শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪২

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪২
সুমাইয়া সুলতানা

বর্তমান গুমোট বাতাবরণ আবহাওয়ায় অল্পস্বল্প শীত শীত ভাব। এই স্বল্পতা ঠান্ডা ভোর সকালে অনুভব করা যায়। দুপুর সময়টা আসতেই সেটা থাকে না। ভ্যাঁপসা গরমের সময় শুরু হয়ে যায় তখন। সূর্য থেকে যে বিকিরণ প্রক্রিয়ায় ধরণিভৃৎ তাপ আসে, সেই তাপ জড় মাধ্যমের সাহায্য ছাড়াই উষ্ণ বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে সঞ্চালিত হয়। দিনের আলো ফোঁটার আগে ভোর পাখিগুলো নিজ স্বরে আপন ছন্দে গলা ছেড়ে কলকলিয়ে গান গাইতে গাইতে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। ভোর প্রকৃতিতে বৃক্ষলতা সতেজতা ঘেরা থাকে। বিন্দু বিন্দু জলকণা উঁকি দেয় সেথায়। চনমনে চিত্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠে ধরীত্রি।

টয়রা কাপড়ের তৈরী ডিজাইন করা হলদেটে মাখনরঙা জানালার পর্দা ভেদ করে, সূর্যের সুক্ষ্ম আলোকরশ্মি কিরণ রুমে প্রবেশ করছে। মৃদু হাওয়ায় উড়ছে রঙীন পর্দা। ঝলমলিয়ে উঠছে কক্ষের বিশেষ ধরনের পাথরের কারুকার্য শোভিত বেশ কিছু ফার্নিচার।
বাইরের মৃদু আলোকিত রশ্মি মোমের চোখে পড়তেই কপাল কুঁচকে ফেলল সে। আড়মোড়া ভেঙে উঠতে যাবে, তক্ষুণি নিজের উপর ভারী কোনো অস্তিত্ব অনুভব করল। পিটপিট করে চোখ খুলে নজর রাখল সেথায়। আগুনের স্নিগ্ধতায় ভরপুর বাচ্চামো মুখমণ্ডল ভেসে উঠল চক্ষুদ্বয়ের সাম্মুখে। শৈলপ্রান্ত গোটানো তার, এলোমেলো চুলে। ঠোঁট জোড়া নিভৃতে কিঞ্চিৎ বেঁকে রয়েছে। মোমের অনাবৃত দেহের বক্ষভাঁজে মুখ লুকিয়ে পরমশান্তিতে ঘুমিয়ে আছে। লোকটার ভারিক্কি তপ্ত নিঃশ্বাস মোমের গলায় পড়ছে। সাপের মতো শক্ত করে প্যাঁচিয়ে নিজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। মোম পেলব হাত গুঁজে দিল ব্যক্তিগত পুরুষটির চুলের ভাঁজে। আলতো করে টেনে দিল তা। বুকের সঙ্গে গাল লাগায় ঠোঁট জোড়া চোখা হয়ে আছে। দেখতে অনেকটা পাখির ঠোঁটের মতো লাগছে।
মোম পদ্মকুড়ির ন্যায় ঠোঁট মেলে একপেশে হাসল। মিহি কন্ঠে ডাকল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” মাস্টার মশাই, উঠুন। বেলা গড়ালো যে। ”
আগুনের ঘুমঘুম নিষ্প্রভ ক্ষীণ জাবাব,
” উমম কোমলমতি, ঘুম পাচ্ছে। ঘুমোতে দেও। ”
আগুন মৃদু গুঙিয়ে নড়েচড়ে পুনরায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। মোমের হাসি পেলো। হাতের আঙ্গুলি দ্বারা আগুনের কানের মধ্যে সুড়সুড়ি দিল। লাভ হলো না। পিঠে, গলায় দিল। একই অবস্থা, কোনো হেলদোল নেই। মোমের মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই লোকের সুড়সুড়ি নেই নাকি? মোম’কে এমন ছোঁয়া দিলে এতক্ষণে তার অবস্থা বেগতিক অস্বাভাবিক হয়ে যেতো। মোম ঠেলে আগুন’কে সরিয়ে দিতে চাইল, তবে তার চুনোপুঁটি হস্তে সেটা সম্ভব হলো না। নিজেও নড়তে পারছে না। আগুন তার ভারিক্কি শরীরের অর্ধেক ভার মোমের উপর দিয়ে রেখেছে।
মোম ঠোঁট উল্টে হালকা চেঁচিয়ে বলে ওঠে,

