শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৬৪
নূরজাহান আক্তার আলো
টানা একমাস ধৈর্য্য ধরে থাকতে পারলেও আজকে রুবাব খুব অসহায় বোধ করছে। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। বুকের ভেতর এত জ্বলছে যে জ্বালাপোড়ার তীব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাচ্ছে,সে আর না পেরে
মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে কেঁদে ফেলল। শতরুপা চৌধুরীও পাথর হয়ে চুপ করে বসে আছেন। মেয়েটাকে এত করে বোঝানোর পরও মেয়েটা একই ভুল করল। আচ্ছা, সুইসাইড কি সব সমস্যার সমাধান হতে পারে?যে ছেলেটা তার জন্য চাকরির পরোয়া না করে দিনের পর এখানে পড়ে আছে।
এত ভালোবাসছে। আগলে রাখছে। প্রতি মুহূর্তে মনোবল শক্তি বাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে চেহারা দেখে মানুষ ভয়ে দুই পা পিছিয়ে যাবে সেই চেহারাতে সে অনবরত চুমু খেতে দ্বিধা করে না। সেই ছেলের কি এই প্রাপ্প্য? এই তার ভালোবাসার মূল্য? ঐশ্বর্য কেন বিবেকের কথা শুনছে না? এতদিন এই চিনলো রুবাবকে? রুবাব চাইলে কি ছাড়তে পারত না? গতদিনগুলোতে কী কম অশান্তি করেছে ঐশ্বর্যের সৎ বাবা?
উনি নিজেও রাগ করে ছেলের সঙ্গে কথা বলায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন!
তখন কি রুবাব অজুহাত দেখাতে পারত না? অবশ্যই পারত কিন্তু করে নি। কারণ ছেলেটা ভালোবাসে আর ভালোবেসে আগলে রাখতে জানে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তবুও কেন এত পাগলামি? কেন বার বার সুইসাইড করতে চাচ্ছে সে?
সিঙ্গাপুর আসার পর থেকে তিন তিনবার সুইসাইড করতে চেয়েছে সে।
সুইসাইডই যদি করে তাহলে এখানে পড়ে থেকে অযথা কার জন্য এত কষ্ট করছে? আগের দুইবারের কথা নাহয় বাদ আজ সকালে সুইসাইড করার ব্যাপারটা মানতে পারলেন না শতরুপা চৌধুরী। কেন জানি খুব রাগ হলো। সচারাচর বাইরের কারো সামনে রাগ দেখান না তিনি। তবে আজ মনে হলো মেয়েটাকে কিছু বলা দরকার। তাই তিনি ছেলের মাথা সরিয়ে উঠতে গেলে রুবাব উনার পা ধরে ফেলল। হাঁটুতে মাথা ঠেঁকিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলল,
-‘ প্লিজ ওকে কিছু বোলো না আম্মু। ওর মাথা ঠিক নেই।কি করতে চাচ্ছে,ও নিজেই জানে না। বোকাটা আমার ভালোর জন্যই আমার থেকে দূরে পালাতে চাচ্ছে। অথচ একবারও ভাবছে না তার মধ্যে আমার সব ভালো থাকা। ওর কিছু হলে আমি মরে যাব একেবারে শেষ হয়ে যাব।’
শতরুপা চৌধুরী শক্ত মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আচমকা এক থাপ্পড় মেরে দিলে রুবাবের বা গালে। তারপর রুবাবের হাত ধরে টেনে কেবিনে
