শেষ থেকে শুরু পর্ব ৩০
Sabihatul sabha
অভ্র এসেই নিরুপমার রুমে প্রবেশ করলো। শার্টের বুকের দুইটা বোতাম খুলে হাতের ঘড়ি খুলে রাখলো নিরুপমার ড্রেসিং টেবিলের উপর ।
দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে হাত, পায়ে , মুখে পানি ছিটিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।
অভ্র নিরুপমার ওড়নার এক কোনা হাতে নিয়ে মুখ মুছে নিল।
‘ কি করছেন কি.? ছাড়ুন!’
‘ তোমাকে ত আর ধরিনি, ওড়না ধরেছি’
‘ পারমিশন ছাড়া কারো ওড়না ধরা বিরাট বড় অপরাধ! আর এটা আমার গায়ে আছে এখন ত এটাকে আইনের চোখে ইভটিজিং বলে’
নিরুপমার কথা শুনে অভ্র হেঁসে উঠলো।
মুগ্ধ হয়ে তাকালো নিরুপমা, এই শ্যামবর্ন পুরুষ কি জানে তাকে হাসলে কতোটা ভয়ংকর লাগে.?
‘ আচ্ছা তার মানে আমি তোমার বাসায় এসে তোমার সাথে ইভটিজিং করছি.? এখন তোমার আদালতে এর শাস্তি কি.?’
‘ এর শাস্তি হলো….’
‘ আমি বলি.?’
নিরুপমা ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই অভ্র নিরুপমার ওড়নার আঁচল হাতে প্যাচিয়ে বললো,’ এই অপরাধের শাস্তি হিসেবে আজই আমাকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত তোমার । ‘
‘ পৃথিবীতে যদি শেষ ছেলেটাও আপনি হন তাও এই নিরুপমা আপনাকে বিয়ে করবে না’
‘ আরও একবার ভেবে দেখো ভালো করে। আচ্ছা দুইদিন সময় দিচ্ছি ভেবে দেখো যোগ্য পাত্র হারালে কাঁদতে হবে আড়ালে।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ আপনি কি এখানে ফ্লার্ট করতে এসেছেন.? তাহলে দরজা খোলা আছে যেভাবে এসেছেন সেভাবে চলে যান।’
অভ্র শার্টের হাতা গুটিয়ে চেয়ারে বসলো। নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এক গ্লাস শরবত না দাও অন্তত পানি ত দিতে পারো। মেহমান কে কিভাবে আপ্যায়ন করতে হয় তাও জানো না.?’
নিরুপমা হেঁসে বললো,’ আপনি মেহমান.? ভুলেই গিয়ে ছিলাম কখন আপনাকে দাওয়াত দিয়ে ছিলাম! ‘
অভ্র নিরুপমার এমন অপমান গায়েই মাখলো না। হেঁসে ফেললো নিরুপমার কথা শুনে।
” অকারণে হাজার কি হলো.?’
‘ মেডিসিন খেয়ে ছিলে.?’
‘ হুম, বেলী অনেক কেয়ারিং ‘
‘ আর আমি.? আমি কিন্তু আরও বেশি কেয়ারিং একবার বিয়ে করেই দেখো’
অভ্র নিজেই গেলো পানির জন্য অথচ ফিরে আসলো হাতে এক কাপ চা নিয়ে।
‘ চা খাবে.?’
‘ না’
‘ এমন রোবটের মতো আচরণ কেন করো.?’
নিরুপমা জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি এমনি’
কোকিলের ডাক শুনে অভ্র ও তাকালো জানালার বাহিরে।
‘ কোকিল! হায় সুন্দরী মেয়েদের জানালায় এখন পাখিরাও উঁকি দেওয়া শুরু করেছে, কেনো যে পাখি হলাম না! সারাদিন জানালার পাশে বসে সুন্দরীদের দেখতাম ‘
অভ্রর এমন কথা শুনে নিরুপমা হেঁসে উঠলো, ‘ আপনার চোখ এমনিতেও ঠিক নেই’
‘ আমি তোমার দিকে এখনো তাকাইনি’
অভ্রর এমন কথা শুনে নিরুপমা ওর দিকে ফিরতেই মাথা পেছনের দিয়ে হেলিয়ে নিল।
অভ্র একদম ওর মুখের সামনে ঝুঁকে আছে।
নিরুপমা আমতা আমতা করে বললো,’ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে এটা আপনার বাড়ি আর আমি ভাড়াটিয়া! যা করতে এসেছেন করে বের হন।”
অভ্র আরও একটু ঝুকে বললো,’ তারিয়ে দিচ্ছ.?’
