শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৬
সুমাইয়া সুলতানা
ঘড়ির কাঁটা প্রায় দুপুরের কাছাকাছি। সূর্যের উত্তাপে সতেজতায় ঘেরা গাছের পাতা গুলো কেমন নেতিয়ে পড়েছে। নেই কোনো হিমশীতল বাতাস। পিচ ঢালা রাস্তাটা এতোটাই উত্তপ্ত হয়ে আছে, যেন মনে হচ্ছে কেউ জ্বলন্ত কয়লা সেখানে ঢেলে দিয়েছে। তীব্র গরমে কাঠফাটা রোদে কাজ করা পরিশ্রমী মানুষ গুলোর গলা শুকিয়ে আসছে। তবুও তারা কেউ থেমে নেই! ক্ষুধা নিবারণের জন্য দু মুঠো ভাতের আসায়, অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। খোলা আকাশে কাকপক্ষীর দেখা নেই।
হয়তো তারা তীব্র রোদের উত্তেজনা থেকে বাঁচতে ছায়াময় আশ্রয়-স্থলে আশ্রয় নিয়েছে। গাড়ি চালাতে চালাতে আশেপাশের এমন অনেক কিছুই অবলোকন করছে, আগুন। আজকে আর কলেজে যায়নি। নাঈমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা নিজস্ব ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রাস্তা ধরেছে। মাথা গরম হয়ে গিয়েছে। রাগ হচ্ছে খুব। কিন্তু রাগটা কার প্রতি? নিজের উপর? নাঈমা, নাকি মোমের উপর? কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। রাগ নিয়ে কলেজে গেলে সেই রাগ স্টুডেন্ট’দের উপর যদি ঝাড়ে? তখন তো শুধু শুধু একটা সিনক্রিয়েট তৈরী হবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সেজন্য আজকে আর কলেজে গেল না। তবে আগুন এটা বুঝতে পারছে, বন্ধু বলে নাঈমা’কে এতদিন এতোটা প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হয়নি। আজকে তো বাড়াবাড়ি করার সীমা লঙ্ঘন করেছে। আগুনের এখন ভয় হচ্ছে। স্কুল লাইফ থেকে নাঈমাকে চেনে ও। নাঈমার স্বভাব সম্পর্কে ও ভালোই অবগত। নাঈমা ভীষণ জেদি, একরোখা একটা মেয়ে। নিজের স্বার্থে সে সবকিছুই করতে পারে। মোম’কে সাবধানে দেখে রাখতে হবে। নাঈমার চোখে মোম’কে পড়তে দেওয়া যাবে না।
আগুনের শরীর ভীষণ ক্লান্ত লাগছে। বাসায় এসে ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে। হয়তো গরমের কারণে’ই এমনটা হয়েছে। আগুনের এত জলদি বাসায় আসায় মোম কিঞ্চিৎ অবাক হয়েছে। আগুনের ক্লান্ত মুখশ্রী’র দিকে তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি আর লেবু বের করে শরবত বানিয়ে রুমে আসলো। আগুন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মোম নরম কন্ঠে ডাকল,
” শুনছেন? আপনার কি শরীর খারাপ লগছে? একটু কষ্ট করে উঠুন। এই শরবত টুকু খেয়ে নিন। ভালো লাগবে। ”
আগুন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। নড়লোও না। যেমন ভাবে শুয়েছিল তেমন ভাবেই শুয়ে আছে। মোমের চিন্তা বাড়লো। চঞ্চল পায়ে কাছে গিয়ে আগুনের কপালে হাত দিয়ে চেক করল। নাহ্, চিন্তার কোনো কারণ নেই। শরীর ঠান্ডাই আছে। মোম জানে, প্রচন্ড গরমে মানুষের জ্বর চলে আসে। মোম পুনরায় মিহি কন্ঠে ডেকে উঠলো,
” মাস্টার মশাই, দয়া করে একবার উঠুন। শার্ট তো ঘামে ভিজে গিয়েছে। চেঞ্জ করে আসুন। ঠান্ডা লেগে যাবে। ”
আগুন উঠে বসলো। শরবত টুকু খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল। মোম বিছানায় বসে আছে। ফ্রেশ হয়ে এসে কথাবার্তা ছাড়াই মোমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। মোম চকিতে তাকাল। আগুন মোমের হাত দুটো টেনে মাথায় রাখলো। মোম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আগুনের মুখের দিকে। আগুন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
” মাথাব্যথা করছে। ”
ব্যস! আর কিছু বলতে হলো না। মোম বুঝে নিল। পেলব হাতে আলতো করে আগুনের চুল টেনে দিচ্ছে। কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার পর মোম মৃদু স্বরে বলল,