প্রবেশ করলেন। ঐশ্বর্য তখন চোখ বুঝে শুয়েছিল। কারো আসার শব্দে চোখ খুলে উনাদের দেখে উঠে বসল। গায়ে ওড়না টেনে মুখের ঝলসে যাওয়া অংশটুকু ঢেকে ফেলল। আরো ছিল তবে সার্জারি করে অনেক অংশ স্বাভাবিক রুপে ফিরে এসেছে। তবে চোয়াল থেকে গলার শেষ অবধি কেমিক্যাল ঝলসানো। এখানেই একটু বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবে ডাক্তার হাল ছাড়ে নি বরং উনারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শতরুপা চৌধুরী ঐশ্বর্যের সঙ্গে কখনো কড়া সুরে কথা বলেন নি। কটুবাক্য কিংবা খোঁচা দেন নি। তবে আজ রাগের মাত্রা এতটাই প্রখর যে আজ উনি নিজের
সত্তা থেকে সরে গেলেন। কঠিন স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়লেন,
-‘ সুইসাইড করবে? মৃত্যু এত সহজ! মরার আগে গ্যারান্টি দিয়ে যাও তোমার কারণে আমার বুক খালি হবে না। যদি তোমার কারণে আমি সন্তানহারা হই তাহলে তুমি আমার অভিশাপ থেকে একচুলও মাফ পাবে না।’
ঐশ্বর্য নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুনে গেল উনার কথা। শতরুপা চৌধুরী এতদিন রুবাবের সামনেও কখনো কাঁদে নি। বোঝান নি উনার বুকের অদৃশ্য দহন। তবে আজ পারলেন না কেঁদে ফেলেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
-‘ ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট তোরা বুঝিস? আমি বুঝি; আমি। আমিও কাউকে ভালোবেসেছি। এতগুলো দিন সংসার করেছি। একটা সন্তানের মা হয়ে বিধবা হয়েছি। সে আমাকে রেখে একাই চলে গেছে। এত ভালোবেসেছি তবুও সঙ্গে নেয় নি। সে নেয়নি বলে কি আমি মরে গেছি? হ্যাঁ, ভেতরে ভেতরে ঠিকই মরেছি তবে উপর উপর ঠিকই তো বেঁচে আছি। কেন বেঁচে আছি? আমার সন্তানের জন্য। আমার রুবাবের জন্য। আজ সেই রুবাব বলে কী না তোমাকে না পেলে মরে যাবে। একজন চলে গিয়ে আমাকে অর্ধেকটা শেষ করেই দিয়েছে এখন আরেকজন যাওয়ার সুর তুলেছে।’
এইটুকু বলে শতরুপা থামলেন। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে পুনরায় বললেন,
-‘ভালোবাসা! ছেড়ে যাওয়া! কষ্ট! বিচ্ছেদ এগুলো কী তোমরাই বুঝো? আমরা বুঝি না? আমরা সেকেলে? নাকি ভালোবাসা শুধু তোমাদের জন্যই তৈরি? রুবাবের সাথে আমিও ছুটে এসেছি কেন এসেছি, বলতে পারো? কি ভাবো আমার ছেলের প্রতি নজর রাখতে? তাকে যেন বশ করতে না পারো খেয়াল রাখতে? তাহলে বলব মোটেও তা নয়! তোমার ভাবনা উন্নত করা প্রয়োজন। সত্য কথা সবসময়ই অপ্রিয়ই হয়। তবুও আমি সত্য কথা অকপটে বলতে পছন্দ করি। এবং বলছি যে শুনতে খুব খারাপ লাগছে তুমি এতিম! পৃথিবীতে তোমার কেউ নেই। তোমার বিপদ যে একবার কেউ দেখে যাবে সেই মানুষটাও তোমার নেই। অথচ আমরা যখন তোমার জন্য লড়ে যাচ্ছি তখন তুমি সুইসাইড করার চিন্তা মাথায় গেঁথে রাখছ! কেন? বলো? সেই কারণ বলার সৎ সাহস আছে তোমার? নাকি সেই একই বুলি আওড়াবে, আমার ছেলে আবেগে ভাসছে। আফসোসে পুড়ে মরবে, হ্যান-ত্যান। তোমায় ছেড়ে দিলে আরো আগেই দিতো আর ছাড়ার অনেক রিজন ছিল। বাংলাদেশ থেকে আসার পর তোমার ছোট ছোট সার্জারি হয়েছে। সার্জারির জন্য নিয়ে যাওয়ার পর রুবারের কান্না দেখেছো?
