শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৬৯+৭০

শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৬৯+৭০
Nabila Ishq

অরু অনুদ্ধত হয়ে নীরবে কাঁধে পড়ে থাকায়—ওর অস্তিত্ব হাওয়াতে বিলীন হয়েছে যেমন। তন্ময়ের বলবান কাঁধে কিচ্ছুটির অনুভব হয় না কিছুক্ষণের জন্যে। অথচ জলজ্যান্ত এক রমণী তার দক্ষ কাঁধে রয়েছে। দোরগোড়ায় পৌঁছুতেই অরু পুনরায় ছটফটিয়ে উঠল। নামবার বেশ তাড়া। তন্ময় তখন এমনিতেও দাঁড়িয়ে পড়েছে আকস্মিক। কারণ সম্মুখেই দীপ্ত দাঁড়িয়ে। ছোটোখাটো মুখটার দু’ঠোঁটের মধ্যিখানে বৃহৎ ফাঁক হয়ে আছে হাস্যকর ভাবে। চোখদুটো অনৈসর্গিক বড়ো। যেন চোখের কোটর ছেড়ে মণি দুটো বেরিয়ে আসবে। ড্যাম্ন! এই দুরন্ত;অশান্ত ছেলেটি মুখ ফসকে বলে বেরালেই হেডলাইন ছেপে যাবে। যেভাবে পত্রিকায় ছাপে। শাহজাহান বাড়ির কোণায়-কোণায় দীর্ঘতম সময় ধরে এই রমরমা ঘটনার বিবৃতি চলবে।

তন্ময় দ্রুত নিজ ঠোঁটে আঙুল চেপে ইশারা করে নিশ্চুপ থাকবার জন্য। পরপর হাতের ইশারায় চলে যেতে বলে এক্ষণ। দীপ্ত কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকলেও এযাত্রায় মিটিমিটি হাসতে শুরু করেছে। বাচ্চা হাতটা মুখে চেপে রেখেছে। অরুর মুখখানা তখনো তন্ময়ের সুগঠিত পিঠেই অনড়। সে আঙুল দিয়ে গুঁতিয়ে নামিয়ে দেবার জোরালো প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। তন্ময়ের গম্ভীরমুখের সামনে কী আর দীপ্তর দুষ্টুমি চলে? দীপ্ত চোখ রাঙানো খেয়ে উদ্যত হয়ে সরে যেতেই তন্ময় অরুকে নামায় কাঁধ থেকে। নেমেই মেয়েটা স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারে না। ব্যগ্র চোখেতে চতুর্দিক পর্যবেক্ষণ করে নেয় তীক্ষ্ণ চোখে। কাউকে না দেখতে পেয়ে তবেই ভেতরে আটকে রাখা শ্বাসটুকু ছাড়ে। সজ্জিত আঁখিজোড়া দ্বারা ধারালো দৃষ্টিতে চেয়ে মুখ ভেঙিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। তন্ময় হতাশ এবং উদাস–দুটোই। প্রিয়তমার অভিমান তো ভাঙলোইনা উল্টো মাঝ দিয়ে দীপ্ত অদৃষ্ঠচর এক দৃশ্য দেখে বসে আছে। আশ্চর্যজনক! তন্ময় ওকে একলা পেতেই কানটা আচ্ছাকরে টেনে দেবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

অস্থির বদনে সে গাড়ির সামনে এসে দেখল মহারানি ভিক্টোরিয়া সামনের সিটে বসেনি। দীপ্তকে বসিয়ে নিজে গিয়ে দীপ্তর গদিতে বসে আছে আমোদে। গর্দান ঘুরিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে সন্ন্যাসিনী সেজে। এই যেন বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি। নাম ‘অভিমানের বর্ষণ।’ তন্ময় একঝলক দেখে ড্রাইভিংয়ে বসল। সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট করল। ইতোমধ্যে ফোন কয়েকবার বেজেছে। এই ছোটোখাটো দেহের অভিমানিনী ভিক্টোরিয়ার সাথে আজ একটু দুষ্টুমি করাই যায়। কল্পনা করেই তন্ময় নিজমনে হাসলেও মুখমণ্ডল গম্ভীর করে রাখল চূড়ান্ত পর্যায়ে। যেন মাত্রই পকেট থেকে ছয়টা হাজার টাকার নোট চুরি হয়েছে। অরুকে বেশ কয়েকবার চোরাচাহনিতে তাকাতে দেখা গেল। শাবিহা, রুবি এবং দীপ্তও অনুভব করতে পারল তন্ময়ের আকাশছোঁয়া গম্ভীরতা। নিজেদের মধ্যে খুব আড়ালে মুখ চাওয়াচাওয়ি করেও—তিনজনেই অরুর পানে চাইল। এরপর তন্ময়ের পানে।

