শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৩
সুমাইয়া সুলতানা
গভীর রাত্রি। জনপ্রাণী তাদের নিজস্ব আবাসস্থলে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। বাইরের কোলাহল পূর্ণ পরিবেশ এখন পুরোপুরি নিস্তব্ধ। আগুন বেডরুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। ধীর কদমে নিজ কক্ষে প্রবেশ করে। রুমে ঢুকতেই ভ্রু কুঁচকে ফেলল। পুরো রুম অন্ধকার। রুম জুড়ে বিরাজ করছে পিনপিনে নীরবতা। বারান্দার দরজা খোলা। বাইরে থেকে রাস্তায় জ্বলন্ত সোডিয়ামের সুক্ষ্ম আলো রুমে প্রবেশ করছে। তবে এই আলোতে তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। আগুন হাঁক ছেড়ে ডাকে,
” মোম, কোথায় তুমি? রুমে আছো? ”
কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। আগুন কক্ষের লাইট জ্বালিয়ে দিল। পেছন ফিরে তাকাতেই নেত্র যুগলে ফুটে ওঠে অবাকের রেশ। বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে বিছানায় বসে থাকা এক অপ্সরার দিকে। বঁধুর মতো সেজে আগুনেরই বিছানায় বসে আছে কোনো এক সুন্দরী রমণী। রমণীর মুখ দেখা যাচ্ছে না। বড়ো করে ঘোমটার আড়ালে তার মুখশ্রী লুকিয়ে আছে। গুটিশুটি হয়ে বসে আছে চুপ করে। আগুন এগিয়ে যায় তার নিকট। পাশে বসতেই রমণী টি নড়েচড়ে উঠল। আগুন অধৈর্য্য সহিত রমণীর মাথার ঘোমটা ফেলে দিল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অমনি চোখের সামনে ভেসে ওঠে আগুনের কোমলমতির স্নিগ্ধ মুখশ্রী। আগুন বোকার মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এটা কি সত্যি? নাকি স্বপ্ন? আগুন শুষ্ক ঢোক গিলে কাঁপা হাতে মোমের এক গাল ছুঁয়ে দিল। মোমের চোখ দুটো বন্ধ। আগুনের ছোঁয়ায় মোমের শরীরে চিরচেনা সেই কম্পন নামলো। আগুন, মোমের হাত ধরে বিছানা থেকে নেমে এসে ফ্লোরে দাঁড় করালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মোমের আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করছে সে। খয়েরী রঙের একটা শাড়ি জড়ানো মোমের গায়ে। লম্বা চুল গুলো খোলা। সেথায় পেছনে কয়েকটা ক্লিপ আটকানো।
মুখে মেক-আপ না থাকলেও হালকা সাজ বিদ্যমান। চোখে মোটা করে গাঢ় কাজল দেওয়া। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। ছোট্ট নরম নাকে আগুনের নামে পড়া সাদা পাথরের নাক-ফুল। যা লাইটের আলোয় জ্বলজ্বল করছে। এতেই যেন, মোমের সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ কানে, গলায়, হাতে স্বর্ণের অলংকার নেই। সেথায় রয়েছে পাথরের কানের ঝুমকো, গলায় পাথরের লকেট বিশিষ্ট একটা চেইন আর হাতে কাঁচের চুড়ি। মোম মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মোমের হাত, পা মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে। আগুন মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তার দিকে। আগুনের চোখ দুটো স্থির রইল মোমের কাঁপতে থাকা ওষ্ঠে। আগুন এক হাতে আলতো করে মোমের চোয়াল চেপে ধরে। রাশভারি গলায় বলে ওঠে,
