শেষ থেকে শুরু পর্ব ১২
Sabihatul sabha
গ্রামের নাম ময়নামতি। ঠিক দুপুরে মাথার উপর এক হাত রেখে জবা বলে উঠলো এতো রোদ তার উপর ছাতাও আনতে ভুলে গেছি। বিরক্ত হয়ে আলিফ কে কল লাগালো ওর বাইকটা নিয়ে আসতে।
জবা একটা টং দোকানে গিয়ে বসে এক কাপ চা চাইলো৷ লোকটা প্রথম তাকালো জবার হাতের দিকে এত ফর্সা কারো হাত হয়.? হাত থেকে মুখ সরিয়ে তাকালো মুখের দিকে রোদের তাপে ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে সাথে সারামুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে৷
লোকটা একটা টিস্যু বের করে জবার দিকে এগিয়ে দিলো। জবা মুচকি হেঁসে টিস্যু হাতে নিয়ে বললো,’ ধন্যবাদ চাচা’
লোকটা ফিরতি জিজ্ঞেস করলো,’ আপনেরে ত এর আগে কখনো দেখি নাই কই আইছেন.?’
জবা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললো,’ সিআইডি অফিসে ‘
লোকটার মুখটা মলিন হয়ে গেলো। জবা খেয়াল করলো তবে কিছু জিজ্ঞেস করলো না৷
লোকটা আর জবাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। হয়তো জবার কিছু বলার অপেক্ষা করে ছিল কিন্তু জবা ত জবাই।
আয়ান কপালে হাত ঠেকে বসে আছে এতো বড় ভুল ওকে দিয়ে কিভাবে হলো? এই কেইসটা কে দেখছে.? পাশেই হাবিলদার কে জিজ্ঞেস করলো৷
~ স্যার সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু ম্যাম।
আয়ান কয়েকবার নামটা মনে মনে বললো।
” রেডি হও আমরা এখনি বের হচ্ছি”
” স্যার কোথায়.?”
” সিআইডি অফিসে”
মাঝ রাস্তায় আসতেই হাবিলদার বারেক সাহ বলে উঠলো, ‘ স্যার বাজারের সাইডে একটু গাড়ি থামাবেন!.?
আয়ান ভ্রু কুঁচকে বারেকের দিকে তাকাতেই বারেক লাজুক একটা হাসি দিয়ে বললো,’ স্যার বউ বলে ছিল কিছু বাজার করে নিয়ে যেতে ‘
আয়ান হা করে বারেকের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি জানো আমরা এখন কতো ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজে যাচ্ছি এখন তুমি বাজার করবে? ‘
, স্যার সামনেই আমার বাসা নেমেই দিয়ে আসবো না হয় আজ না খেয়ে থাকতে হবে।’
আয়ান বিরক্ত হয়ে বললো,’ বাসায় সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে রাখবে যেনো একদিন মিস গেলে না খেয়ে থাকতে হয়।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ স্যার বাসায় ত সবকিছু আছে কিন্তু আমর বিবিজানের নাকি টমেটো খেতে ইচ্ছে করছে ‘
পেছন থেকে একজন বললো,’ তোমার বিবিজানের ত কালকে মনে হয় মোলা খেতে ইচ্ছে করছিল!.?’
বারেক লাজুক হেঁসে মাথা নাড়লো আয়ান বারেকের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি এভাবে লজ্জা কেন পাচ্ছ বারেক.?’
‘ স্যার বউয়ের কথা বলছি লজ্জা পাব না.?’
আয়ান সাথে সাথে গাড়ি থামিয়ে বললো,’ নামো’
‘ জ্বি স্যার!’
