শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩০

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩০
সুমাইয়া সুলতানা

” বরপক্ষের খাওয়া-দাওয়ার পর শম্ভুনাথ সেন তেমন ভালো আয়োজন করতে পারেননি বলে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেওয়ার ইঙ্গিত দিলে বরের মামা আশ্চর্য হয়ে বললেন যে,
ঠাট্টা করিতেছেন নাকি?
এর জবাবে শম্ভুনাথ সেন ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করার ইচ্ছা তার নেই বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। কারণ, যারা মনে করে কন্যার বাবা গহনায় ফাঁকি দিবে, তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রশ্নই ওঠে না। ”

পড়ার টেবিলে বসে আনিকা বাংলা বইয়ের পড়া পড়ছে। সামনে টেস্ট পরীক্ষা আছে, এখন পড়ায় মনোযোগী হওয়া অতি আবশ্যক। যখন পড়ায় গভীর ভাবে ডুবে গেল, ঠিক তক্ষুনি ভাইব্রেশনে থাকা মোবাইলটা ভোঁ ভোঁ আওয়াজে বেজে ওঠে। বিরক্তিতে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠল। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও ফোনটা রিসিভ করল। পরিচিত নাম্বার। বেয়াদব আয়মান শিকদারের। মোবাইলটা কানে ধরে ঝাঁঝাল গলায় বলে ওঠে,
” এত রাতে ফোন করেছেন কেন? ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আয়মান আরাম করে চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিল। দেয়াল ঘড়ির কাঁটার দিকে নজর বুলিয়ে মুচকি হেসে বলল,
” বেশি রাত তো হয়নি। সবে রাত নয়টা। ”
আনিকা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। দরজার দিকে একবার উঁকি দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
” আপনার কাছে বেশি না হলেও আমার কাছে অনেক বেশি। রাখছি, আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে। ”
আয়মান মৃদু স্বরে চিৎকার করে উঠল। গমগমে গলায় বলল,
” এখন রাখবে না। কথা আছে। ”
আনিকার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। পড়া রেখে এই ফালতু ছেলেটার সাথে বকবক করার ইচ্ছা ওর নেই। ভারিক্কি গলায় প্রশ্ন করলো,

” বলুন, কি কথা? ”
” কি করছো? ”
আনিকা কটমট করে জবাব দিল,
” আপনার সাথে কথা বলছি। ”
আয়মান উচ্চ আওয়াজে হেসে ওঠে। আনিকার গা জ্বলে উঠল। তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” আপনার আর কিছু বলার আছে? নয়তো আমি রাখছি। ”
আয়মান তুরন্ত উত্তর দেয়,
” রেখো না। আমার সাথে কথা বলা ছাড়া আর কি করছো, সেটা বলো? ”
” পড়ছি। ”
” ডিনার করেছো? ”
” না। ”
” কখন করবে? ”
” সেটা আপনাকে বলতে হবে? ”
” অবশ্যই। ”
” কেন বলবো? ”

” তুমি আর আমি তো একই। ডার্লিং কে রেখে একা কিভাবে খাই বলো? ”
” রাতের বেলা মতিভ্রম হলে, জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হাঁটেন। ”
আয়মান ঠোঁট এলিয়ে হাসল। মোহনীয় কন্ঠে বলে,
” কয়লার উপর দিয়ে হাঁটার দরকার নেই। তোমাকে দেখলে মতিভ্রম এমনিতেই কেটে যাবে। ”
আনিকা আর আয়মান একে-অপরের সাথে কথা জুড়ে দিয়েছে। আয়মান উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলে যাচ্ছে আর আনিকা সেই সকল আজাইরা প্যাঁচাল চুপ করে শ্রবণ করছে। আয়মান ইচ্ছে করে এমন এমন অদ্ভুত কথাবার্তা বলছে যা আনিকা’কে রাগিয়ে দিচ্ছে। আনিকার রাগান্বিত হয়ে বলা কথাগুলো আয়মান খুব ইনজয় করছে।