তন্ময়ের বন্ধুবান্ধব সবগুলো লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে কমিউনিটি সেন্টারের এর সম্মুখে। পাশেই দাঁড়ানো মোস্তফা সাহেব তাদের ভেতরে নিতে উতলা হলেও তন্ময়ের বেয়ারা বন্ধুমহল সামান্যতমও উৎসুক নয়। তারা আনন্দে গদগদে স্বরে হেসে হেসে জানাচ্ছে,
‘আংকেল, আপনি যান ভেতরে। গেস্টস অ্যাটেন্ড করুন। আমরা তন্ময়ের সাথে আসছি।’
মোস্তফা সাহেব নিরুপায় হয়ে একপর্যায়ে ভেতরে চলে গেলেন। পাঠালেন ছোটো ভাই আনোয়ার সাহেবকে। আনোয়ার সাহেব সখ্যতা গড়তে পারেন দারুণ। এসেই তিনি হাঁটুর বয়সী ছেলের সঙ্গে অট্টোহাসির মজলিশ বসিয়ে দিলেন। মাহিন সর্বদাই মুখ চালানোতে একশোতে দুশো,
‘আংকেল, ভাইপুতকে মেয়েজামাই বানিয়ে কেমন বোধ করছেন বলুন তো! আমরা কিন্তু ছোটো বোনকে– ভাবি বানিয়ে বেশ চমৎকৃত।’

কাঁধ কাঁপিয়ে চোখ বুজে হেসে ওঠেন আনোয়ার সাহেব। চুপিসারে উচ্ছ্বাসিত গলায় জানান, ‘ফ্যান্টাসটিক।’
এতে যেন হৈচৈ পড়ে গেল। পালাক্রমে হেসে দাঁড়িয়েই গল্প চলল মিনিটখানেক। তন্ময় অদূর হতেই সুপরিচিত দেহগুলো দেখে নিয়েছে। বখাটেপনায় উচ্চতম ডিগ্রি হাসিল করা বন্ধুদের সাথে— নিজের অতিমাত্রায় সরলশান্ত চাচ্চুকে দেখে তন্ময় ঘাবড়াল। আল্লাহমাবুদ জানেন কীসব বকেছে! পার্কিং লট আজ গাড়ি দ্বারা আঁটসাঁট। কয়েক রাউন্ড ঘুরেফিরে অবশেষে গাড়ি পার্ক করা গেল। তন্ময় দরজা খুলে বেরোল প্রথমেই।

পেছনের দরজা খুলে শাবিহাকে আলতোভাবে রয়েসয়ে ধরে-ধরে নামতে সাহায্য করল। তারপরও আর দাঁড়াল না। বড়ো বড়ো পদচারণে এগিয়ে যাচ্ছে আপনমনে। সে ঠিক জানে প্রিয়তমা তার হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে আছে। হয়তো-বা এইমুহূর্তে ছলছল নয়নজোড়ার দুর্দশা। হবার কথাইতো। কখনো ওকে সে একা নামতে দিয়ছে? কথায় কথায় অভিমান করে তন্ময়ের হৃদয় র ক্তাক্ত করা এই অভিমানী ভিক্টোরিয়াকে একটা সুইট ডোজ দেয়াই যায়। এখন দেখার পালা কতদূর নিতে পারে। বেশিক্ষণ নিতে না পারলে— একটা চমৎকার গিফট আছে। তন্ময় হাসতে হাসতে স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতেই চাচ্চু-বন্ধুদের দিকে এগুল। তন্ময়ের স্বতঃস্ফূর্ততা বেশিক্ষণ টেকসই রইল না। আশ্চর্যজনকভাবেই তন্ময়ের মস্তকের ভেতরে যেন একের পর এক আগুন ধরতে আরম্ভ হলো।

অয়নের গোষ্ঠীতালিকাতে এতো-এতো চ্যাংড়া ছেলেপুলে কেন? এই কেমন অসভ্যতামি? একটা পরিবারে একই বয়সের এতোগুলো নৌজোয়ান কেন রইবে? সবই অরুর বয়সের কাছাকাছি। বা ওরচেয়ে দু’তিন বছরের বড়ো। হলরুম জুড়ে বেশ কয়েকটাকেই দেখা গেল ফুল্কিবাজ ধাঁচের। এদের চোখের সামনেই অরু স্বাধীন পাখির মতন উড়ছে। ব্যস্ত পায়ে এদিক-ওদিক ছুটে বড়োদের ফরমাইশ খাটছে। রোদ্দুরের মতন ঝলমলে হাসি যেন ঠোঁট থেকে নড়ছেই না। কয়েক প্রকার সাদা বাল্বের আলোতে একটি ছোটোখাটো পরির বাচ্চাই দেখতে লাগছে। তখন না দেখতে পেলেও তন্ময় এখন সু’স্পষ্ট দেখতে পেলো, তার কিনে দেয়া ডায়মন্ডের ছোটো নাকফুলটাও পরির বাচ্চা পরে আছে। অয়নের বড়ো চাচার ছেলেটার দৃষ্টি অরুতেই নিগূঢ়ভাবে সেঁটে। আধঘণ্টা ধরে। তন্ময় আলাপের মধ্যেও অন্যমনস্ক হচ্ছে। অতিথি আপ্যায়ন করাও অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতো জ্বলন বোধহয় সে এহজন্মে অনুভব করেনি কখনো। মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। আগুনে তরল ঘি ঢালতে মাহিন শীর্ণ স্বরে ফিসফিস করে বলল,

