শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৪
সুমাইয়া সুলতানা
সকালের স্নিগ্ধকর পরিবেশে ভোর পাখিগুলো কিচিরমিচির শব্দ তুলে নিজ চিত্তে ডেকে চলেছে। রাতের অন্ধকার সরে গিয়ে আকাশে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ উঁকি দিচ্ছে। প্রতিদিন ভোর হওয়ার সাথে সাথে প্রতিটা মানুষের জীবনে নতুন ভাবে পথ চলার সময়টা শুরু হয়। প্রকৃতির নিয়মে সেই সময়টা শুরু হয়েছে আগুন, মোমের জীবনেও। পাতলা কম্বলের আড়ালে লুকিয়ে আছে দু’জন নরনারী অনাবৃত শরীর। আগুন ঘুমঘুম চোখে পিটপিট করে তাকায়। নেত্রপল্লবে এখনো ঘুমের রেশ স্পষ্ট। শৈলপ্রান্ত গোটানো তার এলোমেলো চুল।
নিজের উপর কারো অস্তিত্ব অনুভব করে নজর রাখে সেথায়। মোম, আগুনের উন্মুক্ত বুকের সঙ্গে মিশে কবুতরের ছানার মতো লেপ্টে শুয়ে আছে। মাথা আগুনের কাঁধে রেখে মুখটা গলার কাছে ডুবিয়ে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। মোমের ভারিক্কি তপ্ত নিঃশ্বাস আঁচড়ে পড়ছে সেখানে। আগুন কপাল ভাঁজ করে চেয়ে আছে। কিয়ৎকাল পর আবার শিথিল হয়ে যায়। ঠোঁট বাঁকিয়ে এক পেশে হাসল। বুক থেকে সরিয়ে মোম’কে বালিশে শুইয়ে দিল। মোমের ঘুম ভাঙেনি। ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে কানে। আগুন ঝুঁকে তর্জনী দ্বারা মোমের ঠোঁট, গাল ছুঁয়ে দিচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মুখে সুড়সুড়ি অনুভব হতেই মোম চোখমুখ কুঁচকে আবারও ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু আগুন সেটা হতে দিল না। মোমের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে আলতো কামড় বসিয়ে দেয়। একটা দিয়েই ক্ষান্ত হলো না। পরপর কয়েকবার একই কাজ করল। মোম মৃদু আওয়াজে গুঙ্গিয়ে ফট করে চোখ খুলল। আগুন মাথা তুলে চোখ রাখে মোমে’তে। মুখটা একদম মোমের মুখের কাছাকাছি। মোম ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় রাতের কথা স্মরণ করাতেই তাড়াক করে কম্বল দিয়ে মুখ লুকানোর চেষ্টা করে। আগুন হাত দ্বারা বাঁধা প্রদান করল। মোম অসহায় মুখভঙ্গিতে তাকায়। ঠোঁট উল্টে অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। আগুন মিটিমিটি হেসে মোমের মসৃণ গালে টুপ করে একটা চুমু খেলো। মোম দাঁতে দাঁত পিষে মিনমিন করে বলল,
” সরুন। ফ্রেশ হবো। ”
আগুন, মোমের গলায় নাক ঘষে নিরেট স্বরে বলে,
” যাও, আঁটকে রেখেছে কে? ”
” আপনি না সরলে উঠবো কিভাবে? ”
” তুমি আমাকে সরিয়ে উঠে পড়ো। ”
” সেটা সম্ভব হলে কি আপনাকে বলতাম? ”
” আমি জানি না। আমি সরতে পারবো না। ”
মোম কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
” দয়া করে উঠুন। কত বেলা হয়ে গিয়েছে। সবাই কি ভাবছে বলুন তো? ”
আগুন মোমের কানের লতি তে চুমু দিয়ে হাস্কিস্বরে জবাব দিল,
” কেউ কিছু ভাবছে না। আর ভাবলেই বা কি? এতে আমার কিছু এসে যায় না। ”
” আপনার কিছু এসে না গেলেও আমার এসে যায়। আমি তো আর আপনার মতো নির্লজ্জ না। ”
আগুন প্রতিত্তোর না করে কম্বল টেনে দুজনের আপাদমস্তক ঢেকে নিলো। উষ্ণ ঠোঁট জোড়া চেপে ধরল মোমের পাতলা ঠোঁটে। মোমের নিঃশ্বাস আঁটকে আসার উপক্রম। ছটফট করতেই আগুন ছেড়ে দিল। কম্বল সরিয়ে মোম জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিলো। আগুন বাঁকা হেসে বলল,