” উঠুন বলছি। এত সকাল পর্যন্ত পড়ে পড়ে ঘুমানো মোটেই উচিত নয়। ”
আগুন বিরক্ত হলো। ঘুম কেটে গিয়েছে। আজকে তার কলেজে যেতে হবে না। ছুটি পেয়েছে, তাহলে এত তাড়াতাড়ি ওঠার কি প্রয়োজন? মেজাজ খারাপ হলো। সজোরে মোমের গ্রীবায় সুক্ষ্ম দাঁতের শক্তি প্রয়োগ করল। ব্যথায় কুঁকড়ে গেল মেয়েটা। ক্ষীণ স্বরে ব্যথাতুর আওয়াজ তুলল। এতে আগুনের কোনো ভাবান্তর ঘটলো না। ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে রইল।

মোম দুম করে আগুনের উন্মুক্ত পিঠে আঙুল মুষ্টি বদ্ধ করে কিল বসিয়ে দিল। আগুন চকচকে দন্তপাটি বের করে হেসে ফেলল। মোম কি তাকে সত্যি মেরেছে? আগুনের বিশ্বাস হচ্ছে না! মনে হয়েছে, কোনো নরম তুলতুলে জিনিস পিঠের উপর পড়েছে।
আগুন সন্তর্পণে বালিশে শুয়ে পড়ল। মোম’কে বলিষ্ঠ হাতে বেষ্টন করে নিজের উপর নিয়ে নিলো। কপালে চুমু খেল দৃঢ়তা সমেত। মুখের উপরে আসা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে ঘুম জড়ানো মাদকতা গলায় বলল,
” বেশি সকাল তো হয়নি! সবে ভোরের আলো ফুটেছে। এখন ওঠে কি করবে? ”
মোম বিরতিহীনভাবে অন্য দিকে চেয়ে ফ্যাচফ্যাচ স্বরে আওড়াল,

” নাস্তা বানাতে হবে না? তাছাড়া ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠতে হয়, দেরি করা ঠিক না।”
মোমের গালে নাক ঘষে আগুন নিরেট স্বরে বলে,
” বাসায় তো আর কেউ নেই, যে তুমি ব্রেকফাস্ট না বানালে তারা খেতে পারবে না! দরকার হলে হোটেল থেকে নিয়ে আসবো। তবুও তুমি এখন উঠতে পারবে না। আমি উঠতে দিবো না। আমার সাথেই লেপ্টে শুয়ে থাকতে হবে। ”
মোম মুখ ঝামটি মারলো। আগুন ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেলল। বিষয়টা ভালো লাগলো না। চোয়াল ধরে চার জোড়া ওষ্ঠপুট একত্রে মিলিত করে দিল। আকস্মিক আক্রমণে মোম চক্ষুদ্বয় বড়ো বড়ো করে তাকাল। আগুনের লাগামহীন বেলেল্লাপনা আচরণে বাধ্য হয়ে সঙ্গ দিল। সময় নিয়ে মোমের অধর ছাড়ল। মোমের গলায় আলতো কামড় দিয়ে ঠোঁট জোড়া সেথায় চেপে রেখে গুরুগম্ভীর স্বরে বলে ওঠে,