‘ নামতে বলেছি তোমাকে ‘
‘ কিন্তু স্যার বাজার ত আরও দূরে ‘
‘ হেঁটে হেঁটে চলে যাও’
আয়ান বারেক কে গাড়ি থেকে নামিয়ে মিনিটে ওর চোখের আড়াল হয়ে গেল। মনে মনে বলে উঠলো,’ বয়সে আমার অর্ধেক হবে বিয়ে করে বিবিজান বলা শুরু করেছে, এতো লজ্জা হলে বিয়ে করার কি দরকার ছিল.? আর আমি এখনো বলেই চোখ বন্ধ করতেই জবার মুখটা ভেসে উঠলো। নিমিষেই সবকিছু ভুলে ঠোঁটের কোনে হাসি দেখা দিল।
আয়ানের পাশে বসা একজন পুলিশ বলে উঠলো, ‘ আজকাল স্যারকে বুঝতে পারছি না, এখনি রেগে যাচ্ছেন আবার এখনি হাসছেন মনে ত হচ্ছে প্রেমে পড়েছেন।’
আয়ান রাগ না করে লোকটার দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো।
জবা চায়ের বিল মিটিয়ে উঠে যেতেই ওর সামনে দিয়ে একটা পুলিশের গাড়ি চলে গেলো।
গাড়িটা দেখে জবা থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। পেছন থেকে শোনা গেল চায়ের দোকানের লোকটা বলছে, ‘ শ্লার পুলিশ দেখলেই আজকাল গালি দিতে ইচ্ছে করে এরা জনগণের সেবা করার শপথ নিলেও এরা টাকার পাওয়ারের পেছনে দৌড়াতে আসে। ‘
জবা একবার পেছনে বৃদ্ধ লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ সিআইডি অফিসারদের সম্পর্কে আপনার মতামত কি চাচা.?’
বৃদ্ধর চোখে মুখে এতো রাগ দেখে অবাক হলো জবা, লোকটার ছলছল চোখ জোড়াও চোখ এড়ালো না জবার।
লোকটা জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ সবই এক মা’ এদের কারো কাছে সঠিক বিচার নেই, টাকার পাওয়ার সবচেয়ে বড় পাওয়ার, সবচেয়ে বড় বিচার তোমার কাছে টাকা আছে ত পুরো দুনিয়াই তোমার ‘
জবার বলতে ইচ্ছে হলো, ‘ সবাই এক নয় চাচা, সবাই টাকার পেছনে ঘুরে না’
কিন্তু জবা কিছুই বললো না।
আলিফ চলে আসলো ওর বাইক নিয়ে জবা ব্যাগ থেকে মাস্ক বের করে পড়ে নিল৷
আলিফ জবাকে টং দোকানের সামনে দেখে দাঁত কেলিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,’ আপু আপনি শাড়ি পড়েছেন.?’
‘ এতে বোকার মতো ছত্রিশটা দাঁত বের করে হাসার কি আছে.? ‘
‘ এই প্রথম দেখলাম তাই ‘
‘ বেশি কথা না বলে চুপচাপ বাইক চালাও। ‘
আলিফ বাইক চালাচ্ছে আর কি কি হয়েছে সবকিছু বলবে এটাও বললো আজ পুলিশ অফিসার আয়ান চৌধুরী এসেছে
জবা খুবই বিরক্ত হলো। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই কেন বাঘ আসতে হয়.?’
আয়ান অনেক্ক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে কারো।
জবা অফিসে ঢুকতেই সবাই অকে সম্মান জানালো। একমাত্র আলিফ ছাড়া এখনো কেউ নিরুপমা নিরুর মুখ দেখেনি অফিসে।
আয়ানের সামনে দিয়েই গেল জবা যাকে সবাই নিরুপমা নিরু বলেই চিনে।
জবার আসল নাম সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু।
আয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল নিরুপমার আসার কথা শুনে উপরে তাকালো।
নিরুপমা কে বলা হলো আধাঘন্টা ধরে পুলিশ অফিসার আয়ান চৌধুরী আপনার সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছে আসতে বলবো ম্যাম.?
নিরুপমা সোজাসাপ্টা এখন দেখা করতে নিষেধ করে দিল।
আয়ান অবাক হয়ে বললো,’ আপনি গিয়ে বলুন ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল উনার সাথে আর্জেন্ট।’
আয়ান সব অপমান চোখ বন্ধ করে হজম করে নিল। একটা মেয়ে এভাবে ওকে রিজেক্ট করলো.?