অভ্রর নিশ্বাস এসে আঁচড়ে পড়ছে নিরুপমার মুখে। নিরুপমার মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, এমন দমবন্ধ লাগছে কেন.?
‘ দূ..দূরে সরেন’
‘ কেন ভালো লাগছে না.?’
নিরুপমা চট করে চোখ খুলে তাকালো।
অভ্র নিরুপমার মুখের রিয়াকশন দেখে হাসতে হাসতে সরে দাঁড়ালো।
অভ্র আবার তাকালো বাহিরে গাছের ডালে বসে থাকা কোকিলের দিকে, কি সুন্দর করে মনের সুখে জানিয়ে দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে।
‘ তোমার গাছের ফুলগুলো সব ফুটেছে। দেখে মনে হচ্ছে ফুলের রাজ্যে আছি ‘
‘ আমার ফুল অনেক বেশি পছন্দ ‘
‘ তুমি নিজেই একটা ফুল, বসন্তের ফুল ফুটেছে বিয়ের ফুল কবে ফুটবে.?’
‘ কি.?’
‘ কিছু না, বাসায় আর কেউ থাকে না.?’
নিরুপমা এক হাতে চুল গুলো হাত খোপা করে বললো,’ না আমি একাই থাকি’
‘ ভয় করে না.?’
‘ কিসের ভয়.?’
‘ জ্বীন, ভূত, পেত্নী ‘
‘ আপনি এইসব বিশ্বাস করেন.?’
‘ অবশ্যই করতে হবে। আমাদের কোরআনে জ্বীন সূরা আছে।’
‘ হুম তা ঠিক, তবে আমি এইসব ভয় পাই না।’
‘ এতো ফুল গাছে, ঘ্রাণে রাতে কতকিছু আসবে’
‘ আপনি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন.?’
‘ তা কেন করবো.? আমি ত সত্যিটাই বলছিলাম, থাক তুমি ভয় পেলে আর বলবো না।’
অভ্র নিরুপমার হাতে পায়ে যত্ন করে মলম লাগিয়ে দিল।
‘ আপনি আর আসতে হবে না। কাল থেকে আমি নিজেই পারবো’
অভ্র পেছন ফিরে বললো,’ আরেক বার ভেবে দেখো।’
‘ অনেক বার ভেবেই বলেছি বলে নিরুপমা দরজা লাগিয়ে দিল।’
থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রইলো দরজার বাহিরে অভ্র। ওকে আবারও অপমান করলো.? সব বিয়ের পর উসুল করে নিবে।
আজ বাড়িতে ফিরে এসেছে শায়েলা সিদ্দিকী।
কেউ একবারের জন্য তাকায়ওনি উনার দিকে। লতিকা ত তিন ভেংচি কেটে দূরে সরে গেলো।
শায়েলা সিদ্দিকী কে দেখে থমকে গেলো শার্লিন বেগম। একি অবস্থা, এভাবে হাঁটছে কেন.? মনে হচ্ছে দিন দুনিয়ার কোনো খবর নেই। সে হাঁটছে ত হাটছেই।
সিঁড়ির কাছে এসে পরে যেতে নিলে আয়ান ধরে নিল।শায়েলা সিদ্দিকী চোখ তুলে ছেলের দিকে তাকালো না। সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
আয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মা’য়ের দিকে। যত বড় অপরাধী হোক মা ত! সবাই ঘৃণা করতে পারলেও ছেলে কি পারে.?
লতিকা ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ এতো বড় অন্যায় করার পরও কিছু না করে ছেড়ে দিল.? আমি হলে ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতাম! ‘
শার্লিন বেগম রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ নিজের কাজে যাও লতিকা ‘
শফিক সাহেব সোফায় বসে ছিল। বরাবরই উনি গরম মেজাজের মানুষ তাও চুপ করে বসে আছেন। পেপার থেকে চোখ সরিয়ে চশমা খুলে এক পাশে রেখে বললেন, ‘ ওইদিন যদি আমি মায়ার কথা রাখতে রাগ করে ওর সাথে সম্পর্কে না যেতাম আজ আমার মায়া অন্তত বেঁচে থাকতো! অন্য কারো হলেও বেঁচে ত থাকতো!’
শফিক সাহেব শায়লা সিদ্দিকী কে নয় প্রেমে পড়ে ছিলেন অতি রূপসী এক নারীর। সেই চমৎকার নারী ছিল চমৎকার এক মনের রাণী।যেমন সে দেখতে অপরূপা ছিল তেমনি ছিল তার মন উদার।কিভাবে পারলো শায়েলা এমনটা করতে.? মায়া ত সব সময় ওকে নিজের বোনের মতো আগলে রেখেছে। ওর কষ্ট দেখলে আমার কাছে অনুরোধ করেছে ওকে ভালো রাখতে। নারী বুঝি নারীর শত্রু হয়ে থাকে.?