” আজকে এত তাড়াতাড়ি চলে আসলেন যে? ”
আগুন গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল,
” ভালো লাগছিলো না। তাই চলে এসেছি। ”
মোম চুলের ভাঁজে আঙুল চালিয়ে ব্যগ্র কন্ঠ বলে উঠলো,
” আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, আপনি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত। কলেজে কোনো সমস্যা হয়েছে কি? ”
আগুন ভরাট কন্ঠে বলল,
” না আমি চিন্তিত, আর না কলেজে কোনো সমস্যা হয়েছে। ”
” আপনি তো এই সময় বাসায় আসেন না। সেজন্য জানতে চেয়েছি। ”
” তেমন বিশেষ কোনো কারণ নেই। এমনিতেও আজকে মাত্র একটা ক্লাস ছিল। ”
” খাবার খেয়ে শুলে ভালো হতো। চলুন আগে খেয়ে নিবেন। ”
” এখন খেতে ইচ্ছে করছে না। রান্না শেষ করে ফেলেছ? ”
” জ্বি। আজকে তাড়াতাড়ি রান্না বসিয়ে দিয়ে ছিলাম। রান্না ছাড়া আমার তো আর কোনো কাজ নেই। টিভি দেখতেও ভালো লাগছিলো না। ”
আগুন গমগমে গলায় বলল,
” সারাক্ষণ যেহেতু বসেই থাকো। কোনো কাজ পাও না। তাহলে বসে বসে একাডেমির বই গুলোও তো পড়তে পারো। পরীক্ষার দিন যে ঘনিয়ে আসছে সেদিকে খেয়াল আছে? ”
” বই কোথায় পাবো? ”
আগুন হতভম্ব হয়ে গেল। রাশভারী কন্ঠে বলল,
” গত বৃহস্পতিবারে না তোমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে গাড়ি পাঠিয়ে তোমার একাডেমির প্রয়োজনীয় যাবতীয় বই গুলে এনে দিয়ে ছিলাম। এরমধ্যেই ভুলে গেলে? ”
মোম থমথমে খেয়ে যায়। গোমড়া মুখে উত্তর দিল,
” ও হ্যাঁ। মনে ছিল না। ”
” তুমি খেয়ে নিও। আমি একটু ঘুমাবো। ”
” আমি একা-একা খাবো? আপনি খাবেন না? ”
” বললামই তো খেতে ইচ্ছে করছে না। ”
মোম ঠোঁট উল্টে বলল,
” তাহলে আমিও খাবো না। আমার একা-একা খেতে ভালো লাগে না। ”
আগুন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। কিছু বলল না। মোমের চুল টানায় বেশ আরাম লাগছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পেলো না। আগুনের থেকে সাড়া না পেয়ে মোম তার দিকে তাকায়। ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। বুঝতে পারলো আগুন ঘুমিয়ে পড়েছে। মোমের মায়া হলো। আজকে হয়তো মানুষটা বেশিই ক্লান্ত ছিল। তাই তো অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মোম কোল থেকে আগুনের মাথা সরিয়ে দেয় নি। সেভাবেই বসে রইল। মোম এক হাত দিয়ে আগুনের গাল ছুঁয়ে দিল। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল স্বামীর মুখের দিকে।
” বিয়ের বাদ্য বাজাও রেএএ
খুশির শানাই বাজাও রেএএ
আমি তো আইসা পড়ছি
ও দেখো, আমি তো আইসা পড়ছি
তাড়াতাড়ি দরজা খোলো, গুল্টে কাকু রেএএ। ”
বাইরের কোলাহল পূর্ণ বাদ্যযন্ত্রের শব্দ আর কারো চ্যাঁচামেচির আওয়াজ কর্ণগোচর হতেই গুল্টের মেজাজ খারাপ হলো। স্ত্রী’কে ডেকে চিৎকার করে বললেন,
” রুমুর মা, কোথায় গেলে তুমি? এত শব্দ কিসের? একটু দেখো তো। ”
গুল্টে বসে বসে সিগারেট ফুঁকছেন। সিগারেটে একটান দিয়ে সেটার বিষাক্ত ধোঁয়া ঠিক মতো ছাড়তেও পারেন নি। তক্ষুনি স্ত্রীর আর্তচিৎকার ভেসে আসে কানে। গুল্টে হন্তদন্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। স্ত্রীর কাছে গিয়ে উদ্বেগ সমেত জানতে চাইলেন,
” কি হয়েছে? ”
” ওগো রুমুর বাবা, সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে গো। ওগো আমাদের কি হবে গো? ”
গুল্টে দাঁতে দাঁত চেপে ধমকে বললেন,
” ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছো কেন? হুম! খেয়ে খেয়ে কি শরীরে চর্বি জমে গিয়েছে? অনেক দিন ধরে আমার হাতে মা’র খাওনা। সেজন্য গলার আওয়াজ বেশি বড়ো হয়ে গিয়েছে। ”
গুল্টের স্ত্রী অভিমানী কন্ঠে বললেন,
” তুমি আমাকে খাবারের খোঁটা দিচ্ছ? ”
পরক্ষণেই রাগ নিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,
” ভুলে যেও না, বিয়ের সময় আমার বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিলে। সাথে বড়ো একটা দোকান। এখনো প্রতি মাসে আমার বাবার বাড়ি থেকে টাকা পাঠায়। তাই আমার সাথে উচ্চ আওয়াজে কথা বলবে না। নয়তো ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো। ”
দমে গেলেন গুল্টে। শুষ্ক ঢোক গিলে মেকি হেসে বললেন,
” আরে বউ রাগ করছো কেন? তুমি জানো না? যখন তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বেশি উপচে পড়ে তখন আমি রেগে যাই। ধমকে কথা বলি। আমি তোমাকে পঁচা পান্তা ভাতের মতো ভালোবাসি। যার ঘ্রাণ বিয়ের দিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সহ্য করছি। যতদিন বেঁচে থাকি সেই ঘ্রাণ সহ্য করেই বেঁচে থাকতে হবে। মাঝে মাঝে তো মনে হয়, এই পঁচা ঘ্রাণ’ই আমার প্রাণনাশের কারণ হবে। ”
গুল্টের স্ত্রী ফুঁসে ওঠে বললেন,
” কি বললে তুমি? ”
গুল্টে চটজলদি উত্তর দিলেন,
” উফফ! বুঝতে পারছো না কেন? তুমি তো আমার বুকে চেপে বসে আছো। সেটাই বললাম। বর্তমান ছেলে-মেয়েদের ভাষায় যাকে বলে ট্রু লাভ। ”
গুল্টের স্ত্রী পাল্টা কিছু বলবেন তার আগেই পেছন থেকে কারো গমগমে গলার আওয়াজ ভেসে আসে,
” আরে গুল্টে কাকু! এটা কেমন ব্যবহার? বাড়িতে নতুন জামাই এসেছে। কোথায় বরন করে আদর আপ্যায়ন করবেন। তা না করে আপনারা দুজন মিলে ঝগড়া করছেন। তাও মেয়ের জামাইয়ের সামনে। আর এদিকে জামাই বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।সেদিকে খেয়াল আছে? লজ্জা হওয়া দরকার আপনাদের। ”
আয়মানের উচ্ছ্বসিত কন্ঠে গুল্টে ঘুরে তার দিকে তাকালেন। ভ্রু কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
” অসভ্য ছেলে। তোকে না বলেছি আমার বাড়ির আশেপাশেও ঘেঁষবি না। এখানে কেন এসেছিস? ”
আয়মান তার ফোনে চলমান বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ বন্ধ করে দিল। তারপর বেশ ভাব নিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
” হিসাব মেটাতে এসেছি। সেদিনের কথা ভুলে গিয়েছেন নাকি? ভুলে গেলেও সমস্যা নেই। মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আমি তো আছি। ”
” বেয়াদব ছেলে! তোর মতো গিরগিটি’কে ভুলে যাবো? প্রশ্নই আসে না। লাঠির বারি না খেতে চাইলে এক্ষুনি এখান থেকে চলে যা। ”
আয়মান হো হো করে হেসে উঠে। ফিচেল গলায় বলল,
” ভুলে যাননি শুনে খুশি হলাম। আমাকে মা’রার আগে একবার এদিকে তাকিয়ে তো দেখুন। ”
বলেই আয়মান দরজার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজার বাইরে তাকাতেই গুল্টের চোখ কপালে উঠে গেল। বিস্ময়ে চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গিয়েছে। একি দেখছেন তিনি? তার মেয়ে রুমু বউ সাজে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার পাশেই বর বেশে দাঁড়িয়ে আছে গুল্টের মদখোর ভাতিজা। আয়মানের দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলেন,
” এসব কি ধরনের রসিকতা? আমার মেয়ে আর ভাতিজা বর-বউ সেজে আছে কেন? ”
আয়মান ঠোঁট কামড়ে হেসে ভাবলেশহীন গলায় বলল,
” বর-বউ সেজে থাকেনি। ওরা আইনগত স্বামী-স্ত্রী। ”
গুল্টে ক্ষেপা স্বরে বললেন,
” আমাদের পারমিশন ছাড়া তুই ওদের বিয়ে দিয়ে দিলি? আমি এই বিয়ে মানি না। ”
” আপনার মানা না মানাতে কিছু এসে যায় না। আইনগত প্রমাণ আছে। ”
রুমু দৌড়ে এসে গুল্টে কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে বলল,
” বাবা, আমি তোমার এই মদখোর ভাতিজা’কে মেনে নিতে পারবো না। আয়মান আমাকে বাধ্য করেছে বিয়ে করতে। ”
মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে গুল্টে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
” ওই হতচ্ছাড়া বলল আর তুই বিয়ে করে নিলি? ও তোকে কি ভাবে বাধ্য করেছে? ”
রুমু ফট করে বাবা’কে ছেড়ে দিল। থমথমে কন্ঠে বলল,
” না না, আয়মান আমাকে বাধ্য করেনি। আমি নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে করেছি। ”
গুল্টে সন্দেহী কন্ঠে বললেন,
” এক্ষুনি তো বললি ও তোকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে। ”
আয়মান মিটিমিটি হাসছে। মনে মনে বলল, কি বলে বাধ্য করেছি সেটা তো আপনার মেয়ে মুখ ফুটে বলতে পারবে না গুল্টে কাকু। আপনার মেয়ে মোটে’ই সাধু নয়। ”
রুমু অনেক ছেলের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে কিছু ঘনিষ্ঠ মুহূর্তও কাটিয়ে ছিল। তার একটা ছবি আয়মানের কাছে ছিল। সেই ছবি পাবলিক করার ভয় দেখিয়ে বিয়েটা দিয়েছে। তাছাড়া, গুল্টের ভাতিজা রিমন নেশা করলেও মেয়ে ঘটিত কোনো ব্যাপার তার সাথে নেই। রিমন, রুমু’কে পছন্দ করতো। নেশাখোর বলে সাহস করে সে কথা রুমু’কে বলতে পারেনি। আয়মান তাকে বলেছে বিয়ে করলে নেশা করা ছেড়ে দিতে হবে। রিমন মেনে নিয়েছে তার কথা। আয়মান মূলত গুল্টে কাকু’কে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই রুমুর বিয়েটা রিমনের সাথে দিয়েছে।
আয়মান ধমকে বলল,
” আহা! এসব কথা এখন বলে কি লাভ? যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। এখন যান, মেয়ে জামাইকে ঘরে নিয়ে বাসরের ব্যবস্থা করুন। ”
রিমন গুল্টের কাছে এসে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে বলল,
” ও গুল্টে কাকু এমন করছেন কেন? আমাদের মেনে নিন। মদ খাই, জুয়া খেলতে পারি তাই বলে কিন্তু আমি খারাপ ছেলে না। চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে সুখেই রাখবো। শুধু যৌতুক স্বরূপ আপনার টাকায় মদ খাবো। এর বেশি আপনার একটা টাকাও খরচ করবো না। পাক্কা প্রমিস। ”
গুল্টে রেগে কিছু বলতে চাইলেন। তার আগেই আয়মান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” উমহু! দুলামিঞা। কথার নড়চড় আমি পছন্দ করি না। আমাদের কি ডিল হয়েছিল মনে আছে তো? ”
” জ্বি, ভাই। মনে আছে। ”
” দ্যাটস গুড। তা বউ’কে সামলে রাখতে পারবে তো? ত্যাড়ামি করলে মাঝে মধ্যে তোমার শ্বশুরের মতো উত্তম মাধ্যম দিবে। বুঝতে পেরেছো? ”
রিমনের চোখ দুটো চকচক করে উঠল। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলল,
” খুব পারবো ভাই। ”
” আচ্ছা, আমি তাহলে এখন আসি। ”
” ভাই, আমার এত বড়ো উপকার করলেন আর কিছু না খেয়েই শুকনো মুখ চলে যাবেন? এক গ্লাস শরবত অন্তত খেয়ে যান। ”
আয়মান বিদ্রুপ হেসে বলল,
” তোমার মনে হয়, তোমার শ্বশুর আমাকে কিছু খাওয়াবেন? শরবত তো দূরে থাক! এক গ্লাস সাদা পানিও খাওয়াবেন না। ”
রিমন মুখ কালো করে বলল,
” ঠিক বলেছেন। আমার টাকা থাকলে আমি নিজেই আপনাকে খাওয়াতাম। তবে আপনি খুব ভালো মানুষ ভাই। দোয়া করি আপনার জীবনে ভালো কোনো মেয়ে আসুক। ”
আয়মান চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” আর পাম দিস না ভাই। এত পাম দিলে কখন জানি ফেটে যাই। ”
পরক্ষণেই ঠোঁট উল্টে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল,
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ১৫
” আজ আর রাতে ঘুম আসবে না রে। যতবারই চোখ বন্ধ করবো, ততবারই আজ যে তোমাদের বাসর সেই কথা স্মরণ হবে। দেশ স্বাধীন হয়ে কি লাভ? স্বাধীন দেশে বসবাস করেই বা কি লাভ হয়েছে? অন্যের বিয়ে দিয়ে বাসেরর ব্যবস্থা পর্যন্ত করে দিতে পারছি। অথচ, নিজের বাসরের ব্যবস্থা করতে পারছি না। আজ রাতে হবু বউ’কে খুব মিস করবো। ”