আয়ানের মস্তিষ্ক বলে উঠলো, ‘ তুই কি প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিস যে তোকে রিজেক্ট করেছে.?’
আয়ান বেস রেগে বলে উঠলো, ‘ এমন রোড মহিলা কে ত আমি মরে গেলেও প্রেমের প্রস্তাব দিব না!’
‘ চলেন ম্যাম বলেছে পাঁচ মিনিট সময় আছে ম্যাম আবার বের হয়ে যাবেন’
আয়ান রাগে গটগট করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে বেতরে গেলো।
মুখে মাস্ক, চোখে চশমা, গায়ে সাদা শার্ট আর চুলগুলো উঁচু করে বাঁধা।
এমন ছেলে টাইপ মেয়ে আয়ানের একটুও পছন্দ না।
সে আর দ্বিতীয় বার নিরুপমার দিকে না তাকিয়ে নিজের সকল কথা আর কেইসের বিষয় শেষ করলো। কেইসের মূল বিষয় ছিল একটা মেয়ের বিষয়৷ আজ থেকে চার মাস আগে এই কেইস নিয়ে ছিল অন্য কেউ তারপর এটা দামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়। এতোদিন পর সেই কেইসের ফাইল আয়ানের কাছে এসে পৌঁছায় আর দায়িত্ব দেওয়া হয় আয়ানকে। এখানে লেখা আছে মেয়েটাকে একাধিক লোক মিলে রেপ করা হয় তারপর তাকে মেরে ফেলার জন্য একটা খাদে ফেলে দেওয়া হয়। ভাগ্য ভালো নাকি খারাপ মেয়েটার জানা নেই কিন্তু মেয়েটা তাও বেঁচে যায়৷ আসলে এটাকে কি বাঁচা বলে.? তাও মেয়েটা একটা আশা নিয়ে আছে সে এর সঠিক বিচার পাবে। মেয়েটা এখনো হসপিটালে ভর্তি।
আয়ান জিজ্ঞেস করলো, ‘ আপনি মেয়েটার সাথে দেখা করেছেন.?’
নিরুপমা ফাইল রেখে বললো,’ মেয়েটার সাথে আমার দেখা হয়েছে তবে তার পরিবারের সাথে এখনো সুযোগ হয়নি তবে খুব জলদি তাদের সাথে ও দেখা করবো।’
আয়ান কিছু একটা ভেবে বললো,’ এক হাতে ত তালি বাজে না এখানে নিশ্চয়ই মেয়েটারও দোষ আছে সে কেন এতো রাতে সেখানে ছিল.?’
নিরুপমা সিরিয়াস মুখে হাসি টেনে বললো,’ সিরিয়াসলি আয়ান চৌধুরী আপনি একজন পুলিশ অফিসার হয়ে এইসব বলছেন.? আমার জানামতে মেয়েটা তার বান্ধবীর বিয়েতে গিয়ে ছিল বাকিটা ত সামনেই জানা যাবে।’
আরও কিছু কথা এই বিষয় বলে আয়ান নিরুপমার একটা কার্ড নিয়ে চলে আসলো। এই কেইসটা আয়ান আর নিরুপমা মিলে সমাধান করবে।
বাহিরে আসতেই আয়ান দেখলো বারেক চলে এসেছে।
আয়ান বারেককে দেখে বললো,’ তুমি.?’
, স্যার সিএনজি করে চলে এসেছি’
‘ তোমরা আর পুলিশ জাতটার মানইজ্জত রাখলে না ‘
সন্ধায় শার্লিন বেগম টেনেটুনে শরিফ সাহেব কে কুলসুম বেগমের রুমে পাঠালো।
কুলসুম বেগম ভীষণ টেনশনে ছিলেন। পরপর ইম্পর্ট্যান্ট দুইটা ফাইল গায়েব তার উপর কোম্পানিতে একের পর এক লস। এমন হতে থাকলে এতো কষ্টের কোম্পানি সব শেষ হয়ে যাবে, এতো এতো স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।
শরিফ সাহেব ভেতরে এসে বললো,’ ভাবি কোনো সমস্যা
?’
‘ আরেহ শরিফ তুমি.? কখন বাড়ি ফিরলে.?’