ছোটো বাচ্চারা প্রিয় মানুষ হারালে যেভাবে কাঁদে ও সেভাবে কাঁদে। আর আমি মা হয়ে সব দেখি সব সহ্য করি। আমাকে দেখছো না, আমি একজন বিধবা নারী; আমি মা; আমার সন্তান জন্ম দিয়েছি। হাতে বুকে পালন করেছি। আমার এই জার্নি মোটেও সহজ ছিল না। ছেলেকে মানুষ করতে আমাকে কত সাফার করতে হয়ছে। অথচ সেই ছেলেটাকে বিয়ে করানোর জন্য এত চেষ্টা করেও পারি নি৷ কেন পারি নি কারণ সে তোমাকে ভালোবাসে, তোমাকে চায়। এরপর আমি তোমাদেরকে মেনে নিয়েছি অথচ তুমিই বেঁকে বসেছিলে।
আমার আরেকটা ছেলের শুদ্ধর তৈরি করা ফর্মূলা বাঁচাতে তোমার এই হাল। তুমি আমার ছেলের হাসির কারণ। তোমার বিপদে আমি ছেড়ে দিতে পারি না। তোমার প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। মোদ্দাকথা, তোমার প্রতি আমার সফ্ট কর্ণার আছে আর সেইজন্য আমি তোমার মা হতে এখানে এসেছি। অথচ তুমি ভুল করেও আমায় মা বলে ডাকো নি। আজ কথা বলো। সরাসরি বলো তোমার কী সমস্যা? সমস্যা যদি তোমার রুপই হয় তাহলে আবারও বলছি তাতে আমি কিংবা আমার ছেলের কোনো সমস্যা নেই। আর যদি অন্য কোনো সমস্যা হয় তো সেটাও খুলে বলো। দুদিন পরপর একজন সিরিয়াস হও তো আরেকজন বেঁকে বসো। এভাবে কোনো সুস্থ সম্পর্ক হতে পারে না।
যে বুঝ নেয় তাকে বোঝানো যায় কিন্তু তুমি বুঝেও বুঝছো না ঐশ্বর্য।
আমরা বোঝাতেই আছি তুমি তোমার ভাবনা ধরে সুইসাইডের ধান্দায় থাকছো, এভাবে কতদিন? কতবার? বার বার ভাগ্য সহায় হবে না। মুখ খুলে বলো কেন সুইসাইড করতে চাচ্ছো? কি সমস্যা তোমার? ‘
ঐশ্বর্য মাথা নিচু করে নীরবে কাঁদছে। রুবাবও পাথরের মতো স্থির হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ের একাকিত্ব নিয়ে এভাবে কখনোই ভাবে নি সে। হ্যাঁ মা অনেকদিন বলেছে চাকরি ছেড়ে চলে আসতে। এই চাকরির কারণে দেখা যাবে মায়ের জানায়া পড়াতে পারবে না। মায়ের কথা শুনে রুবাব রাগ দেখালেও কখনো সিরিয়াসভাবে ভাবে নি। ভীষণ শখ করে এই চাকরিতে জয়েন করেছিল সে। আজকে মায়ের কথা শুনে নিজেকে খুব ছোট লাগছে। আগে ভাবত সে ভালো আর যাই হোক সে মায়ের কাছে ভালো ছেলে। কিন্তু না সে মায়ের কাছে ভালো ছেলে হতে পারে নি। ভালো প্রেমিক হতে পারে নি। আচ্ছা এই আফসোসটুকু রাখবে কোথায়? এতদিন ভাবে নি বিধায় কিছু মনে হয়নি, আজকে থেকে বুকের গহীনে জমানো এই আফসোসটুকুই তার বুক পাঁজর ঝাঁঝরা করতে থাকবে। মৃত বাবার কাছে হাশরের ময়দানে জবাব দেবে কি? যে মা তাকে এত কষ্ট করে মানুষ করেছে ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার বাসনায় মায়ের কথায় গুরুত্ব দেয় নি সে। কখনো ভাবে নি শক্ত খোলসে আবৃত করা মা,তার সঙ্গ চায়। সুন্দর কিছু মুহূর্ত চায়! মনে মনে এসব ভেবে রুবাব লাল বর্ণ চোখে তাকাল ঐশ্বর্যের দিকে। মায়ের সামনে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ল,
-‘কি চাও ঐশ্বর্য?’
তিন শব্দের একটি বাক্য তবুও বলতে অনেক কষ্ট হলো রুবাবের। বুকটা ভার হয়ে আছে। ঐশ্বর্য নীরবে কাঁদলেও রুবাবের কথা শুনে শব্দ করে কেঁদে ফেলল। তাকে কাঁদতে দেখেও রুবাব এগিয়ে এলো না। পূর্বের মত
উতলা হয়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করল না। তবে মলিন মুখে তাকিয়ে দেখল ওর কান্না। ঐশ্বর্য অঝরে ঝরে যাওয়া অশ্রুসিদ্ধ চোখে দিকে তাকিয়ে রুবাব বলল,
-‘ আমার দেখা বেস্ট জুটি কে জানো? আমাদের শুদ্ধ- শীতল। ওদের ভালোবাসা দেখেছো? ঝগড়া-মারামারি, খুনশুঁটি, ভালোবাসা কোনো কিছুর কমতি নেই। শুদ্ধ বুঝদার আর শীতল চঞ্চল, অবুজপণা, জেদী। শীতল যত ভুলই করুক সেই ভুলের বিচার শুদ্ধ করে। যা শাস্তি দেওয়ার সে দেয়। বাড়ির কেউ যদি মারে বা বকে শুদ্ধ রেগে যায়। আবার শুদ্ধের পাশে বসলে বা শুদ্ধর জিনিস বাইরের কেউ নিলে শীতলের মুখের দিকে তাকানো যায় না। বাঁধা বিপত্তির পর শীতল মাঝরাতে আবদার করেছে বিয়ে করবে শুদ্ধ মাঝরাতেই বাড়ির সবাই হাজির করেছে। হাসপাতালে বিয়ে সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেছে। কারণ তার হারানোর ভয় নেই।
তুমি মাঝে মাঝে শীতলের মতো অবুজ কেন হওনা ঐশ্বর্য? কেনো কারনে অকারণে আবদার করো না? কেনো জেদ করে বলো না বিয়ে করার কথা?