” আমাকে নিয়ে তোমার কোনো অভিযোগ আছে মোম? ”
মোম মাথা তুলে তাকায়। অবুঝ গলায় প্রশ্ন করলো,
” আপনি ঠিক কি বলতে চাইছেন? ”
আগুন রাশভারী কন্ঠে জানালো,
” মানে আমাকে নিয়ে তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি-না? আমার কাছে তুমি নিজেকে সুখী মনে করছো কি-না? এসব জানতে চাইছি! ”
র’ক্তজবা অধর প্রসারিত করে মোম কিঞ্চিৎ মুচকি হাসল। নিরদ্বিধায় গালে কোমল এক হাত রেখে আগুনের নাকে টুপ করে একটা চুমু খেল। ঘন পাপড়ি যুক্ত নয়ন যুগল অল্প সংকুচিত করে দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাল। পাতলা অধর নেড়ে নেড়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে জবাব দিল,

” আপনার মতো স্বামী পেয়ে যেই মেয়ে বলবে সে সুখ খুঁজে পায়নি! তাহলে আমি মনে করি পৃথিবীতে আর কোনো নারী তার স্বামীর কাছে সুখী হতে পারবে না। ”
আগুন তৃপ্তিদায়ক প্রশান্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। মোম’কে আরও শক্ত করে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে উৎফুল্লতা স্বরূপ ভরাট গলায় বলল,
” তোমার মতো নরম মনের, নরম স্বভাবের জীবন সঙ্গীনি পেয়ে আমি তার চেয়েও বেশি খুশি, আমার কোমলমতি। সবসময় এভাবেই লুকিয়ে রাখব আমার বক্ষপিঞ্জরায়। এই জায়গাটা একান্তই তোমার জন্য বরাদ্দকৃত। তুমি ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ সারাজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হোক।

সহনশীল উষ্ণ গরমের দুপুর, প্রকৃতির এক উজ্জ্বল এবং তপ্ত সময়, যেখানে সূর্যের তীব্র রশ্মি মাটি ও আকাশে এক অন্যরকম উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়। এই সময়টা যেন এক নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, যেখানে প্রকৃতি তার সর্বাত্মক রূপে উপস্থিত থাকে। শীতল বাতাস যদিও গরমের ছোঁয়া দেয়, তবুও তা এক অদ্ভুত প্রশান্তি আনে। তবে চৈত্রের সময়টাতে কাঁচা মরিচ, শসা, ও তরমুজের মত মৌসুমি ফলের বিক্রি শুরু হয়ে যায়, আর এগুলোর তাজা গন্ধ ভাসতে থাকে বাতাসে।

ভরদুপুরে আনিকার কলেজের গেইটের সম্মুখে গাড়ির সঙ্গে হেলান দিয়ে পা আড়াআড়ি ভাবে রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে আয়মান। ভ্রু কুঁচকে ঠোঁট জোড়া চোখা করে ফোন টিপছে আর বারবার গেইটের দিকে নজর বোলাচ্ছে। সেই কখন থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আনিকার জন্য অপেক্ষা করছে। অবশ্য দোষ আয়মানের! এত তাড়াতাড়ি কেন এসেছে? আনিকা বলেছে বিকাল তিনটার সময় আসতে। কিন্তু আয়মান দেড়টায় চলে এসেছে। বিরক্তিতে নাকমুখ বিকৃত করে রেখেছে। ফর্সা মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে সূর্যের রোশনাইতে।
অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে আগমন ঘটল আনিকার। হাঁপাতে হাঁপাতে আয়মানের সামনে এসে দাঁড়ায়। দৌড়ে আসায় হয়রান হয়ে গিয়েছে। আয়মান পকেট থেকে সুতির রুমাল বের করে, আনিকার শ্যামলাটে মুখশ্রীতে জমা হওয়া বিন্দু বিন্দু ঘামের ক্ষুদ্র ফোঁটা মুছে দিচ্ছে।
আয়মান শান্ত কন্ঠে শুধাল,