বেলী বাসার ভেতরে আসতেই দরজা খুলে দিল অনিক।
অনিক কে এখানে দেখে বেলী হাল্কা হেঁসে বললো,’ আপনার অপেক্ষায় ছিলাম ‘
বেলী কি বলবে খুঁজে পেলো না। নিরু আপু কোথায়.?
‘ কিচেনে’
‘ কি বলছেন! আপু ত অসুস্থ ‘
‘ ও আবার অসুস্থ ও হয়? ‘
বেলী ভ্রু কুঁচকে নিল। অসুস্থ চোখে দেখতে পাচ্ছে তাও এভাবে বলছে!
‘ তোমার অবস্থা বলো, এক্সাম কেমন দিলে.?’
‘ জ্বি মোটামুটি ভালো ‘
অনিক তাকিয়ে আছে বেলীর ক্লান্ত মুখের দিকে। অনিক কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তি ঘিরে ধরলো বেলীকে।’ তুমি বসো আমি তোমার জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আসছি’
‘তার কোনো প্রয়োজন নেই ভাইয়া আমি ফ্রেশ হব’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে যাও। তোমার ভাই দিয়ে গেছে.? ‘
‘ আয়ান ওর ভাই নয়!’
অনিক পেছন ফিরে নিরুপমাকে দেখলো টেবিলে খাবার রাখছে।
‘ আয়ানটা কে.?’
নিরুপমা আবার বললো,’ যাকে ওর ভাই বলছিলি’
‘ তাহলে কি.? চাচা.? আঙ্কেল, মামা..?’
‘ ওর হাসবেন্ড, বিয়ে করা জামাই ‘
অনিক হ্যা করে একবার বেলী ত আরেকবার নিরুপমার দিকে তাকালো।
‘ এভাবে হ্যা করে থাকলে হাতি ঢুকে যাবে চুপচাপ খেয়ে বের হয়ে যা আমার বাড়ি থেকে। ‘
‘ তুই মিথ্যা বলছিস তাই না.?’
‘ জ্বি না তিন কবুল বলে বউ হয়েছে মিথ্যা কেন বলবো! আর তোর এতো কিছু জেনে লাভ কি.?’
অনিক মন খারাপ করে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তখন ছেলেটাকে তোমার ভাই বলাতে কোনো রিয়েক্ট করেনি কেন.?’
বেলী হেঁসে বললো,’ বসেন এসে বিয়ের গল্প শোনাবো ‘
বেলী ফ্রেশ হয়ে এসে অভ্র কে নিচে দেখে আরও অবাক হলো। ভাই এখানে.?
নিরুপমা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অথচ অনিক আর অভ্র কে দেখে মনে হচ্ছে একজন আরেকজন কে যুগ যুগ ধরে চিনে, কতো পরিচিত।
নিরুপমা বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ জাতে জাতে ভালোই মিলেছে ‘
বেলী কে দেখে অনিক বলে উঠলো, ‘ তোমার গল্প শোনা বাকি’
বেলী হাল্কা হেঁসে অভ্রর দিকে তাকালো।
অনিক বুঝলো বেলী অভ্র কে দেখে দাঁড়িয়ে গেছে।
‘ সমস্যা নেই এসো, ডাক্তার ভাইয়া অনেক ভালো, খারাপ ছেলে না।’
বেলী জোর পূর্বক হাসলো। নিজের বাড়ির মানুষের সম্পর্কে নিজের থেকে ভালো কে জানে।
অভ্র বেলীকে দেখে বললো,’ বস’
‘ চিনেন নাকি.?’
অভ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমার বোন’
ইশশ বোন কথাটা যে কতোটা তেতো সেটা কি অভ্র জানে.?
বেলী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চেয়ার টেনে বসলো।
‘ এইবার বলো’
‘ বেলী আস্তে করে বললো,’ অন্য একদিন বলবো।’
‘ আজকেই শুনতে চাচ্ছি’
নিরুপ রেগে বললো,’ চুপচাপ খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যা অনিক’
অনিক অসহায় মুখে তাকালো বেলীর দিকে।
শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৯
নিরুপমা অনিকের হাতে গরম ভাত ঢেলে দিয়ে বললো,’ তোর স্বভাব কোনোদিন ও পাল্টাবে না!’
বেলী মুচকি হেঁসে অনিকের দিকে তাকিয়ে রইলো।
অনিক মনে মনে বলে উঠলো, ‘ স্বভাব পাল্টে গেছে নিরু আমার ত শুধু একেই চাই! দশ বাচ্চার মা হলেও চাই..’