাগল বলবে তো তাকে। ছেলেটা না আবার ছ্যাঁচড়া ভেবে বসে। অরু আড়ালে চিমটি কাটে তার হাতে। এরিনা ব্যথা পেল। হকচকিয়ে অরুর দিকে তাকালে অরু চোখ রাঙিয়ে স্বাভাবিক হতে বলে।
এরিনা চুল কানে গুঁজলো দু’হাতে। নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রয়াসে বড় করে শ্বাস ফেলল। পাশ থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগল। তখনই কানে বাজলো পুরুষালী কন্ঠস্বর,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“হ্যালো।”
আড় চোখে চাইলেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুখ দেখে এই পর্যায়ে বিষমই খেয়ে বসলো মেয়েটা। পানি ছিটকে পড়ল। কাশতে কাশতে নাজেহাল অবস্থা তার। লোকটা বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে তা এরিনা বুঝেছে। তবুও নিজের হাতে কিছু নেই। কাশতে কাশতে জীবাণুদের সঙ্গে মান-সম্মানটুকুও বেরিয়ে গেল বলে মনে হলো। প্রথমবারেই এমন অবস্থা, সেই লোককে পছন্দ করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন স্বপ্নই যে রয়ে যাবে তা অরু বেশ বুঝছে। এরিনার দেকে চেয়ে আফসোস করলো খু-উ-ব।
মাথায় আলতো হাতের স্পর্শ পেয়ে এরিনা কাশতে কাশতেই চোখ তুলল। কর্ণধার হলো চিন্তিত কন্ঠস্বর,
-“What is wrog Arina? Are you okay, dear?”

অরু চোখ বড় বড় করে তাকালো এরিনার দিকে। এরিনা হতভম্ব হয়ে গেলো। ডিয়ার? কে কার ডিয়ার? কিসের ডিয়ার? অদ্ভুত তো! অরুর দিকে চোখ পড়তেই তা মার্বেল আকার ধারণ করলো। ঠোঁট চেপে চোখ রাঙাতেই অরু তৎপর হলো মিটমিটিয়ে হাসি চাপতে। নিজের মধ্যকার হাসি লুকোতে পন্থা বের করে উঠে দাঁড়ালো আসন ছেড়ে। আগন্তুক বিদেশি লোকটা আর এরিনার দিকে চেয়ে ইংরেজিতেই বলল,
-“আমি কফি খাবো। ক্যান্টিতে যাচ্ছি। তোমরা কিছু নিবে? আনবো আসার সময়?”
আড়ালে চোখ চাপলো এরিনার উদ্দেশ্যে। এরিনা কৌশল বুঝে চাপা হাসে। হাসি সরিয়ে তাকায়। মৃদু স্বরে বলে,
-“আমার কিছু লাগবে না।”
-“আচ্ছা? তাহলে থাকো। আমি যাই।”

সুযোগ বুঝে কেটে পড়তেই এরিনা তাকালো লোকটার দিকে। লোকটার অরুর যাওয়ার দিকেই হা করে চেয়ে। এরিনা অপ্রস্তুত হলো। এমন করে কেন চেয়ে আছে? এরিনা গলা পরিষ্কার করলো শব্দ তুলে। লোকটা চাইল। এরিনাকে প্রশ্ন করে,
-“আর ইয়্যু ওকে ডিয়ার?”
এরিনা ইতস্তত বোধ করলো। আড়ষ্ট হয়ে বলল,
-“ইয়েস।”
লোকটা তপ্ত শ্বাস ফেলল। এরিনা ক্ষণেই জিজ্ঞেস করে,
-“আপনার নাম?”
-“নিকোলাস। রিমেম্বার, আমরা একটু আগেও কথা বলেছি।”
এরিনা লজ্জিত হলো,
-“আপনার নামটা জানা হয়নি আসলে।”
-“বুঝেছি। ইট’স ওকে।”

লোকটা এবার তার সামনে বসল। চেয়ার টেনে মুখোমুখি করলে এরিনা চমকে উঠলো। বুকখানা ধরফরিয়ে উঠল। চোখ কোটরের বাইরে বেরিয়ে এসেছে যেন। এরিনাকে জিজ্ঞেস করে,
-“উম্, ইজ শি ইয়র ফ্রেন্ড? আই মিন বেস্ট ফ্রেন্ড অর সামথিং?”
এরিনা অবাক হয়। কপাল কুঁচকে চায়,
-“আব্— ই-ইয়েস। বাট হোয়াই?”
নিকোলাস প্রত্যুত্তর করে না। উল্টো হাত বাড়িয়ে দেয় নিঃসংকোচে। মিষ্টি হেসে বলে,
-“লেটস্ বি ফ্রেন্ডস্, বেবি গার্ল?”