খুকখুক শব্দ তুলে অবিরত কেশে চলেছে সানাউল্লাহ। কাশির চোটে বুকে ব্যথা করছে। হাত দিয়ে বুক ডলছেন, কাজ হচ্ছে না। ব্যথাটা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। তৃষ্ণা পেয়েছে তার। গলাটা শুকিয়ে আসছে। হাত বাড়িয়ে পানির ক্লাস হাতে তুলে নিতে চাইলেন, কিন্তু সফল হলেন না। সিলভারের ক্লাসটা হাত ফস্কে পড়ে গেল। ফ্লোরে পড়ে টুংটাং আওয়াজ তুলল। সেই প্রতিধ্বনি আনিকার কর্ণগোচর হলো। ভাবুক চিত্তে আয়মানের সাথে কথা বলা চলমান রেখে বাবার রুমে প্রবেশ করল। মুহূর্তে সারামুখ আতঙ্কে ছেয়ে গেল। মুঠো হতে মোবাইলটা আছড়ে নিচে পড়ে যায়। আনিকার তনুমন কনকনে শীতের মতো থরথর করে কেঁপে উঠল। বাবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে ওঠে,
” বাবা….! ”

হসপিটালের বেঞ্চিতে বিষন্ন মনে বসে আছে আনিকা। মেয়েটার গাল বেয়ে ক্রমাগত নোনাপানি গড়িয়ে পড়ছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখেমুখে লেপ্টে আছে একরাশ অন্ধকার। হৃৎপিণ্ডটা ভয়ে দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে! ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকাতে চাচ্ছে, কিন্তু কান্না গুলো দলা পাকিয়ে কন্ঠ ফুঁড়ে গুনগুন শব্দ করে বেরিয়ে আসছে। তার পাশে চিন্তিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে আয়মান। আস্তে করে আনিকার পাশে বসে দ্বিধা নিয়ে কাঁধে হাত রাখল। ভেবেছিল আনিকা ঝারি মেরে হাত সরিয়ে দিবে, তবে সে দিল না। আয়মান’কে অবাক করে দিয়ে তার বুকে কপাল ঠেকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠল মেয়েটা। থমকে গেল আয়মান! বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় সে! হার্টের বাম পাশে ধড়াস ধড়াস করছে। আনিকার একটুখানি ছোঁয়ায় পুরুষালী শরীরটা মৃদু কম্পনে কেঁপে ওঠে। হাত দুটো মুঠো করে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। অধরে ধরা দিল কিঞ্চিৎ মুচকি হাসি। চোখ খুলে হাত উঠিয়ে আদুরে সমেত আনিকার মাথায় রাখল। ভরসা স্বরূপ বলে উঠলো,

” চিন্তা করো না। আঙ্কেল দ্রুত ঠিক হয়ে যাবেন। আল্লাহ’কে ডাকো। ”
তখন আনিকা সানাউল্লাহর রুমে এসে দেখে, তিনি বুকে হাত চেপে বিছানায় তড়পাচ্ছেন। চোখ উল্টে কেমন ছটফট করছেন। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। বাবার এরকম অবস্থা দেখে সজোরে চিৎকার করে উঠেছিল মেয়েটা। দৌড়ে গিয়ে বাবাকে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে ফেলেছিল। মোবাইল নিচে পড়া সত্ত্বেও কল কাটেনি, বন্ধও হয়নি। ওপাশ হতে আয়মান উদ্বেগ সমেত হ্যালো, হ্যালো বলেই চলছিল। কিন্তু আনিকার থেকে উত্তর স্বরূপ কান্নার আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায়নি। একা মেয়ে হয়ে এই রাতে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কোথায়, কিভাবে যাবে? কোনো কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না।

ব্যাকুলতা চিত্তে যা মাথায় এসেছে, সেটাই করেছে। সরিষা তৈল গরম করে বাবার বুকে মালিশ করে দিয়েছে। পানির গ্লাস মুখের সামনে ধরলেও তিনি পানি পান করতে সক্ষম হলেন না। ঠোঁট দুটো বাঁকিয়ে মুখের পানি পড়ে গিয়ে গলা, বুক ভিজে গিয়েছে। আনিকা কি করবে, কিছুই বুঝতে পারছিল না! ঠিক সেই মুহূর্তে আয়মান এসে ওদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। আনিকার গলা ছেড়ে কান্নায় আয়মান বক্ষস্থলে চিনচিন ব্যথা অনুভব করছিল। দিক-বেদিক ভুলে মিনা’কে ইমপোর্টেন্স কাজ আছে বলে রাতের বেলা বাসা থেকে বেরিয়ে আনিকাদের বাড়িতে চলে আসে। সানাউল্লাহর শরীরের অবস্থা বেগতিক দেখে, আশেপাশে কয়েকজনকে ডেকে গাড়িতে উঠিয়ে দ্রুত ছুটলো কাছাকাছি কোনো হসপিটালে। আয়মান নিজেদের বাড়ির গাড়ি করে এসেছিল, সেজন্য এক্সট্রা গাড়ি ভাড়া করার প্রয়োজন হয়নি। হসপিটালে পৌঁছে আয়মানের পরিচিত সিনিয়র একজন ডক্টরের সাহায্যে সানাউল্লাহর চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করা হয়।
ক্রন্দনরত অবস্থায় ভাঙা গলায় আনিকা বলে উঠলো,