তুমি ম্যাচিউর, স্বর্ণ ম্যাচিউর, তোমরা আগে-পিছে শতশত বার ভাবো।
এত ভাবতে বলে কে তোমাদের? তোমরা ম্যাচিউর বলেই আমায় আর সায়ন ভাইকে শুদ্ধ গোঁ হারান হারিয়ে দিয়েছে। চোখে আঙুল দিয়ে বার বার দেখিয়ে দিয়েছে ম্যাচিউর হলেই হয় না অধিকার খাটিয়ে চাইতেও জানতে হয়। যেটা শীতল তোমাদের ছোটো হয়েও খুব ভালো পারে। সে দুনিয়াদারী সম্পর্কে বুঝে কম তবে তার ছোট্ট পৃথিবীতে শুদ্ধ সবকিছুর আগে।’
রুবাব থামল। হাতের কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে চোখের কোণা মুছে পুনরায় বলল,
-‘আমি তোমাকে চাই ঐশ্বর্য। এই এক্সিডেন্টের আগে যেভাবে চাইতাম।ঠিক সেভাবেই চাই। তোমার ঝলসানো চেহারা নিয়ে আমার আক্ষেপ নেই। অভিযোগ নেই। মন খারাপও হয় না। তবে তোমাকে কষ্ট পেতে দেখলে কষ্ট পাই। স্বাভাবিক হও! তুমি বুঝদার হয়ে কেন পাগলামি করছো ঐশ্বর্য? শীতল অসুস্থ হয়ে শুদ্ধকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আর তুমি অসুস্থ হয়ে আমার থেকে পালাতে চাচ্ছো! আমি তুলনা করছি না তবে আজকে না বলেও পারছি না।’
এইটুকু বলে রুবাব শার্টের হাতায় চোখ মুছল। পকেট হাতড়ে ফোন বের করে সময় দেখে পানির গ্লাস আর ওষুধ এগিয়ে দিলো ঐশ্বর্যের দিকে।
ঐশ্বর্য ওষুধ নিলো না বরং রুবাবের হাতে কপাল ঠেকিয়ে কাঁদতে থাকল কান্না জড়িত সুরে বলতে লাগল,
-‘মা সরি! আর করব না! আর হবে না। নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়।
মাথায় ঘুরপাক খায় তুমি আমাকে দয়া দেখাচ্ছো।’
এইটুকু বলে ঐশ্বর্য মাথা তুলে এদিক ওদিক তাকালেও শতরুপা চৌধুরী কে দেখতে পেল না। বেড থেকে নামতে গেলে রুবাব তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
-‘শান্ত হও আমাকে ইশারা করে জানিয়ে বাইরে গেছে। বুঝেছে আমাদের প্রাইভেসি দেওয়া দরকার।’
-‘মাকে ডাকো রুবাব। সরি বলতে হবে মাকে।’
-‘সরিতে কিছু যায় না। তুমি যদি ভুলভাল সিদ্ধান্ত না নাও দেখবে সরিও বলতে হবে না।’
ঐশ্বর্য একবার তাকিয়ে চট করে রুবাবকে জড়িয়ে ধরল। এতশক্ত করে জড়িয়ে ধরল। রুবাব ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আঁটকাতে চেয়েও পারল না। এই একটা মাস চেয়েও ঐশ্বর্যকে বুকে নিতে পারে নি। চেষ্টা করেছে তবে ঐশ্বর্য ছিঁটকে সরে সরে গেছে। অবশেষে বুকের মানুষটি বুকে ফিরে শান্তি মিলেছে।
ঘড়িতে বিকাল সাড়ে চারটা। দুপুরে খেয়ে ভাতঘুম দিয়ে কেবল উঠেছে সায়ন। সিরাত আর সিঁতারা কিছু কাজে বাইরে যাবেন। সিমিন বাড়িতে থাকবেন। সায়ন নিচে নেমে উনাদের তাড়াহুড়ো করে বের হতে দেখে
জিজ্ঞাসা করল,
-‘কোথায় যাচ্ছো তোমরা?’