এরিনা হকচকিয়ে খানিকটা সরে এলো। ভীষণ অপ্রস্তুত বোধ করলো। নিকোলাস ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো। এরিনা জমে গেল। প্রকম্পিত হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো লোকটার শক্ত খ’ড়খ’ড়ে হস্ত যুগল। কেমন যেন বু’কটা কেঁপে উঠল। পায়ের তলায় কেমন শি’রশি’র করে উঠল। শরীর জুড়ে অদ্ভুত রকমের শি’হরণ বইয়ে দিলো। এরিনার এতো অদ্ভুত লাগলো! তার এমন হৃদয় ছলকানো অনুভূতিরা যখন অ’স’হ’নী’য় পর্যায় পেখম মেলেছে, ওমনি নিকোলাস তার পেল্লব হাত খানা ছে’ড়ে দিলো। এরিনা গু’টিয়ে গেল। লোকটা ভারি অদ্ভুত তো!

ক’দিন কেটেছে। অরু একাই যাতায়াত করছে হোম টু অফিস। অফিস টু ভার্সিটি। ভার্সিটি টু হোম। আবারও হোম টু অফিস। একই সার্কেল প্রতিদিন রিপিট করতে করতে ক্লা’ন্ত সে। প্রথম প্রথম ভারি অসুবিধা পো’হা’তে হয়েছিলো বৈ কি! এখন কিছুটা অভ্যস্ত শুভ্রকে যথাসম্ভব এড়িয়ে যাচ্ছে। যতটুকুন তার সাধ্যি। ছেলেটা সে সবের আদতেও কতটুকু ধার ধারে তা কে জানে! অরুকে নিয়ে তার কোনো মাথা ব্য’থা আদতেও রয়েছে কি? অরুর তো মনে হয় না।
বাস স্টপেজে বসে বাসের অপেক্ষায় ছিল অরু। আপাতত এমন অনেকেই পাশে দাঁড়ানো তার। অফিস ছুটির পর এসেছিল বাস ধরতে, তবে অফিস থেকে বেরুতে বেরুতে সেই দেরি হলো। ফলস্বরূপ বাস মি’স। নেক্সট বাসের শিডিউল এখনো এক কি দু’ঘন্টা বাদে। তার জন্য অপেক্ষা করা ব্যতিত কোনো উপায় পেল না মেয়েটা। চুপচাপ বসে রইলো বে’ঞ্চিতে।

খানিক বাদেও বাস না এলে এই পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো অরু। কাঁধে ঝুলতে থাকা চামরার ব্যগ খানা নখ দিয়ে খুঁটতে খুঁটতে অপর হাতের হাত ঘড়ি দেখল। রাত হয়েছে। ঘন্টার কাঁটা আটের ঘর ছুঁয়েছে। আবার হুট করে বৃষ্টিও নামলো খুব৷ এবার বিরক্তিতে মুখটা তেঁতো হয়ে এলো পুরোদমে। মেজাটা খিঁচড়ে এলো চরমভাবে। ওভার কোটের বড়সড় পকেট হাতড়ে ফোন বের করল। আশপাশে তেমন লোক নেই। অরু চোখ সরায়। ফোনের স্ক্রিনের নীল আলোতে ডুবিয়ে ফেলে নিজেকে। সময় পেরুলেও বৃষ্টি থামলো। তারউপর দেরিও হচ্ছে খুব।
অরু উঠে পড়ল৷ বৃষ্টি মাথায়ই রওনা হবে সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলল। এত সময় এখানে বসে থাকার চেয়ে এভাবে যাওয়াও ঢের ভালো। ছাতাও বাসায় ফেলে এসেছে। অসহ্য বিরক্ততে মেজাজ বিগড়ে গিয়েছে তার। অসহ্য! অসহ্য! অসহ্য!