” আমার বাবা ছাড়া আমার কেউ নেই। বাবার কিছু হয়ে গেল আমি বড্ড একা হয়ে যাবো। ”
আয়মান শান্তনা দিতে পারলো না। ডক্টর এখনো বের হয়নি। কি হয়েছে সানাউল্লাহর বা কি হতে চলেছে? বোঝা মুশকিল! তবুও আনিকা’কে সামলাতে বলল,
” ভরসা রাখো, আঙ্কেলের কিছু হবে না। আমি আছি তোমার পাশে। তুমি একা নও। ”
আনিকা ভেজা চোখে তাকায়। নিস্প্রভ, শান্ত চাউনী তার। শ্যামলাটে মুখশ্রী কেমন প্রাণহীন দেখাচ্ছে। কান্নার প্রকোপে, ফুঁপানোর দরুন ঠোঁট দুটো মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠছে। কম্পমান ঠোঁটের দিকে চোখ পড়তেই আয়মানের ঘোর লেগে যাচ্ছে। চটজলদি নজর ফিরিয়ে নিলো সে। শুষ্ক ঢোক গিলল।
আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ডক্টর মাস্ক খুলে বেরিয়ে আসলেন। আনিকা উঠে ডক্টরের কাছে এসে আতঙ্কিত মুখে ভীতি গলায় জিজ্ঞেস করলো,

” আ…আমার ব..বাবা, ঠ..ঠিক আছে তো? ”
ডক্টর নিশ্চুপ রইলেন। আনিকার ভয় বৃদ্ধি পেলো। কাতর গলায় পুনরায় জানতে চাইল,
” কথা বলছেন না কেন? আমার বাবা…! ”
আয়মান এসে আনিকার পাশে দাঁড়ায়। এই ডক্টর বোবা হয়ে আছে কেন? তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে প্রশ্ন করলো,
” কি সমস্যা ডক্টর? চুপ করে আছেন কেন? উত্তর দিন। আপনার চুপ থাকায় আমাদের চিন্তার পরিমাণ বাড়ছে। আপনি কি সেটা বুঝতে পারছেন না? ”
ডক্টর ধীর গলায় জবাব দিলেন,

” পেশেন্টের হার্টের সমস্যা। খোদার কাছে শুকরিয়া মারাত্মক ক্ষতি হয়নি। তিনি মেবি অতিরিক্ত টেনশন করেন, যার জন্য বুকের ব্যথা অধিক হারে বেড়ে গিয়েছিল। পেশেন্ট’কে টেনশন ফ্রী রাখবেন। সবসময় হাসিখুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। মেডিসিন লিখে দিচ্ছি, সময়মতো খাওয়াবেন। ইনশা আল্লাহ, ঠিক হয়ে যাবেন। ”
আনিকা চোখ বুঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। বুক থেকে যেন কোনো ভারী বস্তু নেমে গিয়েছে। ছটফটিয়ে বলে ওঠে,
” আমি বাবার সাথে দেখা করতে চাই। আর আপনার নির্দিষ্ট টাকা আমি পড়ে দিয়ে দিবো। ”
ডক্টর মুচকি হেসে বললেন,
” কোনো পেমেন্ট করতে হবে না। আয়মান আপনাদের পেমেন্ট করে দিয়েছে। আপনি চাইলে আপনার বাবাকে আজকেই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। ”
আনিকা উৎফুল্লতা সমেত বলে,
” ধন্যবাদ, ডক্টর। ”