” নির্লজ্জ বলেছিলে না? এবার ঠিক আছে। নির্লজ্জ মার্কা কাজ না করেই এই ট্যাগ টা আমার সাথে যাচ্ছিল না। তাই কাজটা করেই এই ট্যাগ টা নিয়ে নিলাম। ”
” ছিঃ! অশ্লীল। ”
আগুন ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” এখন দেরি হচ্ছে না? ”
” মানে? ”
” একটু আগে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছিলে। আমি তো এখন ধরে রাখিনি, তাহলে যাচ্ছো না কেন? ”
মোম ঠোঁট উল্টে বলল,
” আপনি আগে যান। ”
” কেথায় যাবো? ”
” ফ্রেশ হতে। ”
” কেন? ”
” আমি বলছি তাই। ”
” তুমি বললেই আমি শুনবো কেন? ”
” কেন শুনবেন না? আমি তো আপনার সকল কথাই শুনি। ”
” শুনবো না। আমার এখন উঠতে ইচ্ছে করছে না। তোমার ইচ্ছে হলে তুমি ওঠে পড়ো। আমি তো তোমাকে আঁটকে রাখিনি। ”
” আপনি না সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে পড়েন। আজকে তাহলে ব্যাতিক্রম কেন? ”
” অন্য সময়ের সঙ্গে আজকের সময়ের তুলনা করলে কি হবে? রাতে ঘুমিয়েছিলাম দেরি করে। না, রাতে কিভাবে? ভোরের দিকে ঘুমিয়ে ছিলাম। তাহলে এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে পড়ার প্রশ্নই আসে না। ”
মোম অসহায় মুখ করে বলল,
” প্লিজ। ”
” তুমি আগে উঠলে কি সমস্যা? ”
মোমের সত্তা লজ্জায় হাসঁফাঁস করে উঠল। এক্ষুনি হয়তো কেঁদে দিবে। আগুন ঠোঁট টিপে হাসে। মোম’কে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরল। কানের কাছে মুখ নিয়ে মিহি কন্ঠে বলল,
” উঠে যাবো। তবে আমার একটা শর্ত আছে। ”
” কি শর্ত? ”
” তেমার ওই কোমল টসটসে ঠোঁট দিয়ে আমার গালে একটা চুমু দেও, তাহলে উঠে যাবো। ”
মোম ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
” পারবো না। ”
” আমিও সরবো না। ”
” এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। ”
” এটাই ঠিক। ”
মোম ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে কাচুমাচু হয়ে শুয়ে রইল। উৎকন্ঠায় হানা দিল তীব্র লজ্জা। ঠোঁট কামড়ে চনমনে চিত্তে নজর রাখল টাইলস দ্বারা আবৃত ফ্লোরে। শুষ্ক ঢোক গিলল। আগুন তার খসখসে অঞ্জলিপুটে মোমের গাল চেপে ধরল। চোখে চোখ রেখে গমগমে গলায় বলল,
” আমার কথা শুনলে তোমার আরেকটা লাভ আছে? ”
মোম ব্যগ্র গলায় জানতে চাইল,
” সেটা কি? ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাশভারি গলায় জবাব দিল,
” একদিন জানতে চেয়েছিলে না? আমি বাসায় না থাকলে তুমি কি করো, সেটা আমি কিভাবে জানতে পারি। ”
” হ্যাঁ। ”
” আমার শর্ত মেনে নিলে সেই সিক্রেট টা তোমাকে বলবো। ”
” আগে বলুন। ”
” পড়ে যদি তুমি পাল্টি খাও। ”
” খাবো না, বলুন। ”
” সত্যি তো? ”
মোম আমতা আমতা করে উত্তর দিল,
” স…সত্যি। ”
আগুন উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
” আমি বাসা থেকে চলে যাওয়ার আগে সিসি ক্যামেরা সেটআপ করে দিয়ে যাই, যা আমার ফোনের সাথে কানেক্টেড। ওটার মাধ্যমেই তোমার উপর নজর রাখি। তুমি সারাদিন বাসায় কি করো না করো সবকিছুই দেখতে পাই। বাসায় ফেরার পর ক্যামেরা অফ করে দেই। ”
মোমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনি কি আমাকে নজর বন্দী করে রাখতে চাইছেন? আপনার মনে কি আমাকে নিয়ে কোনো সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে? ”
” এসব তুমি কি বলছো মোম? ভুল বুঝছো তুমি। তুমি একা বাসায় থাকো টেনশন হয় আমার। তোমার সেফটির জন্য সিসি ক্যামেরা সেটআপ করে রেখে যাই, যাতে আমি বাসায় না থাকা অবস্থায়ও তোমার খেয়াল রাখতে পারি। সেধে সেধে অহেতুক অবান্তর কথা টেনে আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক খারাপ হলে সেটার জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে তুমি। ”
শেষের কথাটা রাগী গলায় বলে ওঠে আগুন। মোম ভড়কে যায়। ও তো এমনিতেই জানতে চেয়েছে। ঝটপট বলল,
” আমি এতকিছু ভেবে বলিনি। দুঃখিত। ”
” টাইম আউট। নাউ কিস মি কুইকলি। ”
মোম অসহায় মুখভঙ্গিতে তাকিয়ে বলল,
” অন্য সময় দিলে হবে না। ”
” নো মোর ওয়ার্ডস। ডু হোয়াট আই স্যাইড। ”
আগুন গাল বাড়িয়ে দিল। মোম কাঁপতে থাকা কম্পন যুক্ত ওষ্ঠ এগিয়ে নিলো সেথায়। নরম ওষ্ঠপুট দ্বারা আলতো করে ছুঁয়ে দিল আগুনের গাল। ঝট করে আবার ফিরেয়ে নিলো তা। লজ্জায় কান দিয়ে কেমন ধোঁয়া ছুটছে মনে হচ্ছে। চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। আগুন মুচকি হাসল। মোমের ঠোঁটে শব্দ করে চুমু খেয়ে উঠে গেল।
বাটন যুক্ত ছোট্ট নোকেয়া মোবাইল টা ক্রমশ বেজে চলেছে। উচ্চ ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে, কারো কল এসেছে। আনিকার বাবা হাঁক ছেড়ে ডেকে উঠলেন,
” আনিকা দেখতো মা, কে ফোন করেছে? কেউ বারবার ফোন করছে হয়তো দরকারী ফোন। ”
” যাচ্ছি বাবা। ”
আনিকা বিরক্ত হয়ে ভাতের পাতিল নামিয়ে মার গালতে দিয়ে দ্রুত ছুটলো টেবিলের কাছে। টেবিলের উপরেই রাখা মোবাইল টা। মোবাইল হাতে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। অচেনা নাম্বার। রিসিভ করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতে কল কেটে গেল। আবারও মোবাইল তার নিজ চিত্তে কর্কশ আওয়াজ তুলতেই আনিকা ঝটপট কল রিসিভ করল। ওপাশ হতে পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসলো,
” কি করছো ডার্লিং? ”
আনিকা বিরক্তিকর গলায় বলল,
” আপনি কে? কার কাছে ফোন করেছেন? কোথায় ফোন করেছেন? ”
” আমি তোমার কাছেই ফোন করেছি। ”
” পাগলের সুখ মনে মনে। অযথা ফোন করে ডিস্টার্ব কেন করছেন? রং নাম্বার। ”
” এই, একদম কল কাটবে না। ”
” পরিচয় দিন নয়তো নাম্বার ব্লক লিস্টে রাখবো। ”
” আমি আয়মান। ”
” আয়মান কে? ”
আয়মান মৃদু ধমকে চেঁচিয়ে বলল,
” কপাল ফাটিয়ে নিজেই হসপিটালে নিলে, নিজেই সুন্দর করে ব্যান্ডেজ করে বাসায় পৌঁছে দিলে আর এরই মধ্যে ভুলে গেলে? নট ফ্যার! ”
আনিকা চমকে ওঠে। গমগমে গলায় বলল,
” আপনি আমাকে ফোন করেছেন কেন? নাম্বার কালেক্ট করেছেন কিভাবে? ”
আয়মান বাম কান থেকে ডান কানে ফোন নিয়ে রসিকতা গলায় জবাব দিল,
” তুমি নিজেই তো দিয়েছ। ”
” ফালতু কথা কম বলুন। আমি আপনাকে নাম্বার দিয়েছি? মজা করছেন? আর কক্ষনো আমাকে ফোন করবেন না। ”