” এত রাতে ভুত সেজে বসে ছিলে কেন? আমাকে ভয় দেখানোর জন্য? সেটা হলে তুমি সাকসেসফুল। কারণ, আমি সত্যি তোমাকে দেখে ভয় পাচ্ছি। ”
মোম তাড়াক করে চোখ খুলে। কিঞ্চিৎ রাগী গলায় জবাব দিল,
” আমাকে দেখতে আপনার কাছে ভুতের মতো লাগছে? ”
” না! পেত্নীর মতো লাগছে। ”
মোম, মুখ কুঁচকায়। আগুনের সামনে থেকে সরে গিয়ে বারান্দায় চলে গেল। তখন ময়ূরী, মোমকে ডেকে বলেছিল,
মোমের জন্মদিনের এসকল কিছু আগুনের প্ল্যানিং ছিল। ছোট করে জন্মদিনের আয়োজন, মোমের বাবা-মাকে নিয়ে এসে সারপ্রাইজ দেওয়া সব। এ কথা শুনে মোম খুব খুশি হয়েছিল। ময়ূরী এ ও বলেছিল, এখন যদি মোম সেজেগুজে আগুনের সামনে যায় তাহলে আগুনও মোম’কে দেখে খুশি হবে। আগুনের খুশির জন্য মোম, ময়ূরীর কথায় সায় জানায়। ময়ূরী সুন্দর করে নিজ হাতে মোমকে সাজিয়ে দিয়ে যায়। কিন্তু এখন আগুন বলছে মোম’কে ভালো লাগছে না।
সেজন্য মোমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। মোমের অভিমানি মুখের দিকে চেয়ে আগুন ঠোঁট টিপে হাসে। নিজেও এগিয়ে যায় বারান্দার দিকে। মোম গ্রিলে হাত রেখে দূর ঘনকালো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ আকাশে চাঁদের দেখা নেই। নেই কোনো উজ্জ্বল তারা। তবে আগুনের নিজস্ব একটা চাঁদ তো সবসময় তার ঘরেই থাকে। যে তার স্নিগ্ধ জোছনা ছড়িয়ে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে আগুন’কে মুগ্ধ করে। আগুন গিয়ে মোম’কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। মোম ছোটার জন্য ছটফট করছে। আগুন আরও শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” পেত্নী বলায় রাগ করেছ? কিন্তু তুমি কি জানো? এই পেত্নীকেই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। তুমি হয়তো নিজেও জানো না, মোম! তোমাকে ঠিক কতটা সুন্দর লাগছে। তোমাকে দেখে আমার মনের নিষিদ্ধ ইচ্ছা গুলো কড়া নাড়তে শুরু করেছে। আজকে যদি আমার দ্বারা কোনো ভুল হয়ে যায় তাহলে কি তুমি খুব বেশি রাগ করবে? ”
শেষের বাক্য দুটি কেমন করুন কন্ঠে বলল, আগুন। স্লেজ স্বরে কথা বলায় আগুনের ঠোঁট মোমের কানে লাগছে। উষ্ণ নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে মোমের ঘাড়ে। মোম কথা বলতে পারছে না। দেখাতে পারছে না কোনো প্রতিক্রিয়া। গলা শুকিয়ে আসছে যেন চৈত্রের দগদগে খরা। বুক কাঁপছে অস্বাভাবিক ভাবে। আগুন মোমকে ছেড়ে দূরে দাঁড়াল। ট্রাউজারের পকেট থেকে একটা বক্স বের করে মোমের সামনে হাঁটু ভেঙে বসলো। তবে এক হাঁটু ফ্লোরে ভেঙে বসলেও অন্য পায়ের হাঁটু ফ্লোরে স্পর্শ করে নি। বরং সেই পায়ের তালু ফ্লোরে রেখে বসেছে। আগুন ধীর গলায় ডাকল,
” মোম তোমার পা’ টা দেও তো। ”
” ক…কেন? ”
আগুনের চাউনি শিথিল কন্ঠ শান্ত,
” পাল্টা প্রশ্ন নয়, যেটা বললাম সেটা করো। ”
মোম কয়েক কদম এগিয়ে আসলো। আগুন হাত বাড়িয়ে মোমের পা স্পর্শ করতেই মোম কিঞ্চিৎ লাফিয়ে দূরে সরে গেল। আতঙ্কিত গলায় বলল,
” এসব আপনি কি করছেন? পায়ে কেন হাত দিচ্ছেন? জানেন না? স্ত্রীর পায়ে হাত দেওয়া নিষেধ। আমার পাপ হবে। দয়াকরে এমন পাগলামো করবেন না। ”