ডক্টর চলে গেলেন। আনিকা তাকায় আয়মানের দিকে। আয়মান হাত দিয়ে মাথা চুলকায় এদিক-ওদিক নজর ঘুরায়। ডক্টরকে নিষেধ করেছিল, এসব কথা আনিকা’কে জানাতে, ডক্টর আয়মানের কথা অগ্রাহ্য করে বলে দিলেন। আচ্ছা, আনিকা আবার ভাববে না তো আয়মান ওদের উপর দয়া দেখাচ্ছে? উল্টা পাল্টা চিন্তা করে ভুল বুঝবে না তো? আয়মান এসব ভাবনায় মশগুল যখন, তখন আনিকা তার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মৃদুস্বরে বলে উঠলো,
” কৃতজ্ঞতা কিভাবে প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না। ”
আয়মান পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আনিকার পানে। ঠোঁটে তার না বলা কতশত কথা। ব্রীড়ার পাহাড় সমান আকাঙ্ক্ষা। চাউনীতে একটুকরো আশা। কন্ঠ খাদে এনে শীতল গলায় বলল,

” কৃতজ্ঞতা জানাতে চাও? ”
” চাইতো। ”
” কৃতজ্ঞতা তোলা রইল। সময় সুযোগ বুঝে চেয়ে নিবো। ”
আনিকা ম্লান হাসল। কন্ঠ নিচুতে নিয়ে নরম গলায় জানাল,
” অপেক্ষায় থাকলাম। ”
” চলো, আঙ্কেলের সাথে দেখা করে আসি। ”

বেশ রাত করে আড্ডা দেওয়ার পর সবাই হোটেলে ফিরে আসে। ডিনার করে সকলে নিজেদের বরাদ্দকৃত রুমে চলে যায়। হোটেলের রুমে পরিবেশটা স্নিগ্ধ আর মায়াময় আবহাওয়ায় ভরপুর। মোম জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন সে কিছু একটা অনুভব করছে। কিন্তু সেটা কি, ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না! আগুন ধীরে ধীরে তার পেছনে এসে দাঁড়ায়। মোম’কে দেখে এক মায়াবী নিস্তব্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। আস্তে আস্তে আগুন তার কোমর আলতো ভাবে আঁকড়ে ধরে। মোম প্রথমে একটু সরে যায়, লজ্জার মৃদু আভায় মুখ নিচু করে ফেলে। কিন্তু তারপর সে ধীরে ধীরে শান্ত হয়। আগুনের সেই উষ্ণ স্পর্শে সর্বাঙ্গে ঝংকার দিয়ে উঠল। আগুন, মোমের হাত ধরে একটু ঘুরিয়ে তার মুখোমুখি করে। চোখে চোখ পড়তেই দু’জনের হৃদয় একত্রে স্পন্দিত হয়ে ওঠে। মোমের চোখে চোখ রেখে আগুন নিরেট স্বরে বলে ওঠে,

“এই মুহূর্তটা আমি তোমাতে বিলিন হতে চাই। ”
কি নিদারুন আবদার! মোম বলার মতো কথা খুঁজে পেলো না। আগুন, মোমের কপালে কপাল ঠেকিয়ে নেশালো গলায় ডাকে,
” কোমলমতি?
মোম ঘনঘন শ্বাস টেনে মৃদু আওয়াজে উত্তর দিল,
” হু..হুম। ”
” ছুঁয়ে দিলে রাগ করবে কি? ”
মোম নিরব। আগুনের বক্ষবিভাজনে উতালপাতাল ঢেউ হানা দিয়েছে। এই ঢেউয়ের তোপ শিথিল করতে তার মোম’কে প্রয়োজন। আগুন পুনরায় একই ভঙ্গিতে ডাকল,
” মোম? ”
মোম নিশ্চুপ থেকে আচমকা আগুনের বুকে তার লজ্জারাঙা মুখটা লুকিয়ে ফেলল। নিরবতা দিয়ে আগুনের ডাকে সাড়া দিল। আগুন তার ঠোঁটের কোণে এক মিষ্টি হাসি এনে ঘোর লাগা গলায় বলে,
” আমার বেসামাল উৎপীড়নের সাগরে তোমাকে স্বাগতম, আমার কোমলমতি। ”