-‘একটু কাজ আছে বাইরে যাব। তুই কি এখনই বের হবি? সিমিন বিকেলের নাস্তা বানাচ্ছে খেয়ে বের হবি।’
-‘একা একা যাবে?’
-‘কই একা দুজন যাচ্ছি তো।’
-‘খুব বেশি পারসোনাল কাজ আমি গেলে কিছু হবে?’
-‘তুই গেলে তো ভালোই হবে।’
-‘একটু দাঁড়াও ড্রেস চেঞ্জ করে আসি।’
একথা বলে সায়ন রুমে গিয়ে ড্রেস বদলে স্বর্ণের রুমের একবার উঁকি মারল। স্বর্ণ পেছনে ঘুরে চুলে বিনুনি করছে দেখে দৌড়ে গিয়ে আচমকা দুই গাল চেপে ধরে ঠোঁটে একটা শক্ত কামড় দিয়ে পুনরায় চুমু খেয়েই দৌড়। ঘটনা কি ঘটনা সেটা বুঝতে স্বর্ণ কয়েক সেকেন্ড লাগল। এদিকে সায়নের টিকিটুকুও চিহ্ন নেই। স্বর্ণ পুনরায় বাকি বিনুনি গেঁথে রাবার পেঁচিয়ে নিলো। তারপর নিচে গিয়ে দেখল সায়ন ভদ্রবেশে মা-চাচীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কে বলবে নিচে নামার সময় কি কাজটা করেছে সে। স্বর্ণ মাকে রান্নাঘরে দেখে সেদিকে গেল আর সায়ন মায়ের সাথে বেরিয়ে গেল। ভালো মুডে আসলেও উনাদের কিসব কেনাকাটা আর দামাদামির বহর দেখে মনে হচ্ছে জীবনের দেখছে। উনাদের ঢিলেমি দেখে সায়ন বলল,
-‘আম্মু এদিকে ঢুকলে কেন শপিং মল তো ওইদিকে?’
-‘এদিক থেকে কিছু জিনিস কিনে মলে যাব। এ্যাই সায়ন খবরদার বলছি তাড়া দিবি না। আমরা তোকে ডাকি নি বরং তুই নিজে থেকে এসেছিস।’
-‘এসেছি কি সাধে? বাবা চাচারা শেষ বয়সে বউ হারিয়ে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে যেন কাঁদা না লাগে এজন্যই তো এলাম।’
ছেলের কথা শুনে সিঁতারা ছেলের পিঠে একটা মেরে হেসে ফেললেন। তখন কোথা থেকে তিনজন মহিলা উপস্থিত হলো। মুহূর্তে জানা গেল, উনারা সিঁতারার বাপের বাড়ির প্রতিবেশী। এরপর শুরু হলো মহিলাদের গল্প। কার মেয়ে পালিয়েছে, কার কে মারা গেছে, কার স্বামী কবে বিয়ে করেছে, কার বউ কোন কল মিস্ত্রির সাথে পালিয়েছে মিনিটের মধ্যেই এসব কাহিনি বলাও শেষ ; শোনাও শেষ। উনাদের গল্পের ধরণ দেখে
সায়নের মনে হলো এ গল্প ইহজীবনে শেষ হওয়ার নয়। তাই সে ধীরে ধীরে ফোন স্কল করতে করতে সরে দাড়াল। তবে উপলব্ধি করল সেই প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে থাকা উনার ছোট পুত্রবধূ তার আপাদমস্তক দেখছে। বারবার দেখছে। ব্যাপারটা তেমন আমলে না নিলে পরে বুঝল ছ্যাচড়া মেয়ের বদনজরে পড়ে গেছে। সে হাতে থুথু নিয়ে বুকের এদিক ওদিক মুছল। তারপর পালিয়ে বাঁচতে মাকে তাড়া দিলে ওই মহিলার পুত্রবধূ সিঁতারাকে বলল,
শেষ চৈত্রের ঘ্রাণ পর্ব ৬৩
-‘ মামনি আপনার ছেলের বিয়ে দিবেন না?’
সিঁতারা উত্তর দেওয়ার আগেই সায়ন মায়ের হাতটা বগলদাবা করে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
-‘ উদ্দেশ্য বুঝে ভালো লাগল। দোয়া করি, আল্লাহ আপনার ভালো করুক আপনার স্বামীর বউ মরুক। ভালো থাকবেন, দূরে দূরে থাকবেন, ধন্যবাদ।’
এ কথা বলে সায়ন কোনোমতেই দাঁড়াতেই দিলো না। জোর করে টেনে ঠেলে শপিং মলে ঢুকল উনাদের নিয়ে।