আগুনের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। ধমকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” তোমাকে এত বেশি বুঝতে কে বলেছে? সবসময় পাকনামি না করলে হয় না? এতকিছু জানো আর এটা জানো না, স্বামীর কথার অবাধ্যতা করলে স্ত্রীর গুনাহ হয়! আমি তোমাকে আদেশ করছি পা টা দেও। ”
” পা দিয়ে আপনি কি করবেন? আমার কথাটা শুনুন। ”
” দিতে বলেছি দেও। ”
মোম ইচ্ছা না থাকা সত্বেও পুনরায় আগুনের সামনে এসে দাঁড়ায়। আগুন মোমের একটা পা নিজের উরুর উপর রাখল। ব্যালেন্স রাখতে মোম একটা হাত আগুনের কাঁধের উপর রাখে। বক্স খুলতেই মোম দেখতে পেলো সুন্দর এক জোড়া নুপুর। নুপুরের মধ্যে ডিজাইন করা গোলাপ ফুলের মধ্যে ছোট ছোট বিভিন্ন রঙের পাথার বসানো। আগের পড়া নুপুর জোড়া খুলে মোমের হাতে দিয়ে, নিজের আনা নুপুর জোড়া আগুন যত্ন নিয়ে মোমের দু পায়ে পরিয়ে দিল। ফর্সা পায়ে নুপুর জোড়া বেশ মানিয়েছে। আগুন মাথা নিচু করে পায়ের পাতায় ঠোঁট ছোঁয়াতেই মোম তৎক্ষনাৎ পা সরিয়ে নিলো। মৃদু আওয়াজে বলল,
” আল্লাহর দোয়াই! এমন করবেন না। ”
আগুন বিরক্ত হলো। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে বলে উঠলো,
” এই শোন, আমাকে পাপ, পুণ্য শিখাতে হবে না তোমার। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। শুধু তোমার পা কেন? তোমার শরীরের প্রতিটা লোমকূপ স্পর্শ করার অধিকার আমার আছে। বুঝেছ? ”
মোম ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে মিনমিন করে বলল,
” গ্রামে থাকতে বড়োদের বলতে শুনেছিলাম, স্বামীর স্ত্রীর পায়ে হাত দিতে নেই। ”
” আর কিছু শোননি? ”
মোম ভড়কে গেল। অবুঝ গলায় প্রশ্ন করলো,
” আর কি শোনার কথা বলছেন আপনি? ”
” এই যে রাত-বিরেতে স্বামীর সামনে ঘুরঘুর করলে কি হয় সেটা? ”
” কি হয়? ”
আগুন ঠোঁট চেপে গমগমে গলায় জবাব দিল,
” কিছু না। ভারী সাজ চেঞ্জ করে শুয়ে পড়ো। ”
আগুন বারান্দা থেকে চলে আসে। বিছানায় নজর পড়তেই চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। এতক্ষণ এসবকিছু খেয়াল করেনি। পুরো খাট জুড়ে ফুল দিয়ে সাজানো। বিছানার চাদরে লাল গোলাপ ফুলের পাপড়ি বিছানো। বেলী, রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে খাটের চারপাশ সুন্দর করে সাজানো। খাটের উপরিভাগে লাল ও সাদা গোলাপ এক সাথে করে সেথায় আটকানো। আগুন অবাক হয়ে চেয়ে আছে। এমন করে খাট সাজালো কে? আগুন তো সাজায়নি। আগুন এসবকিছু ভাবেও নি। তাহলে এসব কে করল? আগুন তো শুধু ভেবেছিল মোম’কে সারপ্রাইজ দেওয়ার পরিবর্তে বউয়ের ঠোঁটে কড়া ডোজের একটা চুমু খাবে। ব্যস! এর বেশি কিছু না। আগুনের ভাবনার মাঝেই মোম নুপুরের রিনঝিন শব্দ তুলে রুমে প্রবেশ করল। আগুন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। দু হাত বুকে গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়ায়। ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” তুমি এত এডভান্স, আগে জানতাম না। ”
মোম বারকয়েক পলক ঝাপটিয়ে ডাগর ডাগর আঁখি তুলে প্রশ্ন করলো,