” আরে ক্ষেপি রাগ করছো কেন? নাম্বার কোথা থেকে পেয়েছি সেটা তোমার জানতে হবে না। একটা দুঃখের কথা বলতে তোমাকে ফোন করেছি। ”
আনিকা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। চওড়া গলায় বলল,
” কিসের দুঃখ? কার দুঃখ? ”
” আমার দুঃখ। ”
” আপনার দুঃখের কথা আমাকে কেন বলবেন? ”
” এই মুহূর্তে তুমি ছাড়া আমার আপন, কাছের কেউ নেই। ”
” আপনার কথা আমি কেন শুনবো? ”
” শুনতে হবে। না শুনলে মনে আছে তো? ”
” আশ্চর্য! একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে আপনি আমাকে বারবার ব্ল্যাকমেইল কেন করছেন? ”
আয়মান ঠোঁট কামড়ে হাসে। ব্যগ্র গলায় বলল,
” ফায়দা লুটছি। ”
” আপনি এত খারাপ? ”
” খারাপ না, আমি জঘন্য খারাপ। ”
আনিকা বিরক্ত হয়ে বলে,
” বলুন কি বলবেন? ”
আয়মান একটু গলা খাঁকারি দিল। গোমড়া মুখ করে হতাশ কন্ঠে বলল,
” জানো? কালকে রাতে তোমার ভাসুর বাসর করেছে। দেখিনি তবে আমি ড্যাম শিওর করেছে। এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। হয়তো উঠেছে কিন্তু দরজা খোলেনি। এখন তুমিই বলো? এত বেলা হয়ে গেল অথচ এখনো দরজা খুলছে না কেন? ডেফিনিটলী সারা রাত রোমান্স করে এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। ”
আনিকা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” এটা আপনার দুঃখের কথা? ”
” আ রে না! বড়ো ভাই বাসর করেছে এতে আমার কোনো প্রবলেম নেই। আমার দুঃখ হলো, বড়ো ভাই এতটা স্বার্থপর কিভাবে হতে পারলো? আমার বিয়েটা না দিয়েই একা একা বাসর করে ফেলল? এদিকে আমি সারারাত হবু বউয়ের জন্য ছটফট করেছি। বউ ছাড়া এক রাতেই শুকিয়ে কেমন লাঠি হয়ে গিয়েছি। তার কি হবে? তুমি একটা কিছু করো! ”
আনিকা ভড়কে গেল। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রাশভারি গলায় জবাব দিল,
” আমি কি করবো? ”
আয়মান উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল,
” আমাকে বিয়ে করবে। তাহলে আর আমি এত শুকিয়ে যাবো না। বউয়ের শরীরের ঘষা লাগলেই কেমন চাঙ্গা হয়ে যাবো। দেখে নিও। প্লিজ মাই আনিকা বেইবি। চলো না, পরীক্ষার আগেই বিয়েটা সেরে ফেলি। ট্রাস্ট মি, এত আদর করবো। তোমার আর খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হবে না। আমার আদর খেয়েই তোমার পেট ভরে যাবে। ”
আনিকা ফট করে কল কেটে দিল। এই অসভ্য ছেলের সাথে কথা বলার কোনো মানেই হয় না। ছিঃ! কি জঘন্য কথাবার্তা। আনিকা কল কেটে দেওয়ায় আয়মানের মুখটা ছোট হয়ে গেল। ঠোঁট ফুলিয়ে পা বাড়াল ডাইনিং টেবিলের উদ্দেশ্যে।
আগুন, মোমের ঘুম থেকে উঠতে বেলা গড়ালো। প্রায় দুপুর বারোটার কাছাকাছি। মোম তো লজ্জায় রুম থেকে বের হতে চাচ্ছিল না। কিন্তু কতক্ষণ আর রুমে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে? আগুনের বেসামাল উৎপীড়ন থেকে রেহাই পেতে পেতে এত দেরি। রাশেদ ব্রেকফাস্ট করে ব্যাবসার কাজে চলে গিয়েছেন। সাথে মোমের বাবা কেও নিয়ে গিয়েছেন। পুরুষ মানুষ বাসায় কতক্ষণ বসে থাকবেন? সেজন্য রাশেদ, খলিলকেও সাথে আসতে বললেন। মিনা, আতিফা মিলে সকালের নাস্তা বানানোর পরপরই দুপুরের রান্না করে ফলেছেন। এই ছোট বাসায় সবার এক সাথে থাকা সম্ভব না। তাছাড়া, মোমের বাবা-মাকে নিজেদের বড়ো বাড়িটাও তো ঘুরে দেখানো বাকি।