‘ এই ত কাল রাতে’
‘ ওহ্ কেমন চলছে তোমার অফিস.? ‘
‘ ভালো ‘
‘ খেয়েছো.?’
‘ না বাবি এক সাথে খাব’
কুলসুম বেগম জানেন শরিফ খুব কম কথা বলে, একটু লাজুক টাইপের, শরিফ কে দেখলেই মায়া হয় কুলসুম বেগমের এতো ভদ্র অন্তত বড় দুইটা ভাইয়ের মতো হয়নি।
শরিফ সাহেব কিভাবে বেলী আর অভ্রের কথা বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
কুলসুম বেগম শরিফ সাহেব কে এমন ছটফট করতে দেখে জিজ্ঞেস করলো,’ কিছু বলবে শরিফ.?’
‘ ভাবি আসলে..’
‘ বলে ফেলো আমি তোমাকে সব সময় ছোট ভাইয়ের মতো দেখি বড় বোনের কাছে কোনো সংকোচ ছাড়াই বলতে পারো।’
শরিফ সাহেব সাহস নিয়ে বলেই দেয় বেলী আর অভ্রের বিয়ের কথা।
জবা আলমারি থেকে সবকিছু নিচে ফেলে দিয়েছে রুমটা তন্নতন্ন করে খুজতে শুরু করলো। কিন্তু কোথাও নিজের প্রিয় ডায়েরিটা পেল না। এটাই ত একমাত্র প্রমাণ ছিল, জবার মা’য়ের হাতের শেষ ছোঁয়া।
জবা মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পরলো।
ফ্লুটে চোখ যেতেই ঝাপসা চোখে একটা কিছু দেখেই রেগে বলে উঠলো, ‘ তাহলে আমার রুমে তুমি এসে ছিলে!’
ব্যালকনি টপকে অভ্রর রুমে চলে গেলো।
অভ্র আজও ওয়াশরুমে, পানির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
জবা অভ্রের রুমের অবস্থা নিজের রুমের থেকেও আরও বেশি খারাপ করে ফেলেছে ডায়েরি খুজতে গিয়ে।
আলমারি হতে শুরু করে বিছানা, বই সবকিছু নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
যাক লাস্ট পর্যায়ে ডায়েরি পেল অভ্রের কাপড়ের নিচে। এই ডায়েরি দিয়ে অভ্রের কি কাজ.?
জবা ডায়েরি হাতে নিতেই ছু মেরে পেছন থেকে কেউ ওর হাত থেকে ডায়েরি নিয়ে নিল।
জবা রেগে পেছন ফিরে অভ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,’ আপনি কি কখনো কাপড় পড়ে আমার সামনে আসতে পারেন না.?’
‘ তুমি কি কখনো মানুষ হয়ে আমার রুমে আসতে পারো না.?সব সময় চোরের মতো কেন আসো.?’
‘ চোর ত আপনি! আপনি আমার ডায়েরি কেন চুরি করেছেন.?’
অভ্র ডায়েরিটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখে বললো,’ এটা তোমার ডায়েরি অথচ এখানে কোথাও তোমার নাম নেই, এখানে লেখা মায়া তালুকদার ‘
জবা রেগে বললো,’ ডায়েরিটা আমাকে দেন’
অভ্র হাত উঁচু করে ডায়েরি উপরে তুলে বললো নিতে পারলে নাও।
জবা লাফাতে শুরু করলো।
‘ এতো লম্বা হয়ে লাভ কি হলো তোমার.? লাফিয়ে ও আমার হাত ধরতে পারছো না। ‘
শেষ থেকে শুরু পর্ব ১১
জবা এগিয়ে গিয়ে লাফ দিতে গেলে পেছলে অভ্র কে নিয়ে বিছানার উপর ধপাস করে পরলো। তখনি দরজা থেকে চোখ বড় বড় করে শার্লিন বেগম বলে উঠলো, ‘ আল্লাহ গো ছিঃ ছিঃ ছিঃ এইসব দেখার আগে কেন আমার চোখ অন্ধ হয়ে গেল না!.?’