” কি করেছি? ”
আগুন বিছানার দিকে ইশারা করল। মোম তাকাল তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। মোমের কাছে খাট ফুল দিয়ে সাজানো স্বাভাবিক মনে হলো। গ্রামে থাকতে মোম নিজের খাটে বিভিন্ন ফুল লাগিয়ে রাখতো। তাছাড়া এই রুমে কে, কখন খাট সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে মোম জানে না। মোম তো এখন দেখছে, আগুন দেখানোর পর। এর আগে দেখেনি। দেখবে কি করে? ময়ূরী, মোম’কে সাজিয়ে ইয়া বড়ো ঘোমটা দিয়ে রুমে রেখে গিয়েছে। বলেছে, আগুন না আসা পর্যন্ত ঘোমটা না খুলতে। তারপর পেত্নী বলায় রাগ করে বারান্দায় চলে গেল। দেখার সময় পায়নি। রুমে এসে এই মাত্র দেখতে পেলো। মোম ভাবলো, আগুনের ফুল পছন্দ না। খাটে ফুল দেখে হয়তো রেগে গিয়েছে। তাই সাফাই দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
” বিশ্বাস করুন। আমি খাট সাজাইনি। কে করছে সেটাও জানি না। ”
আগুন হাস্কিস্বরে বলল,
” কে করেছে সেটা বড়ো কথা নয়, বড়ো কথা হলো যে এই কাজটা করেছে আমাদের উচিত তার কষ্টের মূল্য দেওয়া। ”
মোম সরল গলায় জবাব দিল,
” ঠিক বলেছেন। কাল সকালে ময়ূরী আপুর থেকে যেনে নিবো কে সাজিয়েছে। তারপর, আপনি তাকে টাকা দিয়ে দিয়েন। ”
আগুন ব্যগ্র গলায় বলে ওঠে,
” তার হিসাব আমি পড়ে মিটিয়ে দিবো। তার আগে এটা বলো, আমি যে তোমার জন্মদিন উপলক্ষে ছোট ছোট কতগুলো সারপ্রাইজ দিলাম। এর বিনিময়ে আমাকে কিছু দিবে না? ”
মোম মুচকি হেসে বলল,
” ছোট না, মাস্টার মশাই। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো সারপ্রাইজ ছিল। আর আমার কাছে তো আপনাকে দেওয়ার মতো কিছু নেই। যা আছে সবই আপনাদের দেওয়া। পরে কোথাও গেলে আপনার জন্য গিফট নিয়ে আসবো। আর আপনি সবকিছুর মধ্যে বিনিময় কেন চান? ”
আগুন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে ভারিক্কি গলায় বলল,
” তেমাকে তো আমি আগেই বলেছি, তোমাকে আমি ফ্রিতে কিছুই দিবো না। আর গিফট লাগবে না। এখন যা আছে তাই দেও। ”
মোম ভ্রু কুঁচকে গোমড়া মুখে জবাব দিল,
” আপনি অনেক স্বার্থপর। ”
আগুন ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
” নিজের জিনিস নিয়ে আমি সবসময়ই সিরিয়াস। এতে যদি স্বার্থপর ট্যাগ লাগাতে হয়, তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই।
মোম হতাশ কন্ঠে বলল,
” আমার কাছে কিছু নেই। ”
আগুন পাত্তা দিল না। নিরেট স্বরে বলল,
” আজ যদি তোমায় গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেই, তাহলে কি আমার খুব বেশি অন্যায় হবে? আমাদের দুজনের সম্পর্কের মিষ্টি সূচনা আজ তোমার জন্মদিন উপলক্ষে শুরু করলে খুব কি ক্ষতি হয়ে যাবে? ”
আগুনের মোহনীয় কন্ঠে মোমের নারী সত্তা কেঁপে ওঠে। মোম ভালো করেই বুঝতে পারছে আগুন কিসের ইঙ্গিত করছে। ভীষণ হাঁসফাঁস লাগছে। হাত, পা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসছে। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। পায়ের নিচে কেমন শিরশিরানি অনুভূতি হচ্ছে। দু হাতে শক্ত করে পড়নে থাকা শাড়ি মুঠো করে ধরে। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল,
” আপনি আমায় ভালোবাসেন? সেদিন তো উত্তর দিলেন না। আজকে অন্তত উত্তর টা বলে দিন। ”
আগুন মৃদু হাসল। মোমের দিকে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল। মোমের কাজল কালো চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে শীতল গলায় বলল,
” ভালোবাসা জাহির করে বলার মতো কোনো বিষয় না। এটা অনুভব করার বিষয়। অনেক স্বামী-স্ত্রী আছে যারা সবসময় ভালোবাসি ভালোবাসি বলে। কখনো যদি স্বামী প্যারালাইজড হয়ে যায় তখন বেশির ভাগ স্ত্রী সেই স্বামীকে ত্যাগ করে অন্য পুরুষে আসক্ত হয়ে পড়ে। আবার যেসকল স্ত্রীরা এসিডে ঝলসে তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে এবং মা হওয়ার ক্ষমতা চলে যায়, সেসকল স্ত্রীদের একা ফেলে স্বার্থপর স্বামীরা চলে যায়। তাহলে এবার তুমি আমাকে বলো, এখানে ভালোবাসি বলার স্বার্থকতা কোথায়? এমন ভালোবাসা তোমার মাস্টার মশাই বাসে না, মোম। ভালোবাসি শব্দটা না বলেও ভালোবাসা যায়। অজান্তেই তুমি আমার হৃদয়ের কতখানি জুড়ে রয়েছ, সেটা হয়তো আমিও জানি না। তুমি আমার বাগানের যত্নে করা সেই ফুল, যাকে আমি মনের গহীনে লুক্কায়িত ভাবে লালন করি। অনুভব করি। ”
মোম মায়াভরা নয়নে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে স্বামীর আদলে। আগুন ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে পুনরায় বলল,
❝ আমি তোমার প্রতি আমার ভালবাসার বর্ণনা দিয়ে হাজার হাজার কবিতা লিখতে পারি। তবে শব্দ দিয়ে আমার ভালবাসা প্রকাশ করা শেষ হবে না। ❞
মোম কিছু বলছে না। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। শরীর এখনো মৃদু ভাবে কাঁপছে। আগুন আরেকটু এগিয়ে এসে মোমের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল। তক্ষুনি শুনতে পায় আগুনের হৃদয় নিঙড়ানো ডাক,
” কোমলমতি! ”
মোমের হৃৎস্পন্দন কাঁপছে অস্বাভাবিক ভাবে। আগুন নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তার বউয়ের নিষ্পাপ মুখশ্রীর দিকে। মোম দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ছোট্ট শরীরের ভর ছেড়ে দিল আগুনের প্রসস্থ বুকে। আগুন তুরন্ত আগলে নিলো বউয়ের ছোট্ট নরম শরীর। আগুন আবারো ব্যগ্র গলায় ডেকে ওঠে,
” মোম! ”
মোম এবারেও নির্বিকার রইল। তবে আগুনের ডাকে সাড়া স্বরূপ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। প্রসস্থ বুকে মুখ ঘষে নিরবে সম্মতি দিল তার চাওয়া-পাওয়া। আগুন বুঝে নিলো বউয়ের আবদার। ঠোঁটে ফুটে উঠল প্রাপ্তির হাসি। নিজ হাতে স্বযত্নে মোমের হাতের চুড়ি গুলো খুলে দিল। কানের দুল খুলে সেথায় চুমু খেলো। মোম উত্তেজনায় আগুনের টি-শার্ট খামচে ধরে। বুকের ভেতর আরও গভীর ভাবে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করে। গলার চেইন খুলে কাঁধে উষ্ণ ঠোঁটের বিচরণ ঘটালো। মোমের কেঁপে ওঠা শরীর টা মুহূর্তেই পাঁজাকোলে তুলে নিলো। ফুল সজ্জিত বেডে আস্তে করে শুয়ে দিয়ে লাইট নিভিয়ে দেয়।