” এত দেরি হলো কেন? ”
আনিকা ব্যাগের সাইড থেকে পানির বোতল বের করে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো। লম্বা শ্বাস টেনে জানায়,
” স্যার ক্লাস থেকে বের হচ্ছিল না। তিনি বের না হলে কিভাবে আসি, বলুন? ”
” আচ্ছা। ”
” বিরক্ত হয়ে ছিলেন? ”
আয়মান পাল্টা প্রশ্ন করলো,
” নিজের উপর কেউ বিরক্ত হয়? ”
আনিকা অবাক হয়ে ভাবুকতা সমেত ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। আয়মান একই ভঙ্গিতে ফের বলে ওঠে,
” তোমার উপর বিরক্ত হওয়া মানে তো নিজের উপর বিরক্ত হওয়া। তুমি তো আমার অর্ধাঙ্গিনী। অর্ধেক অঙ্গ আমার। নিজের উপর কিভাবে বিরক্ত হই বলো? ”

আনিকা সন্দেহী গলায় ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
” আপনার মুখভঙ্গিতে বিরক্তিকর আভাস স্পষ্ট।”
আয়মান ফিচেল হাসল। আনিকার গাল টিপে নরম কন্ঠে বলল,
” আমি মূলত নিজের উপর বিরক্ত ছিলাম। তুমি নিষেধ করা সত্ত্বেও জলদি চলে এসেছিলাম। তবে তোমার মায়াবী মুখশ্রী দেখে, এখন বিরক্তিকর ভাবটা চলে গিয়েছে। ”
আনিকা চক্ষু হাসল। নিজ ইচ্ছায় আয়মানের আঙুলের ফাঁকে নিজের চিকন চিকন আঙ্গুল গুঁজে গভীর স্বরে অধর প্রসারিত করে বলল,

” ভালোবাসতে সবাই পারে। কিন্তু ভালোবেসে অপেক্ষা, সবাই করতে পারে না। ”
আয়মান, আনিকার চোখে চোখ রাখল। নজরে নজর মিলিয়ে দৃঢ় চিত্তে আবেগময় গলায় বলে ওঠে,
” আমি পারি। ”
আনিকা কটাক্ষ করে বলে,
” হ্যাঁ, সেটা কতখানি সত্যি তা তো দেখতেই পারছি। ”
আয়মান ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল,
” তুমি কি আমায় ইনডিরেক্টলী অপমান করলে? ”
” অপমান কেন করবো? ”
” তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে। ”
” রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করবেন, নাকি বাড়িতে ফিরবেন? ”
” আমি না, তুমি শুরু করেছো! ”
আনিকা ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিল,
” কে শুরু করেছে বোঝাই যাচ্ছে। চলুন, কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ফেরা যাক। ”

আনিকা’কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আয়মান নিজ বাড়িতে ফিরে যায়নি। শ্বশুর বাড়িতে থেকে গিয়েছে, আর আজকে এখানে থাকবে বলেই মনস্থির করেছে। সানাউল্লাহ কিছু বলেন নি, বরং তিনি খুশি হয়েছেন। কিন্তু আনিকা খুশি হতে পারছে না! তার বুকের ভেতর ধকধক করছে। কারেন্টের শক খাওয়া মানুষের মতো হাত, পা কাঁপাকাঁপি করছে। আয়মান বাড়িতে থাকলে ওকে জ্বা’লিয়ে মা’রবে। আল্লাহ মালুম, কত উল্টাপাল্টা কাজ করে বসবে কে জানে! ভাবতেই আনিকার মুখভঙ্গি কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে আয়মান। হাত দুটো মাথার পেছনে নিয়ে গলা উঁচিয়ে দরজায় নজর বুলিয়ে দেখছে, আনিকা আসছে কি-না। মাঝে মাঝে আনিকার সাথে শ্বশুর বাড়ি এসে রাত্রি যাপন করতো। সেই সুবাদে এখানে আয়মানের বেশ কিছু কাপড়চোপড় রয়েছে। তাই ফ্রেশ হয়ে পোশাক চেঞ্জ করে কি পড়বে ভাবতে হয়নি।