‘অরুর জন্য কয়টা বিয়ের প্রপোজাল পাস আমায় জানাতে ভুলিস না কিন্তু!’
রিয়ান একইরকম ভাবে পূর্বের ন্যায় সুরে সুর মেলাল, ‘গুণে গুণে বলিস।’
তন্ময় চিবিয়ে চিবিয়ে জবাবে বলল, ‘তোদের আমি কা চা খা ব।’
সৈয়দ দুষ্টু হাসল। বন্ধুর কাঁধ জড়িয়ে বলল, ‘এতো চ্যাতিস ক্যান? চুল পাইকা যাইব।’
তন্ময় নীরব রইল। ওদের লেগপুলিং এর স্বীকার সে আজ নতুন নয়। তবে, মাহিনের ঠাট্টা মেশানো বাক্যটুকু পড়তে দেরি সত্য হতে দেরি হয়নি। তন্ময় জবেদা বেগমের ডাকে –পূর্বদিকের পঞ্চম সারির দিক এসে পৌঁছায়। মূলত তার পরিচয় করিয়ে দেবেন। এরপূর্বেই চেয়ারে বসা অয়নের মেজো মামি উৎসুক কণ্ঠে অরুর জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন। প্রত্যুত্তরে জবেদা বেগম শুকনো মুখে হাসেন। আড়চোখে দেখেন তার ছেলে ভোঁতা মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ভদ্রমহিলা সেখানেই থেমে রইলেন না। ইনিয়েবিনিয়ে নিজের ছেলের সম্পর্কে বিবৃতি দিতে ব্যগ্র হলেন। ছেলে মাস্টার্সে পড়ছে। ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার। পিএইচডি করবে ইউএসএ-তে। লম্বা প্যাঁচাল। তন্ময় কাটকাট গলায় থামাল ভদ্রমহিলার আলাপ,

‘আমি ওর হাজবেন্ড।’
ভদ্রমহিলা একপ্রকার চ্যাঁচালেন, ‘জি?’
তন্ময় নির্বিকার, ‘অরু আমার ওয়াইফ। শি’জ ম্যারিড।’
বাক্যটি তন্ময় উঁচু গলায় ডিক্লেয়ার করে দিলো। আশেপাশে সমাগত সবাই শুনে আশ্চর্য, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। কারণ সবাই জেনে এসেছে তন্ময় আর অরু ভাইবোন। ওদের একান্তগত বিয়ের বিষয়টা এখনো অপ্রকাশিত। অয়নের মামির মাথায় ছোটোখাটো এক বজ্রপাত পড়ল। তবে পরমুহূর্তেই তিনি হেসে আশীর্বাদ দিতে দিতে মুখে ফ্যানা তুলে ফেললেন। তাতেও তন্ময়ের রাগ নিভল না। ওপরিভাগে ভদ্রসভ্য ভাবে হাসলেও রাগান্বিত সে দীর্ঘসময় দাঁড়াল না। সরে এলো। তার বউয়ের দিক নজর! এতবড় স্পর্ধা!

ক্যামেরাম্যান, ফটোগ্রাফার আনা হয়েছে। অয়ন-শাবিহার আকদের প্রিপ্ল্যানিং ভিডিও ধারণ করা হচ্ছে ক্যামেরায়। এরপর তোলা হয়েছে দারুণ সব ছবি। আংটি পরানোর সময় সেই কী উচ্চস্বরের হৈচৈ! সবশেষে শাহজাহান পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে একই ফ্রেমে বন্দি করা হবে। এরজন্যই স্টেজে উঠছে একে-একে সবাই। তন্ময় দেখল অরু দ্রুত আনোয়ার সাহেবের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে যেন তার রাগটা মাথায় ভালোভাবে চাপল। এতো নির্দয় এই মেয়েটা! তন্ময় কী ডোজ দেবে? তন্ময়কেই নিয়মিত ডোজ দিচ্ছে। আজ তো মিনিটে মিনিটে। মোস্তফা সাহেবের ডাকে তন্ময়ও উঠে এলো স্টেজে। অরু আড়চোখে চাইতেই চোখাচোখি হলো। অরু ত্বরিত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। যেন মাছ চুরি করা বেড়াল ধরা পড়েছে।