তাই দুপুরের রান্না শেষ করে মিনা মোমের মা, বোনকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেলেন। দরকার হলে আবার বিকেলে এসে মেয়েকে দেখে যাবেন। বাসা তো বেশি দূর নয়, জ্যাম না থাকলে মাত্র এক ঘন্টা লাগে। কাজ শেষে খলিল কে নিয়ে রাশেদ কে ওই বাড়িতেই ফিরতে বলে দিয়েছেন। আগুনের রুমের দরজা বন্ধ ছিল বলে ওকে বলে যেতে পারেন নি। মিনা ভাবলেন, কালকে রাত করে ঘুমিয়ে ছিল তাই হয়তো ঘুম থেকে উঠতে দেরি হচ্ছে। তাছাড়া, আগুন ঘুম থেকে উঠলেও অনেক সময় দরজা বন্ধ করা অবস্থায় বারান্দায় এক্সারসাইজ করে। আগুনের বাসায় থেকে গেল আয়মান, ময়ূরী। মোম রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে উঁকি দিল। কেউ নেই সেখানে তবে রান্নাঘর থেকে খাবারের সুন্দর ঘ্রাণ আসছে। মোম পা বাড়ায় আয়মানের রুমের দিকে। ময়ূরী পা দুলিয়ে ফোন টিপছে। মোম অনুমতি ব্যতীত রুমে ঢুকে ময়ূরী পাশে বসে। মোম’কে দেখে ময়ূরী সোজা হয়ে বসলো। এতক্ষণ বালিশে হেলান দিয়ে বসে ছিল। ময়ূরী হাসি মুখে বলল,
” আজকে এত লেট করে উঠেছো যে? ভাইয়া রাতে ঘুমাতে দেয়নি বুঝি? ”
মোম মাথা নিচু করে নিলো। মিনমিন করে বলল,
” তেমন কিছু না। মাথাব্যথা করছিল তাই একটু বেশি ঘুম পেয়েছিল। ”
ময়ূরী ঠোঁট টিপে হাসে। আঙুল দিয়ে মোমের গলায়, ঘাড়ে ইশারা করে। মোম তাকায় তবে ভালো মতো দেখতে পারে না। বসা হতে উঠে আয়মানের রুমের ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। আয়নায় নজর পড়তেই চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে গেল। গ্রীবাদেশে লাভ বাইটে একাকার অবস্থা। ফর্সা শরীর বলে লাল হয়ে আছে। গালে, থুতনিতে কামড়ের দাগ স্পষ্ট না হলেও সেখানেও লাল হয়ে আছে। মোমের লজ্জায় হাঁসফাঁস লাগছে। তুরন্ত ওড়না দ্বারা মাথায় দুই ঘোমটা দিয়ে দাগ গুলো ঢেকে নিলো। উফফ! আগে কেন খেয়াল করল না মোম? ভাগ্যিস, শুধু ময়ূরী আপু দেখেছে। নয়তো ভুলে যদি আয়মান ভাইয়ার সামনে চলে যেতো আর তিনি দেখে ফেলতেন, তখন? কি বিশ্রী একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হতো মোম’কে! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল মোমের। মোম কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ময়ূরী’কে জিজ্ঞেস করলো,
” আপু, মা কেথায়? বাসায় কাউকে দেখছি না কেন? ”
” মা রান্না করে তোমার মা, বোনকে নিয়ে আমাদের ওই বাড়িতে চলে গিয়েছে। আব্বুর একটা দরকারী কাজ আছে তাই তিনি চলে গিয়েছেন। আর সাথে তোমার বাবাকেও নিয়ে গিয়েছেন। এখানে আমি আর আয়মান থেকে গিয়েছি। ”
” তোমরা ব্রেকফাস্ট করেছ সবাই। ”
” হুম। তবে আয়মান এখনো খায়নি। আর তোমরা দুজন বাকি আছো। ”
” এখন তো প্রায় দুপুর। খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ভাত আছে কি? ”
” আছে। বললাম না, মা রান্না করে রেখে গিয়েছে। যাও খেয়ে নাও। ”
” তুমি খাবে না? ”
” সকালে খেয়েছি। এখন খিদে পায়নি। তোমরা খেয়ে নাও। ”
মোম চলে আসে আয়মানের রুম থেকে। আগুন ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সাথে আয়মানও। মোম গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনারা কি রুটি খাবেন? নাকি ভাত? ”