মাঝরাস্তায় অরুকে থামতে হলো রাস্তার এক পাশে ঘাপটি মেরে থাকা জ্বলজ্বলে চোখ দেখে। অরু চমকে গেল। ভয় পেল ভূত-প্রেত ভেবে। শঙ্কায় সিঁটিয়ে গিয়ে চলে যেতে নিলেও কৌতুহলের নিকট পরাস্ত হতে হলো তাকে। কৌতুহলী হয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখতে নিলো ওটা কি। অরু রাস্তার পাশে হাঁটু মুঁড়ে বসল। বৃষ্টির ছাঁটে ভিজে চুপচুপে গায়ের জামা-কাপড়। অরুকে দেখে জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখের অধিকারী ছোট্ট শরীরটা কেমন গুটিয়ে গেল। সরে যেতে গেলে অরু বুঝলো এটা একটা বিড়াল। অরু হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো বিড়ালকে৷ আদুরে হাতে কোলে তুলে নিলো। বিড়ালটা চেঁচিয়ে উঠে থেমে গেল। ভিজে ভীষণ করুণ অবস্থা তার। চেঁচাতে থাকলে অরু আদুরে ভঙ্গিতে হাত বুলালো তার গায়ে। মুহুর্তেই থেমে গেল বিড়ালছানা। অরুর বুকে মিশে গেল এক প্রকার। অরু হেসে ফেলল। ঠিক করলো, বাড়িতে নিয়ে যাবে বিড়ালটিকে। শুভ্র কিছু বললে, অরুও তাকে দেখে নিবে। অরু আদুরে গলায় ডাকল,

-“কোকো।”
বৃষ্টি মাথায় বাড়ি ফিরে ফ্রেশ-টেশের মতো যা-তা রকমের কাজগুলো সেরে-টেরে বেরুতেই অরু বুঝলো তার ঠান্ডা লেগে গিয়েছে ইতোমধ্যে। ক্ষনেই পরপর পাঁচ, ছ’বার হাঁচি দিয়ে বসলো। নাক টেনে পাশ টেবিল থেকে টিস্যু নিতেই পুনরায় হাঁচি এলো। অত্যন্ত বিরক্তিকর এই হাঁচি-কাশি তার নিকট৷ মানে; যখন সে চায় তার জ্বর-সর্দি-কাশি হয়ে বিদিকিস্তি অবস্থা হোক, তখন এসব কিচ্ছুটি হয় না। তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ওমন দু’মুখো কাল সাপের মতো ঘাপটি মেরে গর্তে লুকোয়। আর যখন তার মনে হয় না, এমন কিছু না হোক, সুস্থ মতো পড়াশোনা করবে একটু; ওমনি, ওমনি গিরগিটির মতো রঙ বদলে নেবে সেকেন্ডে! পুরো নাজেহাল অবস্থা বানিয়ে ছাড়ে তার। এসব বড়ো তাজ্জব ব্যাপার। বড়ো বিরক্তিকর ব্যাপার। এমন হলে লোকে সাধারণত খুব বিরক্ত হয়। তবে অরু, মাত্রাতিরিক্ত রেগে যায়। মনে হয়, কাউকে সামনে পেলে রামদার কোপ নয়তো হাতে গুনে গুনে দশ খানা শক্তপোক্ত চড় বসাবে। কি বিদঘুটে চিন্তা!
শুভ্র অরুর ঘরের দরজার কাছে এসে থামল। দরজাটা কেমন হা করে খুলে রাখা। তার দিকে ওমনই চেয়ে আছে যেন।

শুভ্র মুখ কুঁচকে তাকায়। এতো অগোছালো কেন মেয়েটা? ঘরে আরেকজনও যে থাকে, সেই চিন্তা কি সেলাইন দিয়ে গুলিয়ে খেয়েছে? সেলাইনও তো খায় না। সেইদিন পেট খারাপ করায় শুভ্র বানিয়ে দিয়েছিল এক গ্লাস সেলাইন। পুরো হোম মেইড। পানিতে চিনি, লবন গুলিয়ে বানানো চমৎকার একটা সেলাইন। একদম কেনা পাতার মতো। তার হাতে জাদু আছে বৈ কি! শুভ্রর নিজেকে নিয়ে প্রচন্ড গর্ববোধ হচ্ছিলো। তবে দুঃখের সঙ্গে তা ধোপে টেকেনি খুব বেশিক্ষণ। তার গর্ববোধকে মুখ ভেঙচিয়ে অরু ইনিয়ে বিনিয়ে সেলাইন খেলো না। শুভ্র জোরালো ধমক বসিয়েও এক রোখা বেয়াদব মেয়েটাকে গ্লাস টুকুন অবধি ছোঁয়াতে পারল না। এতো রাগ হলো তার! অসভ্য মেয়ে। বড়দের কথা শোনে না। অদ্ভুত রকমের পাঁজি এই মেয়ে!

শুভ্র অরুর দরজায় টোকা বসালে অরু চমকে তাকালো সেদিকে। শুভ্রর দিকে চাইতেই শুভ্র ঘরে এলো পায়ে পায়ে। অরুর সামনে দাঁড়াতেই অরু চোখ বড়বড় করে চাইল। নাকটা পিটপিট করছে কেমন। না আসুক! না আসুক! শুভ্র কিছু বলতেই নিচ্ছিলো, ওমনি ঘর কাঁপিয়ে হাঁচি দিলো অরু। একটা দিয়ে যদি তাও ক্ষান্ত হতো মেয়েটা! পরপর চারবার হাঁচি দিয়ে থামলো। শুভ্র হকচকিয়ে গিয়ে দ্রুত মাথা পিছিয়ে নিল। আচমকা ঘটা বিশ্রি বিষয়টাতে অরু নিজেও অপ্রস্তুত হলো। শুভ্র কিছুই বলল না। বরং কপাল কুঁচকে তাকায়,

-“অসুস্থ তুমি?”
অরু মাথা নাড়ে তাৎক্ষণিক,
-“না। একদমই না।”
-“তাই?”
লোকটার জোরালো আওয়াজে অরু গুটিয়ে গেল। মিনমিন করে বলল,
-“এমনিতেই। সত্যি।”
শুভ্র মাথা দোলালো,
-“বুঝেছি।”
বুঝেছে মানে? কি বুঝেছে? আজব লোক তো। শুভ্র বলল,
-“আন্টি ফোন করেছিল। ওনাদের ফোন রিসিভ করো না তুমি?”
অরুর সরল মুখটা আচানক শক্ত হয়ে এল। খিঁচে যাওয়া মেজাজে তপ্ত চোখে চাইল। কন্ঠে চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলল,

-“না।”
-“কেন? তারা তোমার মা-বাবা নয় কি? অস্বীকার করতে পারবে সেটা? ওদের জন্য তুমি এক্সিস্ট করছো, আদার ওয়াইজ তোমার কোনো অস্তিত্বই থাকত না।”
-“থাকুক সেটাও তো চাই না।”
শুভ্র রেগে গেল,
-“কেন চাও না? আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে বলে? কি চাও তুমি অরু?”
-“তো আপনাকে বিয়ে করে আমি কোনদিকে সুখে আছি বলে মনে হচ্ছে আপনার? আর আমি আমার মা-বাবার সাথে কথা বলবো নাকি সম্পর্কচ্যুত করবো; সেটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি এমন কেন করছেন?”
-“তুমি—”
অরু তাকে থামায়,

-“কথা বলতে চাইছি না এখন। যেতে পারেন।”
বলে বসে পড়লো বিছানায়। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসে থাকলে শুভ্র রেগেমেগে চলে গেল। অরু হাসে। আদিখ্যেতা!
আবছা আবছা চোখের সামনে দু’জন দানবীয় লোক দন্ডায়মান। অরু দৌড়ে পালাচ্ছে তার থেকে৷ লোকগুলো সমানে তাকে তাড়া করছে। অরু ছুটছে। প্রাণপণে দৌড়াচ্ছে নিজেকে বাঁচাতে। লোকগুলো ধরতে পারলে তাকে খুবলে খাবে। সামনে। চারিপাশে বদ্ধ সব। সামনে একটাই দরজা। বেরুতে হবে। একটু একটু করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দরজা। অরু ছুটলো। পায়ের গতি বাড়ালো আরো৷ শেষ রক্ষা হলো না। দরজার শেষ প্রান্তে পৌঁছাতেই বিশাল আকৃতির দরজা বন্ধ হয়ে গেল। অরুর ধাক্কা লাগল তাতে। ব্যথা পেয়ে থেমে গেল। থমকে রইল। ভয়ে ভয়ে পিছু মুড়তেই লোকগুলো ঝাঁপিয়ে পড়লো তার উপর।

ধরফরিয়ে চোখ মেলল অরু। আচমকা মাঝরাতে বিশ্রি স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙল তার। চমকে গিয়ে উঠতে চাইলে পারল না। শরীরে অসহনীয় যন্ত্রণা। অরুর সামান্য পাশ ফেরারও শক্তি নেই বোধহয়। প্রচন্ড জঘন্য একটা স্বপ্ন। অরু…. অরু কেঁদে উঠলো শব্দ করে। রাত বাড়তেই বুঝলো জ্বর তীব্র হচ্ছে৷ তখন বিছানা থেকে ওঠাও দায়।
অরু তবুও হাতড়ে হাতড়ে বিছানা ছাড়ল। মাথা ঘুরছে। সমগ্র পৃথিবী যেন দুলছে। শরীরের অবস্থা বেগতিক। টালমাটাল পায়ে অরু দেয়াল ধরে দাঁড়াল কোনোরকম। খোলা রেশমের মতোন চুলগুলো এলোমেলো হয়ে লেপ্টে আছে মুখে, গলায়। অরু অন্ধকার ঘরটায় চোখ বুলালো। দম বন্ধ হয়ে আসছে। বড় করে শ্বাস টেনে কোনোরকম ভেজানো দরজা খুলল। দেয়াল হাতড়ে হাতড়ে পাশের ঘরের দরজার কাছে এসে দাঁড়ালো কোনোমতে। দূর্বল হাতের তালুতে ধাক্কায় দরজা। কিছুক্ষণের মাঝেই দরজা খুললো শুভ্র। বেগতিক অবস্থায় থাকায় অরু তার গায়েই পড়ে গেল। শুভ্র হতভম্ব হয়ে গেল। অরুর দিকে তাকালো। গাল চাপড়ে ডাকে মৃদুস্বরে,

-“অরু? এ্যাই? কি হয়েছে?”
সারা শরীর গরম। আগুনের মতোন ধরাও দায়। শুভ্র তার কপাল, গালে হাতের পৃষ্ঠ ছুঁইয়ে শরীরের তাপমাত্রা বুঝে আনল। অরু কিছু বিড়বিড় করছে। শুভ্র ঝুঁকলো খানিকটা। শুনতে পেল মেয়েটার অস্পষ্ট স্বর,
-“আ-আমি এখানে থাকি? প্লিজ? ও-ওরা, ওরা আ-আবারও এসেছে। আমায় মেরে ফেলত। আমি পালিয়ে এসেছি। আমায় খুবলে খেতো ওরা।”

রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৪ (২)

অরু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। শুভ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। হাঁটুর নিচে এক হাত আর পিঠের নিচে একহাত গলিয়ে মেয়েটার ছোট্ট-খাট্টো শীর্ণকায় দেহ পাঁজা কোলে তুলে ফেলল চট করে। নিজ বিছানায় যত্ন সহকারে শুইয়ে কম্ফোর্টার টেনে দিল। অরু তখনও কাঁদছে। শুভ্র তার শিয়রে বসলো। হাত ধরলো নিঃশব্দে। অপর হাতে একটা একটা করে চুল গুছিয়ে পাশে ছড়িয়ে দিল। চার দেয়ালের আবদ্ধ ঘরের মাঝে গুটিকয়েক কাতর শব্দ তরঙ্গ ভাসল,
-“কেউ তোমার কিচ্ছু করবে না। আমি আছি তো। তোমাকে সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ উপহার দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু ভালোবাসাটা আমার কাছে চেয়ো না। প্লিজ!”

রোদ্দুর এবং তুমি পর্ব ১৬