অনেকটা সময় পর আনিকা বেডরুমে পা রাখল। দরজা আটকে বিছানায় আসতেই কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল। আয়মান পাতলা কাঁথা দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে শুয়ে আছে। আনিকা পাত্তা দিল না। ভেঙচি কেটে ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসলো। মাথা হতে ক্লিপ খুলে ফেলল। ঘনকালো কেশগুলো মুহূর্তেই পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল। বিছানায় এসে বসলো। ক্লান্ত লাগছে, রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন। আয়মানের পাশে শুবে কি শুবে না সেটাই ভাবছে। আকাশ-কুসুম কল্পনা করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আয়মানের মুখ হতে কাঁথাটা একটু সরিয়ে, সে ঘুমিয়ে পড়েছে কি-না চেক করল। আয়মানের চোখের পাতা কিঞ্চিৎ নড়বড় করছে। ঘুমিয়ে গিয়েছে নাকি ঘুমায়নি বোঝা মুশকিল।

আনিকা ঠোঁট বাঁকিয়ে উঠে যেতে চাইল, তার আগেই আয়মান খপ করে আনিকার বাহু চেপে কাঁথার ভেতর ঢুকিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আনিকা হকচকিয়ে যায়। পেছন ফিরতে চাইল, পারলো না। আয়মানের বুকের সঙ্গে তার পৃষ্ঠদেশ স্যাঁতসেঁতে মাটির ন্যায় মিশে আছে। পেটের উপর আয়মানের হাতের বিচরণ। আনিকার লজ্জা লাগছে।। হাঁসফাঁস বিমূঢ় অনুভূতি হচ্ছে। কুন্ঠায় লজ্জাবতী প্রজাপতিরা উড়ে বেড়াচ্ছে। ছোটার জন্য প্রচণ্ডতায় ছটফট করছে। ঘাড়ে আয়মানের পুরুষালি গরম তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়তেই ছটফটানি নিমেষেই কনকনে শীতের মতো কাঁপাকাপিতে রূপ নেয়। আনিকার ব্যাকুলতা বুঝতে পেরে আয়মান মিটিমিটি হাসল।
উষ্ণ ওষ্ঠপুট এগিয়ে আনিকার ঘাড়ে চুমু দিয়ে হিসহিসিয়ে আয়মান বলে,

” তিড়িংবিড়িং করছো কেন? একদন্ড স্থির হয়ে থাকা যায় না? ”
” ছ…ছাড়ুন! ”
” ছাড়ার জন্য ধরেছি নাকি? ”
” আপনি না ঘুমাচ্ছিলেন? ”
” কে বললো? ”
” দেখে মনে হয়েছিল। ”
আনিকার কানের পিঠে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি যুক্ত নাকমুখ ঘষলো আয়মান। আনিকা বক্ষগহ্বরে ঢিপঢিপ করছে কর্তাল! উৎকন্ঠিত নিষিদ্ধ স্থবির দমিয়ে রাখা কষ্ট দায়ক হয়ে পড়েছে। শক্তি প্রয়োগ করে কিছুটা শরীর বাঁকিয়ে আয়মানের বুকের ভেতর ঢুকে গেল। খামচে ধরল আয়মানের কাঁধের টি-শার্ট। আয়মান মৃদু হাসল। অনুভূতির জোয়ার প্রগাঢ়তা করতে আনিকার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে, উদরে শীতল হাতের পরশ দিল। সর্বাঙ্গে ঝংকার দিয়ে শিউরে উঠল নাজুক মেয়েটা। আনিকার ঘনঘন রুদ্ধশ্বাস অনুসন্ধানের তোপে মেয়েলি বক্ষবিভাজন উঠানামা করছে, যা আয়মানের উষ্ণ বুকের সঙ্গে মিশে রয়েছে।