আয়মান বলল,
” ভাত খাবো। এখন রুটি খেতে ইচ্ছে করছে না। ”
আগুনের দিকে তাকাতেই সেও ইশারায় বুঝালো যে ভাত খাবে। খাবার গরমই আছে। মোম গিয়ে খাবার নিয়ে আসলো। আগুন, আয়মান কে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজের জন্য প্লেটে ভাত নিলো। আয়মান চাপা স্বরে আগুন’কে বলল,
” কালকে আমার পক্ষ থেকে তোমাদের দুজনের জন্য ছোট্ট একটা সারপ্রাইজ ছিল। পছন্দ হয়েছে? ”
আগুন ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
” বেড তুই সাজিয়ে ছিলি? ”
আয়মান মধ্যম সাইজের আস্ত একটা সরপুঁটি মাছ ভাজা প্লেটে নিয়ে কাঁটা বাছতে বাছতে জবাব দিল,
” হুম। ”
” কখন? ”
” তুমি যখন ড্রয়িংরুমে ছিলে তখন এক ফাঁকে গিয়ে সাজিয়ে ছিলাম। ফুলের পাপড়ি ছিড়ে, মালা গেঁথে, গোলাপ ফুল এক সাথে দুইটা করে আগেই ঘাম দিয়ে প্যাঁচিয়ে রেখেছিলাম। সাজানোর সময় ঝটপট কস্টিপ দিয়ে সুন্দর করে খাটে লাগিয়ে বিছানায় পাপড়ি ছিটিয়ে দিয়ে আসি। বেশি সময় লাগেনি। ময়ূরী হেল্প করেছিল। ”
আগুন আর কিছু বলল না। আয়মান পাতে ডাল নিয়ে এক লোকমা ভাত মুখে পুড়ে চিবোতে চিবোতে ব্যগ্র গলায় বলল,
” ব্রো, তোমাদের এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিলাম, কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমার জন্যও কিছু করো। ”
আগুন, মোমকে মাংসের বাটিটা দিতে বলল। মোম উঠে নিজেই চামচ দিয়ে আগুনের প্লেটে মাংসের তরকারি তুলে দিল। আগুন এক মনে খেয়ে চলেছে। আয়মানের কথা যেন সে শুনতেই পায়নি। আয়মানের রাগ হলো। মনে মনে ক্ষোভ প্রকাশ করল,
” কেন রে? আমি কি তোমার সৎভাই? আমি কি তোমার থেকে টাকা পয়সা চেয়েছি? নির্লজ্জের মতো একা একা বিয়ে করে বাসর করে ফেলছো অথচ আমার মতো নিষ্পাপ ছেলেটার কথা একটি বারও ভাবছো না! এই জন্যেই কি এত কষ্ট করে বাসর সাজিয়ে দিয়ে ছিলাম? শালা ফাটা কপাল আমার। অন্যের বাসরের ব্যবস্থা করে দিতে পারলেও নিজের বাসরের ব্যবস্থা করতে পারি না। ”
আগুন গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
” কি বিড়বিড় করছিস? ”
আয়মান কাতর গলায় বলল,
” ভাই, আমার আর আনিকার ব্যাপারটা? ”
” মেয়েটা রাজি হয়েছে? ”
” না হলেও খুব শীগ্রই হয়ে যাবে। তুমি একটু ওর বাবার সাথে কথা বলো। ”
” কি বলবো? ”
আয়মানের মুখটা চুপসে গেল। ভারিক্কি গলায় কিঞ্চিৎ রেগে বলল,
” কি বলবে সেটা কি আমি বলে দিবো? ”
আগুন চোখ গরম করে তাকায়। আয়মান দমে গেল। বুঝতে পারলো গলার আওয়াজ বেশি বড়ো হয়ে গিয়েছে। তাই মাথা নিচু করে নিলো। মেকি হেসে গোমড়া মুখে বলল,
” সরি। ”
” মেয়েটা রাজি হোক তারপর কথা বলবো। ”
আয়মান গালে এক হাত দিয়ে হতাশ কন্ঠে বলে,
” সেদিন কবে আসবে? ”
আগুন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আগুনের খাওয়া শেষ। আয়মানের প্লেটের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৩
” মাছ পুরোটা খাসনি কেন? এক পাশ খেয়ে রেখে দিয়েছিস কেন?
আয়মান ঠোঁট উল্টে ভেঙচি কেটে জবাব দেয়,
” কারণ, আমি ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানি না। ”