মোম চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। সময়ের পলকে নিজেকে আবিষ্কার করল নরম বিছানায়। চিরচেনা সেই সুখকর লজ্জা তেড়ে এলো চঞ্চল কিশোরীর মুখশ্রীতে। ভারিক্কি নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজের গাত্রে গাত্রে তীব্র নেশা জানান দিচ্ছে। আগুন উষ্ণ ওষ্ঠপুট এগিয়ে মোমের কপালে আলতো করে ঠোঁট রাখে। দৃঢ় চুমু খেয়ে গাল বেয়ে তার চিবুকে এসে ঠোঁটের স্পর্শ ফেলল। প্রতিটি চুম্বনে মোমের শরীর কেঁপে ওঠে। এই স্পর্শ তার মনের গভীরে এক অদ্ভুত আবেগের জন্ম দিচ্ছে। আগুনের হাত মোমের পিঠ বেয়ে ধীরে ধীরে তার কোমর পর্যন্ত নেমে যায়। এক ঝটকায় তাকে আরও কাছে টেনে নেয়। মোমের নরম শরীর যেন পুরোপুরি আগুনের বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে যায়, আর মোম এই বন্ধনে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চায়। নিজেকে সম্পূর্ণভাবে আগুনের বেসামাল উৎপীড়নে সমর্পণ করতে প্রস্তুত সে। আস্তে আস্তে আগুন মোমের ঘাড়ের পাশে নিজের ঠোঁট রাখে, এক ধরনের মিষ্টি শিহরণ মোমের শরীর জুড়ে বয়ে যায়।

আগুনের ঠোঁটের কোমল স্পর্শে মোম আরও বেশি করে নিজেকে আগুনের মাঝে হারিয়ে ফেলছে। আগুন, মোমের গলা থেকে ওড়না সরিয়ে সেথায় ঠোঁট বুলিয়ে চলেছে। মোমের প্রতিটি শ্বাস যেন একটু একটু করে থেমে আসে। নিঃশ্বাসের গতি জোড়ালো। তার সমস্ত ইচ্ছা, আবেগ, ভালোবাসা যেন আগুনের প্রতিটি স্পর্শে নিবেদিত হয়ে যাচ্ছে। মোমের হাত এবার ধীরে ধীরে আগুনের বলিষ্ঠ পিঠের ওপর উঠে আসে। সে তাকে শক্ত করে ধরে, যেন এই মুহূর্তটি আর কখনো শেষ না হয়। আগুন তার হাত দিয়ে মোমের মুখের পাশটা আলতো ভাবে ছুঁয়ে দেয়। প্রতিটি মুহূর্তে মোমকে আরও গভীরভাবে অনুভব করতে চায়।

আগুন মুখটা মোমের কাছাকাছি নিয়ে আসে। নেশাক্ত চোখে মোমের কোমল মুখটা অবলোকন করছে। অধর জোড়া এগিয়ে মোমের নাকে ছুঁয়ে দিল। থুতনিতে গাঢ় করে চুমু খেল। অপেক্ষা করল না, মুহুর্তের মধ্যে দু’জনের ঠোঁট যুগল একত্রে মিলিত করে দিল। মোম দম খিঁচে আগুনের সিল্কি চুল আঁকড়ে ধরে। এক অদ্ভুত মাধুর্যে তাদের হৃদয়ের আবেগ সমেত ধরা দেয়। মোমের ঠোঁটে চুমু খেয়ে আগুন তাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। হাত বাড়িয়ে ওড়না টেনে দূরে ছুড়ে মারে। মুখ ডুবিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুলল বউয়ের গলদেশ, ঘাড়! আগুনের উন্মুক্ত ভারিক্কি শরীরটার সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দিল মোমের পাতলা ক্ষুদ্র শরীরের উপর। মোমের নিঃশ্বাস আটকে আসছে। খামচে ধরেছে আগুনের বলিষ্ঠ পিঠ। উন্মাদ আগুন তাকে এক রত্তি ছাড় দিল না।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ২৯

এই রাত যেন, এই মুহূর্ত কেবল প্রেমে উন্মাদনায় থাকা দুই নরনারীর জন্য থেমে গিয়েছে। আর তাদের হৃদয়ের ভাষাই এখানে একমাত্র ভাষা। রাত গভীর হতে থাকে, কিন্তু তাদের আবেগের এই নিরবধি যাত্রা যেমে নেই। যেন সময়ে বাঁধা পড়েছে। তাদের চারপাশে যেন শুধুই মায়াবী নিস্তব্ধতা, আর একে অপরের অস্তিত্বে তারা হারিয়ে গেছে। একে অপরের মাঝে গভীর ভালোবাসা আর আবেগে মগ্ন হয়ে রয়েছে। রাতের প্রতিটি স্পন্দন, প্রতিটি নিঃশ্বাসে তাদের ভালোবাসা যেন আরও গভীর হয়ে ওঠেছে।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৩১