আনিকা’কে জ্বালাতে গিয়ে আয়মান নিজেই বেসামালে বুদ হয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালো। মনগহীনে সংকীর্ণ গণ্ডির ইচ্ছা গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সুখকর অনুভূতির দাবানল মুহূর্তেই খেই হারিয়ে বসলো। চোখ খিঁচে বন্ধ করে বুকের মধ্যে থরথর করে কেঁপে যাচ্ছে আনিকার পাতলা গড়নের শরীর। এতে যেন আয়মান আরও বেসামাল উৎপীড়নের ইচ্ছায় ডুবে গেল। চেয়েও নিজের উদ্দীপনা দমিয়ে রাখতে পারছে না। সময় নিল কিছুটা। শুনলো তার নিজ হৃদয়র কথা। ঝটকা মেরে আনিকা’কে বুক থেকে সরিয়ে দিল। অপেক্ষা করল না, পেছনে হাত নিয়ে আনিকার জামার ফিতা এক টানে খুলে ফেলল। আনিকার সম্ভূতি ফিরল। নিগূঢ় চাউনীতে চমকে উঠল নাজুক মেয়েটা। আয়মানের মুখবিবর গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করল। ছেলেটা কেমন উন্মাদের ন্যায় আচরণ করছে। সে কি করছে আজও তার খেয়াল আছে নাকি, কে জানে? আনিকার কাঁধ থেকে জামার হাতা নামিয়ে সেথায় উষ্ণ ঠোঁট চেপে ধরে আয়মান।
আনিকা চুল খামচে ধরে আয়মানের কানের নিকট মুখ নিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠলো,

” নিজেকে সংযত করুন। এসব ঠিক না। ”
অস্পষ্ট শব্দগুলো আয়মানের কর্ণগোচর হলো বটে। পৃষ্ঠদেশে ঠোঁট ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে নেশাক্ত কন্ঠে আবেগময় অনুরাগে আবদার ছুড়ল,
” সবকিছু ঠিক। আমরা স্বামী-স্ত্রী। আনিকা প্লিজ বাঁধা দিও না। আমার এখন তোমাকে চাই। আটকিও না আমায়। ”
নিদারুণ ভঙ্গুর আকুলতা বাক্যে আনিকা পাল্টা কিছু বলতে পারলো না। শ্বাসনালী যেন কোনো অদৃশ্য বাঁধনে বেষ্টনী দ্বারা আবদ্ধ হয়ে রয়েছে। আয়মানের ছোঁয়ায় তার মেয়েলি তনুমন শরীর আগ্রহী হতে রাজি। আনিকা উৎকন্ঠিত পেলব হাতে আয়মানের পিঠ আঁকড়ে ধরে নির্বিঘ্নে সায় জানালো সর্বনাশ সুমধুর আহ্বানে।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪১

আনিকার সম্মতি পেতেই আয়মান আরও বেপরোয়া হলো। ব্যস্ত হস্তে আনিকার জামা খুলে ফেলল। তিরতির করে কেঁপে ওঠা আনিকার ওষ্ঠদ্বয় নিজ ওষ্ঠের ভাঁজে নিয়ে নিলো। কোমরে চাপ প্রয়োগ করে নিজের উন্মুক্ত শরীরে সঙ্গে গভীর ভাবে মিশিয়ে, প্রেমনিবেদন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আয়মানের মাতাল করা প্রতিটি চুম্বনে খেই হারিয়ে বসলো আনিকা। তারা একে অপরের হৃদয়ের সীমানা অতিক্রম করতে লাগলো। বিকেলের মধ্যভাগ সময়ে নিস্তব্ধতা কক্ষে, প্রেমের এই সফর যেন দুই নাদান চড়ুইয়ের আলিঙ্গনে আরও রঙিন হয়ে উঠলো!

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪৩