শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৪

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৪
নূরজাহান আক্তার আলো

কল কেটে রুমের অবস্থা দেখে ঢোক গিলল শীতল। এখন কি হবে? কে পরিষ্কার করবে এসব? রাগের মাথায় মাথা কাজ করছিল না। বিশুদ্ধ পুরুষকে না পেয়ে রাগ তুলেছে তার জিনিসপত্রের উপর। এখন খারাপ লাগছে খুব।বেশি খারাপ লাগছে নামিদামি পারফিউমের কাঁচের বোতল গুলোর জন্য। আহারে, কাজটা ঠিক হয় নি। অন্যসময় এসে সে নিজেও ব্যবহার করতো। ঘেঁটেঘুটে দেখত।রাগের সময় কেন যে মাথা ঠিক থাকে না। কিন্তু এখন কি করবে? বাড়ির কেউ যদি জানে এসবের পেছনে সে দায়ি। তাহলে সবার আগে নিজ শক্তিতে জ্বলে উঠবে তার মা। না, মার খাওয়া যাবে না। এমন কিছু করতে হবে যেন তার ঘাড়ে দোষ না পড়ে।

শুদ্ধ ভাইও থ্রেট দিলো একঘন্টার মধ্যে রুম পরিষ্কার করতে নাহলে তার খবর আছে। যদিও এসব ফাঁকা বুলিতে খুব একটা ভয় পায় না সে।কিন্তু শুদ্ধ ভাই জানিয়েছে সিগারেট খাওয়া ছবিটা উনি সবার আগে দেখাবে শারাফাত চৌধুরীকে। উনি এ বাড়িতে শীতলের সবচেয়ে বড় প্রশ্রয়দাতা কী না। একথা শুনে শীতল চুপসে গেছে। সে জানে বড় আব্বু ওই ছবিটা দেখলে খুব কষ্ট পাবে। তাই শুদ্ধর শর্ত অনুযায়ী সে রুম ঠিকঠাক করার
দায়িত্ব নিয়েছে। অপরাধ যখন করেছে শাস্তিও মাথা পেতে নিতেই হবে।
এসব ভেবে আর সময় নষ্ট করল না শীতল কোমরে ওড়না বাঁধতে গিয়ে থেমে গেল। রুমে তো কেউ নেই। তাই ওড়নাটা চেয়ারের উপর রেখে রুম পরিষ্কারের কাজে লেগে গেল। তবে তার মুখ বন্ধ থাকল না। শুদ্ধকে সে গালাগাল দিতে দিতে কাঁচ পরিষ্কার করল। শুদ্ধ তার করা কাহিনী দেখে লেপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উঠে রুমের বাইরে গেল। প্রচন্ড ক্ষুধা লাগায় গেল খাবার খেতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অর্ক, কামরান, হাসান, স্যান্ডিও এসে বসেছে কেবল। শুদ্ধ চেয়ার টেনে হাসানের পাশে বসল। গল্পে গল্পে একে একে সবাই খাবার নিয়ে খেতেও আরম্ভ করল। কি একটা ব্যাপারে অর্ককে পঁচিয়ে বাকিরা সবাই হাসছে।
শুদ্ধ খেয়াল করল হাসান থমথমে মুখে বসে আছে। মুখে বিষণ্নতার ছাপ স্পষ্ট। খাওয়াতে আগ্রহ নেই খাবার নাড়াচাড়া করছে শুধু। তাছাড়া এসে অবধি খেয়াল করলে হাসান কেমন থমথম মুখে আছে। কথা বলছে খুব কম। হাসছে যেন জোরপূর্বক। কোনো সমস্যায় না পড়লে এমনটা করার কথা না। এতক্ষণ কিছু না বললেও সে এবার সরাসরি হাসানের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
-‘কি হয়েছে তোর? কোনো সমস্যা?’
হাসান ঘাড় ঘুরিয়ে শুদ্ধর দিকে তাকাল। শুনল। এরপর জবাব দেওয়ার আগে কামরান বলল,

-‘ সমস্যা মানে? বিরাট সমস্যায় পড়ছে ব্যাডায়।’
-‘কি সমস্যা সেটাই জানতে চাচ্ছি।’
-‘প্রথম সমস্যা, ওর বউ ওরে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। দ্বিতীয় সমস্যা ওর বউ মুক্তি চায়।’
শুদ্ধ ভ্রুঁ কুঁচকে হাসানকে বলল,
-‘মুক্তি বলতে?’
-‘তালাক।’
-‘কেন?’
-‘ আমাকে নাকি পছন্দ না।’
-‘পছন্দ না তো কবুল বলেছিল কেন?’
-‘সেটাই তো কথা। এখন সে আমাকে সহ্য করতে পারে না। কাছে গেলে চিৎকার চেঁচামেচি করে। বাসায় বাবা-মা, ছোটো ভাই-বোন আছে কিছু বলতেও পারি না। আবার তার ইগনোর করার ব্যাপারটা সইতেও পারি না। কাছে গেলেই চেঁচিয়ে বাড়িসুদ্ধ সবাইকে জানায়। লুচ্চা, লম্পট কিছু বলতে বাদ রাখে না। বার বার একই ঘটনা ঘটায় লজ্জায় আমিই কাছে যায় না। এখন তার একই কথা মুক্তি চায়।’

-‘দিয়ে দে।’
-‘আমি তো মুক্তি দেওয়ার জন্য কবুল বলি নি ভাই। স্বল্প পরিচিত হলেও কিভাবে যেন ভালোবেসে ফেলেছি। ওকে ছাড়তে পারব না আমি। আর ছাড়লে হয়তো আমিই বাঁচব না।’
একথা শুনে অর্ক একটা গালি দিয়ে চোখ মুখি খিঁচিয়ে বলল,
-‘তাহলে বউয়ের ঝাল সহ্য কর শালা?’
-‘(….)’
-‘বিয়ে করেছো প্রায় সাড়ে তিনমাস অথচ বাসর সারতে পারো নি। এই আবার নিজেকে পুরুষ দাবি করো।’
এবার শুদ্ধ মুখ খুলল। ফিচেল হাসল। তারপর হাসানকে দারুণ একটা বুদ্ধি দিলো। বুদ্ধিটা বোধহয় হাসানের পছন্দও হলো। সে সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে মৃদু হাসল। শুদ্ধর খাওয়া ততক্ষণে শেষ। সে চেয়ার ছেড়ে বেসিনে হাত ধুতে গেলে কামরান চেঁচিয়ে বলল,

-‘এই শালা কি বুদ্ধি দিলি ওকে? হাসান ভুলেও একাজ করিস না ভাই। তোর আধডোবা সংসার পুরোপুরি ডুববে, সঙ্গে বউটাকেও মারবি তুই।’
কামরানের কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠল। এই গর্দভ কথার মানেই বুঝে নি। সবাই হাসছে দেখে রেগে গেল কামরান। সে প্রতিবাদী সুরে কিছু বলার আগে শুদ্ধ পুনরায় বলল,
-‘ বউকে মারা প্রতিটা স্বামীর স্বামীগত অধিকার। সে সূত্রে ওর বউকে ও মারবে তাতে তোর বউয়ের কি?’
-‘ একথা বলতে পারলি শুদ্ধ? এটা তোর থেকে আশা করি নি।’
-‘না করলে নাই। তবে স্বামী বউকে না মারলে কাকে মারবে?’
-‘মারবে কেন? সময় দেওয়া যায় না?’
-‘কিসের সময়? বউ কি সাজিয়ে রাখার জিনিস যে সাজিয়ে রাখবে? স্বামীর দেওয়া হাজার হাজার টাকার গিফ্ট নিতে পারবে। হি হি করতে করতে তার দেওয়া শাড়ি গয়না গায়ে জড়াতে পারবে।অথচ স্বামী কাছে গেলেই হাজারটা বাহানা। মামার বাড়ির আবদার?’
শুদ্ধ থামতেই কামরান ফুঁসে উঠল। সে পুনরায় কিছু বলার আগে অর্ক তার বাহুতে ঘুষি মেরে বলল,
-‘শালা, বেরসিক। এই মারা সেই মারা না আদরের সাগরের ডুবে মারার কথা বলছে শুদ্ধ। শালা ছাগল ছাগলই থেকে গেলি।’
-‘ওহ রে। আগে বলবি না?’

কামরানের কথায় শুদ্ধ আপাতত কথা বাড়ল না। শুধু হাসানের দিকে একবার তাকিয়ে যেতে যেতে,
-‘কিছু কিছু ক্ষেতে দু’জনের মুডের অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে না।
বউয়ের কাছে এমন মুডে যাওয়া উচিত যাতে একজনের উন্মাদনায় আরেকজন উন্মাদ হতে বাধ্য হয়।’
একথা বলে শুদ্ধ চুলে ব্যাক ব্রাশ করতে করতে স্থান ত্যাগ করল। তাকে যেতে দেখে কামরান কপাল চাপড়ে বলল,
-‘এই শালা প্রচুর অশ্লীল। ওর বউটাকে বাঁচতে দিলে হয়। তোরা আমার কথা মিলিয়ে নিস, ওর বউ টিকবে না। দেখবি বিয়ের পরদিনই ওর বউ পালাবে।’
একথা শুনে আরেকদফা হাসির রোল পড়ল। শুদ্ধ রুমে এসে লেপটপ অন করে দেখে শীতল এখনো রুম পরিষ্কার করছে। রুম একদম আগের মতো ঝকঝকে, তকতকে। ভালোই খাঁটুনি হয়েছে ওর বেহাল দশা দেখে বোঝা যাচ্ছে। সে ফোন হাতে নিয়ে কল দিলো। শীতল বিছানা টান টান করে নিচের নামতেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। কোমরখানা অবশ।
হাঁপিয়ে উঠেছে৷ সে এদিক-ওদিক দৃষ্টি বুলিয়ে দেখল সবকিছু ঠিকঠাক।তখন ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। মুখে বিরক্তিকর শব্দ করে ফোন হাতে নিয়ে দেখল অপ্রিয় মানুষটার নাম। মুখ থমথমে করে কল রিসিভ করল সে। তারপর বলল,

-‘শুদ্ধ ভাই টাকা দেন।
-‘কিসের টাকা?’
-‘পরশুদিন দিন না আমাদের বিয়ে?’
-‘তাতে কি?’
-‘বিয়ের শাড়ি কিনতে হবে।’
-‘শাড়ি পরেই বিয়ে করতে হবে কোথাও লেখা আছে নাকি? সবাই শাড়ি পরে তুই লুঙ্গি আর ফতুয়া পরবি। পরা বলে কথা। কি পরলি ওটা মেইন ফ্যাক্ট না।’
-‘ শুধু শুধু কথা পেঁচাবেন না বলে দিলাম। সাইন্টিস্টকে বিয়ে করছি কি এমনি এমনি নাকি? টাকা দেন নয়তো বিয়ে ক্যান্সেল।’
-‘কত দিতে হবে?
-‘আপাতত দশ দেন।’
-‘দশ মানে? দশ টাকায় শাড়ি হবে?’
-‘ দশ টাকা না দশ লাখ!’
-‘কিহহ্! থাক, করব না বিয়ে। লাগবে না বউ। ক্ষ্যামা দে বইন। এত দামি শাড়ি পরা বউ রাখার জায়গা নাই আমার রুমে। সিঙ্গেল আছি সিঙ্গেলই মরব। ‘

-‘সত্যি দিবেন না?’
-‘না।’
-‘তাহলে বিয়ে করব না।’
-‘করিস না। তোকে বিয়ে করার জন্য মরে যাচ্ছি না।’
-‘তাই না? ঠিক আছে বিয়ে ক্যান্সেল। যে পুরুষ বউকে শাড়ি কিনে দিতে পারে না তাকে বিয়ে করার মানেই হয় না।’
-‘যে মেয়ে বিয়ের আগেই হবু বরের থেকে দশ লাখ টাকার শাড়ির চেয়ে হার্ট এ্যাটার্ক করানোর পায়তারা জুড়ে আমিও তাকে বিয়ে করব না। ‘
-‘ওকে ক্যান্সেল!
-‘ক্যান্সেল!
অতঃপর কল কেটে গেল। কিছুক্ষণ আগের নেওয়া সিধান্তটা মাঠে মারা গেল। এরপর আর কেউ কারো সঙ্গে কেউ কথা বলল না। দুদিন পেরিয়ে গেল। দু’জনই দৈনন্দিন কাজে নিজেদের বিজি রাখল। অনলাইনে একে অপরকে এক্টিভ দেখল তবুও তাদের কথা হলো না। মেসেজ হলো না।
শুদ্ধর দেশের ফেরার দিন শুদ্ধ ল্যাবে কাজ করার এক ফাঁকে শীতলকে মেসেজ করল,
-‘ এই মুহূর্তে এয়ারপোর্টে আছি, রেডি থাক, আসছি।’
মেসেজ পাওয়ামাত্রই শীতল চটজলদি ব্যাগ প্যাক রেডি করে শতরুপা চৌধুরীর বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। বাড়ির গাড়িতে বসে যেতে যেতে রিপ্লাই করল,
-‘বাড়িতেই আছি জলদি আসুন।’

সকল ব্যস্ততা সামলে কেবল ফ্রি হয়েছে শাহাদত চৌধুরী। পরনে এখনো
সেনাবাহিনীর পোশাক। নেইম প্লেটে জ্বলজ্বল করছে উনার নিক নেইম। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মাথায় ক্যাপ। অন্যন্যা সময় মুখভঙ্গি কঠোরতা
বজায় থাকলেও এখন ঠোঁটে এঁটে আছে মুচকি হাসি। কারণ উনি ফোনে কথা বলছে দুই মেয়ে ও সহধর্মিনীর সঙ্গে। একে একে নিচ্ছে বাড়ির সব সদস্যের খোঁজ।
স্বর্ণ,শীতলের বাবার সাথে কথা বলে চলে গেল। তারা এখন বড় হয়েছে। অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। বাবা-মার পারসোনাল কথা থাকতে পারে ভেবে একটু স্পেস দিলো আর কি! মেয়েরা চলে যাওয়ামাত্রই শাহাদত চৌধুরী সিমিনকে অপলক দেখে বললেন,

-‘রাতে ঘুম হচ্ছে নাকি ঠিকঠাক?’
-‘হচ্ছে তো।’
-‘তুমি বরাবরই মিথ্যা বলায় কাঁচা সিমিন। কি হয়েছে, বলো আমায়?’
-‘ মেয়ে দু’টোকে নিয়ে খুব চিন্তা হয়। ছোটো টা একটা কথাও শোনা না।
এত বড় বিপদ থেকে বেঁচে ফিরলো অথচ মনে ভয় ডর কিছু নেই। আগে যেমন সারা বাড়ি নেচেকুটে বেড়াতো এখনো তাই। মেয়ে বড় হচ্ছে। কিছু বলতে তো পারো?’
-‘ছোটো মানুষ কি বলব? ঠিক হয়ে যাবে।’
একথা শুনে সিমিন মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালেন। অশ্রু লুকানোর বৃথা চেষ্টা আর কি! শাহাদত চৌধুরী বুঝলেন অন্য কিছু ঘটেছে। নয়তো সামান্য ব্যাপারে কান্নাকাটির করার মতো মেয়ে সিমিন নয়। উনি এবার হেসে বললেন,
-‘এখন কি গোলাপ নিয়ে মন ভালো করতে আসব, হুম?’
স্বামীর কথা শুনে সিমিন উঠে দরজা আঁটকে দিলেন। এরপর ডুকরে কেঁদে ফেললেন। শাহাদত চৌধুরী উনাকে সময় দিলেন। কারণ উনি খুব ভালো করেই জানেন একটুপরে সিমিনই মুখ খুলবে। সত্যি সত্যি সেটাই হলো। সিমিন আঁচলে চোখ মুছে কন্ঠস্বর নিচু করে বললেন,

-‘ শুদ্ধ আর শীতলের মধ্যে কিছু একটা চলছে।’
-‘ক্লিয়ার কার্ট কথা বলো। ‘
-‘ওরা বোধহয় দু’জন দু’জনকে পছন্দ করে।’
-‘এমন মনে হওয়ার কারণ?’
এবার সিমিন খুলে বলতে লাগল নিজের কানে শোনা কিছু কথা। দুদিন আগে দুপুরে বিয়ের ব্যাপারে শুদ্ধ শীতলের সব কথায় শুনেছেন তিনি।
শুদ্ধ আজকের ফ্ল্যাইট ফিরবে এবং তারা বিয়ে করবে একথাও সুস্পষ্ট।
বাড়িতে জানাজানি হলে সবাই কি মেনে নেবে? নাকি এই নিয়ে বিরাট ঝামেলার সম্মুখীন হতে হবে? শীতল নাহয় দুরন্ত, অবুজ, কিন্তু শুদ্ধ সে কিভাবে একাজ করতে পারে? তার মতো বিচক্ষণ ছেলের থেকে এসব আশা করা যায় না। একই বাড়িতে থাকে তারা। ভাই-বোন। ভাই-বোনের মধ্যে এসব জানলে মানুষের কি বলবে? শুদ্ধ পুরুষ মানুষ তাকে হয়তো কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু শীতলের গায়ে কলঙ্ক লাগাতে কেউ কার্পন্য করবে না। নিজের কথা শেষ করে উনি পুনরায় কাঁদতে লাগল। অজানা ভয়ে দুদিন থেকে একেবারে মিইয়ে গেছেন তিনি। প্রেসার একদমই লো। শাহাদত চৌধুরী সিমিনের কথা শুনে জবাবে এমন একটা কথা বললেন যা শুনে সিমিন কথা হারিয়ে ফেললেন। বাকহারা হয়ে তাকিয়েই রইল। তখন শাহাদত চৌধুরী উনার বরাদ্দকৃত ফ্ল্যাটে লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। বসলেন বিলাশবহুল সোফায়। তারপর এসির পাওয়া বাড়িয়ে বললেন,

-‘আমি জানি।’
-‘ কি জানো তুমি?’
-‘যা হচ্ছে পুরোটাই একটা প্ল্যান সিমিন। শুদ্ধ শীতলের উপর কেউ তীক্ষ্ণ নজরে রাখছে। তারা কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, সবটাই নোট করছে। এমনকি তাদের হাতের ফোনটাও বর্তমানে অন্যের দখলে।’
-‘ফোন অন্যের দখলে মানে? কিছুক্ষণ আগেই তো শীতলের হাতে ফোন দেখলাম। ওটাই শুদ্ধ দিয়েছিল। যক্ষের ধনের মতো ফোনটাকে আগলে রাখে তোমার মেয়ে।’
-‘ যুগ আপডেট। এখন ঘরে বসে থেকে ইনকাম করা যেমন সহজ হয়ে গেছে। তেমনি ঘরে বসে অন্যের ক্ষতি করাটাও সহজ হয়ে গেছে। ফোন শীতলের হাতে। অথচ তার ফোন নং, ফেসবুক আইডি, হোয়াইস এ্যাপ, ইন্সটা সব অন্যের আয়ত্তে। কারো ক্ষোভের নজরে পড়েছে আমাদের সরল মেয়েটা। যা হচ্ছে এগুলো সব পরিকল্পনা মাফিক। তুমি টেনশন কোরো না। মোটকথা, যা ভাবছ সেসব হবে না। সম্ভবও নয়।’
-‘আমার মেয়েটা ছোটো শাহাদত। আবেগী। এ বয়সে মেয়েরা ভুল পথে পা বাড়ায়।’
-‘শীতল বয়সে ছোট অবুজ হলেও, শুদ্ধ তা নয়। শীতল যদি পাগলামি করেও শুদ্ধ তাকে কখনোই পাত্তা দেবে না। আমাদের শুদ্ধ সেরকম নয় সিমিন। তার পারসোনালি হাই লেভেলের। মানছি, শীতল শুদ্ধর সাপে নেউলে সম্পর্ক। কিন্তু হঠাৎ করে শুদ্ধ এত পরিবর্তন দেখে সন্দেহ হলো না তোমার? যে ছেলেকে বোম মারলে বাড়তি কথা বলানো যায় না। সে এখন শীতলের সাথে তাল মিলিয়ে বকবক করে যায়। ছেলেটাকে অযথা ভুল বুঝো না।’
-‘হুম।’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৩

এদিকে স্যান্ডি লাফিয়ে উঠেছে লেপটপের সামনে থেকে। অবশেষে তার কষ্ট সফল। সে দ্রুত কল করল শুদ্ধকে। শুদ্ধ কল রিসিভ করলে স্যান্ডি
প্রফল্ল সুরে বলে উঠল,
-‘কালপ্রিটের আসল নাম ইয়াসির সিকদার। থাকে ঢাকাতেই। মাফিয়া। ধামকাদার খবর আবু সিদ্দিকের খুব কাছের কেউ।’

শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ২৫