তন্ময় গিয়ে দাঁড়াল অরুর পেছনে। দেখতে পেলো অরুর কম্পিত দেহখানা। কাছ থেকে দৃশ্যটুকু সুস্পষ্ট বড্ড। লম্বা, খোলা –কালো চুলগুলোও একনজর দেখল। সুন্দর ঘ্রাণ আসছে নাকে। আকস্মিক সে হাত বাড়িয়ে অরুর কোমর ছুঁলো। পাঁচ আঙুলের থাবা বসিয়ে একমুহূর্তেই টেনে নিজের পাশে নিয়ে এলো দেহটি। এতো দ্রুত এবং শব্দহীন যে কেউই কিচ্ছুটি উপলব্ধি করতে পারল না। অরু আশ্চর্যের সপ্তমে। চেঁচাতে গিয়েও ভাগ্যক্রমে চেঁচায় নিই। তন্ময় ওর পাতলা কোমর শক্ত হাতে জাপটে নিজের পাশে লেপ্টে নিলো। ক্রুদ্ধ চোখে একপলক চেয়ে ক্যামেরার পানে চাইল। ফটোগ্রাফার তখন বারংবার সবাইকে আদেশ ছুঁড়ছে ক্যামেরার পানে চাইতে। শব্দ করে ছবি তোলা হলো কয়েকবার। অরু যেন তন্ময়ের ক্ষোভ বুঝে নিয়েছে। বেচারি ভয়ে এইটুকুন মুখ নিয়ে দূরেদূরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ধারেকাছে ভিড়ছে না। সেখান থেকেই আড়ে-আড়ে চাইছে।

রাত একটা পঁয়তাল্লিশে অনুষ্ঠান শেষপ্রান্তে পৌঁছুল। সবাই তখন পার্কিং এরিয়াতে দাঁড়িয়ে। বিদায় নিয়ে যে যার মতন গাড়ি চড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। শাহজাহান বাড়ির প্রত্যেকেই তখন দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বিদায় জানাচ্ছে— সময় নিয়ে। পার্কিং এরিয়া ফাঁকা হতেই মোস্তফা সাহেব গাড়িতে উঠে বসেছেন। ভদ্রলোক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আপ্যায়ন করা তো চারটিখানি কথা নয়। একে-একে বাকিরাও উঠে বসছে। তন্ময় এগিয়েছিল অরুকে আটকাতে। তবে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাকে আসতে দেখেই ও দ্রুত আনোয়ার সাহেবের পাশেই চড়ে বসেছে। বিরক্ত তন্ময় ড্রাইভিং-য়ে উঠে বসে। মেইনরোড দিয়ে যাওয়ার পথে অয়নের গাড়ি পাশ দিয়ে পাল্লা ধরে চলছে। শহুরে রাস্তাঘাট তখন কুয়াশায় ভেঁজা, আচ্ছাদিত। দূরদূরান্ত শুধু মেঘেদের বাড়ি বলে মনে হয়। এসময় গাড়িও সাবধানে চালাতে হচ্ছে। মিরোরে অরু মুখটা দেখা যাচ্ছে। গল্প করছে আনোয়ার সাহেবের সাথে।

শাহজাহান বাড়ির সদরদরজা খুলে দেয়া হয়েছে। গাড়ি গুলো ঢুকছে লাইন ধরে। তন্ময় গাড়ি পার্ক করে বেরোল চটপট। একমুহূর্ত দেরি না করে অরুর পাশের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ওকে অপ্রকাশ্যে বেরুতে দিলো না। আনোয়ার সাহেব, শাবিহা, দীপ্ত বেরিয়ে যেতেই অরুকে বেরুতে হলো একই দরজা দ্বারা। বেরিয়ে সে হতভম্ব। সবাই ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাড়ির ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। অরু লেহেঙ্গা দু’হাতে তুলে নিয়েছে। ছুটবে বলে হয়তো-বা। তন্ময় দিলে তো? সেই ইতোমধ্যেই সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। দারোয়ান চাচা দরজায় তালা মেরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন ঘুম ঘুম গলায়,

‘বাবা, বাতি বন্ধ করমু?’
তন্ময় জবাব দিল অরুর মুখে চেয়েই, ‘করুন।’
দারোয়ান চাচা বাতিগুলো বন্ধ করে দিতেই আঁধার নামল। আকাশের জ্যোতি অনেকটাই স্বচ্ছ করে দিয়েছে দেখবার তৃষ্ণা। আঁধারে, নীরবে তন্ময় এগুল দু’পা। অরু তৎক্ষণাৎ পিছু চলে গেল। আওড়ানো স্বরে শুধাল,
‘কী হয়েছে?’