ডিম লাইট জ্বালিয়ে পুনরায় বউয়ের নিকট ফিরে আসে। টি-শার্টের বুতাম খুলে এক টানে সেটা গা থেকে খুলে দূরে ছুড়ে মারে। অবহেলায় সেটার ঠাই হয় ওয়ারড্রব এর কাছে। মোম চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। লজ্জায় শরীরটা অবশ অবশ লাগছে। এই বুঝি মোম শেষ হয়ে যাবে। আগুনের ভালোবাসা ঢেউয়ের তোপে ওকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। মোমের শরীরের উপর আধশোয়া হয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আগুন। মোমের লজ্জা মাখা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল। এই লজ্জা মাখা মুখ আগুন’কে আরও উন্মাদ করে তুলছে। মোম টের পাচ্ছে আগুনের গরম নিঃশ্বাস, যা মোমের মুখে আঁচড়ে পড়ছে। মোম এক হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরেছে অন্য হাত আগুনের বুকে লেগে আছে। মোম চোখ বন্ধ করা অবস্থায় অনুভব করল ওর কপালে কারো উষ্ণ ঠোঁটের দৃঢ় পরশ। আগুন চুমু খেলো বউয়ের চোখে, নাকে, নরম গালে।
গাঢ় করে চুমু বসালো বউয়ের কোমল থুতনিতে। মুহূর্তেই মোমের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ল নোনাজল। আগুন, মোমের থুতনিতে চুমু খেয়ে ভালোবাসার চিহ্ন স্বরূপ বসিয়ে দিল কামড়ের দাগ। ব্যথায় মোমের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আগুনের সেদিকে খেয়াল নেই। নিজের উত্তপ্ত ঠোঁট জোড়া মিশিয়ে দিল মোমের কোমল ঠোঁটের ভাঁজে। আগুনের একেকটা লাগামহীন ছোঁয়ায় মোমের ক্ষুদ্র শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। আগুনের কোনো হুঁশ নেই। বউয়ের শরীরের নিজের ভালোবাসা বিস্তার করতে ব্যস্ত সে। ঠোঁট জোড়া মুক্তি দিয়ে অধৈর্য্য হাতে বুক থেকে আঁচল সরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল। মাতাল করা চুমু দিতে শুরু করল বউয়ের গলায়, ঘাড়ে।
লজ্জায় টালমাটাল অবস্থায় দিশেহারা মোম। পেলব এক হাত বাড়িয়ে আগুনের চুল খামচে ধরল। অপর হাতে খামচে ধরল আগুনের উন্মুক্ত পিঠ। মোম সুখময় অনুভূতিতে ঘনঘন শ্বাসরুদ্ধকর যুদ্ধ চালালো। টের পেলো স্বামী নামক পুরুষালি প্রথম উন্মাদনা। আগুন থেমে গেল না। বউয়ের ক্ষুদ্র শরীরে নিজের ভালোবাসা বুনতে লাগলো। মোমও সঙ্গ দিল স্বামীর ভালোবাসায়। মোমের বারংবার কেঁপে ওঠা নরম শরীর নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে রাখলো আগুন। রাত যত গভীর হচ্ছে, বদ্ধ কক্ষে দুজন প্রেমের সাগরে ডুব দেওয়া নরনারীর প্রণয় ততই গাঢ়তর হচ্ছে।
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২২
নিরবতা বিরাজমান কক্ষে দুজনের ভারিক্কি শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যতীত আর কোনো কিছুর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। ওদের মিলনের ব্যাঘাত ঘটাতে চায় না বলে, জোনাকিপোকা-রাও আজকে হয়তো তাদের আলো জ্বালাতে লজ্জা পাচ্ছে! স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের প্রথম মিলন যতটা সুখকর, মধুময় হয়। সেই প্রথম মিলন ততটা ভয়ংকর আর যন্ত্রণার ও হয়।