তন্ময় এগুতে এগুতেই সাবলীল স্বরে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ল, ‘কী হবে?’
অরু থেমে যায়। পাশ কেটে যেতে উতলা হয়। তন্ময় একঝটকায় হাত টেনে গাড়ির সামনে নিয়ে আসে। অরুর পিঠে ঠেকে গাড়িতে। তন্ময় দু’হাত ওর মাথার দু’পাশে রেখে, মাথা ঝুঁকিয়ে গভীর কণ্ঠে শুধোয়,
‘খুব এঞ্জয় করেছিস?’

অরু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয় জবাবে। এই প্রশ্নের কী জবাব হয় আদতেও? তন্ময় জবাবের আশাতে রয়ও না, ‘আমি এঞ্জয় করিনি। একটুও না। নাও ইট’স মাই টার্ন টু এঞ্জয়।’
এরপর এক ভূমিকম্প বয়ে যায় ওষ্ঠতে ওষ্ঠদ্বয়ের। গভীর থেকেও গভীরতম হয় স্পর্শেরা। সবকিছু নীরব, শান্ত। কিয়ৎক্ষণ পরেই আনোয়ার সাহেবের ডাক শোনা গেল। হঠাৎ ডাকে অরু হকচকাল। চোখ মেলে চাইল। তন্ময়ের প্রশস্ত বাহু থেকে ছাড়া পেতে মরিয়া হয়ে উঠল। তন্ময় ছাড়লে তো? সে শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। আলগোছেই ওকে জাপ্টে নিয়েই সরে গেল পেছনটায়।

প্রেম-ভালোবাসা, জ্বলন্ত মন অথবা মনের ব্যাকুলতা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম এক নিবিড়, দৃঢ় —গভীরতম ওষ্ঠদ্বয়ের চুম্বন। হৃদয়ের সব বোঝাপড়া মিটিয়ে নিতে এরচেয়ে আবেদনময়ী কোনো মাধ্যম জানা আছে বলে মনে হয় না। তন্ময় তো দীর্ঘ সময় শুধু এক চুমুতেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারবে। অবশ্য এখনকার চুমুর স্বাদ অনেকটাই পৃথক। দিব্যি তার মুখে সীমাহীন লিপস্টিক প্রবেশ করেছে। হয়তো-বা তার ঠোঁটের চারিপাশ ভরে আছে লিপস্টিকে। সে অনুভব করতে পারছে। ঘরে যাওয়ার পূর্বে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। তার পিতা ওরফে শাহজাহান মোস্তফা দেখে নিলে আর রক্ষে রবে না। গাড়ির সাথে আঁটকে রাখা অরুর দেহখানা ভয়ে এখনো জড়সড়। আনোয়ার সাহেবের হঠাৎ ডাকে ভীত হয়েছে বেশ।

হাড় কাঁপানো শীতল রাতের প্রাণিকুল ডাকছে মিহি স্বরে। সেই ডাকের সুর কর্ণগোচর হতেই গা কাঁটা দিয়ে ওঠে। শিরশিরে অনুভূতি হয় শিরদাঁড়া বেয়ে। সুউচ্চ প্রাচীর ঘেঁষে ওঠা নারিকেল গাছটির মাথার ওপরে উজ্জ্বল চাঁদটা বসেছে। চাঁদের চতুর্দিক জুড়ে ছোটো-বড়ো নানাপ্রকার নক্ষত্রের বসতি। বহমান হাওয়ার স্পর্শ তুলতুলে নরম হলেও শীতের মাত্রা দ্বিগুণ ধাপে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পার্কিং জায়গাটিতে চাঁদের জ্যোতি পড়েও যেন পড়ছেনা। কেমন নিশীথনিবিড় সবটা। চাঁদের সবটুকু নিঙড়ানো জ্যোতি যেন বাগানের দূর্বাঘাসে লুটোপুটি খাচ্ছে। সেথায় একনজর চাইল তন্ময়। আনোয়ার সাহেব সেই পর্যন্ত এসেই ফিরে গিয়েছেন। কী ভেবেছেন কে জানে? হয়তো-বা তাদের অস্তিত্ব বুঝে নিয়েছেন!

আঁধারেও তন্ময় ঠিক দেখল প্রেয়সীর ছলছল চোখের চাহনি। টলমলে রক্তিম আঁখিজোড়াতে— কাছ থেকে, নিগূঢ়ভাবে চেয়ে সে দু’গাল ভরে হাসল। হাসির ছন্দে কাঁপল তার পুরুষোচিত শক্তপোক্ত বুক। সেই বুকে পিষে থাকা ছোটোখাটো শরীরটিও যেন কম্পন অনুভব করল। সাধারণত তন্ময়কে এভাবে হাসতে দেখা যায় না। দেখা গেলেও কয়েকবার— সেই কয়েকটিবার হাতের আঙুল দ্বারা গুণে ফেলা সম্ভব। তার এই জীবন্ত হাসি মোস্তফা সাহেব খুব করে ভালোবাসেন। ছেলেকে হাস্যোজ্জ্বল দেখতে চাওয়া তার সরল মনের কথাগুলো একদিন আকস্মিক; অপ্রস্তুত তন্ময় আড়াল হতে শুনেও ফেলেছিল। অবশ্য শুনেই যে জানতে হবে এমন নয়। সম্মুখীন মানুষটির চোখমুখ, আদল, আচরণ দেখলেই বুঝে নেয়া যায় তার মনের কথা। যেমন এইযে তার অরু! ওর গভীর চোখের ড্যাবড্যাব করে তাকানোই সব বলে দেয় তাকে। ওর মুখের আদল বলে দেয় ওর মনের কথা। চোখজোড়া জানিয়ে দেয় ওর আকাশসম মুগ্ধতার কথা। বুঝিয়ে দেয়, ও মোহিত তার প্রতি। ডুবতে বসেছে তার প্রণয়ের নদীতে। তন্ময় দু’ভ্রু দারুণ কায়দায় দুলিয়ে দুষ্টুমির সুরে প্রশ্ন করে,

‘কাঁদছিস কেন?’
অরু চূড়ান্ত আশ্চর্য হয়। এহেন প্রশ্নটি যেন সে আশা করেনি। নাক ফুলেফেঁপে ওঠে। রাগিত গলায় পাল্টা শুধিয়ে বসে তৎক্ষণাৎ, ‘আপনি আমার হাত মুষড়ে ধরেছেন। কেন?’
তন্ময় তখনো ওর মসৃণ হাত দুটো পিঠে বেঁকিয়ে ধরেই রেখেছিল। এবারে বাঁধন দৃঢ় করল। আরও গাঢ়; গভীর আলিঙ্গনে এনে —বেশ সাবলীল স্বরে স্বীকারোক্তি করে,
‘ব্যথা দিতে।’
এমন প্রত্যুত্তর আশা করেনি বলেই হয়তো-বা অরুর চোখজোড়া বড়োবড়ো হয়ে আসে। আহত হয়। ব্যথিত তবে অবিশ্বাস্য কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে,
‘কেন?’

‘ইচ্ছে করল।’ তন্ময়ের কণ্ঠের সুর বেশ নির্বিকার। যেন হাত মুষড়ে ধরাটা নিত্যদিনের কার্যক্রম। এমন হেলদোল বিহীন প্রত্যুত্তর শুনে অরুর আশ্চর্যের মাত্রা বাড়ল,
‘আমি সত্যিই ব্যথা পাচ্ছি হাতে।’ অরু থেমে গিয়ে ফের বলল, ‘সত্যি।’
তন্ময় নিশ্চুপ রইল অনেকক্ষণ। সুগভীর দৃষ্টিতে শুধু চেয়ে রইল সরল মুখপানে। অরু হাঁসফাঁস করে চলেছে। হাত দুটো ছুটিয়ে নেবার জন্য আকুল। কিছুক্ষণের মধ্যে ও ঠিক কয়বার পলক ফেলল, তন্ময় নির্দ্বিধায় গুণে-গুণে বলে দিতে পারবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিথিল করল হাতের বাঁধনময় বন্ধন। তবে ছাড়ল না। মাথাটা আরেক ধাপ ঝুঁকিয়ে ফেলল অনায়াসে। নিজ বক্ষপিঞ্জরের দিক ইশারা করে আনমনা ভাবেই জানাল,

‘আমিও তো ব্যথা পাচ্ছি। এইতো এইখানে।’
অরুর মুখের পরিবর্তন ঘটে মুহূর্তেই। ভুলে বসে পূর্বের সব। চোখে ভীড়ে কেমন এক অদ্ভুতুড়ে চিন্তিত ব্যাকুলতা। উদগ্রীব কণ্ঠের সুর, ‘কী হয়েছে? কীভাবে ব্যথা পেয়েছেন? দেখি!’
যেন তন্ময়ের বুক ব্যথাটা অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু, আকুল হওয়ার মতন কিছু। এইমুহূর্তে অরুকে আর বাচ্চাটে– নির্বোধ মেয়েটি বলে মনে হলো না। দায়িত্ব নিয়ে আদর-সোহাগ এবং যত্ন দেবার মতো প্রাপ্তযুবতী বলেই মনে হলো। শিথিল করায় হাতজোড়া ছাড়িয়েই তন্ময়ের বুকপকেটের দিকটা ছুঁয়ে দিলো অরু। ফের উতলা গলায় শুধাল দুর্ভাবনাগ্রস্ত মনে,

‘বলেন না! কী হলো? ব্যথা পেলেন কীভাবে? কিছুই তো বলেন না। তন্ময় ভাই!!’
তন্ময় আলতোভাবে বুক ছুঁয়ে দেয়া হাতের ওপর হাত রাখল। কাতর চোখে চেয়ে বিভোর কণ্ঠে প্রত্যুত্তর করল সে, ‘ব্যথা সেরে গেছে। তোর হাতে কি জাদু আছে? নাকি মুখে?’
অরু বিরক্ত হয়। মুখটা ভোঁতা হয়ে আসে তার। রাগ করে বসে মুহূর্তেই, ‘এইসব ব্যাপারে মজা করবেন না একদম।’
‘করব না।’ তন্ময় বাধ্য পুরুষের মতন আপসেই প্রত্যুত্তর করল। এতে যেন অরু সন্তুষ্ট বিড়াল। জাপটে ধরল তন্ময়ের সুগঠিত কোমর। মাথাটা বুকে চেপে আওড়াল,
‘আজ কতগুলো মেয়েরা আপনায় ড্যাবড্যাব করে দেখছিল। কলি আপুও। হাহ! অন্যের জামাই কেন দেখবে? বিয়ে করে নিজের জামাই দেখুক। আমি পারলে আপনার গলায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিতাম। লেখা থাকতো, ‘এই মানুষটা বুকড শাহজাহান আরাবির জন্য। তাকানো নিষেধ।’

তন্ময় শব্দ করেই হাসল। অরুর গাল টেনে ধরল, ‘সাইনবোর্ড লাগবে কেন? তুই কোলে উঠে থাকলেই তো হয়। সবাই জেনে যাবে। নোটিশ লাগবে না।’
অরুকে ফিসফিস করতে শোনা গেল,
‘আমি এতো নির্লজ্জ কীভাবে হব!’
‘আদর করি না বলে তো ঠিক অভিমান করে এড়িয়ে বেড়াচ্ছিলি। আবার আদর করলেও নড়াচড়া করে বেড়াস। পালাই পালাই করিস। হুঁ?’
অরু তাড়াহুড়ো করে বলে উঠল, ‘ছাড়ুন। সবাই কী ভাববে? বাবা খুঁজেও গেলেন একবার।’ বলেই অরু যেতে উতলা হলো। তন্ময় দ্রুত হাত ধরে ফেলল,
‘চুপচাপ দাঁড়া।’

কোনোদিকেই খেয়াল থাকে না মেয়েটার। তন্ময় ওর ওড়নার শেষাংশ হাতের মুঠোয় নিয়ে ব্যস্ত হলো নিজের ঠোঁটের বহিরাংশ মুছতে। লাল টকটকে লিপস্টিক স্টেইন! আদতেও উঠবে? তন্ময়ের মন সংকীর্ণ হলো মুহূর্তেই। পুরোপুরিভাবে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না! কয়েকবার ঘষামাজা করেছে সে। তবুও লালচে আভা ছড়িয়ে আছে। এক দেখাতেই যা বোঝার বুঝে নেবে সবাই। এক্সপ্লেনেশন দেবার প্রয়োজন পড়বে না। এখন লিভিংরুমে কেউ না থাকলেই হয়! সবাই যেন নিজেদের রুমে সুগভীর তন্দ্রায় নিবিষ্ট হয়। ভাগ্যক্রমে তন্ময় নিরাশ হয়নি। বাড়ির ভেতরটা নীরব। ক্লান্ত সবাই নিজেদের রুমে চলে গিয়েছে ইতোমধ্যে। লিভিংরুম ফাঁকা। অরু লাজুক মুখে ওড়না চেপে ছুটেছে নিজের রুমের দিকে।

আজকাল আর তন্ময় নিজের রুমের দরজা লক করে রাখে না। ইচ্ছে হয় না। সম্ভবত তখন ভোর। অনুভব করল খুব আলতোভাবেই একটি উত্তাপ দেহ তার কম্ফোর্টারের ভেতরে ঢুকে পড়েছে অনায়াসে। তার সাথে লেপ্টে শুয়েছে। আধ ঘুমের মধ্যেও তন্ময় এই শীর্ণ দেহের অস্তিত্ব চেনে। খুব করে জানে। এই শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গে তার শিলমোহর রাখা। কীভাবে না চিনবে? আদুরে ভঙ্গিতেই দু’হাতে অরুকে নিজের উন্মুক্ত বুকে জাপটে নিলো। ঘুমন্ত চোখে কোনোরকমে চাইল— রুম অন্ধকার। আঁধারেতে অরুর স্নিগ্ধ মুখের দেখা মিলল না। নিস্তব্ধতা ভেঙে কর্ণগোচর হলো অরুর মৃদু শ্বাসপ্রশ্বাসের ধ্বনি। তন্ময় গভীর স্বরে শুধাল,

‘ঘুমাসনি কেন? ক’টা বাজে?’
অরু আরও নিবিড় —গভীরভাবে ঢুকল তন্ময়ের বক্ষস্থলে, ‘ঘুম ভেঙে গেছে। দুঃস্বপ্ন দেখেছি। দেখলাম আপনি আমার জন্য কাঁদছেন। তাই চলে এলাম।’
তন্ময় মৃদু স্বরে হাসল ঘুমন্ত কণ্ঠে, ‘আমি নাকি তুই? হুঁ?’
‘আপনি আমি একই তো।’

বাড়িতে বিয়ের আমেজ। হৈ-হুল্লোড় লেগেই আছে। তবে তন্ময় বসে থাকতে পারছে না। নিত্যদিন সে অফিসে ছুটছে। মোস্তফা সাহেব গতকালও বলেছেন, ক’দিন অফিসের কাজটা বাড়িতে সেরে ফেলতে। তবে তা তন্ময় মান্য করতে পারছে না। সম্ভব হচ্ছে না! বিয়ের ঝামেলাটা মিটিয়েই তার ঢাকার বাইরে যেতে হবে। কাজের সূত্রে। বিষয়টা অরু জানলে বেশ হাইপার হবে। সঙ্গে যেতে ঝামেলা করবে। তাই সম্প্রতি বিষয়টা চাপা রেখেছে। আজও সে সাতসকালে এসে পৌঁছেছে অফিসে। চারটা মিটিং শেষ করে যখন ছয়তলায়— নিজের সুবিশাল চ্যাম্বারে এসে বসল, তখন ঘড়ির কাঁটা দুটো বিশে। এখনো তার লাঞ্চ করা হয়নি। করার সম্ভবনা দেখাও যাচ্ছে না। বাড়িতে ফিরতে হবে সন্ধ্যার মধ্যে। আজ শাবিহার ঘরোয়া মেহেদি অনুষ্ঠান। পকেটে লিস্ট আছে বেশ কিছু জিনিসপাতির। এসব কিনে ফেলতে হবে সন্ধ্যার পূর্বে। বাড়ির দুয়ার পেরুতেইহবে মাগরিবের আজান পড়তেই।

ট্রান্সপারেন্ট থাই গ্লাস ভেদ করে দুপুরের রোদ্দুর ছুঁয়েছে অফিস ফ্লোরে। ম্যানেজার সুমন টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফাইল হাতে। তার অস্তিত্ব যেন শূন্যে। তার হাতে চারটা পাতলাটে ফাইল। চারটাই সে আলগোছে রাখল তন্ময়ের সামনে। ইতোমধ্যে তন্ময় ব্যস্ত চোখে দেখছে নীল রঙা ফাইল-টা। ভ্রু’দ্বয়ের মধ্যিখানে গুণে-গুণে চারটে ভাঁজ পড়েছে। ম্যানেজার সুমন চোখমুখ বুজে ফেলেন জানাশোনা ভঙ্গিতে। তৎক্ষণাৎ তন্ময়ের গুরুগম্ভীর ধমক পড়ল,
‘একটা বারো পৃষ্ঠার ফাইলে এতগুলো বানান ভুল। প্রুফরিড কি বসে বসে আমি করব? টিম রাখা হয়েছে কি ঘাস খেতে? আপনারা ঘাস খান। আমি বসে প্রুফরিড করি.. নাকি?’
ম্যানেজার সুমন ফাইলটা দ্রুত হাতে তুলে নিলেন। লাঞ্চ বক্সটা এগিয়ে দিলেন সযত্নে, ‘স্যার, লাঞ্চ করে নিন।’
‘পরে করব। আপনি করে নিন গিয়ে।’

শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৬৭+৬৮

তন্ময় না চেয়েই আদেশ ছুঁড়ল। পকেটে তার একান্তগত ফোনটা ভাইব্রেট হয়ে চলেছে সমানে। ম্যানেজার সুমন বেরোতেই স্মার্টফোন খানা বের করল সে। হোয়াটঅ্যাপের নোটিফিকেশন দিয়ে ভরতি লকস্ক্রিন। অরু সহস্র মেসেজ করে রেখেছে। শেষের ভয়েজ রেকর্ড শুনতেই তার গম্ভীরমুখ নরম হয়ে আসে দৃশ্যমান রূপে। ঠোঁটের কোণে এসে জমে মৃদু হাসির রেখা। তার জীবনের সব অশান্তি, ক্লান্তি যেন ওর সামনে হারিয়ে যায়।

শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৭১+৭২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here